#মৃত_কাঠগোলাপ – ২৫

0
302

#মৃত_কাঠগোলাপ – ২৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

আয়েশী ফ্রেশ না হয়েই ধপাধপ পা ফেলে কক্ষ ছেড়ে বেরোয়। চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝ’ড়ছে। সামনে যা পাবে তাই যেন ভ’স্ম করে দেবে। আয়েশীর এমন ভয়ংকর রাগ দেখে ধ্রুবর বাড়ির সার্ভেন্ট সব ত’টস্থ হয়ে সরে যাচ্ছে। আয়েশী ম্যাম রে’গে গেলে ধ্রুব স্যার নিশ্চয়ই তাদের উপর রাগ ঝাড়বে। তারপর এত ভালো একটা চাকরি হাত থেকে ফসকে যাবে। আয়েশী একজন সার্ভেন্ট এর সামনে দাঁড়াল। কাঠকাঠ কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
‘ ধ্রুব কোথায়? ‘
মেয়ে সার্ভেন্ট মাথা নত করে কাপতে কাপতে উত্তর দিল,
‘ স্যার উনার ঘরে আছেন। ঘুমাচ্ছেন। ‘
আয়েশী আর কথা বাড়াল না। হন্য হয়ে ধ্রুবর ঘরের দিকে চলল। এত বড় একটা কান্ড করে এখন ঘুমানো হচ্ছে! কতবড় বে’য়াদব!
আয়েশী ধ্রুবর ঘরের সামনে এল। দরজা বন্ধ করা। আয়েশী দরজায় করাঘাত করল। একবার, দুবার, তিনবারের সময় ভেতর থেকে ধ্রুবর ঘুমঘুম কণ্ঠ ভেসে এল,
‘ উম, ভেতরে আসো। ‘

আয়েশী কিছুটা অবাক হল। ধ্রুব তুমি বলে সম্বোধন করছে। অর্থাৎ ধ্রুব জানে আয়েশী এসেছে। কিভাবে জানল? সে যাক গে। এখন তো আয়েশী ধ্রুবর মাথা ফা’টানোর সময়। এখন এসব ভাবল চলবে না। আয়েশী দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল। ধ্রুব উদোম গায়ে উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। ধবধবে ফর্সা শরীরে স্থানে স্থানে গভীর ক্ষ’তের দাগ। পিঠের কিছু জায়গা কা’লশিটে হয়ে গেছে। কার থেকে মা’র খেয়ে এসেছে কে জানে। আয়েশী ধ্রুবর পাশে এসে দাঁড়াল। দাতে দাত চেপে প্রশ্ন করল,
‘ আপনি আমার কাপড় বদলেছেন? ‘
ধ্রুব তখনো ঘুমাচ্ছে। গরম গরম নিঃশ্বাস ছেড়ে বুঝাচ্ছে, আয়েশীর কথার মূল্য তার কাছে এক পয়সাও না। আয়েশী রা’গে ফেটে পড়ল। উত্তর দিচ্ছে না। কতবড় বে’হায়া লোক। আয়েশী ধ্রুবর দিকে চেয়ে চেঁচিয়ে বলল,
‘ উত্তর দিন। আপনি আমার কাপড় বদলেছেন কি না? ‘
ধ্রুব এবার চোখ খুলল। চোখ খুললো বলতে চোখের পাতা টেনেটুনে জোর করে খুলে দিল। অত্যাধিক ঘুমে চোখের শুভ্র অংশ লাল হয়ে আছে। যেন এখুনি চোখ থেকে র’ক্ত পড়বে। আয়েশী সেসব পাত্তা দিল না। চোখে আগুনসম রা’গ নিয়ে চেয়ে রইল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে কোন পরিষ্কার করল। ঘুমঘুম কণ্ঠে বলল,
‘ আস্তে কথা বল। আমি বয়রা নই। শুনতে পাই। ‘
আয়েশী রা’গে এবার যেন কেঁদে ফেলবে। এত অপমান সে জন্মেও বোধ করেনি। চোখের কোণ ছলছল করছে। আয়েশী রা’গ সংবরণ করতে না পেরে আবার চেঁচিয়ে বলল,
‘ আমার জামা কাপড়ে হাত দেওয়ার সাহস কোথায় পেলি, শয়তান! উত্তর দে। ‘

আয়েশীর কণ্ঠে ‘তুই-তোকারি’ শুনে ধ্রুবর মাথার র’ক্ত ছলকে উঠল। সে হাত বাড়িয়ে আয়েশী হাত খপ করে ধরল। অতএব একটানে আয়েশী ধ্রুবর বুকের উপর। কি হল, আয়েশী বুঝতে পারল না। ফ্যালফ্যাল চোখে কিছুক্ষণ সিলিংয়ের দিকে চেয়ে রইল। ধ্রুব যখন আয়েশীর বাহু খা’মচে ধরল, তখন আয়েশীর হতবম্ব ভাব কাটল। অতঃপর ধ্রুবর থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য রাগ, ছোটাছুটি, ধস্তাধস্তি যা পারে করল। তবে খুব একটা লাভ হল না। বরং ধ্রুবর হাতের বাঁধন আরো শক্ত হল। আয়েশীর ফর্সা নরম বাহু ধ্রুবর শক্ত হাতের চাপে লাল হয়ে গেল। আয়েশী মেয়েটা তবুও দমে গেল না। র’ক্তলাল চোখে ধ্রুবর দিকে চেয়ে চেঁচিয়ে বলল, ‘ আমায় ছাড় নয়ত আমি তোকে খু’ন করে ফেলব। ‘
ধ্রুব চটাশ করে আয়েশীর গালে গভীর চুমু খেয়ে বসল। আয়েশী হতবম্ব হয়ে পড়ল। মুখ থেকে কথা ফুটা বন্ধ হয়ে গেল। ফ্যালফ্যাল চোখে ধ্রুবর দিকে তাকাল। ধ্রুব আয়েশীর ঠোঁটের পাশে আঙ্গুল বুলিয়ে হুস্কি কণ্ঠে বলল,
‘ ঘৃ’না, ভালোবাসা যা ইচ্ছা করো। তবে কখনো তুই তোকারি করে কথা বলবে না। আমার সবচেয়ে অপছন্দ এই সম্বোধন। ‘
আয়েশী কিছুক্ষণ ধ্রুবর উপরে ছোটাছুটি করল। ধ্রুব ছেড়ে দিল না। বরং বলল, ‘ এত নড়ছ কেন? একটু সময় চুপ করে বসে থাকা যায়না? ‘
‘ না। ‘
আয়েশীর স্পষ্ট উত্তর। ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলল। না জানি এই মেয়েটা ধ্রুবর আর কত দীর্ঘশ্বাসের কারণ হবে। ধ্রুব কিছুটা নিভে এল। মৃদু কন্ঠে প্রশ্ন করল, ‘ সমস্যা কি? এত রাগছ কেন? ‘
আয়েশী বলল, ‘ আমাকে আগে ছাড়ুন। তারপর বলছি। ‘
‘ না। ছাড়া যাবে না। আগে প্রবলেম সলভড হবে, তারপর ছাড়ব। বলো এখন। ‘
আয়েশী আরো কিছুক্ষণ ছটফট করল। অতঃপর হাল ছেড়ে দিয়ে কঠিন কণ্ঠে আগের করা প্রশ্ন বলল,
‘ আমার কাপড় বদলেছেন কেন? এত সাহস কোথায় পেলেন? আমার ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিয়েছেন! ছিঃ। ‘
ধ্রুব কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে চেয়ে রইল। তারপর হাত বাড়িয়ে একটা সুইচে চাপ দিল। সম্পূর্ন বাড়িতে একটা রিং বাজল। সেকেন্ড পরেই একজন সার্ভেন্ট হন্তদন্ত হয়ে ধ্রুবর কক্ষে এল। মাথানত করে তটস্থ হয়ে বলল,
‘ স্যার, আদেশ করুন। ‘
ধ্রুব আয়েশীর সামনের এক গোছা চুল হাতে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে প্রশ্ন করল, ‘ গতকাল ম্যাডামের কাপড় কে চেঞ্জ করেছে? উত্তর ম্যাডামের দিকে চেয়ে দে। ‘
সার্ভেন্ট আয়েশীর দিকে তাকাল। গলা উচুঁ অংশ থরথর করে কাপছে। আয়েশী ভ্রুরু কুচকে চেয়ে আছে উত্তরের আশায়। সার্ভেন্ট এক ঢোক গিলে কম্পিত কণ্ঠে বলল,
‘ কাল রাতে আমি ম্যাডামের কাপড় বদলে শাড়ি পড়িয়েছি।’
আয়েশী প্রচন্ড অবাক হলো। ঘাড় কাত করে ধ্রুবর দিকে তাকাল। ধ্রুব তখন ব্যস্ত আয়েশীর চুল আঙুলে প্যাঁচাতে। আয়েশীর সন্দেহ এখনো কিছুটা রয়ে গেছে। সার্ভেন্ট মিথ্যাও বলতে পারে। হয়তো ধ্রুব মিথ্যা বলার জন্য আদেশ দিয়েছে। হতেও পারে। আবার সার্ভেন্ট সত্যিও বলতে পারে। ধ্রুব এতটা নিচে নিশ্চয়ই নামবে না। এটাও হতে পারে। সবই হতে পারে। অনুমানের উপর ভিত্তি করে কাউকেই সন্দেহ করা যাচ্ছে না। ধ্রুব হাত উঁচু করে সার্ভেন্টকে চলে যেতে বলল। সার্ভেন্ট একবার আয়েশীর দিকে করুন চোখে চেয়ে চলে গেল। ধ্রুব আয়েশীর চুল কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল, ‘ সন্দেহ গেছে? ‘
আয়েশী উত্তর দিল না। চুপ করে কিছু একটা চিন্তা করে যাচ্ছে। ধ্রুব এবার কৌতুক করে বলল,
‘ একটু আগে তো যুদ্ধ করছিলে আমার থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য। এখন আমার বাঘিনী এত শান্ত কেন? নাকি আমার সাথে মিশে থাকতে ভালো লাগছে? হুঁ? ‘
ধ্রুবর এমন গা জ্বা’লানো কথা শুনে আয়েশীর ধ্যান এমনিই ভেঙে গেল। চট করে ধ্রুবর থেকে সরে উঠে দাঁড়াল। বলল,
‘ আমার এত শখ জাগে নি। ‘
অতএব আয়েশী চলে গেল ধ্রুবর কক্ষ থেকে। ধ্রুব বিছানায় শুয়ে আছে। এক হাত মাথার নিচে রেখে হাতের উপর ভর দিয়ে শুয়ে দরজার দিকে চেয়ে আছে। কাঠের দরজা এখনো হেলছে। বাঘিনী যেখানে যায়, সেখানের সবকিছু ভ’য়ে তা’ণ্ডব করে। হা হা হা, আমার বাঘিনী।
ধ্রুব আবার উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। বড্ড ঘুম পাচ্ছে। কাল রাতে এক ফোঁটাও ঘুম হয়নি। এখন একটা লম্বা ঘুম দিতে হবে। শরীর চাঙ্গা না হলে দুনিয়া চালাবে কি করে?

#চলবে
যারা গল্পটা পড়বেন কষ্ট করে রেস্পপন্স করবেন প্লিজ। পেইজের রিচ কমে গেছে।
সেরা কমেন্ট কারীর নাম কমেন্টসহ আমার গ্রুপে পোস্ট করা হবে। ( গত পর্বের কমেন্ট বিজয়ীদের নাম আজ সন্ধ্যায় গ্রুপে পোস্ট হবে। )
লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here