বুকের_বা_পাশে #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_1

0
1713

#বুকের_বা_পাশে
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_1

“আয় আয় কুতুর কুতুর কুতুর কুতুর
একদিকে আয়, আমার কাছে আয়!
এই তুই কি আমার বাসায় যাবি?
ইশ! তুই তো দেখি হাঁটতেও পারিস না?
আচ্ছা আয় আমার কোলে আয়!”

কুকুর ছানাটিকে কোলে তুলে নিলো স্কুল ড্রেস পরিহিত একটা ছেলে। কুকুর ছানাটি রাস্তার পাশে এক কোণে বসে ছিলো। অবিরাম ধারায় বৃষ্টি হওয়ার কারনে অনবরত কাঁপছিল। বাচ্চা ছেলেটা সেটা দেখতে পেয়ে দৌড়ে চলে যায় কুকুর ছানাটির কাছে। পরম যত্নে কোলে তুলে বুকের সাথে চেপে ধরে কুকুর ছানাটিকে! সাদা শরীরে ছোপ ছোপ কালো রং এর সংমিশ্রণে কুকুর ছানাটি। ছেলেটি ছানাটির শরীরে হাত বুলাতে থাকে, কারণ ছানাটি তখনও শীতে অনবরত কাঁপছিলো। ছেলেটির স্কুলের ড্রেসের সাদা শার্ট বৃষ্টিতে ভিজে শরীরে সাথে লেপ্টে গেছে আর গলায় ঝুলানো আইডি কার্ডটিও বাতাসে অনবরত দুলছে। এভাবে কাক ভেজা হয়ে ভিজেও তার কোন খেয়াল নেই! সে কুকুর ছানাটির সাথে কথা বলায় ব্যস্ত! এর মধ্যে এক ভদ্রলোক চেঁচিয়ে বললো…..

–“প্রত্যয় এবার চলে এসো আব্বু। তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে তো!” (হাত নাড়িয়ে)
–“আসছি বাবাই।” (দৌড়ে গাড়িত এসে বসে)
–“আব্বু এই বৃষ্টির মাঝে হুট করে এভাবে গাড়ি থেকে নেমে গেলে কেন?” (রুমাল দিয়ে মাথা মুছে দিতে দিতে)
–“বাবাই, দেখো এই কুকুর ছানাটি বৃষ্টিতে ভিজে কত কষ্ট পাচ্ছিলো। কুকুর ছানারা তো কথা বলতে পারেনা। তাহলে আমরা ওদের সাহায্য না করলে ওদের কি হবে বলো? এজন্য আমি এই কুকুর ছানাটি বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচালাম।” (ছানাটিকে দেখিয়ে)
–“হুমম, তুমি তো আমার ব্রেভ বয়! খুব ভাল কাজ করেছো বাবু।” (হেসে হেসে)
–“থ্যাঙ্ক ইউ বাবাই! আর হ্যা, বাবাই আমি কিন্তু আগেই বলে দিচ্ছি, এই তুতুনটাকে আমি এখন বাসায় নিয়ে যাবো। আর আম্মু কিছু বললে তুমি একটু আম্মুকে বুঝিয়ে বলো প্লিজ বাবাই! প্লিজ!” (প্রত্যয়)
–“হা হা হা ওকে। এর মধ্যে ছানাটির নামও দিয়ে দিল! যাই হোক, আব্বু আজকে স্কুলে আজকে কি কি করলে বললে না তো?” (গাড়ি চালাতে শুরু করে)
–“আজকে টিচাররা সবার সাথে সবার ইনট্রুডিউস করিয়ে দিয়েছে।”
–“তা তুমি কি বলে সবার সাথে পরিচয় হলে আমাকে শোনাও তো।”
–“বললাম যে আমার নাম
ওয়াসিক রায়হান প্রত্যয়
ইশতিয়াক রায়হান আমার বাবা।
মিথিলা রায়হান আমার আম্মু।
আমি ৫ম শ্রেণীতে পড়ি।
আমার বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার।”

–“হুমম। গুড বয়।” (ছেলের গালে আদর দিয়ে)

বাবা আর ছেলে এতক্ষণ কথা বলছিলো। দুইদিন হলো ওরা নতুন বাসায় শিফট করেছে। প্রত্যয়ের বাবা প্রত্যয়কে নতুন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। উনি প্রত্যয়কে স্কুল থেকে নিয়ে কেবল বাসায় ফিরছিলো। তখনই প্রত্যয় গাড়িতে থেকেই কুকুর ছানাটি দেখে পায় আর তাড়াতাড়ি গাড়ি থামিয়ে কুকুর ছানাটির কাছে দৌড়ে চলে যায়। এরপর কি হলো সেটা উপরের কাহিনীটুকু পড়ে তো আপনারা জানলেনই।

এরপর বাবা আর ছেলে গল্প করতে করতে ফ্ল্যাটের কাছে চলে আসে। গাড়ি থামতেই প্রত্যয় আগে তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। সে বাসায় গিয়েই আগে কুকুরছানাটির শরীর মুছে দেয়। তারপর গরম একটা জায়গায় রাখে। কিছু খাবারও খেতে দেয়। প্রত্যয়ের আম্মু কিছু বলার আগেই প্রত্যয়ের বাবাই ইশারায় বলে কিছু না বলতে।

এইদিকে________

জাহিদ ইমতিয়াজ হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করছেন। কারণ তার ওয়াইফ নবনী ইমতিয়াজের আজকে ডেলিভারি ডেট। জাহিদ ইমতিয়াজ আর তাদের ছেলে তুরাগ ইমতিয়াজ ওটির বাইরে দাড়িয়ে আছে। বেশকিছুক্ষণ পর একটা নার্স এসে জাহিদের কোলে নরম তোয়ালে তে মুড়ানো ছোট্ট একটা রাজকন্যাকে এনে দিলো। তুরাগ বোনেকে পেয়ে তার খুশি যেন আর ধরে না; কারণ এবার তার একাকিত্বটা তো ঘুচলো!

–“বাবা আমার বোন দেখতে একদম আমার মত হয়েছে, তাই না বাবা?” (অনেক খুশি হয়ে)
–“হা হা হা! হুম।”
–“উফফ! তুলার মত কি নরম ওর শরীর। বাবা ওর নাম কিন্ত আমি আগেই ঠিক করে রেখেছি। আমার বোনের কিন্তু আমিই রাখবো।”
–“তা কি নাম রাখবে আমার রাজকন্যাটার শুনি?” (মেয়ের কপালে আদর দিয়ে)
–“আমার বোনের নাম রাখবো তাসনিয়া নৌশিন তুয়া!”
–“বাহ্ সুন্দর নাম তো! তুরাগের বোন তুয়া।” (মুচকি হেসে)
–“বাবা এই তুলাটাকে আমার কোলে দাও না! বাবা প্লিজ!” (নেওয়া জন্য হাত বাড়িয়ে)
–“তুলা টা আবার কে?” (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
–“কে আবার, তোমার মেয়ে! তোমরা ডাকবে তুয়া বলে আর আমি ডাকবো তুলা বলে। এই তুয়া বুচি, আয় আমার কোলে আয়! আর হ্যা, হিসি করে দিস না যেন! এই বুচি তোকে আগেই কিন্তুু সাবধান করে দিলাম।” (তুরাগ কোলে নিয়ে)
–“হা হা হা! বড় ভাই হয়েছো সব অত্যাচার সহ্য তো করতেই হবে, তাই না আম্মু?” (তুয়ার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে জাহিদ সাহেব)

তিন দিন হসপিটালে থেকে নবনীকে নিয়ে বাসায় ফিরে এলো জাহিদ ইমতিয়াজ। তুরাগ অষ্টম শ্রেনীতে পড়ে আর তুয়া সদ্য জন্ম নেওয়া একদিন বাচ্চা। ইমতিয়াজের আপনজন আরো অনেকই আছে। তবে নিকটবতী আপনজন এখানে আপাতত কেউ নেই। তুরাগ আর নবনীকে নিয়ে ইমতিয়াজের সুখের একটা পরিবার ছিলো। এখন তুয়ার আগমনে এই পরিবারটা আরো উজ্জীবিত হয়ে উঠলো।

প্রত্যয় রাতের খাবার খেয়ে ওর বাবা মায়ের সাথে বারান্দায় বসে তারকার মেলা দেখছে। তার ছোট্ট মনে তৈরী হওয়া হাজারটা প্রশ্নের ঝুলি খুলে বসেছে সে। ইশতিয়াক আর মিথিলা হাসি মুখে সেই প্রশ্নের উওর গুলো দিচ্ছে। প্রত্যয় ওর বাবার বুকের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে কিছু জানার জন্য অতি আগ্রহ প্রকাশ করে বললো….

–“আচ্ছা বাবাই, আকাশের তারা গুলো মিটমিট করে জ্বলে উঠে কি আমাদেরকে কিছু বোঝাচ্ছে?” (আকাশের দিকে তাকিয়ে)
–“হুমম! তারা’রা বোঝাচ্ছে যে তাঁরা তাদের আপনজন গুলোকে দেখতে পাচ্ছে। যারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর কাছে চলে যায়, আল্লাহ তাদের ওই দূর আকাশের তারা বানিয়ে দেয়। তারা গুলো তখন ওই আকাশ থেকে তাদের আপনজন গুলোকে দেখে আর মিটমিট করে জ্বলে তাদের আপনজন গুলোকে সাড়া দেয়।” (ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে)

–“এবার বুঝলাম। আর জানো বাবাই আজকে ক্লাসে একটা ছেলে একটা মেয়েকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো। মেয়েটি খুব ব্যাথা পেয়ে কান্না করে দিয়েছিলো।‌ আমি ওর হাত ধরে তুলেছিলাম।”।(প্রত্যয়)

–“আব্বু কখনো কোনো মেয়ের সাথে অভদ্রতামী করবে না। কারণ মেয়েরা হলো খুব মায়ার জিনিস। আল্লাহ মেয়েদের খুব ভালবাসে আর মেয়েদের যারা অযথা কষ্ট দেয়, গালাগালি করে, খারাপ কথা বলে আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুুষ্ট হয়। একটা কথা সব সময় মনে রাখবে আল্লাহ যখন আমাদের প্রতি খুশি হয় তখন বাসায় মেহমান পাঠায়। আরো খুশি হলে আল্লাহ আমাদের জন্য রহমতের বৃষ্টি হওয়ার হুকুম করে। আরো খুশি হলে আমাদের পাপ মুক্তির জন্য আমাদের অসুখ দেয় আর সেই অসুখের প্রতিশোধকও বের করার পথ বের করে দেয়। তারপর আল্লাহ যখন তার বান্দার উপর আরো খুশি হয় তখন সেই ঘরে একটা মেয়ে সন্তান দান করেন। তাহলে বলো আল্লাহ যেখানে মেয়েদের এত ভালবাসে সেখানে আমাদের কি উচিত মেয়েদের অকারণে কষ্ট দেওয়া?” (প্রত্যয়ের বাবা)
–“আমি কোনোদিন কোন মেয়েকে অকারণে কষ্ট দিবো না বাবাই।” (ওর বাবাই এর দিকে তাকিয়ে)

প্রত্যয়ের বাবা প্রত্যয়ের কথা শুনে ছেলের কপালে আদর দিয়ে দিলো। প্রত্যয়ের আম্মু বসে বসে এতক্ষণ বাবা আর ছেলের কথোপকথন শুনছিলো। মিথিলা আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাই এমন ভালো স্বামী আর সন্তান দান করার জন্য। জাহিদের মত প্রত্যয়ও খুব সরল মনের হয়েছে। প্রত্যয়ের মাঝে একটা জিনিস সবাইকে খুব আকৃষ্ট করে। সেটা হলো প্রত্যয়ের মার্জিত ব্যবহার এবং সে খুব মিশুক স্বভাবের। সে খুব নরম মনের একটা ছেলে। বাবা মায়ের একমাত্র রাজকুমার প্রত্যয়। প্রত্যয়দের নিজেদের বাসা আছে। কিন্তু প্রত্যয়ের বাবার কাজের সুবাদে এখন রাজশাহীতে নিজেদের ফ্ল্যাট কিনেছে।

ওইদিকে তুরাগ তার বোনকে নিয়ে মেতে আছে। তুয়াও ভাইয়ার কোলে যাওয়া জন্য ঠোঁট ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। তুরাগ বোনের কান্ড দেখে হেসে লুটোপুটি খায়। নবনী আর ইশতিয়াক তুরাগ আর তুয়ার কান্ড দেখে হাসে। তুরাগ বোনের সাথে এত এত কথা বলে আর বোন যখন ওর কোলে হিসি করে দেয়, তখন তুয়াকে বকাবকি করে আর তুয়া দন্তবিহীন হাসি দেয়। সেই হাসি দেখে তুরাগের সব রাগ চলে যায়।

–“এই তুলা, এবার মাফ করলাম। আর আমার কোলে হিসি করবি না। এবার করলে তোর নাক টেনে সিলিং ফ্যানের সাথে বেঁধে রাখবো।” (তুরাগ নাক টেনে)
–“বললেই হলো? আমি আমার রাজকন্যার পাশে আছি। দেখি কে কি করে!” (ওদের বাবা ইশতিয়াক )
–“বাবা, এই তুলা এসে আমার আদর কমে গেছে। না না! এই বুচি আমার সব আদরের ভাগ বসাচ্ছে। এটা কিছুতেই মানা যাচ্ছে না। এই তুলা বুচি একদম আমার আদরের ভাগ বসাবি না বলে দিচ্ছি।” (তুরাগ)

ইশতিয়াক ছেলে কথা শুনে ছেলেকে কাছে টেনে একবার ছেলের কপালে আদর দিলো; একবার মেয়ের কপালে আদর দিয়ে বলল, “বাবা মায়ের কাছে দুজনেই সমান। এখানে কম বেশি কেউ নেই।”
নবনী বেডের একসাইডে বালিশে হেলান দিয়ে বসে মুচকি একটা হাসি দিলো।

To be continue……!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here