সৎ_মা #মাহাবুবা_মিতু পর্ব: ৪

0
446

#সৎ_মা
#মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ৪

আমার মা, বাবা, আপু আর দাদী আমাদের পাচঁজনের পরিবার। সারা সপ্তাহ স্কুলে যাওয়া, স্যারের কাছে পড়া, মসজিদে আরবী পড়তে যাওয়া, সন্ধ্যায় স্কুলের পড়া তৈরী এসবেই কাটতো। শুক্রবার যেন ইদ লাগতো বাড়িতে, বাবা ভাইবোনের মধ্যে বড় হওয়ায় সবাই বেড়াতে আসতো আমাদের বাসায়। এমন একটা পরিস্থিতি ছিলো তখন এক হওয়ার জন্য কোন উপলক্ষের দরকার হতো না।

তাছাড়া শুক্রবারে বাবার সাথে নামাযে যাওয়া, সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি, টুপি আতর। আর আমার ছোট্ট জায়নামাজ টা। নামাজ শেষে গরম গরম জিলাপি। এ জিনিস গুলোর জন্য মনে হতো সপ্তাহে দুইটা শুক্রবার হলে বেশী ভালো হতো।

বাবার সাথে একসাথে নামায পড়ার সময় সবচেয়ে বেশী যা মনে পরে তা হলো, নামায পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে সবাইকে সেজদা অবস্থায় দেখা, নিজেকে একা ভেবে আবার হুড়মুড় করে সেজদায় চলে যাওয়া, এমন করতে করতে তাল হারিয়ে ফেলতাম নামযের, দেখা যেতো সেজদা করে উঠে গেছে সবাই আর আমি তখন সেজদায় যাচ্ছি।

নামায শেষে বাড়ি ফিরবার পথে দাদীর জন্য গরম গরম জিলাপি আনা। কি সুন্দর ছিলো সেই দিনগুলো।

আপু রোগে মারা যাবার পর সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো। বাবা আপুকে খুব ভালো বাসতেন। এই শোকের ভিতরেই তারা দুজনে মানে আমার মা-বাবা বিশ্রীরকম ঝগড়া বাধাঁলো। বাইরের কেও দেখলে ভাববে ঠিক যেন কোন ঝগড়ার প্রতিযোগিতা। কার থেকে কে কত বাজে কথা বলতে পারে, কথার আঘাতে কে কাকে কত ছোট করতে পারে, কে কতো নিচে নামতে পারে তার।

তারপর মা চলে গেলেন…
কোথায় গেলেন, কার সাথে গেলেন তা ভাবতেই ঘরের বাতি জ্বেলে উঠলো।

মা বললো
: কি ব্যাপার তোমার ঘর অন্ধকার কেন..!
অন্ধকারে বারান্দায় বসে কি করছিলে..

তেমন কিছু না, বলতে বলতে উঠতে লাগলাম, মা দ্রুত এসে আমাকে ধরে তুলে বসালো। রান্নাঘর থেকে চা আর বাখরখানি নিয়ে আসলেন ঘরে। আমার ভাঙা হাত তাই নিজেই খাইয়ে দিলেন। কল্পনায় আমি আমার জীবণের কঠিন সময়ের পথটাতে চলতেই পারলাম না, যে পথটা আমার নিশ্বাস আটকে রাখে, যে পথ আমার জীবণের সবচেয়ে কলংকের আরেক না। আমার এই মা দিলেন না। কল্পনায়ও হাটতে দিলেন না তিনি। ভাবতেও দিলেন না সেই জঘন্য অতীত……!

ঠিক এমনি ভাবে তিনি আমাকে সব প্রতিকূলতায় আগলে রেখেছেন, তিনি আসার পরের জীবণটাতে। কড়া রোদের সময় বাতাস হলে যেমন রোদের কষ্টটা লাগে না, ঠিক তেমনিই মা ছাড়া সীমাহীন কষ্টের জীবনটাকে তার মমতায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন। একটা ঘটনা বললে ব্যাপারটা বুঝতে আপনাদের সুবিধা হবে।

তখন আমার বয়স কত হবে আট কি নয়, স্কুলে ইদের ছুটি তাই বাবা বাদে, বাড়ির সবাই গিয়েছি শিশুপার্কে বেড়াতে। সাথে রাইসা আর তন্ময় চাচ্চু।

ছোটবেলায় আমি অকাজেই শুধু ওস্তাদ ছিলাম আর বাকী সব কাজে বোকা। এখনকার সময়ে পাঁচ বছরের বাচ্চা যে রকম বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে আর কথার জবাব দেয়, সেই বুদ্ধি আমার হয়তো দশ বছরেও ছিলোনা। আমি পার্কে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার পিছনে কেও নেই, আমি দলছুট হয়ে গিয়েছি। ইদ হওয়ায় শিশুপার্কের ট্রেনে অনেক ভীড় ছিলো, সবাই ওখানেই ছিলো আমিও ছিলাম, পরে কিভাবে যেন তারা নাই হয়ে গেলো। আমি হাটছি আর কাঁদছি, প্রায় অধ ঘন্টার মতো এদিক সেদিক খুঁজলাম।

এক অাংকেল আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কাঁদছ কেন খোকা, আমি বললাম আমি আমার মাকে হারিয়ে ফেলেছি। তিনি আমাকে একটা ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে লোকগুলো আমাকে আমার নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম বলতে বললেন। আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম।

এদিকে তাঁরাও খুঁজছিলো আমায়, তবে সাথে সাথে টের পায়নি আমি যে দলছুট। বেশ পরেই হুদিস হয়েছিলো সবার। আমাকে না পেয়ে মার নাকি কি যে কান্না….

তারা যখন শিশুপার্কের মাইকে শুনলেন হারানো বিজ্ঞাপ্তি তখন খানিকটা অবাক হয়েছে সবাই, কারন এইদিকে তারা বলছেন-
নাম- মীনহাজুল জামান দিগন্ত
বাবা: খন্দকার জামান
মা: লুৎফুন্নেসা জামান….

আর আমি সেই অফিস ঘরে বলেছিলাম-
নাম – দিগন্ত
বাবা- জামান
মা- আয়েশা

বুঝতে পারলেন ব্যাপারটা..!

একজন সৎ মা কতটুকু ভালোবাসা দিয়ে লালনপালন করলে তার মায়ের নাম ভুলে যায়। তখন আমি অতটাও বাচ্চা ছিলাম না, অনেককিছু বুঝতাম।

মায়ের নামে গড়মিল হওয়ায় তারা ঝামেলা করেছিলো, তবে যখন আমাকে সামনে এনেছিলো আমি দৌড়ে এসে মা বলে চিৎকার করে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম।
পরে লোকগুলো বুঝতে পারে ব্যাপারটা।

মা আমাকে নাশতা খাইয়ে চলে যাবার পর আমি বসলাম আরেক দুঃখগাথা নিয়ে।
চলবে….

Previous..
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=901669813627544&id=659404701187391
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/903407923453733/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here