সৎ মা, লেখা: মাহাবুবা মিতু, পর্ব: ২৩

0
218

সৎ মা,
লেখা: মাহাবুবা মিতু,
পর্ব: ২৩

ক্যাফের ভিতরে ঢুকতেই ডান দিকে খুঁজতেই শেষ প্রান্তে চোখ গেলো, সাহস করে গেলাম সেখানে….

দুজনই উল্টোদিকে মুভ করে বসা, একটু সামনে এগুতেই বুঝতে পারছিলাম বাম পাশের জন প্রসূন….

আমি গিয়ে চুপ করে ওর পিছনে দাঁড়ালাম, কিছু সেকেন্ড…
এরপর ওর বন্ধু নাশিতা আমাকে দেখে দাড়িয়ে গেলো, প্রসূনও অপ্রস্তুত ভাবে ঘুরে দেখলো টেবিলের উপর কার ছায়া পরেছে….

এরপর….
প্রসূন অবাক হয়ে বসে পরে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে কান্না শুরু করলো, আমি ওর কান্না দেখে হাসলাম আর অপর পাশের চেয়ারে বসে বললাম –
পাগল তো তুমি একটা…
এখানে কান্নার কি হলো তাই তে বুঝলাম না….

ওর বন্ধু নাশিতা বললো – একটু আগেও আফসোস করছিলো আপনি আসতে পারছেন না তাই, এখন হঠাৎ এসে পরলেন, পুরো আন-এক্সপেক্টেড ঘটনা তো, তাই….

আমি আয়োজন করে কিছুক্ষণ ওর কান্না দেখলাম, এরপর বললাম – আমার সত্যিই খুব ক্ষুধা পেয়েছে, তুমি কি কাঁদবেই…

এ কথা শুনে নাশিতা খাবারের অর্ডার দিতে গেলো আমার জন্য। ও যাওয়ার পর আমি প্রসূনের মুখ থেকে হাত গুলো তুলে নিলাম। লজ্জায় আমার দিকে তাকাতেই পারছেনা ও….

আমি পানি এগিয়ে দিয়ে বললাম
পানি নাও, ও চোখ মুছে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে শেষ করে বললো আপনি আসলেই একটা খারাপ লোক….

আমি ওর কথায় হেসে বললাম – তুমি পারবে না এই খারাপ লোকটাকে ভালো করে দিতে…
উত্তরে ও শুধু মুচকি হাসি হাসলাে…
কেঁদে দু’চোখ ফুলিয়ে ফেলা মেয়ের মুখের মুচকি হাসি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলোর একটি। আমার সব কষ্ট সার্থক হয়ে গেলো ঐ হাসির বিনিময়ে….

এরিমধ্যে ওর বন্ধু খাবার নিয়ে এলো আমার জন্য। খাবার আমি কিছুই খেতে পারলাম না, রাজ্যের ক্ষুধা কোথায় যে গেলো, তবুও খানিকটা খেয়ে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম তিনজন।

সেখান থেকে বেরিয়ে রাস্তা ধরে হাটলাম কিছুক্ষণ। রাজশাহী শহরটা মোটামুটি নির্জনই। গোছানো শহর। এর আগে সিলেটকে আমার সবচেয়ে নির্মল, নির্জন মনে হয়েছিল, হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা ছেড়ে যখন গলিতে ঢুকলাম প্রসূন আমার হাতটাকে আলতো করে স্পর্শ করলো। হাতটাকে ধরতে চেয়েছিলো হয়তো, অপ্রস্তুত আমি না বুঝে সরে গিয়েছিলাম।

এরপর যখন বুঝলাম তখন আমিই ওর হাতটা ধরলাম। হাত ধরা দুজন দুই দিকে তাকিয়ে, বাইরেতে ভাবটা এমন যেন কিছুই হয়নি,
কিন্তু দুজনেরই ভিতরে চলছে সুনামি…

কিছু সময় পর মৌনতা ভেঙে ও বললো-

: মিথ্যে বললেন কেনো…
: মিথ্যে মানে…
: গাজীপুর যাচ্ছেন…
: ও…
সত্যিই যাচ্ছিলাম…, পরে কি হলো জানি না,
অনলাইনে রাজশাহীর ফ্লাইটের টিকেট বুক করার পর বুঝলাম…
: আপনি বাই এয়ারে এসেছেন…
: হুম, এই যে টিকিট…
বলে ওর হাতে গুজে দিলাম কাগজটা…

ও তাকিয়ে রইলো আমার দিকে, কিন্তু আমি তাকাতে পারলাম না…
: আপনি কি পাগল…, কাজ ফেলে চলে এলেন এখানে…
: আগে তো পাগল ছিলাম না…!
তবে এখনকার খবর জানি না…

নাশিতা আমাদের সামনে হাটছিলো, হঠাৎ ও পেছনে তাকাতেই স্বল্প ক্ষণের হাত ধরা পর্বের সমাপ্তি হলো…

ওদের বাড়ির কাছে পৌঁছে দিয়ে আমি আমার বাড়ির রাস্তা ধরলাম। ফিরবার সময় ও বললো আর আসবেন না প্লিজ, কেও দেখলে কেলেংকারী অবস্থা হবে…

শুনে আমি দাঁড়িয়েই ছিলাম সেখানটাতেই, যে পর্যন্ত ওকে শেষ দেখা যায়। বেচারী ও বারবার ফিরে ফিরে দেখছিল আমাকে….

ভালোবাসায় এমন ও হয়…….! বয়সের বিস্তর ফারাক, সাইজেও পিচ্চি, একসাথে দাঁড়ালে আমার বুকের সমান হবে। তবুও কোন বাঁধনে বেঁধে গেলাম দু’জন।

হঠাৎই ধুম করে চারদিকে অন্ধকার হয়ে গেলো। সাথে সাথে আমার ভিতরটাও…। এত দ্রুত সন্ধ্যা হয় তা আমি এর আগে কখনো খেয়াল করি নি। মনে হচ্ছিলো বৃষ্টি হবে। ঘড়িতে তখন বাজে সাড়ে ছয়টা। অচেনা পথঘাটে খোঁজ নিয়ে টিকেট কাউন্টারে গিয়ে জানলাম লাস্ট বাস ১১.৩০ এর….

টিকিট বুক করে এদিক সেদিক একটু হাঁটাহাঁটি করলাম। রাতের খাবার খেলাম ওখানকার এক হোটেলে। এর ভিতর মা কল করলো। আমি বললাম এক বন্ধু অসুস্থ ওর এখানে আছি, ফিরতে অনেক রাত হতে পারে, মা জিজ্ঞেস করলেন কোন বন্ধু, কি হয়েছে, আরো অনেক প্রশ্ন। আমি কিছু একটা বলে বুঝালাম। পরে মা বললেন – বেশী রাত হলে ফিরার দরকার নেই, সকালে উঠে এসে পরো।

ফোন রেখে আমি একটু রিল্যাক্স হই। মাকে কি বলবো ভাবিই নি বিষয়টা। এরপর ফোন করলাম প্রসূনকে। ফোন কানে থাকা অবস্থায় উঠে পরতে হলো হোটেল থেকে। প্রচুর ভিড়, তা না হলে বসা যেতো কিছুক্ষণ। কথা বলতে বলতে একটু হাঁটাহাঁটি করলাম। ও জিজ্ঞেস করলাে গাড়ি কখন ছাড়বে। আমি বললাম সাড়ে এগারোটায়।

এরি মধ্যে ঝুম করে বৃষ্টি নামলো। এজন্যই হয়তো এমন গরম পরেছিলো আজ…

নিজেকে বাঁচিয়ে এক ছাউনিতে দাঁড়ালাম আমি। ওকে বললাম সাড়ে এগারোটায় গাড়ি। এগারোটা উনত্রিশ পর্যন্ত কথা বলবা তুমি…
ও মৃদু হাসলো আমার কথা শুনে…

বৃষ্টি থেমেছে, এরি মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে আমি কোথায় আসলাম বুঝলাম না। ফোনটা কেটে দিলো প্রসূন। কোন সমস্যা হয়েছে হয়তো…
হাঁটতে ভালোই লাগছিলো।

বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর ঘড়িতে দেখি সাড়ে দশটা বাজে।
হঠাৎই প্রসূন ফোন দিলো…
বললো
: আমার জন্য কি সমস্যা পরলেন আপনি…
: আরেহ্ ব্যাপার না..
: কোথায় আছেন আপনি…
: তা তো জানি না…
: ওহ্, খেয়েছেন…?
: কেন না খেলে কোন ব্যাবস্থা আছে নাকি…!
: না… রাতের জার্নি, কিছু খেয়ে নিয়েন…
: ওহ্ আমি ভাবলাম…..

হঠাৎ করেই অনেকগুলো কুকুর একসাথে ডাকা শুরু করলো…
ওপাশের থেকেও সেই শব্দ শোনা যাচ্ছে…
প্রসূন উত্তেজিত হয়ে বললো…
: আপনি কি আমাদের বাড়ির আসেপাশে কোথাও…
: কই নাতো…
: কুকুর এখানেও ডাকলো, ও পাশ থেকেও একই শব্দ আসলো..
: ধূর…
কুকুরের কি অভাব নাকি রাজশাহীতে…
: সিরিয়াসলি…,
যেখানেই আছেন দাঁড়ান একটু…

এপাশে আমি হ্যালো হ্যালো বলে গলা শুকাই ও পাশে কোন কথা নেই…

চলবে…
previous : https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=918478518613340&id=659404701187391
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/920936545034204/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here