দাম্পত্য সুখ( ৯ম পর্ব)

0
184

#দাম্পত্য সুখ( ৯ম পর্ব)
#লাকি রশীদ

কাকের গোসল ই করলাম বলা যায়। ঝটপট শাওয়ার নিয়ে চলে আসি। আমার শাশুড়ি, ছেলেরা বসে থাকবে খাবার জন্য। তাও ভালো আজ বন্যা পাশের বাসার পিয়ার সাথে ফিরবে বলে, আমাকে স্কুলে যেতে হয়নি। নয়তো, আরো কষ্ট হতো। তাড়াতাড়ি নামাজ আদায় করে দেখি
বুয়া টেবিল লাগাচ্ছে। ভাত, তরকারি টেবিলে এনে সবাইকে ডাকলাম। রাহি বললো,”আমি একটু পরে খাবো মামস। খিদে লাগুক, তোমরা খাও”। আমি বুঝি সেদিনের পর থেকে, আমার শাশুড়ির সামনে খেতে সে চায় না।আর, আমার শাশুড়িও !!! কথা বলে সবকিছু ঠিক করে কি ফেলা যায় না? সেটা উনি বুঝলে তো !!! বললাম,
“ঠিক আছে, তুই পরে খাবি না হয়”।

রাফি দীপাকে ডেকে নিয়ে আসছে। আমার শাশুড়ি,দীপা ও রাফি টেবিলে বসতে ই কলিং বেল বাজল। রাফি দীপাকে চেয়ার থেকে তুলে, দরজার আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে। বন্যা প্রতিদিন ভেতরে ঢুকেই ডাইনিং চেয়ারে বসে পানি খায়। আজ বসে খাচ্ছে, দীপা পেছন থেকে এসে ওর
চোখ টিপে ধরেছে। চোখ খুলতেই দীপাকে দেখে,
খুশিতে তারস্বরে মেয়ের চিৎকার। আমার শাশুড়ি
বকছেন,”এসব হচ্ছেটা কি? এতো বড় মেয়ে, তুই
পাগলের মতো চেচাচ্ছিস কেন শুনি? এরা জীবনে
ও মানুষ হবে না”। এসব ওদের গায়ে ই লাগছে না। বন্যা দীপাকে বলছে,”ফূপি তুমি কিন্তু এবার অনেক দিন থাকবে। লিউনা কই,আনোনি? আহ্, তাহলে এবার তুমি শুধু আমার”। আমি বন্যাকে
বলি, তাড়াতাড়ি গোসল নামাজ সেরে আসো।ভাত খেয়ে ফুপির সাথে গল্প করবে”। মেয়ে এবার
অনিচ্ছায় রুমের দিকে পা বাড়িয়েছে।

দীপার মনে হয় হঠাৎ খেয়াল হয়েছে, রাহি আসেনি। জিজ্ঞেস করতেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য মিথ্যে বললাম,”ও হাবিজাবি কি খেয়েছে মনে হয়,একটু পরে খাবে বলছে”। দীপা এবার সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলছে,”ওর কি হয়েছে
বলোতো ভাবী। এরকম করছে কেন? নাকি সে পরীক্ষা নিয়ে বেশি চিন্তিত হয়ে গেছে”? আমি চুপ
করে আছি দেখে,সেও আর কিছু বলছে না।

এবার আমার শাশুড়ি বলছেন,”কতো বার তোমাকে বলেছি বৌমা,করলা ভাজার সময় ঢাকা দিও না। দিলে কি রকম নরম হয়ে যায়, আমি খেতে পারি না”। আমি বলি,”ঢাকা দিইনি তো মা,
নরম কোথায়, আমি তো ঝুরিঝুরি করেছি”। রেগে বললেন,”হ্যা খাচ্ছি আমি, আমি বুঝতে পারছি না, তুমি বুঝে গেছ”। এতো কথা কাটাকাটি আর ভালো লাগে না, বললাম,” লাউ চিংড়ি খেয়ে দেখেন মা, আপনার কেমন লাগে”। অনিচ্ছাসত্ত্বে
বিরক্ত হয়ে যেন নিচ্ছেন এমন ভাব। দীপা এবার আড়চোখে তাকিয়ে বলল,”সব আইটেম ই দারুণ
হয়েছে। এতো সব ঝামেলার মধ্যে কোন সময় গিয়ে, রান্না চাপালে ভাবী? আমি তো বুঝতেই পারিনি”।

ওদের খাওয়া হয়ে গেলে, বুয়াকে তিনটি প্লেট দিতে বলি। বুয়াকে দেখে আমার শাশুড়ির আবার
মেজাজ গরম,”কিরে তুই কাজ শেষে আজ যাস্
নি”? আমি বলি,”না মা ওদের পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত ওকে বলেছি, বিকেল ৪ টায় যাবে”। তিনি মনে হয়, তীক্ষ্ম কোন উক্তি উচ্চারণ করতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় দীপা বলে উঠলো,”তুমি
বয়স্ক মানুষ,সব কথাতে থাকো কেন? ভাবী যখন সংসার চালাচ্ছে, ওকে এসব ব্যাপারে ডিসিশন নিতে দাও না কেন? “এটা কেন, ওটা কেন”…. এই
সব কৈফিয়ত তলব করা ছাড়ো”। আমার শাশুড়ি আর মেজাজ বশে রাখতে পারলেন ই না,”শোন
তুই কি বুঝবি, আমার সংসারে কি বলবো না বলবো? চুপ থাক্”।

রাহি কে ডেকে এনে খেয়ে উঠলাম, এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। বুয়া কে খেতে দিয়ে বলি,
“খেয়ে বাসন ধুয়ে চলে যাও”। টেবিলে বসে গল্প করছি, কিন্তু ঘুমে আমার দুচোখ জড়িয়ে আসছে।
কোন সকালে উঠেছি, এখন বিকেল ৪টার উপর বাজে। কিন্তু বুয়া বিদায়ের আগে গেলে, আমার শাশুড়ি আবার হুলস্থুল কান্ড লাগিয়ে দিবেন। তাই
বসে আছি,বন্যা মনে হয় খেয়াল করেছে। আমায়
বলছে,”মা তুমি তো এখন চেয়ার থেকে ই পড়ে যাবে। তাড়াতাড়ি বিছানায় যাও”। আমি বলি,”বুয়া
কে বিদায় দিয়ে যাবো রে মা”। সে বলে,”আমি উনাকে বিদায় দিবো,যা লাগে করবো…. তুমি নিশ্চিন্তে যাও তো”। আমি উঠে বেডরুমে যাচ্ছি আর শুনছি দীপা বলছে,”আমি কোন সকালে এসে দেখেছি,তোর মা কাজ করছে। বেচারীর তো
আর ছুটি নেই, চলতে ই আছে”।

মেয়ে নিশ্চিন্ত করায়,এসেই শুয়ে পড়েছি। ঘুমঘুম চোখে সৃষ্টিকর্তা কে বলছি,”আমি মাঝে মাঝে বড়
হতাশ হয়ে পড়ি জীবনের প্রতি। ক্ষমা চাই, মাফ
চাই…. এমন নেয়ামত দেয়ার পরও, অকৃতজ্ঞ হয়ে
যাই মাঝে মাঝে। মানুষ তো আমি, ভুল আমার হবেই,ক্ষমা করো প্রভু”।

আধো আধো আলো অন্ধকারে শুয়ে আছি বলে, জায়গা কোনটা সেটাই চিনতে পারছিনা। লাল রঙের ড্রিমলাইট তার রক্তিম আভা ছড়াচ্ছে।পাশ
ফিরে দেখি, শাহীন লম্বা হয়ে শুয়ে আছে।আল্লাহ,
এতো ঘুম ঘুমিয়েছি যে, কখন শাহীন এসেছে……
বলতেও পারি না। ধড়ফড় করে উঠতে যাবো,
শাহীন দুহাত বাড়িয়ে বুকে টেনে নিয়ে বলছে,”কি
ব্যাপার? উঠে গেলে কেন? কোনো শব্দ পেয়েছো
না কি”? আমি অবাক হয়ে আজ এতো সদয় হবার কারণ খুঁজতে খুঁজতে বলি,”স্যরি আমি বূঝিনি যে, তুমি বাসায় আসা পর্যন্ত, এতোক্ষণ ধরে আমি ঘুমিয়েছি। এক্ষুনি আমি চা বানিয়ে দিচ্ছি”।

এবার সে আমাকে আদর করতে করতে বলছে,
“তোমার কথায় মনে হয় আমি নারী নির্যাতনকারী
কোনো পুরুষ। এরকম ভয়ে ভয়ে কথা বলছো কেন? আমি তার কথা শুনে মনে মনে বলি,”শুধু কি গায়ে হাত তুললেই নারী নির্যাতনকারী হয়, মনটা ধীরে ধীরে গলা টিপে মেরে ফেললে বুঝি হয় না”?

শাহীন বলে যাচ্ছে,”তোমার মেয়ে আজ আমাকে ঢুকতেই খুব সাবধান করে বলছে,”, রুমে গিয়ে মোটেও শব্দ করবে না বাবা। দাদুর ওয়াশরুমে চলে যাও”। তারপর, তার সেই বিখ্যাত ট্যালট্যালে পানির চা দিয়ে বলেছে,”খাও। মা ভীষণ টায়ার্ড বাবা, সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করে, চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছিল। দয়া করে ডাকবে না”।

আমি এবার বলি,”এবার ছাড়ো তো দয়া করে। সবাই নাস্তা না করে বসে আছে মনে হয়”। কিন্তু,যা বলছি তা মানার কোনো লক্ষণ ই দেখছি না‌।

১৮ বছরের দাম্পত্য জীবন, কোন স্পর্শ মনের কি অনুভুতি প্রকাশ করে, বুঝার মতো শক্তি হয়ে যায়
হয়তো। আজ যে সে আমার উপর ভীষণ ভীষণ প্রেমসিক্ত…. তার আদরের ধরন ই বলে দিচ্ছে। কিন্তু এক্ষুনি না থামালে,আর থামানো অসম্ভব ই হয়ে পড়বে। ঝটকা মেরে উঠতেই বললো,”তুমি যে অনেক শক্ত একজন মানুষ…. সেটা জানো”?
আমি হেসে বলি,”জানি না আবার !!! খুব জানি।
দয়া করে অফিসের কাপড় পাল্টিয়ে বিছানায় শোও”।

ওয়াশরুমের বেশি পাওয়ারের লাইটের আলোয়
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, আমার ফর্সা ধবধবে গলায়
লাল লাল ছোপ। ২/৩ টা হবে ই। কি মুশকিল !!!
ছেলেরা বড় হয়ে গেছে, কোনো কান্ডজ্ঞান নেই মানুষটার। এই উড়না রেখে,বড় সুতির উড়না দিয়ে গলা,মুখ সব পেঁচিয়ে বের হই। এই গরমের মধ্যে এখন এইভাবে সিদ্ধ হও।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজে। কোনো দিকে না তাকিয়ে নুডুলস সিদ্ধ দেবার পানি বসাই আর
একদিকে সব্জি সিঙ্গাড়া গুলো ভেজে তুলি। বুয়া
নিজের বুদ্ধি দিয়ে, মাঝারি এক বাটি পেঁয়াজ কুচি করে কেটে দিয়ে গেছে। এমনি এমনি কি আর ওকে মায়া করতে ইচ্ছে হয়? কাঁচামরিচ ও খুব ধনেপাতা কুচি,গাজর কুচি,২ রঙের ক্যাপসিকাম, চিকেন ও চিংড়ি দিয়ে যখন, নুডুলস রেডি করে টেবিলে নিয়েছি, তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় আটটা ছুঁয়েছে। বন্যা কি চা বানিয়েছে, হয়তো না পেরে সবাই খেয়েছে। ফুটন্ত পানিতে চাপাতা দিয়ে, সবাইকে ডাকি।

হইহই করে বাচ্চাগুলো দীপা ও তাদের দাদুকে নিয়ে এসে বসলো। আমার শাশুড়ি বললেন,
“এখন এসব খেলে আমার গ্যাস হয়ে যায় না কি
বৌমা”? আমি বলি,”কিচ্ছু হবে না মা, রাতের খাবারের আগে সারজেল খাইয়ে দিবো আমি আপনাকে”। আমি শাহীন কে ডাকতে যাই বলল,
“এখানে দিয়ে দাও না প্লিজ”। আমি রেগে বলি,
“চুপচাপ আসো। সবার সাথে বসে খাবে”। আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”কি ব্যাপার? মুখ এতো ঢেকে রেখেছ,একটু পর বলবে গরম লাগছে”। আমি বলি,”গলার অবস্থা কি করেছো, ঘরে এতো বড় বড় ছেলে মেয়ে,মা আছেন। বড়
উড়না না পরে, উপায় আছে? আবার মজা করে
জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। আসো তাড়াতাড়ি”।

মগে দুধ চিনি মিশিয়ে চা ঢালতে ঢালতে ভাবছি,
সারাটা দিন এতো বিশ্রী ভাবে ঝগড়াঝাটি করার পর,দিনের শেষটা মন্দ কাটেনি মাশাআল্লাহ।
পরশু ছেলেগুলোর পরীক্ষা শুরু। বাবা, মা কে
অন্তত সালাম করে দোয়া নিয়ে আসা উচিত ছিল। মনে মনে কি করা যায় সে প্ল্যান ভাজছি,
হঠাৎ পিঠে হাতের স্পর্শ পেতে দেখি দীপা দাঁড়িয়ে
ফিসফিস করে বলছে,”তোমার গলায় কি হইছে ভাবী,বলা যায়”? আমিও ফিচেল হাসি দিয়ে বলি,
“যাবে না কেন? পিঁপড়া কামড় মারছে”। ফাজিল দীপা হাসতে হাসতে বলছে,”বেশ বড় পিঁপড়া ছিল
তাই না”?

শাহীন চা খেয়ে বন্যাকে বলছে,”যদি তুই ঠিক তোর মায়ের মতো চা বানানো শিখতে পারিস, তবে তোর হাত খরচের সাথে আরো ৫০০/ টাকা
বেশি পাবি”। মেয়ে বাবাকে কথা দিচ্ছে, এবার সে
মায়ের মতো চা বানানো অবশ্যই শিখবে। আমার
মনে পড়ে যাচ্ছে, আমার বাবার কথা। বিয়ের ঠিক
হবার পর, আমার মায়ের কি ভীষণ বকুনি,”একটা
রান্নাও শিখতে রাজি না, এই মেয়ে মাকে উঠতে বসতে গাল খাওয়াবে”। বাবা তখন করুণ স্বরে
আমাকে বলছে,”একটু কষ্ট করে কয়টা আইটেম
রাধা শিখে নে না মা। শিখলে তুই যা চাইবি, বাবা তা ই কিনে দেবো”। এখন প্রতিদিন এতো এতো
রান্নার সময়, পুরনো সময়টা ফিরে পেতে প্রান আকুলি বিকুলি করে।

দীপার মেয়ে লিউনার জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে আমার। এতো ছোট মেয়ে, কি জানি কাঁদছে কি
না। দীপার ও মন খারাপ, কিন্তু কিচ্ছু বুঝতে দিতে
চায় না মনে হয়। রাত দশটায় শাহীন ফোন এনে
বললো,রাহির বাবা আমার সাথে কথা বলতে চান। ডদ্রলোক বলছেন,”ভাবী আমি ছেলে দুটো
পরীক্ষা তে যাবার সময়, গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। গাড়ি ওখানে ই থাকবে, ছুটি হলে আবার ওদের
বাসায় পৌঁছে দিবে”। আমি বলি,”তাহলে তো খুব ভালো হয়। দীপা আছে এখানে, প্রথমদিন ওদের সাথে আমি যেতে পারবো”।

রাতে ঘুমাতে গিয়ে শাহীন কে বলি,”কালকে আমার একটা অনুরোধ রাখবে। তুমি অফিসে পৌঁছে ই গাড়ি টা পাঠিয়ে দিতে পারবে? ওদের নিয়ে গিয়ে,একটু মা বাবা কে দেখিয়ে আনবো”। শাহীন বলল,”দীপা থাকবে তো”? আমি বলি,”হ্যা
আমি জিজ্ঞেস করেছি, বলেছে থাকবে”। শাহীন এবার হেসে বললো,”তোমার সব প্রার্থনা মঞ্জুর সখী, এবার আমার প্রার্থনা পুরণ করো”। সেদিন সেই রোমান্সের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে মনে হচ্ছিল, পৃথিবীতে অবিমিশ্র সুখ বা দুঃখ বলতে আসলে কিছু নেই। সুখ, দুঃখ মিলেই এই নশ্বর জীবন।

ঘুম আসবে আসবে, এমন সময় শাহীন বলছে,
“দীপাটার অবস্থা দেখো। এতো ছোট মেয়ে টাকে রেখে, এভাবে কেউ থাকতে পারে? এতো টা শক্ত
হৃদয়ের মেয়ে আছে পৃথিবীতে আছে, আমার ভাবতেই তো অবাক লাগে”। আমি হেসে বলি,
“শক্ত মনের,শক্ত হৃদয়ের মানুষ হলে,সবাই ঠিক
থাকে, ওর প্রতি কোনো অন্যায় করতে ভয় পায়।দেখো না, আমি শক্তপোক্ত নই বলে, তোমরা মা ছেলে আমাকে কতো ডমিনেট করো”।

শাহীন এবার হেসে আদর করে বলছে,”তুমি তো আমার অনেক বুঝদার স্ত্রী”। আমি শ্লেষের সুরে বলি,”তাই না কি? আ্মি এতোটাও বুঝদার হতে চাই না, শাহীন। আমাদের কলেজের এক ম্যাডাম একটা কথা প্রায় সময়ই বলতেন,”ক্ষোভ জিনিস টা বড় সাংঘাতিক খারাপ। কখনো ক্ষোভ পুষে রাখা ঠিক না। কারণ, জমতে জমতে সেটা পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী হয়ে যায়। আর,যখন তা ফেটে পড়ে, তখন পাশে থাকা লোকজন আশ্চর্য্য হয়ে যায় এ কথা ভেবে,এর বুকে এতো আগুনও জমা ছিল”।

সকালে আমার মনে হয়েছে, এতো ঘুরপাকের ই
বা দরকার টা কি? একসাথে শাহীনের সঙ্গে ৩ জন
বের হলেই হলো। ওকে অফিসে নামিয়ে বাবার বাসায় চলে গেলাম, অনেক সময়ও বাঁচল। ফিরতে হবে আবার খুব তাড়াতাড়ি।পরীক্ষার ঠিক আগের দিন, পরীক্ষার্থী নিয়ে বাইরে বেরোনো, আমার একদম পছন্দ নয়। কিন্তু, কি করবো? এবার তো গেট টুগেদারে যাওয়া থেকে শুরু করে, এখন পর্যন্ত একটানা একটার পর একটা ঝামেলা
ঘাটছি। দীপা এসেছে বলে,আজ বন্যাও স্কুলে যায়নি।

ফুপু ভাইঝি মিলে আমার শাশুড়ি কে দেখবে আর আমি এদিকে চট্ করে ছেলেদের নিয়ে ঘুরে চলে আসবো। শাহীন কে বলতেই এক
কথায় রাজি। গতরাত থেকেই ওর মুড বেশ ভালো
দেখছি। তাই বললাম,”আমরা যে যাচ্ছি,একটু মা
কে বলে আসো না প্লিজ”। এবার সে থতমত খেয়ে বলছে,”কেন তুমি মা কে আগে বলোনি? স্যরি,
আমি পারবো না”। আমি বলি,”ঠিক আছে, তবে মনে রেখো,আমার জন্য তুমি কখনো কিছুই করনি”‌। চুল আঁচড়াতে ছিল, কি মনে করে্ দেখি,
আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুম থেকে বের হতে হতে বলল,”ঠিক আছে আমি বলে আসছি”। আসার পর বললাম,”কি বেশী গাল খেয়েছো”? সে হেসে বলে,” তোমার জন্য না
হয় একটু গাল ই খেলাম। চলো আর দেরি করো
না”।

রাফি , রাহি রেডি হয়ে বসে বন্যা ও দীপার সাথে
কথা বলছিল। আমার শাশুড়ি কঠোর এক মুখ
করে বসে আছেন। আমি কাছে গিয়ে,”আসি মা”
বললাম। দীপা কে বলি,”তুমি চুলার পাশে যেও না।। যা লাগে বুয়াকে বলো,ও দিবে”। বন্যাকে আদর দিয়ে ছেলেদের কে নিয়ে, গাড়িতে উঠি।সবাই হালকা কথা বার্তা বলছে হঠাৎ রাফি শাহীন
কে বলে,”আচ্ছা বাবা, মনে করে দেখ তো, লাষ্ট
কবে আমরা এভাবে একসাথে বেড়াতে বা ঘুরতে
গিয়েছিলাম? আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট নিশ্চিত, তুমি
বলতে পারবে না”। শাহীন একবার ই মুখ তুলে
রাফির দিকে তাকিয়েছিল,আর সারা টা পথ সে,
অদ্ভুত এক নীরবতা পালন করেছে যেন।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here