এল_এ_ডেইস পর্ব ৪২

0
198

#এল_এ_ডেইস
পর্ব ৪২
লেখনী মাহীরা ফারহীন

বাতাসে ভেজা ভেজা মোহময় প্রাকৃতিক ঘ্রাণ। কিসের ঘ্রাণ তা ঠিক ধরা যাচ্ছে না। সবুজ রঙা ম্যাপল পাতার গাছ। অসময় বলে ম্যাপলের চিরচেনা লাল বর্ণ নেই। বেশ কয়েকটা সিডার ও একটি জ্যাকারেন্ডা গাছ গোটা বাগানটাকে বেড়ার মতো ঘিরে রয়েছে। সোনা বরণ রোদ তেড়ছা ভাবে হালকা বেগুনি ফুলে ভরা জ্যাকারেন্ডার উপর স্বর্গীয় পরশ বুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। বাগানের গাছপালাগুলোকে চিরুনির মতো গলে বয়ে যাচ্ছে বাতাস। বড় সাজানো গোছানো প্রাকৃতিক ব্যাক ইয়ার্ড। নায়েলের বাড়ির প্যাটিওতে আট আশন বিশিষ্ট সাদা ডাইনিং টেবিল। বাড়ির বাকি সদস্যরা আপাতত বাড়িতে নেই। টেবিল জুড়ে সাতজন ছেলে মেয়ে গম্ভীরমুখে বসে আছে আসন্ন দুঃসংবাদের অপেক্ষায়। কেউ বলে দেইনি ওরা কোনো দুঃসংবাদ পেতে চলেছে। তবে ক্যারোলের মুখভঙ্গি দেখে তা আন্দাজ করে নেওয়া যায়। কোনো সংবাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। আনন্দের সংবাদ দেওয়ার বেলায় মুখটা দুঃখি দুঃখি করে রেখে হঠাৎ ভালো খবরটা দিয়ে চমকে দেওয়া যায়। তবে দুঃসংবাদ দেওয়ার পূর্বে মুখটা হাসি হাসি করে রেখে চমকে দেয়া যায় না। মন মেজাজই তেমনটা থাকে না। ক্যারোল সেই প্রথম থেকে বিষন্ন, হতাশ ও কাঁদো কাঁদো মুখভঙ্গিতে বসে আছে। অবশেষে প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে মূর্তির মতো বললো, ‘আই এম মুভিং আউট নেক্সট উইক।’
সবাই বিস্ময়ের ঝটকা খেল। চোখ বড় বড় করে চেয়ে রইল। বিস্ময়ের ঢাক্কাটা কাটিয়ে উঠে লিম জু সবার আগে কথাটা পুনরাবৃত্তি করল, ‘ইউ আর মুভিং আউট!’
ক্যারোল আলতো ভাবে মাথা নাড়ল।
‘বাট হোয়াই?’ জিজ্ঞেস করল সাইলোহ।

ক্যারোলকে উত্তর দেওয়ার সময় না দিয়েই লিও বলল,
‘কয়েকমাস আগেই তো এই স্টেটে এলা। এত তাড়াতাড়ি আবার কিসের মুভ আউট?’

ক্যারোল স্তিমিত কন্ঠে বলল, ‘আমি কী এখান থেকে যেতে চেয়েছি নাকি। ওটা তো আমার দাদি আর থাকতে চান না এখানে।’

জেনেট জিজ্ঞেস করল, ‘কিন্তু কেন? এখানে কী ওনার ভালো লাগেনি? বা অন্য কোনো সমস্যা?’

‘এক্সপেন্স বেশি তাই?’ জিজ্ঞেস করল নায়েল।
ক্যারোল ধীরে ধীরে ডানে বামে মাথা নাড়ল। বলল,
‘না এগুলো কোনোটাই সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে এখন পর্যন্ত এ জীবনে আমি নয়টা স্টেট বদলেছি। প্রথমে ফ্লোরিডা থেকে ম্যানহাটেন, ইন্ডিয়ানা, বস্টন, নর্থ ক্যারোলাইনা,লুইজিয়ানা,ডালাস, সিয়াটল, ম্যারিল্যান্ড। এবং ক্যালিফোর্নিয়া নিয়ে দশটা হলো।’
লিম জু সবিস্ময়ে বলল, ‘তুমি এত স্টেটে থেকেছো? বুঝলাম না। এক জায়গায় স্টে করতে কী সমস্যা?’

‘সমস্যা হচ্ছে আমার দাদির কোথাও শান্তি হয় না। মন থিতু হয় না। শেষমেশ পেরু যেতে পারলেই বোধহয় তার হৃদয়ে শান্তি মিলবে। কিন্তু সেই পর্যন্ত আমি এই চরম অশান্তিতেই থাকবো। লাস্ট ম্যারিল্যান্ডে চার মাস ছিলাম। তাও তো এখানে ছয় মাস থাকলাম। আর আগেই হয়তো দাদি মুভ করতে চাইতেন। কিন্তু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে এতদিন কিছু বললেননি।’ নিরাশ ভাবে বলল ক্যারোল।

লিও জিজ্ঞেস করল, ‘এবার কোথায় যাবা?’
ক্যারোল ম্লান মুখে উত্তর দিল, ‘এলাবামা।’

‘আচ্ছা এটা র‌্যবিট জানে?’ এতক্ষণে একটা প্রশ্ন করল মাহীন। এতক্ষণ নিশ্চুপ বসে সব শুনছিল। ক্যারোলের বুক চিরে আরেকটা প্রলম্বিত শ্বাস বেরিয়ে আসল। বলল, ‘ওকে সবার আগেই বলেছি। গতকাল।’

‘তো শোনার পর কী বললো?’ জিজ্ঞেস করল নায়েল।
ক্যারোলকে আরোও বেশি দুঃখিত দেখাল। এবার বুঝি বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টটা বাঁধ ভেঙ্গে অক্ষিকোটর হয়ে বেরিয়ে আসবে। তবে এমন কিছুই অবশেষে হলো না। বেশ শক্ত আছে মেয়েটা। ছোটবেলা থেকে কত জায়গা পাল্টেছে, কত বন্ধু হারিয়েছে। বুকটা শক্ত করে কত শহর পেছনে ফেলে এসেছে বলেই এখন আর খুব সহজে ভেঙ্গে পরে না। এভাবেই গড়ে উঠেছে ও। ক্যারোল নিষ্প্রভ গলায় বলল, ‘অনেক ভাবে জিজ্ঞেস করেছে যে, কোনো ভাবেও আমি দাদিকে রাজি করাতে পারি কিনা। কিন্তু আমি কী বলবো? শেষে আর কিছু বলেনি। এমনিই উঠে চলে গিয়েছিল। এসেছিল যতটা হাসিখুশি প্রফুল্ল মনে, ফিরে গিয়েছিল ততটাই বিষন্ন, বিধ্বস্ত ভাবে।”
মনে হলো এই কথা শুনে সকলে আরোও বেশি দুঃখিত হয়ে পরল। কারোও মুখে বেশ কিছুক্ষণ পর্যন্ত কোনো কথা ফুটলো না। আগস্টের সুন্দর বিকেল, সোনার মতো রোদ, ছবির মতো বাগানে বসেও কারোরই এসব উপভোগ করার মতো মন মেজাজ নেই। বরং পরিবেশটা ভারি হয়ে আছে। ক্যারোল যেন অল্প কিছুদিনের গ্রীষ্মকালিন অতিথি পাখি হয়ে এসেছিল ওদের জীবনে। গ্রীষ্ম যেই বিদায় নিতে ধরেছে সেই মেয়েটাও চলে যাচ্ছে ওদের ছেড়ে। হয়তো বা তা মাত্র ছয় মাসেরই বন্ধুত্ব। হয়তো বা মাহীনের সঙ্গে ক্যারোলের প্রথম সাক্ষতটা দূর্বিষহ ছিলো। তবে শুরু বা সময় দিয়ে কিছুই মাপা যায় না। বন্ধুত্বের বন্ধনটা যে ছিলো দৃঢ়। ওদের সকলেরই ইচ্ছে করল ক্যারোলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। তবে তাতে ক্যারোলের আরোও বেশি কষ্ট হবে। এখানে বাকিরা একসাথে থাকলেও সকলকে ফেলে একা একা তো চলে যেতে হবে ওকে। মাহীনের চোখের কার্ণিশে বারবার অশ্রু বিন্দু চকচক করে উঠছিল। তবে তা গড়িয়ে পরছিল না। কিভাবে যেন চোখের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে ওরা পরিবেশ হালকা করতে ঠিক করে নিল এরপরের যেই কয়েকদিন ক্যারোল আছে সেই কয়দিন শুধু ওরা ওকেই সময় দেবে। ঘুরতে যাবে, খেতে যাবে, সিনেমা দেখতে যাবে। কেউ মনে দুঃখ নিয়ে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেবে না। সকলে শুধু আনন্দ করবে।
.
.
.
নিরবচ্ছিন্ন ঝিঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। অন্ধকার আকাশের বুকে ঝুলে রয়েছে জৎস্না মাখা রুপোলি শুক্লপক্ষের অষ্টমী চাঁদ। জানালা দিয়ে পর্দগুলোকে ঢাক্কা দিয়ে তিরতির করে ঢুকে যাচ্ছে বাতাস। বিছানার দুপাশের টিমটিমে হলদে আলোর ল্যাম্প জ্বলছে। রায়েদ বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে সিডনি সেলডনের ব্লাডলাইন বইটা পড়ছে। শান্ত নিরব পরিবেশটা চিরে তীক্ষ্ণ শব্দে ফোন বেজে উঠল। সেলফোনটা বিছানার ওপরই রাখা ছিলো। রায়েদ বই নামিয়ে রেখে স্ক্রিনে দেখলো ভারবেনা লিখা। সঙ্গে সঙ্গে মনটা নেচে উঠল। প্রসন্ন মনে বই রেখে কল রিসিভ করল। ওপাশ থেকে কোনো কথা শোনা গেল না। রায়েদই প্রথমে বলল,
‘তো মিস ফারুকী। এতদিনে আপনার আমার কথা মনে পরল?’
এবার ওপাশ থেকে মাহীন অপ্রতিভ গলায় বলল,
‘আহা আমি তোমাকে ভুলে কখন গিয়েছিলাম শুনি?’

‘ওহ তাই। তো গত তিন দিন কোথাও তোমার দেখা পাইনি কেন বলোতো?’

‘উম কারণ তুমি খোঁজইনি। আচ্ছা যাই হোক সেটা বাদ। আমি অন্য কিছু বলতে ফোন করেছি।’

‘কী এমন জরুরি কথা? তুমি তো কখনো এভাবে ফোন দাও না।’
ওপাশ থেকে ইতস্তত কন্ঠ শোনা গেল, আচ্ছা রাবিত কেমন আছে?’ রায়েদের ভ্রু সূঁচালো হলো। জিজ্ঞেস করল, রাবিত? হুম ও তো ভালোই আছে। কিন্তু ওর কথা কেন জিজ্ঞেস করছ? কিছু হয়েছে?’
আবারও কিছুক্ষণ নিরবতা ওপাশে। তারপর স্মিত কন্ঠে বললো, ‘ওহ আচ্ছা দেখো একটু ও কেমন আছে না আছে। কারণ ক্যারোল চলে যাচ্ছে।’

‘চলে যাচ্ছে মানে? কী বুঝলাম না? আর এর সাথে রাবিতের কী সম্পর্ক?’

‘ক্যারোল মুভ আউট করছে তাই রাবিতের মন খারাপ। আই মিন একটু বেশিই খারাপ।’ মিনমিন করে বলল মাহীন।

‘মাহীন ঘটনাটা কী বলোতো? ক্যারোল এখানে মুভ করেছে মাত্র ছয় মাস হয়েছে। এরই মধ্যে আবার মুভ করছে? আর তাতে রাবিতের একটু বেশিই মন খারাপ হওয়ার কারণ? সত্যি করে বলোতো কী হয়েছে।’

‘ওয়েল দেখো ক্যারোল রাবিতের ক্রাস ছিলো অর হাফ গার্লফ্রেন্ড ও বলা যায়।’ এক টানে কথাগুলো বলেই চুপ হয়ে গেল মাহীন। রায়েদ হা হয়ে রয়েছে যদিও কিছুটা আচ করেছিল এমন কিছুই শুনবে। কিছুক্ষণ সময় নিল ধাতস্থ হতে। জানালা দিয়ে একটা কালো প্রজাপতি ভেতরে ঢুকে তিড়িংতিড়িং করে উড়ে বেড়াচ্ছে। রায়েদ গাঢ় ভাবে বলল, ‘ মানে কি? তাই বলে এতটা? ও আমাকে কিছুই জানাল না! কবে থেকে এসব চলছে?’

মাহীনের কন্ঠ কিছুটা উদ্বিগ্ন শোনাল, দেখো চলছিল তো কিছুদিন ধরেই। তবে ওরা কোনো রিলেশনে ছিলো না। ইভেন ওদের মধ্যে কিছু শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
রায়েদের বুক চিরে লম্বা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল। একই সঙ্গে স্বস্তি মিললো আবার বেদনাহতও হলো। এখন উঠে দাঁড়িয়ে ম্লান হলদে আলোয় কামরার এদিক থেকে ওদিক পায়চারী করছে। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে ভাবল, রাবিতের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আর এটা আমাকে না জানানোর জন্য মাহীনের ওপর রাগ হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাবিত নিশ্চয়ই ওকে দিয়ে ওয়াদা করিয়েছিল বা কিছু একটা।’ ওপাশে মাহীনও কিছু শোনার অপেক্ষায় আছে। রায়েদ বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি দেখি রাবিতের কী অবস্থা।’ থেমে আবার বলল, কিন্তু ক্যারোল হঠাৎ মুভ করছেই বা কেন? আর কোন স্টেটে যাচ্ছে ও?’
‘ওর দাদির জন্য। ওর দাদি কোথাও স্থায়ী থাকতে পারেন না। এবং ওরা এলাবামা যাচ্ছে এবার।’

‘ওহ তাহলে আর কী বলার থাকতে পারে।’

‘ঠিক আছে তুমি রাবিতের সঙ্গে কথা বলো। আমি রাখছি।’
‘কাল স্কুলে যেন তোমাকে খুঁজে পাই।’
‘আচ্ছা।’ বলে লাইন কেটে দিল। রায়েদ জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রুপালী চাঁদের পানে চেয়ে বুক ফেড়ে আরেকটা প্রলম্বিত শ্বাস বেরিয়ে আসল।
.
.
.
.
একটা চোখ নেই। সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। বারবার অর্ধ লাগোয়া দরজায় থাবা মারছে উন্মাদের মতো। অতি বিভৎস রকমের ভেষ ওয়ালা একটা জম্বি অর্ধেক লাগানো ট্রেনের দরজার চিপা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। ভেতরের মানুষগুলো ভয়ে আতঙ্ক চুপসে কাঁদা হয়ে আছে। সেই বিভৎস জম্বির পেছনে বিশাল প্রাণহীন জ্যান্ত লাশগুলো টলতে টলতে ধেয়ে আসছে।

কামরার আলো নেভানো। জানালার কপাট বন্ধ। বদ্ধ কামরায় একমাত্র স্মার্ট টিভির বড় স্ক্রিনের আলো এবং ট্রেন টু বুসানের ভয়ঙ্কর দৃশ্যগুলো একটা গা ছমছমে পরিবেশ তৈরি করেছে। রাবিত পারলে হাতে ধরা বালিশটাই চোখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। ভয়ে কুঁকড়ে বসে আছে সোফার ওপর। দরজা ধীরে ধীরে হঠাৎ খুলে গেল। রাবিত প্রায় বিদ্যুৎ চমকের মতো চমকে উঠল। ওর হৃদয় বোধহয় একটা বিট স্কিপ করল। চমকের চোটে দেহ থেকে আত্নাই যেন বেরিয়ে যাচ্ছিল। ভয়ার্ত চোখে চেয়ে রইল দরজার দিকে। দরজা খুলে রায়েদ সন্তর্পণে ভেতরে প্রবেশ করল। অবশেষে রাবিত যেন ওর হারিয়ে যাওয়া আত্না ফিরে পেল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। রায়েদ ভ্রু কুঞ্চিত করল। ভেতরে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বলল, ‘কী ব্যাপার আমি কী ভূত?’
রাবিত শুঁকানো গলায় ছোট করে বলল, ‘না।’

‘তো এই এরকম ভয়ে চুপসে গিয়েছিস কেন?’
বলে সোফায় ওর পাশে বসে পরল। টিভির দিকে তাকিয়ে দেখে বলল, ‘ওহ আচ্ছা ট্রেন টু বুসান দেখে এই অবস্থা। তুই তো জানিস রা জম্বিরা ব্রেইন খায়। সুতরাং তুই সেফ আছিস।’
রাবিত চুপচাপ টিভির দিকে তাকিয়ে ছিল। কথাটা মাথায় ঢুকতেই বিরক্ত চোখে রায়েদের দিকে চাইল কিন্তু কিছু বললো না। কিছুক্ষণ চুপচাপ দুইজনই টিভির দিকে তাকিয়ে রইল। অবশেষে রায়েদ বলল,’এ্যই তোর মুড অফ কেন বলতো?’

‘উম কোথায়? আমি তো সিরিজ টা দেখে ভয়ে আছি। মুড অফ কোথায় দেখলা?’

‘সারাদিন ধরে তো আর তুই সিরিজ দেখছিলিস না। তোর তো সকাল থেকেই মুড অফ। বল না কী হয়েছে।’

‘বললাম তো কী হবে? কিছুই তো হয়নি।’

রায়েদ বিরক্ত হয়ে ভাবল, এই একটা গুনই আমার কাছ থেকে পেয়েছে বোধহয়। যেটা বলবে না সেটা নিয়ে এফবিআই এর এজেন্টের মতো আচরণ করে।’ মুখে

বলল, ‘আচ্ছা তো শুনলাম ক্যারোল নাকি মুভ করছে।’
কথাটা শুনে হঠাৎ করেই রাবিতের মুখে ঘন কৃষ্ণ মেঘ নেমে এলো। স্তিমিত কন্ঠে বলল, ‘হ্যা।’

‘তাহলে ক্যারোল ভালো হোক আর যাই হোক ও কিন্তু বিধর্মী। তুই কীভাবে ওকে পছন্দ করলি আমার তো মাথাই ঢুকছিল না।’

রাবিত কিছুটা বিস্ময় নিয়ে ওর দিকে চাইল। বলল,
‘তুমি এসব জানলে কী করে?’

‘আমি এসব জানলাম কী করে সেটা বড় কথা না।’ বলে
থামল। এবার নরম কন্ঠে বলল, ‘শোন একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে নে, যেটা আমাদের জন্য ভালো না সেটাই আল্লাহ আমাদের থেকে দূর করে দেন। তোর জন্য ক্যারোল কখনো ঠিক মানুষ ছিলোই না। হ্যা হয়তো ও অনেক ভালো হতেই পারে। কিন্তু ওতো অন্য ধর্মের মেয়ে। সুতরাং ওকে যত তাড়াতাড়ি মাথা থেকে বের করতে পারবি তত তোর জন্যেই ভালো। বুঝলি?’
রাবিত ব্যাথাতুর দৃষ্টি মেলে কোমল কার্পেট মোড়া কাঠের মেঝের দিকে চেয়ে আছে। রায়েদ বলল,
‘জানি ভুলে যেতে সময় লাগবে এবং কষ্টও হবে। তবে তা অসম্ভব নয়।’
টিভিতে বিকট শব্দ হলো একটা। একটা মহিলা একটা জম্বির দিকে বড় একটা চেয়ার ছুঁড়ে মেরেছে। রাবিত আলতো করে উপরে নিচে মাথা নাড়ল। ম্লান স্বরে বলল, হ্যা এখন আর ওকে ভুলে যাওয়া ছাড়া আমার আর করারই বা কী আছে।’
কিছুক্ষণ পার হলো। রাবিত এখন ধাতস্থ হয়েছে। রায়েদ বলল, ‘চল ট্রেন টু বুসান দেখি।’

‘তুমি না এটা আগেই দেখেছ?’

‘হ্যা দেখেছি কিন্তু আবার দেখতে কী সমস্যা?’
রাবিত কিছু বললো না। সামনের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ কী মনে হতেই বলল, ‘এ্যই এটা তুমি এখনো আমাকে বলোনি যে তোমাকে এইসব খবর দিলো কে?’

‘হ্যা? ওহ বললাম তো তোর এত জানা লাগবে না।’

রাবিত চোখ ছোট করে বলল, ‘বালদিজ বলেছে?’

রায়েদ কটমট দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মাহীন বলতে পারিস না?’

‘তো বালদিজ বলতে কী সমস্যা? ভাবছি মাহীনকে এখন থেকে এই নামেই ডাকবো। মাহীন বললে অসম্মান জনক লাগে।’

রায়েদ ঝাঁঝ ভরা স্বরে বলল, ‘চর খাবি কিন্তু।’
রাবিত হেসে উঠল। তারপর আবার হঠাৎ করে ওর উৎফুল্ল মুখখানা নিভে গেল। রায়েদ বলল, আবার কী হলো?’
রাবিত অভিমানী কন্ঠে বলল, ‘উহ! এখন তুমি আমার থেকে বেশি বালদিজ কে ভালোবাসো।’
রায়েদ হাসল। বলল, ‘এত হিংসা তোর। ভুলে যাইস কেন তুই আমার একমাত্র ছোট ভাই। বোকা ছেলে।’
রাবিত আদুরে হাসল।

ইনশাআল্লাহ চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here