#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 23…….
এই বলে শিকগুলো তুরের দিকে এগিয়ে দিতে লাগল। একটা শিক তুরের ডান হাতে আরেকটা ওর পেটের দিকে…. তুর নিজেকে বাচানোর জন্য ছটফট করছে । এতটাই যে ওর হাত কেটে রক্ত বের হওয়ার উপক্রম। কিন্তু মুখ বাধা থাকার কারনে শব্দ করতে পারল না। ইশারায় না করল কিন্তু তীব্র শুনল না। এক পর্যায়ে তুর উপরের দিকে তাকিয়ে কাদতে শুরু করল….
তখনি তীব্র তুরের দুহাতে শিক দুটো চেপে ধরতেই তুর চোখ বন্ধ করে চিতকার দিল।
কিন্তু অদ্ভুত ভাবে হাত গুলো পোড়ার জায়গায় হাত গুলো মুক্ত হওয়ার আভাস পেল। ও চোখ খুলে তাকিয়ে প্রচন্ড ভয়ে কোনো দিশা না পেয়ে তীব্রর গলা সজোরে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগল। তীব্র নিজের হাত থেকে গরম শিকগুলো ফেলে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তুরকে…
তীব্র শিকগুলো দিয়ে তুরের হাত নয় ওর হাতের বাধন গুলো পুড়িয়েছে। কারনটাই ছিল তুরকে ভয় দেখানো।
কতক্ষন তুরকে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে বলতে পারবে না তীব্র। আর তুরও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে না। তীব্রের গলা জড়িয়ে কাদতে কাদতে হিচকি তুলে ফেলেছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কিন্তু একটুও নড়ল না। কারন ওর পা এখনো টেবিলের সাথে বাধা। আর মুখও বাধা।
তীব্র ওকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় একহাত দিয়ে ওর পিঠ ধরে আরেকহাত দিয়ে ওর পায়ের বাধন খুলে দেয়। বাধা জায়গায় আলত করে হাত বুলায়। ব্যাথা পেয়ে পাটা সরিয়ে নেয় তুর। তীব্র ওকে ছেড়ে নিজেই পা ঝুলিয়ে টেবিলে উঠে বসে। তুর ওর বাম দিকে থাকার কারনে ওর বাম উরুতে তুরকে বসিয়ে ডান পা উঠিয়ে তুরকে হেলান দেওয়ায়….. আর মাথার ভর সম্পুর্ন তীব্রের ডান বাহুতে।
তুর করুন চোখে তীব্রের দিকে তাকিয়ে হিচকি তুলছে। কান্না থেমে গেছে। এভাবে কিছুক্ষন তুরের দিকে চেয়ে থেকে ওর মুখের কাপরটা খুলে দেয় তীব্র। তারপর ওর গাল থেকে লেগে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয় তীব্র। ওর গালটা ধরে বলে…
_- খুব ভয় পেয়েছিলে তাই না। তীব্র সত্যি এমন করবে কিনা। হুমম করতে চেয়েছিলাম কারন পারব না তাই…..
অবাক চোখে তাকায় তুর….
— কেন ছেড়ে চলে গিয়েছিলে তুর। জানোনা তোমাকে ছেড়ে আমি পাগল হয়ে যাব। তাহলে কেন করলে এমন? জানো কতটা রেগে গিয়েছিলাম তোমার উপর….
চপ করে আছে তুর….
— তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না। এক কথায় বলে দিতে ব্যস আমি মেনে নিতাম। কিন্তু নিজে বলে আশা দিয়ে তুমি সেই আশা ভেঙে কি ঠিক করেছ?
..…..
— আচ্ছা তুর তুমি নিজে একটা কথা ভাব তো। আমি তোমাকে আটকে রাখা ছাড়া এখন পর্যন্ত তোমার সাথে কোনো কিছু কি জোর করে করেছি। তোমার সাথে ফিজিক্যালি ইনভলভ হয়েছি তাও কিন্তু তোমার সন্মতিতে। তুমি যদি বাধা দিতে তোমার কি মনে হয় আমি জোর করতাম। না তুর….
এবার যেন তুর আকাশ থেকে পরে ওর কথায়।
— তুমি যা চেয়েছ তাই দিয়েছি। এমনকি এতকিছুর পর তুমি যখন বিয়ের কথা বলেছে এক বাক্যে আমি রাজি হয়ে গেছি। কারন আমি বুঝতে পেরেছি আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। আর তুমি কি করলে নিজে ভালোবাসার কথা বলে, বিয়ের আশা দেখিয়ে নিজেই চলে গেলে…. আমার রাগটা কি স্বাভাবিক নয় তুর।
তুর চুপ করে আছে। কিছু বলতে পারছে না। ওর একটা কাজের জন্য আজ তীব্র ওকে অপরাধী করে দিতে চাইছে।
— আচ্ছা তুর তোমার সত্যি মনে হয়েছিল আমি আজ তোমাকে আঘাত করব। একটা কথা বলো আমার কাছে থাকার পুরোটা সময় আমি কি তোমাকে মেরেছি বা আঘাত করেছি। হ্যা বলতেই পারো তুমি যখন আত্নহত্যা করতে চেয়েছিল আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা কেন তুর শুধুমাত্র তোমার মাথা থেকে মরে যাওয়ার ভুত নামানোর জন্য। এছাড়া আর কোনদিন আঘাত দেওয়ার জন্য তোমাকে স্পর্শ করিনি।
এবার তুর কাপা গলায় বলল… আমাকে আটকে রাখা কি অন্যায় নয় তীব্র। ” এইটা শুনে আলত হাসল তীব্র।
— নিজের বুকে হাত রেখে বলো তোমাকে আটকে না রাখলে কি আমার সাথে থাকতে চাইতে। আমি যেখান থেকে তোমাকে এনেছি তারপরও কি তুমি আমার হতে তুর ..
তীব্রের কথায় তুর ভাবনায় পরে গেল। সত্যি তো কথাগুলো। তীব্র ওকে ওই লোকগুলোর কাছ থেকে কিনে এনেছে। আর তুর সুযোগ পেলে যে ও পালিয়ে যেত তাও ঠিক। আর কারন ছাড়া আঘাত বা জোর তো করেনি তীব্র। হ্যা সেচ্ছায় কিন্তু তুর কেন করেছিল? তীব্রের প্রতি ফিলিংস থাকার কারনে নাকি ভয়ে । তাহলে ও কি অন্যায় করে ফেলল তীব্রকে ছেড়ে গিয়ে।
তীব্র খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে ওর কথাগুলো তুরের মনে ইফেক্ট করছে। মেডিসিনের কারনে বা রোবো ক্যাটের কারনে তুরের মনে নিজের জন্য ফিলিংস তৈরি করতে পেরেছে তীব্র। আর এতকিছুর পর তুর তীব্রের প্রতি দুর্বল হবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। আর এমনিতে ও তুর ইমোশনালী এতটা স্ট্রং নয় মেয়ে নয়। তুর যে কতটা আবেগী তা এই কয়মাসে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। আর ও নিজে…. ও নিজে কি তুরের মায়ায় পরা থেকে নিজেকে আটকে রাখতে পেরেছে ….
— তুমি কি ভেবেছ তোমাকে বন্দীনী করে ভালোবাসি। না তুর ভালোবাসি তাই বন্দীনী করে রেখেছিলাম। নিজের ভালোবাসার মানুষকে কে ছাড়তে চায় বলো।
_- আচ্ছা তুর তুমি বলো, আমি যদি তোমাকে শুধু ইউজ করতে চাইতাম তাহলে তোমার এক কথায় তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হতাম…..
তুর কি করবে বুঝতে পারছে না। সত্যি মিথ্যার মাঝে ঘোরপাক খাচ্ছে। তীব্রের প্রতিটি কথা ওর মনে আঘাত করছে। মন এক কথা বলছে আর বিবেক অন্য কথা। দুইয়ের টানাপোড়নে পাগল হয়ে যাচ্ছে তুর…
গখনি তুরের মুখটা নিজের কাছে টেনে নেয় তীব্র। তীব্রের চোখের দিকে তাকাতেই হৃদয়টা ভেঙে যাচ্ছে ওর। নিজেকে অপরাধী লাগছে। তীব্রের চোখের কোনে জমে থাকা পানি তুরের ভিতর হাহাকার তৈরি করেছে….. তুরের চোখ বেয়ে পানি পরল কিন্তু সেটা কিসের বুঝতে পারল না। তখনি
— আচ্ছা তুর আমি কি তোমায় শুধু কষ্ট দিয়েছি। আমার স্পর্শে কোনদিন ও কি ভালোবাসা খুজে পাওনি তুমি। তোমার মনে ভালবাসার ফুল ফোটাতে এতটাই ব্যর্থ আমি…. চুপ করে থেকে না। উত্তর যদি না হয় তাহলে কোনোদিনও আমি তোমাকে জালাব না। তোমার থেকে দুরে থাকার জন্য আমাকে যদি মরতেও হয় তাহলে আমি…..
আর কিছু বলার আগেই তুর ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। এটা দেখে তীব্রের ঠোঁটের কোনে অদ্ভুত রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল। নিজেও খুব জোরে জড়িয়ে ধরল তুরকে।
তুরকে কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে আসে। ওকে বিছানায় বসিয়ে বলে…..
— চুপচাপ বসে থাকবে। আমি এসে যেন এভাবেই দেখি।
তীব্র চলে যায়। কিছুক্ষন পর একটা বোলে হালকা গরম পানি আর পাতলা কাপরের টুকরো এনে বাধা জায়গা মুছিয়ে দেয়। পায়ে হাত দিতেই তুর বাধা দেয়। কিন্তু তীব্রের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলে না। তীব্র বাধা জায়গা পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দেয়। তারপর ঠান্ডা পানি এনে তুরের মুখসহ গলা মুছে দেয়। তুর সবসময়ের মত অবাক হয়ে ওকে দেখছে…. এরমধ্যে একজন স্টাফ এসে গরম দুধ দিয়ে গেছে। তুর না চাওয়া সত্ত্বেও ওকে খাইয়ে দেয়। তীব্র নিজের কাজ শেষ করে ওকে শুইয়ে গায়ে কাথা টেনে চলে যেতে নেয়…. তখনি তুর ওর হাত টেনে ধরে…
— কোথায় যাচ্ছেন তীব্র।
তীব্র ওর দিকে তাকায়। তারপর শান্ত সুরেই বলে….
— আমি এখানে থাকলে তোমার খারাপ লাগতে পারে।
-_ আমার ভালোলাগা খারাপলাগার এত খেয়াল আপনার।
তুর কেন বলল বুঝতে পারল তীব্র।
— আগে শুধু ভালোলাগার দাম ছিল। তোমার খারাপ লাগার দাম দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু তুমি যাওয়ার পর তোমার ভালোলাগা খারাপলাগা দুটোই আমার কাছে ইমর্পোটেন্ট। [ অন্যদিকে ফিরে ]
— যদি বলি আমার আপনার সাথে থাকতে ভালোলাগে না। আমি আমার ফ্যামিলির কাছে চলে যেতে চাই তাহলে….
— যেতে দেব। আটকে রাখব না। বললাম তো তোমার খারাপ লাগাও জরুরি আমার জন্য। তুমি যা বলবে তাই।
-_ আমি আমার পরিবারের কাছে যেতে চাই তীব্র।
কথাটা শুনে তীব্রের রাগ উঠে গেল কিন্তু কিছু বলল না। এটা রাগার সময় নয়। তাহলে নিজের হাতে তুরকে ফিরে পাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। ও নিজের রাগটাকে শান্ত করে নেয়। তারপর তুরের কাছে গিয়ে ওর গাল মুঠোয় নিয়ে বলে…..
— সেই তুমি এখনো আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছ। যাও না করব না। কিন্তু আমার শর্ত আছে….
— শর্ত মানে। [ ঘাবড়ে যায় তুর.. ]
— আমি তোমাকে তোমার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেব। কিন্তু তাতে আমার কি হবে তুর
।আমি যে পাগল হয়ে যাবো। তুমি যাওয়ার পর বিগত ১০দিন আমি দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। একটা মুহুর্তের জন্য ঘুমোতে পারিনি আমি। আমার ঘুম আমার চোখে ফিরিয়ে দিতে হবে….
— মানে… [ বেশ অবাক হয়ে ]
তীব্র উঠে ওর গালে হাত দিয়ে বলে…
প্লিজ তুর আমাকে একটু ঘুমাতে দেও। আমি না ঘুমিয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি। তোমাকে এনেছি একটাই কারন একটু ঘুম।
তীব্রের কথার আগা মাথা পেল না তুর। তবে এটা বুঝতে পারছে তীব্র সত্যি বলছে।। ও নির্ঘুম থাকার সাক্ষী বহন করছে তীব্রের চোখে নিচে পরা কালী।
.
— আমি একটু ঘুমোতে চাই। যেটা তুমি ছাড়া আর কোথাও পাব না আমি। প্লিজ তুর দয়া করে আমাকে ঘুমোতে দেও।
তীব্রের কথার সায় দিতে পারল না। কিন্তু তীব্রের ক্লান্ত চাওনী তুরকে বুঝিয়ে দিচ্ছে কতটা অসহায় হয়ে ও ঘুমাতে চাইছে। কিন্তু তুর কি বলবে তা বুঝতে পারল না। কি বলা উচিত ওর। আর তীব্রকে কিভাবে ঘুম পাড়াবে? তুরের চোখ তীব্রের চোখে আটকে গেছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর তীব্র আর চেয়ে থাকতে পারল না। অদ্ভুত এক ঘোর কাজ করল নিজের মাঝে। অজান্তেই চোখ গুলো বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। তীব্র কাপা কাপা ঠোঁটে তুরের কপালে স্পর্শ আকে। তুরের নাকে আরেকটা স্পর্শ একে ঠোঁটের দিকে তাকাতেই ঘোরটা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু তুরকে অবাক করে দিয়ে তীব্র ওর পেটের উপর মাথা রেখে কোমর জড়িয়ে ধরে বলে….
— আমার ঘুমের ওষুধ পেয়ে গেছি। আর সেটা হচ্ছে নেশা। অন্যকিছুর নয় তোমা……
নিশ্চুপ হয়ে যায় তীব্র। কিছুক্ষন পর তুর উঠতে চাইলে পারে না। তীব্রকে ডাকতেই দেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তীব্র….. তীব্রকে দেখে মনে হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ সে। এতটা নিশ্চিন্তে আর গভীর ভাবে সুখী মানুষই ঘুমোতে পারে। তবে একটা জিনিস অবাক লাগছে যেই মানুষটা কিছুক্ষন আগেও একটু ঘুমের জন্য ছটফট করেছে সে এতটা মগ্ন হয়ে কিভাবে ঘুমায়।
সন্ধ্যার পর … ৬টা বাজবে হয়তো। চারদিকে অন্ধকার। তবুও তুরের এই সময় ঘুম আসবে না। কিন্তু তীব্রের ঘুমটাও নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না। তীব্র কতটা শান্তিতে ঘুমোচ্ছে সেটা ওর মুখে প্রশান্তির আভায় ফুটে উঠেছে। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে ওর। এই ঘুমটা যেন অনেক্ষন স্থায়ী হয় ওর এটাই তুরের চাওয়া। কিন্তু কারনটা অজানা। যদিও সব সময় সবকিছুর কারন বাঞ্চনীয় নয়। নিজের অজান্তেই তুরের হাত তীব্রের মাথায় প্রবেশ করে। আলত করে টানতে থাকে। আর তীব্র পরশ আবেশে ঘুমিয়ে আছে প্রান-প্রিয়াকে নিয়ে। যদিও তাকে সে নিজের #বন্ধ_দরজার_তুমি উপাধি দিয়েছে। কিন্তু কি আসে যায় তাতে……..
,
,
,
,
,
রাত ১০টা….
হঠাৎ করেই তুরের ঘুমটা ভেঙে যায়। তীব্রের সাথে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছে নিজেও জানে না। বেলকনির দরজার পর্দা গুলো উড়ছে এক নাগাড়ে। সাথে মেঘের থাকে থাকা চাদটাও উকি দিচ্ছি। ঠান্ডা বাতাসে শীত শীত লাগছে তুরের। তুর উঠতে চাইলে নিজেকে তীব্রের বাম বাহুতে আবিষ্কার করল। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তীব্র। “এই লোকটাও না যেভাবে ঘুমাক। একসময় দেখা যাবে তুরকে সেই নিজের বাম বাহুতে জড়িয়ে শুয়ে আছে। বলতে গেলে এটা অভ্যাস। ” কথাটা ভেবেই আলত হাসে তুর। তীব্রকে এভাবে ঘুমাতে দেখে তুর নিজে নড়াচড়া করল না। তবে বাইরের থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসে ওর যেমন শীত করছে তীব্রের গুটিশুটি মেরে শোয়াতে বুঝল ওর ও তাই। কিন্তু বেচারা এতটাই ঘুমে মগ্ন যে কোনো খেয়াল নেই। তুর নিজের মাথার কাছ থেকে একটা কম্বল নিয়ে দুজনের গায়ে জড়িয়ে দিল। উষ্ণতায় আবছা অন্ধকারে তীব্রের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। আলত হাসল তুর। এবার তীব্র নয় নিজেই ওর বুকে মুখ গুজল তুর। তীব্র ঘুমের ঘোরেই ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। কিছুক্ষনের মধ্যে তুর ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেল।
,
,
,
,
,
ওদিকে তোয়ার অনেক টেনশন হচ্ছে। যা কিছু বলে ম্যানেজ করেছে। সানিকে ফোন দিলো কিন্তু ধরছে না। আর তুরের ফোন সুইচড অফ বলছে।
,
,
,
,
,
,
,
হঠাৎ করেই ঘুমের মাঝে তুর ফিল কাউকে খুজল কিন্তু পেল না। ঘুমঘুম চোখে পাশ ফিরিয়ে তীব্রকে খোজার চেষ্টা করল। কিন্তু বিছানায় তীব্র নেই। তুর আশেপাশে খোজার চেষ্টা করতেই বেলকনির উড়তে থাকা পর্দার ওপাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। তুর কম্বলটা সরিয়ে আস্তে আস্তে বেলকনিতে গিয়ে দেখে তীব্র দুহাত গুজে দাড়িয়ে সামনেটা দেখছিল। তুরের আসার আভাস পেয়ে নিজের চোখটা বন্ধ করে বলল করল….
_- ঠান্ডা লাগছে ভিতরে যাও।
— আপনার লাগছে না।
কথাটা শুনে বিস্মিত হয়ে চোখ খুলে ওর দিকে তাকায়। তুর নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
— ভিতরে যাও…
তুর কোনো রেসপন্স করল না। এটা দেখে তীব্র চেয়ার থাকা চাদরটা তুলে তুরের গায়ে জড়িয়ে দিতে চাইল। কিন্তু তুর বলল…
— আমার শীত লাগছে না। আপনি বরং নিজের গায়ে জড়িয়ে নিন।
কথাটা শুনে তীব্র চাদরটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিল। এটা দেখে তুর আবার চোখ নামিয়ে নিল। তীব্র বুঝতে পারছে ওর শীত করছে। ও কথা না বাড়িয়ে তুরকে বুকের মধ্যে টেনে দুজনকে ঢেকে দেয়।
-_ বললাম তো আমার শীত লাগছে না।
— আমি কখন বললাম তোমার শীত লাগছে। আসলে আমার এত বেশি শীত লাগছে যে চাদরে শীত মানছে না।
তুর কিছু বলল না। তুরকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইল ও। বাতাসের বেগটাও ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। তুরের মুখ ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে। আর ওর অবাধ্য চুলগুলো তীব্রের মুখে বারি খাচ্ছে। হঠাৎ করে তুরকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ওকে চাদরে সম্পুর্ন আবৃত করে নিল। তুরের ঠান্ডা মুখটা ওর বুকে লাগতেই কেপে উঠল। আর উষ্ণতায় মিশে গেল।
বেশ কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর তুর মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলল.….
— আপনি কি আমাকে এখানে রাখবেন তীব্র!
তীব্র স্থীর চাওনীতে ওর দিকে তাকাল….
— তুমি কি থাকতে চাও…
নিশ্চুপ তুর…..
— তাহলে রাখব না। বাসায় দিয়ে আসব তোমাকে।
— সত্যি… [ শান্ত গলায় ]
-_ হুমম….
— তাহলে চলুন…
কিন্তু তীব্র অনড়। আর তুরকেও যেতে দিল না। বিস্মিত হয়ে তাকাল তুর..…
— তোমায় যেতে দেব তুর। তবে তোমার থেকে আমার কিছু চাই…
কাপা কাপা গলায় তুর জিজ্ঞেস করল… কি? আর মৃদু হেসে তীব্র জবাব দিল.….
— তোমার ২৪ ঘন্টার সামান্য কিছু সময়।
— মানে….
— মানে… তোমাকে সারাদিনের কিছুটা সময় আমাকে দিতে হবে। আমার ঘুমের সঙ্গী হয়ে। এতটা তো বুঝতেই পেরেছ তুমি আমার জন্য স্লিপিং পিল হিসেবে কাজ করো। তাই আমার ঘুমের সঙ্গী হতে হবে তোমায়। যদি তা পারো তবেই আমি যেতে দেব তোমায়….
— সেটা কতদিন?
— যতদিন না তুমি মন থেকে আমার কাছে চিরদিনের জন্য চলে আসবে ঠিক ততদিন।
— আর যদি না আসি তবে?
— তাহলে সারাজীবন আমার ঘুমের সঙ্গী হয়ে কাটাতে হবে তোমায়….
— তারমানে আপনি ছাড়বেন না?
একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় তীব্র…..
— হুমম। তবে যেদিন মারা যাবো।
কথাটা শুনে কলিজা কেপে উঠে তুরের। আবার একটা হাসি দিয়ে বলে….
— তবে চিন্তা করো না তার জন্য বেশি অপেক্ষা করাবো না। কারন তোমার উপর বিশ্বাস আছে আমার। আমাকে মারার চেষ্টা তুমি ঠিক করবে। তবে একটা কথা রাখবে আমার।
এই কথার উত্তর কি হয় জানা নেই। কিন্তু তীব্র নিজে থেকেই বলল….
— আমাকে আর যেখানে আঘাত করো এখানে করো না। [ বুকের বাম পাশ দেখিয়ে ] আসলে কি জানো অন্য কোথাও মারলে যদি বেচে যাই তাহলে ঘা শুকানোর পর ব্যাথাটা চলে যাবে। কিন্তু এখানে আঘাত করলে অসুখ সারলেও ব্যাথা সারবে না। কারন বিশ্বাস ভাঙলে অনেক কষ্ট হয় তুর। আমাকে হাজার আঘাত করলেও কিছু বলব না। কিন্তু প্লিজ এখানে না।
তীব্রের কথায় ওর চোখে পানি চলে এলো। শরীরের আঘাত পুরন মনের আঘাত না। আর তীব্র নিজের কথায় বুঝিয়ে দিয়েছে ও তুরকে ভয় পায়। তবে শরীরের আঘাতের নয় বিশ্বাস ভাঙার আঘাত….ও তীব্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ও কি ভেবে ধরল জানেনা। তীব্র এটাকে কি ভাববে তাও জানেনা।
— আমি যদি চিরদিনের জন্য আপনার না হই তখন।
— আমি জানি সেটা একদিন না একদিন ঠিক হবে। কারন তীব্র ঘুমের সঙ্গী করে বা জীবনের সঙ্গী তুরকে হতেই হবে। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে প্রমান করে দিব। চ্যালেঞ্জ করছি তোমায়। আর তীব্র কখনো হারে না। আর তা যদি হয় তার তুরের জন্য তাহলে তো আমি জিতবই….
— জোর করবেন তাইনা।
— না… কিন্তু এটা বলতে পারি। হয় একদিন তুমি নিজের হাতে আমাকে শেষ করবে নয়তো নিজে আমার #বন্ধ_দরজায়_বন্দীনী হতে চাইবে। এখন দেখার বিষয় তুমি কোন অপশন চুস করো…..
তুরের কপালে গভীর চুমো আকে…..
-_ যাও ফেশ হয়ে নেও। তোমায় বাড়ি দিয়ে আসব।
,
,
,
,
,
,
,,
,
তারপর তীব্র তুরকে ওর চাচার বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়ির পাশে গাড়িতে দুজনেই বসে আছে…. কারো মুখে কোন কথা নেই। নিরবতা ভেঙে তুর বলে উঠল আমি আসছি…..
তীব্র ওর হাত চেপে ধরল। তীব্রের দিকে তাকাতেই দেখে ও সিটে হেলান দিয়ে ডানহাত চোখে দিয়ে আছে… তুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীব্র বলল….
— Can i ki…. [ বলতে গিয়েও থেমে গেল তীব্র ] আমাকে একটা স্ট্রোংলি হাগ করবে তুর।
তুর কি বলবে বুঝতে পারল না। ও কিছু বলার আগেই তীব্র ওকে টেনে খুব জোরে জড়িয়ে ধরল। তুর কি করবে বুঝতে না পেরে তীব্রের আলত করে তীব্রকে ধরল। ঠিক তখনি আচমকা তুর নিজের পিঠে গরম পানির আভাস পায়। তারমানে তীব্র কি কাদছে। নিজের চোখের পানি লুকাতে জড়িয়ে ধরল ওকে…. তুর কিছু বুঝে উঠার আগেই তীব্র ওকে ছেড়ে বলে….
-_ চলে যাও তুর…[ অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে ]
তুর আর অপেক্ষা করল না। এক দৌড়ে বেড়িয়ে চলে গেল বাড়ির ভিতরে তীব্রও ওয়েট করল না। চলে এলো সেখান থেকে….
— আমি জানিনা তুর… আজকের কাটানো সময়টা সত্যি ছিল নাকি মিথ্যে। তবে যেটা ছিল সুন্দর ছিল। তুমি যদি মিথ্যে করেও আমাকে এভাবে ভালোবাস আমি সারাজীবন তা সত্যি মনে করে গ্রহণ করব। ভালোবেসে যদি নিজ হাতে বিষ দেও তবে অমৃত ভেবে তৃপ্ত হব আমি। জানোতো ধোকাটা যখন জানা থাকে তখন তা পাওয়ার স্বাদ আরো তীব্র হয়। আজকের টা সত্যি হলেও আমি জানি হয়ত খুব দ্রুত তা মিথ্যে হয়ে ধরা দেবে। আমি তবুও তাই চাই। কারন তাতেই তোমার ভালোবাসা থাকবে…..
নিজের মনে ড্রাইভ করতে থাকে…
,
,
,
,
,
,
,
,
[ বাকিটা পরের পর্বে জানবেন ]
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr