তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব- ১৬

0
607

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ১৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারহান নামক ভয়ংকর অতীতকে দেখে ছিটকে সরে গিয়ে দ্রুততার সাথে উঠে গেলো রিমি। ফারহান অদ্ভুদ দৃষ্টিতে রিমির পানে তাকিয়ে আছে। রিমি বেশ অনেকটাই দূরত্ব বাড়িয়ে নিলো ফারহানের থেকে।
নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ।রাস্তায় তেমন কেউ নেই। পিচঢালা রাস্তায় শুধু দুই -একটা গাড়ি চলাচল করছে। রিমি তখন দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ করে ফারহানের সাথে ধাক্কা খেয়ে নীচে পড়ে গিয়েছিলো।
ফারহানকে দেখে দ্রুত সে উঠে পড়ে। রিমিকে থামতে দেখে পিছনে থাকা মহিলা গার্ডগুলো দৌড়ে আসে। সবার মাথাই নিচু। একজন মহিলা গার্ড নিচু হয়েই বলে,

‘ ম্যাম! আপনার কোথায় লাগেনি তো? ‘

‘ ম্যাম প্লিয বলুন আপনার কি কোথায় লেগেছে?
লাগলে প্লিয আমাদের বলুন নাহলে স্যার আমাদের অবস্হা খারাপ করে দিবে। ‘

মহিলাগুলোর কথা শুনে রিমি চোখ বড় বড় করে বলে,

‘ মানে? কে আপনাদের স্যার? আর আপনারা কেন আমার পিছনে আসছেন? ‘

মহিলাগুলো আগের ন্যায় মাথা নিচু করেই বললো,

‘আপনি আমাদের দেখে পালাচ্ছেন কেন? আমরা তো আপনার সেফ্টির জন্যে আপনার পিছনে দৌড়াচ্ছিলাম। ‘

রিমিকে অবাক করে দিয়ে গম্ভীর পুরুষকন্ঠে কেউ বলে উঠে,

‘ ওরা আমার গার্ডস। ‘

রিমি পিছনে তাকিয়ে দেখে অয়ন সাদা এপ্রোন পড়ে গম্ভীর মুখ করে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন মহিলা গার্ডসগুলোকে চোখের ইশারা দিয়ে যেতে বলে। মহিলা গার্ডসগুলোও অয়নের চোখের ইশারায় চলে যায়।

‘ কিন্তু আপনি ওদের রেখেছেন কেন? আমার উপর নজরদারী করার জন্যে? ‘

রিমির প্রশ্নে অয়ন কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে, রিমির সামনে এসে,ফারহানের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ আজকালের কিছু মানুষের নজর একটু বেশিই পড়ছে তোমার উপর। তাদের নজর থেকে হেফাজত করার জন্যে তোমার জন্যে মহিলা গার্ডস রেখে দিয়েছি। যেন তোমার ২৪ ঘন্টার সব খবর আমি পেয়ে যাই। ‘

ফারহান দ্রুত নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। অয়ন যে তাকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলেছে তা বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি তার। অয়ন ফারহানের সামনেই রিমির হাত ধরে, গাড়ির দিকে একপ্রকার টেনেই নিয়ে গেলো। ফারহান আবারোও মাথা তুলে একবার রিমি এবং অয়নকে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। ফারহানের চোখের সামনেই অয়ন গাড়িটা ঘুড়িয়ে নিজ গন্ত্যবের দিকে নিয়ে গেলো। ছোটবেলা থেকেই তাদের মধ্যে দূরত্ব। তাইতো আজ আপন ভাই হয়েও ফারহান কিংবা অয়ন একে-অপরের খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না বরং অয়ন ফারহানকে খুঁচিয়ে কথা বললো। ফারহানের ভাবনার মাঝেই সানা দৌড়ে ফারহানের কাছে আসলো। ফারহান এবং সানা গাড়িতে করে অফিসে যাচ্ছিলো, কিন্তু হঠাৎ করে সানার চকলেট এর দোকান দেখে খুব চকলেট খেতে ইচ্ছে হলো।তাই সানা তখন চকলেটের দোকান দেখে ফারহানকে দেখে দাঁড়াতে
বলে চলে গিয়েছিলো। সেই মুহুর্তেই রিমি এসে হন্তদন্ত হয়ে ফারহানের সাথে ধাক্কা খায়। রিমিকে দেখেই স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলো ফারহান। রিমিকে দেখলেই তার মস্তিষ্কে শুধু অতীতের কিছু স্মৃতি এসে হানা দেয়, কিন্তু ফারহান রিমিকে যা ভাবছে আদোও কি তা রিমির সঠিক পরিচয়? কে এই রিমি? তার আসল পরিচয় টা কী? রিমি নাকি জান্নাত? বিভিন্ন প্রশ্নে এসে ঘিড়ে ধরেছে ফারহানকে। যা ফারহান চাইলেও এড়াতে পারছে না।

‘ স্যার! আমাদের বেশি দেরী হয়ে যাচ্ছে। ‘

সানার কথায় হুশ আসে ফারহানের। সানার দিকে তাকিয়ে চমৎকার হাসি উপহার দিয়ে সায় দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে ফারহান। সেই হাসি দেখে এক মুহুর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিলো সানা। মানুষের হাঁসি এতো সুন্দরও হয়?

______________

গাড়ির এক কোণে বসে আছে রিমি। তার চোখ বার বার যাচ্ছে তার সামনে থাকা যুবকের দিকে। যুবকের চোখের ঘন ঘন পাপড়ি দ্বারা বার বার পলক ফেলছে। দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরেছে নিজের অধরজোড়া। চুলগুলো এক হাত দিয়ে খামচে ধরে বার বার পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অসহ্য রাগ হচ্ছে অয়ন নামক যুবকের। যা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে রিমি।

‘ সবাই কেন তোমার দিকেই তাকিয়ে থাকে? এই লজিকটা আজকেও বুঝলাম না। অসহ্য লাগে৷ সবার চোখ উপড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। তোমার দিকে শুধু আমি তাকাবো বুঝলে? ‘

অয়ন রিমির দিকে কটমট করে তাকিয়ে কথাটি বলে। রিমি বিরক্তির সাথে বলে,

‘ একজন প্রয়োজনে আরেকজনের দিকে তাকাইতেই পারে। তাই বলে এতো রেগে যাচ্ছেন কেন আপনি? সাইকো লোক একটা! ‘

অয়ন রাগে হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষে, জোড়ে ঘুষি মারে গাডির হ্যান্ডেলে। হঠাৎ ব্রেক কষাতে রিমি মাথা গাড়ির সিটে এসে বারি খায়,কিন্তু রিমি ব্যাথা পায় না
কেননা অয়ন সিটে নিজের হাত পেতে রেখেছে। তাই রিমির মাথায় ব্যাথা পায় না৷ রিমি অয়নের দিকে তাকাতেই অয়ন রিমির কাছে এসে রিমির ললাটে ধরে ঠোটজোড়া ছুইয়ে দেয়। স্বামীর গভীর ভালোবাসাময় স্পর্শে রিমির হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি হয়। ছেয়ে যায় হৃদয় অদ্ভুদ ভালো লাগার স্পর্শে। অয়ন রিমির ললাটে ধরেই বলে,

‘ তোমার সাইকো থাকতে তোমাকে কখনো ব্যাথা পেতে দিবে না রিমিপরী। হাজারো প্রতিকূলতায়
হাজারো বিপদে তোমার ঢাল হয়ে সর্বদা দাঁড়িয়ে থাকবে তোমার সাইকো।’

____________________

রিমির মামা নিজের রুমে এসে একটা চেয়ারে বসে ধপ করে বসে পড়লো। মুখ তার বেজায় গম্ভীর। ললাটের বলিরেখায় হাজানো চিন্তার ভাজ পড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। রিমির মা রিমির মামাকে দেখেই ছুটে এসে বললেন,

‘ কি হলো ভাই? তোমার হঠাৎ চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন? মিসেস রুহানার সাথে কথা বলেছিলে তুমি? কি বলেছেন উনি? ‘

‘ আমাদের মেয়েটা সুখে নেই রে। ওর সংসার ভাঙ্গতে বসেছে। ‘

কথাটি বলেই রিমির মামা হু হু করে কেঁদে ফেললেন।

রিমির মা তার ভাইয়ের পাশে বসে অস্হির হয়ে বললেন,

‘ কি হয়েছে টা কী? একটু খুলে বলো আমাকে। সংসার ভাঙ্গতে চলেছে মানে কি? ‘

রিমির মামা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

‘ আজকে রুহানা চৌধুরীকে ফোন দিয়েছিলাম তখনি তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে তখন অয়ন এবং রিমির বিয়ে শুধু সম্মান বাঁচানোর জন্যে দিয়েছিলেন। অয়ন এবং রিমির ডিভোর্স নাকি দুই তিনদিনের মধ্যে করিয়ে দিবেন এবং অয়নের বিয়ে অন্যকারো সাথে দিবেন। আমাদের মেয়ের সংসারটা শেষ রে! ‘

মেয়ের সংসার শেষ হয়ে যাবে শুনে রিমির মা হু হু করে কেঁদে উঠলেন। কাঁদতে কাঁদতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ ভাই! আমাদের দ্বারা অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়েছে রে। আমার মেয়েটা তো বিয়েটাই করতে চাইছিলো না। আমার মেয়ের জীবনটা শেষ হয়ে গেলো। ‘

রিমির মামা ও মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন। অতঃপর কিছু একটা ভেবে বললেন,

‘ ভুল যখন আমরা করেছি তখন আমরাই শুধরে নিবো সেই ভুল। ‘

রিমির মামার কথা বুঝতে পারলেন না রিমির মা। শুধু চেয়ে রইলেন ভাইয়ের দিকে।

_____________

পায়েল রুহানা চৌধুরীর কথায় আজকে চৌধুরী বাড়িতে এসেছে। রুহানা চৌধুরী অয়ন এবং রিমির ডিভোর্স এর পেপার রেডি করে ফেলছেন ইতিমধ্যে। অয়নের মতিগতি সুবিধার ঠেকছে না তার কাছে তাই তিনি দ্রুত কাগজ তৈরি করে ফেলেছেন। পায়েল শুধু
মনে মনে একটা কথাই ভাবছে ‘ ভালোই ভালোই অয়ন রিমির ডিভোর্স টা হয়ে গেলেই সে নিশ্চিন্ত,কিন্তু রিমির প্রতি অয়ন যে কতটা পাগল তার সাক্ষ্যি পায়েল নিজে। অয়ন কি আদোও রিমিকে ডিভোর্স দিবে? সেই প্রশ্ন ঘিড়ে ধরে পায়েলকে। নিজের ক্ষত হওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুগ গিললো পায়েল। অয়নের করা সেই ভয়ংকর কান্ডের কথা মনে পড়তেই ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় পায়েলের। তখনি সেখানে রিমি এবং অয়ন উপস্হিত হয়। রিমি এবং অয়নকে একসাথে দেখে রুহানা এবং পায়েল দুজনেরই মুখ কালো হয়ে যায়। অয়ন উকিলকে দেখেই বললেন,

‘ উনি এখানে কেন? ‘

রুহানা চৌধুরী…….

চলবে কী?

লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
[ আজকের পার্ট কী খুব অগাছালো হয়ে গেছে? আসলে অনেক ব্যাস্ততার মাঝে লিখছি। কালকে হয়তো দিতে পারবো না। আসলে কালকে অনেক ব্যাস্ত থাকব। আমার ভাইয়া চলে যাবে বিদেশে বুঝতেই পারছেন লেখার অবস্হাতে থাকবো না আমি😅]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here