দাম্পত্য সুখ (৪র্থ পর্ব)

0
173

#দাম্পত্য সুখ (৪র্থ পর্ব)
#লাকি রশীদ

আমি তো সবসময় ই এমন কি এখনো, রাহি কে ছোট ই ভাবি। সে ই রাহি কখন এতো বড় হলো, ভাবনা চিন্তা এতো ম্যাচিউরভ হলো, আমি মা হয়ে ও বুঝিনি। রাহির কাছে তার মামা ও নানুর অবস্থান এতো নিচে….. ভাবতেও খারাপ লাগছে।
তাই বলি,”মামা ও নানু স্বার্থপর হলে তোকে কি
মামস নিজের কাছে রাখতে পারতাম বাবা? আমি তো কোনো চাকরি করি না,তাই কোনো রোজগার নেই। ওরা না মানলে তো সমস্যা হয়ে যেতো রে।ওরাই তো খুশি খুশি তোকে এনেছে বাপ”।

রাহি তখন আমার দিকে তাকিয়ে,ডান হাতটা ধরে
হেসে বলল,”আচ্ছা মামস, তুমি কোন ধাতুতে তৈরি বলো তো? মামা ও নানু মিলে তোমাকে এতো যন্ত্রণা দেয়, তবুও তুমি তাদের পক্ষে মিথ্যা
মিথ্যি সাফাই দিচ্ছ। আমি ক্লাশ নাইনে থাকতে একদিন শুনি,নানু মামাকে বলছে,”কোকিলের ছা
কোকিলের ছা ই। তোর বৌর রাহির প্রতি আহ্লাদ
দেখলে মনে হয় যেন, নিজের পেটের ছেলে”। তখন মামা বলছে,”দেখো মা, তুমি নদীর সামনে কখনো এসব বলতে যেও না। রাহির নামে কিছু শূনলে ও পাগল হয়ে যায়”। আমি এসএসসি পর
কয়েকদিন ভয়ে ভয়ে ছিলাম, নানুর বুদ্ধিতে মামা
যদি হঠাৎ বলে,”রাহি বড় হয়ে গেছে, এখন ওকে
ওর বাবার কাছে পাঠিয়ে দাও”।

আমি মানুষ হিসেবে মোটেও নরম সরম,পুতু পুতু টাইপ নই। রাগ হলে, দুঃখ পেলে তেজে ফেটে পড়ি, কান্নাকাটি আমার আসে না। কিন্তু, এখন ঘুর্ণির মতো প্রচন্ড বেগে, একটা জমানো কান্না যেন বুকের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে বলি,”আমি মরে গেলে, তুই আমাকে ছেড়ে যাবি। এর আগে কে তোকে যেতে বলবে?
উল্টো পাল্টা চিন্তা করে, মনখারাপ করবি না তো”। সাথে সাথে দেখি বন্যা এসে বলছে,”তোমরা
এখানে? দাদু মাকে খুঁজে দিতে বলছে”। রাহি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”নানু তোমাকে ভীষণ মিস্ করছে মামস। এতোক্ষণ ধরে কাউকে বকা
দিতে পারছেনা, অস্থির অস্থির লাগছে মনে হয়”। আমি তার মাথায় হালকা চাটি মেরে বলি,”পাজি
ছেলে, চল্ একসাথে ভেতরে যাই”।

ভেতরে ঢুকতেই দেখি,রাহির বাবা এসে আমাকে
বলছেন,”ভাবী কষ্ট করে একটু আসবেন? আমার
এক কলিগের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। রাহি তুমিও এসো”। সিটিং রুমে বসা সেই মহিলা কে বলতেই, উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,”আপনাকে দেখার অনেক শখ ছিল আপু। আপনার হার্ট টা অনেক নির্মল, পরিস্কার ও
মমতায় ভরা। এরকম মানুষ পেলে, আমি একটু ছুঁয়ে দেখতে চাই”। আমি বিব্রত বোধ করে চেয়ে দেখি,লারা আপু, উনার স্বামী ও শাহীন সহ আরো অনেকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

সুযোগ পেয়ে বলে ফেলি,”আপনি শুধু শুধু আমাকে এতো বড় কিছু ভাবছেন। আমি আসলে তেমন কিছু ই না। না আপনাদের মতো কর্পোরেট জব করি, না ফ্লুয়েন্টলি ইংলিশে কথা বলতে পারি, না আমি খুব সুন্দর ফিগার ও স্কীনের অধিকারী। মানে এককথায় দাঁড়ালো “গুড ফর নাথিং”। উনি বললেন,”আপনার যা আছে, আমাদের সবার সব কিছু মিলিয়েও তা পাত্তা পাবে না”। পার্স থেকে কার্ড বের করে বললেন, “আমার নাম ক্যামেলিয়া। বাসার ঠিকানা কার্ডে দেয়া আছে। যদি একদিন পদধুলি দেন, খুব খুশি হবো”। শাহীনের অবাক হয়ে হা হয়ে যাওয়া, দুই চোখের সামনে রাহিকে নিয়ে বেরিয়ে যাই।

বের হয়ে রাহি কে বলি,”চল্ চল্ তোর নানু আজ
আমাকে কি যে করবেন”। আমার শাশুড়ি গল্প করছিলেন কিন্তু আমাকে দেখে ই বললেন,”কি
ব্যাপার বৌমা? আমাকে যে সেই কখন বসিয়ে রেখে গেলে এখানে,আর তোমার পাত্তাই নেই। তোমার আর বুদ্ধিসুুদ্ধি জীবনেও হবে না”। এবার আমার ননদ বলছে,”অনেক হয়েছে মা। সত্যি ই
কোনো কাজে ভাবীকে ডাকলে বলে ফেলো। শুধু শুধু চিৎকার দিও না”। আমার শাশুড়ি এবার আমার ননদের শাশুড়ি কে বলছেন,”দেখেন বেয়ান কি অবস্থা !!! বুড়ো মার যে অসুবিধা হচ্ছে সেটার চিন্তা নাই, ভাবীকে কিছু বললো কিনা….. সে জন্য অস্থির”। আমার ছোট ননদ চিরদিনের ই ঠোটকাটা, বলল,”শুনো মা, আমার শাশুড়ি কে এসব বলে কোনো লাভ নেই। তিনি তোমার মতো না, বৌকে মেয়ের চেয়েও ভালবাসেন। বিয়ের পর থেকে এতো ভুল করেও, আমি একদিনও বকা শুনিনি”। এতো সরাসরি কথায় সবার উপস্থিতি তেও, অদ্ভুত এক নিঃশব্দতা যেন এখানে নেমে এসেছে।

আমার দিকে তাকিয়ে এবার আমার শাশুড়ি বললেন,”আমার খাওয়ার আগের ঔষধ দাও বৌমা”। আমার পার্স থেকে উনার ঔষধ ও পানি
দিয়ে, উনার পাশের চেয়ারে এখন আমিও বসে পড়লাম। ভদ্রলোক যেন বিয়েবাড়ির ভোজের আয়োজন করেছেন।

আমার মা, বাবা ও ভাইয়েরও দাওয়াত ছিল আজকে। বাবার শরীর টা ক’দিন ধরে ভালো যাচ্ছে না বলে,মাও আসেনি। ভাইয়ের আবার হসপিটালে নাইট ডিউটি। তাই, কেউ আসেনি।রাহির যিনি ষ্টেপ মাদার, তিনি মনে হয় আমাদের সাথে কথা বলতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এতো বছরের মধ্যে,প্রথম ২/৩ বার শুধু কথা হয়েছিল। আজকে দেখি তিনি নিজে এসে আমাকে ও আমার শাশুড়ি কে সার্ভ করছেন।এর
পরে আবার রাহির বাবা এসে আমাকে, আমার ননদ ও ওর শাশুড়ি, আমার শাশুড়ি সবাইকে এত
ইম্পোর্টেন্স দিচ্ছেন…. সবাই ফিরে ফিরে দেখছে।

খাবার পর আরেক ঘটনা, মাঝারি সাইজের ১২টা
সসপ্যানে,৬ আইটেমের তরকারি ডাবল করে দেয়া। ৬টা আমার বাবার বাসার,৬টা আমাদের। আমি বলি,”আবার আমাদের জন্য কেন? আমরা তো খেয়েই গেলাম। হেসে বললেন,”কালকে আবার খাবেন। আপনার বাবার বাসার ঠিকানা দিলে,ড্রাইভার গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসতে পারত”।
আমি হেসে বলি,”আমি কালকে সকালে যাচ্ছি, নিয়ে যাবো। শুধু শুধু রাতের বেলা আর ঝামেলা করবেন কেন”?

আসার সময় গাড়িতে আমার শাশুড়ি বলছেন,
” রাহির বাবার আবার সবটাতেই বাড়াবাড়ি। এত
খাবার দেয়ার কোনো মানে আছে”? আমি বুঝতে পারছি, আমার বাবার বাসার জন্য দেয়ায়, উনার আসল ক্ষোভ। রাহি জবাবে কি বলতে যাচ্ছিল, আমি চোখের ইশারায় কথা বলতে বারণ করি। কিন্তু, রাফি তো আর রাফি ই। সে হেসে বলে,”বড়
ফুপা আদর করে আমাদের জন্য,নানুদের জন্য
খাবার দিয়েছেন। তোমার ভালো না লাগলে,খেও না…. ব্যস হয়ে গেল। আমাদের এসব খাবার ভালো লাগে, আমরা খাবো”। শাহীন যেন কোনো
গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত, কোনো কথা ই বলছে না, ওর আবার কি হলো ভাবছি।

বাসায় এসে শাশুড়ির বাকি ঔষধ খাইয়ে,ঝটপট মশারী টাঙিয়ে দেই। পানি,পান,টুথপিক,ভিক্স…. সবকিছু সামনে গুছিয়ে দিলাম। শাওয়ার নিতে হবে, কিন্তু তার আগে এতো টা সসপ্যান কিভাবে কি করবো? রাফি কে বলতেই,রাহিও চলে আসে। আমাদের কথা শুনে দেখি শাহীনও দন্ডায়মান।
ও বুদ্ধি দিল, আগে দেখো ২ ডিপফ্রীজের খালি জায়গায় কয়টা সসপ্যান ঢুকে। সবগুলোর ঢাকনা
আছে,তাই সমস্যা নেই। আমি ফ্রীজের ডোর ধরে আছি আর রাফি ভেতরে ঢুকাচ্ছে। ১০ টা হয়ে গেছে,কারণ বিশাল ২ ফ্রীজের অনেক টাই জায়গা খালি ছিল। বাকি দুটো তে বীফের কারি ছিল, রাফি কে বললাম চুলায় নিয়ে বসাতে। ভালো করে গরম করে,ষ্ট্যান্ড দিয়ে ডাইনিং টেবিলে রেখে দিলাম। তাও ভালো, শাহীনের বুদ্ধি তে ফ্রীজে রাখায় কষ্ট কমে গেছে।

শাওয়ার নিয়ে এসে শোবো, হঠাৎ মনে হলো চুলা
বন্ধ করলাম কি না। অনেক সময় আমি,বন্ধ করেছি কি না,এটা ভুলে যাই। উঠে বসেছি দেখে
শাহীন বলছে,”কি ব্যাপার”? আমি বলতে ই বলল,
“তুমি শুয়ে পড়ো, আমি দেখছি”। আমি তো অবাক,সূর্য্য আজ কোন দিকে উঠেছে? দেখে এসে সেও শুয়ে পড়ে, আমাকে অবাক হয়ে বলছে,”আজকে যে ভদ্রমহিলা তোমার সাথে পরিচিত হলেন, তিনি রাহির বাবা যে ফাইন্যান্স কোম্পানিতে জব করে সে কোম্পানির ডিএমডি। বুঝতে পারছো কতো পাওয়ারফুল লোক এরা”? আমিও অবাক হয়ে বলি,”তো?এসব আমি বুঝে কি করবো? পাওয়ার ফুল হলেই বা আমার কি”?
সে মাথা চুলকে বলে, “তোমাকে লোকেরা এতো ভালবাসে ও শ্রদ্ধা করে দেখে, আজকে আমি সত্যিই বিস্মিত নদী”। আমি বলি,”কি আর করবে,একটু কষ্ট করে সহ্য করে ফেলো”। হেসে বলছে,”তোমার শুধু বাঁকা বাঁকা কথা। এই একটু ফিরো না”। আমি বলি,”এসব বলে আজ লাভ হবে না, ঘুমিয়ে পড়ো তো”। তবুও ঘ্যানঘ্যান করছে,”কিচ্ছু করবো না তো। শুধু আগের মতো বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ব”।

বুকের একেবারে ভেতরের তারে যেন টান পড়েছে,
“কি বললে তুমি”? মৃদু স্বরে বলল,”বললাম আগের মতো বুকে নিয়ে ঘুমাবো”। কোথায় যায় আমার ঘুম, চিবিয়ে চিবিয়ে বলি,”কি মনে করো? আমি কি তোমার তুড়ি মারা কবুতর না কি? ইচ্ছে হলো, তুড়ি মেরে বুকে নিয়ে ঘুমালাম। ইচ্ছে হলো না, বছরের পর বছর তুড়ি মেরে এসব ‘বুকে নিয়ে ঘুমানো’ ভুলে গেলাম। শুধু শরীরের খিদে মিটলেই হলো। সকালে উঠে আমি বাবার ওখানে যাবো। তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। দয়া করে এখন ঘুমাও”।

সাহস করে আর কিছু বলেনি। আসলে বিয়ের পরের এক বছর, আমি ওর বুকেই ঘুমাতাম। এবং ভীষণ ইনজয় করতাম। এটা সেও জানতো। আস্তে আস্তে ছেলে হলো, এখন দেখি এভাবে ঘুমানোর কথা বলছে না। হ্যাংলামি আমার দ্বারা হয় না। “বুকে না ঘুমালে কি মানুষ মরে যায় না কি”…. এটা মনে করেই এতো বছর চলে গেল। এখন মানুষ ভালো পাচ্ছে দেখে, আবার বুকে নিতে আসছে। এরা এতো শক্ত হৃদয় নিয়ে ঘুরে কেন? একটু আবেগ দেখালে কি, পৃথিবী ভেসে যেতো? শুধু চিনে বৌকে কিভাবে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা যায়।

গতকাল রাহির বাবার গাড়িতে করে যাওয়া আসায়,ড্রাইভার কে বিকেলে ই ছেড়ে দেয়া হয়। আমি বলেছিলাম, আজকে তাড়াতাড়ি যাচ্ছ,কাল
কিন্তু সকাল আটটায় আসতে হবে। আমাকে তুমি
সকালে ই আমার বাবার বাসায় পৌঁছিয়ে দিবে। দেরি করোনা যেন”। চা বানিয়ে শাহীন কে ডেকে তুলি। ছেলেরা সারা রাত পড়ে, ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে। বন্যা তো ছুটির দিনে ১০ টার আগে উঠবে না। তাই, আমরা ৩ জনের শুধু চা
বানাই।

চা খেতে খেতে শাহীন কে বলি,”শোনো যথেষ্ট তরকারি আছে। বীফ কারি ঠান্ডা হওয়ায়
ফ্রীজের নরমাল এ রাখা আছে। তাছাড়া,ডীপের
মাছ ভুনা, চিকেন রোস্ট বের করে সিংকের উপর
রেখেছি। যার যে টা ভালো লাগে, নিয়ে মাইক্রো
ওয়েভে যেন গরম করে খায় দুপুরে। তারপর, মনে করে আবার ফ্রীজে ঢুকাবে। বুয়া আসলে কিন্তূ বলবে,ভাত রেঁধে দিয়ে যায় যেন। আর, ছেলেরা যেন কোনো অবস্থাতেই চুলার কাছে না যায়। আমাকে দিয়ে এলে,ড্রাইভার কে পাঠিয়ে, পাড়ার মোড়ের দোকান থেকে পরোটা আর ডালভাজি
আনাবে নাস্তার জন্য। মায়ের ঔষধের বক্সে প্রেসক্রিপশন আছে, এতে নিয়মও লেখা আছে”।

শাহীন এবার স্পষ্টতই বিরক্ত,”এতো কিছু মনে রাখবো কি করে? দাঁড়াও লিখে নেই”। আমার শাশুড়ি এ পর্যায়ে বললেন,”তা তুমি নাস্তাটা বানিয়ে খাইয়ে যাও না কেন”? আমি বলি,”একটা
দিনের ছুটিতে আবার রান্না করবো কেন? একদিন সে সামাল দিক”। বলতে বলতে বুয়া এসে গেছে। পুরনো ২টা উড়না এনে, সসপ্যান গুলো বেঁধে দিতে বলি। গাড়ির ভ্যানে তুলে দিয়ে এসে বুয়া বলছে,”আইজকা তুমি নাই, সবকিছু খাইল্যা খাইল্যা লাগব”। সাথে সাথে আমার শাশুড়ি চেঁচিয়ে উঠলেন,”তোর এতো কথা বলা লাগবে না। কাজ শুরু কর গিয়ে”। আমি তাকে দাড় করিয়ে বলি,”এখানে বিস্কুট আছে। চা বানিয়ে বিস্কুট দিয়ে খেয়ে, কাজে লেগে যাও”।

পার্স আনতে রুমে যাই। শাহীনও পিছুপিছু আসে।
আমি দেখি আমাকে টাকার কথা আর বলেই না।
কি সুন্দর !!! বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসে হাজার টাকা খরচ করে নাস্তা করে,আর ৩ মাসে বৌ শশুর বাড়ী যাবে….তাতে টাকা বের হয় না। আমি
বলি,”কি ব্যাপার ঘর করি তোমার,আর টাকা কি
পাশের বাসার ভদ্রলোকের কাছে চাইবো না কি”?
নিরুত্তাপ গলায় বলে,”ভুলে গেছিলাম,এই নাও ১
হাজার টাকা”। আমি বলি,”আমার বেলা তোমার
টাকা বের হয় না কেন? আরো ১ হাজার দাও”। দিচ্ছে আর বলছে,”তুমি তো কখনো খুজো না,
আজ কি ব্যাপার”? আমি হেসে বলি,”আজ নদী একটু বুদ্ধিমতী হয়েছে তাই। চলি”। এসে দেখি আমার শাশুড়ি, বাংলা ৫ এর মতো মুখ করে বসে আছেন। আমি পাত্তা দেইনা। “আসি মা” বলে
গাড়িতে উঠে পড়লাম।

সরকারি ছুটির দিন, তারপর আবার সকালবেলা।ঢাকার ব্যাস্ততম রাস্তায় অন্যদিনের তুলনায় জ্যাম
অনেক কম। নিজেকে বেশ মুক্ত পাখির মতো মনে হচ্ছিল। অর্ধেক পথ গিয়ে মনে হলো, বাবা মার জন্য কিছু তো কিনলাম না। এই সকালে তো কিছু
পাবোও না। থাক্ তাহলে, আমার ই তো বাবা মা, কিছু মনে করবে না। দিনে ফোন দিয়ে মাকে বলে
ছিলাম আসবো। মনে হচ্ছে প্রিজন সেল ভেঙ্গে বা সেল থেকে পালিয়ে, নদী আজ তার বাবা মার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। কান্না তো আমার আসে না,বুকটা ই শুধু হু হু করে বিলাপ করছে যেন।

গাড়ি হর্ণ দিতেই দেখি আনুর মা বুয়া গেট খুলে দিচ্ছে। ভেতরে ঢুকে গাড়ি থেকে নামতেই জড়িয়ে
ধরে বলছে,”ভালো আছো বুজান”? বললাম,”হ্যা,
তুমি ভালো”? ড্রাইভার কে সবকিছু নামিয়ে দিয়ে, চা খেয়ে যেতে বললাম। বাবা দেখি ইস্ত্রি করা ধোপদুরস্ত সাদা ফতুয়া পরে বসে আছে। মায়ের কারবার, নিশ্চয়ই জোর করে বাবাকে পরিয়েছে।
শরীর ভালো থাকে না বলে, বাবা নরম, পুরনো কাপড় পরতে ভালবাসে। হার্টের সমস্যা, হঠাৎ বুক
ধড়ফড় করে। একবার হার্ট এ্যাটাকও হয়েছে।

বাবা দুহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছে,”এই সামান্য জায়গা পেরোতে এতো দিন লাগলো মা? বাবা তো এ ক’দিনে মরেও যেতে পারতাম”। বাবার কান্নার সাথে সাথে,মাও এসে যোগ দিয়েছে। আমার হৃদয় তো আল্লাহ পৃথিবীর
সেরা কঠিন বস্তু দিয়ে গড়েছেন,তাই ভেতর টা ফেটে গেলেও চোখ দুটি খটখটে। পরিবেশ হালকা করার মানসে বলে উঠি,” আমার অনেক বড় কপাল বাবা। আমাকে কিভাবে পাবে,আমার
শাশুড়ি যে আমাকে চোখে হারায়। স্বামী নিজের সব দ্বায়িত্ব আমার ঘাড়ে দিয়ে, আমাকে রাণী ভিক্টোরিয়া বানিয়ে রেখেছে। তবে,সব খেলা এক
দিন শেষ হয় বাবা। আমার টাও একদিন শেষ হবে ইনশাআল্লাহ”। মা এমনটা শুনে আঁতকে উঠে বলে,”মানে কি? তুই কি করতে চাস”? আমি হেসে বলি,”সময় ই সেটা বলে দিবে মা। এখন কি আর জানি, আসলেই কি করতে চাই”?

আমার ছোট ভাই জোহা শব্দ শুনে উঠে এসেছে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here