#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_14
রুহিঃ পরীক্ষা কেমন হয়েছে জিজ্ঞাসা করবে না।
মুগ্ধঃনা! কারন পড়াচোর রা খারাপ পরীক্ষা দিয়েও বলে ভালো পরীক্ষা দিয়েছে।তাই একেবারে রেজাল্টেই দেখবো।
রুহিঃ ওহহ!ঠিক আছে। ইসস কবে যে আমার পরীক্ষা শেষ হবে আর কবে যে তোমাকে আমার বাচ্চার বাবাই বানাতে পারবো।
–
মুগ্ধ রুহির কথা শুনে সাথে সাথে ব্রেক মারে আর রুহি মুগ্ধর গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে।মুগ্ধ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এই রাস্তায় তেমন কেউ নাই তাই ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো রুহির গালে।মুগ্ধ যে রুহিকে থাপ্পড়টা মারলো তাতেও রুহির কোন হেলদোল নাই!মুগ্ধ রুহিকে একটানে বাইক থেকে নামিয়ে নিজেও নামে আর রুহির দিকে তাকিয়ে বলে ….
–
মুগ্ধঃএসব বলতে তোর লজ্জা লাগে না!
রুহিঃবিয়ে আমি তোমাকেই করবো আর বিয়ে করলে তো বাচ্চার বাবা হবেই! তাহলে এত চ্যাতো কেন??
মুগ্ধঃদিন দিন মুখের লাগাম কি টেনে খুলে ফেলছিস তুই!কোথায় কি বলতে হবে তাও কি এখন তোকে শিখিয়ে দিতে হবে।মাথায় সব সময় দুষ্টুমি বুদ্ধি…
রুহিঃ আমার মুখের লাগাম আমি টেনে খুলেনি!ওটা এমনি এমনি ঠুস করে খুলে কোথায় জানি
পড়ে গেছে…??
মুগ্ধঃ অসভ্য মেয়ে তুই আটো করে চলে যা!তোর সাথে আমি যাবো না। (রেগে গিয়ে)
–
রুহি মুগ্ধকে একটা ধাক্কা দিলো!মুগ্ধ কয়েক পা পিছিয়ে গেল!রুহি ওর হাতের পরীক্ষার ফাইল মুগ্ধর হাতে ধরিয়ে দিলো তারপর রুহি মুগ্ধর বাইকে বসে বাইক স্টাট দিয়ে মুগ্ধকে রেখে শা করে চলে গেল।মুগ্ধ হাবলার মত তাকিয়ে আছে!মুগ্ধ আর উপায় না পেয়ে হাঁটতে শুরু করলো!আজকে রোদের তাপ খুব এজন্য মুগ্ধ রুহির পরীক্ষায় ফাইলটা দিয়ে মুখটা ঢেক হাঁটছে… হঠাৎই খুব দ্রুত একটা বাইক এসে মুগ্ধর সামনে ব্রেক মারে!আর একটু হলেই মুগ্ধর লেগে যেত।মুগ্ধ মাথা উঠিয়ে দেখে এটা তারই লেডি গুন্ডী রুহি।রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো…
–
রুহিঃজানু তারাতারি বাইকে এসে বসো তা না হলে রোদে পুড়ে নিগ্রোদের মত ফর্সা হয়ে যাবে।(দুষ্টু হেসে)
–
মুগ্ধ কিছু আর বললো না রুহির পেছনেই বসে পড়লো।রুহি বাইক চালাচ্ছে আর মুগ্ধ পেছনে বসে আছে!কলেজ ড্রেস পড়ে রুহিকে বাইক চালাতে দেখে রাস্তার মানুষ গুলো কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে!তারপর রুহি মুগ্ধদের বাসায় এসে বাইক থামালো আর মুগ্ধ বাইক থেকে নামতেই রুহি মুগ্ধর প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওয়ালেট বের করে একহাজার টাকার নোট বের করে নিয়ে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো…
–
রুহিঃতোমার মত জলহস্তী’ এত কষ্ট করে বাইকে করে আনলাম তাই এই টাকাটা নিলাম।
মুগ্ধঃবাইক আমার,বাইকের তেল আমার আর আমাকেই আনতে আবার আমার থেকেই টাকা নিচিছস। তা এরকম গুন্ডীগিরি করে কতদিন চলবি..
রুহিঃ আমি হলাম গুন্ডী! আর শুধু মুগ্ধর গুন্ডী!মুগ্ধ যতদিন থাকবে আমি ততদিনই এমন করেই চলবে… গেলাম টাটা (একটু মাস্তানি করে)
–
ইটুস খানি ডাকো একখান কথা রাখো
ভাল বাসইয়া একবার তুমি বউ কইয়া ডাকো…
রুহি গান বলতে বলতে ওর বাসায় চলে গেল!আর মুগ্ধও মুচকি হেসে ওর বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে সাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে দুপুরে ঘুমালো।আর রুহি ওর রুমে গিয়ে উরাধুরা গানের সাথে নাচ শুরু করলো! আর নাচের সাথে ওর গাওয়া রিমিস্ক সং তো আছেই।সাওয়ারে পানি ছেড়ে ভিজে ভিজে নাচানাচি করা ওর একটা রেগুলার কাজ!রুহির আম্মু রুহিকে বার বার নিষেধ করছে ওয়াশরুমে এমন করে না লাফাতে। রুহির আম্মু রুহির রুমে এসে আবার মানা করতে না করতেই রুহি চিটপটাং হয়ে ঠাস করে পড়ে গেল!আর চিৎকুর দিয়ে উঠলো…..
–
রুহিঃওরে আম্মু রে আমি পড়ে গেলাম রে!কেউ আমাকে টেনে তোলে রে..আহ রে…
আম্মুঃরুহি তুই কি পড়ে গেছিস?কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস???লাগে নি তো…রুহি দরজা খোল
রুহিঃ পড়ে গেলে আবার লাগবে না!আর কোথায় লেগেছে কি করে যে বলি??লজ্জাও তো লাগে (ওভাবে শুয়ে শুয়েই বললো)
আম্মুঃতুই দরজা খোল!দেখি কোথায় ব্যাথা
পেয়েছিস???(দরজা নক করে
রুহিঃ আম্মু গো তোমার মনে হয় আর নাতি-নাতনি দেখা হবে না গো আম্মু!আমি শেষ…. ওহ আম্মু গো আমি মনে হয় সারাজীবন কুঁজো হয়েই থাকবো গো আম্মু। (চিৎকার করে)
আম্মুঃআগে তুই তো বেঁচে ফিরে আয় মা! তারপর না হয় তোর বাচ্চার কথা তুই চিন্তা করবি।
–
রুহি খোঁড়াতে খোঁড়াতে দরজা খুলে রুমে আসলো!অনেক কষ্টে ও ড্রেস বদলে নিলো!তারপর ওর আম্মু ওর মাথা মুছে দিলো!কোমরে আর পায়ে ব্যাথা পেয়েছে তাই ওর আম্মু ব্যাথার স্প্রে করে দিলো!তারপর রুহিকে ওর আম্মু খাইয়ে দিয়ে ঘুমাতে বলে চলে গেল।রুহিও আকাশ-পাতাল চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেল!
–
বিকাল বেলা রুহি ঘুম থেকে উঠে ছাদে গেল!বেশ কয়েকদিন ধরে কুট্টুশকে বের করা হয়নি!প্রায় দেড় মাস আগেই কুট্টুশের তিনটা বাচ্চা হয়েছে!রুহি কুট্রুশকে তুললেই কিছু একটা বুঝলো!তারপর কুট্টুশের বর তুমুলকে কোলে নিয়ে মুগ্ধর বাসার দিকে হাটা দিলো!মুগ্ধ তখন কেবল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বসেছে! ড্রয়িং রুমে মুগ্ধর বাবা, মুগ্ধর আম্মু আর মুগ্ধ বসে ছিলো।রুহি হনহন করতে করতে করতে মুগ্ধর সামনে যায়!মুগ্ধ দেখে রুহি তুমুলের কান ধরে ঝুলিয়ে রাখছে!রুহি মুগ্ধর কোলে তুমুলকে একপ্রকার ছুড়ে মারে আর রাগে গজগজ করতে করতে বলে….
–
রুহিঃকুট্টুশের কেবল ৪০ দিন হলো তিনটা বাচ্চা হয়েছে!তোমার তুমুলের কাজ কাম নাই সারাদিন ঘরে বসে থাকে! আর সুযোগ পেলেই আমার কুট্টুশের সাথে আকাম করে আর বার বার কুট্টুশকে পেগনেন্ট করে দেয়।দুইটি বাচ্চার বেশি নয় একটি হলে ভালো হয়!সেখানে কুট্টুশের তিনটা বাচ্চা হয়ে গেছে।এখন তোমার তুমুল আবার আমার কুট্টুশকে পেগনেন্ট করে দিসে!যত্তসব লুচু খরগোশ আমার কপালেই জুটছে!তোমার তুমুলের সাথে আমার কুট্টুশের ডিবোস করাই দিবো!আর কোনদিন যেন তোমার তুমুলকে আমার কুট্টুশের আশে পাশে না দেখি…..(একদমে কথাগুলো বলে হনহন করতে করতে চলে গেল)
–
মুগ্ধর বাবা-মা সামনে বসা।উনারা অবাক হয়ে রুহির কথা গুলো শুনছে!আর মুগ্ধ এখন কি বলবে বুঝতে পারছে না!নিজের বাবা মায়ের সামনে ওভাবে অপদস্থ হতে হবে সেটা মুগ্ধ কল্পনাও করে নি!রুহি হয়তো তুমুলকে বলছে! বাট কথাগুলো মুগ্ধর বাবা মায়ের সামনে বলাতে মুগ্ধর এখন কেন জানি খুব লজ্জা লাগছে…মুগ্ধ কোন উপায় না পেয়ে তুমুলকে নিয়ে ওর বাগানে চলে গেল।মুগ্ধ তুমুলকে ছেড়ে দিলো! তুমুল এখন বসে বসে ঘাস খাচ্ছে….
মুগ্ধ মনে মনে ভাবছে…
–
মুগ্ধঃরুহি তোর কি সত্যি কেন বুদ্ধি হবে না!আর ও এসব কি বলে চলে গেল?আমি কি তুমুলকে শিখিয়ে দিয়েছি যে কুট্টুশকে পেগনেন্ট করতে।আল্লাহ এই মেয়ের মাথায় একটু বুদ্ধি দাও!আর কত নিজের ইজ্জতের ফালুদা হতে দেখবো।(কপাল চাপড়ে)
–
ওদিকে রুহি কুট্টুশকে ডায়নিং টেবিলে উপর বসিয়ে আপেল কেটে দিচ্ছে আর কুট্টুশ মনের সুখে কুচকুচ করে আপেল খাচ্ছে। রুহি আপেল কেটে ডায়নিং টেবিলে দুই রেখে গালে হাত দিয়ে বসে কুট্টুশের আপেল খাওয়া দেখছে!রুহির আম্মু এসে রুহির মাথায় একটা ঠুয়া মেরে বললো…
–
আম্মুঃএই খরগোশ টাকে না খাইয়ে তুই খেলেও তো পারিস!!
রুহিঃবলছি না ওর নাম খরগোশ না!ওর নাম কুট্টুশকে আর আমি আপেল খাবো কেন??আমি কি
কুট্টুশের মত পেগনেন্ট নাকি যে এখন বসে বসে আপেল খাবো আমি।
আম্মুঃএই খরগোশ টার না কিছুদিন আগে বাচ্চা হলো!আবার পেগনেন্ট।আমার বাসা তো দেখি খুব তারাতারি খরগোশের বাসায় পরিণত হবে।তারাতারি এই আপদ বিদায় কর। (রেগে)
রুহিঃ কুট্টুশের কোন দোষ নাই! মুগ্ধর তুমুল ই আমার এই কুট্টুশকে বার বার পেগনেন্ট করে দিচ্ছিলো।তাই ওকে মুগ্ধর কাছে রেখে আসছি আর আপদও বিদায় করছি।
আম্মুঃ মুগ্ধ কি তোর ছোট নাকি যে নাম ধরে ডাকছিস?মুগ্ধ ঠিকই বলে তোকে মারের উপর রাখলেই তুই ঠিক হবি। অসভ্য মেয়ে…
রুহিঃ ছোট হলে তো ল্যাটা চুকে যেত!সারাদিন কান ধরে দাড় করি রাখতাম ওই উল্লুকটাতে..
(না হবু বরের নাম ডাকবো না তো ওরে বাবা বলে ডাকবো!তোমরা কেন যে বুঝো না আমার বাচ্চার বাবাই হবে ওই শালা উগান্ডার বানর! তাহলে ওরে ভাইয়া ডাকি কি করে??)
আম্মুঃ তুই আর মানুষ হবি না!(বিরক্ত হয়ে)
রুহিঃহুমম আমি তো মানুষ না!আমি তো বুনো বিড়াল।এবার তুমি খুশি তো…
–
রুহির আম্মু কিছু বললো না!বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল!রুহি বসে বসে কুট্টুশকে খাওয়াতে থাকলো!তারপর সন্ধ্যার আজানের পর হালকা কিছু নাস্তা করে মুগ্ধর বাসায় চলে গেল পড়তে!মুগ্ধর আম্মু তখন মন খারাপ করে বসেছিলো কারন তার তরকারিতে লবণ বেশি হয়ে গেছে!এখন লবণ কমাবে কি করে সেই চিন্তা এখন উনি বেশ চিন্তিত। রুহি মুগ্ধর আম্মুকে এভাবে বসে থাকতে দেখে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলো।তখন মুগ্ধর আম্মু বললো…
–
মুগ্ধর আম্মুঃকত সুন্দর করে গরুর মাংস রান্না করলাম! কিন্তু এখন টেস্ট করে দেখি লবণ বেশি হয়ে গেছে।
রুহিঃ এককাজ করো মাংসের মধ্যে টমেটো আর ধনেপাতা দিয়ে দাও তাহলে দেখবে লবণ কমে গেছে।
মুগ্ধর আম্মুঃ তাহলে কমবে তো!বাট মাংসের মধ্যে এখন টমেটো দিলে ভালো লাগবে তো।
রুহিঃ এখন মানুষ সাপ,ব্যাঙ, ইজি, বিজি সব খেয়ে ওয়াও ওয়াও করছে! আর তুমি পড়ে আছো মাংসতে টমেটো দিলে ভালো লাগবে কি না???
মুগ্ধর আম্মুঃ মুগ্ধ যে খুঁতখুঁতে যদি না খায় তখন কি হবে??
রুহিঃ মুগ্ধ খাবে না মুগ্ধর বাবা-মা খেলেই হবে।আর খাওয়ার আগে সেই রাজকুমারকে না বললেই হয়।যাইহোক তুমি তোমার কাজ করো! আমি গেলাম নয়তো তোমার জলহস্তী’ ছেলে মেরে গাল লাল করে দিবে।
মুগ্ধর আম্মুঃ আচ্ছা তুই যা…
–
রাতে রুহি পড়া শেষ করে মুগ্ধদের সাথে খেতে বসে!মুগ্ধর আম্মুর মুখে হাসি কারন উনার সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।
মুগ্ধর আম্মুঃরুহির মত আমার যদি একটা ছেলের বউ থাকতো তাহলে কতই না ভালো হতো…
রুহিঃ আমি ফ্রি আছি! তুমি চাইলে আমি তোমার ছেলের বউ হতে পারি।(মাংসের হাড় চিবুতে চিবুতে)
মুগ্ধ এই কথাটা শুনে এমন ভীষম খেয়েছে যে ওর কাশতে কাশতে জান শেষ!…..
To be continue….