সুদর্শন শঙ্খচিল’ [৩৪]

0
330

‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[৩৪]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

চাঁদ কারো থেকে মাহিমের নাম শুনে ঘৃণা নিয়ে মনে মনে বলল,” তুই আসলেই জানোয়ার মাহিম। প্রতি নিয়ত এতো মানুষ মরে! তুই মরতে পারিস না? তোর মরণ হয় না কেন? মাশুম বাচ্চাটার চোখের পানি মূল্য তোকে দিতেই হবে, মিলিয়ে নিস।” কথাটা বলে চাঁদ ঘুমন্ত ইচ্ছের দিকে তাকাল।

একে একে সবাই কবরস্থান থেকে বাসায় ফিরল। রনিতের বাবা মা আর বড় ভাই এসেছিলেন। রনিত এবং ইচ্ছের মামা ভিডিও কলে মৃত বোনকে দেখল। ইচ্ছের মামা জীবিত থাকতে বোনের খোঁজ নেয়নি৷ অথচ বোনের মৃত্যুতে ঠিকই অশ্রু ঝরাচ্ছে। ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝেনা’ ব্যাপারটা ঠিক এই রকম। বেশ কিছুক্ষণ পর প্রত্যয় প্রিয়ম ফিরে আগে ইচ্ছের কাছে গেল। ইচ্ছে প্রত্যয়দের ফ্ল্যাটে ঘুমাচ্ছে। তুয়া ছলছল চোখে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর ই খুব কষ্ট হচ্ছে, আর ইচ্ছে বাবা মা সে তো কাঁদবেই! এদিকের সব কাজ সম্পূর্ণ করে প্রত্যয়রা বাসায় ফিরতে চাচ্ছিল। তখন তুয়ার আব্বু আম্মু ওদের বাঁধ সাধলেন। প্রত্যয় উনাদের বুঝিয়ে বললেন, এখানে ইচ্ছে থাকলে আরো ভেঙে পড়বে। ওর বাবা মাকে খুঁজবে, কান্না করবে। তখন ওকে সামলানো আরো মুশকিল হয়ে যাবে। একথা শুনে উনারা প্রত্যয়ের কথা মেনে নিলেন। প্রত্যয়দের কারো মন ভাল নেই! তাই জোরাজুরি করেও কেউ কিছু মুখে দিল না। মূলত এখন সবাই ইচ্ছেকে নিয়ে বেশ চিন্তিত।

এদিকে, ইচ্ছে ঘুম থেকে উঠে সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে গেল। চাঁদ বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেছে। এজন্য সে ইচ্ছের যাওয়াটা টের পেল না। আর বাকিরা তুয়াদের বাসায় কথা বলছিল। যাতে ইচ্ছের ঘুমটা নষ্ট না হয়। নিচে ইচ্ছেদের আগের ফ্ল্যাটে গিয়ে ইচ্ছে দরজা ধাক্কাচ্ছে। আর কেঁদে কেঁদে ডাকছে,”আম্মু!আম্মু! দলজা খুলো। আমি বাছায় যাব। আব্বু! দলজা খুলো! তোমাল লাজকন্যা দুঃখু পাচ্ছি। আমি ডাকছি আব্বু! আম্মু! ”

তুরাগ ফোনে রিচার্জ করে উপরে উঠতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে গেল। ইচ্ছে করুন সুরে ওর আব্বু আম্মুকে ডাকছে। কেঁদে কেঁদে পুরো মুখটা লাল করে ফেলেছে। ডাগর ডাগর চোখে দু’টো থেকে অঝরের অশ্রু ঝরছে। ওর হাতে পায়ে এখনও ব্যান্ডজ করা। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকিও উঠে গেছে। তুরাগ ইচ্ছেকে কোলে নিয়ে বলল,”জানপাখি কাঁদে না সোনা। তুমি তো গুড গার্ল আমার সোনা পাখিটা।” ইচ্ছে এখন কারো কথা শুনতে নারাজ। ওর এখন আব্বু আম্মুকে চাই-ই চাই। ইচ্ছে আম্মু! আম্মু! করে উচ্চ শব্দে কাঁদছে। ইচ্ছের কান্না শুনে প্রিয়ম দৌড়ে এসে ইচ্ছেকে কোলে নিল। ইচ্ছে প্রিয়মের গলা জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বমি করে দিল। তুরাগ ইচ্ছের কপালের দুইপাশ চেপে ধরল। প্রত্যয় পানি এনে ইচ্ছের মাথায় পানি দিয়ে, একটু পানি খাওয়াল। ইচ্ছে প্রত্যয়ের কোলে গিয়ে বুকের সাথে লেপ্টে গেল। যেন নিষ্প্রাণ একটা দেহ। প্রত্যয় পকেট থেকে রুমাল বের করে ইচ্ছের মাথা মুছে ইচ্ছেকে নিয়ে গাড়িতে বসল। প্রিয়ম ওর আম্মুদের ডেকে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ল। তুয়ারা এসে গাড়িতে বসলে গাড়ি চলতে শুরু করল। ইচ্ছে ক্লান্ত হয়ে থেমে থেমে ফুপাচ্ছে। চিৎকার করে কান্নার ফলে ইচ্ছের গলা বসে গেছে।

প্রিয়ম আদুরে সুরে ইচ্ছেকে বলল,”ইচ্ছেমনি আমার সঙ্গে কথা বলবেনা? আমি কিন্তু মেলা দুঃখু পাচ্ছি।” তুয়া কান্নারত কন্ঠে বলল,” ইচ্ছে পুতুলের বিয়ে দিবি না?” ইচ্ছে কারো সঙ্গে কথা বলছেনা। শুধু বার বার কপালে হাত দিচ্ছে। প্রত্যয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আলতো করে ইচ্ছের কপাল টিপে দিতে লাগল। আরাম পেয়ে ইচ্ছে চোখ বন্ধ করে নিল। প্রত্যয় মুচকি হেসে বলল,”ইচ্ছেমনি চানাচুর খাবে? তুমি না খেলে কিন্তু প্রিয়ম পুরোটা খেয়ে নিবে।” ইচ্ছে বসে যাওয়া গলাতে বলল,”প্রত্তুয় আমি কানাচুর থাবো না। আমি আম্মু যাব।”

ইচ্ছের মনযোগ ঘুরাতে প্রিয়ম পার্কের সাইডে গাড়ি থামাল। তারপর ইচ্ছেকে কোলে নিয়ে বেলুন ওয়ালার কাছে গেল। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, বেগুনি, হরেক রকমের বেলুন আছে। বেলুন গুলোর কানও আছে। সাথে স্মাইলিং ইমুজি বেলুনও আছে। প্রিয়ম ইচ্ছেকে বেলুন দেখিয়ে মন খারাপ করে বলল,” না হাসলে বেলুন ওয়ালা আমাদেরকে বেলুন দিবে না। এবার কি করব?” বেলুন ওয়ালা ভাবলেন এরা বাবা মেয়ে। বাবা বেলুন দিয়ে মেয়ের রাগ ভাঙ্গাচ্ছেন। তাই উনি হেসে বললেন,”একটু হাসো তো আম্মা তাহলে বেলুন দিমু।” ইচ্ছে ঘাড় ঘুরিয়ে ছলছল চোখে প্রত্যয়ের দিকে তাকাল। তারপর দাঁত দেখিয়ে বলল,”এই যে আমি হাসচি।” ইচ্ছের কথা শুনে প্রিয়ম আর বেলুন ওয়ালা দু’জনে হেসে উঠল। প্রিয়ম অনেক গুলো বেলুনের সুঁতো ইচ্ছের হাতের কব্জিতে বেঁধে দিল। হরেক রকম বেলুন একসঙ্গে বাতাসে উড়তে লাগল। উড়ন্ত বেলুন দেখে ইচ্ছের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটল।

প্রত্যয় গাড়িতে বসে ওদেরকে দেখছে। একটু আগে ইচ্ছে কাঁদছিল। আবার এখন বেলুন পেয়ে হাসছে। একেই বলে বাচ্চা! চাঁদ তুয়া গাড়ি থেকে বের হয়ে দাঁড়াল। প্রিয়ম দোকানে গিয়ে অনেকগুলো চকলেট কিনে ইচ্ছেকে দিল। তবুও ইচ্ছের মনটা একটু ভার হয়ে আছে। তারপর প্রিয়ম পুনরায় ইচ্ছেকে প্রত্যয়ের কোলে দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগল। তুয়া চাঁদ ইচ্ছের থেকে চকলেট আর বেলুন চাচ্ছে। ইচ্ছে ভ্রু কুঁচকে ওদের বলল,”উম! এগুলো ছব আমাল।” কথাটা শুনে প্রত্যয় মুচকি হেসে ইচ্ছের বেলুন গুলো জানালার বাইরে রাখল। উন্মুক্ত বাতাসে বেলুন গুলো অবাধ্য হয়ে উড়তে লাগল। তখন ইচ্ছে মিষ্টি হেসে উড়ন্ত বেলুনগুলো দেখতে লাগল।

চাঁদ জানালার বাইরে দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভাবছে, পৃথিবীতে খারাপ মানুষ না থাকলে বেশ ভাল হত। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। কারন ভাল মন্দের পালা নিয়েই তো পৃথিবী। আচানক বেলুন ফাটার শব্দে চাঁদ চমকে উঠল। ওরা জ্যামে আঁটকে গেছে। পাশের গাড়িতে থাকা একটা মেয়ে পিন দিয়ে পরপর দু’টো বেলুন ফুটো করে দিয়েছে। বেলুন ফাটতে দেখে ইচ্ছে কেঁদে দিল। প্রত্যয় মাথা বের করে কিছু বলার আগে তুয়া হুড়মুড় করে গাড়ি থেকে নেমে গেল। প্রত্যয়ের আব্বু জিজ্ঞাসা করলেন,” আম্মু নামছ কেন?” তুয়া,’একটু দরকার আছে আব্বু’ বলে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে গেল। আর দৌড়ে পেছনের দিকে গেল। প্রত্যয় ইচ্ছেকে প্রিয়মের কোলে দিয়ে সেও তুয়ার পিছু নিল। আর বলে গেলে, ওদের চলে যেতে। তুয়া কারন ছাড়া এভাবে বের হত না আর একথা প্রত্যয়ের অজানা নয়। সেই কারনটা জানতেই প্রত্যয় তুয়ার পিছু গেল। প্রিয়ম ইচ্ছেকে পাশের সিটে বসিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে দিল। একটু চিন্তিত হয়ে ইচ্ছের সঙ্গে গল্প করতে লাগল। প্রায় দশ মিনিট পর, জ্যাম ছুটলে প্রিয়মরা বাসার দিকে রওনা হল।

তুয়া প্রত্যয়কে নিয়ে নামীদামি একটা কফিশপে এসেছে। ওদের ঠিক সামনের চেয়ারে একজন মাথা নিচু বসে আছে। প্রত্যয় কফি অর্ডার করে অন্য চেয়ারে গিয়ে বসল। তুয়া তখন শান্ত ভঙ্গিতে বলল,”মিতু তুই আমাকে এড়িয়ে চলিস কেন? আমি ধর্ষিতা বলে নাকি অন্য কোনো কারণে?” মিতু নিরুউত্তর রইল। তুয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,”বাহ! এই তোর বন্ধুত্ব? ধর্ষিতা হয়েছি বলে এভাবে পর করে দিলি?” মিতু দাঁত কটমট করে বলল,” কেন এড়িয়ে চলি তোর আরেক বফ প্রিয়মকে জিজ্ঞাসা কর। গাছেরও খাবি আবার তলারও কুড়াবি। আর ভেবেছিলি আমি কিছু বুঝব না?” তুয়া অবাক হয়ে বলল,”প্রিয়ম আমার বফ? একথা তুই বলতে পারলি?” মিতু আরো একটু চেঁতে উঠে বলল,”ভুল কি বলেছি? মজা তো দু’জনের থেকেই নিস। এখন আবার সাধু সাজছিস?” তুয়া কিছু বলার আগে প্রত্যয় তুয়ার পাশের চেয়ারে বসে বলল,” ভাষা সংযত করে কথা বলুন। সংযত ভাষা হচ্ছে ভদ্রতার পরিচয়” মিতু তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,” ডক্টর প্রত্যয় নিজে অক্ষম বলে বউয়ের দায়িত্বটা ভাইকে দিয়েছেন ? নাকি অন্য কোনো ঘাপলা আছে?”

মিতু কথাটা শেষ করতেই মিতুর গালে একসাথে দু’টো থাপ্পড় পড়ল। বাম গালে দিয়েছে তুয়া আর ডান গালে দিয়েছে প্রিয়ম। একসাথে দু’টো থাপ্পড়ে মিতুর নাক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে ওর মাথা ঘুরতে লাগল। প্রিয়ম কখন এসেছে কেউ বুঝতে পারেনি। প্রিয়ম রেগে মিতুকে দাঁড় করিয়ে আরেকটা থাপ্পড় বসাল। প্রত্যয় দ্রুত উঠে প্রিয়মকে থামাল। তখন মিতুর বফ কফিশপে প্রবেশ করল। এবং মিতুর করুণ অবস্থায় দেখে চেচিঁয়ে উঠল। মিতুর বফ হচ্ছে ডক্টর কাউসার। প্রত্যয় কাউসারকে দেখে অবাক হলেও প্রকাশ করল না। কাউসার দ্রুত মিতুকে ধরে বসিয়ে পানি খাওয়াল। প্রত্যয় পুরো কফিশপ এক ঘন্টার জন্য বন্ধের ব্যবস্থা করল। যাতে ব্যাপারটা সোস্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল না হয়। যুগ হিসেবে এখন তো এসবই বেশি হয়। তাই বুদ্ধিমানের মতো প্রত্যয়ের এই ব্যবস্থা। তুয়া মিতুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। ওর রুচি হচ্ছে না মিতুর সঙ্গে কথা বলার। থাপ্পড় খেয়ে মিতুর অবস্থা খুব খারাপ।

প্রিয়ম রেগে কিছু বলার আগে প্রত্যয় ওকে থামিয়ে মিতুকে বলল,”এসব কথা বলতে আপনার বিবেকে বাঁধল না? যদিও বিবেকহীন মানুষরা সবই পারে। হুম এটাও জানি! আপনি তাদের দলেরই অন্তর্ভুক্ত। সে যাই হোক, নিজের ফেন্ডকে ধর্ষিতা প্রমান করে খুব শান্তি পেয়েছিলেন, তাই না মিস মিতু?
তুয়া হতবাক হয়ে প্রত্যয়ের দিকে তাকাল।

প্রত্যয় আবার বলতে শুরু করল,” হুম! প্রিয়ম আপনাকে কলেজ থেকে টিসি নিতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু আমি আপনাকে সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম। কারন আমি ভেবে ছিলাম আপনি নিজেকে শুধরে নিবেন। কিন্তু আপসোস অমানুষরা মানুষের আয়ত্তে থাকেনা। তাই নিজেদের শুধরাতে পারেনা। ” এসব শুনে তুয়ার মাথাতে একটা প্রশ্ন এসে ধাক্কা খেলো,’এসবের পেছনে মিতু ছিল?’ আর এসব প্রত্যয় প্রিয়ম জেনেও ওকে জানায়নি। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তুয়ার মস্তিষ্কশূন্য হয়ে হাত পা থরথর করে কাঁপতে লাগল। প্রত্যয় তুয়ার সামনে পানির গ্লাস এগিয়ে খেতে বলল। কাউসার তখন রেগে প্রিয়মকে বলল,” মাদ*** ওকে মারার সাহস কোথায় পে?” কথাটা শেষ করার আগে প্রত্যয় স্বজোরে কাউসারের নাক বরাবর ঘুষি মেরে শান্ত কন্ঠে বলল,”খবরদার মা তুলে কথা বলবেন না।” কাউসার নাক ধরে তাৎক্ষণিক মেঝেতে বসে পড়ল। প্রিয়ম তখন বলতে লাগল ,

-“ডক্টর কাউসার মিতুর আপন খালাতো ভাই সাথে বফও হয়। ওরা দু’জন বখাটেকে টাকা দিয়ে এসব করিয়েছিল। মিতুর রাগ তুয়ার উপর আর কাউসারের রাগ ভাইয়ার উপর। মিতু তুয়ার বান্ধবী হলেও বরাবরই সে হিংসুটে টাইপের। মিতু পূর্ব নামের এক ছেলে পছন্দ করত। কিন্তু ছেলেটা নাকি তুয়াকে পছন্দ করত। আর মিতু ভাবত তুয়া এখানে কলকাটি নেড়েছে। তাছাড়া তুয়ার ডায়রীতে ভাইয়াকে নিয়ে হয়তো কিছু লিখা ছিল। সেটা মিতু দেখেছিল এবং মনে মনে তুয়ার উপর রেগে ছিল। কারন মিতু প্রথম দেখাতে ভাইয়াকে পছন্দ করেছিল। আগের বারের মতো তুয়া ভাইয়াকেও ওর থেকে নিয়ে নিল।

এদিকে, ডক্টর কাউসারের ভাইয়ার প্রতি রাগের কারণ ছিল ভিন্ন। একদিন অন্য হসপিটালে ভাইয়া এক পেশেন্টের সার্জারি করতে গিয়েছিল। অপারেশন চলাকালীন কাউসার ভাইয়াকে দ্রুত হসপিটালে ফেরার খবর পাঠায়। কারন ভাইয়ার হসপিটালে কাউসারের মাকে ভর্তি করা হয়েছিল। উনিও ছিল হার্টের পেশেন্ট। উনার মায়ের অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। একথা কাউসারও জানত। সার্জারি চলাকালীন পেশেন্টকে ফেলে সেদিন যেতে পারেনি ভাইয়া। ডক্টর ঈশান প্রাথমিক চিকিৎসা করার আগে কাউসারের মা মারা যায়। তখন থেকে কাউসারের ভাইয়ার প্রতি এতো রাগ। সে ভাবে ভাইয়ার অবহেলায় ওর মাকে হারিয়েছে। আর এরা দু’জনই রাগ তুলতে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছে তুয়াকে। মিতু ভেবেছিল, ধর্ষণ না হয়েও ধর্ষিতার কালিমা তুয়া সহ্য করতে পারবেনা। ফলস্বরূপ সে সুইসাইড করবে আর মিতুর পথ পরিষ্কার হবে। তারপর বুদ্ধি খাঁটিয়ে ভাইয়ার মনে নিজের জায়গা তৈরী করে নিবে। কিন্তু অপাসোস ওদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। মিতুকে অপহরণ করে ভয় দেখিয়ে আমি এসব জেনেছি। আর মিতুকে টিসি নিয়ে অন্য কলেজে যেতে বাধ্য করেছি।”

মিতু টিস্যুতে নাকের রক্ত মুছে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”বেশ করেছি। আমার সব পছন্দের জিনিস সব সময় ওই কেড়ে নেয়। দরকার হলে ভবিষ্যতেও করব।” তুয়া ছলছল চোখে মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে। এই মিতুকে তার বড্ড অচেনা লাগছে। এদের দু’জনের মুখেই একবিন্দু অপরাধবোধের চিহ্নটুকু নেই। কাউসার এখনও প্রত্যয়কে অপরাধী ভাবে। এতে প্রত্যয়ের কিছু যায় আসেনা। কারন আল্লাহ জানে তার মনের কথা। প্রিয়ম কথাগুলো বলে চুপ হয়ে গেল। তুয়া দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিঃশব্দে কাঁদছে। প্রত্যয় তুয়াকে নিয়ে দুই পা বাড়িয়ে কাউসারের দিকে তাকিয়ে বলল,”আমার হসপিটাল আপনাকে আর প্রয়োজন হবেনা। আমি মনে করি ‘দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভাল।’

কথাটা বলে আর না দাঁড়িয়ে তিনজনে বেরিয়ে গেল। কাউসার আর মিতু বসে রাগে ফুঁসতে লাগল। ওইদিকে, ইচ্ছে চাঁদের সঙ্গে খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে গেছে। প্রত্যয় বাসায় ফিরে ইচ্ছেকে ওদের বেডের মাঝখানে শুইয়ে দিল। তারপর ওরা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ইচ্ছের পাশে শুয়ে পড়ল। মিতুর কাজে তুয়া বোকার মতো কান্নাকাটি করল না। বরং বিপদ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাল। প্রত্যয় অপর পাশে আধশোয়া হয়ে মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছিল। ডক্টরদের তো ডিগ্রী আর পড়ার শেষ নেই। তুয়া গলা খাকারি দিয়ে প্রত্যয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিল। প্রত্যয় তুয়ার কাজে মুচকি হাসল। তুয়া শুয়ে শুয়ে ওর বই পড়তে লাগল। কারন কিছুদিন পর ওর এইচএসসি পরীক্ষা।

এদিকে ইচ্ছে সরতে সরতে তুয়ার কোলের মধ্যে ঢুকে গেছে। রাত একটার দিকে কেবল তুয়ার চোখ দু’টো লেগে এসেছিল। আর প্রত্যয় পানি খাচ্ছিল। হঠাৎ ইচ্ছে ঘুমের ঘোরে তুয়ার বুকের কাছে মুখ ঘষতে ঘষতে বলল,”আম্মু দিদি থাব! দিদি দাও! আম্মু! দিদি থাব! ইচ্ছের এমন কাজে তুয়া হুড়মুড়িয়ে উঠে বসল। প্রত্যয় তুয়া দু’জনেই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছের এখনও বেষ্ট ফিডিংয়ের অভ্যাস আছে, একথা ওরা জানত না। সারাদিন না খেলেও রাতে ঘুমানোর আগে খাওয়া ওর অভ্যাস। এজন্য ঘুমের ঘোরে তুয়াকে ওর আম্মু ভেবেছে। তুয়া ছলছল চোখে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে আছে। বাচ্চাটা ঘুমের ঘোরেও ওর আম্মুকে খুঁজছে।

প্রত্যয় ইচ্ছেকে সুন্দর করে শুইয়ে বলল, ” এই মাশুম বাচ্চাকে সামলাব কিভাবে? এতো এখনও দুধের বাচ্চা।”

To be continue….!!

গল্প নিয়ে আলোচনা করতে জয়েন হন
📚 Nurzahan’s Family 📚 (আড্ডাঘর)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here