শ্রাবন আধারে তুমিপার্ট :১৬

0
485

শ্রাবন আধারে তুমিপার্ট :১৬
লেখিকা:আফরিন ইসলাম

রাতের অন্ধকার কেটে গেছে ৷চারিদিকে আলো ফুটে উঠছে ৷অন্ধকার রাতকে বিদায় জানিয়ে আবারো দিনের আগমন ৷কিন্তু সবার জীবনে আলোর দেখা মিলে না ৷যেখানে কেবল অন্ধকারের রাজ্যত্ব ৷

রাইয়ের ঘরের দরজায় ক্রমাগত ধাক্কা দিচ্ছে সাদি ৷একটু আগে একজন সার্ভেন্ট রাইকে ডাকতে এসে ছিল ৷রাইয়ের ব্যাপারে বাড়ীর সবাই জানে ৷রাই যখন অনেক ডাকার পরেও আর সাড়া দিল না ৷তখন সার্ভেন্ট সবাইকে ডেকে নিয়ে আসে ৷পনেরো মিনিট যাবত সাদি দরজায় ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে ৷ গলা ফাটিয়ে রাইকে সবাই ডেকে যাচ্ছে ৷কিন্তু দরজার ওপারে থাকা মানুষটা আজ বড্ড অসহায় ৷ভাইয়ের মতো মানুষটার চিৎকার কানে ভেসে গেলেও কিছু তার করার নেই ৷ উপর ওয়ালা তার সব শক্তি কেড়ে নিয়েছে ৷তবুও নিজের চোখ জোড়া খুলে রাখা চেষ্টা সে করেই চলেছে ৷

সাদি চিৎকার করে ডাকলো ‌৷ রাই দরজা খোল ৷এমন করিস না ৷ তোর কোনো ভয় নেই ৷ভাই দরজা ভেঙ্গে তোকে বের করবে ৷ভয় পাস না কেমন ৷ সাদির মা চোখের পানি মুছে নিলেন ৷এর মধ্যে দরজার লক কাটার লোকেরা চলে এসেছে ৷তারা নিজেদের কাজ শুরু করে দিল সাথে সাথে ৷দরজার লক কাটতে খুব একটা সমস্যা হলো না ৷মিনিট দুইয়ের মধ্যেই দরজার লক খুলে গেল ৷ দরজার লক খুলতেই সাদি দৌড়ে ঘরে গেল ৷ রাইকে ঘরে না পেয়ে বারান্দায় ছুটে গেল সাদি ৷কিন্তু সেখানেও রাইকে পেল ৷

হঠাৎ সাদি নিজের মায়ের চিৎকার শুনতে পেল ৷সে রাইয়ের নাম ধরে চিৎকার করছে ৷দৌড়ে ওয়াসরুমের মধ্যে যেতেই এক ভয়ংকর দৃশ্য সাদি দেখতে পেল ৷ তার চোখের সামনেই রাই নামের সহজ সরল মেয়েটা পরে আছে ৷যার মাথায় চুল নেই ৷যেই চুল কিনা মেয়েদের সৌন্দর্যের অংশ ৷ চুল গুলো ওয়াশরুমের মেঝেতে পরে আছে ৷ যে মুখটা আগে খুশিতে লাল হয়ে যেত ৷ যেই মুখটা আগে লজ্জা পেলে লাল হয়ে যেত ৷সেই মুখটা আজ লাল রঙ্গে রঞ্জিত ৷ মায়াবী চোখ জোড়া আজ গর্তে প্রবেশ করেছে ৷চেহারার সৌন্দর্য বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৷ ঠোটঁ শুষ্ক হয়ে গেছে ৷রাইয়ের নিথর দেহটা পরে আছে ফ্লোরে ৷এই দৃশ্য কি সত্যি সহ্য করা যায় ৷ সাদি তা জানে না ৷ এর জন্যই হয় তো সাহিত্যিকরা বলেন

করো চোখের প্রেমে পরতে নেই
অন্ধ হয়ে গেলে ভালোবাসা ফুরিয়ে যাবে ৷

কারো চুলের প্রেমে পরতে নেই
ক্যান্সারে ঝড়ে যেতে পারে ৷

কারো রুপের প্রেমে পরতে নেই
আগুনে ঝলসে যেতে পারে ৷

কারো হাসির প্রেমে পরতে নেই
চর্মরোগের প্রভাবে নষ্ট হতে পারে ৷

কারো কথার প্রেমে পরতে নেই
যে কোনো সময় বোবা হয়ে যেতে পারে ৷

যদি সত্যি কারো প্রেমে পরতে হয় ৷তবে ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড় ৷ব্যক্তিত্ব কখনো নষ্ট হয় না ৷ তা কেবল সুন্দর হয় দিনকে দিন ৷অপর দিকে সেই রূপের মোহে আজ দুনিয়া মত্ত ৷ যা কিনা নষ্ট হতে পারে চোখের নিমিষে ৷

রাইয়ের কাধে সাদি একের পর এক ধাক্কা দিতে লাগল ৷রাই পিটপিট করে নিজের চোখ জোড়া খুলল ৷তারপর খুব কষ্ট করে বলল

আমায় একটু পানি দেবে সাদি ভাই ৷বড্ড পিপাসা লেগেছে ৷সাদি রাইকে কোলে করে ঘরে নিয়ে আসলো ৷সাদির মা কাদঁতে কাদঁতে পানি আনতে গেলেন ৷

রাইয়ের চোখ বার বার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ৷রাইয়ের মাথাটা সাদির কোলে ৷সাদির মা পানি নিয়ে ঘরে আসলেন ৷রাইয়ের মুখের কাছে পানি ধরলেন ৷রাই নিজের মুখটা বাড়িয়ে দিল ৷ রাইকে কাদঁতে কাদঁতে পানি খাইয়ে দিতে লাগলো সাদির মা ৷ মেয়েটা বড্ড ভালো ৷ কিন্তু আজ তার এই অবস্থা তিনি মেনে নিতে পারছেন না ৷

রাইয়ের গলা থেকে পানি নিচে গেল না ৷ রাইয়ের গলা থেকে আবারো রক্তর স্রোত আসতে লাগল ৷ নাক আর কান থেকে প্রবল বেগে রক্ত আসতে লাগল ৷রাই নিজের গলা চেপে ধরলো দুই হাতে ৷ রাইয়ের চোখ উল্টে গেছে ৷ সাদি আর দেরি করলো না ৷রাইকে আবারো কোলে তুলে নিল ৷সাদি রাইকে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাড়ীতে নিয়ে শুইয়ে দিল তার মায়ের কোলে ৷তারপর নিজে ড্রাইভ করতে লাগলো ৷ড্রাইভ করতে করতে ফোন করলো তার ডাক্তার বান্ধবী প্রিয়ন্তীর কাছে ৷সাদি ফোন করার কিছুক্ষন পরেই প্রিয়ন্তী রিসিভ করলো তারপর বলল

হ্যা সাদি বল ৷ হঠাৎ ফোন করলি কেন ৷

সাদি রাইয়ের অবস্থার কথা বিস্তারিত বলল ৷আর রাইয়ের চিকিৎসার সব রকমের ব্যবস্থা করতে বলল ৷তারপর ফোন রেখে দিল ৷

অপর দিকে আবরার হাতে রাইয়ের সাইন করা সেই ডিবোর্স পেপারটা ৷ আবরার পেপারটার দিকে তাকিয়ে আছে ৷তারপর একটা কটাক্ষ হাসি দিয়ে বলল

কি ভেবেছো আবরার তোমাকে ছাড়া মরে যাবে ৷ নো ডিয়ার ৷তুমি এই আবরার খান জয়কে এখনও চেনো না ৷এইটা ঠিক আমি আমার জীবনে আর কখনো কাউকে প্রবেশ করাতে পারবো না ৷কিন্তু বেচে থাকবো আর তোমাকে ছাড়াই ৷আমি কাল চলে যাব ৷ সারা জীবনের মতো তোমাকে রেখে ৷ ভালো থেকো তুমি ৷নিজে চোখের পানিটা আবরার মুছে নিল হাতের তালু দিয়ে ৷

অপর দিকে সাদির গাড়ী ট্রাফিক জ্যামে আটঁকে পড়েছে ৷জ্যাম ছাড়তে দেরি হবে ৷এই দিকে রাইয়ের অবস্থা বেগতিক হচ্ছে ৷ হঠাৎই সাদির মা সাদিকে বলল

সাদি রাই কোনো রেসপন্স করছে না ৷তাড়াতাড়ি কিছু কর বাবা ৷

সাদি ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখলো রাইয়ের অসহায় পানা মুখটা ৷সাদি গাড়ী থেকে বেড়িয়ে এলো ৷রাইকে গাড়ী থেকে বের করলো ৷তারপর কোলে নিয়ে ছুট লাগালো ৷আর চিৎকার করে কাদঁতে কাদঁতে রাইকে ডাকতে লাগলো ৷আচ্ছা সাদির মতো এই নিঃস্বার্থ মানুষটার কান্না ভেজা চিৎকার কি রাইয়ের কানে পৌছাবে ৷ নাকি এখানেই শেষ হবে শ্রাবন আধারে তুমি ৷

চলবে …..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here