স্পর্শানুভূতি #writer_Nurzahan_Akter_Allo #part_29

0
456

#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_29
🍁🍁

রাসেল মিষ্টুর হাত ধরে টেনে এনে টেবিলে বসায়!আর মিষ্টু সাথে সাথে চেয়ার থেকে উঠে রাসেলকে এক থাপ্পড় মারে….রাসেল অবাক হয়ে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে আছে!মিষ্টু কাঁদতে কাঁদতে ওর রুমে চলে যায়!রাসেল অবাক হয়ে মিষ্টুর যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।মিষ্টু বেডে গিয়ে একটা বালিশে মুখ গুজে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে!রাসেল জানে এখন মিষ্টুর সাথে রাগ দেখানো টা বোকামি ছাড়া কিছু নেই!একটা মেয়ে বুঝে তার পরিবার ছেড়ে দুরে থাকার কষ্ট। রাসেল মিষ্টুর রুমে এসে মিষ্টুকে একটানে উড়ে বসায় আর বলে…

রাসেলঃএই মেয়ে তুমি এত কাঁদতে পারো কি করে বলো তো?তুমি জানো না তুমি কাদলে আমার কলিজায় রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়!মুখে না বললে বুঝো না কেন তুমি? এই তুমি এত অবুজ কেন বলবে আমায়?

মিষ্টুঃআপনি প্লিজ আমাকে আমার মত ছেড়ে দিন!আমি পারবো না ভাইয়া আর আম্মু ছাড়া থাকতে,ওদের ছাড়া খেতে,ওদের সাথে কথা না বলে থাকতে।আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো।ভাইয়া না খেলে আমি খায়নি কোনদিন! আর আজও আমি পারবো না খেতে…(কাঁদতে কাঁদতে)

রাসেলঃআমাকে একটু সময় দাও প্লিজ! আমি সব ঠিক করে দিবো।আমাকে তুমি মারো, বকা দাও, তাও আর কেদো না প্লিজ! এখন চলো কিছু খেয়ে নিবে আর না করো না… আমারও খুব খুধা লাগছে।


রাসেল জোর করে মিষ্টুকে নিয়ে যায়!মিষ্টু চেয়ারে বসেই হেঁচকি তুলে তুলে কাঁদছে। রাসেল উঠে ওর লেপটপ টা নিয়ে মিষ্টুর সামনে রাখে! মিষ্টু চোখ তুলে তাকাতেই দেখে জয় আর শুভ্র মুহিতকে জোর করে খাওয়াচেছ সাথে ওর আম্মুকেও।মিষ্টু এটা দেখে সাথে সাথে জয়কে একটা মেসেজ করলো! জয় মিষ্টুর মেসেজ দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে জয়ও মিষ্টুকে একটা মেসেজ করলো..

…….মিষ্টু সোনা একদম চিন্তা করিস না! সব ঠিক হয়ে যাবে!পুরো বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দিচ্ছি তুই সব সময় তোর আম্মু আর মুহিতকে দেখতে পাবি কেমন!আমি রাসেলকে বলে কানেক্ট করে দিয়েছি।রাসেলকে কষ্ট দিস না রে!ছেলেটা বড্ড ভালো। তোকে অনেক ভালো রাখবে। তুই মার খেয়েছিস বলে যার চোখে পানি ছলছল করে তার ভালবাসা কখনো মিথ্যা বা অভিনয় হতে পারে না। ভালো থাকিস আর নিজের খেয়াল রাখিস! আর হ্যা এই পেচি একদম কাদবি না বলে দিচ্ছি……..কাঁদলে তোরে পেত্নি লাগে।হাহা হা


মিষ্টু মেসেজ টা পড়ে মুছকি হাসলো!রাসেল মিষ্টুর মুখের সামনে খাবার ধরলো!মিষ্টু আর না করলো না। রাসেল মিষ্টুকে হাসানোর জন্য বলছে..

রাসেলঃআমি আগে মনে করতাম আমার কপালে বউ নেই!বাট একটা বউ পেলাম তাও ছিচকাদুনে..ধুর কপাল খারাপ হলে যা হয়।

মিষ্টুঃ……..

রাসেলঃ আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার বউটা খুব হাসবে!বেশি বেশি কথা বলবে!আর আমি মনোযোগ দিয়ে শুনবো বাট সপ্ন টা সপ্নোই থেকে গেলো শুধু মাএ তোমার জন্য..

মিষ্টুঃ……… 😭

রাসেলঃ আরে বাবা রে!আর কেঁদো না তো।এই নাও চুল টানো(ওর মাথা এগিয়ে দিয়ে) সব চুল টেনে টাকলা করে দাও তার কান্না থামাও।দরকার নাই আর চুলের…


মিষ্টু এবার রাসেলের মুখের দিকে তাকিয়ে এবার হো হো হো করে দিলো!রাসেল মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে আছে!রাসেল মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছে কারন মিষ্টুকে কোন টেনশনে রাখা ঠিক হবেনা। এজন্য রাসেল যথাসাধ্য চেষ্টা করছে মিষ্টুকে হাসানোর!হাজারো মন খারাপ নিয়ে ভালবাসার মানুষটাকে হাসানো টাও তো ভালবাসার অংশের মধ্যেই পরে।রাসেল এভাবে কথা বলতে বলতে মিষ্টুকে সব ভাত টুকু খাইয়ে দিলো তারপর মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে বললো…


রাসেলঃ মিষ্টু একটা কথা বলবো?যদি তুমি পারমিশন দাও তো…

মিষ্টুঃবলুন! পারমিশনের নেওয়ার দরকার নাই..

রাসেলঃবাবা- মা,ভাই বোন,হাজবেন্ড -ওয়াইফ এই তিনটা সম্পর্ক হচ্ছে সব থেকে পবিএ সম্পর্ক। তুমি মে বি জানো এই কথাটা? এই প্রতিটা সম্পর্ক নষ্ট হয় দুরুত্বের কারনে! আমি তোমাকে কখনো বলবো না মুহিত আর মামনিকে ভুলে গিয়ে আমার সাথে নতুন করে! জীবনের অন্য একটা ধাপ এগিয়ে যেতে!আমি বলবো আমাকে একটু সময় দাও প্লিজ আমাকে আমি তোমাদের আবার এক করে দিবো!তুমি যদি বার বার ভেঙে পড়ো তাহলে কাজটা আমার জন্য কঠিক হয়ে যাবে।মিষ্টু আমি এখন তোমার হাজবেন্ড তাই তোমাকে ভাল রাখার দায়িত্ব আমার!তাই বলছি নিজেকে শক্ত করো কারন দূবল কোন জিনিস বেশিদিন টিকে না….

মিষ্টু….

রাসেলঃতবে আমি চাইলে তোমাকে বিয়ে না করতেও পারতাম!আমি সেই ক্ষমতা রাখি মিষ্টু। আমি আমার ভাগ্য কে মেনে নিয়ে তুমিও মেনে নাও বাট এভাবে ভেঙে পড়ো না।এখন যদি আমি তোমাকে বলি তুমি আমাকে ফাসাতে চাইছো? তখন কি বলবে.?

মিষ্টুঃআম,ম

রাসেলঃআমার কথা এখন শেষ হয় নি!আমাকে বলতে দাও।

মিষ্টুঃহুমম

রাসেলঃতুমি এখন এই মুহূর্তে প্রমান করতে পারবে না!যে তুমি আমাকে ফাসাতে চাও নি !আর এটা প্রমান করতে গেলে সময়ের দরকার তাই না।ঠিক তেমনি আমিও পারছি না।আমারও একটু সময়ের দরকার!আমিও চাই নিজের উপর থেকে এত খারাপ একটা অপবাদ মুছে ফেলতে!এজন্য তোমাকে এতগুলো কথা বলে বোঝালাম…

মিষ্টুঃহুমমম

রাসেলঃ আর হ্যা আমাদের বাসায় যেন কেউ এসব কথা না জানতে পারে।ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে আর আমাদের বাসায় গিয়ে তুমি তোমার মত করে চলবে কারো কথায় কান দেওয়ার দরকার নাই।যদিও তোমার ব্যাপারে কেউ নাক গলাবে না মে বি! কারন বাসার কেউ তো আমারই খোঁজ রাখে না… হা হা হা


মিষ্টু রাসেলের কথা শুনে রাসেলের চোখের দিকে তাকায়! ছেলেটা হাসছে ঠিকই বাট চোখে পানি ছলছল করছে। বুকের ভেতর এত কষ্ট নিয়ে কেউ এভাবে যে হাসতে পারে মিষ্টুর জানা ছিলো না।মিষ্টু আজকে রাসেলের দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখছে রাসেল হাসলে বাম পাশে ঠোঁটের কোণায় টোল পড়ে।মিষ্টু আজকে রাসেলের চোখের ভাষা পড়তে পেরেছে৷ আর
মিষ্টু এটাও বুঝে গেছে এই চোখের চাউনি কখনো মিথ্যা বলতে পারে না!মিষ্টু মনে মনে একটা শপথ করে যে! রাসেলকে আর ভুল বুঝবে না…


রাসেল খেয়াল করে মিষ্টু ওর দিকে তাকিয়ে আছে!রাসেল ভ্রু নাচিয়ে হাসতে হাসতে বলে..

রাসেলঃএই পঁচা ছেলেটা মোটেও সুদর্শন নয়! তাই এভাবে তাকিয়ে থেকো না।আর কেউ এভাবে তাকালে আমি লজ্জা পায়।

মিষ্টুঃএত মন খারাপ! এত কষ্ট নিয়ে আপনি মুখে হাসি আনেন কি করে বলেন তো?

রাসেলঃহা হা হা! এই মেয়ে বলে কি?আমার আবার কিসের কষ্ট?আমার কোন কষ্ট নেই আমি অনেক সুখী মানুষ! আগে তো ব্যাচালার ছিলাম এখন আমার বিয়েও করে ফেলছি! হা হা হা

মিষ্টুঃ যারা নিজেদের কষ্ট লুকিয়ে রেখে! অন্যদের সামনে সুখী হওয়ার ভান করে চলে!তারা হয়তো নিজেদের চালাক মনে করে বাট তারাই প্রকৃত বোকা জানেন তো?কারন তারা সবার চোখে ফাকি দিতে পারে না…কারো না কারো চোখে ধরা পড়ে যায়।

রাসেলঃতাই নাকি!হবে হয়তো!তবে জানো মিষ্টু তোমাকে দেখে আমার খুব হিংসা হয়!

মিষ্টুঃকেন?(অবাক হয়ে)

রাসেলঃযখন দেখেছিলাম মামনি আর তোমরা ঝগড়া,অভিমান,বকুনি,আবার মায়ের আদর তখন তোমাকে দেখে আমার বড্ড হিংসা হয়।

মিষ্টুঃকেন?

রাসেলঃজানো আমার কোন কিছু কমতি নেই!কিন্তু আমার জীবনে ভালবাসার বড্ড অভাব!আমি আমার মাকে কোনদিনও কাছে পাই নি!কোনদিন মায়ের কোলে মাথা রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে বলার আবদার করতে পারি নি,কখনো খাবো না রাগ করলে কেউ এসে ভালবেসে খাইয়ে দেয় নি,রাত করে বাড়ি ফিরলে কেউ বকা দেয় নি!কেউ রাত জেগে খাবার নিয়ে বসে থাকে নি। জানো আমার জর আসলে আমি একা একা মাথায় পানি ঢালি! একা একাই জলপট্টি দেয়। হুম অনেকে আছে বাসায় তবে আমাকে দেওয়ার মত সময় কারো নেই। তবে জানো তো আমার এই সোনা বাঁধানো এত কিছু জোটে নি হা হা হা ! তবে আর আফসোস করি না আমি। আমি এখন নিজেকে সামলে নিতে শিখে গেছি…

মিষ্টুঃ (কি বলবে বুঝতে পারছে না)

রাসেলঃতুমি চাইলে আমরা একটা কাজ করতে পারি এখন?তুমি আর মিলে..

মিষ্টুঃকি কাজ?আমি তো কোন কাজ পারি না..

রাসেলঃআরে বারে শোন আগে ! আপাতত আমরা এই কাজ গুলো ভাগাভাগি করে নিতে পারি !তাহলে আমাদের কারো আপসোস থাকবে না।মামনিও তো এখন তোমার কাছে তাই না…

মিষ্টুঃআপনি কি এখন আমাকে আপানার আম্মু সাজতে বলছে নাকি?🙄


মিষ্টুর এই কথা শোনার পর রাসেলের নিজেকেই কেন জানি পাগল পাগল লাগছে?মিষ্টুকে এত কথা বলার পর যে মিষ্টু এই কথা বলবে রাসেল আশা করে নি!রাসেল কি রিয়েক্ট করে খুজে না পেয়ে হা করে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে আছে!রাসেল আগে মনে করতো মিষ্টু খুব বুদ্ধিমতী!বাট রাসেল এখন এটাও ভাবছে অতিরিক্ত টেনশন মিষ্টুর মাথার তার টার ছিড়ে গেল না তো।মিষ্টু রাসেলের উওরের আশায় রাসেলের দিকেই তাকিয়ে আছে…


রাসেল মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে বলে!

রাসেলঃআমরা তো বন্ধু হয়েও এই কাজ গুলো করতে পারি তাই না।

মিষ্টুঃতাও ঠিক…


এভাবে ওরা অনেকটা সময় গল্প করলো!আর গল্পের মাঝেই রাসেল মিষ্টুকে দুই প্লেট ভাত খাইয়ে দিয়েছে আর নিজেও খেয়েছি!মন খারাপের মাঝে কারো সাথে গল্প করতে পারলে মনটা অনেক হালকা হয় রাসেল মিষ্টুর মন ভাল করার জন্য এত এত কথা বলছে!বাট সত্যি বলতে রাসেল কখনো কারো সাথে এত বকবক করে না।কিন্তু আজকে মিষ্টুর মন ভালো করার জন্য একটু হাসানো জন্য রাসেলের কত প্রচেষ্টা। সত্যি কারের ভালবাসলে তার প্রিয় মানুষটা মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কত কি না করতে হয়? রাসেল হাত ধুয়ে মিষ্টুকে বললো একটু ঘুমিয়ে নিতে তারপর দুইজন দুই রুমে চলে গেল।


মিষ্টু বেডে শুইয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের আকাশ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যায়।রাসেল সবকিছু গোছগাছ করে নিয়ে মিষ্টুর রুমে উঁকি মেরে দেখে মিষ্টু ঘুমাচ্ছে! রাসেল ধীর পায়ে মিষ্টুর কাছে এসে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে পড়ে আর মিষ্টু দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here