প্যারাময়_লাভ❤❤ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_8

0
381

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_8

রুহিঃভাইয়া ২৩ ঘন্টা আগেও আমি চকলেট খেতে পছন্দ করতাম! কিন্তু এখন আর করি না।তাই চকলেট গুলো নিতে পারলাম না।তুমি বরং চকলেট গুলো অন্য কাউকে দিয়ে দিও। আমি বাসায় গেলাম..


রুহি কথাটা বলে চলে যায়!মুগ্ধ রুহির কথা শুনে মুচকি হাসলো।তারপর রাতে ডিনার করে নিলো!মুগ্ধর ওর বারান্দায় গিয়ে দেখলো রুহির রুমের লাইন জালানো!মুগ্ধ কিছু বলছে না শুধু কিছু ভাবছে আর হাসছে। রুহি যে অভিমান করে আছে সেটা মুগ্ধ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। মুগ্ধ ওর বারান্দায় দাড়াতেই দেখলো রুহি বারান্দায় আসলো!মুগ্ধ লুকিয়ে পড়লো!রুহি কাঁদছে বার বার চোখ মুছতে দেখে মুগ্ধ আবারও হাসলো।তারপর মুগ্ধ ওর রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো…..


রাত ১ঃ৩০…

মুগ্ধ রুহির পাশে শুয়ে আছে!আর রুহি মুগ্ধকে বালিশ মনে করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।আর মুগ্ধ ওর প্রাণ-ভোমরার দিকে তাকিয়ে আছে।এই একটা দিন রুহি ওর সাথে ভাল করে কথাও বলেনি! আর মুগ্ধ ওকে বকা দিয়েছে বলে কান্না-কাটি করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলছে।নাকটা টিয়াপাখির নাকের মত লাল হয়ে আছে!রুহি এত গভীর ঘুমে আছে সে জানতেও পারলো না যে মুগ্ধ তার কতটা কাছে এসেছে!মুগ্ধ খুব সাবধানে রুহির কপালে একটা আদর দিলো….আর রুহির দিকে মনে মনে বলে।


মুগ্ধঃএত গুলো কথা বললাম তাই অভিমান করে বসে আছিস! আর তোকে এসব বলে যে আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি তার হিসাব রাখিস।কেন বকলাম একবারো তো ভাবলিনা?এত দুষ্টুমির মাঝে,পড়াশোনা থেকে তুই কতটা দুরে চলে গেছিস সেটা তুই নিজেও জানিস না।আমি তোকে পিছিয়ে পড়তে দিবো না রুহি!আমি চাই আমার বউটা নিজের পায়ে দাড়াক!এজন্য তোকে ঠিক করতে আমার যা করা লাগে আমি তাই করবো।এই পাগলি আমি জানি তুই আমাকে ঠিক কতটা ভালবাসিস!আমি তোকে ভালবাসি কথাটা মুখে বলিনি! তাই ভাবিস যে আমি তোকে ভালবাসি না।তোর মাঝেই যে আমার ভাল থাকা লুকিয়ে আছে রে দুষ্টু বউ…. (মনে মনে)


মুগ্ধর মনে চাচ্ছে এখন রুহিকে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে নিতে!আজকে রুহি ওর উপর রাগ করছে তাও আবার এই প্রথম।মুগ্ধও সরি বলবে না কারন মুগ্ধ চেয়েছিলো রুহির মধ্যে একটা জেদ আসুক।মুগ্ধ একদম ঠিক জায়গায় তীরটা মেরেছে আর রুহিও মুগ্ধর টোপটা গিলছে!মুগ্ধ খুব হাসি পাচ্ছে কারন তার ছোট্ট রুহি আজকে ওর উপর রাগ দেখিয়েছে।সেই ছোট থেকেই রুহি মুগ্ধ বলতে পাগল! আগে তো সবার সামনে বলতো…

রুহিঃওহহ মুগ্ধ বাইয়া (ভাইয়া)আমাতে একতা নাল(লাল) টুকটুকে শালি(শাড়ি) আর চুলি(চুড়ি) তিনে(কিনে) দাও না।

মুগ্ধঃকেন রে?শাড়ি আর চুড়ি দিয়ে তুই কি করবি??

রুহিঃআমি তোমাল নাল টুকটুকে বুউ সাজবো।(লজ্জা পেয়ে)

মুগ্ধঃকানের নিচে এমন একটা থাপ্পড় দিবো না!বউ সাজার কথা ভুলে যাবি।যা ভাগ এখান থেকে…

রুহিঃএভাবে বলছো কেন??যেদিন তোমার বুউ সাজবো সেদিন দেকবে চোখ ফেরাতে পারবে না।হাবলুর মত হা করে তাকিয়ে থাকবে।

মুগ্ধঃআমার বয়েই গেছে তোকে বউ বানাতে!এসব কথা আর একদিন বললে তোর ঠোঁট কেটে নিবো।

রুহিঃ আচ্ছা আর বলবো না!তবে আমিই তোমার বউ হবো!মিলিয়ে নিও….


কথাগুলো মনে করে মুগ্ধ হাসলো!মুগ্ধ রুহিকে প্রশ্চয় দেয় না।যদি মুগ্ধ একবার রুহির কথা রাজি হতো তো রুহি কিছুতেই ওকে ভয় পেত না।বরং আরো দুষ্টুমিতে মেতে উঠতো!আর দুষ্টমির মাএার বশে যে বড় কোন ভুল করে বসতো না এর কোন গ্যারান্টি নেই।আর আবেগ বসভূতি রিয়েল লাভ গুলোতেও নোংরামি চলে আসে।মুগ্ধ চাই সময় মত রুহিকে তার বউ করে আনতে।ততদিন থাকুক না মনের মধ্যে পুষে রাখা পবিএ ভালবাসাটা!এভাবেই মুগ্ধ আগলে রাখুক না তার পবিএ ভালবাসাকে….. ..


মুগ্ধ ভোর৪ টার দিকে ওর বাসায় চলে গেল!তারপর নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়লো।মুগ্ধর আম্মু ৯টার দিকে মুগ্ধকে ডাকলো কারন আজকে শুক্রবার অফিস নেই!মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই দেখলো রুহির আম্মু বসে আছে!মুগ্ধ রুহির আম্মুর সাথে কথা বলে ড্রায়নিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করে নিলো!তারপর মুগ্ধ ওর রুমে এসে রুহি ফোন দিলো।


মুগ্ধঃআমার বাসায় আয়

রুহিঃকেন??

মুগ্ধঃএত কথা বলতে পারবো না!আসতে বলছি আয়

রুহিঃহুমম

রুহি মুগ্ধর বাসায় আসলো!রুহি মুগ্ধর রুমে গিয়ে দেখলো মুগ্ধ নেই!রুহি নিচে এসে দেখলো মুগ্ধ রুহির আম্মু পাশে বসে পড়লো।মুগ্ধ রান্না ঘরে কফি বানাচ্ছিলো। রুহি নিচে এসে সোফাতে বসতেই মুগ্ধর মা রুহিকে জিজ্ঞাসা করলো।

মুগ্ধর আম্মুঃকি রে রুহি তোর মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন?

রুহিঃকই না তো!আমি ঠিক আছি (মন খারাপ করে)

রুহির আম্মুঃআমিও এত বার জিজ্ঞাসা করলাম আমাকেও বলছে না কি হয়েছে??মুখ কেমন ফুলিয়ে রাখছে।

মুগ্ধঃপড়া পারে নি তাই মেরেছিলাম এজন্য মুখ গোমড়া করে রাখছে।

রুহির আম্মুঃ ওহহ তাই বল!মেরেছিস বেশ করছিস

মুগ্ধর আম্মুঃ মুগ্ধ শুধু শুধু মারিস কেন মেয়েটাকে?একটু বুঝিয়ে বললেই তো হয়।


মুগ্ধর আম্মুর কথা শুনে রুহি ভ্য ভ্য করে কেঁদে দিলো!রুহির কান্না দেখে সবাই অবাকের অ হলো না কারন এটাও নতুন কিছু না।মুগ্ধর আম্মু মুগ্ধ চোখ টিপ দিয়ে চুপ থাকতে বললো!আর রুহিকে শুনিয়ে শুনিয়ে মুগ্ধকে বকা দিলো!মুগ্ধকে বকছে দেখে রুহির মুখেও হাসি ফুটলো।মুগ্ধ রুহির আম্মু দিকে তাকিয়ে বললো…


মুগ্ধঃমেজ আম্মু একটা কথা বলার ছিলো??

রুহির আম্মুঃহুমম বল!

মুগ্ধঃআমার কলেজের বন্ধুরা সবাই মিলে পিকনিকে যাচ্ছে! আর সবাই তার পরিবার থেকে একজন করে নিয়ে যাচ্ছে। তো তুমি যদি পারমিশন দাও তো আমি রুহিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি।

রুহির আম্মুঃএখানে পারমিশনের কি আছে?আমি জানি রুহি তোর সাথে সেইভ থাকবে।আমার কিছু বলার নাই। যা তোরা ঘুরে আয়

রুহিঃআমি যাবো না তোমার সাথে(মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে)

মুগ্ধঃতোর ডিসিশন জানতে চাই নি!তোকে অর্ডার করছি।আজকে সন্ধ্যায় যাবো!যা চারদিনের থাকার মত জামাকাপড় গুছিয়ে নে।

মুগ্ধর আম্মুঃ তা মেয়ে কেউ যাচ্ছে তো নাকি সব ছেলেরা।

মুগ্ধঃহুমম আমার অনেক বন্ধুদের বোন যাচ্ছে! আর আমার অনেক মেয়ে ক্লাসমেটও যাচ্ছে।


রুহি তো মনে মনে সেই সেই খুশি!রুহি মনে মনে বলছে…
রুহিঃ ভালোই জন্যই তো আমাকে কালকে মেরেছো তাই রাগ করলাম না।ইসসস জানু তুমি আমাকে শুধু মার না কেটে ফেললেও তোমাকে কিছু বলবো না।বড় রা কত কি বলে সব কথা কানে নিতে নেই!দুষ্টুমির বয়সে দুষ্টুমি করবো নাতো পান মুখে দিয়ে বুড়ি সেজে ঘুরে বেড়াবো।আগে যতটুকু দুষ্টুমি করতাম এখন তার ডাবল দুষ্টমি করবো পারলে আটকে দেখাও জানেমান।আর সত্যি বলতে আমার আর এই জীবনে ভাল হওয়া হবে না।(দুষ্টু হাসি দিয়ে মনে মনে )


মুগ্ধ কথাটা বলে ওর রুমে চলে যায়।রুহি আর ওর আম্মুও বাসায় চলে যায়।রুহি চার হাত-পা ছড়িয়ে বেডে শুয়ে আছে!আর রুহির আম্মু রুহির ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে।রুহি বেডে থেকে ঠাস করে উঠে দৌড়ে মুগ্ধর বাসায় গেল!মুগ্ধ তখন সাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পড়ে কেবল রুমে এসে দাড়িয়েছে! রুহি দুম করে মুগ্ধর রুমে ডুকে বলছে…


রুহিঃভাইয়া তুমি কি তোমার কাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে ফেলছো??

মুগ্ধঃউফফ!তোকে কতদিন বলবো হুটহাট করে আমার রুমে আসবি না!কতদিন বলবো নক করে আসতে! তোর কি সমস্যা হয় বলতো।একটা কথাও শুনিস না… (দাঁতে দাঁত চেপে)

রুহিঃ বলো না তোমার ব্যাগ কি গোছানো হয়ে গেছে!
মুগ্ধঃহুমমমম।


মুগ্ধ ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে!আর রুহি মুগ্ধর কাপড়ের ব্যাগটা খুলে সব লন্ডভন্ড করে দেখে মুগ্ধ কি কি কালার ড্রেস নিয়েছে!রুহি সেইসব দেখে চলে গেল।আর মুগ্ধ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে পুরো বেডে ওর ড্রেস গুলো ছড়ানো।মুগ্ধ আবার ওর ড্রেসগুলো গুছিয়ে ব্যাগ ঢুকিয়ে নিলো।মুগ্ধ সবুজ কালার একটা পান্জাবী আর সাদা চুরিদার আর চওড়া সাদা টুপি পড়ে নামাজে গেল।


রুহি মুগ্ধর সাথে বেড়াতে যাবে শুনে তার সব রাগ-অভিমান মন থেকে মুছে গেছে।রুহি বাসায় এসে মুগ্ধ যে কালার ড্রেস নিয়েছে রুহিও সেইম কালারের ড্রেস গুলো নিয়েছে!রুহি ব্যাগ গুছিয়ে সাওয়ার নিয়ে বারান্দায় এসে দাড়াতেই দেখতে পায় মুগ্ধ ওর দেওয়া সবুজ পান্জাবী পড়ে নামাজে যাচেছ। রুহির তো খুশিতে এখন বারান্দায় থেকে লাফ দিতে চাচ্ছে। রুহি নিজেকে সামলে মুচকি হেসে বললো…


রুহিঃ আমি সবার মত বোকামি করবো না মুগ্ধ! আমি তোমার উপর রাগ করে নিজেকে তোমার থেকে দুরে সরিয়ে রাখবো না!আমি মনে করেছিলাম তোমাকে আর বিরক্ত করবো না কিন্তু না! এখন এই মহূত থেকে আমি তোমাকে আরো বেশি করে জালাবো।আমি বোকাদের মত অভিমান করে তোমাকে হারাতে পারবো না!তবে আমাকে কষ্ট দেওয়ার মজা তোমাকে বোঝাবো!সেটা রাগ বা অভিমান করে না।কারন আমি একটা কথা সবসময় বিলিভ করি আর সেটা হলো…

রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন….

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here