দাম্পত্য সুখ(৮ম পর্ব)

0
175

#দাম্পত্য সুখ(৮ম পর্ব)
#লাকি রশীদ

এবার সে চিৎকার করে বলে উঠে,”মা তুমি দয়া করে একটু চুপ করে থাকলে ভালো হয়। ভাবী যে তোমাকে কি ভাবে ২৪ ঘন্টা সহ্য করে, সেটাই ভাবছি”।

আমি কিচেনে এসে চিন্তা করছি, আর পরোটা বানাবো কি না। আমার ননদ দীপার আবার কখন
কি খাবারের মর্জি হয়, সেটা ওই জানে। অবশ্য
ওর অসুবিধেও নেই। কুক রাখা আছে,বেশ ভালো
একটা জব করছে, বেশ ভালো অংকের স্যালারী
মাস শেষে একাউন্টে জমা হচ্ছে। একটাই সমস্যা,
ওর ভীষণ রাগ। ওর স্বামী রবি ঠাট্টা করে বলে,
“বলুন তো ভাবী, সুপ্ত আগ্নেয়গিরির পাশাপাশি থাকে এমন সাহসী কেউ এই পৃথিবীতে আছে না কি? হাজার খুঁজেও পাবেন না। কিন্তু, আমি গত ১৫ বছর ধরে আছি”। প্রেমের বিয়ে, বিয়ের পরও
দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মনে মনে বলি,”সবার কি আর তোর মতো ফুটা কপাল রে নদী”?

পরোটা ভাজা শেষ, এখন ডিমগুলো পোচ করছি। মনে হচ্ছে, দীপার এবারের আসাটা রাগ করেই আসা। ঢাউস ঢাউস ২ টা ট্রলি ব্যাগ সাথে নিয়ে এসেছে। কেন জানি ও আসায় আমার ভীষণ ভালো লাগছে। সাকসেসফুল যে কোনো নারীকেই দেখলে, আমার মনে পুলক জাগে। আমার পাশের ফ্ল্যাটের মিতু ভাবী নামী একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ভদ্রমহিলার
ড্রেস সেন্স এতো ভালো, আমার খুব প্রিয় একজন
মানুষ। কথাও বলেন শান্ত স্বরে। আমি উনাকে বলি,”আপনাকে আমার এতো ভালো লাগে, কখনো মন খারাপ থাকলেও আপনাকে দেখলে মনে হয়, আমার মন ভালো হয়ে যাবে”।

শাহীনের কথা শোনা যাচ্ছে, তার মানে খেতে এসে গেছে। ঝটপট পরোটা,ডিমপোচ নিয়ে টেবিলে রাখি। একটা বড় কাঁচের বাটিতে মাটন কষা নিয়ে মাইক্রোওয়েভে গরমে দেই। চায়ের পানি বসিয়ে এসেছি, গিয়ে দেখি পানি ফুটছে,চাপাতা দিয়ে এসে শাহীন,দীপা ও আমার শাশুড়ি কে নাস্তা করতে ডাক দেই। শাহীন রীতিমতো দীপাকে ভয়
পায়। ষ্ট্রেইট ফরোয়ার্ড দীপার চাঁচাছোলা কথার ঘায়ে,ও বরাবরই খুব তাড়াতাড়ি ধরাশায়ী হয়ে পড়ে থাকে।

টেবিলে বসেই দীপা বলছে,”ভাবী খুব ডেলিশিয়াস
নাস্তা। কিন্তু, আমি তো ওয়েট বাড়ার ভয়ে এসব খাইনা। আমি সঙ্গে সঙ্গে বলি,”তাহলে কি খাবে বলো,আটার রুটি করে দেই”? সে কি ভেবে বলল,
“নাহ্ তোমার করা পরোটা গুলো দেখে তো ভীষণ লোভ লাগছে। তেলও কম আছে। এগুলো ই খাই। তুমি বসছো না কেন? সবার খাবার পর, কি তুমি খাও না কি”? আমি বলি,”চা টা ঢেলেই আমি আসছি”। এসে দেখি ও হাত গুটিয়ে, আমার জন্য
বসে আছে। পরিবারে কতো ছোট ছোট সহমর্মিতা
দেখানোয়, জীবন যে কতো সুন্দর হয়ে যায়……. তা যদি মানুষ বুঝতো।

শাহীন হঠাৎ কি মনে করে, মাটন কষার বাটিটা
দীপার দিকে সরিয়ে দিয়ে বলল,”আমার শাশুড়ির
রাধা মাটন কষা, খেয়ে দেখ, খুব মজা লাগবে”। বলে মনে হয় ভেবেছে, মায়ের সামনে বসে ভুল করে, শাশুড়ির প্রশংসা করে ফেলেছে। তার মাও কটমট দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। চতুর
দীপা বুঝেই বলছে,”রান্নাবান্না অনেকের হাতেই ঠিক আসে না।যেমন মার রান্না মোটামুটি পর্যায়ের
ছিল, আমার রান্না তো মুখেই তোলা যাবে না। কিন্তু, ভাবী ও তার মায়ের রান্নার সাথে, একমাত্র বড় বড় হোটেলের শেফদের সাথে ই তুলনা চলে,
তাই না রে ভাইয়া”? তার ভাই আর কিছু না বলে,
নিশ্চুপ হয়ে বেসিনে হাত ধুতে চলে যায়। আর,
ত্যাদড় দীপা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে থাকে।

বুয়া এসেছে, বললাম,”আগে ড্রাইভারকে নাস্তা টা
দিয়ে এসো। তারপর,ঝটপট টেবিল টা পরিস্কার করে ফেলো”। আমার শাশুড়ি মনে হয়, অনেক ক্ষণ ধরে কাউকে বকা না দিতে পেরে হাঁফিয়ে গিয়েছেন, এবার বললেন ” ড্রাইভার কে প্রতিদিন খাবার দিতে হবে না কি? এতো বেলায় আসে, নাস্তা না করেই আসে না কি”? আমি বা বুয়া,২জন
ই তো এসবে অভ্যস্ত,তাই কেউ কোনো উত্তর দেই
না।

শাহীন আবার কিসের জন্য রুম থেকে আমাকে ডাকছে। চা টা ঢাকা দিয়ে রুমে এসে জিজ্ঞেস করি,”কি ব্যাপার? ডাকছো কেন”? শাহীন এবার
মৃদু স্বরে বলে,”শোনো দীপার জন্য ভালোমন্দ কিছু রেঁধে খাওয়াও, নয়তো মা আবার রাগ করবে। ওরা তো দেখেছি, প্রতিদিন অনেক ফল খায়। কিছু ফলও এনে রেখো না হয়। ১০০০ টাকার ২টা নোট ডায়েরীর নিচে রাখে। আমি কিছু না বলে, দরজার দিকে এগুতেই বলল,”কি ব্যাপার?কথা বলছো না যে !!! রাগ করে আছো না কি”?
আমি ওখান থেকে ই বলি,”শুধু শুধু কথা বাড়াচ্ছ
কেন শাহীন? আমার রাগে তোমার কি ই বা আসে
যায়”? দরজা টা খুলে বাইরে পা দেই।

বুয়া চা খাবার পর বলি,”ঝটপট গেষ্ট রুমে টা ঝেড়ে মুছে আসতো। তারপর, আগের গুলো তুলে ধোয়া বেডশীট বিছিয়ে দিবে”। ক্লিনিং,ডাষ্টিং
যদিও প্রতিদিন ই হয়, তবুও এসব বদলে দেয়াই ভালো। শাহীন অফিসে চলে গেছে। আমি,দীপা ও আমার শাশুড়ি,গল্প করছি।

রাফি ও রাহি ঘূম থেকে উঠে এসেছে। একেকজন
“ফুপি” ও “খালামণি” বলে দীপাকে জড়িয়ে ধরেছে। দীপা ওদের খুব প্রিয়জন, ওরাও ওকে খুব ভালবাসে। বন্যা আসলে তো দীপাকে দেখে অনেক খুশি হয়ে যাবে। আমি ওদের নাস্তা আনার
জন্য উঠি। টেবিলে রাখবো তখন শুনি দীপা রাহির মুখ ধরে বলছে,”তোর চোখগুলো এতো ফোলা কেন রে”? মনে মনে বলি,”চোখ বটে তোমার মাশাআল্লাহ”। রাহি ঝটপট জবাব দিচ্ছে,
“কই ফোলা? আমার চোখ তো এমন ই”। দীপাকে
যে কোনো কিছু বলে বুঝ দেয়া, অনেক কঠিন ব্যাপার।

ওরা নাস্তা করার জন্য উঠার চেষ্টা করতেই বলল,
“খবরদার, উঠবি না বলে দিলাম। কি হয়েছে,বল্
তো বাবা”। রাহি এবারো বিমর্ষ হাসি দিয়ে একই
কথা বলাতে,দীপা রেগে যায়,”বলবি না কি হয়েছে? আমি না তোদের ফ্রেন্ড, তারপরও বলবি
না? মায়ের কথা মনে পড়েছে”? রাহি এবার মৃদু স্বরে বলল,”মায়ের কথা আবার মনে পড়বে কি?
মা তো আমার সামনেই বসে আছে”। দীপা কি বুঝে এবার ছেড়ে দেয় ওদের।

দীপা বেশির ভাগ সময় ই টপস্ ও ট্রাউজার পরে। সাথে ওর গলায় উড়না পেঁচানো থাকে। আমার শাশুড়ি সোফায় বসে সূপারি কাটছেন আর দীপা
কে বলছেন,”কি সব ব্যাটাদের মতো কাপড় পরিস
বলতো, প্যান্ট আবার মেয়েরা পরে না কি”? মেয়ে
এবার বলে,”সবসময় কাউকে না কাউকে কিছু একটা বলতেই হবে,তাই না মা? সুপারি কেটে কেটে এখন বের করেছো, ওকে কাপড় নিয়ে কিছু
বকাই যায়। ভাবী তুমি সবসময় হেডফোন লাগিয়ে চলবে বাসায়। নয়তো তোমাকে পাগল বানিয়ে দিবে মা। দুই ঘণ্টায় আমি ই ফেড আপ।

আল্লাহ ই জানে তোমাকে কি উপকরণ দিয়ে কোন ধৈর্য্যের প্রতিমুর্তি বানাইছে” !!! রাফি তো আর রাফি ই, কোনো সুযোগ ই সে ছাড়তে চায় না,হুট করে বলে উঠলো,”আরে ফুপি তুমি কিছু
দিন থাকো না। তাহলে, মায়ের ভাগে গাল টা কিছু
কম জুটবে”। সাথে সাথে আমার শাশুড়ি সোচ্চার,
“কত্তো বড় বেয়াদব ছেলে,তোর মা রে আমি কবে
গাল দিয়েছি রে? আর তুই বলবি না ই বা কেন?
আমার নিজের পেটের মেয়েই এমন হাড়বজ্জাত,
এই হারামির জাত রে আমি জন্ম দিয়েছি। কোন
পাপে বাচ্চারা এমন হয়েছে আমার, জানি না”।
জোরে জোরে এসব বলে বিলাপ করছেন যখন,
তখন আবার রাফি উনাকে জড়িয়ে ধরে বলছে,
“আরে দাদু রাগ করো কেনো, আমি তো নাতি
হিসেবে একটু মস্করা করতেই পারি না কি”?

দীপা ক্যাটক্যাট করে কথা বলে তাই, সবাই ভয় পায়। লারা আপু কে যখন বলেছিল,”আপনি
আমার ওয়েট নিয়ে কনসার্ন কেন, আমাকে কি
কোলে নিবেন”? বাগ্মী লারা আপুও তখন চুপ হয়ে গেছিলেন। আসার পর থেকে আমার শাশুড়ি
র সাথে অনেক বার ই টক্কর লেগেছে। আমি বলি,”কি খাবে দীপা? বাবার বাসায় এলে যখন,
তোমার প্রিয় জিনিস রাধি”। সে বিরক্ত হয়ে বলে,
“দয়া করে খাওয়া খাওয়া করো না তো ভাবী। এমনি ই ওজন কমাতে পারছি না। আমাকে এক
টা বুদ্ধি দাও। মেয়েটাকে কি নিয়ে আসা উচিত ছিল”? আমি অবাক হয়ে বলি,” পুরো টা খুলে না
বললে, হঠাৎ করে কি বুদ্ধি দিবো”? একথা শুনে আমার শাশুড়িও উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছেন।

দীপা বলল,”গতরাতে রবির সাথে আমার একটা বিষয় নিয়ে প্রচন্ড ঝগড়া হয়েছে। এজন্য,রাগ করে সকালে চলে এসেছি। আসার সময় আমার শাশুড়ি আমাকে অনেক বলে কয়ে আটকাতে
চেয়েছিলেন। আমি কথা না শুনে ই বের হয়ে এসেছি। অফিসে ফোন করে অসুস্থ বলে,৩ দিনের ছুটি নিয়েছি। রবি বলেছে,” এতো ছোট মেয়ে রেখে,কই যাচ্ছ? ও কাঁদবে না”? আমি রাগের চোটে বলেছি,”তুমি রেখে দেখো, কেমন লাগে”?

কিন্তু এখন মনটা খচখচ করছে”। আমি বলি,
“বাচ্চার জন্য যখন মন খারাপ করছে, আমি ফোন দিয়ে রবি ভাইকে বলি,বাচ্চানিয়ে চলে আসেন,লাঞ্চ আমাদের সাথে করবেন। তাহলে ই
তো হলো”। বিয়ের প্রায় সাড়ে ১২ বছর পর,ওর মেয়েটার জন্ম। আমার শাশুড়ি বললেন,”সেই ভালো। বৌমা তুমি একটা ফোন করে দাও”। দীপা কি ভেবে বলল,”না ভাবী, তুমি কেন ওকে যেচে ফোন দিবে? তাহলে তো আমার মাথা থেকে নামার বদলে আরো জেঁকে বসবে। কোনো দরকার নেই, একটু দেখি বরং”।

আমার শাশুড়ির কোনো ব্যাপারেই তর সহ্য হয় না। উনি বললেন,”কিচ্ছু জেঁকে বসবে না। তুমি একটা ফোন দাও তো বৌমা”। দীপা এবার তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,”ওহ্ হো মা, যাও তো, আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি? আমাকে গাইড করতে হবে”। এবার আমার শাশুড়ি কি আবার বলে, কোন ঝামেলা লাগাবেন ভেবে আমি বলি,
“চলেন মা, রুমে চলেন। আস্তে আস্তে গোসল করে ফেলুন”। উনি রেগে বললেন,”না আমি এখন যাবো না। এতো ধাড়ি মেয়ে, মেয়ে ই বা বলি কেন,
মহিলা বলাই ঠিক হবে….. আড়াই বছরের শিশু কে ফেলে রেখে এসেছে। কোন পাষাণী এরকম করতে পারে? স্বামীর ভালবাসা পেতে হলে, স্বামী
কে শ্রদ্ধা করতে হবে। ঝগড়া হলেই স্বামী, সন্তান ছাড়া, বাপের বাড়ি চলে আসা…… এইটা কোনো
সমাধান হইল”?

দীপা এবার রণরঙ্গীনি মূর্তি ধারণ করলো। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,” শোনো মা, তুমি জানো না কি, আমি আমার স্বামীকে শ্রদ্ধা করি কি না? মেয়ে কে রেখে এসেছি কারণ এতো সকালে ও ঘুম ছিল। আমার শাশুড়ি তোমার মতো না, ওকে যথেষ্ট খেয়াল নজর রাখেন। তাছাড়া, বুয়া তো আছেই।আর, ছুটির দিন বলে রবি পড়ে পড়ে না ঘুমিয়ে, মেয়েকে খেয়াল করলে…… কি সমস্যা আছে?
আর আমি তো আমার বাবার বাসায় এসেছি,
আদর যত্ন যা করছে, ভাবী করছে…… তোমার কিছুই করতে হচ্ছে না আমার জন্য। তারপরও,
তুমি এতো বিরক্ত কেন”? আমার শাশুড়ি এবার
চেঁচিয়ে বললেন,”এমনি এমনি কি আর, দেখছি এখনকার সংসারে অশান্তি হয়? বাইরে বাইরে টো
টো করে ঘুরলে কি আর সংসারে মন বসে? মাস শেষে টাকা কয়টা পাও বলে স্বামী, সন্তান এখন কিছু ই না। এরকম করা কি কোনো ভালো মানুষ
এর মেয়ের কাজ”?

স্মার্ট দীপা এবার অন্য পথ ধরলো,”আচ্ছা মা ভাবী তো তার বিয়ের পরের জীবন টুকু সংসারে দিয়ে দিল। বাইরে বাইরে টো টো করে না ঘুরে,
সংসার সংসার করে বেচারার লাইফ ই শেষ। কিন্তু, তারপরও তুমি ভাবীকে দেখতে পারো না কেন? সারাক্ষণ দোষ ধরতে থাকো আর কি করো
সেটা আর বললাম না। তোমার ভালো লাগবে না।
এতো সংসারী একটা মেয়ে কেও তো ভালবাসনি
তুমি। আপন করে নাও নি। তবে, তুমি কি বুঝে আমাকে এসব বলছো, আমি আসলেই বুঝিনি”।

আমার আসলে ভয় লাগছে আমার শাশুড়ি আজ যে পরিমান চিৎকার চেঁচামেচি করছেন, কখন আবার হার্টের ব্যথা না ধরে যায়। দীপার শেষের চাঁচাছোলা কথায়, একেবারে পাথর হয়ে গেছেন।
হাত ধরে টেনেটুনে উনার বেডরুমে নিয়ে গিয়ে ফ্যানের নিচে বসালাম। তারপর বলি,”মা পা তুলে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন। ওর তো সবসময়‌ ই মাথা গরম। একটু পর ভালো লাগলে, গোসল করে নামাজ পড়বেন না হয়’। মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই আমি উঠে কিচেনে যাই। হাঁটছি আর ভাবছি,যতো যা ই করি না কেন, আমি কখনো আপন হবো না। আমি যে জায়গায় আছি,১ ইঞ্চি ও তারচেয়ে এগুনো সম্ভব হবে না।

মা মেয়ের সারাদিনের যুদ্ধতে রান্না কিছু হয়নি।পরশু থেকে আমার ছেলেদের পরীক্ষা। ঠিক সময়মতো খাওয়া না দিলে, কি হয়? কিচেনে বুয়া
কে মসলা বাটতে দিয়েছিলাম,প্রায় শেষ পর্যায়ে
দেখলাম। চটপট একদিকে চিকেন ভুনা বসিয়েছি
অন্যদিকে লাউ চিংড়ি। আমার শাশুড়ির জন্য,
করলা ভেজালাম। একটু পর ধুয়ে, কেটে ভাজি
করে ফেলবো। আস্ত একটা ইলিশ বের করে ভাজি করলাম। ছোট মাছ হাতে মেখে চুলায় বসিয়ে দিয়ে, করলা ভাজি করে ফেললাম।

শাহীন এর এক কলিগ ইংল্যান্ড থেকে,টিন এর মধ্যে থাকা ম্যাকারেল ফিশ অনেকগুলো এনেছেন। তার মধ্যে থেকে ৫ টিন মাছ (টমেটো সস দিয়ে ভেজানো) পিঁয়াজ, মরিচ কুচি দিয়ে ভেজে নিলাম। রাহির বাবার দেয়া অনেক গুলো টিক্কা,আর মুগডাল আছে। মায়ের দেয়া মাটন কষাও কিছু টা আছে।বাচ্চাদের এসব পুরনো তরকারি দিব না, কি জানি আবার পেট ব্যথা করে কি না। যাক, বাবা আজকের মতো রান্না শেষ করে,বের হই শেষ পর্যন্ত।

আমার শাশুড়ির রুমে গিয়ে দেখি, গোসল থেকে বের হয়েছেন। চুল ভালো মতো মনে হয় মুছেন নি,
টুপ টুপ করে পানি ঝরছেই। আমি তোয়ালে হাতে নিয়ে বলি,”আপনি এখানে বসুন। আমি ভালো করে চুল মুছে দেই, নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে”। এই বয়সেও উনি বেশ সৌখিন, সাদা ও ক্রীম, বাদামী….. এসব রং এর শাড়ি পরলেও এদের মধ্যে যে কালারের বুটি বা প্রিন্ট থাকে,ঐ রঙের
ব্লাউজ পরেন। উনি একটা ব্লাউজ, পেটিকোট এর কথা বললে, আমি ৩/৪ টা বানিয়ে দেই।

আমার সবসময় ই মনে হয়, টাকা তো ভদ্রমহিলার ছেলের ই। আমি তো আর, আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে বানিয়ে দিচ্ছি না। এসব আমি যে করি,সেটা শাহীনও ভালো মতো জানে। কিন্তু, আশ্চর্য্য জনক ব্যাপার হলো,আজ পর্যন্ত মা বা ছেলে কেউই এর জন্য খুশি বা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, কোনো বাক্য কখনো খরচ
করে নি। “অদ্ভুত, সত্যি ই বড় অদ্ভুত এই পৃথিবী”
এ কথা বিড়বিড় করে বলতে বলতে গোসল করার জন্য আমি ওয়াশরুমে পা বাড়াই”।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here