#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৩৭,৩৮
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
৩৭
১ সপ্তাহ পর,
আয়ান একটা ফুলদানি ছুরে মেরে তার ড্রেসিং টেবিলের আয়না ভেঙে ফেলে।রাগে ফুঁসছে,চোখ লাল হয়ে আছে।সে মানছে তার ভুল হয়েছে,অন্যায় হয়েছে।তাই বলে কী ভুল সংশোধন করার একটা সুযোগ পাবে না।ক্ষমা পাবে না কোনো দিন?ও তো বারবার মাফ চাইছে তাহলে কেনো ওর সাথে আরু এমনটা করলো?এসব বিষয়ে রেগে পুরো রুমের জিনিস পত্র ভাঙ্গচুর করছে।
আয়ানের এমন ভাঙ্গচুরের আওয়াজ শুনে ওর বাবা মা বোন ওর রুমের সামনে এসে ওকে ডাকতে থাকে কিন্তু আয়ান দরজা খুলে না।এবার আয়ানের বাবা রেগে বললো,
আতিক রহমানঃ আফিয়া তেমার ছেলেকে সামলাও।ভাঙ্গচুর করে কী প্রমান করতে চাইছে ও?শান্তিতে কী থাকতে দেবে না আমাদের?
আফিয়া রাহমানঃ তুমি একটু দেখো না কী হলো আমার ছেলেটার।…কিছু ভালোলাগছে না আমার।(চোখের পানি মুছে)
আতিক রহমানঃ তুমি এখানে না কেঁদে তুমি যাও।নিজে যখন ভুল করেছে তার শাস্তিও ওকে পেতে হবে।এমন না করে ওকে আগে ভাবতে বলো ও আগে কী করেছে?
আফিয়া রাহমানঃ একন কী এসব কথা বলার সময়?
আতিক রহমানঃ তো কখন বলবো তুমি বলো?মেয়েটাকে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়েছে।সেই কষ্টের শাস্তি তো এখন ওকে পেতে হবে।
আফিয়া রাহমানঃ….মা তুই যা না।তোর ভাইকে একটু বোঝা।আর পারছি না আমি এসব নিতে।
আয়ানাঃ মা তুমি শান্ত হও।আমি দেখছি।
আয়ানা গেলো আয়ানের রুমের সামনে।গিয়ে দরজা ধাক্কাছে।এবার আর ভাঙ্গচুরের শব্দ নেই।আয়ানা বললো,
আয়ানাঃ আয়ান ভাই আমার দরজা খোল।কী শুরু করেচিস তুই?
আতিক রহমানঃ আয়ানা ওকে বলো আমাদের একটু শান্তি দিতে।রোজ রোজ এসব ভালো লাগে না।
আয়ানাঃ আহ!বাবা তুমি একটু শান্ত হও।…কী রে আয়ান দরজাটা খোল?
আয়ান এবার দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।ওকে দেখতে পুরো পাগলের মতো লাগছে।চুলগুলো উসকোখুসকো হয়ে আছে,শার্ট-টাই কিছু ঠিক নেই।আয়ানকে দেখে ওর বাবা আবার বললো,
আতিক রহমানঃ তুমি কী আমাদের শন্তি দিবে না?
আয়ানঃ………
আতিক রহমানঃ কথা বলছো না কেনো?…..এসব ভালো না লাগলে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাও।আর কোনো অশান্তি দেখতে চাই না আমি।
আয়ান ওর বাবার কথা শুনা মাত্রই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।আয়ানকে বেরিয়ে যেতে দেখে ওর মা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
আফিয়া রাহমানঃ কী বললে তুমি ছেলেটাকে?এভাবে কেউ বলে?কোথায় গেলো আমার ছেলেটা একটু দেখো না।
আতিক রহমানঃ কোথায় আর যাবে।দেখো গিয়ে কোথায় পরে থাকবে।ওকে তুমি বলে দিও এমন অশান্তি করলে এ বাসায় যেনো আর না আসে।
বলেই আয়ানের বাবা উপরে চলে গেলেন।আয়ানের মা সোফায় বসে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
আফিয়া রাহমানঃ হে আল্লাহ সব ঠিক করে দাও।আমার সুখের সংসারটা আগের মতো হাসি খুশি করে দাও।…
এদিকে আয়ানা বারবার আয়ানের নাম্বারে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করেছে কিন্তু পাচ্ছে না।
—————
আয়ান একটা খোলা মাঠে বসে আছে।হাতে জলন্ত সিগারেট।ওর সামনে ৪ টা সিগারেট খেসা পরে আছে।এই নিয়ে ৫ নাম্বারটা খাচ্ছে।তার অশান্ত মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।ও তো আরুকে #হারাতে_চায়_না।আজ যদি কোনো ভাবে আরুর এই সিদ্ধান্তটা না জানতে পারতো তাহলে তো ও আবার আরুকে হারিয়ে পেলতো।না ও এটা হতে দেবে না।আরুকে পাওয়ার জন্য যদি ওকে খারাপ হতে হয় তাহলে তাই হবে এখন।তাও আরুকে #হারাতে_পারবে_না।…….কিছু একটা ভেবে আয়ান কাউকে একটা ফোন দিলো।একজনকে কিছু একটা খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিলে।তারপর ফোন কেটে দিলো।তারপর মোবাইলে আরুর একটা ছবি বের করে ছবির সাথে কথা বলতে লাগলো,
আয়ানঃ আরিশা আহমেদ আমি আসছি তোমার কাছে জান।আয়ান রহমানের সাথে অনেক লুকোচুরি খেলছো।অনেক দূরে দূরে থেকেছো আর নয়।এবার তুমি আয়ানের অন্য রূপের সাথে পরিচিত হবে।
বলেই আরুর ছবিতে একটা চুমু দিয়ে উঠে দাড়ালো।
——————
এবার চলুন আজ সকালের কাহিনী জেনে আসি।কী কারনে আয়ান এতো রাগেছে।
ফ্লাশব্যাক-
আজ ছিলো শুক্রবার।আরুদের বাসায় সবাই সকালের নাস্তা করছে।নাস্তার টেবিলে আরু সবাইকে বলেছিলো ও একটা কথা বলতে চায় সবাইকে।খাওয়া শেষে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে।আরুর কথা শুনার জন্য।আরু এবার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
আরুঃ আমি তোমাদের সবাইকে একটা কথা বলতে চাই।
অনিমঃ হুম বল।শুনার জন্যই বসে আছি।
আরুঃ আসলে…..আব…আমি জানি আমি এখন যা বলবো তা তোমাদের শুনতে বা মানতে ভালো লাগবে না।
অনিমঃ আরে বল না কী বলতে চাস।
আশরাফ আহমেদঃ আহ!অনিম ওকে বলতে দাও।মা তুমি বলো।
আরুঃ বাবা……আসলে…আমি আবার আমেরিকা ব্যাক করতে চাই।
আদিরা আহমেদঃ কী?কী বলছিস তুই?
আরুঃ আব….আমি জানি তোমরা আমার এই কথটা এমনি মানবে না।কিন্তু আমার কিছু করার নেই।আমি যেতে চাই।
আশরাফ আহমেদঃ মা রে তুই আমাদের ছেড়ে চলে যাবি?🥺
আরুঃ হ্যা বাবা আমার ওইখানে একটু কাজ আছে।☹️ওইটা সেরে আমি আবার চলে আসবো।
আদিরা আহমেদঃ কী কাজ তোর?আগে একবার যেতে চেয়েছিস দিয়েছি।কিন্তু এবার না।
আরুঃ মা আমার কথাটা শুনো…..
আদিরা আহমেদঃ না আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।
আশরাফ আহমেদঃ আহ!তুমি চুপ করো না।ওকে সবটা শেষ করতে দাও।তুমি বলো মা।
আরুঃ বাবা কিছু কাজ আছে।তা শেষ করতে আশা করি ১/২ বছর লাগবে।তারপর একবারে এসে পরবো।
অনিমঃ কিন্তু ওখানে তের কাজটা কী?আর তোকে তো বললাম অফিসে জয়েন্ট কর।
আরুঃ ভাইয়া ১/২ বছরই তো।তারপর তো পার্মানেন্টলি চলে আসবো আমি।
আরুর বাবা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,
আশরাফ আহমেদঃ বেশ তোমার যা ইচ্ছে।এখন বড় হয়েছো তোমরা নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারো।…তা কবে যাবে বলে ঠিক করেছো?
আরুঃ আর ৫ দিন পর ফ্লাইট ☹️(মাথা নিচু করে)
আরুর বাবা আর কিছু না বলে চুপচাপ উঠে চলে গেলেন।আর ওর মা তো সেই কখনই উঠে চলে গেছে।আরু জানে ওর বাবা অনেক কষ্ট পেয়েছে ওর এই সিদ্ধান্ততে।কিন্তু ওর তো কিছু করার নেই।আরু মাথা নিচু করেই বসে আছে।এবার তন্নি ওর পাশে এসে বসে বললো,
তন্নিঃ কয়দিন আগেই তো এলি।এখনই আবার চলে যাবি?🥺
আরুঃ তনু বেবি আমার ওইখানে কিছু কাজ আছে।ওই গুলা শেষ করে আমি আবার চলে আসবো।🙂
তন্নিঃ আয়ান ভাইয়া থেকে পালিয়ে যেতে চাইছিস?
আরুঃ না তো।একদমই না।
তন্নিঃ তাহলে?
আরুঃ ভুল ভাবছিস তুই।আমার কাজেই আমি যাচ্ছি।
তন্নি উঠে চলে গেলো।আরু তন্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
——-
এতোক্ষন আরুদের সব কথা বাহিরে থেকে শুনেছে একজন।এসব কথা শুনে ওই লোকটার রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে।আরু দের কথা শেষ হতেই লোকটাও চলে গেলো।
আপনারা বুঝতে পারছেন লোকটা কে?হ্যা লোকটা আয়ানই।
আয়ান এসেছিলো আজ কোনো ভাবে আরুকে মেনেজ করে ওকে সাথে নিয়ে একটু ঘুরতে যাবে।যেহেতু আরুর পরিবারের সবাই জানে তাই কোনো সমস্যা নেই আয়ানের আসাতে।
আর সেই থেকে আয়ান এমন রেগে আছে।
—————–
২ দিন পর,
আরু আজ বেরিয়েছে কিছু প্রয়োজনীয় শপিং করতে।শপি প্রায় শেষ।এখন বাসায় যবে।রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। আজ গাড়ি নিয়ে আসেনি।কিন্তু এখন বুঝছে কেনে গাড়ি নিয়ে এলো না।এই রোদে এখন দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।আরু এবার বিরক্ত হচ্ছে।
প্রায় অনেকক্ষন পর আরুর সামনে এসে একটা গাড়ি।আরু রাগ হলো এভাবে গড়ি আসে নাকী?আরু কিছু বলতে যাবে তার আগেই গাড়ি থেকে নেমে ওর মুখ চেপে গাড়িতে উঠিয়ে নিলে।কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না।আরু ছুটার জন্য ছটপট করছে।আরুর এমন ছটপট দেখে একজন কাউকে ফোন করলো এবং ওপাশ থেকে কিছু একটা বললো যা শুনে গাড়িতে থাকা একজন আরুকে একটা স্প্রে করে দিলো।আর আরুও ঙ্গান হারিয়ে পরে ঢলে পরলো।
চলবে………
#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৩৮
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
–ধামাকে–
আরু আস্তে আস্তে চোখ খুলছে।পুরোপুরি খুলতে পারছে।আরু আস্তে করে উঠে বসলো।বসে মাথা চেপে ধরলো।মাথাটা খুব ভার ভার লাগছে।কিছুক্ষন পর ওর মনে পরলো ও শপিংয়ে গিয়েছিলো।ওইখান থেকে বেরিয়ে রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলো তখনই কেউ ওকে তুলে নিয়ে আসে।আর একটা স্প্রে করে।তারপর আর কিছু মনে নেই।আরু এবার মাথা তুলে তাকালো।আরুর এবার ভালো মতো জ্ঞেন ফিরলে একটা অচেনা জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করলো।আরু চারদিক তাকাচ্ছে।পুরো অপরিচিত একটা জায়গা।ও এখন একটা বেডে বসে আছে।বেডটা বেশ বড়,সাইডে কর্বাড,ড্রেসিং টেবিল,বেড সাইড টেবিল,এক সেট সোফা,দওয়ালে একটা গিটার ঝুলছে খুব সুন্দর করে সাজানো,পরিপাটি একটা রুম।আরু দেখলো দুইটা দরজাও আছে।বুঝতে পারলো একটা ওয়াশরুমের আর একটা বোধহয় বেলকনির।আরেকটাও দরজা দেখলো।এটা বোধহয় রুম থেকে বের হওয়ার।কিন্তু এখনা তা বন্ধ আছে।তবে এর ভিতরে আরুর একটা বিষয় খটকা লাগছে তা হলো ওর খুবই পরিচিত একটা পারপিউমের ঘ্রান পাচ্ছে।কিন্তু এখন মনে করতে পারছে না এটা কার।কিন্তু সেটা নিয়ে এখন আরু ভাবছে না।আরু এবার ভাবছে এই অচেনা জায়গায় ও কেনো এলো?..না না ও তো আসে নি।ওকে আনা হয়েছে।কিন্তু কেনো?কে ওকে এখানে এনেছে?কী উদ্দেশ্য তার?কিন্তু যাই হোক না কেনো?ওকে এখান থেকে পালাতে হবে।ওর মন বলছে কিছু একটা ঘটবে আজ🙁।আরু এসব ভেবে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।ধীর পা’য়ে হেঁটে বেলকনিতে গেলো।গিয়ে দেখলো একটা খুবই সুন্দর জায়গায় এই বাড়িটা তৈরি।আশেপাশের পরিবেশটা খুবই মন কারার মতো।আরু দেখলো ও এখন দুই তলায় আছে।আর বাড়িটা শহরে না।হয়তো গ্রামে বা শহর থেকে একটু দূরে।একদম কোলাহল মুক্ত।কিন্তু ও এখানে কেনো?এটাই ওকে ভাবাচ্ছে।
হটাৎ দরজায় খটখট শব্দ হচ্ছে।আর আরু তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে রুমের দিকে তাকালো।দেখলো একটা মেয়ে এসেছে।হাতে একটা ট্রে।যাতে খাবার আছে।কিন্তু এই মেয়েকে আরু চিনে না।আরু রুমের ভিতরে এসে বললো,
মেয়েঃ মেডাম আপনার খাবার।খেয়ে নিন।
আরুঃ কে তুমি?আর আমি এখানে কেনো?কে নিয়ে এসেছে আমাকে এখানে?আর এটা কোন জায়গা?
মেয়েঃ আমার নাম রুনা।আর সরি মেডাম আমি আপনার বাকি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না।
আরুঃ কিন্তু আমাকে এখানে কে এনেছে?
রুনাঃ সরি মেডাম কিছু বলতে পারবো না আমি।আপনি খেয়ে নিন।আমি আসছি।
আরুঃ আরে শুনুন……..
চলে গেলো মেয়েটা।আরু কী করবে ভাবছে।ও তো এই খাবার গুলো কিছুতেই খাবে না।ওকে এখন বেরতে হবে এখন থেকে যে করেই হোক।আরো প্রচন্ড ক্ষখিদে পেয়েছে কিন্তু ও খাবে না কিছু।শুধু এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো।
আরু অনেক উপায় খুঁজেছে বের হওয়ার কিন্তু পায় নি।তাই হাল ছেড়ে দিলো।এবার ওর কান্না পাচ্ছে অনেক।আবার রাগ ও হচ্ছে।আরু রুমের এক কোনায় গিয়ে হাঁটুতে মাথা গুজে বসে আছে।
প্রায় অনেকক্ষন পর ঠিক কতোটা সময় তা বলা যায় না।আরু আবার শব্দ পেলো।আরু মাতা তুলে তাকিয়ে দেখে সেই রুনা নামের মেয়েটা আবার এসেছে।কিন্তু এবার হাতে একটা বড় ট্রে যা একটা লাল কাপড় দিয়ে ঢাকা।আরু একবার রুনার দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নামিয়ে ফেলে।
রুনা ভিতরে এসে দেখে আরু এমন করে বসে আছে।আর টি-টেবিলে ও খাবার যেভাবে রেখে গিয়েছিলো সেভাবেই আছে।তারমানে আরু খায়নি।রুনা বললো,
রুনাঃ মেডাম আপনি খাবার খান নি?আপনি না খেলে স্যার আমাকে আস্ত রাখবে না।
আরুঃ……………….
রুনাঃ মেডাম আপনি শুনতে পাচ্ছেন।
আরুঃ হুম শুনছি।
রুনাঃ মেডাম প্লিজ খাবারটা খেয়ে নিন।স্যার শুনলে রাগ করবে?
আরু এবার আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো না।রেগে চেচিয়ে বললো,
আরুঃখাবো না আমি তোমাদের স্যারকে গিয়ে বলো।দেখি সে কী করতে পারে।আর কে তোমাদের এই স্যার?দেখতে চাই তাকে আমি।কেনো সে আমাকে এখানে আটকে রেখেছে?উদ্দেশ্য কী তার?(কান্না করতে কারতে)
রুনাঃ মেডাম আপনি শান্ত হোন।
আরুঃ বেরিয়ে যাও এখান থেকে।আর নয়তো আমাকে বের হতে সাহায্য করো🥺।প্লিজ।
রুনাঃ 😔😔।…..মেডাম স্যার বলেছে আপনাকে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিতে।একটু পর সাজাতে আসবে আপনাকে(বলেই হাতের ট্রটা বিছানায় রেখে চলে গেলো)।
[লেখিকা-আরিয়া তাবাসসুম]
আরু ভ্রু কুচকে এলো।সাজাতে আসবে মানে?ওকে কেনো সাজাবে?আর এর কারনই বা কী?আরুর এসব কাহিনী,কাজ,কথা সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।আরু এবার উঠে এলো।বিছানায় বসে ট্রে থেকে কাপড়টা সরালো।এবং সরিয়ে যা দেখলো তাতে আরু মনে হয় ছাদ থেকে টুপ করে নিচে পরেছে।(আকাশের কথা লিখলাম না।😁)এস কী?এখানে কেনো?আর ওই মেয়েটা কী বললো?তৈরি হতে?এগুলো দিয়ে?কিন্তু এগুলে দিয়ে ও কী করবে?আরু এসব দেখে যেমন অবাক হয়েছে তেমনি কান্নাও পাচ্ছে।কী হবে ওর সাথে এখন?
আচ্ছা কেউ জানেন এগুলা কী?🤔
থাকে আপনারা কষ্ট করে বলতে হবে না।আমি বলি।
ট্রে তে ছিলো একটা লাল বেনারসি সাথে শাড়ির প্রয়োজনীয় সব,গহনা,জুতা।মোটকথা বিয়ের সব কিছু শুধু মেকআপ ছাড়া।আরু এবার এসব ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।আবার দরজা খোলার আওয়াজ।এবার দুইটা মেয়ে এলো।হাতে ব্যগ নিয়ে।আরু এদের পোশাক দেখে বুজলো মেকআপ আর্টিস্ট।মেয়েগুলোকে দেখে আরু তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।এবার একটা মেয়ে বললো,
মেয়েঃ মেম শাড়ি পরে আসুন আপনাকে সাজিয়ে দেই।
আরুঃ মানে?আমাকে সাজাবে কেনো?
মেয়েঃ স্যার বলে দিয়েছে।
আরুঃ যে যাই বলুক আমি সাজবো না।যান এখান থেকে আপনারা।
মেয়েঃ মেম প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন।
আরুঃ আমি কিছু বুঝতে চাই না।চলে যাও তোমরা।
মেয়েগুলো আরুকে মানাতে ব্যার্থ।তাই হাল ছেড়ে তারা চলে গেলো রুম থেকে।
ওরা বেরিয়ে যেতেই আরু বিছানায় মাথা ঠেকিয়ে বসে বসে কাদছে।কী হচ্ছে ওর সাথে? আর কেনোই বা হচ্ছে?বসায় তো ওর জন্য সবাই চিন্তা করছে।ফোন টাও ওর হাতে নেই।খুঁজে পাচ্ছে না।
হটাৎ করে আরুর রুমের লাইট গুলো অফ হয়ে গেছে।আরু চমকে উঠলো।লাইট অফ হলো কেনো?বাহিরে তাকিয়ে দেখে রাস্তার লাইট গুলো জ্বলছে।কিন্তু রুমে জ্বলছে না।এবার আরু পা’য়ের শব্দ পেলো।মনে হচ্ছে এই রুমে কেউ আসছে।আরু বিছানার চাদর খামছে ধরে আছে।এবার রুমের দরজাটা খুলে গেলো।বাহিরের হালকে আলোতে মনে হচ্ছে কোনো পুরুষ।এবার আরু ভয়ে হতে লাগলো।ভয়ের চোটে এক কোনায় খিঁচে বসে আছে।অনেকক্ষন হলেও লোকটা কোনো কথা বলছে না।তাই আরু কাঁপাকাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
আরুঃ ক…কে…আপ…আপনি?
লোকঃ………………
আরুঃ ক….কথা বলছেন না কে..কেনো?কে আপনি?কেনো এনেছেন আমাকে?😭
লোকঃ তোমাকে এখন কিছুই বলতে পারবো না।শুধু এটুকু বলবো আমি যা বলবো তা তোমাকে করতে হবে।
আরুঃ আমি কিছু করবো না।আমাকে যেতে দিন😠😭
লোকঃ এতো সহজে নয় সুন্দরী।আমার কথা তোমাকে শুনতেই হবে না হলে…….
আরুঃ আমি আপনারা কোনো কথা শুনতে চাই না।প্লিজ আমাকে যেতে দিন😭।হাত জোর করে বলছি🙏
লোকঃ তা বললে তো হয় না সুন্দরী।শুনতে এবং মানতে তোমাকে হবেই।
আরুঃ আমি আপনার কোনো কথা শুনবো না বুঝেছেন। কোনো কথা না😠
লোকঃ নিজের পরিবারের ভালো চাইলে যে তোমাকে শুনতে হবে।
আরুঃ মানে? কী বলতে চাইছেন?(আবাক হয়ে)
লোকঃ ওয়েট।
বলেই লোকটা পাশের টিভি টা চালু করলো।টিভির আলোতে আরু লোকটাকে দেখলো।পুরো ব্লাক গেটআপে।এমনকি মুখে মাস্ক,চোখে গ্লাস,মাথায় ক্যাপ সব কালো।যার কারনে আরু তাকে চিনতে পারলো না।আরু এবার টিভির স্কিনে তাকালো আর যা দেখলো তাতে আরু মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।
টিভি তে দেখাচ্ছে আরু বাড়ির সামনে প্রায় ৫/৬ জনের মতো লোক দাড়িয়ে আছে।যাদের হাতে একটা করে বড় বোতল।আর বোতলের পানি গুলো কেমন যেনো নীল রঙের।কিন্তু আরু বুঝতে পারছে না এসব কী?তাই আরু বললো,
আরুঃ এসব কী?আর আমার বাড়ির সামনে এতো মানুষ কেনো?আর এসব আমাকে কেনো দেখাচ্ছেন?(ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো)
লোকঃ হা হা হা।তুমিই তো এসব দেখবে।আচ্ছা এটা সত্যি তোমার বাড়ি তো?
আরুঃ মজা করছেন আপনি আমার সাথে?😠
লোকঃ আহা।রাগ করছো কেনো?না আসলে সিউর হচ্ছিলাম যে এটা সত্যি তোমার বাড়ি কী না?যদি ভুল জায়গায় ওরা চলে যায় তাই।
আরুঃ কী বলতে চাইছেন আপনি?
লোকঃ তেমন কিছুই না।এই লোকদের দেখছো এরা আমার লোক।আমার একটা ইশারায় ওরা কী কী করবে জানো?
আরুঃ (জিজ্ঞাসু আর ভয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
লোকঃ ওদের হাতে বোতলগুলো দেখছো?ওগুলোতে কেরোসিন আছে।আর আমি বললে ওরা তোমার বাড়ি দু মিনিটে উড়িয়ে দেবে।সাথে বাড়ির ভিতরে থাকা মানুষ গুলোও।আচ্ছা বসায় কে কে আছে এখন?
আরুঃ না না। কী বলছেন এসব?কেনো করছেন আপনি এসব?আপনি এসব করতে পারেন না।
লোকঃ পারি।সব পারি আমি।আর আমি এসব করতে বাধ্য যদি তুমি আমার কথা না শুনো।
আরুঃ ক…কী…ক..কর..করেতে হবে বলুন?
লোকঃ বেশি কিছু না।শুধু “তোমাকে চাই”।তুমি আমাকে “বিয়ে” করলেই আমি তোমার পরিবারকে ছেড়ে দিবো।
লোকটার কথা শুনে আরুর মাথা ঘুরে উঠলো।কী বলছে এসব?আরু মাথায় হাত দিয়ে চেপে বসে পরলো।কী করবে মাথায় আসছে না এখন।একদিকে ওর পরিবার আরেকদিকে নিজের জীবন?কোনটা বেছে নিবে?আরু খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।কী করবে ভাবছে?
লোকটা আবার বললো,
লোকঃ তোমাকে ৫ মিনিট সময় দিলাম ভাবার জন্য।
আরু এখন কী করবে?ভেবে পাচ্ছে না।ভাগ্য ওকে কোথায় এনে দাঁড় করালো?যাকে চেনে না জানে না তাকে কী করে নিজের জীবনের সাথে জড়াবো।আরুর এখন নিজের গলায় দড়ি দিয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
আরু কী করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে।এতো কিছুর ভিতরে আরুর মাথা কাজ করছে না।……অনেকক্ষন পর আরুর হ্যাং মাথায় এলো,এখন একে সামলাই।পরিবার বাঁচাই আর এর হাত থেকে নিজেকে বাঁচাই।পরে দেখা যাবে।এখান থেকে পালিয়ে যাবে দরকার পরলে।
আরুর ভাবনা চিন্তা শেষে বললো,
আরুঃ আমি রাজি।(চোখ বন্ধ করে)
লোকঃ আমি জানতাম তুমি রাজি হবে।তুমি নিজের পরিবারেকে অনেক ভালোবাসো।ওদের জন্য সব করতে পারবে।…এই কে আছিস পেপার্স রেডি কর আর আমার জানকে পুতুলের মতো সাজিয়ে দিয়ে যা।
বলেই লোকটা রুম থেকে চলে গেলো।লোকটা যেতেই আরু ধপ করে বিছানায় বসে পরলো।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে।এর মাঝেই ওই মেয়েগুলো এসে আরুকে সাজাতে লাগলো।আরু পুতুলের মতো বসে আছে।
সব সাজানো শেষে আরুকে একবার আয়নায় দেখতে বললো।আরু আয়ানায় নিজেকে দেখে নিজে অবাক হলো।লালা শাড়িটায় আরুকে সত্যি একদম পুতুলের মতো লাগছে।আরু তো এভাবে,এই পরিস্থিতিতে নিজেকে দেখতে চায়নি।তাহলে কেনো দেখতে হচ্ছে?আরু সব নিজের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলে।
—————
আরু নিচে সোফায় বসে আছে।ওর সামনে একজন উকিল,আর হুজুর বসে আছে।আরু এদের দেখেই চিনতে পারলো এদের কী কাজ।পাশে দু’জন দাড়িয়ে আছে হাতে ক্যামেরা নিয়ে।একজন ভিডিও করছে আরেকজন শুধু ছবি তুলছে।কিন্তু আরুর এদের উপর কোনো আগ্রহ নেই।ও একভবে বসে আছে।
আরুর মনে হচ্ছে ওর কলিজাটা কেউ টেনে বের করে নিচ্ছে।খুব কষ্ট হচ্ছে। বুকের বা পাশ টায় চিন চিন ব্যাথা করছে।ওর চোখের সামনে এখন একটা চেহারা ভেসে আসছে।আর তা হলে “আয়ান”।
লোকঃ আগে তুমি সাইন করবে তারপর আমি।
হটাৎ কারো গলার স্বর শুনে ওর ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো আর অনপকটা চমকে উঠলো।ও পাশে তাকিয়ে দেখে।সেই লোকটা বসে আছে।গায়ে এখন একটা গোল্ডেন আর মেরুর কালারের শেরওয়ানি।।কিন্তু মুখ এখনো দেখা যাচ্ছে না।তাই আরু বললো,
আরুঃ আগে আপনি মুখের মাস্ক খুলুন।আর আপনার লোককে বলুন আমার পরিবারকে ছেড়ে দিতে।
লোকঃ এটা তো করা যাবে না জান।মাস্ক খুললেই বিপদ।আর তোমার ছাড়া পাবে যখন আমাদের বিয়ে শেষ হয়।বুঝেছো ডার্লিং।হা হা হা।
লোকটার হাসি আরুর গায়ে কাটার মতো বিধছে।আরু এবার পেপার্সটা হাতে নেয়।চোখ বন্ধ করে নিজের পরিবার আর আয়ানের মুখটা কল্পনা করলো।
লোকঃ কোনো চালাকি করবে না।চুপচাপ সাইন করো।
আরু কান্না আটকাতে পারছে না।কোনো মতে দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে কান্না আটকিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে রেজিষ্ট্রে পেপারে সাইন করে দিলো।
লোকটা খুশি হয়ে আরুর থেকে কাগজটা টান দিয়ে নিয়ে নিলো।নিজেও তাড়াতাড়ি সাইন করে দিলো।এবার হুজুর সব কিছু ঠিক করে আরুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
হুজুরঃ বলো মা “কুবল”
আরুঃ………
হুজুরঃ বলো মা…
আরুঃ…….
আরুকে চুপ থকতে দেখে লোকটা আরুর কানের কাছে এসে বললো,
লোকঃ তুমি কী চাইছো তোমার পরিবারকে হারাতে?
লোকটার কথা শুনে আরু ছলছল চোখে তাকালো।কিন্তু এতে তার কিছুই হলে না।আরু এবার কাঁপা কাঁপা গলায় চোখ বন্ধ করে। “তিন বার” “কবুল” বলে দিলো।
এবার হুজুর লোকটাকে “কুবল” বলতে বললে লোকটা এক নিশ্বাসে “তিন বার” ” কবুল” বলে দিলো।
হুজুরঃ আলহামদুলিল্লাহ।আজ থেকে আপনারা ধর্ম ও আইন মোতাবেক স্বামী স্ত্রী।
——————–
লোকঃ তো জানপাখি এবার আমার মুখ দেখাই কী বলো?
বলেই লোকটা তার মুখের উপর থেকে মাস্ক,গ্লাস সব সরিয়ে দিলো।আর লেকটাকে দেখে আরুর অবাকের চরম সীমার উপরের লেভেলে চলে গেছে।
এটা তো “আয়ান”
আরু থম মেরে বসে আছে আয়ানের দিকে তাকিয়ে।তার বিশ্বাস হচ্ছে না।আরুকে এমন করে তাকিয়ে তাকতে দেখে আয়ান বললো,
আয়ানঃ খুবই শকড জানপাখি?কী করবো বলো?তুমি তো সোজা আঙ্গুলে উঠবে না।তাই বাঁকা পথে তেমাকে উঠালাম।না হলে যে তুমি আবারো আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যেতে।
আরু কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে আছে।ওর কিছু বলার হয়তো ভাষা নেই।এদিকে আয়ানের মুখে আজ তৃপ্তির হাসি।
আরু এবার উঠে দাঁড়ালো।ঠিক আয়ানের সামনে এসে
আয়ানের গালে ‘কষে’ একটা ‘থাপ্পড়’ মারলো।
আরুর চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে কিন্তু চোখগুলো লাল হয়ে আছে রাগে।
———-
আরু এবার আয়ানের কলার ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
আরুঃ বিশ্বাসঘাতক,চিটার,প্রতারক।তুই আবার আমর বিশ্বাস নিয়ে খেলেছিস।আবার আমার সাথে চিট করেছিস।কি পেলি তুই এগুলো করে?মানুষের মন নিয়ে খেলতে তের খুব ভালো লাগে তাই না?তোর উপর তো আগে শুধু রাগ আর অভিমান ছিলো কিন্তু আজকের পর থেকে তোকে আমি ঘৃণা করি।চরম ঘৃণা করি।আমি কোনো দিন তোকে মাফ করবো না।কোনোদিন না।
বলেই আরু দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।কিছু চেনে না এখানকার।তবুও ও আর এখানে থাকবে না।
আরু যাওয়ার পর আয়ান পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো।আরুর কথা আর কাজে।কিন্তু যখন মনে পরলো ও এখানের কিছু চেনে না তখনই আয়ান সব ভুলে বরুর পিছন ছুটলো।
চলবে……