#তোমার_পিছু_পিছুপর্ব- ১৪
কাঠের ডিজাইন করা দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে বর্ন দরজায় ঝুলানো প্লাকার্ডটার দিকে তাকিয়ে রইল…. প্লাকার্ডটায় বড় বড় করে লিখা….” বিরক্ত করিয়া অপমানিত হইবেন না”…. বর্ন কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবলো…. সেচ্ছায় যেয়ে অপমানিত হওয়াটা কি খারাপ দেখাবে… এর আগে কখনো অপমানিত হতে হয় নি….. হয়েছে কি!!!! মিস তামান্না শুধু একবার হামকি ধামকি করেছিলো…. কিন্তু সেটাকে অপমানতো বলা যায় না…… জীবনে একবার অপমানিত হওয়াই যায়…
বর্ন একবার নক করল… কোনো সাড়াশব্দ নেই…. দ্বিতীয়বার নক করল…. তাও কোন সাড়াশব্দ নেই…. বর্ন ফিরে যাবে ভাবতেই ভিতর থেকে সাড়া এলো…. “কাম ইন”…
দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই বর্নর চোখে পড়ল ছোট্ট একটা বারান্দা…. যেটা একদম ওর বরাবর সামনে..… বারান্দায় ছোট ছোট ঝুলানো টবে গাছ…. আর একটা গোল ঝুলন্ত দোলনা…. কিন্তু মানুষ কই!!!
বর্ন ভ্রু কুচকে বায়ে তাকালো…. তারপর ডানে…. এবং রীতিমতো চমকে উঠল।
মেয়েটা ইয়োগা পজিশনে আছে… আপসাইড ডাওন পজিশন…. মাথা নিচে পা উপরে দিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আছে……
বর্ন হালকা একটু মাথা কাত করে মেয়েটাকে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করল…..
ঠিক তখনই বর্নকে আরেকদফা চমকে দিয়ে মেয়েটা হঠাৎ করে চোখ মেলে তাকালো….
তাকিয়েই মেয়েটা মুখ ভর্তি এক হাসি দিয়ে বলল
-হ্যালো দেয়ার স্ট্রেঞ্জার….. ইউ ওয়ানা জয়েন মি?
বর্ন জবাব দেয়ার আগেই বলল,,,
-এভাবে ঘন্টাখানেক ধ্যান করলে আপনার ব্রেইন স্টেস ফ্রী থাকবে…. এবং আপনার মাইন্ড ফোকাস ও ভালো থাকবে…. সুতরাং আসুন আসুন ,,,, দাঁড়িয়ে কেনো!!! আসুন…
-জ্বী মানে!!! আসলে আমি ওভাবে উপুড় হতে পারি না….
মেয়েটা তখন পা দুটো সামনে করে তড়াক করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো….. তারপর বর্নর দিকে ঘুরে তাকালো…
-ডিগবাজি খেতে পারেন??
-জ্বী?
-দেখি একটা ডিগবাজি খেয়ে দেখান তো…. কাম অন,,,, কাম অন…..
-আমি পারি না ডিগবাজি খেতে…..
মেয়েটা এবার বর্নর দিকে দুই কদম এগিয়ে এলো…. বর্ন এবার খেয়াল করল মেয়েটার চোখের মনি নীল….. হালকা নীল না….. স্পষ্ট নীল…. এতক্ষন কেনো চোখে পড়ল না…. সাধারণত বর্ন খুব ভালো অবজারভার…….
-ওয়াও ইউ আর ওয়ান হ্যান্ডসাম ম্যান….
-ধন্যবাদ…..
-কিন্তু সুন্দর হলে কি হবে!!! একটা সাধারণ ডিগবাজিও মারতে পারলেন না…..
-আসোলে……..
বর্ন মাথার পিছন চুলকাতে লাগলো…..
-থাক হয়েছে হয়েছে….কিন্তু স্ট্রেঞ্জার…. আপনি আমার রুমে কেনো!!!!
বর্ন জবাব দেয়ার আগেই…. কলি নামের মেয়েটা দরজা ঠেলে উকি দিলো….
-আফা আফনেরে খালু বোলায়….
-তোর খালু বোধহয় আজ আমাকে একটু বেশিই মিস করছে…. নারে কলি!!!
বলতেই বলতেই মেয়েটা দরজার সামনে এগিয়ে গিয়ে আবার ঘুরে তাকালো….
-এই যে মি. স্ট্রেঞ্জার… আপনি এভাবে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছেন কেনো….. আশ্চর্য্য!!!! ড্যাবড্যাব করে তাকাতে পারেন,,,, আর ডিগবাজি মারতে পারেন না!!! হুহ…..
মেয়েটা ঘুরে কাধ বরাবর চুলগুলো এক ঝাড়া মেরে বের হয়ে গেলো…. বর্ন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল…..তারপর একটা অবাক হাসি ফুটে উঠল ওর মুখে….
রুম ছেড়ে বের হতেই সিড়ির মাথায় মেয়েটা আর কলিকে পেয়ে গেলো…..
সিড়ি বেয়ে ওরা সবাই নিচে নামতেই….মেয়েটা লিভিং রুমের তিনজন ব্যাক্তির উদ্দেশ্য বলল,
-গুড আফটারনুন লেডিস এন্ড জেন্টালম্যান,,,,, নীলময়ী ইজ হেয়ার….
লিভিং রুমের সবাই ওদের দিকে ঘুরে তাকালো… এবং পারভিন বেগম রীতিমতো আতকে উঠলেন…. ইয়া মাবুদ আল্লাহ….. এই মেয়ে লেংটা কেনো!!!!
নীলময়ীর পড়নে জিন্সের শর্টস…. আর গ্রে কালারের একটা লুজ টি-শার্ট,,,,যেটা ইন করা….
বর্ন মায়ের চেহারার ভাবভঙ্গি দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছে,,,,নীলময়ীকে ওর মা’র দুচোখে দেখতেই ইচ্ছে করছে না….. ছেলের বউ বানানো তো দূরের কথা….. তারপরও চুপচাপ যেয়ে সোফায় বসল….. নীলময়ী হয়ত পারভিন বেগমের হাবভাব দেখেই উনার সাথে যেয়ে বসল…. একদম ঘেষে…..এক পা উঠিয়ে ভাজ করে….
মাহমুদ সাহেব অসহায়ভঙ্গিতে মেয়ের দিকে তাকালেন….
-মা’রে এভাবে বড়দের সামনে বসে না…… ঠিকমত বসো…..
নীলময়ী ওসবের ধার না ধরে সোজা পারভিন বেগমের দিকে ঘুরে তাকালো….
-এই হ্যান্ডসাম হেবলাটা কি আপনার ছেলে??
পারভিন বেগম কটমট করে তাকালেন নীলময়ীর দিকে….
-আপনি জানেন আপনার ছেলে ডিগবাজি খেতে জানে না….. উহু… একদমই না….. কিন্ত আমি ঠিক করেছি… আমি নিজে এই ছেলেটাকে ডিগবাজি খাওয়া শিখাবো….
” লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবাহনাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ যোয়ালিমিন” (বানান ভুল গেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন),,,এই মেয়ে বলে কি!!!! এতো বড় ধামড়ি মেয়ে কিনা ডিগবাজি খাওয়া শিখাবে….. আর আমার ছেলে কিনা হেবলা!!!! এই মেয়ে কি জানে…. ওয়ানে থাকতে বর্ন ২৫ এর ঘরের নামতা পর্যন্ত মুখে মুখে বলে দিতে পারতো…..
বর্ন মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে…. ও বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারছে,,,মা সাংঘাতিক পরিমান রেগে যাচ্ছে…. কান আর নাক লাল হয়ে যাচ্ছে… যেনো এই মুহুর্তে ধুয়া বের হবে…. ঠিক তখনই নীলময়ী বলে উঠল…
-ও মাই গড ওল্ড লেডি….ইউ আর লুকিং সো ফানি….. আপনার কান এতোটা লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে এই বুঝি ধুয়া বের হয়ে যাবে…. জানেন একবার মিনা কার্টুনে এক পর্বে দেখেছিলাম এক ইয়া মোটা লাল ষাড় গরুর কান থেকে এভাবে ধুয়া বের হয়েছিলো…..
বলেই নীলময়ী খিলখিল করে হেসে উঠল,,,,
বর্নর এখন একদমই বোরিং লাগছে না….. ও সম্পুর্ণ সিচুয়েশানটা চুপচাপ উপভোগ করছে….. বর্নর মনে হল,,,,মেয়েটা খুব ইন্টারেস্টিং তো…..
(আসছে)