#কাননবালা!পর্বঃ১

0
827

#কাননবালা!পর্বঃ১
#আয়েশা_সিদ্দিকা

সকাল নয়টা। নীতু বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে আছে।ঘুমটা ভাঙলেও আলস্যটা কাটেনি!তবে আজ নীতুর অত তাড়াও নেই ঘুম থেকে উঠার।একেতো মান্থলি পিরিয়ড চলছে তাই নামাজ পড়তে হয়নি।তার উপর আজ ভাবীও তাড়া দেয়নি সকালের নাস্তা তৈরির জন্য! মায়ের বারণে আজ টিউশনিতেও যায়নি নীতু।বলতে গেলে আজ নীতুর ছুটির দিন।ছুটির দিনগুলো সবার জন্য আনন্দের হয় না।যেমন নীতুর।মাসের মধ্যে চার পাঁচদিন এমন ছুটি পায় নীতু।এই সব ছুটির দিনে নীতুকে কেউ বিরক্ত করে না।রান্নাঘরে যেতে হয় না।কাপড়চোপড় ধুতে হয় না।টিউশনিতে যেতে হয় না।এত এত শান্তি, তবুও নীতুর এই ছুটি অসহ্য লাগে।পাত্র পক্ষ দেখতে এলেই এই ছুটি পায়।আজ আবার পাত্র পক্ষ দেখতে আসছে নীতুকে।রঙ চঙ মেখে আবার তাদের সামনে সঙ সেজে বসতে হবে।অসহ্য লাগে নীতুর!কোথাও পালিয়ে যেতে মনে চায়!

কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে নীতু চোখের পাতা আরো খিচিয়ে বন্ধ করে রাখে। কতক্ষণ পর চোখ না মেলেই বুঝতে পারে মায়ের আগমণ হয়েছে রুমে।প্রত্যেক মায়েরই আলাদা ঘ্রাণ থাকে,থাকে কিছু ভিন্ন পরিভাষা! অন্যের মায়ের ঘামের গন্ধ থেকে কখনো সুবাস আসে না,যেমনটা নিজের মায়ের শরীর থেকে আসে!
“এই নীতু এখনো উঠছিস না কেন বলতো? এক বাটি হলুদ রেখে গেলাম।চটজলদি উঠে হলুদ মেখে গোসল সেড়ে আয়! একে তো চেহারার ওই অবস্থা, তারউপর তোর মাসিক হওয়ার আর সময় পেল না।এখন তো চোখ মুখ বসে আরো বিতচ্ছিরি লাগবে।আমার হয়েছে যত্ত জ্বালা!
নীতু চোখ বন্ধ রেখেই বুঝতে পারে মায়ের চোখ মুখ বিরক্তিতে কুঁচকে আছে,কন্ঠেও বিরক্তির ঝাঁজ! নীতু গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে!মা কতক্ষণ বকবক করে চলে যায় তবুও নীতু বিছানা ছেড়ে উঠে না।

আধো ঘুমে কেবল চোখটা জরিয়ে এসেছিল নীতুর তখনই মাথায় কারো মমতাপূর্ণ হাতের ছোঁয়া পায়!নীতুর মুখে অজান্তেই মৃদু হাসি এসে দোল খায়!তবুও নড়াচড়া না করে চুপটি করে শুয়ে থাকে, একটু স্নেহ পাবার লোভে!
নীতুর শিয়রে যে বসে আছে সেও বুঝতে পারে নীতু ঘুমের ভান করে আছে।সেও না জানার ভান করে মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
বন্ধ চোখের পাতায় জল এসে জমে নীতুর।বাবার পড়ে এতটা নিঃস্বার্থ আদর, স্নেহ কেবল এই একটা মানুষই করে ওকে।ওর ত্রুটিপূর্ণ অবয়ব নিয়ে যাদের কোন মাথা ব্যথা নেই!এই দুজন মানুষ কেবল ভালোবাসতে জানে!
অনেকক্ষণ পর নীতু কথা বলে উঠে,” তুমি কখন আসলে দাদাভাই?”
“যখন তুই ঘুমের ভান ধরে মটকা মেরে ছিলি!”
“কথার কি ছিড়ি!বড় আপা ঠিকই বলে,তুমি দিনদিন খারাপ হয়ে যাচ্ছো।”
জায়েদ হাসে।নিষ্পাপ হাসি!নীতুর আহ্লাদি কথা ভীষণ ভালো লাগে জায়েদের।জায়েদ সম্পর্কে নীতুর বড় দুলাভাই। কিন্তু নীতুর কাছে জায়েদ দাদা ভাই।নিজের ভাইকে ভাইয়া ডাকে।নিখিল নাম নীতুর বড় ভাইয়ের।তার সাথে নীতু ভূত ভবিষ্যতে কথা বলে।কিন্তু জায়েদের সাথে নীতুর সম্পর্ক আলাদা।রক্তের কোন সম্পর্ক ছাড়াই এই মানুষটা কি ভাবে ওর দাদাভাই হয়ে গেলো কে জানে?

নীতু ফের বলে,”কাজ ফেলে এখানে কি?জানো না শশুড় বাড়ি মধুর হাড়ি,নিত্য গেলে ঝাঁটার বাড়ি!”

“শাশুড়ীর ডাকে না আসলে তবে জামাই অবাধ্যতার কাঁড়ি! ” জায়েদও মজা করে বলে।
নীতু এবার উঠে বসে। জায়েদের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার জন্য তোমার রোজ রোজ কাজ ফেলে কেন আসতে হবে দাদাভাই?এত ঝামেলা কেন মাথা পেতে নেও?কই নিজের ভাই ত ঠিকই ঝামেলা এড়াবার জন্য অফিসে চলে গেছে।”

“ধুর! কি আবোল তাবোল বলছিস!তুই আমার কাছে কখনো ঝামেলা নয়!”
নীতু এই কথায় মৃদু হাসে।নীতু জানে জায়েদ ঠিক বলছে।নীতুর বাবা প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় পড়ে আছে চারবছর।সংসারের সব দায়িত্ব ভাইয়ের ঘারে।তাই ভাইয়ের বউকে বেশিই তোয়াক্কা করে চলতে হয়।নীতুরা পাঁচভাই বোন।প্রথমে বড় বোন মিতু।তারপর ভাই নিখিল।এরপর নীতু,ইতু,সেতু তিন বোন।নিখিল একটা বেসরকারি ফার্মে কাজ করে।বাজারের টাকা দিয়েই সে খালাস।নীতুর টিউশনির টাকায় সেতুর পড়াশোনা চলে।আর বাবার কিছু জমানো টাকা আছে তাই ফিক্সড করে রাখা।তা দিয়ে যে অর্থ আসে তা বাবার চিকিৎসার পিছনে খরচ হয়।এরপরও ভাইয়ের বউ সুরভীর অভিযোগের কোন শেষ নেই!আর ইতুর বিয়ে হয়েছে আজ পাঁচ বছর।ইতু নীতুর ছোট।ইতুর একটা ছেলেও আছে দুই বছরের।আর বড় আপার এক ছেলে এক মেয়ে। ছোট বোন সেতুর বয়স এবার সতেরো ডিঙিয়ে আঠারোতে পড়েছে।
এই পরিবারে নীতু সবার ঘারের বোঝা।নীতুর বয়স সাতাশ বছর।তার মানে আঠাশ ছুঁই ছুঁই! নীতুর সাস্থ্য ভালো।একটু বেশিই ভালো।জিরো ফিগারের যুগে যাকে বলে মোটা আর কি।তার উপর গায়ের রঙ শ্যামলার থেকেও একটু বেশিই গারো।পুরোপুরি কালো না হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারে শ্যমলা রঙ মানেই কালো আর মেয়ের বয়স বিশ মানে সে বুড়ি! আধারেরও যে সৌন্দর্য আছে,আছে নিজস্ব ভাষা তা কেউ বুঝতে চায়না।নীতুর চেহারা মায়াবতী না হলেও নীতুর নিজস্ব একটা গুন আছে।নীতু কারো সাথে কিছুক্ষণ কথা বললে সেই মানুষটা নীতুর মায়ায় পড়ে যায়!নীতু এমন একটা চমৎকার মেয়ে!

***************
অভিক প্রচন্ড মেজাজ খারাপ নিয়ে বসে আছে।আর তার মা সামনে বসে ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কাঁদছে।অভিক মায়ের কান্নায় যারপরনাই বিরক্ত।অভিক চোখের জল সহ্য করতে পারে না।তাশরীফ অভিক পুরো নাম।বয়স তেত্রিশ বছর।একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে সেকেন্ড ম্যানেজার হিসেবে আছে।যাকে সহজ ভাষায় বলে এসএম। অভিক ঢাকার মিরপুরে একটা চার রুমের ভাড়া ফ্লাটে একাই থাকে।আজ তার মা খুলনা থেকে সরাসরি তার বাসায় এসে উঠেছে।আর আসার পর থেকেই অনবরত কেঁদেই চলছে। অভিক এবার একটু জোরেই ধমকে উঠলো, “উফফ মা! এত কান্নার কি আছে? আমি বুঝলাম না।”

অভির মা ছেলের ধমকে এবার আরো জোরে কেঁদে উঠলেন।কান্নাস্বরে বলেই উঠলেন, “তোর বাপ মরে গিয়ে বেঁচে গেছে।আর আমাকে রেখে গেছে তোদের মত দুইটা ধলা বলদের কাছে।তোরা শুধু রুপ চিনিস।সাদা চামড়া তোদের কাছে প্রাধান্য পায়!তোর বড় ভাইটাকে কত করে বললাম ওই মেয়েকে বিয়ে করিস না।ও শুধু দেখতেই চাকচিক ভিতরটা অহংকারে ভরা। না শুনলো না আমার কথা!আজ ছেলের বউ বলে, তোমার মা আমাদের প্রাইভেসি নষ্ট করছে।আর ছেলে বলে, মা কিছুদিন অভিকের কাছ থেকে ঘুরে আসো।যাকে বলে ভদ্র ভাষায় বের করে দেওয়া। এই দিন দেখতে তোদের দুই ধলা বলদকে আমি পেটে ধরেছিলাম?বল? এখন কথা বলোস না কেন?তোর বাপ তোগো মত সুন্দর ছিলনা?সে আমার শ্যামরঙ দেখে বিয়ে করেনি?”

অভিক মায়ের কথায় দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। মা রাগলেই তাকে আর অনিক মানে বড়োকে ধলা বলদ বলে গালি দেয়।এ গালি অভিক সহ্য করতে পারে না।তারপরও মা দিবে।
অভিক মাকে জরিয়ে ধরে বলে”মা ঠান্ডা হও।বড়ো কি করবে বলতে পারো? ওর বউর তো আর একটা বর নেই যে তার কাছে পাঠিয়ে দিবে!তোমার তো আর একটা ছেলে আছে, যে কখনো তোমাকে ফেলে দিবে না।তা ও জানে।আর দেখো কদিন পর ঠিকই বড়ো তোমাকে নিতে আসবে ভাবিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে। আমরা দুই ভাই তো তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি! ”
অভিকের মা ছেলের কথায় কিছুটা শান্ত হলেন।পরক্ষণেই বললেন,”অনিক আমার পা ধরে বসে থাকলেও আমি ওর বউর বাসায় যাবো না।রুপসী আনছে।এখন রুপ ধুয়ে পানি খা!দুদিন পর বুঝবি!”

“আহা! মা এ তোমার কেমন কথা! সব রুপসী মেয়েই কি খারাপ?এ তোমার কেমন বিবেচনা! ”

“আমি বলেছি সবাই খারাপ?কিন্তু মাকাল ফল তো দেখলেই চিনা যায়!”

“হয়েছে এখন শান্ত হও।তোমার দুই ছেলেও সুন্দর তারা কি খারাপ মানুষ?এসব বাদ দাও আর এখন রেষ্ট নিয়ে তোমার হাতের কিছু মজাদার আইটেম রান্না করো।আজ কব্জি ডুবিয়ে খাবো।”!

অভিকের মা ছেলের দিকে এবার তাকালেন।ছেলেটা সত্যিই ভীষণ শুকিয়ে গেছে।কিসব খাবার খায় কে জানে?তার এই ছেলে দুটো ছাড়া তার আর কে আছে?ছেলে দুটো পুরোই বাবার মত হয়েছে।ওদের বাবাও ছিল রাজপুত্রের মত।ছেলেরাও তার রাজপুত্র! হুট করে অনিকের জন্য খারাপ লাগছে।ওর বউটা তো দশটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে।ছেলেটা কি না খেয়েই তবে অফিসে গেছে? মায়ের মন বরই আজব!

**********
শরীরে কাচি হলুদ ঘষে,মুখে রঙ চঙ মেখে কোনই কাজ হলো না নীতুর।ছেলে পক্ষ পছন্দ করেনি তাকে।নীতুকে দেখে তারা এমন ভাবে নাক উচকালো যেন নীতু কোন উচ্ছিষ্ট! সন্ধ্যা হয়ে গেছে।নীতু বারান্দায় বসে আছে।আকাশে এক ঝাঁক পাখিরা নীড়ে ফিরবার তাড়ায় আছে।আচ্ছা! নীতুর নীড় কোথায়?সেটা কতদূর!বিয়েই কি একমাত্র সমাধান জীবনে!
মা কতক্ষণ চিল্লাপাল্লা করে চলে গেলো।তাতে নীতুর মন খারাপ হয়নি।মায়ই বা কি করবে?বাবা অসুস্থ। ছোট বোনটাও যে বড় হয়েছে তাকেও বিয়ে দিতে হবে।ভাইয়ের ঘাড়ে আর কতকাল? নীতু তার এই সাতাশ বছরের দীর্ঘ জীবনে কম অপমান হয়নি।সবচেয়ে বড় অপমানিত সেদিন হয়েছিল নীতু যেদিন তাকে দেখতে এসে পাত্রপক্ষ তারই ছোট বোন ইতুকে পছন্দ করে ফেলে আর মাও সংসার থেকে একজন মানুষ কমাতে ইতুকে সেই পাত্রের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়।নীতু এখনও ইতুর বর এই বাসায় এলে সহজ ভাবে চলতে পারে না।বড় অস্বস্তি হয়!এ অস্বস্তিতে যে পড়েনি সে কখনই বুঝবে না এটা কতটা কষ্টের!নীতু কত জায়গায় চাকরির খোঁজ করলো কিন্তু একটা জবও পাচ্ছে না।নীতুর মাঝে মাঝে মনে হয় সবার কত ভাবে মৃত্যু হয়।তার কেন হয় না।কত মানুষের আপনজন হারিয়ে যায় এক্সিডেন্টে তার কেন হয় না।তার মৃত্যুতে কি কেউ কাঁদবে? যাওয়ার সময় দাদাভাই বারবার বলে গেছে,”নীতু একদম কাঁদবিনা।দেখবি একদিন তোর জন্য রাজপুত্র আসবে!”
নীতু কোন রাজপুত্র চায়না।এই পরিবারের বোঝা কমাতে একটা সাধারণ ছেলে হলেই হবে।যে ওর হাত ধরে বাবা মায়ের দায় মুক্ত করবে!

সেতু এসে বারান্দায় দাঁড়ালো।নীতুর দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো, “নীতু আপি কতক্ষণ থেকে তোমার ফোন বাজছে। তুমি শুনতে পাওনি?”

সেতু ফোন দিয়ে চলে যায়!নীতু কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে ওঠে, “শুনেছি মন থেকে কাউকে ডাকলেই পাওয়া যায়,তবে তোমায় যে এত ডাকলাম তুমি কেন শুনতে পেলে না নীতু?”

ফোনটা করেছে তাজবীদ।যার সাথে এই মুঠোফোনেই পরিচয়। দু’বছর হতে চললো তাজের সাথে নীতুর বন্ধুত্বের সম্পর্কের।
” আমি তো শুনতে পেলাম না কারো ডাক।”ক্ষীণস্বরে বলে নীতু।
তাজ মুহূর্তেই বুঝে যায় নীতুর মন খারাপ। তাই কন্ঠে একরাশ ভরসা নিয়ে বলে,”আজ কি নীতুর মনটা বেশিই খারাপ?”
“না মন খারাপ তো নয়!”
“তোমার মন বেজায় খারাপ।একদম দমবন্ধ কর খারাপ। আমি তা জানি।”
“আপনি কি করে জানলেন?”

“কিছুক্ষণ পূর্বে দুটো পাখি আকাশে উড়ছে আর বলছে, আজ নীতুর মন খারাপ! আজ নীতুর মন খারাপ!”

নীতুর মন খারাপ ভাবটা নিমিষেই অনেকটা কমে গেলো।তাজ নামের ছেলেটা হয়তো কোন জাদু জানে!
নীতু বলে,”তাজ চৌধুরী কি পাখিদের ভাষাও বুঝে নাকি?”

তাজ ঠোঁট কামড়ে হাসে।এরপর বলে,”তোমার শহরে যে পাখিদের বাস তাদের ভাষা বুঝতে পারি!পাখিগুলো বার্তাবাহক হয়ে আমার শহরে এসে জানিয়ে যায়,”আজ আমার নীতুর মন খারাপ! ”

নীতু চমকে যায়।তাজ কোন বললো,”আমার নীতু!” তবে কি এই সম্পর্কটা বন্ধুতের বাহিরে চলে গেছে।কই কখনো তো নীতু তাজকে প্রলোভন দেখায়নি বরংচ সবসময় একটা দূরত্ব মেইনটেইন করেছে।
নীতুর সাড়া শব্দ না পেয়ে তাজই বলে ওঠে, “আজ কি আবার পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছিল নীতু?”

“তা তো ক’দিন পর পরই আসে।এ আর এমন কি?”

তাজ ফোঁস করে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।নীতুর জন্য তার কষ্ট হয়!মেয়েটা ভীষণ ভালো আর সহজ সরল।তাজ অনুভব করে তার বুকের কোণে সুক্ষ্ম এক ব্যথার দোলাচল।তবে কি মেয়েটা ওকে জয় করে নিয়েছে?মুহুর্তেই তাজের মুখ জুড়ে সুখের ছটা খেলে ওঠে।

তাজ একটু তেজি কন্ঠেই বলে,”শোন নীতু, নিজেকে ভালোবাসতে শেখো।নিজেকে ভালোবাসতে পারাটা অনেক জরুরী! কে কি ভাবলো তোমাকে নিয়ে ডাজ’ন্ট মেটার!তুমি কি ভাবছো সেটাই মুখ্য!”

নীতুর তাজের কথা গুলো খুব ভালো লাগলো।তারপরও অনেকটা সঙ্কোচ নিয়ে বলে,”যখন কেউ আপনাকে ভালোবাসবে না, তখন আপনাআপনিই আপনি নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে যাবেন।তাছাড়া আপনি তো আমাকে দেখেন নি।তাই এমন কথা বলছেন।দেখলে অবশ্য আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হতো।আমাকে ভালোবাসা যায় না খুব বেশি হলে করুণা করা যায়! ”

তাজ হাসতে হাসতে বলেই,”কে বলে আমি তোমাকে দেখিনি?একটা মানুষের সাথে আমি দুবছর ধরে কথা বলছি তাকে দেখবো না তাতো হয় না।”

নীতু আৎকে উঠে বলে,”সে কি আপনি আমায় কবে, কখন দেখেছেন?”
নীতুর কন্ঠে ভয় দেখে তাজের হাসি পেলো খুব। মেয়েটা ভীষণ ভালো!” তুমি খুব সরল মনের মেয়ে নীতু।আমাকে তুমি তোমার বাসার ঠিকানাটা বলেছিলে একবার মনে আছে?বন্ধুদের সাথে একবছর আগে খুলনা গিয়েছিলাম তখন তোমার বাসার সামনে গিয়েছি।আমার ভাগ্য ভালো ছিল,তুমি টিউশনির জন্য বের হয়েছিলে তখনই দেখলাম।”

“চিনলেন কি করে?”

“তোমাকে আমি তখন কল দিয়েছিলাম।আমার পাশ থেকে যেতে যেতেই তুমি রিসিভ করলে।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বললে।তখনই চিনে ফেললাম!”

“আমাকে চিনেও এড়িয়ে গেলেন কেন?” নীতুর কন্ঠে রাগ!

“রাগ করো না নীতু।আমি একেতো বন্ধুদের সাথে গিয়েছিলাম তারউপর যদি হুট করে তোমার সামনে যেতাম তখন ব্যপারটা কেমন হতো না তাই যায় নি। আর একটা কথা,তুমি আমার বন্ধু। বন্ধুত্বরে সম্পর্ক সহজে এড়ানো যায় না।দীর্ঘ গভীর প্রেমের পর যখন দুজন মানুষের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়,অনেকবছর পর দেখা হলে তাড়া অচেনার মত বিহেভ করে।অথচ কতটা চেনা ছিল তাদের সম্পর্কের বাঁক!কিন্তু যোগাযোগবিহীন দুজন বন্ধুর যখন দীর্ঘ দিন পরে দেখা হয় তখন তারা সেই পুরানো সময়ের মত উচ্ছল,প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে!তাই তোমাকে এড়ানোর প্রশ্নেই আসে না।”

নীতুর খুবই ভালো লাগলো তাজের কথা।ছেলেটা ভীষণ সুন্দর কথা বলতে জানে!
নীতু বলে ওঠে, “তারপর?”
“তোমাকে একটা খবর দিতে কল করেছিলাম নীতু,আমার ব্যাংকের জবটা হয়ে গেছে।চাকরিটা আমার হয়ে গেছে,তুমি শুনেছো নীতু!”

নীতু তাজের কথায় হেসে দিয়ে বললো,”আলহামদুলিল্লাহ!এত বড় সুখবর আপনি আগে বললেন না কেন? ”
“আমার সকল সাফল্যে তুমিই এভাবেই দোয়া করো নীতু!”
“ইনশাআল্লাহ! ”
“তোমার শহরে আসলে তুমি কি আমাকে গ্রহণ করবে নীতু?”

নীতু চমকে উঠল।তাজ কখনো এভাবে কথা বলে না।আজ এভাবে বলছে কেন?কথার টোনে কেমন অন্য সুর!
তবে কি নীতু যা ভাবছে তাই হতে যাচ্ছে! নীতুর কেমন ভয় লাগতে শুরু করল।নীতুর নার্ভাসনেস ফোনের অপর পাশে থেকেও তাজ বুঝে ফেলল।নীতুর বেহাল অবস্থা দেখে তাজ উচ্চস্বরে হেসে উঠলো!

চলবে,
ইরাবতীর চুপকথা গল্পটি ইনশাআল্লাহ দিবো।এই প্লটটি হুট করে মাথায় এলো তাই লিখে ফেললাম।ইনশাআল্লাহ দুটো গল্পই দেয়ার চেষ্টা করবো।আর প্লিজ আপনারা উৎসাহ দিবেন,ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। না হলে আমি বুঝবো কিভাবে কেমন হচ্ছে লেখা! আর বলুন তো গল্পে নায়ক কে🧐🧐🧐? তাজ নাকি অভিক!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here