বসন্তের_ফুল🌺 #তারিন_জান্নাত #পার্ট২৫

0
446

🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট২৫

অভ্রকে অনবরত ডেকেই যাচ্ছে প্রেমা।কিন্তু অভ্র প্রেমার ডাক উপেক্ষা করে চলেছে।একসময় অভ্র রুমের কাছে আসতেই পেঁছন ফিরে তাঁকায়,এবং
দেখে প্রেমা আসছে,
“কি হয়েছে? এতো ডাকছি শুনছিলেনা কেন?(প্রেমা)
” টয়লেটে যাবো তাই,(অভ্র)
“টয়লেটে?(প্রেমা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে)
” হ্যাঁ,তুমি কি মনে করেছিলে?
কোথায় যাচ্ছিলাম(অভ্র)
বেলুনের হাওয়া বেরিয়ে গেলে যেমন চুপসে যায়,অভ্রের কথায় প্রেমাও বেলুনের মতো চুপসে যায়।
“(ইসস কী বোকা আমি, ভেবেছি অভ্র রাগ করেছে)
প্রেমা মনেমনে কথাটা বলে,কোনো মতো একটা হাসি দেয়,এবং বলে,
” ঠিক আছে যাও,এমনি ডেকেছিলাম।(প্রেমা)
কথাটা বলে এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে চলে যায়।
অভ্র রুমে ঢুকে দরজা লক করে ধম ফাটানো একটা হাসি দেয়।হাসতে হাসতে অভ্রের পেট ব্যাথা হওয়ার উপক্রম। ইচ্ছে করেই সে প্রেমাকে কথাটা বলেছে।সবচেয়ে বড় কথা প্রেমার মুখটা দেখার মতো ছিলো।

বিকেলের দিকে আরিয়ানের মা এবং বাবা চলে যায়।শুধু অভ্রের মা এবং দাদু,আর প্রেমারা ছিলো।তখনের ঘটনার ওর প্রেমা লজ্জায় আর অভ্রের সামনে যায়নি।অভ্রও আর রুম থেকে বের হয়নি।

অন্ধকারের মধ্যে বিছানার পাশে কোণায় এলোমেলো হয়ে বসে আছে অভ্র।চোখজোড়া রক্তিমবর্ণ ধারন করে আছে এ মুহুর্তে । ফোঁসফোঁস করে শব্দ করে যাচ্ছে ক্রমাগতভাবে। বুকের ভেতর যেনো কেউ গরম লাভা ঢেলে দিয়েছে।শরীরে বিষণ জ্বলা করছে ক্রোধের কারণে।হাতের চুরিটা নিয়ে চুরির মাথায় আঙুল রাখে।চোখ বন্ধ করতেই কিছু একটা মনে আসে,সাথে সাথে কপালের রগ ফুলে উঠে,অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে,

“ঘৃণা করি আমি তোমাদের,প্রচুর ঘৃণা করি,আমার জীবণে তোমাদের কোনো অস্তিত্ব নেই,আমার জন্য আমিই আছি,আর আমার ভাইটার জন্যেও আমি,

কথাগুলো একধমে বলে বড় করে একটা শ্বাস ফেলে অভ্র।অাজকের এই সময়টাতে অভ্র একা থাকে,কেউ ওর কাছে থাকতো না,বলতে গেলে ওকে ভয় পায় সবাই। তাই দূরে থাকে,বা থাকতো।

চুরিটা রেখে দেয় অভ্র।ফোনটা হাতে নেয় সময়টা দেখার জন্য।সাড়ে এগারোটা বাজে।ক্ষিধেয় পেট মুছড়াতে শুরু করেছে তার।কিন্তু খাওয়ার কিঞ্চিৎ পরিমান ইচ্ছেও নেই।

নিজের অবস্থায় নিজেই অসহায় অভ্র।কিভাবে রাগ কমাবে তার কোনো উপায়ও আজ অবধি পায়নি সে।

দরজার কটকটানি শব্দে অভ্র বিরক্তপ্রায়।খুলার নূন্যতম ইচ্ছে নেই,পাঁচ মিনিট দরজার ধাক্কানোর পর প্রেমা চেঁচিয়ে উঠে,
” এই অভ্র দরজার খুলবে নাকি আমি লাথি মেরে ভাঙবো।(প্রেমা)

আকস্মিক ভাবে প্রেমার গলার স্বর অভ্রের কানে আসতেই লাফিয়ে উঠে। এতোরাতে প্রেমার আগমনে সে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।দ্রুতগতিতে উঠে রুমের লাইট জ্বালায়,চুরিটা লুকিয়ে ফেলে,পরনের শার্ট-প্যান্ট পাল্টে,একটা শর্ট ট্রাউজার,আর এ্যাশ কালারের একটা টি-শার্ট পড়ে নেয়।ঝাপটে চোখমুখ ধুয়ে ফেলে।

দরজার কাছে গিয়ে কাঁপা হাতে দরজা খুলতেই একটা ধাক্কা খায় অভ্র।ধাক্কাটা প্রেমা দিয়েছে।
“এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে?(প্রেমা রেগে বলে)
” নিরুত্তর (প্রেমার দিকেই চেয়ে আছে,)
প্রেমা দরজাটা হালকা চেপে হাতের খাবারের থালাটা বিছানায় রাখে। এরপর অভ্রের দিকে ফিরে আপাদমস্তক একবার দেখে নেয়। অভ্র তখনো শীতল দৃষ্টিতে প্রেমাকে দেখতে ব্যাস্ত প্রায়।

“বসে খেয়ে নাও আমি যাচ্ছি।(শান্তগলায় বলে প্রেমা)
প্রেমা চলে যাবে শুনে অভ্র দাঁতে দাঁত চাপে,
” খাবো না,নিয়ে যাও,না না নিতে হবে না,তুমি যাও,আমি রেখে আসবো।(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমার রাগ উঠে যায়,দুপুর থেকে নাকি না খেয়ে আছে,যদিও এটা দেখা তার বিষয় না।তবে অভ্র না খেয়ে আছে শুনে খারাপ লাগছিলো বিধায় খাবারটা নিয়ে আসে অভ্রের জন্য।
“খেয়ে নাও অভ্র,আমি এখানেই আছি।(মৃদু হেসে বলে)
প্রেমার কথায় অভ্র এক বিন্দুও নড়েনি,ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।অভ্রকে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,প্রেমা নিজে গিয়ে অভ্রের হাত ধরে বিছানায় বসায়।
” খাও,চুপচাপ।নাহলে সব তোমার মুখে ছুড়ে মারবো।(প্রেমা),
প্রেমার কথায় অভ্র একবার প্রেমার দিকে তাঁকায়,এরপর খাবারের দিকে তাঁকায়।অদ্ভুদ লাগছে আজ তার।এর আগে সে কখনো এ সময়ে খায়নি।সারারাত না খেয়ে থাকতো।আজ কেন যেনো প্রেমার কথা সে ফেলতে পারছে না।মন,মস্তিষ্ক, এবং পেট উভয়ে বলছে,”খা অভ্র খা!
“তুমি বসো প্লিজ! (অভ্র)
অভ্রের আকুতিভড়া কন্ঠ শুনে প্রেমা সচকিত হয়।ভাবে? এভাবে বলার কি আছে? সে তো বলেই দিয়েছে বসবে।বিনাবাক্যে বিছানার অপরপাশে গিয়ে বসে পড়ে প্রেমা।
কেমন যেনো সব রহস্য রহস্য লাগছে তার।সন্ধ্যায় অভ্রের নানি এবং মায়ের বলা দুয়েকটা শব্দ প্রেমার কানে আসে।যা অভ্রকে ঘিরে ছিলো।সে থেকে প্রেম ভেবেই নিয়েছে কিছুটা একটাতো আছে যা ও জানেনা।কিন্তু জেনেই বা কি করবে?
প্রেমার ভাবনার মধ্যে থাকাকালীন অভ্রের খাওয়া শেষ হয়।বেশ তৃপ্তিসহকার খেয়েছে আজ অভ্র।প্রেমার হাতে খাওয়ার প্রবল ইচ্ছে জেগেছিলো তখন তার মনে।সেটা তো সম্ভব নয়।প্রেমা নিজ হাতেই এনেছে সেটা ভাবতেই তার আনন্দ হচ্ছে।
অভ্রের ডাকে প্রেমার ভাবনার অবসান ঘটে।অভ্রের দিকে চোখ তুলে চাইলো প্রেমা।
” চোখ লাল হয়ে আছে তোমার,ঘুমাও তাহলে আমি আসছি।(প্রেমা)
“আমি এখন ঘুমাবো না,দেড়ি আছে,তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।(অভ্র)
” ঘুমাওনা কেনো,তোমাদের মতো ছেলেদের এখন ঘুম বেশি দরকার।না ঘুমিয়ে রাত্রে কি ঠ্যাং করো,কে জানে?
কথাগুলো বলে প্রেমা বলে রুম থেকে চলে যায়।
অভ্রের হাসি চলে আসে।প্রেমা রাগলে এভাবেই কথা বলে। প্রেমা রুম থেকে যেতেই অভ্র দরজা বন্ধ করে দেয়।বিছানায় শুয়ে পরে,তবে ঘুমানোর জন্য নয়।

রাত প্রায় বারোটা। প্রেমার ঘুম আসছিলো না।ফোন টিপতেও ভালো লাগছিলো না।তাই রুমের সাথে থাকা বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। বেলকনিতে আসতেই ঠান্ডা বাসাতে প্রেমাকে আঁকড়ে ধরে।ছড়ানো এলোমেলো চুল।এমন একটা থমথমে ঠান্ডা পরিবেশে থাকতে প্রেমার বেশ লাগছে।

হঠাৎ নিচে তাঁকায় প্রেমা।মৃদু আলোয় কাকে যেনো দেখতে পায় সে।আরো ভালোভাবে ঠাওর করলেই দেখতে পায় অভ্রকে।চমকে উঠে প্রেমা।সাথে সন্দেহাকুল মন নিয়ে নিয়ে অস্থির পায়ে হেঁটে রুম থেকে বেরুয়। দরজা খুলা পেয়ে অনায়সে বের হতে পাটো প্রেমা।পা টিপে হেঁটে অভ্রের পেঁছন নিতে শুরু করে।

মাঝপথে গিয়ে অভ্র থেমে যায়।তাত্ক্ষণিক প্রেমা ঝোপের আঁড়ালে লুকিয়ে পরে।অভ্র পেঁছন ফিরে কাউকে না দেখে আবার হাঁটায় মন দেয়।অথচ তার মনে হচ্ছে কেউ তাকে অনুসরন করছে।প্রেমার ইচ্ছে করছে অভ্রকে জিজ্ঞেস করতে যে কোথায় যাচ্ছে?কিন্তু সেটা করলে বিষণ ভুল হবে এমনটা তার মন জানান দিচ্ছে।তাই নিশ্চুপতার সহে দৃঢ় পায়ে হেঁটে চলেছে অভ্রের পিছুন পিছুন।

কতক্ষণ হেটেছে জানে না প্রেমা।তবে অনুমান করতে পারছে ঘন্টাখানেক হবে।এতো রাতে এতোদূর অভ্র কোথায় যেতে পারে সেটায় ভেবে পাই না প্রেমা।

অভ্র একটা জায়গায় এসে থামে।চার দেওয়ালে ঘেরা। মাঝখানে একটা মাঝারি আঁকারের গেইট দেখা যায়।গেইট খুলে ভেতরে প্রবেশ করে অভ্র।

অভ্রের পরপরই প্রেমা প্রবেশ করে। এবং একটু দূরে লুকিয়ে থাকে। শূন্য দৃষ্টি নিয়ে সামনের দিকে তাঁকায় প্রেমা। তার সামনে একটু দূর অভ্র দাঁড়ানো।এবং অভ্রের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটা বাড়ি।বেশ পুরাতন বাড়িটি।কিন্তু মৃদু আলোয় ডিজাইনটা খুব নিঁখুতভাবে দেখা যাচ্ছে। প্রায় আধঘন্টা অভ্র সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে।বিনাশব্দে।অন্ধকারে মৃদু আলোতেও প্রেমার গা চমচম করছে।ইতিমধ্যে অভ্রকে এখন ‘ভূত’ মনে হচ্ছে প্রেমার।
পায়ের কিছুর সাথে কিছু একটা লেগে আঘাত পায় প্রেমা।সাথে সাথে ব্যাথায় কুঁকড়ে শব্দ করে উঠে,তবুও নিজেকে অভ্রের থেকে আড়াল করতে গাছে আড়লে গিয়ে দাঁড়ায় প্রেমা।
কিন্তু আঘাত পাওয়ার মৃদু শব্দ অভ্রের কানে চলে আসে।এবং ফোনের লাইট জ্বালিয়ে আশেপাশে দেখতে শুরু করে।
প্রেমা তখন হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে যাতে অভ্র বুঝতে না পারে।কিন্তু সেটা হয়নি।গাছের আড়ালে চুল দেখতে পায় অভ্র।কিছুক্ষণ সেও অবাক নয়নে সেদিকে তাঁকিয়ে থাকে।ভাবছে কে হতে পারে?

লাইট নিভিয়ে দৃঢ় পায়ে গাছের কাছে গিয়ে প্রেমাকে টান দেয় অভ্র।লাইট প্রেমার মুখে দিতেই বড় করে ঝাটকা খায় সে,
ওই অবস্থায় প্রেমাকে অনেক জোরে গাছের সাথে চেপে ধরে।এবং অতিরিক্ত রেগে অভ্র গর্জন দিয়ে উঠে,
“তুমি? এখানে? এতোরাতে?(অভ্র)
অভ্রের গর্জানোতে প্রেমা ভয়ে কেঁপে উঠে,চুপচাপ কাঁপতে লাগে।
” উত্তর দিচ্ছোনা কেন?প্রেমা এখানে কিভাবে এসেছো?(অভ্র)
কথা আটকে আসছিলো প্রেমার,সাথে নিজেকে গালিও দিচ্ছে,এতোরাতে এভাবে অভ্রকে অনুসরণ করে আসার কারণে।যেটা একদম উচিৎ হয়নি।

অভ্র প্রেমাকে আরো শক্তকরে চেপে ধরে,এবার তার রাগ দ্বিগুণ উপচে পড়ছে,
“স সরি,আ আসলে অভ.(প্রেমা)
” যাস্ট সেট-আপ, আমাকে ফলো করে আসা খুবই জরুরি ছিলো? কোনো অঘটন ঘটলে কি করতে?(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা সাহস করে বলে উঠে,
“তুমি এতোরাতে না ঘুমিয়ে এখানে কী?(প্রেমা)
” সেটা তোমাকে বলতে আমি বাধ্য নয়(অভ্র)
“ঠিক আছে,আমিও বলবো না,এখন ছাড়ো আমাকে(প্রেমা)
এমনিতে অভ্রের মেজাজ ঠিক নেই তারউপর প্রেমার ত্যারা কথা,আরো ক্ষেপে যাচ্ছে সে।
” দেখো জেদ করবা না আমার সাথে,(অভ্র)
“আমার ইচ্ছে,আমি সব করবো।(প্রেমা)
প্রেমাকে ভালোভাবে দেখে অভ্র চুপ মেরে যায়।এবং প্রেমাকে ছেড়ে দেয়। তারপর হালকা শব্দে বলে উঠে,
” সরি,আর তোমার চুল বাঁধো!(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা চুল বেঁধে ফেলে।
“আসলে,রাগ উঠে গিয়েছিলো তাই এভাবে রিয়েক্ট করেছি,সরি!(অভ্র)
অভ্র কথাটা বলে প্রেমার হাত ধরে সেই দেওয়ালে ঘেরা বাড়িটির উঠোন থেকে বের হয়ে যায়।প্রেমাকে কিছু বলার সুযোগ ও দেয়নি।

মাঝপথে প্রেমার থেমে যায়,
” আমাকে বলো অভ্র,এখানে কেন এসেছো?নাহলে আমি আর তোমার সাথে কোন বন্ধুত্ব রাখবোনা,শেষ কথা বলে দিলাম!(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র হেসে একবার পেছনে ফিরে তাঁকায়,এবং বলে, “আজ আমার ২০তম জন্মদিন!(কথাটা বলে অভ্র আবারও পেছনে ফিরে তাঁকায়)

(চলবে) Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here