#Journey episode19

0
185

#Journey episode19

#১৯

জেসমিন বুঝতে পারছে না কি করবে,হাসবে নাকি কাঁদবে।দেখে, রাইফ মাঠের মধ্যে এক গাদা ব্লক দিয়ে ওর ছবি বানিয়েছে,তার পাশে ইটালিয়ান ভাষায় আর ইংরেজিতে লিখে রেখেছে,

“এই মেয়েটি হারিয়ে গিয়েছে।কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি তাকে খুঁজে পেলে ডাকবেন না,শুধু মুচকি হাসবেন,সে নিজেই চলে আসবে!”

জেসমিন মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কয়েকজন ওকে লক্ষ্য করেছে,তারা নিজেরা ফিসফিসিয়ে একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে দেখাচ্ছে।তার মাঝে সাহসী এক মেয়ে জেসমিনের কাছে এসে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
“এটিই কি তুমি নও? তোমাকে নিয়ে এই ছেলে এরকম কেন করছে? তোমার বন্ধু নাকি?রাগ করেছ ওর উপর?”
জেসমিন কটমট করে মেয়েটার দিকে তাকায়।মেয়েটা বুঝতে পেরে সরে যায়।

সামনে রাইফ গীটার নিয়ে মাথা নিচু করে একটু বাঁয়ে ঘুরে কি যেন করছিল,জেসমিন আশেপাশের মানুষের সাইড কমেন্ট শুনে বুঝতে পারে, অনেকক্ষণ ধরে এই পাঁজি ছেলেটা গান গাচ্ছিল গীটার বাজিয়ে।রাইফ ঘাড় ঘুরিয়ে উপস্থিত জনতার দিকে তাকায়,তার মাঝে হাঁ করে চেয়ে থাকা জেসমিনকে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটায়।যাক!উদ্দেশ্য সফল হল!সিনেমার স্লো মোশন ফুটেজের মত ধীরে চুল ঠিক করে,গীটার হাতে নিয়ে পজিশন নেয়।গুনগুন করে গান ধরে,

আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আমার দিনগুলো সব রঙ চিনেছে তোমার কাছে এসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে,
ভোরের শিশির ঠোট ছুঁয়ে যায় তোমায় ভালবেসে…
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালবেসে।

আমার ক্লান্ত মন ঘর খুঁজেছে যখন
আমি চাইতাম
পেতে চাইতাম
শুধু তোমার টেলিফোন…
ঘর ভরা দুপুর,
আমার একলা থাকার সুর
রোদ গাইতো, আমি ভাবতাম
তুমি কোথায় কতদূর?
আমার বেসুরে গীটার সুর বেঁধেছে, তোমার কাছে এসে,
শুধু তোমায় ভালবেসে।
আমার একলা আকাশ চাঁদ চিনেছে তোমার হাসি হেসে
শুধু তোমায় ভালবেসে…

গান গাওয়া শেষে সবাই হাততালি দেয় যদিও রাইফের ভাষা কেউই বুঝেনি,তবুও।অবশ্য ভালোবাসা আলাদা একটা ভাষা,যে ভাষা প্রাণীকুল মায়ের গর্ভ থেকেই শিখে জন্ম হয়।এই ভাষা বুঝতে কোন জাত-ধর্ম-বর্ণ-প্রজাতি দেখতে হয় না।সবাই বুঝেছে রাইফ যে জেসমিনের প্রেমে উপুত হয়ে পড়েছে।আর রাইফ দেখে জেসমিন এখনও ওর দিকে একইভাবে তাকিয়ে আছে,শুধু মুখের হাঁ টা আরেকটু প্রশস্ত হয়েছে।

রাইফ জেসমিনের দিকে তাকিয়ে বড় করে হাসি দেয়।জেসমিন এখনও বুঝতে পারছে না ও নিজ চোখে যা দেখছে,তা সত্যি কিনা!রাইফ কি আসলেই এখানে? রাইফ কি সত্যিই এরকম কিছু করছে নাকি এটা স্বপ্ন? ভাল কথা,রাইফ কি মাত্র একটা প্রেমের গান গাইল?!জেসমিনের মনে হয় মাথা হ্যাং করেছে।ঠিক এই সময়ে কানের কাছে একটা কন্ঠ বলে,

“ঠিক ভাবছ,ও তোমাকে ভালোবাসে!তুমিও হ্যাঁ বলে দাও!”

জেসমিন ভয় পেয়ে এক লাফ দিয়ে সরে যায়।বিস্ফোরিত চোখে দেখে জাফার হাসছে।জাফার!! জেসমিন মুখে হাত চেপে ধরে একবার জাফারের দিকে আরেকবার রাইফের দিকে তাকায়।হচ্ছেটা কি কেউ বলবে??

এদিকে জাফার আর রাইফ হেসে কুটি কুটি হচ্ছে,সাথে আছে সেলিমও,যদিও সে কিছুই না বুঝে হি হি করে হাসি দিয়ে হাত তালি দিচ্ছে।জেসমিনে এতটাই ভড়কে গেছে যে কি করবে,কি বলবে,এমনকি কি চিন্তা করবে সেটাও বুঝতে পারছে না।

হুট করে ওর কি হল কে জানে,উল্টো ঘুরে এক দৌড়! রাইফ আর জাফার মুখ চাওয়া চাওয়ি করে,এটা কি হল? মেয়েটা চলে গেল কেন?! দুইজনেই জেসমিনের পিছে পিছে দৌড় দেয়।জেসমিন দৌড়াতে দৌড়াতে গাড়ির কাছে চলে আসে।একটু দম ফেলে,সেই কবে যে শেষ দৌড়েছে মনেও নেই!চাবি লাগিয়ে এক টানে দরজা খুলতে গিয়ে কে যেন বাঁধা দেয়।ঘুরে দেখে রাইফ,এক হাত দিয়ে দরজা চেপে ধরে আছে।ওর পেছন পেছন সেলিমকে কোলে নিয়ে জাফার হাঁপাতে হাঁপাতে আসছে।জেসমিনের মেজাজ খারাপ হচ্ছে।

“এভাবে দরজা আটকে রেখেছিস কেন?!হাত সরা!”
রাইফ এবার দরজার উপর হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।
“আগে বল তুই এরকম দৌড়ে পালালি কেন?”
“এমনিই,সর এখন!”
“না,আমার উত্তর দিতে হবে”
“তোর কাছে উত্তর দিব?মানে কৈফিয়ত চাস?দুর হ তো!”

পেছন জাফার এসে বলে,
“সত্যিই তো!এরকম ভীতুর মত পালাচ্ছ কেন?রাইফ কি একটা বাঘ না ভালুক?”
“আপনি আবার এর মাঝে কখন আসলেন!আর এসেই এই গাধার সাফাই গাচ্ছেন!কি অদ্ভুত!”
“কারণ আমাকে রাইফ কথা দিয়েছে দাওয়াত খাওয়াবে”
“মানে!কিসের দাওয়াত?”
“কেন তোমার বিয়ের দাওয়াত!”
“হোয়াট?!”

রাইফ মুচকি মুচকি হাসছে।জেসমিনের সেই হাসি দেখে মন চাচ্ছে একটা থাপ্পড় দিতে,অথবা দুহাতে মুঠ করে চুল গুলো ছিড়ে ফেলতে,কিন্তু ও সেরকম না আর সেটাই রাইফের জন্য রক্ষা।রাইফ একটু এগিয়ে জেসমিনের হাত ধরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে,

“বিশ্বাস করবি কিনা জানি না,পৃথিবীতে এই মুহুর্তে যদি আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত আর কাছের কোন মেয়ের নাম বলতে বলে,আমি সবার আগে তোর নাম বলব! আমি জানি আমি খারাপ,আমি তোর অযোগ্য, আমি জানি তোকে কখনও বুঝিনি,কাছে আসি নি,যেখানে তুই সবসময়ই আমার পাশে ছিলি৷কখনও বুঝিনি তোর আমার প্রতি অনুভূতিগুলো। আমি অনেক স্বার্থপর ছিলাম,তাই কারো দিকে তাকাই নি,নিজেকে নিয়ে নিজেই ব্যস্ত ছিলাম।কিন্তু যেদিন তুই আমার শহরে আমাকে খুঁজতে আসলি,বললি যে আমাকে খুঁজতে তুই সাড়ে তিন দিন খরচ করেছিস, সেদিন আমার ভেতর কি হল আমি জানি না! বুকের বাঁ পাশে ধক করে উঠল,আমার জন্যেও কেউ রাজপথে হাঁটবে? আমার মত যাযাবরের সন্ধানেও কেউ এত কষ্ট করতে পারে?আমার মনে তখন থেকেই শুধুই তুই। জানিস,প্রেমে পড়তে খুব বেশি সময় না,শুধু এক ন্যানো সেকেন্ড লাগে,আর তুই আমাকে এইটুকু সময়েই হেঁচড়ে নিজের প্রেমে ফেলেছিস! তোর হাসি,কথা,দুষ্টুমি,রাগ,অভিমান,আমার সব ভালো লাগে! তুই সেদিন অনেক রাগ করেছিস,কেন করেছিস তাও জানি…কিন্তু এ নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই,I swear! আমি তোকে এখন আরো বেশি ভালোবাসি! আর যতদিন বাঁঁচব,তোকেই ভালবাসব! প্লিজ,আমাকে ফিরিয়ে দিস না!”

জেসমিন দুহাতে মুখ চেপে কাঁদছে,ওর অশ্রু হাত বেয়ে পড়ছে।ওকে কাঁদতে দেখে জাফার,রাইফ সেলিম তিনজনই নির্বাক হয়ে আছে।কাঁদতে কাঁদতে জেসমিন হেঁচকি তুলতে শুরু করে এক সময়।রাইফ ভয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জেসমিনের কাছে চলে আসে।ওকে কি সান্ত্বনা দিবে,বা কি বলবে সেটা ভাবতে ভাবতে জেসমিন দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরে! কোনোমতে বলে,

“তুই কেন সব জানতে গেলি!কে…ন?আমি খারাপ মেয়ে, এখন তুইও একদিন চ…লে যাবি,ভা…লবাসবি ন…আ।আমি…”

বেচারি কথা শেষ করতে পারে না।জাফার বলে,
“বোকা মেয়ে! রাইফ কেন তোমাকে ভালবাসবে না?তোমার জীবনে যা হয়েছে,তাতে তোমার কি দোষ আছে নাকি?”
রাইফ জেসমিনকে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে বলে,
“পাগলী!একটু থাম! তুই যে এখন কাঁদছিস,আমার কেমন লাগছে তোকে বুঝাতে পারব না! থাম না প্লিজ?প্লিজ?”

ধীরে ধীরে জেসমিন কিছুটা ধাতস্থ হয়,তবুও থেকে থেকে কেঁদে ফেলে,চোখের পানি বাঁধা মানে না,টুপ করে পড়ে যায়।জাফারের কাছ থেকে সেলিম এবার এগিয়ে আসে,জেসমিনের কাপড় টেনে ধরে বলে,
“আন্টি! তুমি কি আমার মত বেবী? তুমি কি ক্যান্ডি খাবা? এই যে,আমারটা নাও,কিন্তু কেঁদো না।তোমাকে কাঁদলে পঁচা লাগে!”

সেলিমের কথা শুনে জেসমিন ফিক করে হেসে ফেলে। ওকে কোলে নিয়ে কপালে আদরের পরশ বুলিয়ে দেয়।
“আমি কাঁদব না রে বুড়ো!একদম কাঁদব না আর!আমি শুধু হাসব,ঠিক আছে?”
জাফার বলে,
“তাহলে আমরা একটা বিয়ে খাচ্ছি? তাই না?? ইয়াহু!!!”

রাইফ আর জেসমিন লজ্জায় লাল হয়ে যায়।বিয়ের নাম শুনলে কে লজ্জা পায় না???

চলবে…

লেখনীতে, #AbiarMaria

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here