দাম্পত্য সুখ (১০ম পর্ব)

0
171

#দাম্পত্য সুখ (১০ম পর্ব)
#লাকি রশীদ

শাহীনকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে আমরা ৩ জন বাবার বাসায় যাবার পথে আছি। আমি মাঝে ও
আমার ২ ছেলে দুদিকে বসে আছে। হঠাৎ রাফি বলছে,”আচ্ছা মা সত্যি করে বলো তো, তোমার রাগ উঠে না”? আমি হেসে বলি,”উঠবে না কেন? আমি কি মানুষ না”? কি মনে করে রাহি বললো,
“আমার মাঝে মাঝে মনে হয়,কূটনীতি শেখা যায়
এমন কোনো স্কুল থাকলে তোমাকে ভর্তি করে দিতাম। তাহলে, তুমি নানুর মতো শিখতে পারতে,
কিভাবে মামাকে ফুসুর ফুসুর করে কানমন্ত্র দিয়ে,
অন্যের বিরুদ্ধে বিগড়ানো যায়”। ফাজিল রাফি
এবার হেসে বলে,”আমি নিশ্চিত স্কুলে কেন কূটনীতি তে পিএইচডি করেও, দাদুর সাথে কেউ
পারবে না। কি টাইমিং !!! দেখেছিস ভদ্রমহিলার
রাহি? বাবার সাথে ফিসফিস করছে আর আমরা কেউ এলেই সাথে সাথে চুপ হয়ে যাচ্ছেন। আর
বাবাও কান পেতে মায়ের অমৃত বাণী শুনছে”।

রাহি হঠাৎ বলে,”ইদানিং যেগুলো মামার কানে লাগাচ্ছেন, আমি নিশ্চিত সেগুলো আমার বিরুদ্ধে। পরীক্ষা শেষে আমাকে বাসা থেকে সরানো ই হবে উনার মূল টার্গেট। প্রতিহিংসা পরায়ণ যাকে বলে আর কি”। আমি আঁতকে উঠে বলি,”কেন তোরা কিছু শুনেছিস্ না কি”? রাহি কষ্টের হাসি হেসে বলে,”কোন দুনিয়ায় তোমার বাস মামস? কিছু জিনিস তো দেখেই বুঝা যায়। দেখো না, তিনি নিজে আমাকে কথা শোনালেন,
বুঝলাম তখন তিনি রেগে ছিলেন। কিন্তু, তার মন
ভালো যদি হতো, তবে রাগ পড়লে তিনি আমাকে কাছে ডাকতেন। তোমার সাপোর্টার কাউকেই তিনি সহ্য করতে পারেন না। পারলে তিনি রাফি ও
বন্যা কেও তোমার কাছে থেকে সরিয়ে নিতেন”।

আমিও সেদিন মা ছেলের ফিসফিসিয়ে কথা বলা
দেখেছি। কিন্তু, এতো টা গভীরেও যাইনি। আমার এতোটুকুন বাচ্চারা যা বুঝে, আমার তাও মাথায় আসে না। আমি কি !!! এসব ভাবনায় দুদিকে দুই ছেলের হাত যে শক্ত করে ধরে আছি বুঝিনি। রাফি হেসে বলল,”এজন্যই তোমাকে আমরা কিছু
বলতে চাচ্ছিলাম না। শুধু শুধু প্যানিক করো না তো মা। আমরা ৩ জন সবসময় ই তোমার কাছে থাকবো। কেউ ই আমাদের আলাদা করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। এই রাহি তুই মা কে কিছু বলিস্
না কেন”?

রাহি কি বলবে, দেখি চোখ দিয়ে মুক্তোদানার
মতো টুপটুপ করে তার অশ্রু ঝরছে তখন। ট্যিসু
দিয়ে ঝট্ করে মোছার চেষ্টাও তার প্রচন্ড রকম ব্যর্থ। শক্ত মনের অধিকারী রাফি তখন অনবরত
তাকে বকছে,”এই শুরু হয়ে গেছে ফ্যাচফ্যাচ করে
কান্না। মেয়েরাও ফেল তোর কাছে, চোখ ভালো মতো মোছ, নানাবাসা এসে গেছে। না হয় ফুপির মতো নানুকে বোঝানোও তোর জন্য খুব কষ্টকর হবে”। আমার মনটাই অসাড় হয়ে গেছে। শক্ত ছেলে এখন আবার বুঝাচ্ছে আমাকে,”আহ্ মা,
তোমাকে এতো ভাবতে হবে না। ভাবনার ভার টা
আমাদের উপর ই ছেড়ে দাও তো। হাসো না কেন মা, না হয় তোমাকে দেখে নানার মন খারাপ হয়ে যাবে”।

বাসার সামনে এসে গাড়ি দাঁড়াতে ই নেমে পড়ি। ভিতরে ঢুকে দেখি বাবা,মা ও জোহা টেবিলে বসে
নাস্তা করছে। জোহা মনে হয় এইমাত্র উঠেছে, আমাদের দেখে তার অবিন্যস্ত ঝাকড়া চুল দুলিয়ে
চিৎকার করে উঠলো। বাবা দুই হাত বাড়িয়ে,রাফি
ও রাহি কে জড়িয়ে ধরে বলছে,”আমার ভাঙ্গাঘরে
আজ ডাবল চাঁদের আলো। ভালো আছিস তো
ভাইয়ারা”? রাহি আগে একবার আমাকে বলেছে,
“নানা ভাই ও নানু আমাকে কতটা ভালবাসে তাদের বুকের ভেতর আমাকে নিলেই আমি ঠিক বুঝতে পারি মামস”। মা বাবাকে বলছে,”হয়েছে,
একা একা তুমি ই শুধু আদর করবে না কি? আমাকেও একটু সুযোগ দাও”।এখন শুরু হয়েছে
মায়ের আফসোস পর্ব। “তোরা একটা ফোন দিয়ে আমাকে জানাবি না যে তোরা আসছিস। কি খাবি
ভাইয়ারা”?

রাফি বলল,”ডাব খাবো,আর কিছু না। এইমাত্র নাস্তা করে এসেছি”। মা ঝামেলা করবে, এজন্য বললাম,”১০ মিনিটের মধ্যে ই আমরা চলে যাবো
মা। শুধু তোমাদের সালাম করে, ওরা দোয়া নিতে এসেছে”। আনুর মা ডাব এনে দিতেই, সবাই খেলাম। বাবা বলল,”তোর চাচা চাচি শুনলে মন খারাপ করবে মা। ৫ মিনিট লাগবে, ওরা না হয় চট করে দেখা করে আসুক”। জোহা ওদের নিয়ে
গেল।

আমার মনটা আজ বড় অশান্ত। বারবার কেন যেন মনে হচ্ছে, আমার অগোচরে আমার শান্তি ও স্বস্তি চুরি করতে, কেউ যেন উঠে পড়ে লেগেছে। বাবাকে হঠাৎ বলে উঠি,”আচ্ছা বাবা, আমার মতো আনফিট মানুষ পৃথিবীতে জন্ম নেয় কেন,
বলতে পারো? অতি স্বাভাবিক ব্যাপার,যা আমার
ছেলেরা বুঝে,তাও আমার চোখে পড়ে না কেন”?
বাবা “কি হয়েছে” জিজ্ঞেস করতেই গড়গড়‌ করে বলে যাই ঘটনাগুলো।

সব শুনে শেষে বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“শোন মা, পৃথিবীতে কূটনীতি তে যদি সবকিছু হতো, তবে শুধু চালাক রাই টিকে থাকতো আর
বোকা রা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। হ্যা বেয়ান হয়ত চেষ্টা
চালাবেন এখন, রাহি কে সরাবার। তুই প্রথমেই সরাসরি শাহীন এর সাথে কথা বল্। দেখ্ সে কি বলে। এমনও হতে পারে,বাচ্চারা কি শুনতে কি শুনেছে বা বুঝেছে”।

ছেলেরা ফিরলো, সাথে সাথে ই যাবার জন্য উঠে
দাঁড়াই। বাবা দুজন কেই খুব আদর করে,১০০০/
টাকা করে প্রত্যেককে দিয়ে বলল,”পছন্দ মতো কিছু কিনে খেও”। ফেরার সময় চুপচাপ বসে আছি দেখে রাফি বলল,”এখনো মাথায় এসব নিয়ে ঘুরছো মা? বললাম না,সব ঠিক হয়ে যাবে”।
আমি হেসে বলি,”আরে না, এসব নিয়ে ভাববো কেন? আমার ৩টা রত্ন আছে না,ওরাই ভাববে”।

বাসায় এসে দেখি, আমার শাশুড়ি চেঁচামেচি করছেন। জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার? বললেন,
“আমার দিকে কারো কোনো খেয়াল আছে নাকি?
এতো গরম লাগছে লেবুর শরবত খাবো ভাবছি,
বুয়া বললো লেবু শেষ হয়ে গেছে। তুমি জানো না,
লেবু শেষ হয়ে গেছে,আনিয়ে রাখতে পারো নাই”?
বিরক্তি তে মন ভরে আছে, কিন্তু কিছু বললেই পরীক্ষার আগের দিন আরেক নাটক হবে। বুয়া কে বলি,”আমি দেখে এসেছি, নিচে সব্জি ওয়ালা
আছে। তাড়াতাড়ি দুই হালি লেবু নিয়ে আসো”।

এই ফাকে শাড়ি বদলে হাতমুখ ধুয়ে এলাম। বড়
মগে শরবত বানিয়ে সবাইকে দিলাম। সত্যি ই এক
অস্বস্তিকর গরম পড়েছে। হা পিত্যেস অবস্থা যেন সবার। অনেক কাজ, ছেলেগুলোর কাপড় লন্ড্রী
থেকে আনাতে হবে, রান্নাবান্না শেষ করতে হবে। কিন্তু,কিছুই করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ছেলেরা কি সব কথা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে, মাথা জ্যাম করে দিয়েছে যেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে দাঁড়াই।

দীপা ও বন্যা শুয়ে শুয়ে গল্প করছে তাদের রুমে। দীপা বলছে,”আরে তুমি যাওয়ার পর,মা কাউমাউ
করে মাথা পাগল করে ছেড়েছে। এসব টলারেট করো কিভাবে, সেটাই ভাবছি”। আমি বন্যার দিকে তাকিয়ে বলি,”তুই ও, বুয়াকে বললেই তো নীচে থেকে লেবু এনে দেয়। বন্যা বলছে,”আমি লেবু নাই দেখে দাদুকে টাং এর শরবত বানিয়ে দিয়েছি।
এমনিতে তো খায়, আজকে আরো রেগে গেছে”।
দীপা মৃদু স্বরে বলল,”আরে ভাবী এসব কিছু না,
তুমি যে চলে গেছো,সেই রাগেই এইসব করছেন”।
আমি করুণ হেসে বলি,”হ্যা আমাকে একটু বেশি ভালোবাসেন তো, সেজন্য ই মনে হয় চোখে হারান
আর কি” !!!

ওদের রুম থেকে বের হয়ে, আমার শাশুড়ির রুমে
ঢুকে দেখি, কাপড়ের আলমারিতে কি যেন খুঁজছেন। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, বাদামী
রঙের পেটিকোট খুঁজে পাচ্ছেন না। উনাকে বসিয়ে খুঁজে দিয়ে বলি,” মা কি রান্না করব আজ
কে বলেন”। খ্যাচখ্যাচ করে বলেন,”তোমার যা খুশি রান্না করো, আমি কি বলবো”? বের হয়ে কিচেনে যাচ্ছি আর মনে পড়ছে, একবার ফাজিল
দীপা বলেছিল,”মায়ের এই মেজাজ দেখলে মনে হয়, আমরা ৩ ভাইবোন জন্মালাম কি করে”?

বাচ্চাদের জন্য চিকেন,ডাল তো লাগবেই, মাছের আরো দুইটা আইটেম করলেই হবে। শাহীন ড্রাইভার কে দিয়ে,দীপার প্রিয় বড় বড় শোলমাছ পাঠিয়েছে। সাথে একটা পাকা রুই। শোলমাছ ভুনা করলাম,আলু ও রুই মাছের তরকারি রাধি ও টমেটোর টক। পরিমাণে বেশি রেঁধেছি, যাতে
আগামীকাল আর রাঁধতে হয় না। ছেলেদের নিয়ে
গেলে আসতে আসতে ই ২টা/ ৩টা বাজতে পারে।

প্রাত্যাহিক কাজ চলছে ই, গোসল খাওয়া সব ই
হলো, শুধু মনটা ই কেন যেন হাহাকারে মেতে আছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, দুঃখ পেয়ে রাহির মতো কাঁদতে পারলে বড্ড ভালো হতো। চোখের পানির সাথে সাথে, মনটাই হয়তো বা হালকা হয়ে
যেতো। বিকেলে দীপা বলছে,”ভাবী ঘরে তেঁতুল
আছে? আমাকে মজা করে একটু তেঁতুল ভর্তা করে দিবে”? আমি মাথা নাড়তে ই আমার শাশুড়ি
বললেন,”আমি কেন, আমার চৌদ্দগুষ্টি এরকম
পাষাণ মেয়ে দেখেনি। এতটুকু বাচ্চাকে ফেলে এসে, দুই দিন ধরে কিভাবে থাকে দেখো !!! আবার
তেঁতুল ভর্তা খাবে !!! ছিঃ, ছিঃ !!! তুই তো দেখি, মা নামের কলঙ্ক”।

দীপা সোফায় শুয়ে ছিল, এবার সে সাথে সাথে
তড়াক করে উঠে বসে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“এতটুকু বাচ্চাকে ফেলে এসে”….. মানে? আমি কি ডাষ্টবিনে ফেলে এসেছি না কি? বাচ্চা ওর বাবা এবং দাদির কাছে আছে। নিরাপদেই আছে,হয়ত মা ছাড়া মনখারাপ লাগছে, কিন্তু ও
বড় হলে ঠিক ই বুঝবে, ওর বাপকে টাইট দেয়ার জন্য, ওর মার এই সিদ্ধান্ত নেয়া একদম পারফেক্ট ছিল। আর, তেঁতুল ভর্তা ভাবী করে দিচ্ছে, তাতে তোমার কোন রাজভান্ডার উজাড় হয়ে যাচ্ছে, আমি তো বুঝিনা। শোনো, মা নামের কলঙ্ক আমি নই। এটা হচ্ছে তারা,যারা সারাক্ষণ ছেলের কানে
বৌয়ের নামে কানমন্ত্র দিতে থাকে। ছেলেরও যে বৌকে নিয়ে সুস্থ্য,স্বাভাবিক, সুন্দর একটা লাইফ
আছে…. সেটা তাদের মনে থাকে না”।

এতো সরাসরি আক্রমণ, আমার শাশুড়ির মতো মানুষ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”দেখেছো বৌমা যা নয় তাই বলে যাচ্ছে। এক নম্বরের হারামি একটা”। আমি হাত ধরে টেনে বলি,”চলেন তো মা রুমে চলেন।
একটু শুয়ে থাকবেন, নয়তো আপনার শরীর খারাপ হবে”। শুইয়ে দিচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি,
“যতো যা ই করো না কেন, নদী তুমি প্রতিপক্ষ ই
থাকবে, আপনজন হয়ে উঠো নি, উঠবেও না”।

আজকে শাহীন ফোনে জানিয়েছে, অফিসে ব্যস্ত
আছে, ফিরতে একটু দেরী হতে পারে। দীপা বন্যা
কে নিয়ে, নীচের কম্পাউন্ডে হাঁটতে গেছে। দীপা কে পেয়ে আমার মেয়েটা এতো খুশি হয়েছে, খুব ভালো লাগছে আমার। আমার শাশুড়ি হঠাৎ করে বললেন, পাশের বাসার খালার বাসায় যাচ্ছেন। দরজা বন্ধ করে এসে মনে হয়, সারাটা বাসা যেন একটা নিঝুমপুরী হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে শুধু
ছেলেদের পড়ার গুনগুন শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমি ব্যালকনিতে বসে, আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবি, সৃষ্টিকর্তার বিশাল সব সৃষ্টির মধ্যে মানুষের মনও
এক অপার রহস্যময় জিনিস। চারদিনের বাস এই
পৃথিবীতে, কেন মানুষের এতো নিস্কাম ঈর্ষা !!! কি
হয়,একটু সেন্সিবল হলে?নামাজের প্রতি রাকাতে
তো ঠিক ই অনুনয় করি,”আমাকে সহজ,সরল পথে চালাও”। কিন্তু বাস্তব জীবনে এরকম চলতে এতো অনিচ্ছুক কেন আমরা”?

কলিং বেল বাজল, শাহীন এলো মনে হয়। দরজা খুলে দেখি,রাহির বাবা সাথে উনার ড্রাইভার।২জন রাজ্যের জিনিস হাতে করে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ভেতরে এসে এসব রেখে দেখি, ভদ্রলোক ড্রাইভার কে নীচে যেতে বললেন। আমি অবাক হয়ে বলছি,”এত্তোসব কি নিয়ে আসছেন ভাই”?
উনি হেসে বললেন,”তেমন কিছু না, কিছু নাস্তা আছে ভাবী ছেলে মেয়েরা খাবে বলে”। আমি উনাকে বসতে বলে, রাহি ও রাফি কে ডেকে দিলাম। এক কাপ কফি ও নাস্তা নিয়ে এসে দেখি,
উনি বলছেন,”ঠিক আছে, এবার তোমরা পড়তে যাও”।

কফি তে চুমুক দিয়ে ই ভদ্রলোক বলছেন,
“ছেলেটা আমার সাথে আর স্বাভাবিক হতে ই পারলো না ভাবী। এতো চেষ্টা করলাম, সাতটা কথা বললে একটা কথা বলে। আজকাল প্রায়ই আমার মনে হয়, সেকেন্ড ম্যারেজ করে ই ভুল করলাম না তো? যাকে করলাম তাকে অনেক আগে থেকেই বুঝানো সত্ত্বেও ছেলেটাকে, কি যে
করেছে, বাসায় থাকতেই রাজি হলো না। এজন্যই
হয়তো, ওর কোল আলো করেও কেউ আসেনি।
বিশাল প্রাসাদসম বাড়ি,সব ধরনের সুযোগ সুবিধা
কিন্তু, আমার কলিজার টুকরা থাকে অন্য বাসায়।
মানসিক দূরত্ব টা আধইঞ্চিও কমাতে পারলাম না।
দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে বলুনতো”? উঠতে যখন চাইলেন, আমি বলি “একটু বসেন, মাকে ডাকি”।
আমার শাশুড়ি এসে, মিনিট দশেক কথা বলার পর, উনি চলে গেলেন।

কিছুক্ষণ পর দীপা, শাহীন সবাই ঘরে ফিরলে বলি,”আজ একটু তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ হোক।
কালকে ওদের পরীক্ষা”। শাহীনও সারাদিনের অফিস শেষে ভীষণ টায়ার্ড। শাওয়ার নিয়ে ই খেতে এলো। খেতে খেতে রাহি ও রাফিকে বলি,
“আজ আর রাত জাগতে হবে না। কাপড়,কলম ও প্রবেশ পত্র রেডি করে ঘুমিয়ে যাও”। দীপা বলে,”দেখ্ তোদের কতো ভাগ্য ভালো, মা পইপই
করে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। আমাদের মা তো জীবনে
কোনো দিন এসব খেয়াল করে নি, তাই না রে ভাইয়া”?

যথারীতি শাহীন নিশ্চুপ হয়ে খেয়ে যাচ্ছে,আর
আমার শাশুড়ি বলছেন,”না, মা তো কিছুই করে
নি, হাওয়া থেকে লেখাপড়া শিখে চাকরি করছ।
সাধে কি আর তোকে এক নম্বরের হারামি বলি”?
শাহীন আমার দিকে তাকিয়ে, চোখের ভাষায় এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করার অনুরোধ জানাচ্ছে। আমি তার মিনতি তে চোখও
দেই না, দ্বিতীয় বার তার দিকে তাকাই না। মনে মনে বলি,”তোমার মতো স্বার্থপর,দুষ্টু ও হারামি
পুরুষের প্রতি, নদী আর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে না। যা করার এখন থেকে নিজে করো”।

বেডরুমে এসে দেখি, শাহীন চেয়ারে বসে আছে।আমি ব্রাশ করে যখন আসি, সে তখনো স্বস্থানে
ই বিরাজমান। বেডকভার তুলে রাখছি, মৃদু স্বরে বললো,”কি হয়েছে? আজকে আবার আমি কোন
দোষে দুষ্ট হলাম? আমি তো অনেক ভেবে কারণ
বের করতে পারছি না। কথা বলো না কেন নদী”?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here