তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব- ২৮

0
380

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ২৮
#Jannatul_ferdosi_rimi( লেখিকা)
মেয়েটার মুখশ্রীখানা দেখে এক পলকের জন্যে হতভম্ব হয়ে গেলো আমান। মেয়েটার হাসি কেমন একটা আমানের প্রাক্তন প্রেমিকার কথা স্বরং করিয়ে দেয়। আমান কষ্ট করে তার নেত্রপল্লব মেলে তাকিয়ে রইলো তার সামনে থাকা রমনীর দিকে। রমনীর গাঁয়ে
স্কুল ড্রেস। মুখে কি সুন্দর অমায়িক হাঁসি। যুবক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো যুবতীর পানে। হাঁসিখানা একদম আমানের রিমিপাখির মতো উজ্জ্বল,সুন্দর। আমান শুকিয়ে যাওয়া কন্ঠে রমনীকে প্রশ্ন করে বসলো,

‘ কে আপনি? আমিই বা কোথায়? ‘

রমনী সঙ্গে সঙ্গে আমানের মুখ চেপে ধরে, ফিসফিস সুরে বলে,

‘ আমি মেঘলা চৌধুরী। অয়ন চৌধুরীর ছোট বোন।’

‘অয়নের ছোট বোন’ কথাটি শুনে আমান একপ্রকার উত্তেজিত হয়ে বলে,

‘ আপনি! আপনি কেন এসেছেন? ‘

মেঘ আমানের মুখ চেপে ধরেই, দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘ আপনি থামবেন? এতো প্রশ্ন করছেন কেন? একটু চুপ থাকুন তো। গার্ডসরা আমাদের খুঁজছে। খুঁজে পেলে আপনি তো মরবেনই। তার সাথে আমিও মরবো। ‘

আমান আর কিছু বলতে পারলো না। দেয়ালে হেলান দিয়ে আখিজোড়া বন্ধ করে ফেললো। অতঃপর মেঘের গায়ে একপ্রকার হেলে পড়লো।

________________

অয়ন রিমির হাত ধরে, রিমিকে তার বুকের সাথে মিশিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। রিমি ভিতু চোখে শুধু চেয়ে আছে অয়নের পানে। অয়নের ভিতরে ভিতরে রাগে একপ্রকার দগ্ধ হচ্ছে। যা রিমির বুঝতে বাকি থাকেনা। রিমি কিছু একটা ভেবে বলে,

‘ আপনি কি রেগে আছেন? ‘

অয়ন উত্তর দেয় না বরং চোয়াল শক্ত করে সামনের দিকে তাকিয়ে আপনমনে ড্রাইভ করতে থাকে। রিমি সুদীর্ঘ শ্বাস ফেলে। রিমির বুঝতে বাকি থাকেনা অয়নকে দ্বিতীয়বারের মতো ফাঁকি দিয়ে, হসপিটালে চলে যাওয়ায় অয়ন বেশ রেগে আছে। রিমি অয়নের বলিষ্ট হাতখানা ঝাকিয়ে বলতে থাকে,

‘ কি হলো শুনছেন আপনি? কথা বলছেন কেন? আপনি কি আবারোও রেগে আছেন? ‘

অয়ন জোরে গাড়ি ব্রেক কষে, রিমি ঝুঁকতে নিলে অয়ন রিমিকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। অতঃপর নিজের থেকে রিমিকে ছাড়িয়ে, গাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আপনমনে সিগারেট ধরিয়ে নেয়। অতঃপর সিগারেটের ধোঁয়ায় তার ভিতরে থাকা কষ্ট এবং রাগগুলোকে উড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টায় থাকে। রিমি নিজেও গাড়ি থেকে বেড়িয়ে হন্তদন্ত হয়ে অয়নের কাছে ছুটে গিয়ে, একপ্রকার অস্হিরতার সুরে বলে,

‘ ডক্টর এয়ারসি! আপনি স্মোক করছেন? আপনি একজন ডক্টর জানেন না? স্মোক কতটা ক্ষতিকর শরীরের জন্যে। ‘

অয়ন তার হাতে থাকা সিগারেট টা ফেলে দিয়ে, তা পা দিয়ে পিষে রিমির বাহু চেপে ধরে, রোষপূর্ন গলায় বলে,

‘ আমার শরীর নিয়ে তোমাকে এতোটা কনর্সান দেখাতে হবে না। বুঝলে তুমি? একদম আমার বিষয়ে নাক গলাবে না তুমি। ‘

অয়নের ধমাকে কেঁপে উঠে রিমি। নেত্রকোনায় জল এসে আখিজোড়া ছলছলে হয়ে উঠে। রিমি মুখ ঘুড়িয়ে নেয়। অয়ন পুনরায় আরেকটি সিগারেট ধরিয়ে তাতে টান দিয়ে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অতঃপর ধীর কন্ঠে বলে,

‘ একটা কথা কি জানো তো রিমিপরী? যার কাছে অভিমানের কোন মূল্য নেই। তার প্রতি মনের কুঠিরে অভিমান জমিয়ে রাখা বৃথা।’

অয়নের কথায় রিমি অবাক পানে অয়নের দিকে তাকায়। রিমির বুঝতে বাকি থাকে অয়ন তাকেই কথাগুলো উদ্দেশ্য করে বলেছে। অয়ন মুখ ফিরিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়িয়ে এগোতে থাকে। রিমিও হাত মুঠো করে নিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়। অয়ন নামক যুবককে সে যেন বুঝতেই পারেনা। কখন কি বলতে চাচ্ছে তা রিমির ধারণার বাইরে, কিন্তু এইটুকু বুঝতে পারছে মানুষটার গভীর অভিমান জমেছে তার রিমিপরীর প্রতি। রিমির কেন যেন বড্ড কষ্ট হচ্ছে। রিমি চাইছে যেন তার প্রতি অয়নের ভিতরের অভিমানগুলো মুহুর্তেই উড়ে ছাই হয়ে যাক।

_________

মেঘের বুঝতে পারলো আমান অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত মার খাওয়ার ফলে আমান বেশ দূর্বল হয়ে পড়েছে। তার জায়গায় জায়গা রক্ত জমাট বেধে গুরুতরভাবে ক্ষত হয়েছে।মেঘের মনে পড়ে যায় সকালের ঘটনাটি। সকালে যখন মেঘ তার রুমে স্কুলের যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছিলো, তখনি সে শুনতে পায় পাশের রুমে অয়ন কাউকে গম্ভীর কন্ঠে বলছিলো,

‘সবগুলোকে আমি মেরে ফেলবো জাস্ট। তোদের জন্যে পায়েল পালিয়ে গিয়েছে। এখন আমানকে নজরে রাখ যেন পালিয়ে যেতে না পারে। ও আমার রিমিপরীর দিকে হাত বাড়িয়েছিলো ওকে না মেরে আমি শান্ত হবো না। ‘

অয়নের গম্ভীর কন্ঠে বলা প্রতিটা শুনে মেঘের হৃদয়টা কেঁপে উঠছিলো। আমান নামক অপরিচিত যুবকটির জন্যে মেঘের মনের কুঠিরে এক অদ্ভুদ ভয় এসে হানা দিয়েছিলো। মেঘের মন-মস্তিষ্ক যেন বার বার বলছিলো,

‘ যে করেই হোক একটা মানুষকে খুন হতে দেওয়া যাবে না। ‘

মনের কথা সায় দিয়ে, মেঘ সিদ্বান্ত নেয় সে যে করেই হোক আমানকে বাঁচাবে।
এমন নির্দোশ মানুষের প্রান অকালে তার ভাইয়ের পাগলামো ভালোবাসার জন্যে ঝড়ে পড়বে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না মেঘ। সে অনুযায়ী মেঘ স্কুল থেকে একপ্রকার পালিয়ে, তার ড্রাইভারের সাহায্যে অয়নের ডেরায় পৌঁছে গিয়েছিলো। অয়নের ডেরার ঠিকানা সে ড্রাইভারের থেকেই জানতে পেরেছিলো। মেঘ সেখানে গিয়ে, গার্ডদের ফাঁকি দিয়ে, আমানকে পিছনের দরজা দিকে একপ্রকার টেনে হিচড়ে নিয়ে আসে। অয়নের দেহরক্ষীগুলো এখনো আমানকে খুঁজে চলেছে, তারা চলে যেতেই মেঘ তাএ ড্রাইভারকে ইশারা করে নিজের কাছে ডাকে আনে। ড্রাইভার ও মেঘের কাছে চলে আসে। মেঘ ফিসফিস করে বলে,

‘ ড্রাইভার কাকু! জলদি উনাকে ধরে গাড়িতে তুলুন। উনার অবস্হা ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ‘

‘ কিন্তু মা অয়ন বাবা জানলে কিন্তু…’

ড্রাইভারের কথায় বিঘ্ন ঘটিয়ে, মেঘ কিছুটা কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,

‘ একটা মানুষের জীবন-মরনের বিষয় সেখানে আপনি অয়ন ভাইয়া কি বলবে তা নিয়ে পড়ে আছেন? অয়ন ভাইয়াকে যা বলার আমি বলবো। আপাতত আপনি উনাকে দ্রুত গাড়িতে তুলুন। ‘

মেঘের আদেশ শুনে, ড্রাইভার তড়িঘড়ি করে আমানকে উঠিয়ে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকে। মেঘ ও তাদের পিছনে পিছনে যায়। মেঘের আপাতত অয়নের বিষয়টি মাথাতেও নেই। তার সমস্ত চিন্তা আপাতত আমান নামক যুবকটিকে ঘিড়ে।

_____________

অয়ন গাড়িটি চৌধুরী বাড়ির সামনে পার্ক করে। রিমি তার সিল্টবেল্টটা খুলে, বেড়িয়ে পড়ে। অয়ন বেড়োতে নিলে, তার ফোনের মেসেজের টংটা বেজে উঠে। অয়ন থেমে যায়। ফোনের মেসেজ দেখে বাঁকা হাসে। তারপর তা সযত্নে ফোনের পকেটে ঢুকিয়ে রেখে, রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ আমার আসতে দেরী হতে পারে। তুমি সাবধানে থেকো। আমি তোমাকে ক্ষনে ক্ষনে ফোন করবো। গার্ডসরা তো রইলো। ‘

অয়ন কথাটি বলেই গাড়ি ঘুড়িয়ে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রিমি থেমে যায়। অয়নের যাওয়ার পানে কিছুক্ষন চেয়ে থাকে উহু একজন স্ত্রী হয়ে নয়,তার দৃষ্টি ছিলো একজন প্রেমিকার ন্যায়। যে তার প্রেমিক পুরুষের যাওয়ার পানে নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

____________

রিমি সদরদরজার কাছে যেতে নিলেই, তার চোখ যায় ফারহানের গাড়ির দিকে। ফারহান হয়তো সবেমাত্র হসপিটাল থেকে ফিরেছে। রিমি ফারহানের কাছে গিয়ে বলে,

‘ ফারহান ভাইয়া। ‘

রিমির ডাকে ফারহান রিমির দিকে তাকায়। অতঃপর শান্ত গলায় বলে,

‘ ওহ তুমি! আমি জানি আজকে তুমি জেনে গিয়েছো, সুমাইয়া বেঁচে আছে।

‘ কি হয়েছে সুমাইয়া আপুর? কিসের জন্যে আপনি সুমাইয়া আপুর অপারেশন ব্যাবস্হা করিয়েছিলেন?’

রিমির প্রশ্নে ফারহান নীচের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ গাড়ি এক্সিডেন্ট করে সুমাইয়া কোমায় চলে গিয়েছে। আসলে ডক্টর বলেছিলো অপারেশন করলে নাকি সুমাইয়া পুনরায় সুস্হ হয়ে উঠতে পারে। আজকেই সেই অপারেশন হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আজ হসপিটালে ঝামেলা হওয়ায় তার ব্যাঘাট ঘটে।’

রিমি পাল্টা প্রশ্ন করে বলে,

‘ সুৃমাইয়া আপু যে জীবিত রয়েছে সে বিষয়টি সবার থেকে কেন লুকিয়েছিলেন? ‘

চলবে…..কী?

আসসালামু আলাইকুম 🖤
[যারা ভেবেছিলেন মেয়েটি পায়েল তাদের জন্যে এক বালতি সনবেদনা🤭সমস্যা নেই.. 🐸কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু🖤]

হ্যাপি রিডিং 🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here