তোমার_আমার_প্রণয় #israt_jahan_arina #part_19

0
850

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_19

নিজের বিলাসবহুল রুমের করিডোরে বসে একমনে সমুদ্র দেখছে আর কফিতে চুমুক বসাচ্ছে মাহাদ। খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেছে তার। আজ আর কারো ডাকার প্রয়োজন পড়েনি। ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই ভীষণ মাথাব্যথা করছে। হয়তো হ্যাং ওভার টা এখনো কাটেনি। সকালে উঠেই আগে গোসল সেরে নিয়েছে। ঠোঁট টা ভীষণ জ্বালা করছে। কিছুক্ষণ আগে ওয়াশরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলায় বেশকিছু আচরের দাগ দেখেছে। গোসলের সময় সেখানে ভীষণ জ্বালা পোড়া করছিল। তার পিচ্চিটা আসলেই একটা বাঘিনী।সে গতকাল রাতের কথা মনে পড়তেই হালকা হাসির আভাস পাওয়া গেলো তার চোখে-মুখে।

গতকাল সে খুব বেশি মাতাল ছিল বিষয়টা ঠিক তেমন না। তবে গতকাল যা ঘটেছে তা যে তার ইচ্ছেকৃত সেটাও না। নিজের প্রিয়সি কে তখন একটা বার ছুঁয়ে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছা জেগে উঠেছিল। মদের নেশার চাইতে প্রিয়সির গোলাপি ওষ্ঠ নেশায় বুঁদ হয়ে গেছিল তখন। গতকাল রাতে পার্টি তে তার আশেপাশে হাজারো মেয়ে ছিল। কই তাদের গারো লিপস্টিক তো তাকে একটুও আকর্ষিত করতে পারিনি। অথচ মেকআপ বিহীন হালকা গোলাপী ওষ্ঠদ্বয় তাকে পাগল করে তুলেছিলো। মনে হয়েছিল একটা বার সেটা ছুয়ে না দিলে তার পাপ হবে,ঘোর পাপ।তবে এতো কিছুর জন্য যে তার মনে আফসোস হচ্ছে তা কিন্তু নয়। তার মোটেও আফসোস হচ্ছে না।

দৃশ্য, ঈশিতা আর মৃদুল বসে সকালের নাস্তা করছে। ঈশিতার দিকে চোখ পড়তেই দেখল সে মিটি মিটি হাসছে। দৃশ্যর মনে পড়ল গতকাল রাতের কথা। অনেকক্ষণ কান্না করার পর সে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে ছিল। তখনই রুমে আসে ঈশিতা। দৃশ্যর চোখের মুখের অবস্থা দেখে বলেছিলো

-“আরে দৃশ্য কি হয়েছে তোমার?”

মলিন সুরে দৃশ্য বলেছিল
-“কিছু না ঈশিতা।”

হঠাৎ ঈশিতার নজর গেল দৃশ্যর ঠোঁটের দিকে। ভীষণ অবাক হয়ে বললো

-“দৃশ্য ইউ কিসড সামওয়ান?”

ঈশিতার কথায় দৃশ্য ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। ঈশিতা কি কোন ভাবে সেই ঘটনাটা দেখে ফেলেছে? কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো

-“না তে..তেমন কিছু না। আমি কেনো কাউকে কিস করবো?”

-“তাহলে তোমার ঠোট…

দৃশ্য ঈশিতাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বললো
-“আসলে এই লিপস্টিক মনে হয় আমার সুট হয়নি। ভীষণ চুলকাচ্ছে লাল হয়ে গেছে।”

-“ও তাই বলো। আমি ভাবলাম আবার কাকে চুমু টুমু খেয়ে আসলে।”

কথাটা বলেই ঈশিতা হাসতে লাগলো। যেন ভীষণ মজার একটা জোকস বলে ফেলেছে।
দৃশ্য ভীষণ অপ্রস্তুত বোধ করলো।

সকালেও এ বিষয় নিয়ে কিছুক্ষণ মজা করেছে।দৃশ্যর এবার ভীষণ মেজাজ গরম হচ্ছে। সে যতই বিষয়টা ভুলতে চাচ্ছে কিন্তু এই মেয়েটা তাকে কিছুতেই ভুলতে দিচ্ছে না।

বিকেলের দিকে তারা সকলেই ঢাকায় ব্যাক করলো। মাহাদ বাসায় যেতে যেতে প্রায় অনেক রাত হয়ে গেলো। বাসায় ঢুকে সে সোজা আগে মায়ের রুমে ঢুকলো।তার মা বসে বসে একটা বই পড়ছে। মাহাদ সোজা মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। আখি রহমান বই সরিয়ে দেখলেন ছেলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। এই কাজটা মাহাদ প্রায় করে। আখি রহমান কোনরকম রিয়েক্ট না করে আবার বইয়ে মনোযোগ দিলেন।

চোখ বন্ধ রেখেই মাহাদ বললো
-“প্রচন্ড মাথা ধরে আছে মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও না মা?”

এমন আকুল আবেদন শুনেও আখি রহমানের কোনো হেলদোল নেই।
মাহাদ মায়া জড়ানো কণ্ঠে বললো

-“আমার সাথে কথা বলবে না মা?”

আখি রহমান এখনো বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। মাহাদ আবার বলতে শুরু করল

-“তোমার শাসন গুলো ভীষণ মিস করছি মা। দেখো আমি কেমন বিগরে গেছি। ভীষণ অভদ্র হয়ে গেছি।মাতাল হয়ে বাসায় ফিরছি। মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করি। ঠাটিয়ে পরপর কয়েকটা চড় বসিয়ে দাও আমাকে।আমাকে একটু শাসন করো।

অপরাধবোধ আমাকে ভেতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মা। তোমার নীরবতার আমি আর নিতে পারছি না।”

আখি রহমান এমন ভাব করলেন যেনো তিনি কোন কথাই শুনতে পাননি। মাহাদ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো। কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থেকে নিজের রুমে চলে গেলো। আখি রহমান সেদিকে তাকিয়ে রইল। মাঝে মাঝেই মাহাদ তার কাছে এমন অভিযোগ তুলে। কিন্তু সে সবসময়ই ছেলেকে ফিরিয়ে দেন। ছেলের সাথে কয়েক বছর হলো কথা হয়না তার। তবে ভেতর থেকে তিনি ও ভীষণ কষ্ট পান।

এক ধ্যানে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে মাহাদ। ভাবছে সময় মানুষকে কতটা পরিবর্তন করে দেয়। একটা সময় এই বাচ্চা মেয়েটার সমস্ত হৃদয় জুড়ে শুধু সেই বিচরণ করত। আচ্ছা দৃশ্যর মনের কোথাও কি এখন সে আছে?
______________________

দৃশ্য সবার সাথে বসে রাতে ডিনার করছে। দৃশ্যর বাবা গম্ভীর মুখে ফাহিমকে উদ্দেশ্য করে বললেন

-“শুনলাম নাবিল নাকি বাসায় এসেছে?”

-“জী বাবা। আজ বিকেলে ঢাকা থেকে ফিরেছে।”

-“নাবিলকে দেখে তো কিছু শিখতে পারিস। তোর বয়সী একটা ছেলে লেখাপড়ায় কত মনোযোগী। আমাদের পুরো বংশে একমাত্র নাবিলকে দিয়ে লেখাপড়া হবে। বাকি তোদের কারো উপরে আশা করা যায় না।”

বাবার কথায় ফাহিম কিছুটা বিরক্ত হচ্ছে।তবে দৃশ্য মুচকি মুচকি হাসছে। ছোটবেলা থেকেই নাবিল ভাইয়ের সাথে ফাহিম ভাইয়ের তুলনা হতে দেখেছে। তুলনা হবে নাই বা কেন। দৃশ্য নিজেও বিশ্বাস করে তাদের পুরো বংশে একমাত্র ঠান্ডা মাথার মানুষ নাবিল ভাইয়া। লেখাপড়ায় ও ভীষণ ভালো। তিনি এবার মেডিকেলে পড়ছেন। তাদের বংশের সব ছেলেদের এক লাইনে দাঁড় করালে সেখানে নাবিল ভাইয়াকে ভীষণ বেমানান লাগবে। কারণ সব রক্ত গরম মানুষগুলোর সাথে অতিমাত্রার ঠান্ডা ভদ্র ছেলেকে কিছুতেই মানায় না। দৃশ্যকে ভীষন আদর করে নাবিল। সবসময় লেখাপড়ায় উৎসাহ দেয়।

আজ বিকেলে এসেই দৃশ্যকে কয়েক বক্স আইসক্রিম চকলেট আরো কত কি দিয়ে গেল। তবে তাই বলে যে তার ভাই টা ভালবাসেনা তা কিন্তু না। যেমন আজ নাবিলা ভাই আসার খুশিতে নাবিলা স্কুলে যায়নি। তাই ফাহিম নিজে বাইকে করে বোনকে স্কুলে পৌঁছে দিয়েছে। সাথে অবশ্য বেশ কিছু আদর্শ বাণী ও শুনিয়েছে। সাবধানে চলবি, কেউ কোন সমস্যা করলে বলবি,কোন ছেলে ডিস্টার্ব করলে আমাকে সাথে সাথে জানাবি ইত্যাদি ইত্যাদি।দৃশ্যর একবার বলতে ইচ্ছে করছিল
‘ভাইয়া একটা ছেলে আমাকে ভীষণ ডিস্টার্ব করে। দিনরাত আমার মাথায় একদম জেগে বসে আছে। আমার মনে যখন তখন অনুভূতির ঝড় তোলে। এই যে দূরে থেকে আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। এই ছেলেটার কান ধরে আমার সামনে এনে দাড় করিয়ে দাও। আর তাকে এই পানিসমেন্ট দাও যেন আমার চোখের সামনে 24 ঘন্টা থাকে।’
কিন্তু দৃশ্য এমন কিছুই বলেনি। চুপচাপ ভাইয়ের বাণী শুনেছে।

ফাহিম বিরক্ত হয়ে নিজের রুমে ঢুকলো। বাবা সবসময় তার সাথে এমনটা করে। সেকি কোনকিছুতে কম নাকি যে তার তুলনা করা হয়। অন্যদিকে তমা তাকে ভীষণ ইগনোর করছে। তাকে কেউ ইগনোর করবে এটা যেন ফাহিম কিছুতেই মানতে পারেনা। এই পিচ্ছি তমার সাহস দেখে সে রীতিমত অবাক। ওকে এবার শায়েস্তা করতে হবে। ফাজিল মেয়ে।

রুমে এসে মোবাইলটা হাতে নিতেই দৃশ্য চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। 17+ মিসকল। প্রত্যেকটা কল মাহাদের।

দৃশ্যর এখন কিছুটা ভয় লাগছে। যখনই দৃশ্য মাহাদের কল রিসিভ করতে পারে না তখনই মাহাদ ভীষণ রেগে যায়। আজ তো এতগুলো কল দিয়েছে। মোবাইলটা সাইলেন্ট ছিল তাই সে শুনতে পাইনি। আর বিকেল থেকেই নাবিল ভাইয়ের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো তাই একদমই খেয়াল করতে পারেনি। আজ তার খবর আছে। নিশ্চয়ই এতগুলো বকা দিবে। ভাবতে ভাবতেই আবার মাহাদের কল আসলো।
দৃশ্য ভয়ে ভয়ে কলটা রিসিভ করতেই মাহাদ চেঁচিয়ে বললো

-“এইবার রাজশাহীতে এসে তোর মোবাইলটা আমি সবার আগে আছাড় দিয়ে ভাঙবো।যেহেতু ফোন ইউজ করতে জানিস না তাই ফোন থাকার মানেই হয়না।”

এতক্ষণে দৃশ্যর পুরো শরীর কাপতে লাগলো। নিঃশ্বাস ঘন হতে শুরু করল। অন্যান্য দিনের তুলনায় মাহাদ একটু বেশি রেগে আছে।দৃশ্যর মনে হচ্ছে মাহাদ এখনি মোবাইল থেকে বেরিয়ে এসে তাকে এক আছাড় মারবে। সচরাচর তো এতটা রেগে যায় না। সবসময়ই দৃশ্যকে ভীষণ কেয়ার করে। আর আদুরে গলায় কথা বলে। তবে এই ছেলের রাগ দৃশ্য ভীষণ ভয় পায়। সম্পর্কের এতদিনে বেশ অনেকবার সে মাহাদকে এভাবে রাগতে দেখেছে। রাগলে এই ছেলের মাথা একদমই ঠিক থাকেনা।

দৃশ্য ভয়ে ভয়ে বললো
-“সরি। আসলে ফোন সাইলেন্ট ছিল।”

মাহাদ ভীষণ গম্ভীর গলায় বললো
-“ফাহিমের বাইকে কি করছিলে?”

দৃশ্য একটু অবাক হয়ে বললো
-“মানে?”

-“মানে ভীষন সোজা। ফাহিম বাইকে করে তোকে স্কুলে কেন দিয়ে এসেছে? তুই কি ভেবেছিস আমি ঢাকায় বলে খোঁজ খবর রাখি না? তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়েছি। তোকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার।”

দৃশ্য যেন অবাক এর চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মাহাদ কখনই তার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করেনি। একরাশ অভিমান তার মনে জমা হতে লাগলো। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বললো

-“মাহাদ ফাহিম আমার ভাইয়া হয়।”

মাহাদের যেন রাগ আরো বেড়ে গেলো। ধমকের সুরে বললো
-“কোন জনমের ভাই?”

দৃশ্যর এখন কাঁদতে ইচ্ছে করছে। ছেলেটা এমন ভাবে কথা কেন বলছে। সে তো এই মানুষটার আদুরে গলায় অভ্যস্ত। চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। সে মানুষটাকে যতটা নরম ভাবে সে ঠিক ততটা নরম না। পাথর একটা। না হলে কেউ এভাবে কথা বলে। দৃশ্যর হেঁচকি উঠে গেছে। বহুকষ্টে কান্নাটাকে আটকে রেখে বললো

-“আমার আপন মায়ের পেটের ভাই। বুঝেছো?”

মাহাদ কয়েক মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে গেলো। তার মাথায় একরাশ চিন্তা ভর করতে শুরু করলো। এটা কিভাবে সম্ভব? কাঁপা গলায় বললো

-“তোমার বাবার নাম আশরাফ হোসাইন?”

দৃশ্য কিছুটা অবাক হলো। মাহাদ তার বাবাকে চেনে?সে বললো
-“তুমি বাবাকে আর ভাইয়াকে চেনো?”

মাহাদ কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না। এতদিন সবকিছু যতটা সহজ মনে হচ্ছিল এখন মনে হচ্ছে অনেক জটিল হবে। ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল সে। পরক্ষণে মনে পড়লো দৃশ্য সাথে ভীষণ খারাপ ব্যবহার করেছে। নরম গলায় বললো

-“আমি সরি দৃশ্য পাখি। আমি বুঝতে পারিনি। আসলে তোমাকে আমি অন্য কোন ছেলের সাথে একদমই সহ্য করতে পারিনা। তাই অনেক বকা দিয়ে ফেলেছি। মাফ করে দাও।”

মাহাদের আদুরে গলা শুনে দৃশ্যর অভিমান যেনো আরও বাড়লো। রাগী গলায় বললো

-“তুমি আমাকে একটুও বিশ্বাস করো না। একদম কথা বলবে না আমার সাথে। তুমি ভীষণ খারাপ, ভীষণ খারাপ।”

কথাগুলো বলতে বলতেই দৃশ্য প্রায় কেঁদে দিল। আর কলটা কেটে দিলো। মাহাদ স্থির হয়ে বসে রইল। তার মাথায় এখন অন্য চিন্তা।

অভিমানে দৃশ্য কল কেটে দিলেও সে আশা করেছিল মাহাদ তাকে কল করে রাগ ভাঙ্গাবে। কিন্তু সে রাতে মাহাদ আর তাকে কল করলো না। অভিমানে দৃশ্য বালিশ ভিজিয়ে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।

পরের দিন টা ভীষণ ভীষণ খারাপ কাটল। ক্লাসে কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারল না। সারাদিনে মাহাদ তাকে বেশ কয়েকবার কল করেছে। কিন্তু অভিমানে সে কল রিসিভ করেনি।রাতেও মাহাদ অনেক বড় কাল টেক্সট করেছে। কিন্তু দৃশ্য সবকিছুই ইগনোর করেছে।পর দিন বিকেলে নাবিলা আর সে বেরোলো কোচিং এর উদ্দেশ্যে। তবে কোচিংয়ের গলির মোড়ে আসতেই দেখতে পেলো মাহাদ কে। এই ছেলে কবে আসে কবে যায় কিছুই টের পায়না দৃশ্য। হঠাৎ করে এসে এভাবে সারপ্রাইজ দেয় তাকে। মাহাদ নাবিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো

-“কি খবর নাবিলা মন ভালো?”

মাহাদের কথা শুনে দৃশ্যর রাগ আরো বাড়তে শুরু করলো। নাবিলা হেসে বললো

-“জ্বী ভাইয়া ভালো।আপনি রাজশাহী কবে আসলেন?সামনে না আপনাদের পরীক্ষা?”

মাহাদ আড়চোখে দৃশ্যকে দেখে বললো

-“দেখলে তোমার মাথায় বিষয়টা আছে। কিন্তু অন্য কেউ তো সেটা ভুলে বসে আছে। আমাকে মানসিক টর্চার করছে যাতে আমি পরীক্ষায় ফেল করি তার মত।”

দৃশ্য রেগে মাহাদের দিকে তাকালো। নাবিলা বুঝলো এদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। মাহাদ বললো

-“তোমার বোনকে বলে দাও এতো ছোট শরীরে এত রাগ অভিমান পুষতে নেই।”

দৃশ্য এবার রেগে নাবিলাকে বললো
-“নাবিলা এই লোককে বলে দে আমার সাথে যেন কোন রকম কথা না বলে।”

নাবিলা আছে এখন মহা ঝামেলায়। তাকে বলতে বলে তারা নিজেরাই কথা বলছে। তাই সে বললো

-“আপনাদেরটা আপনারাই বুঝুন আমি ক্লাসে গেলাম বাই।”

কথাটা বলেই নাবিলা চলে গেল। দৃশ্য সামনে এগোতে নিলে মাহাদ হাত ধরে থামালো।আর বললো

-“কোথায় যাও জান পাখি?”

দৃশ্য চোখ গরম করে তাকালো আর বললো
-“একদম আমার সামনে ঢং করবা না। অসভ্য লোক। যার আমার প্রতি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই তার সাথে আমি কথা বলবো না।”

কথাটা বলেই দৃশ্য চলে যেতে নিলে মাহাদ জোর করে টেনে বাইকের সামনে আনলো। কোমরে ধরে উঁচু করে বাইকে বসালো। দৃশ্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মাহাদ মুচকি হেসে বললো

-“শরীরে তো একেবারেই ওজন নেই। আমার নিচে পড়লে তো একদম পিষে যাবা।তবে ভালই হয়েছে সারাক্ষন কোলে নিয়ে ঘুরা যাবে।”

দৃশ্য মুখ ভার করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। সে একদমই কথা বলবে না এই অসভ্য লোকের সাথে।মাহাদ বাইকে উঠে দৃশ্যর হাতদুটো বুকে জড়িয়ে বললো

-“শক্ত করে জড়িয়ে ধরো জান পাখি। না হলে একদম কাগজের মতো উড়ে যাবে। এমনিতেই যা ওজন তোমার?”

দৃশ্য রেগে মাহদের ঘাড়ে চিমটি কাটলো। মাহাদ সেখানে হাত দিয়ে ঘসতে ঘসতে বললো
-“আরে পিচ্ছি, চিমটি, খামচি ,কামড়াকামড়ি করার জন্য ভবিষ্যতে অনেক সময় পড়ে আছে। এখন আমাকে জড়িয়ে ধরো।”

দৃশ্য অভিমান কমিয়ে তাকে ঝাপটে ধরলো। মাহাদ মুচকি হেসে বাইক চালু করলো।

অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে আছে তারা একটা বেঞ্চের ওপর।পার্কের সামনে কয়টা বাচ্চা খেলাধুলা করছে।পাশেই ছোট একটা লেক।তাতে বেশ কিছু পদ্ম ফুটেছে।দৃশ্য এক মনে সে দিকেই তাকিয়ে আছে। মাহাদ দৃশ্যর হাত ধরে বললো

-“দৃশ্য তোমাকে কিছু কথা বলবো মনোযোগ দিয়ে শুনবে। আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে আমি ভীষণ সিরিয়াস। তোমাকে কখনোই আমার গার্লফ্রেন্ড ভাবিনি। তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী হবে সেটাই চিন্তা করে এসেছি। ভবিষ্যতে তোমাকে বউ বানাবো, সেটা বলে কিন্তু কখনোই তোমার কাছ থেকে আমি কোন কিছু চাইনি। না ভালবাসি বলে বলে তোমার ঠোটে চুমু খেয়েছি আর না কোনো রুমডেটে যাবার অফার করেছি। কারণ আমি আমাদের সম্পর্কটাকে সম্মান করি। তুমি এখনো অনেক ছোট। অনেক কিছু আবেগ দিয়ে চিন্তা করো। আমি জানি তুমি আমাকে ভীষণ ভালোবাসো। আমি চাই আমাদের ভালোবাসা টাকে শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা তুমি করবে। ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য কী লিখে রেখেছে আমি জানিনা।তবে প্লীজ কখনো আমার হাত ছেড়ো না।যে কোন জটিল পরিস্থিতি আসুক না কেন তুমি আমার পাশে থাকব প্রমিজ করো।”

মাহাদের কথাগুলো শুনে দৃশ্যর চোখ ভিজে উঠলো। এই মানুষটা আসলেই তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। না হলে বর্তমানে ভালোবাসার নাম করে প্রেমিকরা অনেক কিছুই করে থাকে। কিন্তু মাহাদ কখনো কোনো অন্যায় আবদার করেনি।দৃশ্য সামনে যতই বড় হবার ভান করুক না কেন মাহাদ নিজেও অনেক ছোট। মাত্র অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। এত ছোট বয়সে ও সম্পর্কগুলোকে সে সম্মান করতে জানে। বিশেষ করে দৃশ্যের ক্ষেত্রে সে ভীষণ সেনসিটিভ। মাহাদ মাঝে মাঝে দৃশ্য কে এমন ভাবে ট্রিট করে যেন দৃশ্য পাঁচ বছরের ছোট্ট বাচ্চা। বিষয় গুলো দৃশ্য খুব ইনজয় করে।

দৃশ্য মাহাদের কাঁধে মাথা রেখে বললো

-“তোমার ওই ভারি ভারি কথাগুলো আমি বুঝিনা। শুধু এটা জানি তোমার সাথে কথা না হলে আমার দিনটা খুব খারাপ যায়। প্রত্যেক সপ্তাহে তোমাকে অন্তত একবার দেখতে না পারলে আমি অস্থির হয়ে উঠি। আমার জীবনের শেষ দিন অব্দি আমি তোমাকে পাশে চাই। আর তোমার হাত আমি কখনোই ছাড়বো না প্রমিস। তবে তোমাকে প্রমিস করতে হবে আমাকে সারা জীবন এভাবে আইসক্রিম আর চকলেট খাওয়াবে। বিয়ে পর বলতে পারবেনা তুমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে আইসক্রিম চকলেট খাবে।”

মাহাদ খিলখিল করে হেসে দিলো আর দৃশ্যর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। তবে এত সব এর মাঝেও মাহাদকে ভীষণ চিন্তিত দেখালো। দৃশ্য কে হারানোর একটা সূক্ষ্ম ভয়ে তার মনে দানা বাধতে শুরু করেছে। তবে দৃশ্যকে সেই ভয়ের আভাস পেতে দিবেনা। এই বাচ্চা মেয়েটাকে কোন মেন্টাল প্রেসার দিতে চায় না।তবে সে সবকিছু সামলে উঠতে পারবে তো? না তাকে পারতেই হবে। কারণ দৃশ্য তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে অংশ ছাড়া মাহাদ কিছুতেই সুস্থভাবে বাঁচতে পারবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here