কাননবালা,২১,২২

0
389

#কাননবালা,২১,২২
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ২১

অভীক অস্থির ভঙ্গিতে পায়চারি করছে ছাদের পাটাতনে। ভোরের মিহি বাতাসেও ঘেমে উঠেছে প্রশস্ত ললাট।বুকের ভিতর অজানা ভয়ে ধুকপুক করছে!তার সাথে এসব কি হচ্ছে নিজেই ভেবে পাচ্ছে না?
কখনো চুলে হাত বুলাচ্ছে , কখনো দাঁত দিয়ে নখ কাটছে কখনো বা হাতঘড়ির ডায়ালে নজর বুলাচ্ছে অস্থির দৃষ্টিতে।
একটা ছোট্ট মেসেজ যে এতটা অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়াবে কে জানতো?
“একটু ছাদে আসবেন? প্লিজ!”
এই ছোট্ট একটা মেসেজ নীতু তাকে পাঠিয়েছে। মেসেজটা পেয়েই অভীক হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে ছাদে।কিন্তু নীতু এখনো আসেনি। কিসের জন্য এই তলব অভীক জানে না। এই চৌত্রিশ বছর বয়সে এসে টগবগে যুবকের মত উত্তেজনায় অভীকের হাত পা ঘামছে!কি আশ্চর্য?

একটা সময় কারো পায়ের শব্দে অভীকের উতপ্ত স্নায়ু অবশ হয়ে এলো।ছাদের রেলিং ঘেসে দাঁড়িয়ে পরলো ঠেস দিয়ে। কচি পাতা রঙের জামা,গাঢ় নীল ওড়নাটা বুকের কাছে ছড়িয়ে পরেছে,কোমড় ছাপিয়ে পড়া লম্বা চুল ছেড়ে দেয়া হয়েছে বড় যত্নে, সাজ সজ্জাহীন স্নিগ্ধ মুখশ্রীতে একটুকরো কোমল মৃদু হাসি লেপ্টে রয়েছে। নীতু হাসলো।
মৃদু হাসিতেই ফোলা গাল দুটো আরো একটু ফুলে উঠলো।নীতুর হাতে দুটো ধূমায়িত কফির মগ।মুখের হাসি যেন চোখেও ঝিলিক দিচ্ছে! অভীক দৃষ্টি নত করে ফেললো।
নীতুর দ্বিধাহীন হাস্যজ্জোল অবয়ব দেখে অভীকের সকল অস্থিরতা, উত্তেজনা নিমিষেই দূর হয়ে আঁখি জুড়ে একই সাথে মুগ্ধতা ও আফসোস দেখা দিলো।তিনবছর আগের করা কর্মকান্ডের জন্য নিজেকেই কুৎসিত কুৎসিত গালি দিতে মনে চাইলো।
কফি হাতে নীতু এগিয়ে এসে পাশে দাঁড়ালো।চোখে মুখে এখনো হাসি লেপ্টে আছে।একটা কফির মগ অভীকের দিকে বাড়িয়ে দিল বড় যত্নে,এরপরই বললো…”শুভ সকাল!”
অভীক শুভ সকাল বলতে পারলো না।সকালটা শুভ নাকি অশুভ এখনো বলতে পারছে না। নীতু নিজের কফির মগটা রেলিঙের উপর রেখে বললো,” ভোরের আকাশটা দেখেছেন? কত সুন্দর! ”
অভীক নিজেও নীতুর পাশে দাঁড়ালো।কফির মগটা স্থান পেলো নীতুর কফির মগের পাশে।দুজনেরই দৃষ্টি ভোরের আকাশের দিকে।একজনের চোখে মুগ্ধতা,আর একজনের চোখে কৌতুহল! দুটো মানুষের দূরত্ব কেবল মাঝখানে রাখা দুটি ধূমায়িত কফির মগের। এ্যাশ রঙের ট্রাউজার আর কালো গেঞ্জি পরিহিত সুদর্শন পুরুষটির দৃষ্টি এখন পাশে দাঁড়ানো কৃষ্ণবর্ণের নারীটির দিকে।যার চুলগুলো বাতাসে উড়ছে,ভোরের আকাশের স্নিগ্ধতা যার চোখে মুখে,মুখের একটাপাশ দখল করে আছে ভোরের কমলা রঙা পেলব মিঠে রোদ!
নীতু আকাশ দেখলেও অভীক দেখছিল নীতুকে।ভালো লাগছিল অভীকের!ভীষণ ভালো!বুকের মধ্য খানটায় সুপ্ত অনুভূতির আন্দোলনটা টের পাচ্ছিল ভীষণ করে!

আকাশে কমলা রঙা রোদ, নারী পুরুষ দুটি স্বত্বা পাশাপাশি দাঁড়ানো। একজন আকাশ দেখলেও আর একজন খুব যত্ন করে দেখছে পাশের রমণীটিকে।পুরো মুখস্থ, ঠুটস্থ, কন্ঠস্থ করতে চাইছে!মাঝখানে ধূমায়িত দুটো কফির মগের দূরত্ব। এই দৃশ্য যেন ক্যানভাসে আকাঁ কোন ছবি।ছেলেটা বুঝতে পারছে তার সকল অনুভূতি।মন থেকে চাইছে নিরাবতায় বুঝে নিক পাশের সঙ্গীটি সকল না বলা কথা!রমণীটির মনে কি চলছে তা কি আদৌও আমরা জানি?

একসময় নিরাবতা ভেঙে নীতু কথা বলে উঠলো।দৃষ্টি তখনও দূরের আকাশে।অভীক এক হাত পকেটে পুরে অন্য হাতে তুলে নেয় কফির মগ।মনোযোগী দৃষ্টিতে তাকায় নীতুর দিকে ।নীতুর বলা আর না বলা সকল কথা যেন গোগ্রাসে গিলে ফেলতে চায়!
নীতু শান্ত ভঙ্গিতে বলে ওঠে, “আজকে আপনাকে কিছু ব্যক্তিগত কথা বলবো। আমি সহসা নিজের কথা অন্যকে বলি না।কিন্তু আজ মনে হলো আপনার জানা উচিত। ”

অভীকের বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হলো। কি এমন কথা?
“মি.অভীক আমাদের সমাজ বড় অদ্ভুত! একটা মেয়ে কালো হয়ে জন্মালে তার বিয়ের বাজারে মূল্য থাকে না। আর মেয়েটি যদি হয় খুব সুন্দরী তবে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।মেয়েটি মোটা হলে তাকে হাতি উপাধি দেওয়া হয়।তার খাওয়া নিয়ে ওঠে নানা ধরনের কথা! আর মেয়েটা শুকনা হলে সে রোগাক্রান্ত! বাশঁপাতা!
লম্বা হলে বোধ কম,খাটো হলে কুটিল। চাকরি করে মেয়ে?তবে তো সাত ঘাঁটের পানি খাওয়া! গৃহিণী?সারাজীবন পড়াশোনা করে করলেটা কি?প্রতিবাদ করে মেয়ে?তবে তো মুখরা! চুপচাপ? তবে তো অহংকারী মেয়ে! পড়াশোনা শেষে বিয়ে করছে?নির্ঘাত কোন দোষ ছিল মেয়ের নাহলে বয়সখাটিয়ে বিয়ে হচ্ছে কেন?এছাড়াও একটা মেয়ের যে কতশত খুঁত থাকে। মেয়েরা হল শুভ্র কাপড়ের মত।দেখতে নির্মল নিষ্পাপ পবিত্র। একটু দাগেই সেই নির্মল পবিত্রতা ক্ষুন্ন হয়ে যায় সমাজের চোখে!

আমার যখন জন্ম হলো তখন বাবা আর দাদু ছাড়া কেউ খুশি হলো না।নিজের মাও মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল।দাদুর মুখে শুনেছি আমার জন্মের পর মা আঠারো দিন পর্যন্ত আমাকে কোলে নেন নি,এমনকি দুধ পানও করান নি।আমার মা দেখতে সুন্দর। তার পেটে একটা কালো মেয়ে জন্মালো তা তিনি মানতে পারলেন না।আঠারো দিন পর যখন দেখলেন দাদু, মা আমার ব্যপারে বড়ই উদাসিন।তখনই তিনি আমাকে কৌটার দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দিলেন।তিন চার ঘন্টা কান্নার পর মায়ের মন গললো।আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ছিলেন। এরপর একটা সময়ে আমার উপর মায়া পড়ে গেল। যত যাই হোক তার নারী ছেড়া ধন তো আমি!
এরপর একটু বড় হতেই বুঝতে পারলাম, আমায় নিয়ে বড্ড চিন্তে সবার।বাবার বন্ধু গোত্রের সকলে হাসতে হাসতে বলতো,” তোর নীতুকে বিয়ে দিতে তো অনেক টাকা গচ্চা যাবে।তাই বুঝি আমাদের না খায়িয়ে টাকা জমাচ্ছিস?”
ছোট হলেও আমি বুঝতাম,বাবা ব্যথিত হতেন। আমি কেঁদে ফেলতাম।বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বলতো,কাঁদছিস কেন রে?তোকে তো আমি বিয়েই দিবো না।তুই বড় চাকরি করবি,তারপর বাপ মেয়ে দুজনে বিন্দাস থাকবো।”
আমি সেই ঠিক ছোট্ট বেলায় বুঝে গিয়েছিলাম,আমার কালো গায়ের রঙ ঢাকতে আমায় একটা চাকরি করতে হবে!

এরপরে মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেতাম।সহপাঠীদের মায়েরা জোহুরীর চোখে পর্যবেক্ষণ করতো আমায়।কন্ঠে একরাশ আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইতো মায়ের কাছে,”আপনারা দুজনেই তো সুন্দর ভাবি, নীতু এত কালো হলো কেন?” কি সহজ প্রশ্ন!সুন্দরের ডেফিনেশন তাদের কাছে ফর্সা রঙ! তাদের করা প্রশ্নে মা বিব্রত,লজ্জিত হত!মায়ের চোখে আমার জন্য একরাশ চিন্তা খেলা করতো। ওই সব আন্টিরাই আফসোসের সুরে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতো,” চিন্তা করবেন না ভাবি।নীতু কালো হয়েছে তো কি হয়েছে? পড়াশোনাটা ভালো মত করাবেন,তাহলেই লাইফ সেট!” কালো মেয়েদের বিয়ের বাজারে একটা চাকরি থাকা বাধ্যতামূলক।তাদের মতে, টাকা ও যোগ্যতায় নির্ভর করে বিয়ে নামক বন্ধন!

কিশোরী বয়সে কত মেয়ে প্রেম পত্র পায়। আমি পায়নি।একবার এক ছেলে একটা কাগজের দলা ছুড়ে মারলো। তোমাকে আমার ভীষণ পছন্দ, এই একটা বাক্য লেখা।ছেলেটিকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম,আমাকে তোমার পছন্দ? ছেলেটি কি করলো জানেন? নাক সিঁটকালো।বলল,”তোমাকে কোন দুঃখে পছন্দ করবো?নেহাৎই ভুল করে তোমার কাছে পড়েছে চিঠিটা,তাতেই নিজেকে নায়িকা ভাবছো?”
ভুল সম্পর্ক,ভুল সময় সবকিছু যেন আমার জন্যই বরাদ্দ ছিল।
আমার চোখে জল এসে পড়লো।সহপাঠীরা হাসাহাসি শুরু করলো।একসময় আমাকে কাঁদতে দেখে তাদের করুণা হলো। দুয়েক কথায় স্বান্তনা দিলো।

সকল পারিবারিক অনুষ্ঠানে দেখেছি মা আমাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত থাকতো।আর ভাই বোনেরা কিভাবে সাজলো,কি খেলো,কি করলো তাতে তার কোন মাথা ব্যথা না থাকলেও আমার জন্য চিন্তা ছিল।কি ভাবছেন ভালোবাসে বেশি তাই এমন করে? না। আমাকে সবার কাছে মা পারফেক্ট দেখাতে চাইতো।অথচ কোন মানুষই শতভাগ পারফেক্ট নয়।আমি কি পোশাক পড়লাম তাতে মানাবে তো? লোকে হাসবে না তো?আমি ভদ্রস্থ হয়ে আছি তো?লোকে নিন্দে করছে না তো? আমার আচরণ, আমার খাওয়া, আমার হাসি, কান্না সবকিছু নির্ভর করতো।লোকে কি বলবে বা ভাববে তার উপরে।
ছোটবেলায় মা সব ধরনের ঘরের কাজ আমাকে শিখিয়েছে।পড়াশোনার ফাঁকে রান্না, সেলাই,সংসারের সকল খুঁটিনাটি কাজ মা শিখাতো।অথচ আমার অন্য বোনেরা রান্নাঘরের চৌকাঠও মাড়াতো না।এত কিছু কেন করতো জানেন?কালো রঙটা যেন ছাপিয়ে যায় আমার গুণের ভারে।
পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে সব কাজিনরা যখন আনন্দ-হৈচৈ করতো,মা তখন আমাকে সবার আপ্যায়নের কাজে ব্যস্ত রাখতো।মুরুব্বিদের কাছাকাছি থাকতে হতো আমাকে। সবাইকে দেখাতো চাইতো, আমি কালো হলে কি হবে? ঘরসংসারের কাজে আমি পারফেক্ট।
চাচাতো বোনের বিয়ে ছিল।হলুদের দিন হলুদ শাড়ি পড়লাম।কালো গায়ে ক্যাটক্যাটে হলুদ রঙ।কি বিচ্ছিরি তাই না?কিন্তু আমার নিজেকে ভালো লাগছিল।কাজিনদের ঠোঁট টিপে হাসতে দেখে আমার মায়ের ভালো লাগলো না।ক্যাটক্যাটে রঙ পড়ে কেন লোক হাসালাম? এরজন্য মায়ের হাতে গোটা দুয়েক চড় থাপ্পড়ও খেলাম।আত্মীয় মহলের দয়া হলো।কাজিনরা টেনে নিয়ে আমার সাথে ছবি তোলা শুরু করলো।অথচ আমি স্পষ্ট ওদের চোখে আমার জন্য করুণা দেখতে পেয়েছিলাম!

মি.অভীক ছোট বেলা থেকে আমি সেজেছি অন্যের জন্য। আমার হাসি কান্না দুটোই ছিল অন্যের জন্য। মানুষের চোখে নিজেকে পারফেক্ট সাজাতে সাজাতে একসময় নিজের চোখেই ইমপারফাক্ট হয়ে পড়লাম! পিঠ দেয়ালে ঠেকে পড়েছিল।আয়নায় নিজেকে আবিষ্কার করতাম,অন্য নীতুকে!যাকে গড়ে পিটে মানুষ করা হয়েছে অন্যের রুচিতে!আমার এই জীবনে সমালোচনা, কটাক্ষ, অবহেলা অনেক সয়েছি।তাতে বিন্দু মাত্র আফসোস নেই আমার।যতদিন বেঁচে থাকবো সইবো।কিন্তু করুণা বা দয়া বলুন সেটা আমি নিতে পারবো না।”

নীতু থামলো। অভীকের নিজেকে ধিক্কার দিতে মনে চাইলো।সে কি নিজেও একই দোষে দোষী নয়? নীতুর জীবনে ঘটা কিছু অংশ জেনেই অভীকের খারাপ লাগলো। আরো কত না বলা কথা যে মেয়েটা চেপে রেখেছে কে জানে?অভীক স্বীকার করতে বাধ্য হলো,মেয়েদের সকল গুণের মধ্যে অন্যতম গুণটি হলো,খুচরো পয়সার মত মেয়েরা খুব যত্নে মনের মধ্যে কথা জমিয়ে রাখতে জানে!খুচরো পয়সার মত খুচরো খুচরো কথা!যা অতি প্রয়োজন ছাড়া মেয়েরা খরচ করে না!
কফি ঠান্ডা হয়েছে অনেক্ক্ষণ। অভীক কপাল কুঁচকে এতক্ষণে বললো,”এইসব কথা আমায় বলার কারণ,মিস নীতু?”
অভীক অবশ্য কারণ জানে তবুও বললো।নীতু পুনরায় হাসলো।পদ্মদিঘীর মত চোখদুটোও হেসে উঠলো সাথে।তারপর বললো,”অবহেলা,তাচ্ছিল্য মেনে নিতে পারি কিন্তু কারো করুণার পাত্রী হতে বড্ড আঁতে লাগে মি.অভীক! ”

অভীক আহত চোখে তাকালো।নীতু তাকে বুঝতে ভুল করেছে।মেয়েটা কি মনে করেছে? তাকে আমি করুণা করছি?এত বড় ভুল কি করে বুঝলো? ভুল ভাঙাবার সময় পেল না অভীক তার আগেই নীতু বললো,”আসছি।”

অভীকের কন্ঠে অনুযোগ ঝড়ে পড়লো, “চলে যাচ্ছেন?”

নীতু দাঁড়িয়ে পড়লো। চোখে মুখে দুষ্টুমি ফুটিয়ে বললো, “এখন যে যেতেই হবে।অফিসের বসটা বুঝলেন, বড়ই খ্যাচড়া।সময় মত না পৌছালে ডিপ্লোমেটিক কথা শুনায়।”

অভীক বড় বড় চোখে তাকিয়ে বললো,”কি?” চিৎকারের মত শুনালো অভীকের কন্ঠ।

নীতু মাথা দুলিয়ে ঠোঁট টিপে হাসলো।

অভীক কোমড়ে দুই হাত রেখে বললো,”বসের নিন্দে করা হচ্ছে? তাও আমার কাছে?”

নীতু যেতে যেতে বললো,”প্রতিবেশীর ধর্ম পালন করলাম,এতে দোষের কিছু নেই।এক প্রতিবেশী আর এক প্রতিবেশীর কাছে লোকের নিন্দে করতেই পারে।”

অভীকের সেদিনের বলা কথা নীতু ঘুরিয়ে পেচিয়ে অভীককেই বলে গেলো।

নীতু চলে গেলো।অভীকের কপালে ভাঁজ পড়লো।নীতুর ভুল কি করে ভাঙানো যায় সেই চিন্তা করতে লাগলো। মনে মনে করে বসলো, কঠিন এক প্রতিজ্ঞা!
নীতু জানতেও পারলো না তার অগোচরে তাকে নিয়েই কঠিন এক প্রতিজ্ঞা করে বসেছে অভীক নামক ব্যক্তিটা!

চলবে,

#কাননবালা!
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ২২

মধ্য দুপুরের সময় নিখিল এসে হাজির হলো নীতুর অফিসে।নীতু নিজের ডেস্কে কাজ করছিল।হুট করে ভাইয়াকে অফিসে দেখে নীতু চমকালো।বাবার কিছু হলো না তো?এই চিন্তায় কলিজা ধ্বক করে উঠলো।নিখিল নীতুর আতংকিত চাহনি দেখে বললো,”কারো কিছু হয়নি নীতু।সবাই ভালো আছে।অফিসের কাজে ঢাকা আসলাম।তাই ভাবলাম তোর সাথে দেখা করে যাই।”

নীতু মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,”খুব ভালো করেছো ভাইয়া।এবার বলো কেমন আছে বাড়ির সবাই?

নিখিল ভালো আছে বলতেই নীতু ব্যস্ত স্বরে বললো,”দুপুরের খাবার খেয়েছো ভাইয়া?”

নিখিল হোটেলের খাবার খেতে পারে না।রুটি কলা কিনে খেয়েছে।তাই মিথ্যে করে বললো,”খেয়েছি।”

নীতু গভীর দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো। ফের উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো,”তুমি একটু বসো ভাইয়া।আমি আসছি।”

নীতু অভীকের কেবিনে নক করে প্রবেশ করে দেখলো অভীক আর পলাশ বসে কি একটা প্রজেক্ট নিয়ে ডিসকাস করছে।অভীক এই সময়ে নীতুকে দেখে বিরক্ত হলো।চোখ মুখ খিচিয়ে বললো,” কোন প্রবলেম মিস নীতু? ”

নীতু চোখের দৃষ্টিতে অনুনয় করে বললো,”স্যার ইভেনিং শিফটে আমার ছুটির প্রয়োজন ছিল।প্রমিজ নেক্সট ডে আমি আজকের সময়টা এক্সট্রা করে পুষিয়ে দিবো।”

পলাশ আর অভীক দুজনেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো।অভীক কিছু বলার পূর্বেই পলাশ বলে উঠলো,”তোমার শরীর ঠিক আছে তো নীতু?”

নীতু পলাশের করা প্রশ্নে বিরক্ত হলো।এই বেটার অতিরিক্ত আহ্লাদে অভীক খেপে গিয়ে ছুটি ক্যানসেল করে দিতে পারে।পলাশকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে অভীক নীতুর দিকে শীতল চাহনিতে তাকিয়ে বললো,”হটাৎ এত ইমার্জেন্সী?”

“স্যার ভাইয়া এসেছে।আবার আজই চলে যাবে। তাই…..”

নীতু কথা শেষ করার আগেই পলাশ অতি দ্রুত বলে উঠলো, “নীতু তোমার ভাই এসেছে আগে বলবে না।তার সাথে আলাপ করতাম।”
নীতু মনে মনে ফের নিজের কপাল চাপড়ালো। অভীক গরম দৃষ্টিতে পলাশের দিকে তাকালো।পলাশ চুপ হয়ে গেলো। নীতুর দিকে না তাকিয়েই বললো,”আপনি এখন আসতে পারেন মিস নীতু। আপনার ছুটি মঞ্জুর করা হলো।”

নীতু ধন্যবাদ বলেই কাচের দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসলো।নিখিলকে নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে একটা সিএনজিতে উঠে পড়লো।নিখিলের হাজার বারণ কিছুই শুনলো না।গাড়িতে বসেই সাথিকে ফ্রিজ থেকে মাছ মুরগী বের করে ভিজিয়ে রাখতে বললো।

নিখিল শুধু অবাক চোখে দেখলো তার শান্ত বোনটা কেমন চঞ্চল হরিণীর মত ছুটছে।অফিসের ড্রেস চেঞ্জ না করেই চুলগুলো হাত খোঁপা করে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লো।কিছুক্ষণ পরেই নিখিলকে শুকনো খাবার সামনে দিয়ে রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।কাঁচকি মাছের চড়চড়ি, মুরগী ভূনা,ডিম বেগুন ভাজি করলো।সবটাই নিখিল দেখলো।

খেতে বসে নিখিলের চোখে পানি এসে গেলো।নীতু খুব যত্নের সাথে ভাইয়ের জন্য খাবার পরিবেশন করলো।নিখিলের মনে হলে মায়ের পরে তার এই বোনটার যত্নে কেমন যেন মা মা গন্ধ আসে!অথচ সব বোনের মধ্যে নিখিল সবসময় নীতুর বেলাই ভীষণ উদাসীন ছিল, নীতুকেই সবচেয়ে বেশি অবহেলা করেছে। অন্যমনষ্কতার কারণে ভাতের পাতে নিখিল হুট করে বিষম খেলো।নীতু দিগবিদিক ভুলে নিখিলের মাথায় পিঠে চাপড় দিলো।পানির গ্লাসটা ধরে বসলো মুখের কাছে।উদ্বিগ্ন স্বরে বলে উঠলো,”ভাতের পাতে এত কিসের তাড়া তোমার ভাইয়া?”

নিখিল গাঢ় অপরাধবোধে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো।ভাতের পাতেই হু হু করে কেঁদে দিলো। ভাইকে ছোটো বাচ্চাদের মত কাঁদতে দেখে নীতু মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে রইলো!

**********

সময়টা যেন দ্রুতই গড়িয়ে যাচ্ছে।দেখতে দেখতে এক মাস কেটে গেলো।সেতুর পরিক্ষা শেষ হয়েছে।রাবেয়া বেগম বার বার ফোন করে ঢাকা যেতে বলছেন।সেতু নিজের সিদ্ধান্তে দ্বিধান্বিত! তাজ সেদিন স্ল্যাং ইউজ করে তার সাথে কথা বলেছে।সেতু সে রাতে সারা রাত কাঁদলো।শেষ রাতের দিকে তাজ ছোট্ট একটা টেক্সট পাঠালো,”সরি!”

সেই পর্যন্তই, আর তাজ কোন কল দেয়নি সেতুকে।সেতু নিজেও কোন কল দেয়নি। যে মানুষটার কাছে সেতুর থাকা আর না থাকায় কোন মাথা ব্যথা নেই,তার কাছে সেতুর ফিরতে ইচ্ছা হলো না।
কিন্তু মন নামক বেহায়া স্বত্বাটা যেন সেই সিদ্ধান্ত মানতে ঘোর বিরোধিতা করছে।সেতু যখন নিজের টালমাটাল মন নিয়ে অস্থির ঠিক তখনই নীতু কল করে জানালো তার বাসায় ছোট একটা প্রোগ্রাম আছে। ইতু আপারা নাকি যাচ্ছে তাদের সাথে চলে আসতে।

সাথির প্রেগ্ন্যাসির সাত মাস চলছে।নীতু ঠিক করলো সাতোসা করবে।বাবা মাকে মেয়েটা কাছে পাচ্ছে না।তাই ছোট খাটো একটা আয়োজন করে সাথিকে শুভেচ্ছা জানাবে।
এই কথা জানার পর থেকেই সাথি অরবরত কেঁদে চলছে।রিপন কল করে নীতুকে অসংখ্য বার ধন্যবাদ দিয়ে ফেলেছে।নীতু যতই বলছে এটা সাথির প্রাপ্য, তবুও তারা নীতুকে ধন্যবাদ দিয়েই যাচ্ছে!

**************-
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জায়েদ,বড় আপা,বাচ্চারা ইতু মিলন,তুতুন,সেতু, শরীফুল কাকা এসে হাজির হলো।নীতু সবাইকে ভীষণ মিস করছিল।কিন্তু খুলনা যাওয়া সম্ভব নয়,অফিস আছে।তাই এই উপলক্ষে সবাইকে ডেকে নিলো।বড় আপা আর ইতু আসার পর থেকে নীতুকে জরিয়ে ধরে বসে আছে।অভিমানী বোনটার অভিমান ভাঙাবার চেষ্টা আর কি! নীতু বলে উঠলো,”মা বাবাকে খুব মনে পড়ছে।”
নীতুর কথায় দু’বোন শব্দ করে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। সেতু অদূরেই দাঁড়িয়ে ছিল।নীতু দুই হাত প্রসারিত করে চোখের ইশারায় কাছে ডাকলো।সেতু ছোট্ট বিড়াল ছানার মত এসে নীতুর কোলে মুখ গুজলো। জায়েদ হাই তুলতে তুলতে বললো,”মেয়েরা এত কাঁদতে পারে!বাবারে বাবা! চোখের জলে ভেসে যাওয়ার উপক্রম! ”
মিলন আর শরীফুল কাকা হেসে দিল।ইতু ফোঁস করে বলে উঠলো,”ভাইয়া আপনার ইচ্ছা হলে আপনিও কাঁদতে পারেন, আমরা মাইন্ড করবো না।”

সাথি ফোলা পেট নিয়েই তাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসলো। নীতু ধমকে উঠে বললো,”তোকে এসব করতে বলেছে কে?সারাক্ষণ ছুটাছুটি।”
সাথি মৃদু হাসলো। সেতু ব্যাঙাচির মত লাফ দিয়ে সাথির কাছে এসে বললো,”তোমাকে তো খুব কিউট লাগছে!”

সাথির চোখে পানি এসে গেলো।এই মানুষ গুলো কত সহজে তাকে আপন করে নিয়েছে।শরীফুল কাকা এসে সাথিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে কাছে বসালো।সাথি বললো,”মামা আপনাকে দুটো ধন্যবাদ দেওয়ার আছে আমার।এক রিপনের সাথে আমার বিয়ে দেবার জন্য দুই নীতু আপুর মত একটা মানুষকে আমার কাছে পাঠাবার জন্য আমার বোন করে!”
শরীফুল কাকা কেবল হাসলো।কিছু বললো না।

রাতটা কাটলো গল্প করে আর পরের দিনের প্রোগ্রামের আয়োজন সম্বন্ধে কথা বলে।

*********
অনীক এসেছে তার বউকে নিয়ে দুদিন হলো।মা আর বউয়ের সমোঝোতা করাতে।রুমি অবশ্য আসতে চায়নি।অনেক কাঠখোর পোহাতে হয়েছে তার জন্য। রুশিয়া বেগম সকাল সকাল উঠেই অভীককে ঘুম থেকে টেনে তুললো।অভীক ঘুম জড়িত কন্ঠে বললো,”উফ মা,কি করছো?ছুটির দিনেও ঘুমাতে পারবো না?”

রুশিয়া অনুরোধের স্বরে বলে,”আজ আর ঘুমাতে হবে না।পাশের ফ্লাটে গিয়ে দেখ তাদের কিছু লাগবে কিনা?মেয়েটা একা একা সব করছে।”

মায়ের কথা কানে যেতেই অভীক তড়িৎ গতিতে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে ওয়াশরুমে দৌড় দেয়।ছেলের এহেন আচরণে রুশিয়া বেগম সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।

রুশিয়া বেগম অভীকের রুম থেকে বের হয়ে দেখেন অনীক কিচেনে।
“কি করছিস?”

“চায়ের পানি চড়ালাম মা।তুমি খাবে?”…. অনীক শান্ত কন্ঠে বলে।

রুশিয়া বেগম চোখ মটকে বলেন,” তুই সর।আমি করছি।তোর বউ এখনো ওঠেনি? ”

অনীক প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছাড়ে। রুমির ঘুম কখনো কি এত সকালে ভাঙে? তারপর বলে,”মা রাতে ঠিকমত ঘুম হয়নি তাই ঘুমাচ্ছে,ছোটো কই?”

চায়ের কেটলিতে চা-পাতা দিতে দিতে রুশিয়া বেগম বলেন,”হয়েছে হয়েছে বউয়ের জন্য আর মিথ্যে বলতে হবে না।অভীক আসছে।”

অনীক মায়ের কথায় মৃদু হাসে।একটু পরেই অভীক এসে হাজির হয়।”মা আমি বেরোচ্ছি। “….বলে চলে যেতে নেয় দ্রুত পায়ে।
” আরে কই যাচ্ছিস?চা খেয়ে যা।”…অনীক বলে।

“সময় নেই বড়ো,ফিরে ব্রেকফাস্ট করবো একসাথে। “… বলে অভীক চলে যায়।
অনীক ভাইয়ের যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,” এত তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছে মা?”

রুশিয়া বেগম নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,”তোকে না বললাম, আজ দুপুরে পাশের ফ্লাটে দাওয়াত আমাদের।সেখানেই যাচ্ছে। যদি কোন হেল্পের দরকার হয় তো।”

অনীক বিস্মিত কন্ঠে বলে,”মা তুমি ফাজলামো করছো?আমাদের ছোটো বাহিরের কারোর জন্য হেল্পিং হ্যান্ড হতে যাচ্ছে।সিরিয়াসলি?তাও এত আগ্রহ নিয়ে, কাহিনী কি বলতো?”

রুশিয়া বেগম ছেলের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে নিজেও একটা তুলে নেন।তারপর মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলেন,”কাহিনী না হয় নিজেই দেখে নিস,দুপুরে তো যাচ্ছি সেখানে আমরা।”

অনীক মায়ের হেয়ালীপূর্ণ কথায় ভুরু কুঁচকে তাকালো।রুশিয়া বেগম বলে উঠলেন,”দুপুরে তোর বউকে শাড়ি পড়তে বলিস,ওসব মডার্ণ ড্রেস যেন না পড়ে।”

অনীকের কপালে ভাঁজ পড়লো। রুমি আর শাড়ি?ভাবতেই শুকনো ঢোক গিললো।

**********
অভীক ফ্লাট থেকে বের হতেই দেখলো নীতু মিষ্টি রঙের একটা জামা পড়ে দরজায় তালা দিয়ে বের হচ্ছে।চুলে এলানো খোঁপা।চোখে মুখে ঘুমের স্নিগ্ধতা। ওড়নাটা শালের মত জরিয়ে পড়েছে,পায়ে দু বেল্টের স্লিপার, হাতে পার্স ব্যাগ।এত সাধারণের মাঝেও অসাধারণ অভিব্যক্তি!
“কোথাও বেরোচ্ছেন মিস নীতু?”….. আকস্মিক শব্দে নীতু চমকে উঠলো।নীতুর ভয় পাওয়া মুখ দেখে অভীক হেসে ফেললো।
” আপনি এত সকালে?”….নীতু বলে।

“মা আপনাদের এখানেই পাঠালো,যদি কোন হেল্প লাগে তাই আর কি।”…. ট্রাউজারের পকেটে দুই হাত পুরে বলে অভীক।

” ধন্যবাদ, কিন্তু এসবের প্রয়োজন ছিল না।”…..নীতু মৃদু হেসে বলে।

“সেসব পরে দেখা যাবে,এত সকালে কোথায় যাচ্ছেন?”

রাত জাগার ফলে সবাই ঘুমাচ্ছে,তারউপর প্রত্যেকে জার্নি করেছে।তাই নীতু তাদের ঘুম থেকে না উঠিয়ে নিজেই যাচ্ছে।

“ফুল কিনতে।”…..

” মিস নীতু আপনার সঙ্গী হতে পারি?”

নীতু সরাসরি না বলতে চাইলো কিন্তু অভীকের আগ্রহী চাহনি দেখে আর না করলো না।মৃদু হেসে সম্মতি জানালো।

**********

দুটো মানুষ রিকশায় বসে আছে।একজন ভীষণ অস্বস্তি ফিল করছে আর একজন পাশে বসা মানুষটার অস্বস্তি উপভোগ করছে।ফুল কিনতে দুজনে হেঁটে গেলেও আসার পথে রিকশা নিতে হয়েছে।দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই।নীতুকে সরে বসতে দেখে অভীক ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেললো। নীতু বিস্মিত আর অস্বস্তি ভরা দৃষ্টি নিয়ে বললো,”হাসছেন কেন?”
অভীক এবার শব্দ করেই হেসে ফেললো।নীতু রাগ নিয়ে বললো,”ভালো হবে না বলছি,এত হাসির কি হলো?”

অভীকের ত্যাড়া উত্তর, “আমার দাঁত দিয়ে আমি হাসলে আপনার সমস্যা কি?”

“হাসির একটা কারণ লাগে।বিনে কারণে হাসে পাগলে।আপনি কি নিজেকে পাগল বলে আখ্যায়িত করাতে চাইছেন ?”….. ঝাঁজালো স্বরে বলে নীতু।এত কাছ থেকে অভীকের এমন জ্বলন্ত হাসি নীতুর সহ্য হচ্ছে না।

নীতুর হাতে থাকা ফুলের ব্যাগ থেকে একটা সাদা গোলাপ নিয়ে অভীক নীতুর কানে পাশে গুজে দেয় সংকোচ বিহীন হাতে,সরাসরি নীতুর পদ্মদিঘির ন্যায় চোখের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে বলে,” পাগল হলে মন্দ হয় না, বলুন মিস নীতু? ”
নীতু ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় অভীকের আচরণে।নীতুর চাহনি দেখে অভীক পুনরায় হেসে ফেলে।চোখের সামনে সুদর্শন পুরুষের সুদর্শন হাসি দেখে নীতু বারকয়েক চোখের পলক ফেলে। অভীক একই ভাবে তাকিয়ে বলে,”এত অস্বস্তির কি আছে?”

ঠিক তখনই রিকশায় ঝাকি লাগলে অসাবধানতা বশত নীতু পড়ে যেতে নিলে অভীক নীতুর হাত ধরে বসে।নীতু চমকায় অভীকের স্পর্শে।এর থেকে পড়ে যাওয়াই ভালো। অভীকের কেন যেন নীতুর হাত ছাড়তে মনে চাইলো না।নিজের হাতের মুঠোয় আলতো করে ধরে বসে থাকলো বাকিটা পথ। নীতুও হাত সরালো না। কিন্তু আশ্চর্য দৃষ্টি নিয়ে দেখলো শুভ্র পৌরষালী হাতের মাঝে তার কালো হাতটি কেমন মিলেমিশে গেছে।অভীক নীতুর বিস্মিত চাহনী উপেক্ষা করে নিজের আঙুলের ভাঁজে নীতুর আঙুল গুজে রাখলো।
কৃষ্ণ মুখশ্রীর ডান পাশে থাকা সাদা গোলাপটাও যেন বিস্মিত হয়েছে অভীকের আচরণে!

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here