#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_৩৯

0
608

#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_৩৯

#মিদহাদ_আহমদ

সপ্তাহের মাথায় ধূমধাম করে তামান্নার বিয়েটা হয়ে গেলো। বিয়ের দিন তামান্নার কালো রঙের শাড়ি পরার জন্য সে কী কান্ড! বিয়েতে মা এসেছিলো। আমার শত না করার পরও মা একটা সোনার আংটি দিয়েছিলো আমার ননদকে। ননাস দেখেই মুখ ভেংচি কেটে বললো,

‘এমন আংটি দিয়ে নাম লাগানোর চেয়ে আংটি না দেয়াটাই ভালো ছিলো। কী এক হিড়িক দেখো লোক দেখানোর!’

এরই মাঝে তামান্নার ফিরাযাত্রাও শেষ হয়ে গেলো। এরপর একদিন ননাস এসে শাশুড়ি মাকে জিজ্ঞেস করলো,

‘মা, এই বাড়িতে আমারও অধিকার আছে। পাওনা আছে। তাইনা?’

‘হ্যাঁ। অবশ্যই আছে। কিন্তু এখন তুই এসব…’

‘না মানে এখন বলার সময় এসেছে তাই বলছি। সবকিছু যেভাবে চলছে তাতে আমার মনে হয় আমাকে আমার ভাগ বুঝিয়ে দিলেই তোমরা পারো।’

‘অহ আচ্ছা৷ তুই তাহলে তোর ভাগ নিতে চাচ্ছিস এখন। তাইতো?’

ননাস কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

‘হুম চাইছি। আমার ভাগ আমাকে দিয়ে দিলেই পারো।’

ননাস তার রুমে চলে যায়৷ আমি রান্নাঘরে ছিলাম। শাশুড়ি রান্নাঘরে এলেন৷ জিজ্ঞেস করলেন কী রান্না করছি। তারপর আবার জিজ্ঞেস করলেন,

‘আসিফ কখন আসবে?’

‘বিকালে আসবে বলেছে মা আজকে।’

‘আচ্ছা আসিফ আসলে আমার রুমে আসতে বলিও তাকে।’

‘কেন মা দরকার কিছু?’

‘হুম’

কথাটা যেনো আলগোছে বলে দিয়ে গেলেন শাশুড়ি মা। দুপুরে খাওয়ার জন্য আসিফ বাসায় আসলো। দেখলাম সে বিজি প্রচন্ড। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতেই আসিফকে বললাম,

‘মা বলেছেন তার রুমে যেতে৷ কী যেনো কথা আছে তোমার সাথে।’

‘আমি কি ভেতরে আসতে পারি?’

‘আরে আসো মা। কী বলবে? বিশেষ কিছু?’

‘না মানে বলার ছিলো যে…’

‘আচ্ছা মা আমি রাতে এসে শুনি? আমাকে এক্ষুণি বের হতে হবে। রাতের ভেতরে একশো কভারের ডেলিভারি৷ সব কয়টায় আমার হাত বসাতে হবে। চার মিনিট করে দিলেও সাত আট ঘন্টা এক টানা কাজ করতে হবে।’

‘আচ্ছা শুনে যা তো…’

‘মা আসছি এখন৷ রাতে সব শুনবো। ঘুমিও না। আমি তাড়াতাড়ি আসবো।’

আসিফ তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো অফিসে। এদিলে তানিয়া এসে তার মায়ের রুমে ঢুকেই মাকে বলতে লাগলো,

‘কী? ছেলেকে বলতে হবে কেন? আমার সম্পত্তি আমাকে বুঝিয়ে দিতে এতো গড়িমসি করা হচ্ছে কেন? নাকি না দেয়ার পায়তারা করা হচ্ছে? কী? যা করার বা বলার সামনাসামনি বলে ফেলবা। আর নাহলে আমি একশন নিতে বাধ্য হবো।’

মেয়ের এমন পরিবর্তন দেখে দিলারা বেগম বেশ অবাক হলেন৷ কী করবেন বুঝতে পারলেন না। ওই শঙ্কাটা ওনার অনেক দিনের ছিলো। কিন্তু এখন যে এই শঙ্কাটা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে আর তা যে এতো তাড়াতাড়ি রূপ নিবে সেইটা তার ধারণায় ছিলো না।

এদিকে তানিয়াকে ডেকে রুমে নিয়ে বদরুল বললো,

‘ফ্ল্যাটটা কি এবারও তাহলে হাতছাড়া হয়ে যাবে তানিয়া? দেখো তানিয়া, আমি আমার জন্য না, আমাদের জন্য করছি। তোমার কারণে আমি আমার বাবা মাকে ছেড়ে এসেছি। তাদের থেকে আলাদা থাকছি। আমি সুখ শান্তি বিত্ত সব ত্যাগ করেছি। আর আমি যা বেতন পাই, তাতে ভালোকরে চলতে পারবো কিন্তু একটা বাসা আজীবনেও হবে না। আর এই বাড়িতে কতদিন? কাল হুট করে যখন দেখবা যে নুপুর তোমাকে সরাসরি এখান থেকে চলে যেতে বলেছে তখন কী করবা? নাকি তখনও এভাবে অভিমান আর আমিত্ত দেখিয়ে বসে থাকবা? এতদিন নাহয় একটা কজ দেখানোর ছিলো যে আমরা এখানে আছি শুধুমাত্র তামান্নার বিয়ের জন্য। কিন্তু এখন? তুমি যে করেই হোক তোমার অংশটা চেয়ে নাও। আর নাহলে আমার সাথেই চলে এসো বের হয়ে। আমি যেভাবে তোমাকে রাখবো সেভাবেই থাকবে। তবুও আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো না তানিয়া। আই লাভ ইউ।’

তানিয়া বললো,

‘তুমি প্লিজ আমাকে কিছুদিন সময় দাও। আমি দেখছি কী করা যায়। আমি মায়ের সাথে কথাও বলেছি। মা বলেছেন যে তিনি দেখছেন বিষয়টা।’

বদরুল ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো। উত্তেজিত হয়ে বললো,

‘দেখছেন দেখছেন বলে আর কত? সেই কবে থেকেই তো আছি এই শান্তনা নিয়ে। আমি যাস্ট ফেডাপ হয়ে গিয়েছি। কী হচ্ছে এসব!’

বদরুল বুঝতে পারলো যে সে একটু বেশি বলে ফেলছে। তারপর আবার সামলিয়ে তানিয়ার গালে ধরে বললো,

‘সরি।’

তানিয়ার চোখে জল চলে এলো। সম্পত্তির জন্য বদরুল তার সাথে এভাবে কথা বলছে!

বদরুল বললো আবার,

‘দেখো তানিয়া, আমি আসলে আমার না, তোমার জন্য ভাবছি। তোমার ভাই এখন বিশাল বড় শিল্পী হয়ে উঠছে৷ নুপুর ধীরেধীরে পড়াশোনা কন্টিনিউ করছে। আর এখন যদি তুমি তোমার নিজের সবকিছু এনশিওর না করতে পারো ইন ফিউচার আল্লাহ না করুক এমন সিচুয়েশান আসলো যে একেবারে জলে ভেসে যাবা তখন?’

তানিয়া খাটে বসলো। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।

রাতে আসিফ বাসায় আসতে না আসতে আসিফের মা আসিফের রুমে এলেন। আমি বিছানায় বসে বসে বায়োলজি পড়ছিলাম। শাশুড়ি মা আসিফকে বিছানায় বসিয়ে বললেন,

‘আসিফ শোন বাবা, তানিয়া তার সম্পত্তির ভাগ চাচ্ছে।’

আসিফ একেবারে নির্বিকার হয়ে বললো,

‘সম্পত্তি আছে যখন ভাগ তো চাইবেই। দিয়ে দাও। সমস্যা কী?’

‘কিন্তু…’

‘কিন্তু টিন্তু না মা। একজন মানুষ তার নিজের হক চাচ্ছে এখানে আমাকে জিজ্ঞেস করার কী বলো? বাবার সম্পত্তি সে তার সন্তানের জন্যই তো করেছে তাইনা? তাহলে এসব দিয়ে দিতে আপত্তি কোথায়? আর আপা যখন চাইছে তখন তাকে দিয়ে দিলেই হয়। এখানে না করলেই বরং সে কষ্ট পাবে।’

‘কিন্তু বাবা আমার তো বদরুলের উপর বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।’

আমি এবার উঠে এলাম। শাশুড়ির সাথে মিলিয়ে বললাম,

‘হ্যাঁ আসিফ৷ মা কিন্তু ঠিক বলেছেন।’

আসিফ একটা হাসি দিলো৷ হেসে বললো,

‘কী যে বলো না তোমরা। দেখো, দুলাভাই ইয়ং মানুষ৷ চাইলেই আরেকটা বিয়ে করতে পারতো। আপুকে ছেড়ে চলে যেতে পারতো। কিন্তু সে তা করেছে? বরং তার ফ্যামিলি ছেড়ে দিয়েছে সে আপুর জন্য। এমন ভুলভাল সন্দেহ করা ঠিক না।’

শাশুড়ি এবার কাশলেন। কেশে বললেন,

‘এজন্যই তো আমার সন্দেহ হচ্ছে আসিফ। দেখ জামাইর ভালো বেতনের চাকরি আছে। ব্যাংকে চাকরি করছে। তার পক্ষে তানিয়াকে চালানো কোন বিষয় ই না। আর ওই লেভেলের চাকরি ওয়ালা মানুষ কি চাইবে তার বউ তার বাপের বাড়ি থেকে সম্পত্তির ভাগ আনুক’

আসিফ এবার তার মায়ের হাতে হাত রাখলো। তারপর মাকে বলল

‘মা মা মা, দুনিয়া আপডেট হয়েছে। আর সে চাইছে হয়তো তার নতুন বিজনেস করবে বা কোথাও ইনভেস্ট করবে এজন্য। আর এগুলা করতে তো কোন বাধা নাই৷ ইভেন কাওকে বাধা দিতেও নাই। সব বিষয় এমন কমপ্লিকেডেট বানালে হয়? সবকিছু সিম্পল ওয়েতে দেখবা। দেখবে সব সাদা সাদা দেখাবে। আমাকে ভাত দাও এখন। আগে ভাত খেয়ে নেই। ক্ষুধা প্রচুর। আর আজ সারারাত বসে গ্রাফিক্স এর কাজ করতে হবে৷ মা আরেকটা গুড নিউজ আছে কিন্তু।’

‘কী বাবা?’

‘চট্টগ্রাম সেনানিবাসের কনভেনশন রুমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পোর্টেট রাখবে একটা। ডাউস সাইজের। সাইজ বলেনি তবে বিশ ফুট বাই সাত ফুট হবে এমন মনে হচ্ছে। আর সম্মানী কত জানো? পুরো দুই লাখ টাকা।’

‘মাশাআল্লাহ’

শাশুড়ি মা আসিফের কপালে একটা চুমু খেলেন।

নিচে রান্নাঘরে রাতের খাবার রেডি করতে করতে আমি শাশুড়ি মাকে বললাম,

‘আমার মনে হচ্ছে না মা তানিয়া আপাকে সবকিছু দিয়ে দেয়া ঠিক হবে৷ আসলে তানিয়া আপা না, সব সমস্যা ওই দুলাভাইকে নিয়ে। তাকে আমার বিশ্বাস করতে মন চাচ্ছে না।’

‘কী আর করার রে মা? আমার ছেলেটাও যে বুঝলো না আমার কথা।’

এদিকে বদরুমের মা বদরুলকে কল করে জানালেন, যে করেই হোক এই মাসের মধ্যেই বিয়ে সেড়ে ফেলতে হবে। আর বিয়েতে মেয়েকে একটা ফ্ল্যাট লিখে দিতে হবে কাবিনে। বদরুল তার মাকে বললো,

‘মা এই চিন্তা করো না তুমি। ফ্ল্যাট তো আমরা কিনতেই পারি। কিন্তু কইয়ের তেল দিয়ে কই ভাজার স্বাদ কি আর নিজের টাকায় ফ্ল্যাট কিনে বউকে কাবিনে দেয়ায় পাবো বলো? টেনশন করো না। আমি এদিকে সব ব্যবস্থা করছি।’

অন্যদিকে তামান্নার ননাস তামান্নার খাট, কেভিনেট, সোফা এসব পরখ করতে করতে এসে বললো,

‘কী মেয়ে? তোমার বাপ ভাই কি লাকড়ি চিনে না? এই সারহীন কাঠ দিয়ে তোমাকে জামাইর ঘরে পাঠিয়ে দিলো? আগামীকাল আমাদের ছোট বোনের বাড়িতে দাওয়াতে যাবা। দেখে নিও আমরা কেমন দিয়েছি আমাদের বোনের সাথে। বাপের তো দেখলাম বাড়ি গাড়ি সব ই আছে। কিন্তু দেয়ার বেলায় এমন করলো কেন? আর শুনো, মাথায় ঘুমটা দিয়ে থাকবা চব্বিশ ঘন্টা। কেউ আসলে পায়ে ধরে সালাম করবা। আর ওইসব আলমারিতে ড্রেস ফ্রেস কেনো? বিয়ে হয়ে গ্রামে এসেছো। এইটা তোমার সিলেট শহর না আর তোমার বাপের আলিশান বাড়ি না। এইটা গ্রাম। গ্রামের লেহাজ মেনে চলতে হবে। এসব ড্রেস এখানে পরা চলবে না।’

এই বলে তামান্নার ননাস তামান্নার আলমারি থেকে ড্রেসগুলা বের করে ওনার মেয়েকে ডেকে বললেন,

‘এই এদিকে আয়। তোর মামির ড্রেসগুলা তুই নিয়ে নে। এখানে এগুলা পরার সময় ওর নাই।’

গুণে গুণে তামান্নার চৌত্রিশটা ড্রেস তামান্নার ননাস তার মেয়ের হাতে তুলে দিলেন।

(পড়ে লাইক কমেন্ট করে যাবেন। এই পর্বে মিনিমাম ৩ হাজার লাইক আর ১ হাজার কমেন্ট চাই। লাইক কমেন্ট না করলে গল্পের রিচ হয় না। আর গল্পের রিচ না হলে আমার গল্পও পাঠক পর্যন্ত পৌঁছাবে না। তাই আশাকরি সবাই লাইক দিয়ে যাবেন। মন্তব্য করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here