#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ২৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
সময়ে পেরিয়ে যাচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে,তার সাথে তীব্রভাবে বেড়ে চলেছে রিমির ভিতরের অস্হিরতা। কাঁদতে চাইছে যুবতী। প্রখরভাবে কাউকে জড়িয়ে কাঁদতে পারলে হয়তো রিমির মনটা হাল্কা হলো। কল্পনার রেশ ধরতেই রিমির কল্পনায় সর্বপ্রথম অয়নের হাঁসিমাখা মুকশ্রীখানা ধরা দিলো। রিমির মন-মস্তিষ্কে যেন তীব্রভাবে চাইছে অয়ন নামক মানুষটি তাকে জড়িয়ে ধরুক। ভালোবাসা দিয়ে মাথা হাত রেখে প্রেমিকের ন্যায় বলুক,
‘ তুমি কি খুব ক্লান্ত রিমিপরী? এই দেখো আমি তোমার পাশে আছি। ‘
রিমির বুকের ব্যাথা তীব্রভাবে বেড়ে গেলো। সে চেয়েছিলো তার স্বামী তার প্রেমিকের ন্যায় তার পাশে থাকুক কিন্তু তা সম্পূর্ন উল্টো হলো তার সাথে।
রিমি ছটফট করে নেত্রপল্লব মেলে তাকিয়ে রইলো সামনেরর দিকে। পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে চেয়ারে বসলো। দৃষ্টি তার সামনে থাকা কেবিনের দিকে। ফারহান অতি যত্নের সাথে সুমাইয়ার মাথার কাছে বসে, সুমাইয়ার হাতখানা ধরে নিরবে চোখের জল ফেলছে। সুমাইয়া প্রতিক্রিয়া বিহীন তাকিয়ে আছে শুধু। রিমি মুগ্ধ নয়নে শুধুমাত্র চেয়ে রইলো। আজ তার মনে থাকা সমস্ত ঘৃণা নিমিষেই উবে গিয়েছে। রিমির চোখে হানা দিলো কয়েকবছর আগের অতীত। রিমি তার তিন মামাতো বোন এবং মামা ও মাকে নিয়ে বেশ সুখেই ছিলো। রিমির বড় মামাতো বোন সুমাইয়ার সাথে রিমির বেশ সখ্যতা ছিলো। বোনের থেমে দুজন বেস্টফ্রেন্ড ছিলো একপ্রকার। সুখ-দুঃখে সবসময় দুজন দুজনের সাথী ছিলো। সুমাইয়া রিমির থেকে বড় হওয়ায় রিমি সব আবদারের ঝুলি নিয়ে বসতো। দিনটি ছিলো বুধবার। রিমি তখন সবমাত্র কলেজে পা রেখেছিলো এবং তখন সুমাইয়া অনার্সের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্রী। তখন ছিলো বসন্ত। সুমাইয়ার মনে এসে হানা দেয় এক মুঠো প্রেম। সুমাইয়াদের ভার্সিটিতে অনুষ্টানে সেদিন ফারহান এবং তার বন্ধুরা বসন্ত উৎসবে এসেছিলো। তখনি ফারহান এবং সুমাইয়ার পরিচয় শুরু হয়। সেখান থেকে আস্তে আস্তে দুজনের মাঝে ঘনিষ্টতা শুরু হয়। ফারহান সুমাইয়ার জন্যে যা উপহার নিয়ে আসতো, তা রিমির মাধ্যমেই পাঠাতো। একদিন তো ফারহান রিমিকে বলেই ফেলেছিলো,
‘ শালিকা সাহেবা! আমার এতো উপকার করছো তুমি। এই উপকারের শোধ কীভাবে দিবো গো?’
রিমি হাঁসতে হাঁসতে বলেছিলো,
‘ শুধু দেখবেন আমি এবং আমার আপু যেন একসাথে সারাজীবন কাটাতে পারি।’
রিমির কথার প্রতিত্তরে ফারহানও হেসে বলেছিলো,
‘দেখবে তোমাকে একদিন আমার ভাইয়ের সাথে বিয়ে করিয়ে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসবো।
তখন দুবোন একসাথে থাকতে পারবে,কিন্তু আমার ভাই আবার একটু পাগলেটে স্বভাবের। তখন তাকে সামলাতে পারবে তো? ‘
রিমির তখন কিছু বলেনি শুধু লজ্জায় মাথা নত করে ছিলো। রাতে সুমাইয়ার পাশে শুয়ে বলেছিলো,
‘ আচ্ছা আপু! তোমাকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকবো বলো তো? ফারহান ভাইয়া নাকি কয়েকদিনের মধ্যেই ফ্যামেলি নিয়ে তোমার জন্যে বিয়ের কথা পাঁকা কথা করতে আসবে। তারপর তোমার বিয়ে হয়ে যাবে। আমি তখন তোমাকে ছাড়া কীভাবে থাকবো?’
সুমাইয়া পরম ভালোবাসা নিয়ে রিমিকে জড়িয়ে ধরে তখন বলেছিলো,
‘ পাগল বোন আমার। আমি আমার জান্নাতকে ছাড়া কোথাও যাবো না। ‘
রিমিও তার বোনের কথা শুনে, তাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। জান্নাত নামে সুমাইয়া সবসময় রিমিকে ডাকতো বিধায় ফারহান ও রিমিকে জান্নাত নামেই ডাকতো। দিন পাল্টালো। ধরনীতে সময় তার নিজ গতি অনুসরন করে পেরিয়ে গেলো স্রোতের ন্যায়।
কয়েকদিন পর সুমাইয়াকে ফারহান ফোন করে জানালো ফারহানের বিয়ে রুহানা চৌধুরী তার বিসনেজ পার্টনারের মেয়ের সাথে ঠিক করেছেন।কথাটি শুনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলো সুমাইয়া, কিন্তু ফারহান তাকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলো ফারহান সুমাইয়াকেই বিয়ে করবে। তাই সেদিন রাতেই সুমাইয়াকে নিয়ে ফারহান পালিয়ে যায়। তাতে সম্পূর্ন সাহায্য করেছিলো রিমি। পালিয়েই বিয়ে করে ফারহান সুমাইয়াকে নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে ঢুকেছিলো। তখনি মান-সম্মানের ভয়ে চুপ থাকেন রুহানা চৌধুরী। মেনে নিতে একপ্রকার বাধ্য হয়, কিন্তু
সিলেটে এইভাবে পালিয়ে যাওয়ায় সুমাইয়ার বাবা অর্থাৎ রিমির মামুর বেশ অসম্মান হয়। তখন তিনি সবমাত্র চেয়ারম্যানের পদটি পেয়েছিলেন। রাগে
ক্ষোভে ফেটে পড়ে রিমির মামু একপ্রকার সুমাইয়ার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছন্ন করে দেয় কিন্তু রিমি ঠিকই যোগাযোগ রাখতো সুমাইয়ার সাথে আড়ালে। সুমাইয়া কাঁদতো কিন্তু রিমি তাকে সবসময় আশ্বাস দিতো সব ঠিক হয়ে যাবে। রিমি যতটুকু জানতো
ফারহান এবং সুমাইয়া বেশ সুখেই আছে। কিন্তু হঠাৎই একদিন রিমির ফোনে সুমাইয়ার ফোন থেকে মেসেজ আসলো,
‘ রিমি! আমি হয়তো বাঁচবো না রে। আমাকে বোধহয় মেরেই ফেলবে। ফারহানের আচরনও আগের থেকে অনেক পাল্টে গিয়েছে। ‘
রিমি সেই মেসেজ তখন অবাকের শীর্ষে চলে গিয়েছিলো। অস্হির হয়ে সুমাইয়াকে অনেক ফোন করেছিলো কিন্তু সুমাইয়া তখন ফোনটি ধরেনি। তারপর সকালেই খবর আসে সুমাইয়া নাকি গাড়ির
দূর্ঘটনায় মৃত্যু বরন করে। রিমি তখন পাথর হয়ে গিয়েছিলো একপ্রকার। সুমাইয়ার মৃত্যু সে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা। সুমাইয়ার মেসেজটি দেখে এইটুকু ধারণা করে নিয়েছিলো সুমাইয়াকে কেউ ইচ্ছে করে মেরে ফেলেছিলো। তা স্বয়ং ফারহান নিজেই। তাই রিমি তখন নিজ ইচ্ছেয় অয়নকে বিয়ে করেছিলো শুধুমাত্র ফারহানের বিরুদ্ধে প্রমান খুঁজে পেতে, কিন্তু আজ সুমাইয়াকে জীবিত দেখতে পেয়ে, রিমির মনে থাকা ফারহানকে নিয়ে ঘিড়ে থাকা সমস্ত রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা নিমিষেই চলে গেলো। রিমির মনে একটা প্রশ্নেই বারবার নাড়া দিচ্ছে, ‘ সুমাইয়া জীবিত থামা সত্ত্বেও, কেন তা লুকিয়ে রেখেছে এতোদিন ফারহান? ‘
রিমির ভাবনার মাঝেই কয়েকজন মাস্ক পরিহিত লোক এসে রিমিকে ঘিড়ে ধরে। রিমি বুঝতে পারছে না লোকগুলো হঠাৎ তার দিকে এইভাবে এগিয়ে আসছে কেন? লোকগুলো রিমির কাছে রিমির কপাল বরাবর বন্দুক ঠেকিয়ে হুমকির সুরে বলে,
‘ একদম নড়বে না। আমাদের সাথে চলো। ‘
লোকগুলোর কথায় রিমি ভরকে যায়। গলায় টু শব্দও বের হচ্ছেনা যেন। রিমি মিনমিন সুরে বলে,
‘ যাবো মানে? কোথায় যাবো আমি? ‘
লোকগুলো কিছু বলার আগেই,বাইরে গুলাগুলির শব্দ শুনা যায়। গুলাগুলির শব্দে লোকগুলো দৌড়ে বাইরের দিকে পালিয়ে যায়। রিমিও তাদের পিছনে বাইরে এসে দেখেই, দেখতে পায় লোকগুলো বাইরে বেড়োতে গিয়ে বেড়োতে পারেনা। তার আগেই গুলিগুলো এসে সোজা তাদের পায়ে লাগে।তার মুহুর্তেই ব্যাথায় কুকুড়ে উঠে নীচে পড়ে যায়। গগন বেদনা চিৎকার করতে থাকে। হসপিটালের লোকগুলো এমন আক্রমনে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে। রিমি পিছনে তাকিয়ে দেখে, অয়ন এবং তার গার্ডসরা দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন তার হাতে থাকা বন্দুকটা ফেলে দিয়ে, রিমির দিকে এগিয়ে যায়। রিমি কাঁদতে কাঁদতে অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একপ্রকার ভয়ে। লোকগুলো রিমির মাথায় যখন বন্দুক তাক করে ছিলো, তখন রিমি ভয়ে আড়ষ্ট ছিলো একপ্রকার। অয়নও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার রিমিপরীকে। যেন বুকের ভিতরের পিঞ্জিরায়ে বন্দী করে রাখতে পারলে, শান্ত হতো খানিক্টা। রিমি অয়নের শার্ট মুঠো করে, অভিযোগের সুরে বলে,
‘ কোথায় ছিলেন আপনি? জানেন কতটা ভয় পেয়েছিলাম আমি। ‘
অয়ন রিমিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে, রিমির নেত্রপল্লবে জমা থাকা জলটুকু মুছে, শীতল গলায় বলে,
‘ তোমার ডক্টর এয়ারসি থাকতে,তোমার কোন ক্ষতি হতে দিবেনা রিমিপরী। তুমিতো আমার অস্তিত্বে মিশে রয়েছো। আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে তোমার বসবাস।তোমার কোন ক্ষতি আমি কাউকে করতে দিবো না। ‘
কথাটি বলেই রোষপূর্ন দৃষ্টিতে অয়ন সামনের লোকগুলোর দিকে তাকালো। গর্জে উঠে একপ্রকার তা সেক্রিটারি সাদেককে ডেকে বলে,
‘ সাদেক ওদের এখুনি আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যাও। ‘
সাদেক মাথা দুলিয়ে গার্ডসদের ইশারা করে লোকগুলোকে নিয়ে যেতে। অয়ন রিমিকে গাড়িতে বসিয়ে,সাদেকের কাছে এসে বলে,
‘ পায়েল পালিয়েছে। ওদের মেরে যে করেই হোক
পায়েলের খবর বের করো। আমি জানি ওদের পায়েলই পাঠিয়েছে। রিমিপরীর ক্ষতি করার জন্যে।’
সাদেক মাথা দুলিয়ে স্হান ত্যাগ করে।
_____________
অন্যদিকে,
আমান টের পায় কেউ তাকে হিচড়ে বাইরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমান খেয়াল করে দেখে একজন মেয়ে…….
চলবে…কী?
[আরেকটু লেখার ইচ্ছে কিন্তু আজ আমি অনেকটা ব্যস্ত। আশা করি রিমি এবং ফারহানের রহস্য একটু হলেও ক্লিয়ার হইছে। বাকিটুকুও আস্তে আস্তে জেনে যাবেন।]