দাম্পত্য সুখ(১ম পর্ব)

0
525

#দাম্পত্য সুখ(১ম পর্ব)
#লাকি

ব্যথা নিয়েও লম্বা পায়ে বন্যাকে নিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছি। মেইনরোড এ না গেলে,রিক্সা পাওয়া যায় না। গলাটা একটু খুশখুশ করছে। চুল থেকে টুপ্ করে একফোঁটা পানিও ঝরলো। পায়ের ব্যথায় আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল। এলার্ম দেয়া ছিল,উঠি তো নাই ই, উল্টো ঘন ঘন এলার্মের শব্দে বেচারা শাহীনের ঘুমের দফারফা।

বন্যা একটা রিক্সাকে ডেকে দাড় করিয়েছে।হাঁটতে
আমার দেরি হচ্ছে বলে,আজ সে স্পষ্টতই বেশ বিরক্ত। যখন স্কুলের গেট দেখা গেল, আমি আর আজ রিক্সা থেকে নামিনি। বাসা থেকে স্কুল খুব বেশি দূর নয়। কিন্তু আমার ক্লাশ টেনে পড়া মেয়ে
কে,একা একা ছাড়তে ভয় হয়। চারদিকে কি সব হচ্ছে আজকাল। শাহীন আমাকে প্রায়ই এজন্য বকা দেয়,”এতো ভয় পাও কেন নদী? বাচ্চাদের আত্মনির্তরশীল হতে দাও।একা একা গেলে কিচ্ছু
হবে না”। একদিন দিয়েও দেখেছি,কিন্তু কেন যেন
মনটা অস্থির থাকে। শুধু মনে হয়, স্কুলের ভেতর মেয়েটা ঢুকেছে তো ? পরে মনে হয়েছে, এতো চিন্তা না করে,নিজেই দিয়ে যাওয়া ভালো।

বাসায় ঢুকে চটপট ময়ান দেয়া ময়দার কাই থেকে, গোটা পনেরো পরোটা বানিয়ে নেই।পরোটা
তাওয়া তে ভাজা হলে ই, ডিমগুলি পোচ করে ফেলি। চায়ের পানি বসিয়ে কাপ গুলো রেডী করি। তাড়াহুড়ো করে ডাইনিং টেবিলে এসব রেখে, ফ্রিজে রাখা কালকের কলিজা ভুনা বের করে, মাইক্রোওয়েভ এ চালান করি। সবজি ভাজি খুঁজে পাই না। ওহ্, তাড়াতাড়ির সময় যেন আরো
বেশি ঝামেলা দেখা দেয়। সকালে সবকিছু এক
হাতে করতে পারি না বলে, রাতে ভাজিটা করে রাখি। ভাজি গরম হতে না হতেই, শাহীন, আমার শাশুড়ি,রাহি ও রাফি উপস্থিত। মেয়ে টা এতো সকালে চা ছাড়া আর কিছুই খেতে চায় না। এখন টিফিন ঠিক মতো খেলেই হলো।

ঝটপট সবকিছু টেবিলের ঠিক মধ্যখানে রেখে,চা আনতে ছুটি। দুধ,চিনি মগে মেশানো ই ছিল,ঢেলে নেড়ে কাপে কাপে ঢালি। আমার শাশুড়ির টা শুধু
চিনি ছাড়া আর রাহির চা তে আধ চা-চামচ চিনি
বেশি। এসে দেখি শাহীন বলছে,”কলিজা ভুনা আর আছে নদী”? আমি বলি,”না,যা ছিল এখানে ই দিয়ে দিয়েছি। কেন বলোতো”? বললো,”এতো
মজা হয়েছে, ভাবছিলাম তোমাকে বলবো লাঞ্চের জন্য কিছু টা দিতে”। আমি অবাক হয়ে বলি,”তুমি
এখন আবার কলিজা ভুনা খেয়েছো না কি? এটা
তো বাচ্চাদের কে দিয়েছি। আবার লাঞ্চের জন্য, নিয়ে যাবার আবদার করছো !!! তোমার যে হাই কোলেষ্টরেল, সেটা কি তোমার মনে থাকে না, না কি”?

শাহীন কিছু বলার আগেই আমার শাশুড়ি বলছেন,”সব কিছুতেই এতো এতো বারণ করো না তো বৌমা। পুরুষ মানুষ রুজি রোজগার করে কেন? পেট পুরে যদি খেতে পারলো না, ইচ্ছে খুশি মুখে দিতে পারলো না…. বলি এ রুজির মানে টা কি? শুধু খেটে খেটে বৌ,বাচ্চার মুখে ই তুলে দেবে শুধু”? আমি শাহীনের দিকে ঠান্ডা চোখে তাকাই। সে কি সুন্দর চুপচাপ বসে খাচ্ছে। রাফি এবার বলে,”শোনো দাদি তুমি এসব বুঝবে না। মা ঠিকই বলেছে, এসব রোগে কলিজা,মগজ খাওয়া
ঠিক নয়”। আর পায় কে? আমার শাশুড়ি খুব ভালো অস্ত্র সকালে ই পেয়ে গেছেন। ডাক ছেড়ে চোখের পানি ছাড়া কেঁদে উঠলেন,”ও শাহীন রে।
তোর এতো পোড়া কপাল কেন রে? বৌ খেতে বারণ করতে করতে, এখন ছেলেও করছে রে। আমি মরে গেলে তোকে একা একা এরা যে কি করবে রে”?

রাহি হেসে হেসে কি বলে উনাকে রাগাতে যাচ্ছে,
আমি বাগড়া দেই,”কি ব্যাপার? তোদের আজ অনিক স্যারের ক্লাশ নেই? দুদিন পর এইচএসসি পরীক্ষা দিবি, এখনো মা বলে বলে, ঠেলে ঠেলে পাঠাতে হবে? কবে তোরা আর বড় হবি,বলতো”?ওরা ঝট্ করে উঠে ই ব্যাগ হাতে নেয়। আমি বলি,
“ছোটবেলা থেকে তোদের আমি কি শিখালাম?
ডিম পোচ খেলি,কুলি টা অন্তত করে যা”। দুজনে কুলি করে শাহীনের কাছে থেকে রিক্সাভাড়া নিল।রাহি “আসি মামস্” বলে আদর করে গেল। এই ছেলে টা ঘর হতে বের হবার সময় ও ঢুকার সময়
আমাকে আদর করে যাবেই। এতে ওর কোনো ভুল হয় না।

আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে, রাফি ও বন্যা। রাহি আমার বড় ননদের ছেলে। ছোট বেলা থেকেই ও আমাকে “মামস্” বলে ডাকে। ওর মা বলতো,”এটা আবার কোন ধরনের ডাক বাবা, মামী বলে ডাকো”। রাহি তখন বলতো,”মামী আমার কঠিন লাগে। আমি মামস্ ই ডাকবো”। ওর যখন চার বছর বয়স, তখন ওর মা বাচ্চা জন্ম দেয়ার সময় মারা যায়। পরের বছর ওর বাবা বিয়ে করলে,এক বিকেলে ও আমাকে ফোন দিয়ে বলে,”মামস্ আমাকে তুমি তোমার কাছে নিয়ে যাবে প্লিজ”? আমি মোটেও দুষ্টুমি করবো না। তুমি যা বলবে তাই শুনবো। প্লিজ মামস্ আমাকে নিয়ে যাও এসে”। আমি হতভম্ব, কি বলবো? মৃদু স্বরে বলি,”তোমার বাবা কি আসতে
দিবে”?

পাঁচ বছরের ছোট বাচ্চা কেঁদে কেঁদে তখন বলছে,”না দিলে আমি হেঁটে হেঁটে চলে আসবো”। আমি তখন বলি,”তুমি মোটেও এ কাজ করবে না। একা একা বের ই হবে না। তোমার মামা আসুক, তোমার বাবার সাথে কথা বলে, তোমাকে
না হয় নিয়ে আসবে”। ফোন রেখে ই আমি আমার
শাশুড়ি কে গিয়ে, সবকিছু খুলে বলি। উনি বলেন,
“সৎ মা কোনো কষ্ট দিচ্ছে মনে হয়, না হলে অতটুক্ বাচ্চা কি আর এসব বলে? শাহীন এসে কি বলে দেখো”। শাহীন শুনে বলে,”ওর বাবা কি ভাববে বলো? ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বলো, নিজের বাসায় ই থাকা ভালো”। আমি বলি,”না একটা বাচ্চা এভাবে বলছে, আমি শান্তি পাচ্ছি না। তুমি ওর বাবাকে এখানে আসতে বলো”।

ওর বাবা এসে সব কথা শুনে, কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে বললো,”আমি তো কিছু জানি না।ভাবী এর মানে নিশ্চয়ই বাসায় ওর শারীরিক বা
মানসিক কোনো কষ্ট হচ্ছে। ভয়ে হয়তো আমায় কিছু বলতে চাইছে না। আপনি যদি রাজি থাকেন,
তবে ওকে এখানে দিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। ওর পড়াশোনার, খাবারের আনুষঙ্গিক খরচ যা লাগে, মাসের প্রথমদিকে আমি ভাইয়াকে দিয়ে
যাবো”। আমি বলি,”আমাদের এতো টাও খারাপ অবস্থা না যে, আপনি ওর খাবারের টাকা দিবেন। আচ্ছা পড়াশোনার খরচ দিবেন, সে ঠিক আছে।
না হয় ছেলে বড় হলে, আপনাকে ও অপরাধী করে রাখবে”। সেই পাঁচ বছরের ছোট রাহি আজ সতেরো বছরের কিশোর। রাফি ওর চেয়ে এক মাসের বড়। দুজন একই কলেজে,একই ক্লাশে পড়ছে। মিলও ভীষণ, হরিহর আত্মা যেন।

কিছুক্ষণের জন্য ফ্ল্যাট টা একটু শান্ত হয়েছে। ছেলে দুটো যাবার সাথে সাথে শাহীন ও চলে গেছে অফিসে। আমার শাশুড়ি পাশের ফ্ল্যাটের খালার সাথে গল্প করতে গেছেন। এসময় আমি চুপ করে কিছুক্ষণ ব্যালকনিতে বসে থাকি। ভাবি,
কি যেন এক অর্থহীন জীবন যাপন করছি। একে
বারেই মিনিংলেস হয়তো। কতো ভালো লেখতাম,
কতদিন কলম হাতে নেই না। সকালের নাস্তার ঝামেলা শেষ হলে, দুপুরে কি রান্না হবে,এর পর বিকেলে নাস্তা কি হবে, এরপর রাতে কে কি …… খাবে, এক অবোধ্য বৃত্তে যেন আমার জীবন টা ঘুরপাক খাচ্ছে। কলিং বেল শুনে দৌড়ে গেলাম। মনে মনে ভাবছি,আজ বড় তাড়াতাড়ি যে, আমার শাশুড়ি চলে এলেন। খুলে দেখি সুন্দর একজন মহিলা দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। গজদন্ত বের করে, হাসিমুখে বল্লেন
“কি রে চিনতে পারিস্ নি? আমি কাঁকন”। কি !!! বলে গলা জড়িয়ে ধরেছি। ভেতরে এনে ডাইনিং
টেবিলে ই বসে গল্প শুরু করে দিলাম।

আমাকে নিয়ে আমার বন্ধুরা মনক্ষুন্ন। কোনো কিছুতেই যাই না,কারো খোঁজ খবর রাখি না,শক্ত
পাষান,স্বার্থপর হয়ে একা একা থাকি…….. অনেক অভিযোগ। কাঁকন এর এক ননদ আবার আমার খালাতো বোন। ওর কাছে থেকে ঠিকানা নিয়ে ও
এসেছে, আগামী শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েক জন বন্ধু মিলে,ওর বাসায় গেট টুগেদার করবে। আমি যেন তাতে অবশ্যই উপস্থিত থাকি। আমি যে ব্লকে থাকি,ঐ ব্লকেই, আমার বাসার ৪/৫ টা বাসা পরে ওরা বাসা নিয়েছে। জোর করে চা খাইয়ে দিলাম ও তাকে ‌কথা দিলাম, এবার গেট টুগেদারে যাবো আমি ইনশাল্লাহ।ছুটা বুয়া এসেছে, আবার দরজা খুলে দিলাম।

রাতে সবাই খেতে বসেছি। শাহীন তার অফিসের কোন কর্মকর্তার নির্বূদ্ধিতার গল্প করছে আর বাচ্চারা হেসে গড়িয়ে পড়ছে। আমি এক ফাঁকে বলি,”আমি শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এক গেট টুগেদারে কাঁকনের বাসায় যাব”।
শাহীন বলছে,”আহা রে !!! আমি তো আবার ওইদিন রিয়াদের সাথে মাছ ধরতে যাবো। কখন ফিরবো ঠিক নেই। আগে বলবে না”। বন্যা
বলছে,”তোমাকে তো বলেছিলাম মা, শনিবার বিকেলে পিয়ার বার্থ ডে পার্টি তে থাকবো”। আমি
রাফি ও রাহির দিকে তাকিয়ে বলি,” কি রে তোরা
চুপ করে আছিস যে !!! তোদেরও শনিবারে কাজ
আছে বল”। আমি খুব দরকার নাহলে গলা তুলি না। সুতরাং, সবাই একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।

প্রায় ২৪ বছরে বৌ হয়ে এ সংসারে এসেছিলাম,
১৮ বছর ধরে সংসারের ঘানি টানছি, একদিন বিকেলে ছুটি চাইতেই এ অবস্থা !!! বোকার মতো
এতো দিন ভাবিনি, সবাই কে ঠিক রাখতে রাখতে কোন চোরাবালিতে নিজেকে ধীরে ধীরে ডুবিয়ে ফেলছি। এই জায়গায় স্থায়ী আবাসন গড়তে না চাইলে, এক্ষুনি গা ঝাড়া দিতে হবে। শাহীনের দিকে তাকিয়ে বলি,”তুমি তোমার মাছ
ধরার প্রোগ্ৰাম শুক্রবারে আনবে না আদৌ যাবে না….. সেটা তুমি জানো। আমি শনিবারে যাচ্ছি,কে
বাসায় থাকবে মা কে দেখতে, সেটা তোমরাই ঠিক করো। তবে, শনিবার সকালে আমাকে পাবে না, এটা নিশ্চিত”। শাহীন এবার চেঁচিয়ে উঠলো,”তুমি
আগে না বলে হঠাৎ করে বললে, কি করে হবে?
“উঠলো বাই তো কটক যাই”… তোমাকে এই টায়
ধরেছে”। আমি শান্ত স্বরে বলি,”বাই টা বড্ড দেরী তে উঠলো। আরেকটু আগে উঠলে, তোমাদের এতো চোখে লাগতো না। কিন্তু, আমার শেষ কথা,
শনিবারে আমি যাচ্ছি ই”।

বেডরুমে এসে শুতে যাবো,দেখি শাহীন ল্যাপটপে
কাজ করছে। আমি বলি,”ভীষণ টায়ার্ড আমি, দয়া করে লাইট টা অফ করো”। দেখি খুব বাধ্য
মানুষের মতো সাথে সাথে লাইট অফ করে শুয়ে পড়েছে। ২ মিনিট পর জড়িয়ে ধরে বলছে,”সত্যি
করে বলতো নদী, মেজাজ আজ এতো সপ্তমে চড়ে আছে কেন? মা কিছু বলেছে”? আমি হেসে বলি,”মেজাজ সপ্তমে থাকবে কেন? স্বাভাবিক একটা জিনিস শুধু বলেছি। বুয়াদেরও তো মাঝে মাঝে ছুটির দরকার হয় শাহীন”। এবার আমাকে সে ভোলাচ্ছে,”ঠিক আছে এই শনিবার টা একটু
কনসিডার করো,এর পরের বার না হয় আমি থাকবো”। আমি বলি,”না, আগেই তো বললাম এই শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আমাকে পাবে না। মা তোমার শাহীন, সবসময় আমার ঘাড়ে তার সব দ্বায়িত্ব দিয়ে রেখো না”। এবার ঠাস ঠাস করে দরজা খুলে ওয়াশরুমে ঢুকছে।

পরদিন অফিস থেকে এসে বলছে,”লারা আপু ফোন দিয়ে দাওয়াত দিয়েছে কালকে ডিনারের।রেডি থেকো”। লারা ওদের চাচাতো বোন। উনি শাহীনের চেয়ে কমপক্ষে ১০ বছরের বড়। তার মানে প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি বয়স। কিন্তু, কঠোর ডায়েট ও এক্সারসাইজ এর ফলে, ভদ্রমহিলা নিজেকে অনেক বছর ধরে,৩০ এর কোঠায় আটকে রেখেছেন। ইংল্যান্ড এ থাকেন, প্রতিবছর
নিয়ম মাফিক দেশে এসে ২সপ্তাহ বেড়িয়ে যান। ভদ্রমহিলা চিকন বলেই হয়তো, সবাইকে কিভাবে চিকন হতে হবে বা থাকা যায়….সে উপদেশ দিতে থাকেন। আর, তার সামনে গেলে শাহীনের মতো অন্যান্য কাজিন রা যে বেশ চঞ্চল হয়ে যায়, সেটা আমি খুব বুঝতে পারি।

গেলাম ডিনারে, গিয়ে দেখি আমার ছোট ননদও
স্বামী নিয়ে উপস্থিত। বাচ্চা হবার পর,ও একটু মুটিয়ে গেছে। লারা আপু তো আমার ননদ কে দেখে,কথা বলার বেশ ভালো প্রসঙ্গ পেয়ে গেছেন।
প্রথমে “তুমি এতো মুটিয়ে গেছো কেন? চর্বি ঝরাচ্ছো না কেন? এটা শরীরের জন্য কতো টা ক্ষতিকর তা জানো”? এখন সমাধানের পথটাও
বাতলে দিচ্ছেন। আমার ননদ একটু মুখকাটা
স্বভাবের। তাছাড়া, এতো লোকের সামনে এসব
বলছেন,রাগও উঠেছে মনে হয়। হেসে হেসে বলল
“আপনি আমার ওজনের ব্যপারে এতো কনসার্ন কেন? আপনি কি আমাকে কোলে নিবেন”? মুখ টা ভদ্রমহিলার দেখার মতন হয়েছিল।

কিছুক্ষণ পর আমার ননদ আমাকে দেখাচ্ছে,
“দেখো ভাবী ভাইয়া লারা আপুর সাথে কথা বলছে না তো, যেন মাখনের মতো গলে গলে পড়ছে। ওর সাথে আরো কয়েকটা ইডিয়ট যোগ দিয়েছে”। আমি মৃদু হেসে বলি,”ভক্তের দল !!! কি আর করা”। ও ক্ষেপে গেছে,” তোমরা বাপু এতো ঠান্ডা থাকো কি করে জানি না। আমি হলে,রবিকে
ঠিক ই মাথা ফাটিয়ে দিতাম”। আমি আর কথা
বাড়াই না।

বিদায় নেবার সময় শাহীনের সামনে আমায় লারা
বলছেন,”গতবার তোমার চেহারা দেখলাম কতো গ্লো করছে। এবার তো তা মনে হচ্ছে না। স্কীনের
যত্ন নিও”। আমি কিছু বলার আগেই শাহীন উনাকে বলছে,”স্কীন হলো তোমার। মাছি বসলেও পিছলে পড়ে যাবে”। উনি উনার নায়িকার মতো চিকন মুখ টি দুলিয়ে বলছেন,”কি যে বলো না !!!
দেখো না, দেশে এসে শরীরে বেশকিছু ফ্যাট জমে গেছে”। আমার বিয়ের পর দেখেছি,হাঁটু সমান ওর চুল। সেই চুল কাঁধ বরাবর কেটে রেখেছেন,তাই আবারো চুলে হিল্লোল তুলে শাহীন কে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কি যেন বুঝাচ্ছেন। আমি কান দিয়ে না শুনে, চোখ দিয়ে ভদ্রমহিলার চোখ, মুখের নানা ভঙ্গি দেখছি।

গাড়িতে উঠে সামনে বসেছি, কারণ ড্রাইভার অসুস্থ বোধ করায়, চলে গেছে। সেজন্য, গাড়ি শাহীন চালাচ্ছে। আমাকে গম্ভীর দেখে বললো,
“কি ব্যাপার? মাথা ধরেছে”? অনেক কষ্ট করেও চুপ করে থাকতে পারলাম না, তাই হেসে বলি,
“আমার না বুড়ো বুড়ি দের ন্যাকামো দেখলে, খুব এলার্জি হয় শাহীন। টিনএজারদের যা মানায়, সে টা কিন্তু বুড়ো বুড়িদের মানায় না। কিন্তু, আফসোস !!! এটা অনেকেই বুঝতে পারে না।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here