#তোমার_পিছু_পিছুপর্ব-৩
জনাব কাজী মিলন সাহেব বসে আছেন পেপার হাতে….. এক কাপ চায়ের অপেক্ষা করছেন….. এই অপেক্ষা ব্যাপারটা তার একদমই ভালো লাগে না….. বরাবরই বিরক্তিকর….. কিন্তু তার ওয়াইফ পারভিন বেগমকে তিনি বারবার বলেও পাংচুয়েল করতে পারেন না….. কোন কাজেই পারভিন বেগম সময়মত উপস্থিত হতে পারেন না….. এই যে সামান্য এক কাপ চা…. যার জন্য মিলন সাহেব গত সাড়ে সাত মিনিট যাবৎ বসে আছেন…. অথচ তার ওয়াইফের কোন খোজ খবরই নেই………
মিলন সাহেব ভ্রু কুচকে আবারো হাত ঘড়ির দিকে তাকালেন……. অপেক্ষা যখন চূড়ান্ত পর্যায় পৌছালো তখন পারভিন বেগম চায়ের কাপ রাখলেন সামনের গোল কফি টেবিলটায়,,,,,,মিলন সাহেব স্ত্রীর দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকালেন….. কিন্তু কিছু বললেন না….. দিনের শুরুটা তিনি শান্তিতে কাটাতে চান……
পারভিন বেগম চায়ের কাপ রেখে স্বামীর পাশের সিংগেল সোফায় বসলেন……
-এই শুনছো!!! কিছু কথা বলার ছিলো…..
মিলন সাহেব কিছুই বললেন না…. এমনকি নিউজপেপার থেকে চোখও সড়ালেন না…… একমনে চায়ের কাপে চুমুক দিতে লাগলেন…..
স্বামীর স্তব্ধতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই পারভিন বেগম বলতে শুরু করলেন…….
-ছেলেটাকে নিয়ে আমার আজকাল খুব বেশি টেনশন হয়….. এত্ত আলভোলা মানুষ হয় বলোতো….. আমার এই ছেলেটা যুগের সাথে কিভাবে তাল মিলিয়ে চলবে বলতো….
-সবকিছুতে ওভার রিয়েক্ট করা তুমি কবে বন্ধ করবে বলোতো….!?
-আরে কি বলো..… কিসের ওভার করছি….. তুমি তো সারাদিন বাসায় থাকো না…. তাই কিছু দেখোও না…. সেদিন আমি দেখি কি বৃষ্টিতে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাক দেখছে….. বলতো কাক কি দেখার মত কিছু হলো!!!! আবার গতকাল দেখি চোখ বন্ধ করে কানা ভুতের মত সারাবাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে….. দুইবার দুই দেয়ালে মাথা ঠুকেছে,,,,,,জিজ্ঞেস করতেই বলে,,,, মা একটা থিওরি প্রমাণ করার চেষ্টা করছি!!!! দেখো দেখি এখন অবস্থা…..
-তো!!! এগুলো তো ওর সাধারণ কাজ কারবারের মধ্যেই পড়ে……
-ধুর তুমি বুঝতে পারছো না……. আগের কথা আর এখনকার কথা কি এক হল!!!! আগে ছোট ছিল…. এখন বড় হয়েছে…. বিয়ের বয়স হয়েছে…. এখন কি এসব করলে হয়!!!!
স্ত্রীর এতক্ষনের ভ্যাজর ভ্যাজরের আসল উদ্দেশ্য মিলন সাহেব এখন বুঝলেন। ছেলের বিয়ে বিয়ে করে মাথার পোকা নাড়িয়ে ফেলছে……
-পারভিন….. ছেলেকে ওর মত থাকতে দাও….. মাস্টার্স কম্পলিট করেছে কয়েক মাস হলো মাত্র….. এবার ওকে একটু ফ্রিলি চলতে দাও..…… আর বিয়ের কথা বলছো!!!!! আগে ওকে নিজের বিজনেসে জয়েন করতে দাও….. সেটেল হতে দাও….. এরপর বিয়ে….
-মানে কি!!! তুমি কি চাও,,,,,, বুড়া বয়সে ছেলেকে বিয়ে দেই!!! এই চাও তুমি!!!!
-আমি কি তাই বলছি!!!
-তুমি কি বলছো না বলছো জানি না…… কিন্তু আমি আমার ছেলের বিয়ে এই বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ করতে চাই… দশটা না পাচটা একটা মাত্র ছেলে আমার….. তুমি আর তোমার ছেলের বিজনেস তোমরা জানো….. এই নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে আসবে না…. আর বিয়ের ব্যাপার আমাকে হ্যান্ডেল করতে দাও,।
বলেই পারভিন বেগম উঠে ভিতরে চলে গেলেন…..
সোজা রান্না ঘরে গিয়েই থামলেন পারভিন বেগম….. রান্না ঘরে জরজরি খাতুন পরোটা ভাজচ্ছেন…… পারভিন বেগম চুলার কাছে গিয়েই আতকে উঠলেন…..
– জরজরি এই পরোটা তুমি কার জন্য ভাজচ্ছো!?
-কেনো ছুডো স্যারের লাইগা….
-তোমাকে কতবার বলেছি জরজরি….. বর্নর পরোটা এরকম তেলে ডুবিয়ে ভাজবে না……তাও তুমি বারবার একই কাজ করো…..
-সোরি আম্মা…. আমার মনেই থাকে না…. আম্মা আমরার বাইত তো সবতে তেলে ভিজা পরোটাই খাইবার চায় বেশি…. তাইলে মনে করেন গায়ে গতরে বল পাইবো বেশি…… আমিতো…..
-হয়েছে…. থামো…. আর ব্যাখ্যা শুনাতে হবে না…. তুমি টেবিলে নাস্তা লাগাও… পরোটা আমি ভেজে নিয়ে আসছি……
তামান্নার ঘুম ভাংলো ওর মামির চিৎকার চেচামেচি শুনে….. একজন মানুষ অহেতুক কি পরিমান চিৎকার চেচামেচি করতে পারে তা তামান্না নিজের মামিকে না দেখলে বুঝতে পারতো না…… এই মহিলার জন্য হাউকাউ চেচামেচি যেনো অক্সিজেনের মত জরুরি!!!! তামান্নার বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চাইছে না…. গতরাতে ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় তিনটা….. আর এখন বাজে মাত্র আটটা…… ভার্সিটির ক্লাসেও যাওয়া হয় না…. সুতরাং এত সকালে উঠার কোন মানে নেই….কিন্তু তারপরও উঠতে হবে……
তামান্না ওর ছোট্ট ঘুপচিখানা থেকে বের হতেই মামির মুখে পড়ে গেলো…. বেশ বুঝা যাচ্ছে…. আজকের দিনটাও খারাপ যাবে….. বড়সড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তামান্না যুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিলো…..
নীলময়ী নিজের হাতের লাটিমটায় ফিতা পেচালো……. তারপর সেটাকে উলটো করে মাটিতে ছুড়ে মারলো…… এবং লাটিমটা প্রতিবারের মত এবারও ফ্লোরে পড়ার সাথে সাথে ঘুরতে শুরু করল…. নীলময়ীর মুখে ফুটে উঠল একটা গর্বময় হাসি..….. সেই হাসি মুখে লাগিয়ে রেখেই পাশের প্লেটে রাখা চিকেন বার্গারটা হাতে নিয়ে বেশ বড়সড় একটা কামড় বসালো তাতে…… আজকে একটা বিশেষ দিন…..দারোয়ানের ছেলেটা ওকে মার্বেল খেলায় চ্যালেঞ্জ করে গেছে গতকাল…. নীলময়ীও চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করেছে…. আজকে সেই খেলা অনুষ্ঠিত হবে…. বাড়ির পিছনের গার্ডেনে….. যেভাবেই হোক নীলময়ীকে জিততেই হবে…… নীলময়ী ট্রাওজারের পকেটে হাত দিয়ে মার্বেল গুলো চেক করে নিলো……. তারপর হালুম করে বার্গারে আরেকটা কামড় বসালো….।
(আসছে)