সৎ মা
লেখা : মাহাবুবা মিতু
পর্ব: ২২
সেদিন রাতের খাবার ছিলো ভুনা খিচুড়ি আর গরুর গোশত, সাথে মায়ের হাতের স্পেশাল আমের আচার। মায়ের রান্নার কথা নাই বা বলি। বেশী খেয়ে আমার যায় যায় অবস্থা। কারো বাড়ি ফেরার নাম গন্ধ নাই। কাজিনগুলো দলা পাকিয়ে রইলো আমার ঘরে। বাকীরা যে যেখানে পেরেছে শুয়ে পরেছে। আর আমার ঘরে সারা রাত আড্ডা হলো সবাই মিলে।
গিটার বাজিয়ে গানও হলো বেশ কয়েকটা। শেষে ঘুমিয়েছি চারটার কিছু পরে। সকালে ঘুম থেকে উঠলাম বজলুর ফোন পেয়ে। সময় তখন সাড়ে ১০, উঠে কোন মতে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরলাম।
অফিসে গিয়ে জরুরি কাগজ এক করতেই ফোন আসে প্রসূনের। আমি রিসিভ করে বলি, আমি একটু ব্যাস্ত আছি, তোমাকে একটু পরে কল করছি।
একটা কাগজ না খুঁজে পাওয়ায় ফোন দিই সীমান্ত কে। ও কাগজের হদিস দেওয়ায় প্রাণ ফিরে পাওয়ার মতো অবস্থা। কাগজগুলো ফাইলে নিয়ে রওনা দিলাম গাজীপুরের উদ্দেশ্যে। বজলুকে বললাম লোকটার ফোন নম্বর আমাকে ম্যাসেজে পাঠাতে।
গাড়িতে উঠে ফোন ব্যাক করলাম প্রসূনকে।
: কোথায় আপনি
: গাড়িতে….
: কোথাও যাচ্ছেন
: আরে আর বলো না, বাবা গাজীপুরে একটা জমি দেখে এসেছিলেন গত মাসে, অফিসের নতুন ব্রাঞ্চ করবো তাই, জমির মালিক লোকটার ভীষণ বিপদ। জরুরী টাকা দরকার, তাই কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছি, কাগজপত্র গুলো দেখাবো, সব ঠিকঠাক থাকলে কিছু টাকা বায়না করে আসবো…
: ও…..
(কথাটাতে কেমন যেন উদাসীনতা প্রকাশ পেলো, কারন কি বুঝে উঠতে পারছিলামনা….)
: তুমি কি করছো….
: বসে আছি…
আচ্ছা রাখি, আপনি যান তাহলে।
: ঠিক আছে। ভালো থাকো…
অফিস থেকে পৌণে দুই ঘন্টায় পৌছালাম উত্তরা। সেখানেও জ্যামে বসে আছি। গরমে পুরো বিশ্রী অবস্থা। বাইরে থেকে পানি কিনে খেতেই বজলু ফোন করে বললো নম্বর ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি ম্যাসেজ চেক করে নম্বরটা সেভ করলাম। এরপর ব্যাক করতেই ম্যাসেজ লিস্ট চোখে পর, মুচকি হেসে আমি ম্যাসেজ লিস্টে ঢুকতেই আমার পাঠানো শেষ ম্যাসেজটা চোখে পরে।
সাথে সাথে কল করি প্রসূনকে। ওর নম্বরটা ওয়েটিং দেখালো।
কেটে আমি ফোন রাখতেই ও ফোন ব্যাক করতেই আমি বললা
: হ্যালো…
: হুম, বলুন… নাশিতাকে কল করছিলাম, বিকেলে একটু বের হবো তো তাই,
: কেন….
জরুরী কিছু নাকি…..
: জরুরী না ঠিক, মাকে কাল বলে রেখেছি বই কিনতে বাইরে যাবো, আপনি আসবেন বললেন তাই আগেভাগে বলে রেখেছি, সত্যিই যদি এসে পরেন তাহলে তো হুট করেই কারন ছাড়া বেরুতে পারবো না….
(ফোনের অপরপ্রান্তে যখন প্রসূন এ কথা বলছে, আমি তখন দাঁতে দাঁত চেপে মাথায় হাত, উফ্, আমিতো ভুলেই গিয়েছি আজ রাজশাহী যাবো বলেছিলাম)
ব্যাপারটা চেপে গিয়ে আমি বললাম আসবোই তো বলেছিলাম কিন্তু হঠাৎ গাজীপুরের কাজটা পরে যাওয়ায়…
: হুম,আমি বুঝতে পেরেছি, সমস্যা নেই, এমনিও বই কিনবার কথা ছিলো আমার,
: ও আচ্ছা, তা বই কিনতে যাবো কোথায়…
: আমাদের কলেজের পিছনের মার্কেটে বইয়ের দোকান আছ, সেখানেই যাবো..
: ও আচ্ছা, ঠিকাছে ভালো থাকো, সাবধানে যেও,
: হুম
ফোনটা রেখে মনটা ভার হয়ে গেলো, বেচারী আমি যাবো ভেবে বাইরে বের হওয়ার জন্য মায়ের কাছ থেকে অনুমতি চেয়ে রেখেছে। আর অধম আমি ভুলেই গেলাম …..
হঠাৎই কি হলো, এক্কেবারে খামখেয়ালী ভাবে অনলাইনে ঢাকা টু রাজশাহী বিমানের টিকিট কাটলাম ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স থেকে। লাস্ট ফ্লাইট ২ টা ৪০ মিনিটে। ড্রাইভারকে গাড়ি ব্যাক করে এয়ারপোর্টে যেতে বললাম।
এখন বাজে ১ টা ০৭ মিনিট।
গাড়ি নিয়ে কিছু দূর ঘুরতেই আবার জ্যামে আটকে গেলো গাড়ি। সময় কম থাকায় ড্রাইভারকে কাগজপত্র অফিসের ম্যানেজারকে দিতে বলে আমি নেমে পরলাম গাড়ি হতে, পায়ে হেটে রাস্তার ঐ পাশে গিয়ে সিএনজি নিলাম। উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট বেশী দূরের রাস্তা না। ভাগ্য প্রসন্ন হলে সময় মতো পৌছতে পারবোই।
সিএনজি যখন এয়ারপোর্টে পৌছে তখন বাজে ২ টা ০৭ মিনিট। ভাড়া মিটিয়ে আমি কোনমতে দৌড়ে ঢুকলাম। আর একটু দেড়ি হলেই সব শেষ হয়ে যেতো…
আল্লার কাছে কৃতজ্ঞতা জানলাম।
মাত্র ৫৫ মিনিটে অাকাশ পথে পৌঁছে গেলাম রাজশাহী। কিন্তু এখান থেকে ওদের বাড়িও বেশ খানিকটা পথ দূর। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আবার ধরলাম ভাড়ার ক্যাব।
সেখান থেকে গন্তব্য প্রসূনের কলেজের রোড। গাড়িতে বসে আমি কল করলাম প্রসূনকে।
ফোনটা ধরলো না ও।
কিছু সময় অপেক্ষা করে আবার কল করলাম ওকে।
ফোন রিসিভ করে –
: কোথায় তুমি…
: এই তো রিকশায়…
: কোথাও যাচ্ছো…
: আপনাকে না বললাম….
বই কিনতে যাবো…
বই কেনা শেষ এখন খেতে যাবো..
: ওহ্, একদম ভুলে গিয়েছি,
: আপনি কোথায়,
: এই তো গাড়িতে…
: এখনো পৌছান নি…
: আরে আর বলো না, কি যে জ্যামে পরলাম আজকে…
: দুপুরে খেয়েছেন…
: না,
: সময় তো কম হলো না, প্রয় চারটা বাজতে চললো…
কিছু খেয়ে নিন…
: হুম, তা কি বই কিনলে,
: আরেহ্ কিছু উপন্যাস, আর পুরাতন কিছু প্রবন্ধের বই পেয়েছি সেগুলোও কিনে নিলাম
: ও আচ্ছা
: আচ্ছা, নাশিতা ফোন রেখে দিতে বলছে,
: কেন…
পাশ থেকে নাশিতা বললো
আমরা খেতে এসেছি, খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না তাই।
: আহা…
খাবারের কথা শুনে ক্ষুধা জানান দিচ্ছে…
: আচ্ছা, আপনি খেয়ে নিন…
: শোন আমার জন্য ও একটা সেট মেনু অর্ডার করো,
প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে।
: আহা…
বোকা পেয়েছেন আমাকে…
একবার ধোকা দিয়েছেন বলে বারবার…!
: কোথায় আছো তুমি বলো, আমি আসছি..
: হুহ্…
: বলেই দেখো না….
: রেড চিলি ক্যাফে…
চিনেন তো…
বলেই হো হো করে হেসে দিলো দুইজন….
আমি বললাম
: আচ্ছা রাখোতো…., একটা কল এসেছে…
: এখন রাখি না…!
হুহ্….
এরপর গুনে গুনে সাতাশ মিনিট পর আমি পৌছলাম রেড চিলি ক্যাফে তে…
ঢুকেই দেখি পুরো ক্যাফে খালি, মনটা কেমন মোচর দিলো…
আমি কি দেরী করে ফেললাম…
ওরা চলে গেলো না তো….
চলবে…
previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/917682085359650/
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/919389738522218/