রোদেলা লেখা: মাহাবুবা মিতু পর্ব: ২৬

0
818

রোদেলা
লেখা: মাহাবুবা মিতু
পর্ব: ২৬

রাত দেড়টা….
হু হু করে বাতাস কেটে কেটে চলছে বাসটা….
জানালার সিটে প্রিসিলা বসেছে রোদেলা ওর সাথে। এত ঝুটঝামেলা পেরিয়ে অবশেষে ওরা সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে। ব্যাপারটা কিছুটা হলেও আনন্দ দিচ্ছে ওকে। এমন এক মনের মালিক ও সহজে আনন্দ কিংবা কষ্ট কোনটাই ছুঁতে পারে না ওকে।

যদিও অস্বস্তিবোধ হচ্ছে ওর এখানে বসে। কারন পেছন থেকে অবিচ্ছিন্ন ভাবে একজোড়া ভাবুক চোখ ওকে দেখছে….
মাঝে মাঝে পেছনে তাকালে অন্য দিকে ঘুরে যায় সেই দৃষ্টি। কিন্তু ও জানে ঐ তৃষিত চোখ ওকে দেখছে ক্লান্তিহীন ভাবে।
অনেক কিছু মনে পরে রোদেলার….
একটা সময় ভাবে- না আসলেই হয়তো ভালো হতো….

গাড়ির সবার চোখেমুখে আনন্দ উপচে পড়ছে, শেষের অক্ষর দিয়ে গান হচ্ছে, ছোট-বড় সবাই যোগ দিয়েছে এই অনাবিল আনন্দে শুধু দুটি প্রাণী ছাড়া। যদিও তারা দুই প্রাণ তবুও তাদের ভাবনার বিষয় একই….

গাড়ি রাত তিনটায় বিরতিতে যখন কুমিল্লা নামলো, রোদেলা বাসেই বসে রইলো। এসব আনন্দ যেন ওকে ছুঁতে পারছে না। পুরো বাস ফাঁকা, গাড়িতে কেবল ড্রাইভার বসে আছেন। আনমনে পেছনে তাকায় ও, দেখে শোভন সিটের হাতলে হাত রেখে নখ কাটছে। রোদেলা বের হতে উঠে দাঁড়ায়, পাছে শোভন ওকে কিছু বলে বা জিজ্ঞেস করে…

দাঁড়িয়ে কাপড় ঠিক করতে করতেই শোভন দ্রুত বের হয়ে যায় রোদেলাকে পাশ কেটে ওর আগেই। কেন জানি রোদেলার কষ্ট লাগে ব্যাপারটাতে….

নিচে নামে রোদেলা। তেমন কিছু খায় না ও , শুধু একটা চিপসের প্যাকেট নেয়। সবাই দলে দলে দাড়িয়ে কথা বলছে। ও দলছুটের মতো হাঁটছে আর কি যেন খুঁজে চারদিকে। একটা পরিচিত মুখ হয়তো… কিন্তু কোথাও দেখে না ও চিরচেনা সেই মুখটাকে ।

বিরতির পর যখন সবাই নিজ নিজ আসনে বসলো, আনমনে পিছনের দিকে তাকায় রোদেলা। সিটটা ফাঁকা, অন্য মনস্ক ভাবে ফোন স্ক্রোল করে ও। গাড়িটা চলতে শুরু করে ধীরে ধীরে। তখনো তাকায় ও, তখনও সিটটা ফাঁকা। শোভন কি তাহলে উঠে নি গাড়িতে….!? কি যে অস্বস্তিকর একটা অবস্থা। কাওকে জিজ্ঞেস ও করা যাচ্ছে না। আচ্ছা কেও কি খেয়াল করে নি যে শোভন গাড়িতে উঠে নি…?
মনটা খসখস করতে থাকে।

একটু পর বাতি নিভে যায় গাড়ির, পাওয়ার ব্যাংক নিতে শোভনকে খুঁজে ওর বোন। শোভন হাত উঁচিয়ে সাড়া দেয়, বাতি জ্বালতেই রোদেলা বুঝতে পারে জায়গা বদল করেছে শোভন। আরো একটা কষ্ট ধাক্কা দিলো বুকে। কি যে কষ্ট লাগলো ওর বলার মতো না….

এটা কি নিরব অপমান না….!?
ওকে যাতে দেখা না যায় তাই জায়গা বদল করেছে ও এটা সোজা হিসেব। খুবই বিরক্ত লাগে ওর। নিজেকে শাসায় ও। এত সহনশীল রোদেলা এসবে কেন কষ্ট পাচ্ছে ভেবেই অবাক হচ্ছে ও। ও যেন চিনছে না নিজেকে।

এসব কেন পাত্তা দিচ্ছে ও আর ভাবছে , একটা সময় ঘুমানোর চেষ্টা করে ও। ঠিক কখন ঘুমিয়েছে জানেনা ও। ওর ঘুম ভাঙ্গে ওর কপালে একটা উষ্ণ স্পর্শে….
আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যায় ওর….
আশেপাশে তাকায় ও, ধীরে ধীরে আলো ফুঁটছে চারদিকে, কেও ওর সামনে নেই, কিংবা পেছনেও…

উঠে দাঁড়িয়ে পুরো গাড়িতে চোখ বুলায় ও, পুরো গাড়ির লোক ঘুমে বেহুঁশ। ঘুমিয়ে আছে শোভনও…
কি স্নিগ্ধ লাগছে ওকে। ঘুমন্ত শোভনকে প্রথমবারের মতো দেখলো রোদেলা। বাতাসে চুলগুলো কপালে আছড়ে পরছে এলোমেলো ভাবে। কি সুন্দর দৃশ্য….

এই আপাদমস্তক মানুষটা ইচ্ছে হলেই ওর নিজের হতে পারতো। কিন্তু ওর ভাগ্য বড়ই নির্মম… হয়তো ওকে পেতে চাইলে ইশ্বর ওকে কেড়ে নিবে ওর কাছ থেকে। ওর না হোক তবুও থাকুক ও…

রোদেলা নিজের সিটে বসে চোখ বন্ধ করে। মনে করতে চেষ্টা করে সেই অনুভূতির কথা। ও কি তাহলে স্বপ্ন দেখলো……!?

তাই হবে হয়তো….
মৃদু একটা হাসি হাসলো ও। আস্তে করে বললো
জীবন সুন্দর….!
অন্ততঃ কল্পনায় জীবণ সুন্দর…!

বেলা সাতটায় ওরা পৌঁছাল টেকনাফে। নাশতা খেয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্য জাহাজে উঠলো সাড়ে নটার সময়। ক্লান্ত সবাই যার যার সিটে বসে গা এলিয়ে দিলো। রৌদ্রস্নাত উজ্জ্বল দিন, রোদেলা জাহাজের রেলিং ধরে রৌদ্রস্নান করতে দাঁড়লো। রোদটা এখনো মিষ্টি, একটু পর যখন সূর্য মাথার উপর থাকবে তখন রোদটা কড়া হবে। রোদেলা চারদিকে চোখ বুলায় একপাশে টেকনাফের পাহাড় অন্য পাশে মায়ানমার। দুই দেশকে ভাগ করে দিয়েছে এই নাফ নদী।

নিরব, সাধারণ, সাদামাটা এই নদীর অনেক ইতিহাস রয়েছে। কালের আবর্তে তার কিঞ্চিৎ জানি আমরা। নাফ নদীর তীরের ইতিহাসকে কেন্দ্র রচিত হয়েছে আলী আহসানের উপন্যাস ‘নাফ নদীর তীরে’। যদিও বইটা পড়া হয়নি রোদেলার তবুও এই বই সম্পর্কে ও জেনেছে রুবিন আঙ্কেলের কাছে।

রুবিন আঙ্কেল …!
হুম সেই রুবিন যার সাথে ওর মায়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। রোদেলার বই পড়ার যে জগৎ তা গড়ে দিয়েছেন রুবিন আঙ্কেল। তিনি রোদেলাকে মেয়ের মতো দেখেন। তার স্ত্রীও অনেক আদর করে রোদেলাকে। তাদের দুটি ছেলে, কোন মেয়ে নেই। তাই হয়তো একটু বেশীই ভালোবাসে ওকে। তবে সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে রুবিন আঙ্কেলের স্ত্রী শাহনাজ চৌধুরী তাকে বেশী ভালো বাসেন। স্বাভাবিক ভাবে তার রোদেলাকে অপছন্দ করবার কথা ছিলো। কিন্তু তিনি উল্টো ওকে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসেন।

এতদিনের আসা যাওয়া তাদের বাড়ি, কখনোই তিনি তার স্বামীর ভেঙে যাওয়া বিয়ে প্রসঙ্গে কথা বলেনি রোদেলার সাথে। দেখা হলে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করেন কেমন আছো…
তোমার মা কেমন আছে….
যেন কত পরিচিত দুজন, কত দেখা হয়েছে তাদের। তাই খোঁজ নিচ্ছেন।

রুবিন আঙ্কেলের ছোট ছেলেকে পড়ানোর জন্য শাহনাজ আন্টি ওকে ঠিক করে। তখন ওরা ওদের নানু বাসায় পাকাপাকিভাবে থাকে। শাহনাজ আন্টি জানতো না যে রোদেলা নাসিমার মেয়ে। তিনি তার ছোট ছেলের জন্য টিচার খুঁজতে গিয়ে এক প্রতিবেশীর মারফত রোদেলার খোঁজ পায়। প্রায় মাসখানেক যাবার পর একদিন হঠাৎ দেখা হয় রুবিন আঙ্কেলের সাথে। তিনি মোটেও অপ্রস্তুত হননা, বরং তার স্ত্রীকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেন নতুন ভাবে।

আরেহ্ শাহনাজ…
একে তুমি কোথায় পেলে….?!
এ কে তুমি জানো, এ কিন্তু নাসিমার মেয়ে,

রোদেলা ততদিনে এসব জানতো। লজ্জায় ও কুঁকড়ে যাচ্ছিল। না জানি কি বলেন তিনি। নাকি বাদই দিয়ে দেয় ওকে, পাছে স্বামীর পুরাতন ক্ষত জেগে ওঠে। কিন্তু অবাক করে তিনি আহ্লাদিত ভাবে বললেন…

– তাই নাকি, বাহ্ তোমার মাকে আমি দেখি নি, তবে তোমার রূপ দেখে তোমার মায়ের রূপ আন্দাজ করা যায়। একদিন যাবো তোমাদের বাসায়…

রোদেলা একটু অবাক হলো, চিন্তা করতে থাকলো শাহনাজের জায়গায় নাসিমা থাকলে কি হতো এতক্ষণে….

শেষে তার ছেলেকে রোদেলা অনেক দিন পড়ালো। সেই হাতে খড়ি থেকে সিক্স পর্যন্ত। এতদিন যাওয়া আসায় খুব ভালো সম্পর্ক হয় তাদের সাথে। ঠিক যেন সেকেন্ড হোম। তিনি ভালোমন্দ রান্না করলে রোদেলাকে খাওয়ায়, রোদেলা পড়াশোনার খোঁজখবর রাখেন। ইদ, মেলা, কোন দিবস উপলক্ষে চুড়ি-ফিতা কিনতে আলাদা করে টাকা দেন বেতনের সাথে।

রোদেলা ও নিজের সবটুকু ধৈর্য নিয়ে পড়িয়েছে তার মহা ফাজিল আর দুষ্ট ছেলেকে। যেই ছেলে বইখাতা ছিড়ে একাকার করে ফেলতো তার রোল এখন ১-১০ এর মধ্যে থাকে। পড়াশোনার এই সবটুকু কৃতিত্ব তিনি অকপটে রোদেলাকে দেন। তাই হয়তো ভালোবাসাটা একটু বেশীই রোদেলার প্রতি।

তাদের নতুন বাসায় একটা দেয়াল ভর্তি বই। রোদেলা প্রায়ই ফিরবার পথে দাঁড়িয়ে দেখতো। শাহনাজ আন্টিও বই পড়তে ভালোবাসেন। তিনি রোদেলাকে বলেন পড়তে চাইলে নিতে পারে বই…

সেই থেকে শুরু…….

ভাবনায় হঠাৎ ছেদ পরে নাতাশার আগমনে। পেছন থেকে পিঠে ধাক্কা দেয়ায় চমকে পেছন ফিরে ও। দুজন মিলে কথা বলতে শুরু করে। প্রিসিলা ছবি তোলে দুজনের। ক্যানডিড মোমেন্ট ক্যাপচার করে সকলের । ওর একটা ডিজিটাল ক্যামেরা রয়েছে। ছোটমামা রোদেলাকে দিয়েছিলেন। প্রিসিলা ভালো ছবি তোলে তাই ও প্রিসিলাকে দিয়ে দিয়েছে এটা। ঘুরে ঘুরে সবার ছবি তুলছে ও। বেশীরভাগই ক্যানডিড ছবি। কল্লোল ক্যামেরাটা নিয়ে ছবিগুলো দেখে খুব প্রশংসা করে প্রিসিলার। বলে তুমি ছবি তোলা শিখলে কোত্থেকে….

প্রিসিলা বলে আরেহ্ ভাইয়া ছবি তোলায় আবার শিখবার কি আছে…! কল্লোল বুঝায় যে এটাও একটা আর্ট। বিখ্যাত সব আলোকচিত্রীদের গুগল করে পরিচয় করিয়ে দেয় প্রিসিলার সাথে। আরো বলে ইউটিউবে টিউটোরিয়াল পাওয়া যায় সেগুলো দেখো, আর ক্যামেরার ব্যাবস্থা আমি করে দিবো নি।
ওটা তোমার রেজাল্ট গিফট….

শোভন মাঝখান থেকে বলে আরেহ্…
– কল্লোল আমিও কিন্তু একটা গিফট পাই তোর কাছ থেকে,
– হুম, আমার মনে আছে…. তুই তো বলিসই নি কি চাস, নাকি আমি আমার পছন্দ মতো দিবো…
রোদেলার দিকে তাকিয়ে শোভন বলে –
– নাহ্ সময় হলে আমিই চেয়ে নিবো তোর কাছ থেকে। বলে সেখান থেকে চলে যায় ও।

ছবিগুলো দেখে সবাই পছন্দ করে, কিছু মজার ছবিও রয়েছে সেখানে। সেগুলো নিয়ে হাসাহাসি শুরু হয়ে যায় ওদের মধ্যে।

দুপুর একটা নাগাদ জাহাজ সেন্টমার্টিন পৌঁছায়। সবুজ পানি দেখে আনন্দে আত্মহারা ছোট্ট প্রিসিলা। খুশি রোদেলাও, তবুও প্রিসিলার আনন্দটা উপচে পরছে ওর চোখেমুখে। ও রোদেলাকে রেখেই নামার উদ্দ্যগ নিয়েছে, কল্লোল ভাইয়া এক এক করে সাবধানে নামাচ্ছে মুরব্বিদের। ও তাদের সাথেই নেমে দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজটার একপাশে…

হাত নেড়ে নেড়ে সবাইকে নামবার ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে। রোদেলা ওর লাগেজ হাতে তুলে হেঁটে গেইটের কাছে যায়। প্রায় সবাইই নেমে গিয়েছে। কল্লোল ভাইয়া নাতাশাকে হাত ধরে নামাচ্ছে। নাতাশা ভয় পাচ্ছে পানির স্রোত দেখে। বারবার জিজ্ঞেস করছিলো ও এখানে পরলে ঠাঁই পাওয়া যাবে কি না। ভয়ে হিল জুতা খুলে হাতে নিয়েছে। ভয় ওর চোখেমুখে স্পষ্ট। শেষমেশ কল্লোল ওকে পাঁজা কোলে নিয়ে নামালো। কারন ওর পিছনে দাঁড়ানো মেয়েগুলো বিরক্ত হচ্ছিল ওর দেরি করার কারনে। রোদোলা হাসে ওর কান্ড দেখে, প্রিসিলা হেসে গড়াগড়ি খেয়ে ভিডিও করছে ওদের এসব কান্ডকারখানা।

টেনে আনার কারনে ব্যাগের ওজন খেয়াল করে নি রোদেলা, জাহাজে উঠবার সময় বাসের হেল্পার ছেলেটা তুলে দিয়ে গেছে, এখন…….?!

শোভন হন্তদন্ত হয়ে নেমে গেলো রোদেলার সামনে দিয়ে। ও কি বুঝতে পারে নি যে ওর কারো সাহায্য দরকার….? একা যেতেই ভয় হচ্ছিল ওর তার পর এই লাগেজ….!

কি করবে ভাবতেই নাতাশাদের বাড়ির কাজের ছেলেটা দৌড়ে এসে রোদেলার লাগেজ হাতে নেয়। এবার রোদেলা মনে মনে দুরুদ পড়ে নামার চেষ্টা করে। দুরু দুরু বুকে এক পা এক পা করে চলে আসে কাঠের সিঁড়ির সীমানায়। পা পিছলে ভাব হয়ে পরে যেতে থাকে রোদোলা। কল্লোল এসে ওর হাত ধরে ফেলায় কোনমতে দাঁড়িয়ে পরে। মনে মনে ভাবে এটা নাতাশাকে দেখে হাসার শাস্তি….
জুতাটা খুলে হাতে নিলে ভালো হতো….

পাঁচমিনিটের হাঁটা পথ পেরিয়ে ওরা একটা রিসোর্টে এলো । দ্বিতীয় তলার একইসাথে সবগুলো রুমে উঠলো ওরা।

রোদেলাকে যে রুম দিলো সেখানে ওর সাথে ছিলো প্রিসিলা আর বড় মামী, বড় মামা উঠলেন ছেলেদের রুমে। নোভেল, শোভন, কল্লোল একরুমে। নাতাশার বাবা, শ্বশুর, চাচা শ্বশুর এক রুমে।

রুমে ঢুকে এক এক করে ফ্রেশ হলো ওরা।
দুপুর আড়াইটায় ডাক পরলো দুপুরের খাবারের জন্য। ওরা সবাই খাবার খেতে একসাথে বসলো। মেনুতে ছিলো সাদা ভাত, সবজি, মুরগীর তরকারর, কোরাল মাছ, আর ডাল। রোদেলা নাতাশার সাথে বসেছে। প্রিসিলা বসেছে কল্লোল আর শোভনের মাঝখানে। এ্যামী আপু তার বরকে নিয়ে ঠিক রোদেলার অপজিটে বসেছেন। বড়রা সবাই খাবারের স্বাদ নিয়ে কথা বলছে। নাতাশা বলছিলো নামবার মুহূর্তের সেই ভয়ংকর অনুভূতির কথা। রোদেলার যেন কিছুই বলার নেই।

প্রিসিলা আর শোভন খুব হেসে হেসে কথা বলছে।
রোদেলার জানতে ইচ্ছে করে কি নিয়ে এত হাসছে ওরা। দুইজন দুই কোণটাতে বসলেও একজন আরেকজনকে সহজেই দেখা যায়। রোদেলা খাচ্ছে আর দেখছে শোভনকে। শোভন কিন্তু একটিবারের জন্যও তাকাচ্ছে না রোদেলার দিকে। ওর এমন ভাব দেখে হাসি পাচ্ছে রোদেলার। কারন ব্যাপারটায় খুব কসরত করতে হচ্ছে ওকে। ভালবাসা উবে গিয়েছে জনাবের….!?

কিন্তু রোদেলা জানে লাগেজ হাতে না নিলেও কাজের ছেলেটাকে শোভনই পাঠিয়েছে রোদেলার লাগেজ নিতে।

খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে গিয়ে দেখে বড়-মামা খুবই আন্তরিক ভঙ্গিতে একজনের সাথে কথা বলছেন…. রোদেলা ভাবে এখানে আবার তার পরিচিত কে এলো….!?

একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে সুফিয়ান….!
মানে আবু সুফিয়ান….!

ওকে দেখা মাত্রই বললো
: আরে রোদেলা……!
কি ভালো লাগছে তোমাদেরকে দেখে….
: আরেহ্ সুফিয়ান ভাই….!
: কেমন আছেন.?
: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি….
: আপনি এখানে.?
: ফ্যামেলি ট্যুর আরকি…
: ও আচ্ছা, বৌ-বাচ্চা নিয়ে এসেছেন নাকি.?
জিব কেটে সুফিয়ান বলে-
: আরেহ্ বিয়েই তো করলাম না, বউ-বাচ্চা এলো কোত্থেকে….!
বড় মামা এবার জিজ্ঞেস করলো- তো কাদের নিয়ে এসেছো…?

সুফিয়ান তাদেরকে সাথে করে পেছনের টেবিলে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলো তার পরিবারের সাথে, মা, ছোট ভাই আর বোন….

তারা খুবই আন্তরিক ভাবে কথা বললেন। বড় মামাকে বললেন তাদের বাসায় আসতে একদিন। রোদেলার ভাব হয়ে গেলো সুফিয়ানের ছোট বোনের সাথে। নোভেল পরিচয় করিয়ে দিলো কল্লোলদের সাথে ওকে। ব্যাস ফ্যামেলি ট্যাুরের জনসংখ্যা বেড়ে গেলো আরো পাঁচজন। যদিও উনাদের রুম তিন তালায়। আগে বুকিং না করায় নিচে রুম পায়নি তারা। হঠাৎ এখানে আসার প্ল্যান করায় বুকিং করা হয়ে উঠেনি..

খাওয়র পর ঘুম দেয় ওরা। বিকেলে বীচের কাছে ঘুরতে বের হয় ওরা। একা হাঁটতে হাঁটতে রোদেলা অনেক দূর এসে পরে। ও একা কারন নাতাশা ওর বরকে নিয়ে হাত ধরে হাঁটছে, প্রিসিলা হাঁটছে শোভনের সাথে। সবাই মোটামুটি দল করে ফেলেছে। ও হয়ে গেছে দলছুট।

একটা জায়গা দেখে সেখানে বসে ও। দু হাত পিছনে ভর দিয়ে শরীর এলিয়ে দেয় সেই হাতে। মন ভরে দেখে প্রকৃতির এই অপরূপ সৃষ্টিকে। মনে মনে ভাবে একা থাকা তেমনও মন্দ না।

এরি মধ্যে সুফিয়ান ডাব হাতে কোত্থেকে এসে হাজির হল ওর সামনে…

চলবে….

(গত পর্বটা একটু মিসটেক হয়ে গিয়েছিল। ২৫ পর্বে ২৬ পর্বের কিছু লেখা কপি হয়ে গিয়েছিলো ভুলে, কেও আবার ভেবো না পুরাতন পর্ব আপলোড করেছি…😅
তোমরা তোমাদের প্রোফাইলে লেখাটা শেয়ার করে দিও। তাতে পেইজের রিচ বাড়বে। এত কষ্ট করে লিখি একটু অনুগ্রহ কিন্তু পেতেই পারি… তাই নয় কি…?
আর হ্যা কি হতে পারে সামনে কমেন্টে জানাও, দেখি কার অনুমান কেমন….)

previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1515753548885831/
next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1517181125409740/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here