#তোমার_পিছু_পিছুপর্ব-৪

0
420

#তোমার_পিছু_পিছুপর্ব-৪

বর্ন বসে আছে নিজের রুমে। হাতে একটা বেশ মোটাসোটা বই…..”The 100 A Ranking of the Most Influential Persons in the History” বর্ন খুব মনোযোগ দিয়ে বইটা পড়ছে….. ওর রুমে বিশাল বড় একটা বুকসেল্ফ,,,,, যা বিভিন্ন প্রকার বই দিয়ে ভর্তি….. বুকসেল্ফ ছাড়াও ওদের বাসায় একটা ছোট্ট লাইব্রেরী আছে……দিনের মধ্যে বর্ন বেশিরভাগ সময় হয় নিজের রুমে নয়ত লাইব্রেরীতে কাটায়,,,,,
এখনও তার ব্যাতিক্রম নয়…. ডিনারের পর ওর সাথে সাথে ঘুম আসে না….. এই সময়টুকু ও বই পড়েই কাটায়…..
মিলন সাহেব ছেলের রুমের দরজার সামনে এসে দাড়ালেন…. দরজাটা হালকা করে চাপানো….. কিন্তু তিনি বেশ দেখতে পারছেন ছেলে বসে বসে বই পড়ছে….. ছেলের রুমে যাবেন কি যাবেন না তাই ভাবছিলেন….
-বাহিরে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো বাবা!?…
মিলন সাহেন দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলেন…. বর্ন তখনো বইয়ের ভিতরে মুখ ডুবিয়ে। মিলন সাহেব যেয়ে সোজা ছেলের বিছানায় বসলেন….. বর্ন বই থেকে মাথা উঠিয়ে বাবার দিকে তাকালো….এবং খুব সুন্দর করে একটা হাসি দিলো…
-কেমন আছো বাবা!?…..
-যেমন তুই আছিস,,,,,,
-ঘুম ঘুম আছি, বাবা।
-সেটা আবার কেমন?
-মানে ঘুম আসছে আবার চলে যাচ্ছে….. এমন।
-বিছানায় শুয়ে পড়লেই পারিস…. দেখবি একটু পর ঘুম চলে আসবে….
-উহু…. হয় না বাবা….. পুরোপুরো ঘুমে ঢুলতে শুরু না করলে…. বিছানায় গেলেও আমার ঘুম আসে না….
-এটা আবার কেমন কথা….. আগে বলিস নি কেনো!?… ডক্টরের সাথে একটা এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখি……
-আরে আরে…. বাবা… তুমি উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছো কেনো!!!! আর এটা কোনো রোগ না বাবা….. আমি যাস্ট টায়ার্ড না…. তাই সহজে ঘুম আসতে চায় না….. আমি যদি ক্লান্ত থাকতাম তাহলে ঘুম চোখের উপর ঘুর ঘুর করত……..
-ওহ….
-কি বলতে এসেছিলে বাবা?
-না…. মানে….. আসলাম… তোকে দেখতেই…. সারাদিন দেখি না… তাই আর কি…..
-রোজ সকালেই তো অফিসে যাওয়ার আগে তুমি দেখা করে যাও। আমি ঘুমিয়ে থাকলেও দেখে যাও….তাহলে!!!
-আবার দেখতে আসলাম….. কেনো সকালে দেখলে কি রাতে দেখতে পারি না!?…
এই পর্যায়ে বর্ন হাতের বই বন্ধ করে পাশের টেবিলে রাখলো…ঘুরে সোজা হয়ে বাবার দিকে তাকালো..
-কি হয়েছে বাবা…… এনিথিং রং?
-না….. আসলে..…. তোর তো মাস্টার্স কমপ্লিট….. তাই ভাবছিলাম…. তোর কোম্পানি তো তৈরিই…… তাই আর কি….
-বাবা তুমি এত টেনসড হয়ে যাচ্ছো কেনো!?….
-আসলে তুই বিজনেসে জয়েন করার আগে আমার কাছে সময় চেয়েছিলি আমি জানি….. তোর এখনই জয়েন করতে হবে না… তুই যাস্ট এখন একটু যাওয়া আসা করলি আর কি…..পরে যখন সম্পুর্ণভাবে দ্বায়িত্ব নিতে পারবি বলে মনে হবে তখন জয়েন করিস…… তো….. আমার সাথে যাবি একদিন… তোর কোম্পানি দেখে আসবি…
-বাবা আমি যাবো……
-আগামী রবিবার যাবি??
বর্ন মাথা ঝাকিয়ে বলল..” যাবো”
মিলন সাহেবের মনে হল অনেক বড় একটা পাথর নেমে গেল তার বুকের উপর থেকে….. তিনি কখনোই কোন ব্যাপারে ছেলেকে জোর করেন নি….. ছেলের মতামতই তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন…..

তামান্না মাত্র একটা টিউশনি শেষ করে বের হয়েছে… তখনই তার ফোন বেজে উঠল…. একটা আননোন নাম্বার….. রিসিভ করবে না করবে না ভেবেও রিসিভ করল।
-হ্যালো,, মিস তামান্না সুলতানা বলছেন…
ফোনের ওপাশ থেকে এক চিকন কন্ঠী নারীর প্রশ্ন শোনা গেলো….
-জ্বী,,, আমি তামান্না সুলতানা…
-মিস সুলতানা,,, আগামীকাল সকাল ৯টায় কাজী এন্ড গ্রুপসে আপনাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
তামান্না একটু অবাক হলো…. কিন্তু একটু বেশি পেলো ভয়। সেদিন ওভাবে মুখের উপর জবাব দিয়েছে বলে কি….. আবার ওকে ডাকা হচ্ছে। নিশ্চয়ই সেদিন ওভাবে মুখের উপর জবাব দেওয়াতে উনি রেগে গিয়েছেন। কিন্তু আবার ওকে ডেকে নিয়ে গিয়ে অপমান করবে!!!
-জ্বী কিন্তু,,,, কারনটা জানতে পারি!?
-এই সম্পর্কে আমরা আপনাকে কিছু অবগত করতে পারছি না।
-জ্বী আচ্ছা।
-ধন্যবাদ।
তামান্নার নিজের চুল নিজের ছিড়তে মন চাইছে। সেদিন এত ফডং ফডং করার কি দরকার ছিলো!!!! এখন যে খাল কেটে কুমির সহ কুমিরের চোদ্দ ঘুষ্টি ডেকে নিয়ে আসলাম!!!! ইয়া আল্লাহ…. কিছু একটা করো…… আল্লাহগো…. ওভাবে অপমান করার জন্য আবার জেলে দিয়ে দিবে নাতো!!!! তামান্না ঘামতে শুরু করল…..

নীলময়ী ছাদে দাঁড়িয়ে ঘুড়ির নাটাইয়ে ঘুড়ির সুতা পেচাতে ব্যস্ত…… আজকে যেভাবেই হোক ঘুড়ি উড়ানো শিখতেই হবে। দারোয়ানের ছেলে সজিব আবার এসব ব্যাপারে খুব এক্সপার্ট। এমন কোন আউটডোর গেম নেই যা ও জানে না। তাই নীলময়ী আজ ওকে…. ঘুড়ি উড়ানো শিখানোর জন্য হায়ার করেছে….. তাও এতো সহজে না…. পার আওয়ার ১০০ টাকা করে দিতে হবে….. কি পরিমান চালু… এতটুক বয়সেই…. ভাবলেই নীলময়ী অবাক হয়ে যায়!!!
-গুড ইভনিং ইয়াং লেডি……
-গুড ইভনিং ওল্ড ম্যান……
-তা কি নিয়ে এমন গুটুর গুটুর চলছে….
-নাটাই সূতা নিয়ে, বাবা…..
– ঘুড়ি উড়ানো কবে থেকে শিখলি!?…
-শিখি নি… আজ শিখবো…. দারোয়ান কাকার পিচ্চি ছেলেটা আছে না..… ও শিখাবে..
-তাই নাকি!!! তা কই তোর টিউটরকে দেখছি না যে….
-আসবে….না আসলে খবর করে ছাড়বো না…. পার আওয়ার ১০০ টাকায় ঠিক করেছি…..
-কি বলিস!!! বাপরে!!! এত ডিমান্ড….. এর চেয়ে ভালো…. আমিই তোকে শিখাতে পারি..… তুই আমায় বললেই পারতি….
নীলময়ীর চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল…
-সত্যি বাবা!!!
-হুম…. দেখি… নাটাইটা দে দেখি…
-ইয়েএএ…
-তুই পার আওয়ার আমাকে ৮০ টাকা করে দিস….
নীলময়ী হা করে রইল…
-বাবা…. আমি তোমার আপন একমাত্র মেয়ে!!! তুমি আমার কাছে টাকা চাইছো!!!
-অবশ্যই…. ভুলে গেলে কি চলবে…. আমি একজন বিজনেসম্যান…. এন্ড টু মি টাইম ইস মানি…..
-ও মাই গড…. শেষ পর্যন্ত নিজের আপন বাবা ও!!!! কি নিষ্ঠুর এই দুনিয়া!!!!
মেয়ের কথা শুনে মাহমুদ সাহেব হো হো করে হেসে উঠলেন…..
(আসছে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here