বসন্তের_ফুল🌺🌺 #তারিন_জান্নাত #পার্ট২৬

0
469

#বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট২৬

আবছা আলোর মধ্য প্রেমা তার চাহনি অভ্রের দিকে স্থির করে।অভ্রের দিকে তাকালে প্রেমা নিজের মধ্যে অদ্ভুদ এক অনুভূতির আবিষ্কার করে। তাই সে কথা বলা ছাড়া অন্যসময়ে অভ্রের দিকে তাঁকাতে চায় না।তবুও লাগামহীন চোখজোড়া অভ্রতে গিয়ে নিজের অবস্থান স্থির করে।দ্রুত চোখ সরাই প্রেমা।

“২০তম জন্মদিন?তুমি তো বুড়া ব্যাটা?(প্রেমা)
কিঞ্চিৎ অবাক হয় অভ্র,
” মানে আমি বুড়ো হবো কেন?
“২০ বছর হয়েছে এখনো ইন্টারে ঝুলে আছো,(প্রেমা)
প্রেমার কথাটা এতক্ষণে অভ্রের মাথায় ঢুকে,
” মাঝখানে গ্যাাপ দিয়েছিলাম তাই,(অভ্র ছোট
করে বলে)
“কেন? গ্যাপ দিয়েছিলো কেন??(প্রেমা)
এবার অভ্র দাঁড়িয়ে যায়।এবং প্রেমার দিকে নিজের গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।সে তো ভুলেই গিয়েছিলো প্রেমা একবার কোনো অর্ধেক কথা শুনলে পরে তার কলিজা,পিত্তি বের করার চেষ্টায় লেগে পরে।তাই হালকা রেগে বলে উঠে,
” অসুস্থ ছিলাম তাই,(অভ্র)
অভ্রের রাগান্বিত কথা শুনে প্রেমা দ্রুত অভ্রের দিকে তাঁকায়।
“ওহ, (প্রেমা)
কথাটা বলার পর পরেই অভ্রকে রেখে সামনের দিকে হাঁটা ধরে।অভ্রের এবার হাসি চলে আসে প্রেমা অভিমান দেখে।দাড়িয়ে প্রেমার চলে যাওয়া দেখে,

“অভিমানী মুখ দেখে তো আমি আরো দ্বিগুন পাগল হয়ে যাচ্ছি।(অভ্র)

মৃদু শব্দে কথাটা বলে অভ্র হাঁটতে শুরু করে,কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে আর প্রেমাকে দেখতে পায়না। হঠাৎ বুকটা কেঁপে উঠে,আশেপাশে তাঁকালে দেখে শূন্য।প্রেমার কোনো চিহ্ন ও দেখা যাচ্ছে না।চারপাশে অন্ধকার,শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক কানে আসছে।আর নিস্তব্ধতায় বিরাজমান।
” প্রেমা,কোথায় তুমি?(উত্তেজিত হয়ে আশে পাশে তাকিয়ে ডেকে উঠে)
“কোনো শব্দ শুনা যাচ্ছেনা,
” প্রেমা আম সরি,আর রেগে কথা
বলবো না, সরি,প্লিজ কোথায় লুকিয়ে আছো বের হও,(অভ্র)
অভ্র প্রেমাকে ডাকছে,এবং নিজের চোখ বারবার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছছে।রিতীমতো চোখ ভিজতে সময় নিচ্ছে না তার।বুকে চিনচিন ব্যাথা করতে শুরু করে দিয়েছে অভ্রের।বেশি দূর না গিয়ে আশে পাশে থেকেই খোঁজছে,কারন এত কম সময়ে এখান থেকে বের হওয়া সম্ভব না।
“দেখো আমি যদি খোঁজে না পায়,তাহলে কিন্তু এখানেই রেখে চলে যাবো,তাই প্লিজ বের হয়ে আসো।(অভ্র)

তখনি অভ্রের কানে প্রেমার নিভু নিভু কন্ঠ ভেসে আসে।
এতো নিভু কন্ঠে অভ্র ঠাওর করতে পারছে না ডাকটা আসলে কোনদিক থেকে আসছে।
ফোনের লাইট দিয়ে চারপাশে আবারও দেখতে শুরু করে।একসময় অভ্র কিছুটা পথ হেঁটে একটা বড় গাছের সামনে এসে দাঁড়ায়।
লাইট দেখতেই প্রেমা চেঁচিয়ে উঠে,
” অভ্র আমি এখানে নিচে,গর্তের মধ্যে পরে গিয়েছি।(কাঁদোকাঁদো স্বরে)
প্রেমার কথা অনুসরন করে অভ্র গর্তটির কাছে গিয়ে পৌছায়।গর্তে লাইট মারতেই দেখে প্রেমা গর্তের একপাশে ঠেস দিয়ে বসে আছে,প্রেমাকে দেখতেই পেয়ে শান্তির শ্বাস ছাড়ে অভ্র,
“আরে এখানে? পড়ার আর জায়গা পাওনি?(অভ্র)

” আমি জানতাম নাকি এদিকে গর্ত আছে?(প্রেমা)
“ভালো হয়েছে,এগুলা তোমার ভুলের শাস্তি!প্রথমতো এতোরতে আমাকে ফলো করে এখানে আসা,আর দ্বিতীয়ত ঢং দেখিয়ে আমার আগে চলে আসা,আমি তুলবো না তোমাকে(দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে অভ্র)

অভ্রের কথায় প্রেমা এবার রাগ উঠে যায়, পাশ থেকে মাটির দলা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এবং অভ্রের দিকে ছুড়ে মারে। নিশানা সঠিক হওয়ায় মাটির দলা অভ্রের গায়ে গিয়ে পড়ে,
” যাও এখান থেকে, আমাকে উঠাতে হবে না,যাও এখান থেকে,(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র কর্ণপাত না করে লাফ দিয়ে গর্তে নেমে যায়। আচমকা অভ্র লাফ দিয়ে নামায় প্রেমা হকচকিয়ে যায়।পরমুহুর্তে চোখ ছোট ছোট করে তাঁকিয়ে থাকে অভ্রের দিকে।
অভ্র কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,
“খেয়রলেস।
” দেখো আমাকে..
“শশশশ! চুপ করো,(অভ্র নিজের ঠোঁট আঙুল দিয়ে চেপে প্রেমাকে চুপ করতে বলে)
অভ্রের কথায় প্রেমা চুপ হয়ে যায়,এবং অভ্র লাইট বন্ধ করে প্রেমার পাশে গিয়ে দাড়ায়। কারো পায়ের শব্দ কানে আসতেই প্রেমা ভয় পেয়ে অভ্রের
শার্ট ধরে ফেলে।
” উপপ এই লোকগুলোর আসার সময় পায়নি, শুনো একদম চুপ থাকো ওরা না যাওয়া অবধি।(অভ্র)
“লোকগুলো কে অভ্র?(ফিসফিস শব্দে জিজ্ঞেস করে প্রেমা)
” চুপ! (অভ্র ফিসফিস শব্দে ধমক দিয়ে বলে)
পরমুহূর্তে প্রেমা চুপ মেরে যায়।নিজেকে গালমন্দ করছে।এতো কথা কেমনে সে বলতে পারে।

“এখানটায় তো কারো কথা বলার শব্দ পেয়েছিলাম। এখন তো কাউকেই দেখছি না।(একজন লোক)
” হয়তো ভুল শুনেছেন ভাই আপনে?(অন্য একজন বলে উঠেন)
” না না ভুল না, আমি স্পষ্ট ছেলে এবং মেয়ের কথা শুনতে পেয়েছি। ভালো মতো খোঁজো দেখো আশেপাশে লুকিয়ে আছে কিনা।(প্রথম জন বলে উঠেন আবার)

লোকগুলোর কথায় অভ্র প্রেমা উভয়ে শুনতে পায়।অভ্র দেড়ি না করে প্রেমাকে টেনে নিজের সাথে চেপে জড়িয়ে ধরে। মনেমনে দোয়া করছে এদের হাতে যাতে ধরা না পরে। নাহলে সব শেষ।
অভ্র আচমকা জড়িয়ে ধরায় প্রেমার অস্বস্থি লাগতে শুরু করে।মন বলছিলো নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে,কিন্তু অভ্র রেগে যাবে ভেবে চুপ মেরে যায়।
“প্রেমার অস্থিরতা অভ্র ঠাওর করতে পারে। তাই প্রেমাকে স্বাভাবিক করার জন্য ছেড়ে দেয়। এবং নিঃশব্দে নিজের হাত জোড়া নিজের বুকে গুজে নেয়।অপেক্ষা করছে প্রেমা কখন নিজ থেকে ওকে জড়িয়ে ধরবে।কারন অভ্র জানে প্রেমা এবার নিজ থেকেই……

অভ্রের হঠাৎ ছেড়ে দেওয়ায় প্রেমা নিজেও কিছুক্ষণ অবাক হয়ে থাকে।পরে নিজেকে সামলে নেয়।পায়ের তীব্র শব্দ কানে আসতেই প্রেমা নড়েচড়ে উঠে,বুকের ঢিপঢিপ শব্দের গতি আরো প্রকড় হতে শুরু করে।এখন প্রেমার কাঁদতে ইচ্ছে করছে।যদি এখানে না এসে ঘুমাতো তাহলে এতো বড় বিপদে পড়তোনা।যদিও প্রেমা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি আসল বিপদ কী।

মাথার উপরে টর্চের আলো পড়তে দেখে প্রেমা ভয় পেয়ে যায়।এবং দ্রুত অভ্রের দিকে তাকায়।দেখে অভ্র ওর থেকে একটু দূরে দাড়ানো,এবং উপরের দিকে তাকিয়ে আছে।ভয় করছে বিষণ ওর।সব ভাবনা সাইডে রেখে দেয়,এবং চটজলদি প্রেমা অভ্রের কাছে গিয়ে অভ্রকে জড়িয়ে ধরে।

অভ্র নিজেও প্রেমাকে আলতো করে আঁকড়ে ধরে। ঠোঁটের কোণায় তৃপ্তিময় হাসির রেখা টানে।শক্ত ভাবে চেপে ধরার অধিকার সে এখনো পায়নি।তাই আলতো স্পর্শে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই,হেসে অভ্র নিজ মনে বলে উঠে,
“লোকগুলোর হাতে ধরা পড়লে তেমন বিষেশ কোনো ক্ষতি হবে না।তবে দুজনের বিয়েটা নির্বেজালের সহিতে পড়িয়ে দিবে,এতে বরং আমার লাভ-ই হতো।কিন্তু আমি এতো সহজে সব চাই না, সময় বারুক, এবং আমার চাওয়ার আকাঙ্খা; তীব্র থেকে আরো তীব্রতায় রুপ নিক।মানুষের চাওয়ার কোনো সমাপ্তি নেয়।কিন্তু আমার প্রথম এবং শেষ চাওয়াটাই তুমি।’প্রেমাভ্র’
________

চারপাশে ঘন অন্ধকার ছেয়ে যায়।কারো হাঁটার শব্দ আর শুনা যাচ্ছেনা। নিস্তব্ধ পরিবেশ একদম।এখন আবার দূর থেকে কুকুরের হাঁক ও কানে ভেসে আসছে।

বসা অবস্থায় অভ্র ভাবছে নয় বছর ধরে এই জায়গাটায় সে একাই নিজের জন্মক্ষণ পালন করতো।তবে অন্যভাবে।প্রচন্ড রাগ এবং ঘৃনা নিয়ে।অথবা নিজেকে আঘাত করে। কিন্তু এই বারে সময়টা অন্যরকম কেটেছে ওর।হালকা টক মিষ্টির সহিতে এবং প্রেমার সঙ্গে।ভাবতেই অভ্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ খেলে যাচ্ছে। রাত প্রায় আড়াইটা।ঘুম পাগলী ওর কোলেই ঘুমোচ্ছে। তখন প্রেমা দাঁড়ানো অবস্থায় কিছু সময় পরেই ঢলে পরে যাচ্ছিলো।অভ্র ধরে ফেলার পর বুঝতে পারে তার প্রেমা ঘুমে ঢলে পরেছে।আলতো হেসে প্রেমাকে নিয়ে বসে পরে।লোক গুলোর উপস্থিতি তখন আর ছিলো না।
প্রায় একঘন্টা যাবৎ এখানেই বসে আছে।তাও প্রেমার ঘুম ভাঙছেনা।আর অভ্রও চাইছে না প্রেমার ঘুমটা ভাঙুক।
কিন্তু এই জায়গা থেকে দ্রুত চলে যেতে হবে।নাহলে সকাল হলেই সকলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বা কথার আক্রমণ হতে হবে।তাই এবার অভ্র উপায়ন্তর না পেয়ে প্রেমা ডাকা শুরু করে।পাঁচমিনিট পর প্রেমার ঘুম ভাঙে।ধড়ফড়িয়ে উঠে যায়।
“আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,তুমি ডাকো নাই কেন?(ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে)
অভ্র প্রেমার কথার উত্তর না দিয়ে বলে উঠে,
” প্রেমা আমাদের যেতে হবে।সকাল হলে জামেলায় পড়তে হবে।(অভ্র)
“কিন্তু উঠবো কিভাবে?(প্রেমা)
প্রেমা কথা শুনে অভ্র দাঁড়িয়ে যায়। এবং প্রেমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে উপরের দিকে তুলে ধরে।সাথে সাথে প্রেমা হেসে উঠে,এবং বুঝতে পেরে যায় কিভাবে উঠতে হয়।দেড়ি না করে দ্রুত উঠার চেষ্টা করে।এবং উঠেও যায়।অভ্রও নিজেনিজে কেমন করে যেনো উঠে যায়।
অভ্র উঠতেই প্রেমা বলে উঠে,
” ভাগ্যিস তুমি লম্বা ছিলে তাই উঠতে পেরেছি,যদি খাঁটো হতে তাহলে গর্তেই সারাজীবণ পার করতো হতো?(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র একটু হেসে বিড়বিড় করে বলে উঠে,”তাহলে সারাজীবণের জন্য গর্তে সংসার পাতাতাম “(অভ্র)
” কিছু বলেছো অভ্র?(প্রেমা)
“খাও না? এতো পাতলা কেন তুমি?(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা মন খারাপ করে বলে,
” ছোটবেলায় কেউ কোলে নিতো না আমাকে,অনেক মোটা ছিলাম।আর অর্পণ তো আমাকে এখনো মুটকি ডাকে (প্রেমা)
“ওহ” (অভ্র)
কথাটা বলে অভ্র চুপ মেরে যায়। অর্পণের নাম শুনতেই কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে শুরু করে কোনো রকম নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এখন অন্তত সময়টা সে প্রমার সাথে উপভোগ করতে চাই।
পিচঢালা রোডে আসার সাথে সাথেই লাইট জ্বালায় অভ্র।লাইট জ্বালানোর সাথে সাথে অভ্রের দৃষ্টি যায় প্রেমার পায়ের দিকে,
“আরে তুমি জুতো ছাড়া চলে এসেছো? পাগল তুমি? আমাকে বলোনি কেন? পায়ে ব্যথা পাওনি তো? এই আমার জুতা পড়ে নাও,(উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে অভ্র)

” আরে সমস্যা নেই,আমি খালি পায়ে হাঁটতে পারি।
“মেজাজ খারাপ করিও না পরে নাও,একটা শব্দও করবে না আর,(অভ্র)
অভ্রের ধমকানিতে প্রেমা জুতাজোড়া পায়ে দেয়।এবং বাকিটা সময় তারা নিঃশব্দে বাড়ি পথে যাওয়ার জন্য হাঁটে,

সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রেমা…

((চলবে))

গল্পের ভালো খারাপ দিক আলোচনা করার ইচ্ছে থাকলে আমার গ্রুপ আছে সেখানেই করেন।আমাকে ইমবক্সে বিরক্ত করবেন না।আপনার আলোচনাটা সবাই দেখুক,

আর গল্পটার নাম নিয়ে কারো সমস্যা থাকলে বলতে পারেন। কারন একজন ভাইয়াপু বলছে গল্পের সাথে নাকি নামের মিল নেই,,তো ভাইয়াপু…
নাম কী #সিনিয়র_ডেঞ্জারাস_বউ রাখবো?😤😤
Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here