#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ১৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
বিয়ের পরে প্রাক্তন প্রেমিককে এক মুহুর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে যায় রিমি। তার সামনেই শশরীরে দাঁড়িয়ে আছে আমান শিকদার যে এখন রিমির প্রাক্তন শুধুমাত্র। রিমি বিস্মিত হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আমানকে যে বিয়ের এতোদিন পরে সে দেখতে পাবে সে তা কখনোই কল্পনা করেনি। আজ অয়নের কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন ছিলো তাই অয়ন আজ একটু তাড়াতাড়িই হসপিটালে চলে গিয়েছিলো। তাই আজ রিমিকে একাই হসপিটালে আসতে হয়েছে,যদিও অয়ন মহিলা গার্ডসগুলোকে রিমির পিছনেই থাকতে বলেছিলো কিন্তু রিমির এইভাবে গার্ডস নিয়ে যেতে মোটেও ভালো লাগছিলো না৷ তাই রিমি বুদ্ধি খাটিয়ে মহিলা গার্ডসগুলোকে বলে পাঠায় যেন রিমির জন্যে পানি কিনে নিয়ে আসে। রিমির আদেশে মহিলা গার্ডসগুলো রিমিকে ছেড়েই পানির দোকানের দিকে যায়। মহিলা গার্ডসগুলোকে যেতে দেখে রিমি সামনের দিকে এগোতেই একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে রিমির পাশে ঘেষে দাঁড়ায়। এতে রিমি চমকে যায় বেশ খানিক্টা,কিন্তু রিমিকে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে দিয়ে গাড়ি থেকে আমান বের হয়। রিমিকে দেখেই আমান স্মিত হাঁসে। আমান রিমির দিকে এগোতে নিলে, রিমির ঘোর ভাঙ্গে। না সে কোন স্বপ্ন দেখছে না আমান সত্যিই তার সামনে রয়েছে। রিমি পিছিয়ে নেয় নিজেকে। রিমিকে পিছাতে দেখে আমান থেমে যায়। থমথমে গলায় রিমির পানে তাকিয়ে বলে,
‘ তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছো কেন রিমিপাখি? এই দেখো আমি তোমার আমান। ‘
রিমি আমানের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে আমানকে থামতে বলে। আমান ও এগোয় না শুধু আশাহত হয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে থাকে। রিমি আমানের দিকে তাকায় না। নিচু হয়ে ভেজা গলায় বলে,
‘ এতোদিন পরে তুমি কেন আমার সামনে এলে আমান? কেন এলে? তুমি একদম আমার কাছে আসবে না। আমি তোমার মুখ দেখতে চাইনা। ‘
আমান এইবার নিজেকে থামিয়ে রাখতে পারেনা। বরং দ্রুত পা এগিয়ে রিমির সামনে দাঁড়িয়ে রিমির হাত ধরে শক্ত গলায় বলে,
‘ রিমিপাখি আমার কথাটুকু শুনো দয়া করে। ‘
রিমি এক ঝটকায় নিজের থেকে আমানের হাত ছাড়িয়ে নিলো। নেত্রকোণায় পানি কেমন চকচক করছে রিমির। রিমি অশ্রুগুলোকে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে দ্রুত সময়ে নিয়ন্ত্রন করে ফেলে। তেজি গলায় বলে উঠে,
‘ ছুবেন না আপনি আমায়। আমি এখন অন্যের স্ত্রী।
আপনি আমার কাছে পরপরুষ মাত্র। আমাকে ছোয়ার কোন অধিকার নেই আপনার। ‘
ভালোবাসার মানুষটির জন্যে অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইলো আমান। তার ভালোবাসার মানুষটি এতোটা পাথর কেন? এতোটা অবুঝ কেন? দুই একটা কথা শুনলে কী খুব ক্ষতি হয়ে যেতো তার? আমানের বুক ভারি হয়ে আসলো। কান্নাগুলো গলায় দলা পাকাতে শুরু হলো। ললাটে ঘাম এসে জমাট বাঁধতে শুরু হলো।
রিমি আমানের দিকে তাকালো না এক পলক ও। পিছনে ঘুড়ে হাটা শুরু করলো কিন্তু আমানের একটি বাক্য শুনে সে থেমে যায়। আমান খুবই শান্ত গলায় বলে,
‘ রিমিপাখি সেই অস্ট্রেলিয়া থেকে শুধু আমি তোমার জন্যে ফিরে এসেছি। আমার একটা কথা শুনো তুমি।’
রিমি পিছনে ঘুড়লো না। কান্নামিশ্রিত গলায় বলে উঠে,
‘ আপনি বড্ড দেরী করে ফেলেছেন আমান শিকদার। সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জানেন তো মিঃ আমান শিকদার? আপনাকে আমি যখন আমার পাশে সবথেকে বেশি চেয়েছিলাম তখন আপনি আমার পাশে থাকেননি বরং মাঝপথে আমার হাতখানা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এখন সেই হাত আপনি চাইলেও ধরতে পারবেন না। কেননা সেই সময় যে পেরিয়ে গিয়েছে। ‘
ভালোবাসার মানুষটির গভীর অভিমানে বলা প্রতিটি বাক্য আমানের বুকে ছুড়ির মতো আঘাত করে। আমান চাইলেও পারছে না চিৎকার করে কাঁদতে। শুধু চেয়ে থাকে রিমির পানে। রিমি পিছনে তাকায় না। সামনের দিকে হাটতে থাকে। পিছনে ঘুড়লে হয়তো দেখতে পারতো একজোড়া লাল আখিজোড়া
অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে তারই জন্যে। রিমি হসপিটালে যায় না। গার্ডদের নিয়ে বাড়িতেই ফিরে আসে। বাড়িতে এসে রিমি নিজের কোণার ঘরের রুমটায় চলে আসে। ব্যাগটা রেখেই মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে পরে বিছানায়। চোখ দিয়ে অনাবরত অশ্রু ঝড়ছে তার। আমানকে দেখে একপ্রকার অনুভুতিশূন্য হয়ে পড়েছিলো সে। সে তো ভেবেছিলো আমানকে দেখতে পেলে আমানকে ঘিরে সমস্ত অভিযোগের ঝুড়ি নিয়ে বসবে সে। আজ কোথায় যেন অভিযোগ শূন্যের কোঠায় চলে গেলো। আমানকে দেখে রিমির কেমন যেন গলা থেকে শব্দগুলো বের হতে চাইলো না। রিমি সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আনমনে বললো,
‘ আপনাকে অভিযোগগুলো বলা হলো না আমান। এই অভিযোগগুলো আমার বুকে পুষে রাখবো আমি। অভিযোগগুলো বুকে পুষে রাখতে রাখতে আমি ঠিক অনুভুতিশূন্য পাথরে পরিনত হয়ে যাবো। ‘
কথাটি বলেই রিমি চোখ বুঝলো। গালে কোন পুরুষের হাতের স্পর্শে চটচলদি নিজের আখিজোড়া খুলে হন্তদন্ত হয়ে রিমি শুয়া থেকে উঠে বসে দেখে অয়ন তার দিকে কেমনভাবে তাকিয়ে আছে। গায়ে সাদা শার্ট। যা ঘেমে একেবারে গাঁয়ের সাথে লেপ্টে রয়েছে। অয়নের ফর্সা মুখমণ্ডলও ঘেমে একাকার হয়ে রয়েছে। অয়নের লাল টকটকে নেত্রকোণা বার বার জানান দিচ্ছে আজ অয়ন বেশ ক্লান্ত। অনেক ক্লান্ত। অয়নের চুলগুলো কপালে লেপ্টে রয়েছে। রিমির বড্ড ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করলো চুলগুলো। রিমি তাই করলো। হাত বাড়িয়ে অয়নের ঘন চুলগুলো
নাড়িয়ে দিতে লাগলো। অয়ন আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো আখিজোড়া। চোখ বন্ধ করেই রিমির হাতে নিজের বুকে রাখে। অতঃপর ক্লান্তসুরেই বলে,
‘ রিমিপরী অনুভব করতে পারছো তুমি? আমার বক্ষে আজ বড্ড ব্যাথা। সেই ব্যাথা শুধু তোমাকেই ঘিড়ে। ‘
অয়নের কথা বুঝলো না রিমি। রিমিকে আরেকদফা অবাক করে দিয়ে হঠাৎ করে অয়ন রিমির হাত ধরে ওয়াশরুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। অতঃপর সাবান দিয়ে রিমির হাত বার বার ঘষতে শুরু করলো। রিমি বুঝতে পারছে না অয়ন হঠাৎ তার হাত ধুচ্ছে কেন? অয়ন এমনভাবে রিমির হাত সাবান দিয়ে ঘষছে যার ফলে রিমির হাত লাল হয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে। একটু হলেই চামড়া ছিলে যাবে। রিমি ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে বলে,
‘ আমার ব্যাথা করছে ডক্টর এয়ারসি। আমার সত্যি ব্যাথা করছে। ‘
কথাটি বলতে বলতে চোখজোড়া টলমলে হয়ে উঠলো রিমির। অয়ন সাবান টা ছুড়ে দিয়ে রিমির হাত ধরে অস্হির হয়ে বলে উঠে,
‘ রিমিপরী তুমি ব্যাথা পেয়েছো? খুব ব্যাথা পেয়েছো। ইসস আমারই ভুল। রাগের মাথায় কিছুই ঠিক থাকে না আমার। ‘
কথাটি বলে বলে দেয়ালে হাত দিয়ে জোড়ে ঘুষি মারতে লাগলো অয়ন। রিমি বুঝতে পারছে না অয়নের হঠাৎ এমন আচরণের কারণ। অয়ন রিমিকে নিয়ে পুনরায় ঘরে ঢুকে সারাঘর খুজে ওষুধের বক্স খুজে, তা থেকে মলম নিয়ে রিমির হাতে সযত্নে লাগিয়ে দেয়। অতঃপর রিমির হাতে নিজের ঠোটজোড়া দিয়ে গভীর স্পর্শ দিতে থাকে। রিমি কেঁপে উঠে। অয়ন রিমির হাতে হাত বুলিয়ে ব্যাথাতুর কন্ঠে বলে,
‘ আমি সত্যি সরি পরী। আসলে আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো। ওই ডাফার আমান তোমাকে হাতকে ছুয়েছে ভাবতেই মাথা গরম হয়ে উঠছে আমার। ‘
অয়নের কথা শুনে রিমি বিস্মিত হয়ে অয়নের দিকে তাকাতেই, অয়ন বলে উঠে,
‘ তুমি কী ভেবেছো রিমিপরী আমি কিছুই জানতে পারবো না? আমার চোখ সবসময় তোমার উপর আছে। তোমার প্রাক্তন প্রেমিকের খোঁজ চলছে। পেয়ে যাওয়ার পর তার ঠিক কি অবস্হা হবে তা আমি আপাতত বলতে পারছি না রিমিপরী। ‘
অয়ন খুব সাধারণভাবে কথাটি বললেও অয়নের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আছে। লাল নেত্রকোণা বার বার জানান দিচ্ছে অয়ন কতটা ভয়ংকরভাবে রেগে আছে। অয়ন কিছু বলেনা কাউকে ফোন করতে করতে বেড়িয়ে যায়।
_____________
রিমি নিজের ঘরে বসে ছিলো তখনি তার ফোনে ফোনে আসে। ফোনটা রিসিভ করে রিমি এমন কিছু শুনে, যা শুনে…..
চলবে কী?
[ কেউ ছোট বলবেন না প্লিয। অনেক কষ্টে লিখিছি 🙂]