দাম্পত্য সুখ(১১ তম পর্ব)

0
183

#দাম্পত্য সুখ(১১ তম পর্ব)
#লাকি রশীদ

বেডরুমে ঢুকে দেখি, শাহীন চেয়ারে বসে আছে। আমি ব্রাশ করে যখন আসি,সে তখনো স্বস্থানে ই
বিরাজমান। বেডকভার তুলে রাখছি, মৃদু স্বরে বলল,”কি হয়েছে? আজ আবার আমি কোন দোষে দুষ্ট হলাম? আমি তো অনেক ভেবে, কারণ বের করতে পারছি না। কথা বলো না কেন নদী”?

আমি ঠান্ডা স্বরে বলি,”তুমি আবার কখনো কিছু করো না কি? তুমি হলে ভালো মানুষ, আমি ই
খারাপ। যতো নষ্টের গোড়া আমি”। কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। শাহীন জায়গায় বসেই চেঁচিয়ে উঠলো,”আমি সারাদিন এতো হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পরও বসে আছি, তোমার সাথে কথা বলে জানবো কি হয়েছে। আমার এসবের কোনো দাম ই নেই তাহলে তোমার কাছে”? তারপরও, কিছু বলছি না দেখে গজগজ করছে,”তুমি কি উঠে বলবে আমাকে ঠিক কি দোষ করলাম আজ? বলেই না হয়, ঘুমিয়ে পড়ো”। এরপর, কি আর শুয়ে থাকা যায়? উঠে বসে বললাম,”তুমি
মায়ের কথা শুনে, আমার বাচ্চাদের কাউকে বিশেষ করে রাহি কে যদি আমার কাছে থেকে সরানোর চেষ্টা করো, তোমার কখনো ভালো হবে না শাহীন”।

চমকানো দেখেই বুঝতে পারছি, ধারণা টা নিরেট
সত্য। ৫ সেকেন্ড থম্ ধরে বললো,”তোমাকে এই সব কে জানালো”? বললাম,”আমার বাচ্চারা ই
বলেছে”। এবার চেয়ার ছেড়ে বিছানায় এসে পাশে বসে বলছে,”তোমার কি মনে হয়, মা আমাকে বললেও, আরেক মায়ের কাছে থেকে আমি বাচ্চা সরিয়ে নিবো”? আমি কঠিন স্বরে বলি,”নিতেও তো পারো। তোমার মা যা বলেন, সেটাই তো তোমার কাছে অবশ্য করণীয়। হোক না সেটা অন্যায়, কিন্তু তোমার কি সে বোধ আছে নাকি”?

এবার সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”সে বোধ আগে না
থাকলেও এখন কি জন্ম নিতে পারে না”? আমি
হেসে বলি,”আর লোভ দেখিও না শাহীন। তোমার
যেদিন আমাকে দরকার, সেদিন তোমার মুখ দিয়ে
এসব বের হয়। দরকার শেষ হলে,”নদী আবার কে? ও যাক্ গোল্লায়”। নিজের সাথে আর কতো
দ্বিচারিতা করবে শাহীন”? এবার সে বলছে,”আজ
যখন রাফি বলল,”বাবা আমরা লাষ্ট কবে বাইরে গেছি, তুমি মনে করতে পারবে না নিশ্চিত” আমার মনে হয়েছে, অনেক অন্যায় করছি তোমার সাথে।
আর,আজি কি না, রাতে এসে এসব শুনতে হচ্ছে। তোমার বাচ্চাদের নিয়ে, যেভাবে খুশি সেভাবে থাকো নদী, আমি কোনো ইন্টারফেয়ার করবো না এতে। এটা সম্পুর্ন ই তোমার জগত নদী। এখানে কারো কিছু বলার নেই, ঠিক আছে”? মাথা নেড়ে হেসে বললাম,”মনে থাকে যেন শাহীন। আমাকে কিন্তু তুমি কথা দিয়েছো”।

সকালে তাড়াহুড়ো করে সবার নাস্তা শেষে রেডি
হয়ে দেখি,রাহির বাবা গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
আমি, রাফি ও রাহি তিনজন ই শুধু চা ও এক
পিস ব্রেড খেয়েছি। যাবার আগে দুজন কেই বলি,
“দাদু, বাবা,ফুপি সবাইকে সালাম করো”। রাহি
সালাম করতেই দেখি, আমার শাশুড়ি কাঁদছেন ওকে ধরে। মনে মনে ভাবছি,শত হোক মৃত মেয়ের
বাচ্চা তো। কিন্তু,রাহির এ কান্নায় যেন কোনো হিল্ দোল্ নেই। মুখটা অনেক কঠিন করে আছে। বন্যা আজ স্কুলে গেছে। দীপা ফিসফিস করে বলল,
“ভাইয়া অফিসে চলে গেলে, আজ শুধু আমি ও চমৎকার মনের মানুষ আমার মা বাসায় থাকবো।আই হোপ,যুদ্ধের দামামা খুব বেশি বাজবে না”।

বুয়া কে আবার সবকিছু ২য় বারের মতো বূঝিয়ে পার্স আনতে রুমে গেছি, দেখি শাহীন এসে ৫০০/টাকার ১টা নোট আমাকে দিচ্ছে। বললাম,”কি
ব্যাপার ? না চাইতেই আজ মুঠো ভরে দিচ্ছ যে”?
সে বলে,” প্রায় ৪/সাড়ে ৪ ঘন্টা ওখানে থাকবে,
খিদে পেলে কিছু কিনে খেও”। সকৃতজ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে, বাইরে পা বাড়ালাম। ছেলেদের জায়গা মতো নামিয়ে দিয়ে,বেশ খানিকটা দূরে একটি বট গাছের নিচে ড্রাইভার গাড়ি রাখল। অসম্ভব গরম, এতোক্ষণ বসে বসে করবোটা কি? হঠাৎ দেখি আমাদের পাশে আরেক টা সাদা কার এসে থামল। দেখি ওটা থেকে কাঁকন নামছে। আমি ডোর খুলে ওকে ডাক দিতেই, পাশে এসে বললো,
“স্যরি আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না”। আমি বুঝে গেছি, সেদিনের গেট টুগেদারে অনুপস্থিত থাকার কারণে ই এ রাগ। হাত ধরে গাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলাম,ও সেদিনের সব ঘটনা খুলে বলি।ও
জানালো, ওর ছেলে টাও এবার পরীক্ষা দিচ্ছে।

কাঁকন বিষন্ন হয়ে বলে,”আমাদের সেদিন কেন এতো দুঃখ লেগেছিল জানিস? আমি, সাবরিনা ও
মিমি ঠিক করে রেখেছিলাম, তোকে বুঝাবো যে,
তুই আবার লিখতে শুরু কর প্লিজ। কি ভালো লিখতি রে তুই। এখন আরো কতো সুবিধা হয়েছে, অনলাইনে লেখার সাথে সাথে বুঝা যায় পাঠকের
রিয়েকশন কেমন। লেখালেখির তেমনি একটি
গ্ৰুপে তোকে এড করতে চাচ্ছিলাম আমরা। তুই তো ফেসবুকেও এ্যাকটিভ না। এখন থেকে হবি……এই কথা গুলো বলে ঐ গ্ৰুপে যোগ দেয়াতে চেয়েছিলাম”।

আমি হেসে বলি,”বিয়ের পরের এক বছর তাও
লিখেছি। এর পরের ১৭ বছর এক লাইনও লিখি
নি। এখন হুট করে লিখলে ভালো হবে….. এটা কি নাটক, সিনেমা না কি”? কাঁকন বলছে,”ভালো না হলে তো না ই। তোকে তো কেউ শূলিতে চড়াবে
না। চেষ্টা করে দেখতে অসুবিধা কি”? আমি বলি,
“ওকে, কিন্তু নিয়ম কি? কমপক্ষে কত শব্দের হতে হবে”। ও গাড়িতে বসেই গ্ৰুপে এড করানোর
জন্য রিকুয়েষ্ট পাঠালো। বলল,”দেখবি কিছূক্ষন
পর প্রশ্ন করে, তারপর এড করবে ইনশাআল্লাহ”।

এবার কাঁকন বলে,”মাহফুজ কে তোর মনে আছে? ঐ যে সেও লিখতো, আমি ও মিমি তাকে ক্ষেপাতাম,”আমাদের বন্ধু নদীর মতো, এতো ভালো লেখা কিন্তু তোমার না, মাহফুজ”।সে শুধু
মিটিমিটি হাসতো। জানিস? এখন এই মাহফুজ শুধু লেখালেখি করে, কতো উপরে উঠে গেছে”?
আমি হেসে বলি,”শোন কাঁকন, লেখালেখি তে
চর্চা বলে একটি জিনিস আছে। কতটুকু কি হবে,
আদৌও এডমিনরা এপ্রুভ করবে কি না জানি না।
তবে ক্ষতির তো কিছু নেই, তোরা বন্ধুরা এতো করে, ভালবেসে বলছিস্,লিখবো ইনশাআল্লাহ”।
কাঁকন এবার বলছে,”শুধু বন্ধু না কি? আমি তো তোর ভাবীও। মুরুব্বিদের কথা না শুনলে,গুণাহ
হয় নদী”। আমার দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই এর
বৌ ও। দুজনের সম্মিলিত হাসির তোড়ে, মনে হয় আশেপাশে পায়রা থাকলে উড়ে পালাতো।

কাঁকন এবার বলছে,”চল্ তোকে নাস্তা করিয়ে আনি। না হয় তুই “ননদ কে যত্ন করিনি” এ অপবাদ দিবি। অনেক দিন পর মনে হলো,পুরনো
দিনে ফিরে গেছি। দুজনে ঠান্ডা মিল্কশেক খেয়ে খেয়ে অনেক গল্প করলাম। কে কার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো,কোন ছেলে সামনে এসে
তোতলানো শুরু করতো…পুরনো গল্প করতে করতে ই সময় গুলো যেন হু হু করে কেটে গেল। ইতিমধ্যে আমার ফোনে নোটিফিকেশন ও হাজির
যে, আমি এখন ওই গ্ৰুপের মেম্বার হয়ে গেছি।

ছেলেরা হল থেকে বের হবার সময় হয়ে গেছে,
কাঁকন হাতটা জড়িয়ে ধরে বলল,”শোন্ নদী, এই
পৃথিবীতে কেউ কাউকে কোনো কিছু মুখে তুলে খাইয়ে দেয়না।২৪ ঘন্টার মধ্যে নিজের জন্য ১ ঘন্টা বের করা অসম্ভব….. এটা আমি অন্তত বিশ্বাস করতে পারিনা। তুই খুব তাড়াতাড়ি গল্পটা
লিখে পোস্ট কর্। পরশু দিন কি আসবি এখানে”?
আমি বলি,”আমার ননদ থাকলে আসতে পারবো,
নয়তো পারবোনা”। ফোন নং ওকে দিলাম, ওরটা
নিলাম। ইচ্ছে তো করছে,যাবোই না ওকে ছেড়ে।
কিন্তু, সেটা তো আর হবার নয়।

অনেক ভিড় ঠেলে,২ ছেলে কে নিয়ে গাড়ি তখন
রাস্তায়, তখন মনে হলো, যাক বাবা হাঁফ ছেড়ে বাঁচা গেল। আগে ওরা ছোট থাকতে পরীক্ষার পর বারবার জিজ্ঞেস করতাম,”পরীক্ষা কেমন হয়েছে”? ক্লাশ সেভেনে উঠার পর একদিন দুজন
খুব সাহস সঞ্চয় করে এসে বললো,”তূমি পরীক্ষা শেষে কেমন হয়েছে জিজ্ঞেস করো না। আমাদের ভালো লাগে না”। সেই থেকে আর জিজ্ঞেস করিনি। রাফি একেবারেই খিদে সহ্য করতে পারে না। আমাকে বলছে,”তুমি আবার গিয়ে গোসল করো,এসব বলো না। পরে গোসল করবো, আগে ভাত খাবো”। ফোন দিয়ে দীপাকে বলি, বুয়াকে বলো প্লিজ টেবিল লাগাতে। খেয়ে ছেলেরা ঘুমোতে চলে গেছে। বন্যা ওর বান্ধবীর বাসায় আর আমি ও দীপা ওর বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প করছি।

দীপা বলছে,”ভাবী অফিস থেকে ৩ দিনের ছুটি নিয়েছিলাম। আজকে যা শেষ হবে। কালকে থেকে মেয়ের জন্য, পাগল পাগল লাগছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত যদি রবি কোনো যোগাযোগ না করে, তবে আমি বাসায় চলে যাবো। মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারছি না গো। রবি কেমন মানুষ দেখো। এরা না কি এক কালে প্রেম করেছিল !!! আস্ত হারামির ঝাড়বংশ”। আমি বলি,”সেও মনে হয়,এটাই ভাবছে”। এবার দীপা বলল,”এবার কি জন্য ওর সাথে ঝগড়া হয়েছে জানো? 2B ফ্ল্যাটের শিখা ভাবীকে দেখলে ই গলে গলে পড়ে যায়। ছেলে মেয়ে হয়নি বলে উনার ফিগার খুব ই সুন্দর। আমি তাই পরদিন ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে 3A ফ্ল্যাটের অপু ভাইয়ের সাথে, গলে গলে গল্প করেছি। ব্যস,আর যায় কোথায়? বাসায় এসে যা
নয় তা বলছে”।

সন্ধ্যার পর শাহীন সহ সবাই চা খাচ্ছি। কলিং বেল বাজতেই খুলে দেখি, রবি ভাই মেয়ে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। লিউনা আমাকে দেখে ই, কোলে আসার জন্য লাফাচ্ছে। আমি কোলে নিয়ে দীপার কাছে যেতেই, ‘মা’ বলেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
রবি ভাইকে চা দেই। উনি খাচ্ছেন আর এদিকে আমার শাশুড়ি জেরা করছেন,”কি নিয়ে ঝগড়া হয়েছে তোমাদের”? রবি ভাই স্বল্পভাষী মানুষ, কিছু না বলে চা ই খাচ্ছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে, শাহীন অফিসের প্রসঙ্গ টেনে আনে। আমার শাশুড়ি ও শাহীন একবার উঠে ভেতরে গেলে, রবি
স্ত্রীকে হাতজোড় করে বলছেন,”ভুল হয়ে গেছে দীপা,চলো বাসায় চলো”। কিছুক্ষণ পর দেখি, কি সুন্দর ট্রলি ব্যাগ বের করে রবির হাতে দিচ্ছে,
আর মেয়ে কোলে নিয়ে ১০০০ ওয়াটের আলো
মুখে মেখে,সিড়ির দিকে যাচ্ছে।

রাতে কাগজ কলম নিয়ে, শাহীন কে বলি,”তুমি ঘুমাও, আমি একটু পরে ঘুমাবো”। বেডরুমের লাইট অফ বলে,ডাইনিং টেবিলে বসি। ভাবছি, কি
নিয়ে লিখবো? হঠাৎ মনে হলো,যার জীবনে এতো
গল্পের ছড়াছড়ি,তার আবার প্লটের অভাব !!! নিত্যদিনের ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা কে বিস্তার
করে লিখছি। আমি ভেবেছিলাম এতো দিন কলম
ধরিনি, শব্দগুলো অভিমান করে করে, হয়তো আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। কিন্তু,বাস্তব
চিত্র হলো, কি লিখবো ভাবতেই শব্দরা বাধ্য প্রেমিকের মতো হাতের মুঠোয় টোকা দিচ্ছে। ঢিন্তা
করছিলাম,১২০০/ শব্দ হবে কি না !!! এখন দেখি আরো বেশি ই হয়েছে।

এখন এতো গুলো শব্দ টাইপ করবো কিভাবে? আমি তো এগুলো কখনো করিনি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, রাত আড়াইটার উপর বাজে। শুয়ে পড়ি, দিনে দেখা যাবে। পরদিন দুপুরে কাঁকন ফোনে তাড়া দিচ্ছে,”কি রে পোস্ট করেছিস”? আমি বলি,”পোষ্টের আগে তো টাইপ করতে হবে রে ভাই। এখনো ধরিই নি”। কাঁকনের মুখ খুব খারাপ, একবার ছুটলে বন্ধ হবার নাম গন্ধ নেই।
বকতে বকতে এমনও বলছে,”১৮ বছর তো তুই
জামাইয়ের সাথে লেপ্টে সাপ্টে থাকলি। দুই রাত
না থাকলে কি হয়”? বললাম,যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিবো। কিন্তু, এতো এতো কাজের মধ্যে সময় কই? ঐদিন ঘুমাইনি,ঘূমের সময়টা টাইপিং
এ দিয়েছি। কিন্তু,তাতে ৫ ভাগের ১ ভাগও শেষ হয়নি। পরবর্তী দুইদিন কাঁকনের ফোন ই ধরিনি।বকা খেতে খেতে জান যাবে। চারদিনের সন্ধ্যায়
টাইপ শেষ হলো। আরেক বার চেক করে, আল্লাহ
আল্লাহ করে পোস্ট করি। কাঁকন কে মেসেজ দিয়ে জানাই,”এইমাত্র পোস্ট করেছি,এপ্রুভ হলে
জানাবো”।

রাতে কতো বার যে চেক করেছি, মনে হচ্ছে লেখা
টা হয়তো এপ্রুভ হবার মতো মানসম্পন্ন হয়নি।
কোথায় যেন হৃদয়ের একটা তারে,কষ্ট জমা হচ্ছে। ফজরের নামাজ পড়ে, আশাহীন ভাবে এমনি দেখছি, দেখি এপ্রুভ পাবার নোটিফিকেশন
এসেছে দেড় ঘণ্টা আগে। এই দেড় ঘণ্টায় “নদী
আহমেদ” এর গল্পের লাইক হাজার ছাড়িয়েছে। মনে হচ্ছে, চিৎকার করে কাউকে এই খুশির খবর দেই। কিন্তু, সারা বাসার সব সদস্য রা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আর সজাগ থাকলেই বা কি? বাচ্চারা
ছাড়া স্বামী, শাশুড়ি খুব খুশি হবে….. এমন দুরাশা
না করাই ভালো। তারচেয়ে, এখন কাউকে না জানানো টাই ভালো।

পরদিন ছেলেদের ফিজিক্স পরীক্ষা। সাধারণত আমার সারাদিন টেনশনে কাটে, এরা ঠিকভাবে
পরীক্ষা দিল কি না…. এই ভেবে। কিন্তু, আশ্চর্য্য জনক জিনিস হলো, আজকে মাথায় ঘুরছে নেক্সট গল্পের প্লট কি দেবো। দুপুরের আগে আগেই কাঁকন ও মিমি ফোন করে বলেছে, “এক
বার ফোনে চোখ বুলিয়ে দেখ্, 3’2 K Like. নেক্সট
টা লেখা আজ থেকে শুরু কর”।

কিন্তু, সবসময় ভাগ্য যে সুপ্রসন্ন হবে….. এমন তো
না। আজ রাতে কাগজ কলম নিয়ে,ডাইনিং টেবিলে যাবার জন্য হাঁটা দিবো, শাহীন ভ্রু কুঁচকে বলে,”কি ব্যাপার বলো তো? কি লিখো ওখানে গিয়ে”? বললাম,”গল্প লিখি”। প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলল,”এ ভূত আবার নতুন করে কোথা থেকে সওয়ার হলো”? আমি বলি,”কেন? আমি লিখলে তোমার কি কোনো অসুবিধে আছে”? সেকেন্ডের মধ্যেই সে তার পুরনো রুপে ফিরে গেছে। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,”হ্যা আছে। আমি এখন ঘুমাবো, তোমাকে বিছানায় চাই আমি। রাখো এসব,লাইট
অফ করে আসো”।

দিনের পথে দিন যাচ্ছে, ছেলেদের পরীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে। দুটো দিলেই শেষ, তারপর রইলো ব্যাবহারিক পরীক্ষা। এতো দিনের মধ্যে,মাত্র ২টা
লেখাই দিয়েছি। তাও, অনেক কষ্ট করে। কিন্তু,
আড়াই হাজার লাইক দেখলে, এসব কষ্ট বাস্পের মতো উড়ে যায়। শাহীন বুঝতে চায় লেখি কি না,বা কখন লিখি। আমি এ প্রসঙ্গে কিছুই বলি না। মনে মনে বলি,”সারাটা জীবন স্বার্থপরের মতো কাটালে, তোমার ভবিষ্যৎ কি হবে, সেটা শুধু সৃষ্টিকর্তা ই জানেন”।

শেষ হলো ছেলেদের ব্যাবহারিক পরীক্ষাও। আমি
যেন অনেক দিন ধরে পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম।
এবার মনে হয়, তীরে যাবার সময় হলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here