হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-৩৯,৪০

0
606

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৩৯,৪০
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

৩৯
আরু বাসা থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।কোথায় যাচ্ছে নিজেও জানে না।এইখানের রাস্তা ও কিছুই চেনে না।কিন্তু তাও ও এখানে থাকবে না।কিছুতেই থাকবে না।দৌড়ে আসতে আসতে দেখে একটা পুকুর।পুকুরে শান বাঁধানো।আরু গিয়ে সেখানে বসে পরলো।সারা মুখের সাজ নষ্ট হয়ে গেছে।গালে পানির দাগ শুকিয়ে আছে,চোখ গুলো ফুলে আছে।
আয়ান আরুকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে পেলো।আয়ান নিজেরও এখন খুব খারাপ লাগছে।এমনটা না করলেও হয়তো পারতো।অনেক বেশেই আঘাত দিয়ে ফেলেছে ও আরুকে।কিন্তু এছাড়া তো ওর কাছে আর কোনো উপায় ছিলো না।এমন না করলে যে আরুকে ও আবার হারিয়ে ফেলতো।তখন আয়ান কীভাবে বাচতো আরু বিহীন?এই ৫ বছরে যেমন ও আরুকে কষ্ট দিয়েছে তেমনি নিজেও তো কষ্ট পেয়েছে।এমনও দিন গিয়েছে আরুর প্রতি অবহেলা গুলো মনে করে নিজেকে আঘাত করেছে।আরু চোখের পানি ফেলতে পারে বলে ওর কষ্ট সবাই দেখে।কিন্তু আয়ানের?ও তো ছেলে।ও তো সবার সামনে কাদতে পারবে না।তারপরও ওর শাস্তি হয়নি।ও তো আরুর থেকে শাস্তি পেতে চায়।কিন্তু সেটা আরু দূরপ গিয়ে নয়।ওর পাশে থেকে, সামনে থেকে ওকে শাস্তি দিক আয়ান এটাই চায়।
কিন্তু এখন যা হয়েছে তা আর বদলাতে পারবে না।এখন এটাই সমাধান করতে হবে।আয়ান এসব ভেবে আরুর পাশে গিয়ে বসলো।
আরুর পাশে করো উপস্থিতিথি টের পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে আয়ান।আরু এখন আয়ানকে দেখে কেমন গা গোলাচ্ছ।প্রিয় মানুষ যখন ঘৃণার পাত্রে পরিনত হয় তখন তাকে ঘৃণা করতেও অনেক ঘৃণা করে।আরুর অবস্থা এখন সেই রকম।আয়ান বসতেই আরু উঠে দাঁড়ায়।ওখান থেকে চলে আসতে নিতেই আয়ান আরুর হাত ধরে আটকায়।আরুর এবার আরো রাগ চেপে উঠলো।নিজের হাত ছুটানোর জন্য মোচরামুচরি করছে।কিন্তু আয়ান হাত ছাড়ে না।আরু এবার রেগে বললো,
আরুঃ হাত ছাড়ুন আমার😠
আয়ানঃ ছাড়ার জন্য ধরেছি না কি যে ছাড়বো?আর সবচেয়ে বড় কথা আমি আমার বউকে ধরেছি তাতে তোমার কী?
আরুঃ আপনার সাথে কথা বলতেও আমার এখন রুচিতে বাঁধছে।হাত ছাড়ুন।
আয়ানঃ এতো অভিমান?এতো রাগ আমার উপর?
আরুঃ আমি আপনাকে ঘৃণা করি।শুনেছেন?ঘৃণা করি আমি আপনাকে।(চিল্লিয়ে)
আয়ানঃ আরে আস্তে।কানের পর্দা ফাটিয়ে দিলে।
আরুঃ আবারো বলছি হাত ছাড়ুন।ভালো হবে না কিন্তু।😠
আয়ানঃ খারাপই বা কি হবে?আর এমনিতেও আজ আমাদের ফাস্ট নাইট😉

এটা শুনে আরুর রাগ এবার সপ্তম আকাশে।আরুর ইচ্ছে করছে আয়ানকে আরেকটা থাপ্পড় মারতে।কিন্তু এখন তা আরু পারছে না।কারণ ওর দুই হাত আয়ানের হাতের মুঠোয়।আয়ান হটাৎ করে একটা কাপড় বের করে আরুর হাত বেধে দেয়।আরু অবাক+রাগ দুটোই হচ্ছে।আরুর ছটপট করছে আয়ান আরুকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।আরুকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
আয়ানঃচলো।
আরুঃ আরে ছাড়ুন।কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?আমি কোথায়ও যাবো না আপনারা সাথে।(নিজের হাত ছারাচ্ছে আর চিল্লাচ্ছে)
আয়ানঃ তোমার শশুর বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।চলো।

না এবার আরু আরো বেশি করছে।আরুকে থামানো যাচ্ছে না।তাই আয়ান বাঁকা হেঁসে আরুকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।আরুকে গাড়িতে বসিয়ে লোক করে দিলো।তারপর ঘুরে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো।আরু তো এর মাঝে চিল্লিয়ে আয়ানের কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে।কিন্তু আয়ান এখন এসব পাত্তা দিচ্ছে না।আরু বললো,
আরুঃ ইউ….🤐😠।লিভ মি।
আয়ানঃ “আই লাভ ইউ”

কথাটা যেনো আরুকে নাড়িয়ে দিলো।কতোগুলো দিন পর আয়ানের মুখে এই কথাটা শুনলো।কথাটা ৩ বাক্যের হলেও এই কথাটায় যে কী আছে তা অনেকেই হয়তো বুঝতে পারে না।আরু নিজেকে সামলে বললো,
আরুঃ আপনি আমার ঘৃণার লিস্টে থাকারও যোগ্য না।ছেড়ে দিন আমাকে।😠
আরু চেঁচাতে লাগলো।আর আয়ান শুধু শুনছে আর গাড়ি চালাচ্ছে।
—————
আয়ানের গাড়ি এসে থামে আয়ানের বাড়ির সামনে।যদিও আরু চেনে না এটা কোথায়।আয়ান আরুর সাইডে এসে গাড়ির দরজা খুলে আরুকে আবার কোলে তুলে নেয়।আরু এতোক্ষন গাড়িতে চিল্লাতে চিল্লাতে শক্তি শেস হয়ে গিয়েছিলো।তারউপর আজ সারাদিন না খাওয়া।কিন্তু এখন আবার আরুকে কোলে নিতে দেখে আরু আবার বললো,
আরুঃ এটা কোথায় নিয়ে এসেছেন?আর আমাকে নামান।আমি হেঁটে যেতে পারি।
আয়ানঃ হ্যা।শক্তি তো যা ছিলো তার ১ আনা ও এখন নেই চিল্লিয়ে সে নাকী আবার হেঁটে যাবে।

আরুকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না।আর আরুও চুপ হয়ে গেলো।কারণ কথা গুলো পুরো সত্যি।হাটার জন্য শক্তি এখন আর নেই।আয়ান আরুকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো।
আয়ানের বাবা ড্রয়িং রুমে বসে ছিলেন।হটাৎ আয়ানের কোলে কাউকে দেখে উনি উঠে দাঁড়ালেন।উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।এর মাঝে আয়ানের মা’ও এসে পরলেন।আয়ান আরুকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন।
আতিক রহমানঃ এসব কি আয়ান?তুই আরিশা মা’কে এভাবে……আর ওর হাত বাধা কেনো?
আয়ানঃ পাখি খাঁচা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো তাই উপায় না পেয়ে এভাবে এই অবস্থা করতে হলো

আরু এবার খেয়াল করে দেখলে আয়ানের বাবা আর মা’কে খুব চেনা চেনা লাগছে।আরু ওনাদের দিকে তাকিয়ে থাকার পর মনে পরলো অনিমের রিসিপশনের দিন উনারাই আরুকে বলেছিলো,’তাদের ছেলের পছন্দ আছে’।তাহলে এরাই আয়ানের বাবা মা।
আফিয়া রাহমানঃ আয়ান কি করেছিস তুই আরিশার সাথে?ওকে এভাবে নিয়ে এলি কেনো?
আয়ানঃ তোমাদের বৌমাকে নিয়ে এসেছি।
আফিয়া রাহমানঃ মানে?
আয়ানঃ মানে হলো আমি আরুকে বিয়ে করেছি।

আয়ানের কথা শুনে আয়ানের বাবা মা দু’জনেই হতবাক।
আতিক রহমানঃ হোয়াট?আর ইউ ম্যাড আয়ন?তুই আয়ানকে জোর করে বিয়ে করেছিস?😡
আয়ানঃ আমার কাছে কোনো উপায় ছিলো না বাবা।আরু আবার আমেরিকা চলে যাওয়ার প্ল্যান করছিলো।তাই……..

আয়ানের বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলেন।আয়ানের মা অবাক হয়ে তার ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে।তার এখন কী বলা উচিত তিনি বুঝতে পারছেন না।আর আরু তো পুরো চুপ।এখানে আয়ানের বাবা মা’র কথা শুনে আরু আর কিছু বলতে পারলো না।
————–
এর মাঝেই আরুর পরিবার আসে আয়ানদের বাড়িতে।আসলে সকালে আয়ান আরুর বাসায় বলে দিয়েছিলো আরুকে আজ ওঠে সাথে নিয়ে কোথাও একটা যাবে কিন্তু কোথায় তা বলে নি।আর আরু বাবা মা একটু অমত করেছিলো কিন্তু আয়ান বুঁজিয়ে বলাতে মেনে নেয়।কিন্তু বিকালের দিকে রাফসান আরুর বাবা মা’কে জানানো হয় তারা যেনো তাড়াতাড়ি আয়ানদের বাসায় চলে আসে।ওনারা কেনো জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলো সে জানে না।
————
সবাই এখন বসে আছে আয়ানদের ড্রয়িং রুমে।পরিবেশ এখন শান্ত।কারো মুখে কোনো কথা নেই।করো মুখ দেখেও বুঝা যাচ্ছে না আয়ানা-আরুর বিয়েটা কে কীভাবে নিচ্ছে।তবে এর মাঝে কিছুটা হলেও বুঝা যাচ্ছে অনিম রেগে আছে অনেক।কিন্তু কিছু করতে পারছে না কারন ওর বাবা সামনে তাই।আরুর বাবাও চুপচাপ বসে আছে।আর আয়ানের বাবা মা’র মুখে ফুটে উঠেছে অপরাধীদের ছায়ার মতো আভাস।আয়ানা ওনাদের পাশেই বসে আছে।আর আয়ান।সে তো সেই।এমন ভাবে বসে আছে যেনো কিছুই হয়নি।আর হলেও ও জানে না কিছু।কিন্তু মনে মনে ঠিকিই নিজেকে নিজে বকছে।
এবার আরুর বাবা বললেন,
আশরাফ আহমেদঃ আয়ান তোমার থেকে এটা আশা করিনি।আমি বলেছিলাম আরুর উপর কোনো সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দেবো না বা তুমি দেবে না।কিন্তু তুমি কী করলে এটা?
আয়ানঃ…………….
আশরাফ আহমেদঃ তোমার তো সময় নেওয়া উচিত ছিলো।আর আমরা তো এটা একবারো বলিনি যে আরুকে তুমি ছাড়া অন্য কারো হাতে তুলে দিবো।তাহলে তুমি এটা কেনো করলে?আমাদের কথাটা মনে করারা তোমার কী সেই ধৈর্যটাও নেই?
আয়ানঃ না নেই।কারণ আপনারা ভালো করেই জানেন। আরু তো আবার চলে যেতে চাইছিলো কিন্তু আপনারা আটকিয়েছেন ওকে একবারো?আপনারা তো আপনাদের কথা রাখেন নি।তাহলে আমি কেনো আপনাদের কথা মনে রাখবো?
আতিক রহমানঃ আয়ান ভদ্র ভাবে কথা বলো।উনি তোমার গুরুজন।
আয়ানঃ সরি আংঙ্কেল।আমি ও কথাটা এভাবে বলতে চাই নি।কিন্তু আরু যখন চলে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিলো তখন তো আপনারা ওকে কিছু বলেন নি?আর এই বিষয়টা আমাকেও জানালেন না।ভাগ্যিস সেইদিন আপনাদের বাসায় ঢুকার সময় কথা গুলো শুনেছিলাম।আমি যদি এভাবে না জানতাম তাহলে আপনারও বলতেন না।আর আমিও কিছুতেই আরুকে আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না।তাই আমি এই কাজ করেছি।
অনিমঃ আরুর মত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেছিলে একবারো?ও তোমার সাথে থাকতে চায় কী না?এগুলা জানার চেষ্টা করেছো?
আয়ানঃ ও আমার সাথে থাকতে চায় কি না জানি না।আর জানার দরকারও নেই।কিন্তু আমি ওর সাথে থাকবো।ওকে আমি ছেড়ে থাকবো না।এই ৫ বছর।অনেকটা সময় ও আমার থেকে দূরে ছিলে।কিন্তু আর না।(আরুর দিকে তাকিয়ে)
অনিমঃ তোমর মনে হয় না তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করছো?তুমি ৫ বছর আগে আরুর সাথে যা করেছিলে তার জন্য তুমি এগুলো প্রাপ্য।এটা তুমি মনে করো না?
আয়ানঃ আমি মানছি আমি ভুল করেছি,অন্যায় করেছি।কিন্তু তার জন্য আমি মাফ চাইছি বারবার।দরকার পরলে সারাজীবন চাইবো।আমি আমার ভুলের শাস্তি চাই আরুর থেকে।কিন্তু ওর থেকে দূরে সরে নয়।
অনিমঃ আয়ান জোর করে কিছু হয় না আর না কিছু পাওয়া যায়।আরু এই ৫ বছরের কষ্ট সবটা মুছে দিতে পারবে তুমি?
আয়ানঃ তা পারবো না।কিন্তু নতুন করে ঠিক আগের মতো ভালোবাসা তৈরি করতে ঠিকই পারবো।আর রইলো বাকি কষ্টের কথা।(এই কথা গুলো আরুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলছিলো)আপনারা সবাই আরুর কষ্টটা দেখলেন,ওর কান্নাটা দেখলেন।হ্যা আমি মানছি ওকে কষ্ট দিয়েছি,ওকে কাঁদিয়েছি।কিন্তু একবারো কেউ আমার দিক টা দেখেছেন?আমার কষ্ট কেউ দেখার চেষ্টা করেছেন?আমার কান্না গুলো,ওর জন্য করা ছটপট গুলো কেউ দেখার চেষ্টা করেছেন?আরে ওকে তো অবহেলা করেছি,কষ্ট দিয়েছি তার জন্য ও আজ আমাকে ঘৃণা করে।কিন্তু আমি ওকে অবহেলা করে,কষ্ট দিয়ে ভালো ছিলাম কি না তা কেউ জানার চেষ্টা করেছেন?৫ বছী ধরে আমি গুমরে মরেছি।কিন্তু ৩ বছর আগে সত্যিটা জানার পর আমার মনল ভিতরে কেমন তুফান গিয়েছে তা কেউ দেখার চেষ্টা করেছেন না বুঝার চেষ্টা করেছেন?এই ৩ বছরে প্রতিটা রাত সাক্ষী কী কী ঝড় বয়েছে আমার উপর দিয়ে।প্রতিটাদিন ইচ্ছে করতো নিজেকে শেষ করে দিই।প্রতিবার এমন স্টেপও নিতাম কিন্তু পরে আরুর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতো।তখন মনে কড়া নারতো আরুর কাছ থেকে ক্ষমা নে ফেলে মরেও শান্তি পাবো না।আগে ও আমাকে ক্ষমা করুক তারপর না হয় হাসি মুখে আমি মৃত্যুকে বরন করে নিবো🙂।কিন্তু আফসোস এতোকিছুর পরেও আমার দিকটা কেউ ভাবতে চায় না।কারণ আমি আরুকে কষ্ট দিয়েছি।(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)

আয়ান এতোক্ষন এসব কথা গুলো অন্য দিকে ফিরে বলেছিলো।কথা শেষ হতেই আয়ান চোখের পানি গুলো মুছে সোঝা উপরে চলে গেলো।
আয়ান যাওয়ার পর পুরো রুমে পিন অপ সাইলেন্ট।চারদিকে শুধু নিস্তব্ধতা।করো মুখে কোনো কথা নেই।আয়ানের মা কাঁদছে।ছেলের এমন কষ্ট দেখে কোনো মা ঠিক থাকতে পারে না।আর আরু একদম চুপ।নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রায় অনেকক্ষন পর আয়ানের বাবা বললেন,
আতিক রহমানঃ আয়ানের হয়ে আমি আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চাইছি।আসলে…..
আশরাফ আহমেদঃ আরে কী করছেন আপনি?এসবের কোনো প্রয়োজন নেই।

আরু বাবা এবার আরুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
আশরাফ আহমেদঃ মা তুমি এখন কী চাও?যাবে আমাদের সাথে ওই বাড়ি না এখানে থাকবে?
অনিমঃ অবশ্যই যাবে।

বলেই অনিম আরুর হাত ধরে বসা থেকে উঠিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে আরুকে নিয়ে দু পা আগাতেই উপর থেকে আয়ানের হুংকার ভেসে আসে।
আয়ানঃ আরু যেনো এই বাড়ির বাহিরে এক পা না রাখে।আর যদি রাখে তাহলে তাহলে আমার লাশের উপর দিয়ে ওকে যেতে হবে।
আফিয়া রাহমানঃ আয়ান তুই পাগল হয়ে গেছিস?কী সব বলছিস?
আয়ানঃ হ্যা মা তোমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে।আরো হবে।কিন্তু তার আগে তোমার বৌমাকে বলো এই বাড়ির বাহিরে যানো না যায়।

অনিম আয়ানের কথা পাত্তা না দিয়ে আবার আরুর হাত ধরতে নিলেই আরু বলে,
আরুঃ ভাইয়া আমি যাবো না।তোরা যা।
অনিমঃ কিন্তু আরু……
আরুঃ প্লিজ ভাইয়া।সব সময় তো বলিস আমি নিজের জন্য যা সিদ্ধান্ত নেবো তা তোরা মেনে নিবি।তাহলে এটাও আমার সিদ্ধান্ত।

আরু আর কাউকে কিছু বলতে দেয়নি।তাই আরুকে রেখে আরুর বাবা মা,ভাই-ভাবি সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
আরু এবার উপরে তাকিয়ে দেখে আয়ানের মুখে তৃপ্তির হাসি।আরু আয়ানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,
আরুঃ আমার থেকে শাস্তি চাই না তোমার?এমন শাস্তি দেবো যে নিজেই আমাকে আমার বাসায় দিয়ে আসবে।তোমার জীবন তেজপাত বানাবো।শান্তি পাওয়ার খুব শখ?দেখাবো শাস্তি কাকে বলে।

চলবে……..

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৪০
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

আয়ানের বাবা আরুর উদ্দেশ্যে বললো,
আতিক রহমানঃ মা বিশ্বাস করো আমরা কিছুই জানতাম না এই ব্যাপারে।আমার ছেলেটা যে এমন একটা কান্ড ঘটাবে তা আমরা বুঝতে পারি নি।লজ্জায় তোমার দিকে তাকাতে পারছি না।(বলেই মাথা নিচু করে নিলেন)
আরুঃ ছিঃ ছিঃ আংকেল এভাবে বলবেন না।আসলে কী বলুন তো কিছু মানুষ আছে যাদের অর্জন শুধু বইয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ।তার মধ্যে থাকে না কোনো মনুষ্যত্ব আর চেতনাবোধ।

আরু কথাটা আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলছে।আরুর এসব খুচিয়ে কথা বলা মাত্র শুরু।সামনে আরো অনেক সয্য করতে হবে ওকে।
আরু কথাটা বলাতে আয়ান অনেক কষ্ট ফেলো।কিন্তু প্রকাশ করলো না।আয়ান যানে ওকে এখন পদে পদে এসব কথদ শুনতে হবে।
এর মাঝেই মায়ান (আয়ানার ছেলে।বয়স ৬ বছর।ওহ আয়ানার স্বামীর নাম মাহিন)কোথা থেকে দৌড়ে এসে আরুকে জড়িয়ে ধরলো।আরু একটু অবাক হলো হটাৎ ওকে কেউ এভাবে ধরাতে।আরু নিচে তাকিয়ে দেখলো একটা বাচ্চা।
মায়ানঃ তুমি কে?
আয়ানঃ বাবা ওটা তোমার মামি হয়।
আরু কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়ান বললো।আরু না চিনতে পারলেও আয়ান যখন বললো মামি তখন বুঝলো এটা আয়ানার ছেলে।সেই যখন হয়েছিলো তখন আয়ানের ফোনে ছবি দেখেছিলো।তারপর তো আর দেখা হয়নি।এর মাঝে এতোটা বড় হয়ে গেছে।মায়ান না বুঝে আবার বললো,
মায়ানঃ মামি মানে কী?
আয়ানঃ মামি মানে হলো তোমার মামার বউ।লাল টুকটুকে বউ।
মায়ানঃ ওহহ।এই জন্যই এতো সুন্দর দেখতে?মা আমারও কী মামার মতো এমন বউ হবে?
মায়ানের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।আয়ান ওকে কোলে নিয়ে বললো,
আয়ানঃ ব্যাটা আগে বড় হ।তারপর বিয়ের চিন্তা করবি।তবে ভালো বুদ্ধি হলো কোনোদিন বিয়েই না করা।কারণ আমি এখন বুঝতে পারছি বিয়ে করা আর বলির পাঠা হওয়া এক☹️
আয়ানের কথা শুনে আরুর মাথায় যেনো আগুন জ্বলে উঠলো।কিন্তু কিছু বললো না।কারণ সামনে বড়রা আছে।তাই চুপ করে রইলো।কিন্তু দাঁত মুখ সব খিঁচে রেখেছে জিদে।আর আয়ানের (খাইয়া ফেলমু)এমন লুক দিয়ে আছে।আয়ানও আড়চোখে আরুর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো।মায়ান আবার বললো,
মায়ানঃ মামি কী আজকে আমাদের বাড়িতে থাকবে?
আয়ানঃ শুধু আজকে না বাবা এখন থেকে এখানে থাকবে।
মায়ানঃ ইয়ে!কী মজা!আমরা একসাথে থাকবো।মামি আমার সাথে খেলবে তুমি?আর আমার সাথে থাকবে?
আরুঃ হ্যা বাবা খেলবো তো।আর তোমার সাথেই থাকবো।
আয়ানঃ তোর সাথে থাকবে কেনো?আমার বউ আমার সাথে থাকবে।
আরু আবার আয়ানের দিকে তাকালে আয়ান মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ হয়ে যায়।এর মাঝে আয়ানা বললো,
আয়ানাঃ আরু তুমি চিন্তা করো না। তোমার কারো সাথে থাকতে হবে না।তুমি আমার সাথে থাকবে।এখন চলো ফ্রেশ হয়ে নিবে।

আয়ানা চলে গেলো আরুকে নিয়ে।আয়ান একটু মুখটা অসহায় করেছিলো কিন্তু লাভ হয়নি।তবে এটা ভেবে শান্তি লাগছে যে আরু এখন ওর সামনে থাকবে ওর বাড়িতে থাকবে।
আয়ানের বাবা আয়ানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে চলে গেলো।এবার আয়ানের মা আয়ানের দিকে বললো,
আফিয়া রাহমানঃ দেখ আয়ান তুই কিন্তু কাজ টা মোটেও ভালো করিস নি।তোর বোনের সাথে যদি কেউ এমন করতো তখন তোর কেমন লাগতো?
আয়ানঃ কিন্তু মা………
আফিয়া রাহমানঃ যাই হোক যা হওয়ার তা হয়েছে।আমি খুশিও হয়েছি।কিন্তু একটা কথা মনে রাখিস আরু তোকে যতোক্ষন ক্ষমা করছে ততোক্ষন পর্যন্ত তুই আরুর মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবি।তুই অনেক কষ্ট দিয়েছিস ওকে আর কোনো কষ্ট দিস না।এটাও মনে রাখিস ওকে এবার জোর করে আঁটকে রেখেছিস কিন্তু পরে আর না।ও থাকতে না চাইলে ওকে ওর বাসায় দিয়ে আসবি।
আয়ানের মা কথা গুলো বলে উপরে চলে গেলেন।উনি যাওয়ার পর আয়ান সোফায় গা এলিয়ে দিলো।এখন তার খুব শান্তি লাগছে।এখন তার পাখি তার বুকের খাঁচা থেকে কোথাও পালাতে পারবে না।আয়ান এটাও জানে আরু ওকে এখনো ভালোবাসে কিন্তু রাগে,অভিমানে ভালোবাসাটা চাপা পরে আছে।কিন্তু আয়ানও তার আরুপাখির অভিমান যে করেই হোক ভাঙাবে।আয়ানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
———————
রাত ১১ টা
আরু বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।আয়ানা একবার বলেছিলো আয়ানের রুমে গিয়ে থাকতে কিন্তু আরু সোজা মানা করে দিয়েছে।আয়ানা আর কিছু বলে নি।আরু বলেছে গেস্ট রুমে থাকবে।
আরু অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।তখনই ওর পাশে আয়ানা এলো।কিন্তু তাও আরু চুপ।আয়ানা বললো,
আয়ানাঃ আয়ান যা করেছে তার ক্ষমা হয় না।আমি চাই ও না তুমি ওকে মাফ করো।কিন্তু আরু আমার ভাইকে ছেড়ে চলে যেওনা।কিন্তু এখন তো তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।দুজন দুজনের সাথে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছো।এখন কী সম্পর্কটাকে ঠিক করা যায় না?
আরুঃ (চুপ)
আয়ানাঃ তুমি এখন বলবে আমি আমার ভাইয়ের দিক টানছি?কিন্তু এটা সত্যি না।তোমার জায়গায় আমি হলে হয়তো তোমার মতোই এমন করতাম।হয়তো বলছি কী?করতাম তা তো সিউর।কিন্তু আরু আমি তোমাদের দুজনের ভালোর জন্য বলছি সম্পর্ক টা ঠিক করে নাও।দুজন দুদিকে কষ্ট পাচ্ছো।মান অভিমানের পর্ব টা না হয় এবার শেষ করো।
আরুঃ (চুপ)
আয়ানাঃ আচ্ছা একটা কথা বলো তো?তুমি কী এখন আর আয়ানকে ভালোবাসো না?
আরুঃ না বাসি না।
আয়ানাঃ (মুচকি হেসে)যদি ভালো না বাসতে তাহলে তোমার আয়ান মরলো না বাচলো তাতে তোমার কিছু যায় আসতো না।যদিও এটার প্রমান বিকালে পেয়েছি।আমি জানি তুমি এখনো আয়ানকে ভালোবাসো কিন্তু সেটা এখন চাপা পরে আছে।
আরু কিছু না বলে আকাশের দিকে তাকালো।
আয়ানা আবার বললো,
আয়ানাঃ আরু আবারও বলছি আমার ভাইটাকে ছেড়ে যেও না।এবার তুমি চলে গেলে ও নিজেকে শেষ করে দিতে দু’বার ভাববে না।ও অনেক বার এমন স্টেপ নিয়েছে কিন্তু আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত কিছু হয়নি।অবশ্য বাবা মা হতে দেয়নি।
আরু চমকে গেলো আয়ানের কথায়।আরু বললো,
আরুঃ মানে?কী হয়েছিলো?
আয়ানাঃ আমি বলবো না।যদি কখনো ইচ্ছে করে তাহলে ওর শরীরটা দেখো।তখন নিজেই বুজতে পারবে।..শুয়ে পরো।অনেক রাত হয়েছে
আয়ানা চলে যাচ্ছিলো কিন্তু একটু দাড়িয়ে বললো,
আয়ানাঃ আমার কথাগুলো একবার ভেবে দেখো।তোমাকে জোর করছি না।ভেবে দেখতে বলেছি🙂।

আরও খুব মাথা ব্যাথা করছিলো।অবশ্য করবে না-ই বা কেনো?আজ সারাদিন যে গেলো ওর উপর দিয়ে।আরু একটা স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো।যদিও এটা আয়ানকে দিয়ে আনিয়েছে।
———-
রাত ১ টা,
সবাই সবার রুমে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।আর একজন চুরি করতে এসেছ।সেটা কে জানেন?আয়ান।জ্বী আয়ান পা টিপে টিপে আরুর রুমের দিকে আসছে।দরজা খুলতে খটখট আওয়াজ হয়েছে কিন্তু আরু শুনতে পেলো না।কিভাবে শুনবে ও তো স্লিপিং পিল খেয়ে মরার মতো ঘুমাচ্ছে।আয়ান আরুর সামনে বসে ভাবলো,
আয়ানঃ লও ঠেলা।কই আজ বিয়ে হলো বাসর হবে।বউ বরের জন্য ঘোমটা টেনে বসে বসে অপেক্ষা করবে।তা না আমার বউ আমার থেকে আলাদা রুমে এসে ঘুমাচ্ছে।🤦‍♂️😣।ব্যাটা আয়ান তোর ভাগ্য টাই খারাপ।চল নিজের কাজে লেগে পর।
আয়ান আরুকে আস্তে করে কোলে নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে এলো।তারপর বিছানায় শুইয়ে দিলো।আয়ানও গিয়ে আরুর পাশে শুয়ে পরলো।কিন্তু ঘুমালো না
—————-
সকাল ৯ টা
আরুর ঘুম ভেঙেছে।কিন্তু চোখ খুলতে পারছে না।মেডিসিনের প্রভাবটা এখনো আছে।তাই চোখ না খুলে অন্য পাশ ফিরে গেলো।ঘুরার একটু পর আরু ওর ঘাড়ে গরম নিশ্বাসের উপস্থিতি পেলো।কিন্তু তাও চোখ খুললো না।কিছুক্ষন পর আবার পেলো।এবার আরু ঝট করে চোখ খুললো।ওপাশে ফিরে তাকাতেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো।আয়ান কাত হয়ে হাতে মাথা ঠেকিয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে।আরু এবার চারদিকে ঘুরে রুমটা দেখছে।না কালকে গেস্ট রুমে শুয়েছিলো কিন্তু এখন তো সেখানে নেই।
আয়ানঃ ভেরি ভেরি গুড মর্নিং বউ😚
আরুঃ এসবের মানে কী?😠এটা কোথায়?আর আমি তো গেস্ট রুমে ছিলাম।তার মানে…….
আয়ানঃ হ্যা আমি।কাল আমাদের ফাস্ট নাইট ছিলো কিন্তু তুমি সব ভেস্তে দিলে☹️।আমার এতো দিনের স্বপ্ন সব শেষ করে দিলে।
আরুঃ বাজে বকা বন্ধ করুন।আমি আপনাকে বলেছিলাম আমাকে স্পর্শ না করতে।তারপরও আপনি..
আরুর কথাকে উপেক্ষা করে বালিশে শুয়ে বললো,
আয়ানঃ সরি বউ তোমার কথা মানতে পারলাম না😊।আমার বউ আমি যা খুশি তা করবো তা তুমি বলার কে?….আর এমনিতেও সারারাত তোমার জন্য ঘুমাতে পারি না।আমি এখন ঘুমাবো তাই ডিস্টার্ব করবে না।
আরুঃ সারারাত ঘুমাতে দেই নি মানে কী😠।আজেবাজে কথা বলতে নিষেধ করেছি😠
আয়ানঃ আরে জানপাখি।সারারাত আমার ঘুমপরী কে দেখে রাত কাভার করেছি।তাই এখন আমি ঘুমাবো।

বলেই আয়ান বালিশে মুখ গুজে শুয়ে পরলো।আর এদিকে আরু রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।আয়ান আবার মাথা তুলে বললো,
আয়ানঃ ওও হে!কালো কর্ভাডের বা পাশে তোমার সব প্রয়োজনীয় সব রাখা আছে।আর বাকী কিছু থাকলে বলে দিও বিকালে নিয়ে আসবো।
আবার শুয়ে পরলো।আরু নিজের রাগ কী দিয়ে মিট করবে ভেবে পাচ্ছে না।তাই পাশের টেবিল থেকে গ্লাস তুলে নিয়ে গ্লাসের পানি গুলো আয়ানের মাথায় ঢেলে দিলো।
আয়ান লাফ দিয়ে উঠে বসলো।মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
আয়ানঃ হোয়াট দ্যা…..কী করেছো এটা?
আরুঃ কেনো কী ভেবেছেন?আমার লাইপ তেজপাত করে দিয়ে নিজে আরামের ঘুম দেবেন?তা তো হবে না চান্দু।😅এবার ঘুমাতে পারেন।
আরু প্রেশ হতে চলে গেলো।আর আয়ান রাগ করবে না হাসবে বুঝতে পারলে না।তবে মুচকি হেসে চলে গেলো বাহিরে।
————-
আরু ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই মায়ান দৌড়ে এলো আরুর কাছে।এই এক দিনেই আরুর সাথে ভালো ভাব জমে উঠেছে মায়ানের।আরু আর মায়ান সোফায় বসে দুষ্টুমি করছে আর মায়ান খিলখিল করে হাসছে।আর আয়ানর মা দাড়িয়ে দেখছিলো।আর ভাবছে,” আমার বাড়িতে আজ সবাই খুশি।আবার যেনো এই বাড়িতে প্রাণ ফিরে এসেছে।তিনি শুধু দোয়া করছেন সব সময় যেনো তার বাড়ি হাসি,আনন্দতে ভারে থাকে।আর কষ্টের ছায়াও এই বাড়ির কারো উপর না পরে।”
আয়ানের মা সবাইকে খেতে ডাকলেন।সবাই টেবিলে বসলে।আরু বসতেই ওর বাসার সবার কথা মনে পরলো।আর চোখ ভেসে উঠলো পানিতে।কালকেও সবাই একসাথে ছিলো।একসাথে খাবার খেয়েছে।কিন্তু আজ?আরুকে না খেতে দেখে মায়ান বললো,
মায়ানঃ মামি তুমি খাচ্ছো না কেনো?খাবার মজা হয়নি?কিন্তু নানুমনি তো অনেক মজার খাবার বানায়।তোমার ভালোলাগে নি?

আরু নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
আরুঃ না বাবা খাবার মজা হয়েছে।আসলে আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।আমি একটু পরে খাবো।তুমি খেয়ে নাও।
মায়ানঃ না তুমি না খেলে আমিও খাবো না😔।আমরা একসাথে খাবো।
আরুঃ তুমি না গুড বয়?আর গুড বয়দের তো সব কথা শুনতে হয়।তাই তুমি এখন খেয়ে নাও।তুমি আর আমি একটু পর একসাথে খাবো তখন আমাদের সাথে কেউ থাকবে না।আর তুমি যদি এখন না খাও তাহলে আমি তোমার সাথে আর খেলবো না।খেলতে চাইলে খেয়ে নাও।হুম?

মায়ান ভালো ছেলের মতো মাথা নাড়লো।আর আরু আয়ানের মা’র দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।উনিও ইশারায় যেতে বললেন।আরো এভাবে চলে যাওয়াতে সবাই আসল কারণ বুঝলো।আর আরুর মনের অবস্থাও।
আরু চলে গেলে আয়ান এলো।এসে আরুকে চারপাশে খুজলো কিন্তু পেলো না।তাই আয়ানাকে ইশারায় বললো আরু কই?আয়ানা তেতে উঠে বললো,।আয়ানাঃ সব দোষ তোর।
আয়ানঃ আমি কী করলাম 😦
আফিয়া রাহমানঃ মেয়েটাকে এভাবে তুলে এনে বিয়ে করার কী দরকার ছিলো?সেই তো কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা।কাল সকালেও নিজের পরিবারের সাথে ছিলো একসাথে খেয়েছে আর আজ?যদিও হাসি মুখে এখানে আসতো তাও কথা ছিলে কিন্তু তাও না।
আয়ানঃ কী হয়েছে বলবে তো?

আয়ানা একটু আগে হওয়া সব বললো।সব শুনে আয়ান চুপ করে মাথা নিচে দিয়ে বসে রইলো।ওর ও তো কষ্ট হচ্ছে।আরুর কষ্টে আয়ানেরও কষ্ট হচ্ছে ।তাই আয়ানা বললো,
আয়ানাঃ এখন কথা বলছিস না কেনো?আজকে ওর জায়গায় আমি থাকলেও মনে হয় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতাম না।সবটা ভুলতে পারতাম না।এতোকিছুর পরেও।হটাৎ করে অচেনা মানুষে,অচেনা জায়গা তুই ভাবতে পারিস কতো কষ্ট হচ্ছে ওর?ওর জায়গায় আমি থাকলে তো মনে নিজেকে শেষ করে দিতাম।কিন্তু সেই জায়গায় আরু অনেক স্ট্রং।আর হবে না-ই বা কেনো?৫ বছর ধরে নিজেকে শক্ত করেছে।

আয়ানের বুকটা ফেটে যাচ্ছে।ও তো আরুকে কষ্ট দিতে চায়নি।ও তো চায় আরুর সব কষ্ট নিজের করে নিতে।তার বিনিময়ে আরু একটু ওকে আগলে রাখুক।এটা কী অন্যায়?
আয়ান কিছু না বলে আরুর খাবার নিয়ে উপরে চলে গেলো।
———-
আয়ান রুমে এসে দেখে আরু নেই।প্লেট রেখে বেলকনিতে গেলো।গিয়ে দেখে রেলিঙে মাথা ঠেকিয়ে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আর চোখের পানি পরছে।আয়ানের ভিতরটা খুব জ্বলছে আরু চোখের পানি দেখে।আয়ান তো চায় না।ওর জন্য আরু কষ্ট পাক।
আরু বুঝতে পারলো কেউ এসেছ।কিন্তু কে এসেছে দেখার জন্য তাকালো না।
আয়ান অনেকক্ষন পর বললো,
আয়ানঃ খাবারের সাথে রাগ করেছো কেনো?রাগ করতে হলে আমার উপর করো।….না খেলে অসুস্থ হয়ে পরবে।
আরুঃ আপনি তো আমার মুখ দেখতে চান না?তাহলে কেনো বারবার আমার সামনে আসেন চলে যান এখান থেকে।
আয়ানঃ আরু…….
আরু এবার আয়ানের দিকে ভেজা চোখে তাকালো।আরুর চেহারা দেখে আয়ানের বুকটা ধক করে উঠলো কষ্টে।
আরুঃ একবেলা না খেলে মরে যাবো না।কিন্তু আমার মন,অনুভূতি,আবেগ,ভালোবাসা সেই দিনই মরে গেছে যেদিন আপনি সবার সামনে গায়ে হাত তুলে বলেছেন আপনি আমার মুখ দেখতে চান না।সেই দিনের পর থেকে জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছি।কিন্তু কাল সেই জীবন্ত লাশ ও আপনি কয়লা বানিয়ে দিয়েছেন।আর কী চান আপনি?

আয়ান আর কিছু না বলে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
আয়ানঃ খেয়ে নিও।

আর ১ সেকেন্ডও আয়ান দাঁড়ালো না চলে গেলে।
————
আরু ওয়াশরুমে গিয়ে ঝর্নার নিচে দাড়িয়ে কাঁদছে।কান্নার শব্দ তে লুকিয়ে আছে হাজারো কষ্ট।ওর কান্নার শব্দ পুরো পরিবেশ নিঃশব্দে শুনছে।
ওয়াশরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আয়ান আরুর চিৎকার শুনছে।ওর চোখ দিয়েও পানি ঝরছে।পুরুষ তো না পারে সইতে না পারে মন খুলে কাঁদতে না পারে মন খুলে কারো কাছে নিজের সব কষ্ট শেয়ার করে হালকা হতে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here