#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_৪০

0
518

#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_৪০

#মিদহাদ_আহমদ

তামান্নার সামনে দিয়ে তার ড্রেস যখন তার ননাস একে একে বের করে নিজের মেয়েকে দিয়ে দিলো, তামান্না তখন আর চুপ থাকলো না। হাত ধরে বললো,

‘কী করছেন এগুলা?’

‘আরে আরে আরে! মেয়ের সাহস দেখো! আমার হাত ধরে ফেললো।’

তামান্না এবার তেড়ে এলো। মুখ বন্ধ না করে বললো,

‘এই যে কাঠ দেখছেন না, যেগুলা বললেন সার নাই ভেতরে, এই একটা চেয়ার এক হাতে তুলে আছাড় মেরে কারো মাথা ফাটানোর মতো শক্তি আছে আমার হাতে৷ আর এই ড্রেসগুলা কি আপনার ভাইয়ের টাকায় কিনেছি? জানেন এক একটা ড্রেসের দাম কত? আড়ং এর এক একটা ড্রেসের দাম কত হয় সে সম্পর্কিত আইডিয়া আছে? আপনারা যে বিয়ের কাতান শাড়ি দিয়েছিলেন না, এমন চারটা কাতান শাড়ি এক করলে আমার একটা ড্রেসের সমান দাম হবে। এক একটা ড্রেস আমার বাবার টাকায় কেনা। এখন এগুলায় এসে আপনি আপনার অবজেকশন দিয়ে দিলেন? এগুলা আপনি আপনার মেয়েকে দিয়ে দিলেন? বাহ বাহ! সবকিছু সহ্য করে নিতাম। কিন্তু আর না। এখন দেখছি যে সহ্য করবে, সেই করবে।’

তামান্নার শাশুড়ি পাশের রুম থেকে এসে তামান্নার ননাসকে টেনে নিয়ে চলে গেলেন৷ যেতে যেতে বললেন,

‘বাড়ি ভর্তি মেহমান। কারো সামনে এমন অঘটন ঘটাস না। পরে যা করার আমি করে নিবো। এসেছে তো দুইদিন হলো। দেখ কেমন করে পাখা কেটে ফেলি৷ কথায় আছে না, পিঁপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। এরও পাখা গজিয়েছে এমন মরার জন্য।’

এদিকে রাতে আসিফের মা আসিফের বাবার সাথে কথা বললেন যে সম্পত্তির ভাগ চায় বড় মেয়ে। আসিফের বাবা বললেন,

‘আমি বেঁচে থাকতে আইন মোতাবেক তোমার কোন সন্তানই আমার সম্পত্তির অংশীদার নয়৷ আমি কারো নামে আমার সম্পত্তি লিখে দেইনি আসিফের মা। এইটা তোমার মেয়ের জানার কথা।’

রুমে নক করে ভেতরে ঢুকলো তানিয়া। বাবার সামনে মাটিতে বসে বাবার পায়ে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বললো,

‘বাবা আমি জানি তুমি আমার এমন আচমকা সম্পত্তির দাবি করায় আমার উপর রাগ করবে। কিন্তু দেখো বাবা, তোমার জামাইর আর আমার একটা মাথার উপরের ছাদ নাই৷’

‘কেন? এই বাড়ি কি তোর বাড়ি না? এখানে কি তোর থাকতে কোন অসুবিধা হচ্ছে?’

তানিয়া তার মায়ের দিকে তাকিয়ে এবার বললো,

‘দেখো মা তোমার ছোট মেয়ের সংসার হয়েছে৷ দুইদিন পর তার বাচ্চা হবে। আজ নয়তো কাল নুপুরও সন্তানের মা হবে। সবাই সবার নিজের নিজের জীবন গুছিয়ে নিবে। কিন্তু আমার কী হবে? দিনশেষে এইটা তো আমার নিজের বাড়ি না। এইটা আমার বাবার বাড়ি। আমার এখানে থাকা মানায় না। তাছাড়া তোমাদের জামাইও এখানে থাকতে কেমন জানি লজ্জাবোধ করে। এখন তোমাদের জামাই একটা ফ্ল্যাট দেখেছে। আমি সম্পত্তি চাচ্ছি না। আমি চাই সেই ফ্ল্যাট কেনার টাকাটা যেনো বাবা দিয়ে দেয় আমাকে। আমার নিজের বলে কিছু একটা হোক।’

তানিয়া কথাগুলো বলেই চলে গেলো। গোটা রাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করে চিন্তা করতে লাগলেন তানিয়ার মা। মেয়ে তো ভুল কিছু বলেনি। দুইদিন পর আজ আছেন তিনি, কাল নাও থাকতে পারেন। মেয়ের কোনদিন মা হওয়া হবে না। মেয়েটা আজীবন এক দুঃখ বয়ে বেড়াবে নিজের মাঝে। সেই মেয়েকে যদি এভাবে তিনি রেখে যান, তাহলে বিধিবাম আগামীদিনের খবর তো তিনি জানেন না। গোটা রাত চিন্তায় চিন্তায় কেটে গেলো ওনার।

সকালে ব্যাংকে যাওয়ার আগে বদরুল তানিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,

‘হয়েছে কিছু? কী বললেন তোমার মা?’

‘হবে। তুমি চিন্তা করো না তো৷ একটু অপেক্ষা করো ‘

‘ফ্ল্যাট টা যেনো হাতছাড়া না হয়ে যায় এইটাই বলছি আপাতত’

‘ না না। হাতছাড়া হবে কেন? দেখো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তুমি চিন্তা করো না। অফিসে যাও।’

এদিকে সকাল এগারোটা হয়ে গেলেও আজ আর আসিফের ঘুম ভাঙ্গছে না৷ আমি গোছল করে রান্নাঘর থেকে একদফা কাজ সেরে বাইরে এসেও দেখি আসিফ সেই আগের মতো ঘুমিয়ে আছে। আমি পর্দা খুলে দিলাম। রোদ এসে সরাসরি আসিফের মাথার উপর পড়লো। আসিফের উপর থেকে কাঁথাও সরিয়ে দিলাম। ডাকলাম,

‘এই ছেলে আর কতো ঘুমাবা? কাজ নাই নাকি?’

আসিফ আমাকে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে নিলো। কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

‘রোজরোজ কাজে যেতে ভালো লাগে বলো? আজ নাহয় তোমার সাথেই থাকি।’

আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বললাম,

‘উঠো উঠো। এতো আহ্লাদী ভালো না। কাজের কাজ কিচ্ছু না৷ আসছেন আজ কাজ ফাকি দিতে’

আসিফ আবার হাত ধরে আমাকে টান দিলো। এবার আর ভারসাম্য ধরে রাখতে না পেরে তার উপর গিয়ে পড়লাম। আসিফের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম। আসিফ বললো,

‘কী? লজ্জা করছে বুঝি বউ?’

‘উহু! ছাড়ো না৷ দরজা খোলা। কী আবোল তাবোল হচ্ছে এসব।’

‘কোন আবোল তাবোল না। আজ কতদিন পর যেনো আমার বউকে দেখছি!’

আমি এবার নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। আসিফের থেকে কাঁথা সরিয়ে নিয়ে জানালার গ্লাস খুলতে খুলতে বললাম,

‘এই দেখো৷ আলোতে বউয়ের মুখ দেখো৷ যাও তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। গরুর কালাভূনা করছেন মা। তাড়াতাড়ি খেতে আসো। এসব ভগিচুগি করা ভালো না।’

আসিফ বিছানায় বসা অবস্থায় এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। আজ যেনো তার দৃষ্টি সরতেই চাইছে না আমার দিকে। আহা কী মায়াভরা চোখ আর গভীর চোখের ভাষা! একটা মিষ্টি মতোন হাসি দিলো সে আমার দিকে চেয়ে। আমি লজ্জায় লাল হয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম। সিঁড়িতে এসেই শুনি ননাস শাশুড়িকে বলছে,

‘মা, বাবা কী বললেন? কী সিদ্ধান্ত নিয়েছো তোমরা?’

শাশুড়ি মা কথার জবাব না দিয়ে বললেন,

‘ফ্ল্যাটটা কোন জায়গায়?’

‘দরগা গেইট’

‘কয় তলায়?’

‘চৌদ্দ তলা বিল্ডিং এর চার তলায়। লাইনের গ্যাস আছে। ১৭৫৬ স্কয়ার ফুট।’

‘গ্যারেজ সহ?’

‘না। শুধু ফ্ল্যাট ই ১৭৫৬ স্কোয়ার ফুট ‘

‘আর গ্যারেজ?’

‘আছে।’

‘কত চাইছে ফ্ল্যাটটা?’

‘বায়ান্ন লাখ টাকা।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তোর বাবার সাথে কথা বলছি।’

ননাস চলে গেলো তার রুমে। আমি মায়ের সাথে সাথে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম,

‘আপনি কি দিয়ে দিবেন মা?’

‘হ্যাঁ রে মা। মেয়েটা চাইছে। এখন কী আর করার বল?’

শাশুড়ি মায়ের কথার পিঠে আর কথা বললাম না৷ তাদের মেয়ে। তাদের যা ইচ্ছা, যেমন ইচ্ছা তাই করুক। আমি আপত্তি তুললে যদি আবার হিতে বিপরীত না হয়ে উঠে সেইটা ভেবে আর কথা বাড়ালাম না।

সপ্তাহ খানেক পর তামান্না নাইওর করতে এলো আমাদের বাসায়৷ এরইমাঝে কয়েকটা ঘটনা ঘটে গেলো৷ ননাসকে শ্বশুর টাকাটা দিয়ে দিলেন। ননাসও সেই টাকাটা তার স্বামীকে তুলে দিলো৷ ননাসের ফ্ল্যাট দেখতে গেলাম আমরা সবাই। দারুণ সুন্দর সুসজ্জিত ফ্ল্যাট। পুরো ফ্লোরে মার্বেল টাইলস বসানো। দেয়ালে ইন্টোরিয়াল ডিজাইন৷ আর বাথরুম গুলোতে বিদেশি ফিটিংস। ঢুকার রাস্তায় মাথার উপরে একটা বিশাল ঝাড়বাতি। কী যে সুন্দর লাগছিলো! ননাসের ফ্ল্যাটটা দেখে সবার মন খুশি হয়ে গেলো৷ কিন্তু আমার আপত্তি আর সন্দেহ জাগলো তখন, যখন দেখলাম ফ্ল্যাটটা ননাসের নামে না বরং ননাসের জামাইর নামে কেনা হলো। শাশুড়িকে এই নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি এড়িয়ে গেলেন। বুঝলাম আমার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে চান না তিনি। আমিও আর আগ বাড়িয়ে কিছু বললাম না। আসিফকে শুধু জানালাম যে ফ্ল্যাটটা কেনা হয়েছে দুলাভাইয়ের নামে। আসিফও কোন আগ্রহ দেখালো না এই বিষয়ে।

এদিকে আমি যতটুকু পারছি নিজ থেকে পড়া কন্টিনিউ করছি। আসিফের শখ আর আমার স্বপ্ন, দুটোই যেনো পূরণ করতে হবে। রাতে খেতে বসে আসিফ সবার সামনে বলছিলো,

‘আগামীকাল থেকে স্যার আসবে বাসায়৷ নুপুরকে পড়াবে।’

শাশুড়ি যেনো আকাশ থেকে পড়লেন৷ ননদ বলল,

‘এখন আবার কীসের পড়াশোনা ভাবির?’

ননাস মুখ কেমন করে বললো,

‘অহ এখন বউকে ডাক্তার বানানোর জন্যও পড়াবি?’

আসিফ মজা করে কথা কাটিয়ে বললো,

‘আরে বললেই তো হয়ে গেলো না৷ দেখি কী হয়৷ পরীক্ষা দিক। আর দুইমাস আছে মাত্র।’

শাশুড়ি মা বুঝলাম আসিফের এই সিদ্ধান্তে সম্মত নন। তিনি বললেন,

‘বাবা এখন আর এসবের কী দরকার বল? বউমা ঘরে আছে, আমাদের দেখছে, আমাদের সামলাচ্ছে। এই ঘর এই সংসার সবই তো তার৷ তার উপর এখন আবার নতুন চাপ কেন নিবে বল? এসব না করলেই কি নয়?’

ননাস মায়ের সাথে যুক্ত হয়ে বললো,

‘আরে আরও কতো দেখবো এসব৷ নতুন ভিমরতি শুরু হলে যা হয় আরকি!’

তাদের কথাবার্তা শুনে টেবিল থেকে উঠে গেলো আসিফ৷ হাত ধূয়ে সোজা রুমে ঢুকে গেলো। আমি টেবিলে বসা রইলাম। শাশুড়ি মা উঠে গেলেন টেবিল থেকে। যেতে যেতে বললেন,

‘এই মেয়ে ঘরে এনে আর কী কী অশান্তি আমার দেখার আছে আমি জানি না। আল্লাহ আমাকে মেরেও মারছেন না কেন। আমি এই দুনিয়ায় আর থাকতে চাই না। আর না।’

[এখন থেকে মিনিমাম ৪ হাজার লাইক আর ১ হাজার কমেন্ট না হলে আগামীকাল থেকে গল্প নিয়মিত আর দিবো না গল্প। যারা আমার নিয়মিত লাইক কমেন্ট করেন, এই লেখাটা আপনাদের জন্য না। আপনাদের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সব সময়৷ এখন থেকে যখন সময় হবে পারলে দিবো আর নাহলে নাই৷ গল্প দিই নিয়মিত। কাল সকাল ৮ টা থেকে পরীক্ষা। এই পুরো মাসেই পরীক্ষা থাকবে। সবকিছু শেষে গল্প দেয়ার ইচ্ছা রাখি নিজের কাছে। কারণ আপনারা আমাকে ভালোবাসেন, আমার গল্পকে ভালোবাসেন৷ আমিও আপনাদের ভালোবাসি। তার পরও চেষ্টার কমতি থাকবে না গল্প নিয়মিত দেয়ার। কিন্তু আপনারা পড়ে কমেন্ট এবং লাইক করতে পারেন না অনেকে। হ্যাঁ আমিও আপনাদের কমেন্টে রিয়েক্ট বা রিপ্লাই দিতে পারি না এর কারণ সময় থাকে না৷ তবে দেখি। সময় করে রিয়েক্ট/রিপ্লাই দেয়ার ইচ্ছাও রাখি। গল্পের রিচ হয় ১০/১৫ হাজার+। মানে গ্রুপের বাইরে থেকে এসেও হাজার হাজার পাঠক গল্পটা পড়ে যান৷ লাইক আসে সর্বোচ্ছ ৩ হাজার! তাও বলে কয়ে আসে এসব! লাইক কমেন্ট করলে গল্প ও গ্রুপ দুটোর ই রিচ হয়৷ আর এজন্যই লাইক কমেন্ট করতে বলি। আমার জন্য না কিন্তু। এ নিয়েও কমেন্টে অনেকে কম কথা বলেন না। সবই দেখি। অনেক কিছু সেক্রিফাইজ করে শুধুমাত্র আপনাদের ভালোবাসার জন্যই নিয়মিত গল্প দেই৷ জানি আপনারাও আমাকে ভালোবাসেন। আজকে থেকে যদি ৪ হাজার লাইক আর ১ হাজার কমেন্ট না হয় তাহলে আমিও অনিয়মিত গল্প দিবো৷ যখন সুবিধা হবে তখন দিবো। ধন্যবাদ।]
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here