তুমিময়_প্রেম🥀♥ #PART_09,10

0
585

#তুমিময়_প্রেম🥀♥
#PART_09,10
#FABIYAH_MOMO🍁
09

গালে হাত দিয়ে ক্যান্টিনের টেবিলে বসে আছে মুগ্ধ। তার চারপাশ ঘিরে দলবল বসে আছে জনে জনে। পুরো ক্যান্টিন তার এক আদেশে খালি! কেবল বেয়াড়া ছেলে এবং শেফ বাকি। তাছাড়া একটা বাড়তি প্রাণের সন্ধান মিলবেনা। চেয়ার পেতে দূরত্ব রেখে একস্থানে বসেছে সবাই। নাসিফ পকেট থেকে বেনসনের প্যাকেট নিয়ে লাইটার বের করলো, সিগারেটের ধোয়া নাকে না শুকলে স্বাদ আসবেনা। রামিম বাচালের মতো এই স্টুডেন্ট ওই স্টুডেন্ট নিয়ে কথার জরিপ বসিয়েছে, কেউ একবিন্দু নজরও দিচ্ছেনা। রিমি ফোনের মেসেন্জারে ধুমিয়ে চ্যাটিং করছে, নতুন বফ আরাফের সাথে প্রেম জমাতে ব্যস্ত, বফ নাম্বার তিন।। জেনি মুগ্ধের অবিকল নকল করে গালে হাত দিয়ে তার পানে তাকিয়ে আছে। আহাদ মোবাইল গেমসে বিজি, হাইয়েস্ট স্কোর পাওয়া নিয়ে হুটহাট হৈহৈ করেও উঠে। অবশিষ্ট ‘তন্ময়’! সে কিছু একটা নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে বৃদ্ধাঙ্গুলি চালাতে ব্যস্ত। মুগ্ধের থমথম হয়ে বসে থাকাটা সবাই চুপচাপ দৃষ্টি এড়িয়ে দেখছে। তার একটা কারন আছে অবশ্য। মুগ্ধ যখন গালে হাত দিয়ে চুপ হয়ে যায় তখন ঝড় আসার পূর্ব সংকেত বোঝায়। এখনো তাই বোঝাচ্ছে। সবাই নরমালি থাকার নানা চেষ্টা করছে, কিন্তু একটা কথা ভালোভাবে জানে, মুগ্ধের চুপটি কোনো আগত খারাপ কিছুর সাইন। অবশ্যই সামনে কোনো গন্ডগোল হবে। রিমি জেনির পায়ে হালকা লাত্থি মেরে দৃষ্টিভ্রম ভাঙালো। জেনি মুগ্ধের দিকে না তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে রিমির দিকে কপাল কুচে তাকালো। মাথাটা উপরে উচিয়ে বোঝালো, “কি হয়েছে?”, রিমি চোখ ঘুরিয়ে মুগ্ধের দিকে করলো এবং হাতের ইশারায় বোঝালো, “মুগ্ধের কি হয়েছে?”। জেনি ঠোট উল্টে বোঝালো, “জানি না”। রিমি বোঝালো, “কেউ কি ওকে কিছু বলেছে?”, জেনি চোখ বড় করে হা করলো। বলে কি? মুগ্ধকে কেউ কথা শোনাবে? অসম্ভব! তৎক্ষণাৎ জেনি ভ্রুকুচকে বোঝালো, “নাহ্! কারোর সাহস নেই!”। মুগ্ধের নজরে রিমি,জেনির চোখের ইশারায় কথা বলাবলির জিনিসটা লুকালো না। ধরে ফেলল চট করে। গাল থেকে হাত সরিয়ে হঠাৎ দুজনকে চমকে দিয়ে বলে উঠলো-

–গাইজ ক্যান ইউ স্টপ? কি হচ্ছে কি এসব! আমি কি লেম? স্টুপিড? ফুলিশ অর ব্লাইন্ড? রিমি? সিরিয়াসলি? ডুড, আ’ম ফেসিং সাম প্রবলেম্স! প্লিজ স্টে কাম এন্ড স্টপ!

রিমি ও জিনি থতমত হয়ে চুপ করে রইলো। এখন যদি মুগ্ধের প্রবলেম ফেস হওয়ার কারনটা মুখ ফুটে জিজ্ঞেস করে তাহলে কোন্ টাইফুন এসে আঘাত হানবে কেবল ওরাই জানে। নাসিফ নাক দিয়ে ধোয়া ছেড়ে তন্ময়কে বলল,

–মামা তুমি কোন মেয়ের সাথে জানি লাইন মারতে নিছিলা কাজ হইছে? নাকি গাড়ি থেমে গেছে?

তন্ময় নাসিফের মুখে কথাটা শুনতেই কাচুমাচু করতে লাগল। বড্ড অস্বস্তি ফিল হচ্ছে নাসিফের। কেন যে বেটা মুগ্ধের সামনে ফট করে বললো, ও যদি মামলার ইতিহাস জানতে চায় তাহলে তো গো ধরে বসে থাকবে। কে সামলাবে ওকে? কে বোঝাবে? মেয়েটা নিয়ে দু’পক্ষ অজান্তেই টানাটানি করছে। একজন প্রবলেমের নামে গা ঢাকা দিয়ে আছে। অপরজন মুখে স্কচট্যাপ মেরে কথা হজম করে রেখেছে। কেউ সত্যটা মুখ দিয়ে ফাস করে বলতে ইচ্ছুক না। কি কেলেঙ্কারি হয় কে জানে?

মুগ্ধ কিছু একটা ভাবলো। কি ভাবলো কাউকে জানালো না। টেবিল থেকে ধুপ করে নেমে হাতের ওয়াচটা ঘুরিয়ে নিলো। গায়ের নীল টিশার্টটা ঠিকঠাক টেনে সবাইকে উদ্দেশ্য করে শক্ত গলায় বললো-

–কেউ আমার সাথে আসতে চাইলে আসো। নয়তো বসে থাকো। একাডেমিক ভবন-৪ এর ফোরথ্ ফ্লোরে গেলাম।

রিমি অবাক হয়ে গেল। ওই ভবনে জুনিয়র সেমিস্টারদের ক্লাস চলে। মুগ্ধের ওখানে কি কাজ? কোন কাজে সে ওখানে যেতে ইচ্ছুক? কারন কি? রিমি হাতপাচ না ভেবে কিছু বলবে তার আগেই জেনি ঝট করে বলে ছাড়লো-

–কারোর উপর হাত টান করবে মুগ্ধ? ওই বিল্ডিংয়ে ক্লাস চলছে, ফাস্ট ইয়ারের। তুমি ওখানে কি করবে?

জেনি কথাটা বলে বড় ভুল করে ফেললো। মুগ্ধ ওর কথার উপর বাড়তি কথার ঝুলিটা নিতে পারলোনা। জেনি আজ মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে রামিমের মতো গালে ঠাটিয়ে চড় লাগাতো। কিন্তু মেয়ে বলে কিছু করলো না। চোখ রাঙিয়ে শক্ত কোটরে কিছুক্ষন দাড়িয়ে পা চালালো। নাসিফ, তন্ময়, রামিম চেয়ার ছেড়ে মুগ্ধের পিছনে গেলো। বসে রইলো জেনি ও রিমি এবং আহাদ। তিনজন তিনজনের দিকে বোকার মতো তাকালো।

মুগ্ধ দাতে দাত কুটতে কুটতে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। যারা ক্লাস না করে সিড়িতে, বারান্দায় ও ক্লাশের আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলো তারা ভয়ে একধাপ করে পিছিয়ে গেল। রাস্তা করে দিতে লাগলো মুগ্ধ, নাসিফ, তন্ময় ও রামিমকে। ফোরথ্ ফ্লোরে পৌছে মুগ্ধ তার হাটাঁর গতি হ্রাস করে নিলো। এতোক্ষন হেঁটে দৌড়ে লাফিয়ে আসছিলো হঠাৎই পায়ের হেঁটে যাওয়া গতি কমিয়ে দিলো। তন্ময় জিজ্ঞেস করলো-

–বন্ধু এনি প্রবলেম? ক্লাসরুম থেকে কাউকে তুলে আনবো?হাটা থামালি?
–ইয়ার, আই নিড হেল্প। কিছু একটা করে ওই ৪০৪ নং রুমের গোলাপি ড্রেস পড়া মেয়েকে আড্ডাখানায় নিয়ে আয়।
–৪০৪ নং? মুগ্ধ কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের সেকশন-বি ওটা। রাজিব ভাইয়া ক্লাস নিচ্ছে। বড়ভাই বকবে!

নাসিফ নিকোটিনের গন্ধযুক্ত মুখে বলে উঠলো-
–এই আমি যাই। ডিটেলস ফুল্লি বল। আমি ওই মেয়েকে চুল ধরে আনি।

মুগ্ধ কঠিন করে নাসিফের দিকে তাকালো। ইচ্ছে করলো কানের নিচে দুটো থাপ্পর লাগাতে, কিন্তু জোরে শ্বাস ছেড়ে রাগ নির্গমন করলো। নাসিফ তো জানে না মেয়েটার কদর কতো! মেয়েটা আমার জন্য কি হয়ে দাড়িয়েছে নাসিফকে খুলে বলা যাবেনা। সময় হোক সব বলবো। বলার পরও যদি এভাবে চুল টেনে আনার কথা বলে তখন নাসিফকে মারপিট করতেও ভয় পাবোনা।মুগ্ধ স্বাভাবিক করে বলল-

–অলটাইম এগ্রেসিভ, নট কুল ডুড। আমরা ক্যাম্পাসে কি করতে জানি এভ্রিবডি নোস ইট ভেরি স্ট্রিকলি। মেয়েটাকে ভালোভাবে আমার কাছে….আই মিন আমাদের আড্ডাখানায় নিয়ে আয়।

কেন আনতে বললো? কি দরকার মেয়েটাকে? মেয়েটা কে? নাম কি? কিচ্ছু না জিজ্ঞেস করে নাসিফ হুকুম মতো “গোলাপি ড্রেস” পড়ুয়া মেয়েকে আনতে গেল। তন্ময় মুগ্ধকে জিজ্ঞেস করে বসলো-

–দোস্ত? তুই কিন্তু এখনো বললি না কে ওই মেয়ে? কাজ কি ওর সাথে?

রামিম তন্ময়ের কাধে চাপড় মেরে তাচ্ছিল্য করে বলল-
–হুর বেটা! বুঝিস না! র‍্যাগিং দিতে গোলাপী মেয়েকে ডাকছে। টিপেটুপে দেখতে হবেনা, মাল আসলে কেমন!!

রামিম অশ্লীল ভাবে কথাটা বুঝিয়েছে। মাথাটা ধরে এসেছে মুগ্ধের! অনেক হয়েছে! নাসিফকে চড়টা না দিলেও রামিমকে না দিলেই নয়! মুগ্ধ রামিমের কাছে বাকা হাসিতে এগুলো। তন্ময় রামিমের অশ্রাব্য অশ্লীল কথায় মজা পেয়ে হো হো করে হাসছে। রামিম ভেবেছে মুগ্ধ তাকে বাহবা দিতেই কাছে আসছে, আর মিটিমিটি হাসছে। মুগ্ধ রামিমের কাধে একটা হাত রাখলো। রামিম খুশিতে এটিটিউট নিয়ে নাক ফুলালো। আর গম্ভীর সুরে বলল-

–মেয়েটা আসুক! ওড়না ছাড়া পুরো ক্যাম্পাসে চক্কর দিতে বলবো! যা সেক্সি লাগবেনা….

শেষ করতে পারলো না রামিম…ঠাস করে এক থাপ্পর পড়লো তার তৈলাক্ত গালে। নিমিষেই রামিমের এটিটিউট ভঙ্গি হাওয়ায় মিলিয়ে গাল ধরে মাসুম বাচ্চার মতো মুগ্ধের দিকে তাকালো। নাদান বাচ্চা, মুখ দিয়ে বুলি ফোটাতে পারে? কথাই বলতে পারবেনা এমন মুখ করে তাকিয়ে আছে রামিম। মুগ্ধ রামিমের চুল গুলো হাতড়াতে বলে উঠলো-

–আমরা র‍্যাগ দেই ঠিকআছে, অশ্লীলতা করতে আসিনা। তোর মুখের লাগাম টানিস। আমি আবার লাগাম টানতে গেলে জিহবা ছিড়ে চলে আসে নাকি…বলাতো যায় না। বেশি কথা শুনতে পারিনা। কান ভো ভো করতে থাকে। ডিসগাস্টিং লাগে। বুঝছিস তো রামিম?

তন্ময় হতভম্ভ হয়ে হাসি থামিয়ে দিল। রামিম অবলা ছেলের মতো গাল ডলে ডলে চোখ নিচু করলো। মুগ্ধ কোমরে হাত দিয়ে ক্লাস থেকে তথাকথিত মেয়ের আসার দিকে তাকিয়ে রইলো। কখন আসবে? কেমন প্রতিক্রিয়া দিবে? আজও ইনসাল্ট করবে? চড় দিবে? তুইতোকারি করবে? একটু কথা বলার ফুরসত কি পাবে না? কি যে জ্বালা হচ্ছে বুকে। বেচ্যানইন লাগছে মনে। কেন লাগছে বিব্রতবোধ? কারন কি? হঠাৎ করে কেন তার দেখা পেতে চাচ্ছে? বেহায়া মনটা কেন এমন করছে? ব্রেনের সাথে তাল মিলাচ্ছে না? কেন? নাসিফ আসলো। মাথা নিচু করে মুগ্ধের সামনে দাড়ালো। মুগ্ধ অস্থিরতার সাথে জিজ্ঞেস করলো-

–ইয়ার ডান? ও আসবে? আসছে তো? কি বলেছে?হ্যা – বলেছে?

নাসিফ তন্ময়ের দিকে তাকালো। মুগ্ধ তার প্রশ্নের জবাবটাও পেলো। মেয়েটা তাকে কি বলতে পারে সেটার অনুমান ইতিমধ্যে মুগ্ধের মনে গাথা হয়ে গেছে। মুগ্ধ হাল ছাড়লো। দেখা মেলবেনা। কথা শোনা হবেনা। তন্ময় ফাসফাস করে জিজ্ঞেস করলো-

–মামা মেয়েটা কে কেউ তো বল? চিনি আমরা? শুধুশুধু বসে বসে তামাশা দেখছি।

মুগ্ধ ধীরেসুস্থে আনমনে হাটতে লাগলো। জিন্সের পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে বারান্দা পেরিয়ে চলে যেতে লাগলো। রামিম ঢুলু গলায় বলে উঠলো-

–মুগ্ধ থাবড়া দিলো কেন? কেউ বলবি? কি অশ্লীল কথা বলছি যে থাপ্পর দিতে গেল? মগের মুল্লুক পাইছে আমারে?
তন্ময় রামিমকে থামিয়ে দিয়ে নাসিফকে বলল-

–শালা ****** চুপ না থেকে বলবি? মেয়ে কে? নাম কি?আমি চিনি?
নাসিফ ক্ষীণ গলায় বললো-

–খালি তুই না! আমরা সবগুলি ওই মেয়েকে চিনি। মুগ্ধের মাথা ফাটানো মেয়ে। গোলাপি ড্রেসে ক্লাস করছে। রাজিব ভাই তো ধমক দিছে দিছেই! ওই মেয়েও থাপ্পর মারছে।

এটুকু বলেই তন্ময় আন্দাজ করে ফেললো, মুগ্ধ আসলে কি লুকাচ্ছে। কি নিয়ে সকাল থেকে আড্ডাখানায় মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। তন্ময় কিছু আগ বাড়িয়ে বলতে গেলো না। চুপচাপ ‘চল’ বলে সঙ্গে আসতে বললো।

.
.

–মম তুই উঠবি? খাওয়াদাওয়া কি করার ইচ্ছা আছে? সকালেও তুই নাস্তা করে যাসনাই। উঠ, এক্ষুনি!

পুরোদমে দরজা ধাক্কাচ্ছে আম্মু। ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করছেনা। কি অন্ধকার!! চারপাশ এমন অন্ধকার কেন? বিভীষিকাময় ভৌতিক বাড়ির মতো অন্ধকার কেন হয়ে আছে? মরে-টরে গেলাম নাকি? নাকি স্বপ্ন দেখছি? ওহ্! খেয়াল হলো, টিউশনি শেষে দরজা আটকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রুম অন্ধকার, কারন এখন রাত। চোখ কচলিয়ে বিছানা থেকে উঠে শরীর টানা দিলাম। আম্মু দরজার ওপাশ থেকে চিল্লিয়ে চলে গেছে। আমি রুমের লাইট জ্বালিয়ে জানালা খুলে পর্দা সরিয়ে দিলাম। বাতাস এসে দোল খাইয়ে দিল শরীরে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে ঘুমন্ত চেহারার অবশিষ্ট আভা বোঝার চেষ্টা করছি। চোখ ফুলে গেছে, নাক লাল হয়ে আছে, গালেও কেমন কোমল-কোমল ভাব। অসময়ে ঘুমালে আমার চেহারার বাবদশা এভাবে ছুটে। গোলাপি কামিজটাও চেন্জ করে বাসার নরমাল পোশাক পড়িনি। ফাইজাকে পড়িয়ে, জোবায়ের কে পড়িয়ে -ভীষন ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম। ঘুমে শরীর ভেঙ্গে আসছিলো। দুপুরের খাওয়ার চিন্তা ঘুমের চেয়ে প্রাধান্য পায়নি। তাই সোজা বিছানায় এসে ঘুম। হাই তুলে ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে বাইরে গেলাম। আম্মু টিভি দেখছেন সোফায় বসে। আমাকে জাগ্রত দেখে বলে উঠলেন-

–কিরে কান্না করছিস? মুখ ওমন ফোলা কেন?
–অসময়ে ঘুমের প্রভাব এটা। কান্নাকাটি করিনি। খাবো। খাবার দাও।

আম্মু যেন আমার এ কথাটা শোনার জন্য ব্যগ্র হয়ে ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন কখন বলবো, আমি খাবো। আম্মু খাবার আনতে গেলেন। ছোট মেম্বার ফ্লোরে ছবি আকাআকি করছে। খাতায় রঙ ঘষতেই বলে উঠলো-

–আপু তোমার ফোনে অনেকগুলা কল আসছিলো। আমি চিনি না এজন্য কেটে দিসি।
–কে দিছিলো? কখন?
–তুমি ঘুমিয়ে ছিলা। ফোন ব্যাগের মধ্যে বাজতেছিলো আমি ফোন নিয়ে কেটে দিছি।
–খুব পূণ্যের কাজ করছোস ! তোরে ফোন ধরতে না করছিনা বদমাইশ!

মেজাজ গরম। আমার নিষিদ্ধ জিনিসে আমার আপন কেউ হাতে দিলেও দোষের কিছু হয়ে যায়। আমার প্রচুর রাগ উঠে! বিনা অনুমতিতে আমার ফোন নিয়ে ছিনিমিনি খেললে প্রচুর রাগ উঠে! কে কল করলো – তা নিয়ে আমি চলে গেলাম ফোনের কাছে। ফোন ডাইনিং টেবিলের ডানপাশে রাখা। চেক করতেই ধরা পড়লো ফাইজার চাচ্চু, মুগ্ধ দিয়েছে! আবার কি সমস্যা হলো! এ নিয়ে সাতবারের মতো আমার সাথে কথা বলার নানা সুযোগ ঠুকালো। জিদ লাগছে! রাগ লাগছে! সহ্যের সীমা অতিক্রম হচ্ছে! কি সমস্যা কি এই লোকের? কতো না করি! অপমান করি! গালিও দেই! রিসপেক্ট করিনা! তাও ঢলতে ঢলতে আমার কাছেই ফোনের বারোটা নিয়ে চলে আসে! নাম্বার সোজা ব্লক করে দিলাম। নে ঠেলা। কথা বলবিনা? বল এখন! বাপের নাম নিয়ে বল! ছ্যাঁচড়া!

রাতের বেলা আব্বুর সাথে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দেখছি। আম্মু সিরিয়াল না দেখতে পেয়ে মুখের খই ফুটানো বন্ধ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। আমি আর আব্বু ড্রয়িং রুমে বসে বসে টিভি দেখছি। ছোট ভাই ঘুমের দেশে অনেক আগেই তলিয়ে গেছে। আব্বু হঠাৎ করে বললো-

–মা তোর বই কিনতে কত লাগবো?

আমি জানি আব্বু নিজের ফোন কেনা বাদ দিয়ে আমার বই কেনায় পড়ে আছেন। নিজের প্যাপু ভাঙ্গা ফোন নিয়েই দিন কাবার করছেন তা আমি বেশ ভালো জানি। প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললাম-

–আব্বু মারটিন গাপটিল কিন্তু অস্থির খেলছে। দেখো দেখো, এক ওভারে আটাশ রান!

আব্বু অটলভাবে একই প্রশ্ন বলে উঠলো-

–তোর না বই কিনতে টাকা শর্ট ছিলো? কত লাগবে?

–এক টাকাও না। বরং আগামী মাসে তোমার ফোন কিনে দিচ্ছি। ওটা নিয়ে খুশি থাকো। আমার বই কেনার টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা। আমি টিউশনির টাকায় মিলিয়ে নিয়েছি।

জোর গলায় অনেকটা বলে দিলাম।গলায় নমনীয়তা থাকলে আব্বু কথা শুনতে চাইবেনা। নিজের চাহিদার দিকে না তাকিয়ে বই কেনার দিকে চোখ পড়ে থাকবে। আমার সেটা ভালো লাগেনা। অফিসে ডেলি যায় উনি। সব স্টাফদের দামী দামী হ্যান্ডসেট আর উনার হাতে কিনা কমদামী বাটন ফোন! কতটা কষ্ট লাগতে পারে উনার মনে! হয়তো উনি আমাদের দিকে তাকিয়ে নিজের চাওয়া-পাওয়ার কথা ভুলে গিয়েছেন। আচ্ছা উনি এমন কেন? ছেলেদের নাকি দুহাতে টাকা থাকলে, হাতে দামী খানদানী কিছু থাকলে শান উচিয়ে হাটে। কিন্তু যাদের থাকেনা তারা মাথা ঝুকিয়ে শুকনো হাসিতে হাসে। সে হাসির অর্থ দুটো। এক. আমার কাধে পুরো বউ-বাচ্চা নিয়ে সংসার সামলানোর তাগদ। দুই. নিজের চাহিদা বাদ। সংসারের পিছনে টাকা যাক। বড়ই অদ্ভুত এ দুনিয়া!! টাকা থাকলে ফূর্তি, টাকা ফুরালেই অভিনয়ের মূর্তি! অভিনয় করা লাগে ভালো থাকার। ভালো না থাকলে সংসারের রোজগার করবে কি করে?”ছেলে”, “স্বামী”, “বাবা”–হলেও দায়িত্ববোধ কমে না বরং ঘন হয়ে বাড়ে। ক্রমগত বাড়ে।

-চলবে

-Fabiyah_Momo🍁

#তুমিময়_প্রেম🥀♥
#PART_10
#FABIYAH_MOMO🍁

ক্যাম্পাসের গেট পার করে ভেতরে ঢুকতেই মনে হলো কেউ ভীষন ফলো করছে। পলকে পলকে কদমে কদমে সে আমায় টিপটিপ দেখছে। আমি বিষয়টাতে ঘাবড়ালাম না, শান্ত থাকলাম। ব্যাগের ফিতা আকড়ে ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছি। সিড়িতে এক পা ফেলবো পেছন থেকে অর্পনা ডেকে দিলো। ওর চিকন গলায় মিনমিন কন্ঠ পেলেই বুঝে যাই ওটা অর্পনা ছাড়া কেউ হবে না। আমার ক্লাসমেট। আবার ব্যাচমেটও বলা চলে। ও বলল-

–মম দাড়াও।। একটু কথা আছে।
আমি ওর কথায় দাড়ালাম। হাতের বাদামী ঘড়িতে একবার সময় দেখে নিলাম। দশ মিনিট এখনো আছে। ক্লাস শুরু হতে দেরি হবে। আমি শান্ত গলায় বললাম-

–খুব জরুরী কিছু? কি বিষয়ে বলতে চাও?
–তোমায় ক্যাম্পাসে মুগ্ধ ভাইয়ার দলবল খুজঁছে। কি কাজে উনাদের তোমায় লাগবে। জলদি যাও।
–ওদের কাজে আমার কি প্রয়োজন? একেকটা তো একেকটার চেয়ে কম না! আশ্চর্য! কেমন বেহায়া মুখে আবার ডাকলো!
–আমি কি করি বলো? জেনি আপু যেই খাতারনক, পারেনা গলায় হাত ঢুকিয়ে মারে। ভয় পাই গো। তুমি উদ্ধার করো।
–আচ্ছা তুমি টেনশন নিও না আমি ব্যাপারটা দেখছি। ওদের তলবে আমায় কেন ডাকলো তার জন্য মশলার ঝাটা খেতেই হবে। তুমি আমার ব্যাগ নিয়ে ক্লাসে বসো, আমি আসছি।
–সাবধানে থেকো মম। ওরা কিন্তু আগের বার তোমার চুল কেটে দিয়েছিলো। এবার…
–এবার কিছু করতে পারবেনা। আগেরবার নাহয় ভালোমানুষী করেছি। এবার টাটকা দুই থাপ্পর গালে বসিয়ে আসবো।

অর্পনা আমায় বিড়বিড় করে অনেক কিছু বললেও স্পষ্ট কানে কিছুই শুনিনি। অনুমান শক্তিতে বলছি, অর্পনা খুব সম্ভবত এই বলেছে- মম তোমাকেই খুজছে বাংলাদেশ!

গরম পড়েছে খুব। কি সূর্যের প্রখরতা!! তালু ফেটে গড়াগড়ি খেতেই দ্বিধাগ্রস্ত হবেনা, এমন কাঠফাটা গরম। ইচ্ছা করছে হিম শীতল পানির মধ্যে ডুবে থাকি, কি ঠান্ডা! আহ্..পরানটা জুড়িয়ে যায় ঠান্ডায়। কল্পনারাজ্য থেকে গরমের নিস্তার পাওয়া গেলেও বাস্তব দুনিয়ায় গরমে ঘেমে চৌচির। ওরা আমার সামনে। বদমাশ মুগ্ধ শহীদ মিনারের চকচক ফ্লোরে বসে আছে। বাকি গুলা ফ্লোরের নিচের সিড়িতে। মানে দূর থেকেই বোঝা যায় লিডার বসে আছে।।গলার ওড়নাটা নিয়ে কপাল মুছতেই বলে উঠলাম-

–দা না কাস্তে? কোনটা কোনটা? কোনটা দিয়ে কোপাবো?? বল বল দেরি না!!

এক বালতি অবাক নিয়ে মুখ হা করে আছে সবাই। কেবল মুগ্ধ স্বাভাবিক। যেমনটা সর্বদা থাকে। জেনি চিৎকার করে বলল-

–হাউ ডেয়ার ইউ রাস্তার মেয়ে! কাকে ধমকি দিচ্ছো? চোখ নামাও! তোমার বাবার সামনে চোখ উঠাবা! আমাদের সামনে ভুলেও না!

–সোজা হয়ে থাকিস! আমার ফ্যামিলি মেম্বার টেনে আনিস না! তোরটা টানলে ইজ্জত থাকবে না!

নাসিফ সবসময়ের মতো সিগারেট টানছে। ছেলেটাকে সিগারেট ছাড়া একদিনও দেখিনি। সে একটা সিগারেটখোর! মুগ্ধ কেমন শোপিসের মতো পুতুল সেজে আছে।বসে বসে তামাশা দেখছে। জেনি মেয়েটা রিমির দিকে সর্তকতায় ইশারা করলো। অঘটন ঘটানোর ইশারা। রিমি ইশারা পেয়ে আমার দিকে তরল কিছু ছুড়ে মারলো। নিমিষেই পুরো জামা নষ্ট হয়ে গেল। আকষ্মিক চোখ বন্ধ করলেও চোখ যখন খুলি তখন সবাই আমার দিকে অট্টহাসিতে হাসছে। জামার দিকে তাকালাম। বুক ফেটে কান্না আসছিলো! কাদঁতে পারছিলাম না! কালো কালির পানি গুলিয়ে আমার দিকে ছুড়ে মেরেছে। গতবছর আব্বু জন্মদিন উপলক্ষে জামাটা গিফট করেছিলো। সেই পছন্দের জামাটা আমার শেষ। কি করে দিলো? দাগটা সাবান দিয়ে ধুলে, লেবু দিয়ে ঘষলেও উঠবে না। কঠিন দাগ টিভির এডর্ভাটাইজের মতো কোনো ডির্টাজেন্টে উঠবেনা। রাগ লাগছিলো। দা এনে একঘন্টা কুপিয়ে জখম করলেও রাগের স্ফুলিঙ্গ কমবেনা। তবুও কাদো মনে ছোট হয়ে চলে আসলাম। আজ কিছু করলাম না। মনটা শক্ত নেই। প্রচণ্ড নরম হয়ে গিয়েছে। যেকোনো সময় চোখ দিয়ে ছলছল হয়ে জল পড়তে পারে। ওদের সামনে কাদতে নেই। দ্রুত পায়ে হাটঁতেও পারছিনা। সবাই ভাববে হেরে গিয়েছি। নিজেকে কঠোর দেখানোর প্রয়াস করছি।

গার্লস হোস্টেলের ওয়াশরুমে আছি। বেসিনের পানি ছেড়ে মুঠো করে জামার উপর থেকে আলতো কালির ছোপটা উঠাচ্ছি। যদিও জানি কালির দাগ উঠবেনা। পছন্দের জিনিসে কটু দেখা দিলে ভেতরটা কেমন হাহা করে বলে বোঝানো যাবেনা। মেয়েদের কাছে ছোটখাটো জিনিসটাই অনেক। অনেক কিছু। আমার কাছে সর্নালংকারের মূল্য নেই। স্বর্ণ কখনো হীরার যোগ্যতা পায়না, বাবার ভালোবাসা মিশ্রিত উপহারটা হীরার মতো। আমার হীরার খনিতে দাগ লাগলো। জামারহাতায় চোখ মুছে বাইরে বের হলাম। হোস্টেলের ব্যাক এরিয়া এটা। ওয়াশরুম গুলো স্বচ্ছ পরিস্কার। বড় একটা হলরুম পেরিয়ে এখানে আসা লাগে। যেহেতু আমি কান্না করেছি তাই জায়গাটা আমার জন্য উত্তম। নিরিবিলি, কোলাহলমুক্ত। কেউ নেই। কেউ নেই। আমি ওয়াশরুমের দরজাটা বাইরে থেকে সিটকিনি লাগিয়ে পেছনে ঘুরতেই ঝড়ের বেগে কেউ ঝুকে আসলো। একহাত ওয়াশরুমের দরজায় পড়লো। আমি চমকে দরজার সাথে ঠেকে গেলাম। চোখ বড় করে অবাকে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। মুগ্ধ ধারালো চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে। পিছনে দরজা সামনে মুগ্ধ ডানে হাত বামেও অপর হাত দিয়ে দিলো। মাঝে আমি পুরো খাচায় বন্দিশিবির! সে বলল-

–আজকের মেয়েটা কে আমি চিনি না। কে সে? Who is she? Is she Momo?

মুগ্ধকে জবাব দেওয়াটা প্রয়োজন মনে করিনা। ওর বুকের উপর হাতজোড়া দিয়ে ধাক্কা দেই। ও জমের মতো লেগে আছে। কেউ ওর হাত দুটোকে আঠা মেরে দরজায় লাগিয়ে দিয়েছে। আমি চরম বিরক্ত। ও আবারো বলল-

–তুমি জবাব দিচ্ছো না কেন!এ্যান্সার মি!কে তুমি! কেন তুমি চুপ আছো!

ওর ফালতু কথা শুনে মাথা গিজগিজ করছে। এমনেই জামা নষ্ট করে দিয়েছে! এখন আমাকে আহ্লাদ দেখাতে চলে এসেছে! ফালতু! গালে একটা থাপ্পর দিলাম। মুগ্ধ রেগে গেল। রাগলো… রাগলো চরম রেগে গেলো। আমার বাহু চেপে ঝাকিয়ে বললো-

–তুমি চুপ থাকবে কেন! চুপ তোমার জন্য চুজেবেল না! তুমি ওদের সামনে কেন চুপ ছিলে ব্লাডি ফুল! হোয়াট দ্যা হ্যাল ইজ উইথ ইউ!আমি তোমার সিচুয়েশন দেখলাম! তুমি ফাউ ফাউ ওদের শেমফুল কাজে চেহারা দেখছিলে! কেন কিছু করলেনা!আমায় চড় মারলেই ওদের কাজে রিভেন্জ পাবে? Why have you slapped me?হোয়াই?

-চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here