চলো_রোদ্দুরে,16,17

0
481

#চলো_রোদ্দুরে,16,17
#ফাতেমা_তুজ
#part_16

‘ আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন ডাক্তার সাহেব? ‘

ভোরের কথায় পেছন ঘুরে তাকায় রাদ। ফোনে কথা বলছিলো ওহ। কোনো মতে কথা শেষ করে। ভোরের মুখ টা ফ্যাকাসে। রাদ বলে
_মন মড়া কেন?

_ এক্সাম চলছে আমার।

_ওহহ হো একদম ই ভুলে গিয়েছিলাম। আচ্ছা সমস্যা নেই, দ্রুত কিছু অরনামেন্ট নিয়ে চলে যাবো।

_অরনামেন্ট কেন?

_আমার বন্ধু রনিত কে তো চিনোই। ওর আর ইনায়ার
বিয়ে তে যাবো আমরা।

বিয়ের কথা শুনেই ধক করে উঠে ভোরের হৃদপিন্ড। ফ্যাকাসে মুখে মুহুর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়। রাদ বলে
_কি হলো?

_বিয়ে তে যাবো কি করে?

_আমার সাথে যাবে।

_আপনার ফ্যামিলি, ফ্রেন্ড সার্কেল সবাই তো আমাকে নিয়ে প্রশ্ন করবে।

_কিছুই হবে না। আমি বলবো তুমি ইনায়ার কাজিন। আর বিয়ের অনুষ্ঠানে কেউ এতো শতো খোঁজ করবে ও না।

_আচ্ছা।

অরনামেন্ট এর মাপ দিয়ে যায় রাদ। ভোরের পরীক্ষা থাকায় বেশি সময় নেয় না। হোস্টেল এ নামিয়ে দেয়। কিছু একটা মনে হতেই আবারো ভেতরে যায়। ভোর মাত্র ফ্রেস হয়ে এসেছে। রাদ কে দেখে চমকে যায়। বুকে থু থু দেয়।হেসে ফেলে রাদ।মেয়েটা অদ্ভুত সব কার্যক্রম করে। বেডে তোয়ালে রেখে ভোর বলল
_আপনি এখানে?

_হুম আমি এখানে। তাঁর আগে এই তোয়ালে টা অন্য কোথাও রাখো। ভেজা তোয়ালে বেডে রাখবে না।

_হুম।

_শোনো যেটা বলার জন্য এসেছি।

_বলুন।

_সেই ছেলেটা বিরক্ত করেছিলো আর?

চমকে তাকায় ভোর। তেমন কোনো বাজে আচারন তো করে নি।এই সামান্য বিষয় টা কে বড় করে কি লাভ হবে? তাই বলে
_না না আর বিরক্ত করে নি।

_সত্যিই?

_হুম সত্যি।

বই নিয়ে বসে ভোর আর রাদ। কিছু পড়া দিয়ে যায়। ভোর বলে
_আপনি কি করে দেখবেন পড়লাম নাকি পড়লাম না?

_রাতে ভিডিও কলে সব পড়া আদায় করবো।

_মানে?

_মানে খুব ই সিম্পল। ফাঁকি বাজি চলবে না। যদি ও আমি জানি তুমি ফাঁকি বাজ নও। তবে কখন হয়ে যাও তাঁর ঠিক ঠিকানা নেই।

মুখ বাঁকায় ভোর। কেটলি থেকে গরম পানি বের করে তাঁতে কফি পাউডার মিক্স করতে করতে বলল
_অদ্ভুত।

পড়াশোনা করছিলো ভোর। তখনি দরজায় খট খট আওয়া হয়। শীতের সন্ধ্যায় কম্বল থেকে কার উঠতে মন চায়। পায়ে উইন্টার স্লিপার পরে নেয়। এতে পায়ের পাতায় কিছু টা আরাম বোধ হয়। কাঁপতে কাঁপতে দরজা খুলে। বেশ হাসি খুশি মনে দাঁড়িয়ে আছে তিন্নি। ভোর বলল
_আরে আপু রুমে আসুন।

_হুম। আসলাম একটু আড্ডা দিতে।

_আচ্ছা আসুন।

বই বন্ধ করে ভোর। তিন্নির সাথে লডু খেলায় মজে যায়। ম্যাসেজ করে জানিয়ে দেয় তিন্নি। রাদ ই ওকে পাঠিয়ে ছিলো। দুপুর থেকে টানা পড়াশোনা করছিলো ভোর। সেই কারনেই তিন্নি কে পাঠিয়েছে সঙ্গ দিতে।
.

শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম প্রয়োজন বটে তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীর কে ক্ষতি গ্রস্ত করতে পারে। সেই কারনে একটু রেস্ট টাইম নিচ্ছে রাদ। সারা দিন রাত গাঁধার খাটুনি খাটে ছেলেটা। ইফতিহার এর কথা মনে পরে। কতো টা স্ট্রং পার্সোনালিটি তাঁর। একা হাতে কতো কিছু সামলিয়েছেন।
_আসবো রাদ?

রামিসার কন্ঠ কর্নপাত হতেই হাসি ফুটে ওর অধরে। মৃদু অভিমান করে বলল
_কতো বার বলবো মম আমার রুমে আসার জন্য কোনো রকম পারমিশন নিতে হবে না।

_হুম তা বুঝলাম। তবে অভ্যাস করা ভালো বেটা। ধরো তুমি বিয়ে করেছো। পার্সোনাল বিষয় থাকবে তখন। আলাদা সময় কাটাবে। তখন নিশ্চয়ই মম ড্যাড এর কাছে লজ্জায় পরতে চাও না তুমি?

_উফ মম এখন যে লজ্জা দিচ্ছো।

হেসে ফেলেন রামিসা। ছেলে টা খাঁটি রত্ন। খুব যত্ন নিয়ে রাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন তিনি। চোখ দুটো কেমন ঘোলাটে। বোধ হয় তিনি কাঁদছেন। হৃদয়ে ব্যথা অনুভব করে রাদ এর। রামিসা কে জড়িয়ে ধরে বলে
_কাঁদছো কেন মম? এবার কিন্তু আমারো কান্না পাচ্ছে।

_কতো টা বড় হয়ে গেলে তুমি। আমার সেই ছোটো ছেলে টা আজ কতো বড় হয়ে গেল ভাবতেই পারছি না।

_মম।

রাদের চোখ ও ভিজে যায়। মা ছেলের অনুভূতি গুলো অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকে। ভালোবাসার প্রকার ভেদ গুনে শেষ করা যায় না। প্রতি টা ভালোবাসাই সুন্দর।

নাক টেনে রামিসা বলেন
_তোমার ড্যাড কে পিক করতে যাবে?

_ড্যাড আজ ই ফিরবে? আমাকে তো বলে নি।

_আমি ও জানতাম না। তোমার ড্যাড সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ই বলে নি।

_ওয়াও এতো দ্রুত কাজ শেষ হয়ে গেলো?

_হুম। দেখতে হবে না কোন ছেলের বাবা।

মৃদু হাসে রাদ। রামিসা কে জড়িয়ে ধরে বলে
_আমি ও ড্যাড কে সারপ্রাইজ দিবো। বলবে না আমি পিক করবো।

_আচ্ছা বলবো না।

_কয়টায় ফ্লাইট লেন্ড করবে?

_ সুইজারল্যান্ড থেকে ইন্ডিয়া হয়ে বি ডি তে আসবে। একটু আগে কল করেছিলো বললো ইন্ডিয়া তে আছে। 10 টার পর ইন্ডিয়া থেকে ফ্লাইট ছাড়বে।

_ওকে ওকে। তাহলে আমি এখনি যাচ্ছি। তুমি তোমার স্পেশাল ভাবা ইলিশ এর সারপ্রাইজ রেডি করো।

রামিসা কে বিদায় জানিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে রাদ। নিষ্পলক তাকিয়ে থাকেন রামিসা। কতো বড় হয়ে গেল ছেলেটা। বিয়ে করালে মন্দ হয় না।

অনলাইনে কোচিং করছিলো ভোর। তখনি কল আসে রাদের। ক্লাস টা জরুরি হলে ও রাদের ফোন রিসিভ করে।তড়ি ঘড়ি করে রাদ বলল
_ অসময়ে ফোন করার জন্য দুঃখিত। আসলে আমি আজ কে তোমার পড়া নিতে পারবো না। সমস্ত পড়া শেষ করে নিও। কাল সময় করে নিবো।

_আচ্ছা।

_রাখছি।

_আপনি ড্রাইভ করছেন?

_হুম।

_ড্রাইভ করা অবস্থায় কল করবেন না ডাক্তার সাহেব। ভয় হয় আমার। কতো শত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

_আচ্ছা করবো না।

_হুম।

ফোন রেখে শ্বাস ফেলে ভোর। রাদ এর সাথে কথা বলে স্বস্তি মিললে ও মনের ডিমান্ড পূরন হলো না। আরো কিছুক্ষন কথা বলতে পারলে ভালো হতো।
.

কনকনে শীতের মাঝে ছুটে চলেছে রাদ। হাতে এক গুচ্ছ অর্কিড। ইফতিহারের ফ্লাইট লেন্ড করে নিয়েছে। জ্যাম থাকায় বেশ অনেক টা লেট হয়ে গেল। হঠাৎ করেই কারো সাথে ধাক্কা লাগে ওর।হাতে থাকা ফুল পরে যায়। বিরক্তি তে কপালে ভাঁজ পরে। তবু ও নিজে কে শান্ত রেখে ফুল গুলো তুলতে যায়। তাঁর আগেই মেয়েটি ফুল তুলে দেয়। হাসি মুখে বলে
_স্যরি।

পূর্ন দৃষ্টি মেলে তাকায় রাদ। কন্ঠ টা কেমন পরিচিত মনে হয়। মুখ টা চোখের সামনে আসতেই শীতল চাহনি দেয়। বলে
_আরে মিস নীলাশা। গার্ড ছাড়া বের হয়েছেন কেন?

_গার্ড দিয়ে কি হবে বলুন তো। কজন চিনে আমায়?

_একটু ভুল বললেন। কজন নয় বরং অনেক জন ই চিনে আপনাকে। এভাবে মিনিস্টারের মেয়ে হয়ে রাস্তায় চলা মোটে ও ঠিক নয়।

মৃদু হাসে নীলাশা। হুডির টুপি টা তুলে নেয়। চোখে লাগায় সান গ্লাস। রাদের দিকে ফিরে বলে
_এবার চেনা যায়?

_একদম ই নয়। টেকনিক টা পছন্দ হয়েছে। এনি ওয়ে কথা বলে ভালো লাগলো। যাচ্ছি

_আরে কোথায় যাচ্ছেন? একটু কথা বলে যান। দু কাপ কফির সাথে আড্ডা হয়ে যাক?

_থ্যাংকস। অন্য একদিন আড্ডা হবে। ড্যাড কে পিক করতে হবে এখন।

_ওহহ। তাহলে কথা দিচ্ছেন তো অন্য একদিন আড্ডা হবে?

একটু ভেবে সম্মতি প্রদান করে রাদ। নীলাশা হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়। চলে যায় ছেলেটা। রাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে ওহ। অদ্ভুত নেশা রয়েছে এতে। এক অদ্ভুত টান, যা রেড ওয়াইন কে ও হার মানাবে।

এই মাঝ রাতে বসে গরম গরম ভাত আর ভাবা ইলিশের স্বাদ নিচ্ছে রামিসা, ইফতিহার আর রাদ। ছেলেকে কাঁটা বেছে দিচ্ছেন রামিসা। তা দেখে মুখ গোমড়া করে ফেলেন ইফতিহার। বেশ ধারালো ভঙ্গিমা করে বলেন
_জানো রাদ, যখন তোমার মম এর সাথে ঝমকালো প্রেম চলে আমার, তখন ইলিশ মাছ খেতে পারতাম না আমি। কারন প্রচুর কাঁটা। একদিন মংলায় গিয়েছিলাম দুজনে। হালকা ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি তখন। সেদিন তোমার মম কাঁটা বেছে দিয়েছিলো।

_জেলাসি ফিল করছো ড্যাড?

_অবশ্যই।

মুখ টিপে হাসেন রামিসা। ইশারায় বলে মাছের কাঁটা বেছে দিবেন। খুশি হয়ে যায় ইফতিহার। রাদ এর চোখ থেকে কোনো কিছুই এরায় নি। কোনো মতে খাওয়া শেষ করে বাবা মা কে সুন্দর অনুভূতি তে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করছিলো রাদ। চোখ যায় ভোরের আইডি তে। এতো রাতে ভোর কে একটিভ দেখে কল করার ইচ্ছে হয়। তবে কেন যেন ফোনে নাম্বার ডায়াল
করে ও কল করে না। খুব যত্ন নিয়ে দুটো লাইন ম্যাসেজ লিখে
‘ রাত জেগে নিশাচর হওয়া ভালো, তবে অধিক রাত জাগা ভালো না। বারো টার পর ফোন ধরা তো একদম ই উচিত নয়। ‘

ম্যাসেজ টা পাঠিয়ে আবারো লিখে
‘ সাধারনত মাঝ রাতে ফেসবুকে একটিভ থাকে প্রেমিক প্রেমিকা যুগল। তুমি ঠিক কোন কারনে একটিভ আছো ভোর? ‘

চলবে

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_17

‘ আপনার কথা অনুযায়ী যদি প্রেমিক প্রেমিকা যুগল মধ্য রাতে একটিভ থাকে তবে আপনি কোন কারনে একটিভ ডাক্তার সাহেব? ‘

ম্যাসেজ টা পড়ে রাদ এর গালে কমলা রঙের আভা ফুটে উঠলো। লজ্জা লাগছে ছেলে টার। ভোর যে এভাবে প্রতি উত্তর করবে তা ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি। যদি একটু ও আঁচ করতে পারতো তবে এমন অযাচিত প্রশ্ন কখনোই করতো না। স্ক্রিনে ভোরের নাম টা ঝল মল করছে। মেয়েটা কল করলো কেন?
_হ্যালো

_অনলাইন কেন?

_না মানে।

রাদ তুতলে যাচ্ছে। ভোরের ঠোঁটে সুচালো হাসি। ছেলে টা কে বিব্রত করতে বেশ ভালোই লাগছে। গলা টা খ্যাক করে কেশে বলল
_গার্লফ্রেন্ড আছে?

_হ্যাঁ?

_সত্যি?

_আরে ধ্যাত আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে।

_যাবেই তো।চোর ধরা পরলে গুলিয়েই যায়।

_এই মেয়ে আমাকে সন্দেহ করছো তুমি?

_অবশ্যই না।

ফিক করে হেসে ফেলে রাদ। ভোরের দুষ্টুমি তে ভরপুর সংলাপ ইনজয় করছে বেশ। অনেক ক্ষন সময় নিয়ে কথা বলে দুজনে। কারোই যেন কথার ঝুলি শেষ হচ্ছে না। ঘড়ির কাঁটা ঢং ঢং করে জানান দেয় 1 টা বেজে গেছে। আধ ঘন্টা কথা হয়ে গেল অথচ দুজনের কেউ আঁচ ই করতে পারলো না। হাই তুলে ভোর। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল
_ঘুম পাচ্ছে খুব।

_আচ্ছা ঘুমাও। কাল কে কলেজ যাবে তো?

_হ্যাঁ নোট কালেক্ট করতে হবে। পরশু আবার এক্সাম আছে।

_হুম রেস্ট নাও। সকাল সকাল পিক করে নিবো।

_আচ্ছা।

কলেজে প্রবেশ করতেই কানে সরু শব্দ ভেসে আছে। দাঁত কেলিয়ে হাসছে নুহাশ। বিরক্তি তে দু ভ্রু বেঁকে যায়। একদম ই সহ্য হয় না ছেলে টা কে। কিছু টা অদ্ভুত ই বটে। হাতে পায়েই বেড়েছেছয় ফিট। মাথার ঘিলু বলতে কিচ্ছু নেই।

_এই যে সুইট গার্ল। তোমার মাথায় কি ঐ টা?

নুহাশের কথা অনুসরণ করে মাথায় হাত দেয় ভোর। সঙ্গে সঙ্গে হেসে লুটোপুটি খায় নুহাশ। ভোরের মেজাজ চরে যায়। এই প্রথম রগরগা কন্ঠে বলল
_ আপনার সমস্যা টা কি? দেখুন সেই প্রথম দিন থেকে জালাচ্ছেন। অসহ্য লাগে আপনাকে। এমন অসভ্য দের মতো আচারন করাই কি আপনার কাজ?

_কে? কোথায়, কার কথা বলছো?

ঘুরে ঘুরে কথা টা বলে নুহাশ। যেন আকাশ থেকে পরেছে ওহ। কাছে এসে পথ আগলে দাঁড়ায়। রাগে কটমট করতে থাকে ভোর। তাঁতে ও যেন নুহাশের হাসি পায়। কাঁধের ব্যাগ টা খুলে নিয়ে নুহাশের বাহু তে বারি দিয়ে পথ আগায় ভোর।এমন টা আশা করে নি ওহ। তাই কয়েক সেকেন্ড তব্ধা খেয়ে থাকে। পরিশেষে যখন বিষয় টা মাথায় খেলে যায় তখনি বুকের বা পাশে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে বলে
_প্রচন্ড লাগলো, তবে বাহু তে নয় হৃদয়ে লেগেছে সুইট গার্ল।

_তোর মাথায় লাগলো না কেন?

বির বির করে কথা টা বলে ভোর। সামনে কারো সাথে ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে যায়।
মাথা উঁচু করে তাকাতেই মাথা টা কেমন ভন ভন করে। এটা কে? অধ্যক্ষ, সহ অধ্যক্ষ নাকি ম্যাথ এর প্রফেসর? সব গুলিয়ে যাচ্ছে কেমন।
.

নিজাম আর রেবা দুজনে বকা ঝকা করছেন রূপ কে। ছেলেটা আস্ত এক রাম ছাগল। বকা খেয়ে ও হেসে চলেছে ছেলেটা। তাঁতে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন রেবা। হাতে ঝাড়ু নিয়ে বলেন
_আজ তোর শিক্ষা হয়েই যাবে।

_এটা ঠিক হচ্ছে না মম। ঝাড়ু পেটা করা হয় ভূতে ধরলে। আমি তো একদম সুস্থ সবল।

রেবা আসতেই ছুটে চলে যায় রূপ। গার্ডেনে এসে নিজের ঝোঁক সামলাতে না পেরে সোজা পরে রাদ এর উপরে। কিছু টা মুভির হট সিন এর মতোই। যেন হিরো হিরোইন রোমান্টিক সিন করে চলেছে। তবে পার্থক্য একটাই যাঁর উপরে পরেছে সে ছেলে। দাঁতে দাঁত চেপে রাদ বলল
_শালা এখনো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবি? নাকি গে রোগে ধরেছে তোকে।

_নো ব্রো, একদম ই নয়। আসলে মিস্টেক হয়ে গেছে।

রাদ এর উপর থেকে উঠে যায় রূপ। পেন্টের মাটি ঝারতে ঝারতে রাদ বলল
_ছিই একদম নোংরা হয়ে গেছি। হাইজিনিং এর প্রতি কোনো খেয়াল ই নেই দেখছি। হারামি কোথাকার নে ধর।

রূপ এর হাতে ফুলের ঝুলি তুলে দেয় রাদ। অর্কিড সহ সাত রকমের প্রসাধনী ফুল। হাজার খানেক কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করে রূপ
_এগুলো কি করবো ব্রো?

_তোর মাথায় দে। গে কোথাকার।

থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে থাকে রূপ। মৃদু স্বরে বির বির করে বলে
_ডাক্তার ভাই দের নিয়ে যতো প্যারা।

ডয়িং রুমে আসতেই হাসির রোল পরে যায়। সচরাচর রাদ এর এমন রূপ দেখা যায় না। ময়লা কাপড়ে দারুন লাগছে ওকে। আর কারো কাছে না লাগলে ও সুপ্তির কাছে তো এমনি লাগছে। ছোট থেকে বালু মাটির উপর ঝোঁক মেয়েটার। সবাই কে বালু তে মাখা মাখি করালে ও রাদ কে করতে পারে নি কখনোই। আজ যেন ষোলো কলা পূর্ন হলো। হাঁটু তে হাত দিয়ে বসে পরে সুপ্তি।বিদ্রূপ করে বলে
_যাহ লাগছে তোকে একদম বাঁদর দের রাজকুমার।

_বাঁদরামি বন্ধ কর সুপ্তি। মার খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে?

_কে মারবে তুই? আরে তুই তো বাঁদর কুমার।

আবারো হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেতে থাকে ওহ। রেগে যায় রাদ। সুপ্তির চুলের গাছি ধরে টেনে নিয়ে আসে গার্ডেনে। ফুল গুলো নিয়ে বিপাকে পরেছে রূপ। গালে হাত দিয়ে ভাবছে। তখনি কেউ একজন ওর উপরে এসে পরে। আর সেটা হলো সুপ্তি। গগন কাঁপিয়ে হাসতে থাকে রাদ। রাগে গজগজ করে সুপ্তি। এক মুঠো কাঁদা মাটি ছুঁড়ে মারে রাদ এর দিকে। তবে নিশানা মিস্টেক হয়ে কাঁদা মাটি লাগে পাশে থাকা রনিত এর উপর। ছুট লাগায় রাদ। এখন ওর গন্তব্য বাথরুমের সাওয়ার এ। সুপ্তি ও পিছু নেয়। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রনিত আর রূপ। দুই ভাই ই ভুক্ত ভুগি। কাঁদায় মাখা মাখি খাচ্ছে। হায়রে কার প্রতিশোধ কার ঘাড়ে পরে।

ঠান্ডা লেগে গেছে রাদ এর। দুপুরে দীপ্তি কাঁদা মাটি খাইয়ে দিয়েছে ওকে। সেই থেকে দুই ঘন্টা পানির মধ্যে ছিলো। আর বার বার ব্রাশ করেছে। ভেতর থেকে নারি ভুরি উল্টে আসতে চায়। সুপ্তি নিজে ও অনুতপ্ত। রাদের বাহু তে স্পর্শ করে বলল
_স্যরি দোস্ত।

_ছুবি না আমায়।

কথা টা বেশ জোড়েই বলে যাঁর কারনে কষ্ট পায় সুপ্তি। মাথা টা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ট্রেরেস এ এসে চোখে পানি ফেলতে থাকে।

_কাজ টা ঠিক হলো না রাদ।

মাথা চেপে আছে রাদ। প্রচন্ড মাথা ব্যথা হচ্ছে। রনিত এর কথায় সচকিত হয়। মৃদু স্বরে বলে
_কোথায় ওহ?

_ট্রেরেস এ।

_ওকে আমি দেখছি।

দরজার কাছে আসতেই দু খানা হাঁচি দেয় রাদ। চরম ঠান্ডা লেগে গেছে। শীতের মাঝে যা তা অবস্থা হলো। নাক টেনে ট্রেরেস এ আসে। সুপ্তি তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। চোখ জলে টুইটুম্বর।
_স্যরি।

নিস্তব্ধ ট্রেরেস এ স্যরি কথা টা ঝমঝমে শব্দ তুলে। পেছন ঘুরে তাকায় সুপ্তি।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। হিচকি তুলে কাঁদে ওহ।বলে
_ আম স্যরি। আমি আসলে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করেছি।

নাক টানে আবার বলে
_আমি কখনো আর এমন টা করবো না।

হেসে ফেলে রাদ। আলগোছে সুপ্তি কে জড়িয়ে ধরে। সুপ্তি যেন আরো আবেগী হয়ে পরে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাদ কে। কাঁদতে থাকে সর্বশক্তি দিয়ে। ফিচেল গলায় রাদ বলে
_একদম কাঁদবি না। তুই তো জানিস তোকে আমি কতো ভালোবাসি। আমার সব থেকে দুষ্টু বান্ধবী তুই।

_স্যরি রে দোস্ত।

_উহহু বন্ধুত্বে কোনো স্যরি নেই।

এবার পূর্ন দৃষ্টি তে তাকায় সুপ্তি। মাথায় একটা আইডিয়া আসে। রাদের কলার চেপে বলে
_মেয়েটা কে ছিলো বল।

_আবার মেয়ে?

দুষ্টু হাসে সুপ্তি। পুরোই ধোঁকা বাজ মেয়েটা। উপায় না পেয়ে সুপ্তি কে নিয়ে বসে অতীত এর ঘটনা শোনাতে।

পার্সেল এসেছে তবে কে পাঠালো এই পার্সেল। রাদ? কিছু টা চিন্তা গ্রস্ত হয়, রাদ ছাড়া কে পাঠাতে পারে ওর জন্য গিফ্ট?
প্যাকেট টা খোলে, টকটকে লাল রঙের শাড়ি। সাথে এক গাছি চুড়ি। একটা ছোট্ট চিরকুট যেটা তে লেখা আছে ‘ সুইট গার্ল ‘
বুকের ভেতর ধক করে উঠে। পার্সেল টা নুহাশ পাঠিয়েছে?

_কি হয়েছে ভোর? তোমার কন্ঠ টা এমন শোনাচ্ছে কেন?

_ভালো লাগছে না ডাক্তার সাহেব। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।

এবার সিরিয়াস হয় রাদ। সেই কখন থেকে রাদ কে কল করে চলেছিলো ভোর। নাম্বার টা সুইচ অফ ছিলো। মাঝ রাতে অন হয় নাম্বার ঠিক তখনি কল করে ভোর। আর গলার স্বর কিছু টা ভয়ার্ত।
_এই মেয়ে কোনো অসুবিধা হচ্ছে তোমার? কেউ কিছু বলেছে।

_উহহু।

_তবে

_আমার ভালো লাগছে না।

_হোস্টলে থাকতে খারাপ লাগছে তোমার?

এবার কেঁদে দেয় ভোর। ফোনের ওপাশ থেকে রাদ বলে
_কাঁদছো কেন তুমি?

_বললাম তো ভালো লাগছে না। আপনি আমাকে নিয়ে যান কোথাও। আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।

কল কেঁটে যায়। রাদের দু চোখ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। ভোর হঠাৎ করে এমন করছে কেন?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here