#মৃত_কাঠগোলাপ – ২৪

0
286

#মৃত_কাঠগোলাপ – ২৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ক্লান্ত দিনের শেষভাগ। সম্পূর্ন দেশ ঢেকে আছে রাতের ঘুটঘুটে কালো রঙে। রাতের শেষভাগে ভীষন ঠান্ডা পড়েছে। ধ্রুব আয়েশীর গায়ের চাদর টেনে দিল। আয়েশী উম পেয়ে চাদর হাতের মুঠোয় পুড়ে নিয়ে পাশ ফিরল। ধ্রুব হাসল। মুগ্ধ চোখে খানিক চেয়ে দেখল প্রেয়সীকে। কি সুন্দর তার রক্তজবা! টানা টানা চোখ, রক্তিম ঠোঁট, লতানো দেহ। বিধাতা কি পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য্য তার মধ্যেই ঢেলে দিয়েছেন? এতটুকুও কমতি রাখেন নি।
ধ্রুব দেখছে, পলক না ফেলে। হঠাৎ পাশ থেকে একটি প্রজাপতি উড়ে গেল। ধ্রুবর ধ্যান ভাঙল। ধ্রুব সাবধানী চোখে প্রজাপতির দিকে তাকাল। প্রজাপতি ডানা ঝাপটে চঞ্চল পায়ে ইতি-ওতি উড়ছে। ধ্রুব কিছুক্ষণ প্রজাপতির দিকে নজর রাখল। তারপর হঠাৎ করে খপ করে ধরে ফেলল প্রজাপতিটি। ধ্রুবর শক্ত হাতের চাপে প্রজাপতি কষ্ট হল। দু’য়েকবার ডানা ঝাপটে যেন প্রাণ ভিক্ষা চাইল। ধ্রুব প্রাণ ভিক্ষা দিল না। একসময় ধ্রুবর বলিষ্ট হাতের চাপে পিষে গেল প্রজাপতি। ছোট্ট নরম দেহ থেতলে দেহের ভেতর থাকা পাকস্থলী বেরিয়ে গেল। ধ্রুব হাতের মুঠো খুলল। প্রজাপতির মরদেহ দেখে মুচকি হাসল। একটি কাঁচের স্বচ্ছ বোতলে প্রজাপতির মরদেহ প্রবেশ করিয়ে বোতলের ছিপি আটকে দিল। বোতলের উপর কালো মার্কার দিয়ে গোটাগোটা অক্ষরে লিখল, ‘ A Gift For My lovely wife ‘
ধ্রুব বোতলটা সুন্দর করে আয়েশীর বালিশের পাশে রাখল।
আয়েশী এখনো ঘুমাচ্ছে। আশপাশে কি হচ্ছে, কিছুই সে জানে না। ধ্রুব আবারও তাকাল আয়েশীর পানে। আজ পুরো রাতটা সে আয়েশীর মুখের দিকে চেয়ে কাটিয়ে দেবে। এত সুন্দর মুখখানা, জনমভর চেয়ে থাকলেও ধ্রুবর আঁশ মিটবে না।
ধ্রুব আয়েশীর মুখের দিকে একটু ঝুঁকে এল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল আয়েশীকে। হঠাৎ কি মনে করে চুমু খেয়ে বসল আয়েশীর গালে। ঘুমের মধ্যেই আয়েশী কেঁপে উঠল খানিক। দুবার পলক ঝাপটে বিড়বিড় করে বলল, ‘ মৃ-দু-ল ‘

আবার সেই মৃদুল! ধ্রুবর রক্ত গরম হয়ে যায়। হিংসায় জ্বলে পুড়ে আগুন হয়ে গেল। চটাশ চটাশ আয়েশীর গালে পরপর পাঁচটা চুমু খেয়ে তাকাল আয়েশীর দিকে। দু আঙুল দিয়ে আয়েশীর থুতনি চেপে বলল, ‘ এখনো মৃদুলের কথা মনে হয়? ‘
ঘুমন্ত আয়েশী অবুঝ ভাবে পাশ ফিরল। ধ্রুব আয়েশীকে দুধের সাথে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষুধ খাইয়েছে। তাই আয়েশী বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। একজন ঘৃণিত পুরুষ তাকে স্পর্শ করছে, সে সম্বন্ধে সে সম্পূর্ন অজ্ঞাত। আয়েশী তো তখন সুখী সুখী নিঃশ্বাস ছেড়ে ঘুমাচ্ছে। জেগে থাকলে নিশ্চয়ই তাণ্ডব চালাত। মনে পড়ায় হাসল ধ্রুব।
ধ্রুব সরে এল আয়েশীর থেকে। রাগ তার কপাল ফাটছে। ইচ্ছে করছে আজ এখনি আয়েশীকে গভীর ভাবে স্পর্শ করতে। ধ্রুবর স্পর্শে যেন আয়েশীর মন দেহ থেকে মৃদুলের সমস্ত স্মৃতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তবে ধ্রুব তা করল না। হাত দুটো ভয়ানকভাবে মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ বুজে বড়বড় নিঃশ্বাস ছাড়ল। নিজের রাগ আয়ত্বে এনে আবার তাকাল আয়েশীর দিকে। সহসা চোখ গেল আয়েশীর লতানো দেহের দিকে। আয়েশী কালো রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে আছে। নয়া বধূ কি করে বিয়ের দিনই কালো রঙ পড়তে পারে, ভেবে পায়না ধ্রুব। ধ্রুব আয়েশীর কক্ষে আসার আগে একটি হলুদ রঙের কাতান শাড়ি এনেছিল। নিজ হাতে আয়েশীকে এ শাড়ি পড়াবে বলে। নিজ হাতে শাড়ি পড়াবে বলেই, আজ আয়েশীকে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে।

ধ্রুব আয়েশীর গা থেকে ওড়না এক টানে সরিয়ে ফেলল। আয়েশীর কালো রঙের ওড়না দিয়ে নিজের দু চোখ বেধে নিল। এখন সবকিছু অন্ধকার লাগছে। কিছু দেখতে পারছে না। ধ্রুব এবার কাতান শাড়ি হাতে নিল। একে একে আয়েশীর গায়ের ছোট-বড় সমস্ত কাপড় খুলে ফেলল। আয়েশী এখন সম্পূর্ন নগ্ন। ধ্রুব এবার শাড়ি পড়াতে লাগল আয়েশীকে। চোখ বন্ধ অবস্থায় হাতের আন্দাজে বেশ সুন্দর করে শাড়ি পড়াল ধ্রুব। শাড়ি পড়ানোর সময় বেশ কয়েকবার আয়েশীর শরীরে হাত লাগে। ধ্রুব তখন উপভোগ করে সে স্পর্শ। তবে নিজেকে সামলে তাৎক্ষণিক হাত সরিয়ে নেয়।
শাড়ি পড়ানো শেষ হলে ধ্রুব চোখ থেকে কাপড় সরায়। আস্তে করে চোখ খুলে চায় বিছানার উপর ঘুমিয়ে থাকা প্রেয়সীর পানে। হলুদ পরীকে দেখে ধ্রুবর চোখ হাসে, মুখ হাসে। ধ্রুব ঝুঁকে আয়েশীর ঠোঁটের কোণায় চুমু খায়। একবার চুমু খেয়েও তৃষ্ণা নিভে না। আরো কয়েকবার একই জায়গায় পরপর চুমু খায়। তারপর সরে আসে।
ধ্রুব আয়েশীর চুলে হাত বুলায়। মুচকি হেসে বলে,
‘ এ ঘুম যেন তোমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ঘুম হয়, ম্যাই লেডি। ‘
ধ্রুব বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। চলে যেতে উদ্যত হলে পেছন থেকে আয়েশী হাত আটকে ফেলে ধ্রুবর। ধ্রুব ভয়ে কেপে উঠে। আয়েশী জেগে গেল না তো? ধ্রুব পেছন ফিরে তাকায়। না, আয়েশী ঘুমে। ধ্রুব আস্তে করে আয়েশীর হাত নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আয়েশীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। ঘুরে পাশ ফেরার সময় বিড়বিড় করে আওড়ায়, ‘ মৃ-দু-ল যা-স না। ‘
আয়েশীর কি সারাক্ষণ তজবি পাঠের ন্যায় মৃদুলকে মনে করে? ঘুমের মধ্যেও মৃদুলের নাম! বিরক্তিকর!
ধ্রুব রাগে আগুন হয়েও সামলে নেয়। সময় এসে গেছে দাবার গুটি উল্টে দেবার। পাখি অনেক ডানা ঝাপটেছে। সময় এসে গেছে তার ডানা কেটে দেবার! সে রাতে প্রায় চারটার দিকে ধ্রুব নিজের ঘরে আসে। চিন্তা করতে করতে সে রাত প্রায় নির্ঘুম কাটে ধ্রুবর।
____________________________
রাতের কালিমা কেটে সুন্দর এক সকাল হয়েছে। বাগানের সদ্য ফুটা সহস্র ফুল হতে মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে আসছে। পূর্ব দিক হতে ধু ধু বাতাস গায়ে শীতলতা সৃষ্টি করছে। আয়েশী দুয়েকবার পলক ঝাপটে চোখ খুলে তাকাল। মাথাটা বড্ড ভার ভার লাগছে। চিনচিনে ব্যথা মাথার ভেতরের সবকিছু কুটকুট করে খেয়ে ফেলছে। আয়েশী দু হাতে মাথা খামচে ধরল। বিড়বিড় করল, ‘ উফ! মাথাটা এত যন্ত্রণা করছে কেন? ‘
এবার ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন। অনেক বেলা হয়ে গেছে আয়েশী শরীর থেকে চাদর সরাল। বিছানা থেকে উঠতে গেলে গা থেকে শাড়ির আঁচল খুলে মাটিতে পড়ে। আয়েশী হতবম্ব হয়ে পড়ে। চকিতে নিজের দেহের দিকে চায়। সঙ্গেসঙ্গে তার মুখ থেকে চিৎকার বেরিয়ে আসে,
‘ শাড়ি? আমার শরীরে শাড়ি কোথা হতে এল? ‘
আয়েশীর চোখ যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। তার স্পষ্ট মনে আছে, ঘুমানোর সময় তার শরীরে সালওয়ার কামিজ ছিল। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে এ শাড়ি কোথা থেকে এল? আয়েশী মাথার পাশটা আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে মনে করার চেষ্টা করে। না, কিছু মনে পড়ছে না। তবে কি ধ্রুব কিছু করেছে? আয়েশী পাগলের মত হয়ে যায়। সম্পূর্ন শরীর উন্মাদের মত পর্যবেক্ষণ করে। কোথাও কোনো দাগ নেই তো? ধ্রুব তাকে একা পেয়ে কিছু করে ফেলে নি তো?
না, শরীরের কোথাও কোনো দাগ নেই। তাহলে শাড়ি কে পড়াল? আয়েশী মনস্থির করে, সে ধ্রুবকে প্রশ্ন করবে। তার সাহস হয় কি করে আয়েশীর ঘরে এসে তার দেহ জামা কাপড় খোলার? ছিঃ, ভাবতেই আয়েশীত ঘেন্না পাচ্ছে। মন চাচ্ছে, ধ্রুবকে টু’করো টু’করো করে ফেলতে। কতটা খারাপ লোক সে! ছিঃ!

#চলবে
রেগুলার গল্প দেওয়ার চেষ্টা করছি।
আপনারা জানেন তো? লেখিকার গ্রুপে কমেন্ট প্রতিযোগিতা চলছে। এখন থেকে আপনার গ্রুপে প্রতি পর্বে সেরা কমেন্টকারীর নাম ঘোষণা করা হবে। এখানে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই যার যার কমেন্ট সুন্দর হবে, তাদের সবার নাম প্রতি পর্বে গ্রুপে পোস্ট করা হবে। এই প্রতিযোগিতা গ্রুপে প্রতিদিন চলবে। গত পর্বের কমেন্ট বিজয়ীর নাম গ্রুপে পোস্ট করা হয়েছে!

লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here