#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_16
মুগ্ধ ছটফট করতেই আছে আর রুহি ওর হাতে ছ্যাকা দিতে আছে!মুগ্ধর চোখে ছলছল পানি দেখে রুহি মুগ্ধর মুখ থেকে কাপড়টা খুলে নেয় আর হাতটাও খুলে দেয়!মুগ্ধ সাথে সাথে রুহিকে একটানে তুলে শরীর সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়!রুহি ছিটকে মাটিতে পড়ে যায়!মুগ্ধ রুহি কে মাটি থেকে তুলে আবার আরেকটা থাপ্পড় মারে তারপর রুহিকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে! মুগ্ধ রুহিকে ছেড়ে দৌড়ে পাশে দোকানে যায় আর ঠান্ডা পানি এনে রুহি হাতে ঢালতে থাকে!মুগ্ধ ওর রুমাল ভিজিয়ে রুহির হাতে জড়িয়ে দেয়! রুহি মুগ্ধ হয়ে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে!মুগ্ধ রুহিকে বললো…
–
মুগ্ধঃ আজকে তোকে বিয়ে করতে হবে তাই তো??ওকে আমি রাজি!নিজেকে এভাবে তাহলে কষ্ট দিলি কেন অসভ্য মেয়ে!একবার আমাকে বলার সুযোগ না দিয়েই এভাবে বার বার কষ্ট দেওয়ার মানে কি??আমাকে কি তোর কাপুরুষ মনে হয় যে আমি ভয় পাবো। আমাকে তোর বিশ্বাস হয় তাই তো! ওকে আজকে আমাদের বিয়ে হবে।(চোখ লাল করে)
–
রুহি সুমি, ইরাদের ডেকে নেয় তারপর কাজি অফিসে চলে যায়!মুগ্ধ কবুল বলে সাইন করে দেয় আর রুহি থম মেরে বসে আছে!মুগ্ধ কলমটা তুলে রুহির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে…
মুগ্ধঃএতদূর এসে পিছিয়ে যাওয়ার কোন মানেই হয় না!আর এখন যদি তুই পিছিয়ে যাস তো আমি তোকে পিছাতে দিবো না।সাইন কর…
–
রুহি কাঁপা হাত আর দুরুদুরু বুক নিয়ে কবুলও বললো আর সাইনও করলো।তারপর মোনাজাত করে কাজি অফিস থেকে বের হয়ে গেল।তারপর সবাই মিলে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। সুমি,ইরা,রাহাত আর আরিয়ান আলাদা টেবিলে আর মুগ্ধ আর রুহি এক টেবিলে।মুগ্ধ রাহাতদের কাছে গিয়ে বললো…
–
মুগ্ধঃতোমাদের যা ইচ্ছে হয় খাও! আমি তোমাদের ট্রিট দিলাম।
–
মুগ্ধ রুহির আর ওর জন্য বিরিয়ানী,চিকেন ফ্রাই,সালাড,আইসক্রিম, দই ,অর্ডার দিলো!মুগ্ধ রুহির সামনে চেয়ারে বসলো। রুহি মাথা নিচু করে আছে!মুগ্ধ রুহির বামহাতটা টেনে রুমালটা খুলতে খুলতে বললো…
মুগ্ধঃ বিয়ে করলি তাহলে মুখটা ভার করে আছিস কেন??এখন তো তোর খুশিতে নাচানাচি করার কথা…
রুহিঃ না কিছু না!তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছো??
মুগ্ধঃনা!রাগ করার কি আছে??
রুহিঃ এই বিয়ের কথা এখন কাউকে জানানোর দরকার নাই!দেখি এবার বাপিরা মিলে কি ঠিক করে?তোমাকে হারানো ভয়ে এমন কাজটা করতে বাধ্য হলাম।তবে আমার মনে কোন আফসোস নাই…
মুগ্ধঃহাতে কি এখনো জ্বালা করছে??
রুহিঃনা!
মুগ্ধঃ রুহি এমন বোকামি আর করিস না!একটা কথা মনে রাখিস! যে যেতে চাই তাকে হাজার চেষ্টা করে আটকে রাখা যায় না!আর যে থাকতে চাই তাকে বার বার লাথি দিলেও দেখবি তোর কাছেই ফিরে আসবে।আমিও তোকে চাই বাট এভাবে পেতে চাইনি।আর ইসলাম ধর্ম মতে বাবা মায়ের অনুপস্থিতিতে বিয়ে গ্রহনযোগ্য হয় না!আর যতদিন না আমাদের বাবা মায়েরা আমাদের আবার বিয়ে দিচ্ছে ততদিন আমি তোকে আমার কাছে টানবো না।
রুহিঃহুমমম!এখন তুমি যা বলবে আমি তাতেই রাজি কারন আমার মনে তোমাকে হারানো ভয় আর নাই।
–
মুগ্ধ নিজেও খাচ্ছে আর রুহিকেও খাইয়ে দেয়!তারপর সবাই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যায়।সুমিরা সবাই চলে যায়!রুহি মুগ্ধর তাকিয়ে বলে…
রুহিঃ এই যে মিঃ হাজবেন্ড তোমার বিয়ের ট্রিট দাও
মুগ্ধঃতাহলে এখন কি দিলাম??
রুহিঃ এখন তো পেট ভরালে এবার মন ভরানোর ট্রিট দাও।
মুগ্ধঃমন ভরানোর জন্য আবার কি ট্রিট লাগবে শুনি??(ভ্রু কুচকে)
রুহিঃ তুমি এখন আমাকে নিয়ে বাইকে নিয়ে ঘুরবে!আজকে আমার মন খুব ভালো তাই আজকে অনেক অনেক ঘুরবো…
মুগ্ধঃ ঘুরতেই হবে??
রুহিঃহুমম!ঘুরতেই হবে!আজকে অনেক দুরে চলো যেখানে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ থাকবে না।যেখানে প্যা পু ভ্যা ভু এরকম কোন শব্দ থাকবে না।যেখানে প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবো!যেখানে গেলে তোমাদের কাঁধে মাথা রাখতে পারবো…
মুগ্ধঃতাহলে মেজ আম্মুকে বল তুই আমার সাথে আছিস!তা না হলে চিন্তা করবে।
–
রুহি মুগ্ধকে বাসায় যেতে বললো!মুগ্ধও রুহি কথামত রুহিকে বাইকে বসিয়ে বাইক স্টাট দিলো!কারন কলেজ ড্রেসে ঘুরতে যাওয়ার মানেই হয় না!মুগ্ধকে দাড়াতে বলে রুহি একদৌড়ে ওর বাসায় চলে গেল!তারপর ঝটপট সাওয়ার নিয়ে কলাপাতা কালার একটা থ্রিপিস পড়ে নিলো আর মুখটা ধুয়ে মুখে ক্রিম লাগালো আর ঠোঁট চ্যাপষ্টিক।চুল গুলোকে ছেড়ে দিলো আর ছোট একটা ক্লিপ দিয়ে চুল আটকে নিলো!আর কিছু চুল সামনে দুইপাশে এনে রাখলো!সাদা পাথরের ছোট একটা টিপ দিলো কপালে।তারপর চুরিদারে পায়জামার কুচি গুলো ঠিক করতে করতে ওর আম্মুকে ডাকলো!
–
রুহিঃ আম্মু আমি তোমার মেয়ের জামাইয়ের সাথে ঘুরতে যাচ্ছি !আজকে সারাদিন ঘুরবো তাই আসতে লেইট হবে..
আম্মুঃকার সাথে ঘুরতে যাচ্ছিস???(ভ্রু কুচকে)
রুহিঃ আমি মুগ্ধ ভাইয়ার সাথে যাচ্ছি !কানের মাথা খাইছো নাকি ভুলভাল শোনো।
আম্মুঃতুই তো বললি…!
রুহিঃআমি কিছু বলিনি! যা বলছি ভুলে বলছি।শোন মুগ্ধ ভাইয়া কোন বন্ধু ওয়াইফের বাচ্চা হয়েছে তাই দেখতে যাচ্ছি। বাই
আম্মুঃ আচ্ছা…
মুগ্ধঃ তোর কি মাথায় ঘেলু বলতে কিছু আছে??আমাকে এতক্ষণ দাড়িয়ে রাখার কোন মানে হয় (দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃযা থাকার সব আছে!সময় হলো দেখতে পাবে। এবার তো চলো (বাইকে উঠে বসে)
–
রুহি ওর ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে মুগ্ধকে দিলো!মুগ্ধ আর রুহি বাইক নিয়ে ঘুরতে বের হলো।মুগ্ধ বার বার বাইকের গ্লাসে তাকিয়ে রুহিকে দেখছে!আজকে কেন জানি মুগ্ধর কাছে রুহিকে দেখে মনে হচ্ছে রুহির মাঝে অন্যরকম একটা সৌন্দর্য এসে ভর করছে!মুগ্ধ রুহিকে বললো…
–
মুগ্ধঃএত সাজগোজ করছিস কেন??তোকে না বলছি সাজগোজ করবি না আর চুল ছেড়ে বাইরে বের হবি না।
রুহিঃ কই সাজগোজ করলাম???তোমার বিয়ের দিন সাজবো।মুগ্ধর লাল টুকটাক বউ সাজবো আমি।
মুগ্ধঃ…..
–
মুগ্ধ রুহিকে নিয়ে একটা শপিংমলে এসে জুয়েলারি শপে গেল!তারপর রুহিকে একটা রিং আর নোজপিন কিনে দিলো।নোজপিন রুহি নিজে ইচ্ছে করে কিনছে!শপেই মুগ্ধ নিজে হাতে রুহির অনামিকা আঙ্গুলে রিং পড়িয়ে দিয়েছে।আর রুহির নাক ফুটা করা নাই এজন্য রুহি যত্ন করে নোজপিনটা ওর কাছে রেখে দেয়।তারপর আবার ওরা বাইকে বসে আর মনের আনন্দে মুক্ত পাখির মত এক জন আরেকজনের সাথে সময় কাটাতে থাকে….
–
ঘুরতে ঘুরতে মুগ্ধ একটা গ্রামের মধ্যে ঢুকে!গ্রামটা অনেক সুন্দর!ফসলের মাঠগুলো দেখতে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে,সরিষার ক্ষেতের দিকে তাকালে চারদিকে হলুদ আর হলুদ!সরিষার ফুল গুলো হালকা বাতাসে নড়েচড়ে উঠছে।বাতাসে যখন সরিষার ফুল গুলো নড়ছে তখন সেই ফুলে রাখা মৌমাছি রাও নড়ে উঠছে।মুগ্ধ বাইক থামিয়ে এতক্ষণ এত মনোরম সৌন্দর্য টা উপভোগ করছিলো!মুগ্ধ ওর পাশে তাকিয়ে দেখে রুহি নেই।মুগ্ধ আশে পাশে তাকিয়ে রুহিকে খুঁজতে থাকে!মুগ্ধ রুহিকে দুইবার ডাকলো…
–
মুগ্ধ তিনবার যখন ডাকতে যাবে!তখন রুহি পাশের গর্ত থেকে মুগ্ধকে ডেকে উঠলো!মুগ্ধ ওর পেছনে ঘুরে রাস্তার দাড়িয়ে একটা নিচু হয়ে তাকিয়ে দেখলো একটা ছোট্ট গর্তের মধ্য রুহি বসে।মুগ্ধকে দেখে রুহি কাঁদো কাঁদো হয়ে ডাকলো…
–
মুগ্ধঃকি রে?? তুই ওখানে বসে আছিস কেন???
রুহিঃআমি পড়ে গেছি! আমাকে টেনে তোলো রে…
মুগ্ধঃওয়েট….আমি আসছি।
রুহিঃতারাতারি এসো।
মুগ্ধঃএখানে আসলি কি করে???
রুহিঃ সরিষা ক্ষেতে পিক তুলতে গিয়ে গোবরের উপর পা তুলে দিছিলাম।ঘাসে গোবর মুছতে গিয়ে হড়হড় করে নিচে পড়ে এই গর্তে এসে আটকে পড়ছি।
মুগ্ধঃইয়াক!ছিঃ!ছিঃ! রুহির তোর পায়ে গোবর লেগে আছে।ইয়াক কি গন্ধ????
রুহিঃইয়াক ইয়াক করা বন্ধ করে আমাকে তোলো তারাতারি!
–
মুগ্ধ রুহিকে টেনে তুলছে!মুগ্ধর কেন জানি খুব হাসি পাচ্ছে! মুগ্ধ এতক্ষণ হাসিটা কনট্রোল করছিলো বাট রুহির মুখের আকৃতি দেখে হো হো করে হাসতে শুরু করলো!মুগ্ধ হাসি দেখে রুহির রাগে কটমট করে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে।রুহির পায়ে গোবর নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাটছে আর মুগ্ধ রুহির পেছন পেছন আসছে আর হাসছে!রুহি এমন ভাবে পায়ে গোবর লাগছে যে! রুহির পা দেখে মনে হচ্ছে কেউ রুহিকে গোবরের জুতা পরিয়ে দিয়েছে।ওদের পাশ দিয়ে দুইটা বাচ্চা যাচ্ছিলো বাচ্চা দুইটাও রুহির অবস্থা দেখে হাসছে!মুগ্ধর কেন জানি আজকে হাসি থামছে না!মুগ্ধ ওর পেট ধরে হাসতে হাসতে ঘাসের উপর বসে পড়ছে।
–
রুহি মুগ্ধকে অনেকপর পর এভাবে হাসতে দেখলো!রুহি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে মুগ্ধর হাসি দেখছে।রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো…
রুহিঃ ইসসস রে এভাবে কেউ হাসে!জানেমান তোমার হাসি দেখে মন চাচ্ছে এখনই তোমাকে কামড়ে খেয়ে ফেলি!আর ছেলেদের যে এভাবে হাসতে নেই!ছেলেদের মুচকি হাসিতেই বেশি মানায়!আর এভাবে হাসলে যে ঘায়েল হয়ে যাবো রে টুনটুনির বাপ ।তবে এখন এই গোবরটাকে আমার ধন্যবাদ দিতে মন চাচ্ছে!কারন এই গোবরটার জন্য আমি আমার মুগ্ধর মনখোলা হাসিটা আজকে অনেকদিন পর দেখলাম।তবে একটা কথা না বললেই নয়,আর সেটা হলো….
গোবরের জুতা পড়ে যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়!তাহলে তো বার বার এই জুতা পড়াই ভালো….😂
To be continue…..
(আপনারাও গোবরের জুতা পড়তে চাইলে পড়তে পারেন!আমার নো সমস্যা……)