#মৃত_কাঠগোলাপ – ২৩

0
293

#মৃত_কাঠগোলাপ – ২৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

দুজন সার্ভেন্ট আয়েশীকে ধ্রুবর কক্ষে নিয়ে গেল। আয়েশীর বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। আত্মা বোধহয় এখনিই বেরিয়ে এল! আজ থেকে ধ্রুব তার স্বামী। কিন্তু আয়েশী কখনোই মৃদুলের জায়গা ধ্রুবকে দিতে পারবে না। আয়েশীকে ছোঁয়ার, ভালোবাসার অধিকার একমাত্র মৃদুলের। কিন্তু ধ্রুব যদি জোর করে? কি করে আটকাবে সে? ভয়ে ঘামে আয়েশী। হাতে থাকা টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়ে। ভাগ্যের খাতা সঁপে দেয় উপরওয়ালার হাতে। তিনি যা ভালো মনে করেন, তাই যেন করেন।
আয়েশী বিছানার উপর বসে! লেহেঙ্গা বিছানায় গোল করে ছড়িয়ে রাখা। দেখতে কোনো অচিনপুরের রাজকন্যার মত লাগছে তাকে। আয়েশী এখনও ঘামছে। ঘামে সাজ নষ্ট হচ্ছে। হঠাৎ দরজায় সিটকিনি আটকানোর শব্দে আয়েশী কেপে উঠে। চোখ তুলে তাকায় সামনে। ধ্রুব এসেছে! ধ্রুবর গায়ে বিয়ের শেরওয়ানি আর নেই। গায়ে জড়ানো ধবধবে সাদা টিশার্ট, কালো ট্রাউজার। ধ্রুবর চুল ভেজা, চুল থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি গড়াচ্ছে। আয়েশী চোখ সরিয়ে নিল। বিছানার সাথে আঁটসাঁট হয়ে বসে রইল।
ধ্রুব এল, বসল আয়েশীর পাশে। কিছুক্ষণ আয়েশীকে মন ভরে দেখল। তারপর মৃদু হেসে বলল,
‘ যাও, শাওয়ার নিয়ে আসো। ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ‘
আয়েশী চুপ করে উঠে গেল বিছানা থেকে। লাগেজ থেকে কাপড় বের করতে গেলে ধ্রুব পেছন থেকে বলে,
‘ লাগেজ যেভাবেই আছে, সেভাবেই থাকুক। আলমারিতে তোমার কাপড় রাখা আছে। সেগুলো পড়। ‘
আয়েশী কিছুক্ষণ ভেবে লাগেজ থেকেই একটা সালওয়ার কামিজ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
ওয়াশরুম নাকি এ এক রাজার ঘর! আয়েশীর চোখ কপালে উঠে। সম্পূর্ণ ওয়াশরুম ফকফকা সাদা, কোথাও কোনো ময়লার ছিটেফোঁটা নেই। একপাশে বাথটাবও আছে। এ লোক ওয়াশরুমে এসে ঘুমায় নাকি? আয়েশী দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা লম্বা গোসল নেয়।
চুলে গামছা পেচিয়ে বের হয় আয়েশী। ধ্রুব বিছানায় শুয়ে আছে। এক হাত মাথার পেছনে রেখে হাতের উপর ঘুমে। ধ্রুব এত লম্বা যে পা দুটো বিছানার খানিক বাইরে চলে গেছে। জিরাফের মত লম্বা লম্বা হাত পা! আয়েশী ওয়াশরুম থেকে বের হলে ধ্রুব চোখ খুলে। ঘুমঘুম চোখে আয়েশীর দিকে চায়। সালওয়ার কামিজ পরিহিত নয়া বধূকে দেখে ধ্রুব বলে,
‘ শাড়ি পড়তে পারতে? ‘
আয়েশী স্পষ্ট কণ্ঠে জানায়,
‘ দরকার নেই। ‘
ধ্রুবর রাগ হয়। শাড়ি তো সে পড়িয়েই ছাড়বে!
আয়েশী বলে,
‘ আমি কোথায় শুব? ‘
ধ্রুব ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,
‘ কেন? বিছানায়! ‘
‘ আপনি? ‘
‘ আমিও বিছানায়। ‘
‘ মানে দুজন একসাথে? ‘
‘ হ্যাঁ! ‘
‘ না। আমি একসাথে শুব না। ‘
‘ কেন? ‘
‘ কারণ আমি আপনাকে ভরসা করতে পারছি না। ‘
‘ আমি তোমার হাসবেন্ড। ভুলে যাচ্ছ নাকি? ‘
‘ যখন থেকে ভালোবাসতে শিখেছি, তখন থেকে আমি একমাত্র মৃদুলকেই আমার হাসবেন্ডরূপে মেনে এসেছি। আপনি জোর করে আমায় বিয়ে করেছেন। তাই আপনাকে হাসবেন্ড হিসেবে মানার প্রশ্নই উঠে না। ‘
ধ্রুব তীক্ষ্ম চোখে চায়। বলে,
‘ তাহলে কোথায় শুতে চাও? ‘
‘ আমি অন্য রুমে, আপনি এ রুমে। ‘
ধ্রুব কোনো তর্ক না করে বলে,
‘ ঠিক আছে। ‘
আয়েশী কিছুটা অবাক হয়। তার এক কথায় ধ্রুব কি করে মেনে গেল? হয়তো বুঝতে পেরেছে, আয়েশী তার সাথে থাকলে অস্বস্তিতে ভুগবে। তবে ধ্রুবর হুট করে এত ভালো ছেলে হয়ে যাওয়া আয়েশীকে ভাবাচ্ছে।

আয়েশীকে তার রুম বুঝিয়ে দেয় সার্ভেন্ট। আয়েশীকে পূর্ব দিকের কক্ষ দেওয়া হয়েছে। ধ্রুবর এ বাড়ীর চারপাশ প্রচণ্ড খোলামেলা। জানালা থেকে ধু ধু বাতাস গায়ে লেপ্টে যাচ্ছে। পূর্ব দিকে থাকা ফুলের বাগানের মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে সুরসুরি দিচ্ছে। কি মনোরম পরিবেশ!
আয়েশী জানালা খুলে দেয়। বাতাসে আয়েশীর চুল উড়ে, ওড়নার অগ্রভাগ উড়ে যেতে চায়। আয়েশীর ঠান্ডায় জমে যায়। তবুও স্থির চেয়ে রয় জানালার বাইরে দূরের ওই আকাশের দিকে। আকাশে একটা তারা জ্বলজ্বল করছে। শুকতারা বোধহয়। আয়েশীর চোখে জল ভরে। অস্ফুটসুরে বলে,
‘ আমায় ক্ষমা করিস, মৃদুল। জনমভর তোর হয়ে বেচে থাকা হলো না আমার। আমার হাত বাঁধা, পা বাঁধা, মন বাঁধা। আমার ক্ষমা করিস রে, মৃদুল। আমার আর তোর হওয়া হলো না রে। ‘
আয়েশী ফুঁপিয়ে কাদঁছে। ল্যাপটপে তীক্ষ্ম চোখে ধ্রুব তা দেখে যাচ্ছে। মৃদুলের প্রতি আয়েশীর এই মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা ধ্রুবর সহ্য হচ্ছে না। কিছু একটা এবার করতেই হবে। কিন্তু কি? ধ্রুব ভাবছে, ভাবছে, ভাবছে। অতঃপর হঠাৎ ধ্রুবর মাথায় খেলে গেল নতুন চতুর বুদ্ধি। ধ্রুব বাঁকা হেসে খোঁচা খোঁচা দাড়িতে আঙ্গুল বুলায়। বিড়বিড় করে বলে,
‘ ভালোবাসা থেকে ঘৃ’ণার শক্তি বেশি। দুদিনের ঘৃ’না তোমার মন থেকে হাজার বছরের ভালোবাসাকে নিমিষেই মুছে ফেলতে পারে। কিন্তু ঘৃ’ণার দাগ কোনো কিছু দ্বারা মুছা যায়না। ঘৃ’না ভালোবাসারও উর্ধ্বে! ‘
________________________________
সার্ভেন্ট এসেছে। দরজায় কড়া দিচ্ছে। আয়েশী চোখ মুছে দরজা খুলে দিল। সার্ভেন্ট এক গ্লাস দুধ এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আপনার জন্য। ‘
আয়েশী দুধের গ্লাস হাতে নিল। সার্ভেন্ট মাথা নত করে চলে যাচ্ছিল। আয়েশী পেছন ডাকল,
‘ এই দাড়াও। ‘
সার্ভেন্ট থামল। মাথা নত করেই বলল,
‘ তোমার নাম কি? ‘
‘ হিয়া। ‘
‘ তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছ না কেন? আমি কি দেখতে খারাপ? ‘
হিয়া আঁতকে উঠে বলল,
‘ না, ম্যাম। আপনি পরির মত সুন্দর। ‘
‘ তাহলে তাকাচ্ছ না কেন? ‘
‘ স্যারের নিষেধ। ‘
‘ স্যারের নিষেধ? ‘
আয়েশী অবাক হয়।
‘ স্যার আদেশ, তার রক্তজবার দিকে কেউ যেন চোখ তুলে তাকায় না। নাহলে স্যার তার চাকরি কেটে দেবেন। ‘
‘ এসব তোমার স্যার বলেছেন? ‘
‘ জী, ম্যাম। ‘
আয়েশী ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়ে। বলে,
‘ আচ্ছা তুমি যাও। ‘
হিয়া চলে যায়। আয়েশী দরজায় সিটকিনি আটকে দেয়। দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে পুনরায় জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। ভাবে, ‘ এই ধ্রুব এমন কেন? ‘
দুধের গ্লাসে চুমুক দিতে গিয়েও আয়েশী আটকে যায়। সাবধানী চোখে গ্লাসের দিকে চায়। দুধের রঙ এত ঘোলা কেন? আয়েশী কিছুক্ষণ ভাবে। গ্লাসের দুধ ঝাঁকায় কয়েকবার। এখনো ঘোলা দেখাচ্ছে। আয়েশী কিছুক্ষণ ভেবে তারপর মাথা নাড়ায়। সে একটু বেশীই চিন্তা করছে। আয়েশী সম্পূর্ণ দুধটুকু এক চুমুকে খেয়ে নেয়।
আধা ঘন্টা পর আয়েশীর প্রচণ্ড ঘুম আসছে। চোখ খুলে থাকতে পারছে না। মাথা ঘুরছে। এখনি বোধহয় মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আয়েশী দেয়ালে হাত রেখে নিজেকে সামলালো। হেলেদুলে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল। সঙ্গেসঙ্গে প্রচন্ড ঘুমে বালিশে নেতিয়ে গেল।
সম্পূর্ণ বিষয়টা ল্যাপটপে পর্যবেক্ষণ করতে পেরে ধ্রুব হাসল। যাক, ঔষুধটা কাজে দিয়েছে তবে। ধ্রুব ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে দাড়াল। টিশার্ট টেনেটুনে ঠিক করে পা বাড়াল আয়েশীর ঘরের উদ্দেশ্যে। বড্ড শখ জেগেছিল না, একা ঘুমানোর? এখন সব শখ একেবারে ঘুচে দেবে! হা হা হা!

#চলবে
রেগুলার গল্প দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এখন থেকে লেখিকার গ্রুপে প্রতি পর্বে সেরা কমেন্টকারীর নাম ঘোষণা করা হবে। এখানে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই যার যার কমেন্ট সুন্দর হবে, তাদের সবার নাম প্রতি পর্বে গ্রুপে পোস্ট করা হবে। এই প্রতিযোগিতা গ্রুপে প্রতিদিন চলবে। এখন দেখা যাক কে কে সুন্দর কমেন্ট করে।

লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here