তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব- ১৭

0
385

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ১৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রুহানা চৌধুরী অয়নের হাতে ডিভোর্সের কাগজ ধরিয়ে তাতে সাইন করে দিতে বলেন। অয়নের অগোচরে রুহানা চৌধুরী এতো দ্রুততার সাথে ডিভোর্স পেপার তৈরি করায় রাগে কপালের বলিরেখায় গম্ভীর্যপূর্ন ভাজ পড়ে অয়নের।অয়ন রাগে হাতজোড়া মুঠো করে নেয়। ডিভোর্স পেপারটার দিকে তাকিয়ে রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার কাজই তো শেষ হলো এখন অব্দি। এখন যদি তার এবং অয়নের ডিভোর্সটা হয়ে যায় তাহলে তো সে বাড়িতে থাকতে পারবে না। এতে রিমির উদ্দেশ্যও সফল হবেনা। কথাটি ভেবেই রিমি নখ কামড়াতে থাকে। রুহানা চৌধুরী এইবার পায়েলের হাত ধরেই
অয়নের সামনে নিয়ে আসে। অতঃপর ধীর কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ দেখো তো অয়ন! মেয়েটা তোমাকে কতটা ভালোবাসে। তোমাকে ছাড়া এখন সে কোন শ্যুট ও করবে না। তাই আমি দ্রুততার সাথে তোমার এবং রিমির ডিভোর্স পেপার টা রেডি করেছি। এখন তোমরা পেপারে সাইন করে দাও। তারপর তো
তোমার এবং পায়েলের বিয়ের ব্যাবস্হা ও করে ফেলতে হবে। তোমাদের একবার বিয়ে হয়ে গেলেই
আমি নিশ্চিন্ত। ‘

অয়ন অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে পায়েলের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি খুন করে ফেলবে অয়ন। পায়েল তো ভয়ার্থ মুখশ্রীতে নীচের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ-মুখে তার একরাশ ভয়। উকিল সাহেব এক পলক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে, রুহানা চৌধুরীকে তাড়া দিয়ে বললেন,

‘ মিসেস চৌধুরী একটু তাড়াতাড়ি করুন প্লিয। আমার আরো কয়েকটা জায়গায় যেতে হবে। ‘

রুহানা চৌধুরী তার কথায় সায় দিয়ে অয়নকে নিয়ে উকিলের সামনাসামনি বসালেন। অয়ন ও খুবই ভদ্রতার সাথে বসে পড়লো। উকিল সাহেব রিমিকেও অয়নের পাশে বসতে বললেন। মেঘ এবং তার মা রুজা চৌধুরীও চলে এলেন। মেঘ বার বার চাইছে যেন ডিভোর্সটা না হয়। রুজা চৌধুরী শুধু ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন একটা জিনিসই দেখার প্রয়াসে ‘জল
কতদূর গড়ায়। ‘ রুজা চৌধুরী অয়নকে খুব ভালো করেই চিনেন। শান্তভাবে সবকিছু মেনে নেওয়ার ছেলে সে নয় যদিও রুহানা চৌধুরীর কথাই সে সবসময় মেনে চলে, কিন্তু রিমির বেলায় আদোও কি তা মানবে? রিমি চাতকপাখির ন্যায় বার বার শুধু অয়নের পানে তাকাচ্ছে, কিন্তু অয়নের মতিগতি বুঝতে সে ব্যর্থ। রিমির এইবার কান্না পাচ্ছে। যাকে বলে গলা ধরে চিৎকার করে কান্না আসছে। না শুধু উদ্দেশ্য সফল হয়নি বলে যে রিমির চোখমুখে বিষন্নতার ছাপ তা নয়। আরো একটা কারণ আছে যার জন্যে রিমি আজ ভিতরে ভিতরে খুব অস্হির।
তার কারণ কি অয়ন নিজেই? রিমি জানেনা। শুধু জানে কিছুক্ষন আগের মুহুর্তটা যদি ফিরে পাওয়া যেত তাহলে হয়তো খুব ভালো হতো। রিমি মনের ভিতরে অজেনা এক অস্হিরতা এসে বাসা বেঁধেছে।
উকিল সাহেব অয়নের দিকে কলমটি এগিয়ে দিয়ে বললেন,

‘ ডক্টর এয়ারসি প্লিয দ্রুত সাইন করে দিন। আমাকে আরো জায়গায় যেতে হবে। ‘

অয়ন কলমটি হাতে নিয়ে একপলক তাকিয়ে প্রথমে রিমির দিকে এগিয়ে দিলো। রিমির দিকে এইভাবে এগিয়ে দেওয়াতে রিমিসহ সবাই বিস্মিত হয়ে অয়নের পানে তাকায়। অয়ন পায়ের উপর পা রেখে খুব সহজ ভাবেই রিমির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমিই আগে সাইন করো রিমিপরী। তারপর না হয় আমি করবো। ‘

অয়ন যে রিমিকে এতো কঠিন কাজের দায়িত্ব দিবে তা কখনোই ভাবেনি রিমি। রিমি কাঁপাকাঁপা হাতে
কমলটা নেয়। কলমটা নিলেও তার হাত কাঁপছে। নেত্রকোণায় সামান্য জল এসে টলমল করছে। রিমি নিজেকে সামলিয়ে নেয়। তাকে দূর্বল হলে চলবে না। রিমি বুকে পাথর দিয়ে সাইন করতে নিলে, কেউ তার থেকে কলমটি কেড়ে নেয়। রিমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে,অয়ন ভয়ংকর রাগান্বিত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

‘ এইটা কি করছেন আপনি? কলম কেড়ে নিলেন কেন আপনি? আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে তো। ‘

____লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি

উকিলের কথায় অয়ন তার পাশে থাকা কাচের গ্লাস টা উকিলের টাকের মাঝ বরাবর ছুড়ে মারে। উকিল মাথায় হাত দিয়ে ব্যাথায় চিৎকার করে। অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে ডিভোর্সের কাগজটা নিয়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয় পায়েল এবং রুহানা চৌধুরীর সামনেই। অতঃপর উকিলের কলার উচু করে নাক বরাবর ঘুষি মেরে বলে,

‘ তুই আমার আর আমার রিমিপরীর ডিভোর্স করাবি? তোর দেরী হওয়া বের করছি আমি। গার্ডস কাম ফার্স্ট! ‘

অয়নের হুংকারে কয়েকজন কালো পোষাক পরিহিত গার্ডস এসে উকিলকে ধরে নিয়ে যেতে থাকে। উকিল চিৎকার করতে করতে বলে,

‘ আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেউ বলো না?
আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।
আরে ভাই আমার বউ বাসায় ঝাটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেরী করে বাসায় ফিরলে পিটাবে। ‘

উকিলের এমন কথায় মেঘ এমন একটা কঠিন পরিস্হিতিতেও হু হা করে হেঁসে উঠে।
অয়ন উকিলের কাছে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘ আপনার বউয়ের দিকটা আমরা দেখে নিবো। এখন আপনি আপনার আসল জায়গায় যান। ‘

‘ আসল জায়গা মানে? ‘

উকিলের প্রশ্নে অয়ন শুধু বাঁকা হাসে। গার্ডসগুলো উকিলকে নিয়ে যায়। রুহানা চৌধুরী এইবার রেগে অয়নের কাছে গিয়ে, রিমিকে উদ্দেশ্য করে অয়নকে ক্ষিপ্ত গলায় বলে উঠে,

‘ এই দুইদিনের সাধারণ মেয়ের জন্যে তুমি আমাকে আজ অপমান করলে অয়ন? এই শিক্ষা দিয়েছি তোমাকে আমি? আজ তুমি তোমার গ্রেন্ডমার অসম্মান করলে? ‘

অয়ন দ্বিগুন ক্ষোভ নিয়ে চিৎকার করে বলে,

‘ জাস্ট স্টপ গ্রেন্ডমা। একদম আমাকে রিমিপরীকে
সাধারণ বলবে না। ‘

অয়নের চিৎকার দমে যায় রুহানা চৌধুরী। অয়ন রিমির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠে,

‘ আমার স্ত্রী অন্যন্যা। অসাধারণ আমার স্ত্রী। আমার রিমিপরী। তাইতো তার নেশায় আসক্ত হয়ে এক নেশাক্ত প্রেমিকে পরিনত হয়েছি আমি৷ ‘

অয়নের কথায় সবাই কেমন একটা ঘোরে চলে যায়। সবার কেমন একটা লাগছে। পায়েলের গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে। রুহানা চৌধুরীর মাথায় হাত! তিনি যা সন্দেহ করেছিলেন তাই হলো। অয়ন অবশেষে রিমিকে ভালোই বেসেই ফেললো। যাকে বলে পাগলামো ভালোবাসা।

অয়ন মুখে সম্পূর্ন গাম্ভীর্য এঁটে বললো,

‘ আমি পায়েলকে কিছুতেই বিয়ে করবো না। এইসব বিয়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো সবাই। ‘

কথাটি বলে সকলের সামনেই রিমিকে কোলে তুলে উপরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। মেঘ পারছে না এই মুহুর্ত নাঁচতে। নাহলে সে অবশ্যই নাঁচতো।

______________

আমান সবেমাত্র বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছে। দেশে এসেই প্রানভরে নিঃশ্বাস নিলো সে। অনেক ভালো লাগছে তার। কতদিন পর ফিরে এলো সে। এইবার শুধু সে তার রিমিপাখির সাথে দেখা করে সবকিছু বলে দিবে তার রিমিপাখিকে। কথাটি ভেবেই মুচকি হেসে একটা টেক্সি ডেকে তাতে উঠে রওনা দিলো আমান ।

__________

অয়ন রিমিকে কোলে নিয়ে নিজের ঘরের এনে দাঁড় করিয়ে, দরজা খট করে বন্ধ করে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙ্গচুর শুরু করে। রিমি তাজ্জব বনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন কিছুক্ষন জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে,
রিমির কাছে গিয়ে,রিমিকে জোড়ে চেপে ধরে বলে,

‘ কেন সাইন করতে গিয়েছিলে তুমি? বলো কেন?’

‘ আপনিই তো সাইন করতে বললেন…

রিমির কথাকে সম্পূর্ন করতে না দিয়ে, অয়ন দাঁত দাঁত চেপে বললো,

‘ ডোন্ট এক্সকিউজ মি রিমিপরী। আমি বললাম বলেই তুমি সাইন করে দিবে? এতো বাধ্য মেয়ে তো তুমি নই। আমার প্রতি কি তোমার কোন অধিকার নেই? এই পরী বলো না? ‘

রিমি নিষ্চুপ। অয়নও থেমে যায়। অতঃপর কিছু একটা ভেবে রিমির কপালের সাথে নিজের কপাল মিশিয়ে ধীর কন্ঠে বলে,

‘ আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কখনো ভাব্বে না রিমিপরী। তুমি হিনা তোমার সাইকো যে বড্ড অসহায়। বড্ড একা।একদম অসম্পূর্ন। ‘

চলবে কী?

নোটঃ প্লিয কেউ ছোট বলবেন না। আজকে আমি ভেক্সিন নিয়েছে। হাতের অবস্হা খারাপ। নাড়ানোও যাচ্ছে না তবুও আপনাদের জন্যে সারাদিন ধরে একটু একটু করে টাইপিং করলাম। সবাই কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here