ইচ্ছের_উল্টোপিঠ,পর্ব-#০১,০২

0
1090

গল্পের নাম- #ইচ্ছের_উল্টোপিঠ,পর্ব-#০১,০২
ক্যাটাগরি-# থ্রিলার + রোমান্টিক
লেখনীতে – #আভা_ইসলাম_রাত্রি

(১)
মধ্যরাত এখন। ” নিস্তব্ধ কুঠির ” নামক সুবিশাল বাড়ির এক রূমে দুজন যুবক- যুবতী আদিম খেলায় মগ্ন হয়ে আছে। রাতের কতগুলো প্রহর কেটে যাওয়া পর তারা দুজনই ক্লান্ত হয়ে ফিনফিনে সাদা রংয়ের ব্লেনকেট গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু যুবকটার চোখে এই মুহূর্তে ঘুমের রেশ মাত্র নেই। সে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আনমনে কি যেনো ভেবে যাচ্ছে। কিছুসময় পর পাশ ফিরে তার পাশে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটাকে একপলক দেখলো। তৎক্ষণাৎ ঘৃণায় তার সারা শরীর ” রি রি” করে উঠলো। বিদেশি এই মেয়েকে দেখে সম্পূর্ণ মেয়েজাতির উপর এক অদ্ভুত বিতৃষ্ণা জন্মাচ্ছে তার । ওর এতকালের জং পড়া মনে কি সব অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবনা আসছে। আচ্ছা সব মেয়েরাই কি টাকার কাঙাল ? বস্তা ভরা টাকা পেলে এরা সবাই যেকোনো ছেলের সাথে শুতে দ্বিধাবোধ করেনা। এতোটা সস্তা এই মেয়েগুলো। ছি। মানুষ বলে মেয়েরা নাকি মায়ের জাত। তারা যদি মায়ের জাতই হতো তাহলে তাদের কি এই অধঃপতন হতো ? বরং ওরা থাকত সূর্যের মতো তেজস্বী। আত্মসম্মান হতো উত্তপ্ত লোহার ন্যায়। জুভান এসব উলটপালট ভেবেই নাক কুচকালো। রাতের আধার অনেকটাই কেটে গেছে। সাদা রঙের আকাশে একটু আকটু লালাভ আভা ছিটকে পড়ছে। আলো ফুটলেই জুভানের আবার স্টুডিওর উদ্দেশ্যে বেরোতে হবে। ফটোশুট আছে একটা। জুভান বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। পাশের ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটাকে ঘুম থেকে উঠার তাগাদা দিয়ে হাঁটু অব্দি সাদা রঙের টাওয়েল জড়িয়ে সাওয়ার নিতে ওয়াস রুমে চলে গেলো।

প্রায় ঘণ্টাখানেক পর জুভান ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ভিজে স্নিগ্ধ শরীর তার। অগোছালো চুলগুলোও থেকে টিপটপ পানি পড়ছে। পানির ফোঁটাগুলো তার গলা বেয়ে ক্রমশ নিচে গড়িয়ে পড়ছে। ফ্লোরে থাকা কালো রংয়ের কার্পেট একটু আকটু ভিজে গেছে তার শরীরের পানির ছিটের কারণে।

জুভান চুল ঝাড়তে ঝাড়তে চোখ মেলে বিছানার দিকে তাকায়। এখনো ওই বিদেশি মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে। জুভান রেগে গেলো। কাজ শেষ হওয়া সত্বেও এসব বাজারি মেয়েদের নিজের বিছানার ঘুমিয়ে থাকা তার মোটেও পছন্দ না। জুভান রেগে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার গায়ে থেকে চট করে ব্ল্যাঙ্কেট টা সরিয়ে দিলো। সাথেসাথে মেয়েটা এক লাফ দিয়ে উঠে বসে আবার ব্ল্যাঙ্কেট টা নিজের গায়ে আবার জরিয়ে নেয়। খানিকটা ভরকে গিয়ে জুভানের দিকে অসহায় নজরে তাকালে জুভান সেসব তোয়াক্কা করে না। বরং সে আরো বেশি রেগে গিয়ে বলে,

” এতক্ষণ ধরে ঘুম থেকে উঠো নি কেনো ? আমার বাড়ী তোমার কাছে ঘুমানোর জায়গা লাগছে ? জাস্ট গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার নাও। ”

মেয়েটা জুভানের এতো রাগ দেখে একটু ভরকে গেলো। তবুও নিজের আহ্লাদী গলায় বললো,

” ওহ। কাম অন জুভান বেবস। লেটস এনজয় । হোয়াই শুড আই লিভ নাও ? সি, ইটস টু আর্লি। ”

বলেই মেয়েটা থাই গ্লাসের দিকে ইশারা করল। থাই গ্লাস থেকে দেখা যাচ্ছে এখন ভোরের রং ফুটতে দেরি আছে। কিন্তু জুভান সেদিকে তাকালো না। কারন সে যেহেতু বলেছে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে মানে এক্ষণি বেরিয়ে যেতে হবে। এই নিয়ে আর কোনো অতিরিক্ত কথা সে মোটেও পছন্দ করবে না। জুভান তাই রেগে গেলো। চোখ কঠিন করে মেয়েটার কাছে গিয়ে ওর চুলের মুঠি শক্ত করে ধরলো। সঙ্গেসঙ্গে চুলের গুড়ির ব্যাথায় মেয়েটা ” ওহ ” করে উঠলো। জুভাণ সেসব পাত্তা না দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

” আমি যখন বলেছি চলে যেতে , তখন তোর সাহস কি করে হয় আমার মুখের উপর না বলার। বল ? কথা শুনাস আমাকে ? এই ইজহার জুভান মির্জা কে ? জানিস না আমি তোর কি হাল করতে পারি ? ”

মেয়েটা ভয় পেয়ে গেল জুভানের এইরূপ দেখে। এইরকম কঠোর মানুষ সে এ জন্মে দুটো দেখেনি। কিন্তু যতটা ও জানতো জুভান একজন নরম মনের মানুষ। মিডিয়া আর নিউজ পেপারে এই ইজহার জুভান মির্জার উদারতা এর খুব প্রশংসা। তাহলে এই কোন লোক কে দেখছে ও ? জুভান আবার চুলের মুটি ধরে জোড়ে টান দিলে মেয়েটা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে। বিদেশি ওই মেয়ে বারবার হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে লাগলো। জুভান একটু পর নিজেই মেয়েটার চুল ছেড়ে দিল। মেয়েটা ওর থেকে ছাড়া পেয়ে চটজলদি কাপড় গায়ে দিয়ে জুভানের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।

জুভান মেয়েটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললো,

” সকল মিডিয়া সব গণমাধ্যম জানে আমি একজন হিরো। যার মনখুব বিশাল। কিন্তু কেউ টা জানে না যে সত্যিকার অর্থে আমি একজন ভিলেন। আর না তারা কখনো জানতে পারবে। কারন এই মির্জা যা লুকোতে চায় তা প্রকাশ করার সাধ্য কারোর নেই। কারোর না। ” ”

বলেই বাম হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে নিজের কপাল চুলকালো জুভান।

_________________

” তারপর ? ”

” তারপর আমি আর আপনি একসাথে হাঁটবো নদীর তীর ধরে। বাতাসে আমার চুল আপনার মুখের উপর পড়তেই আপনি মুগ্ধ হয়ে তাকাবেন। আর আমি সেই ভয়ংকর চাহনি উপেক্ষা করে আনমনে হাঁটতেই থাকবো। কখনোই থামবে না আমার এই পথচলা। কারণ আপনার এই ভয়ঙ্কর চাহনি আর যায় হোক আমি সহ্য করতে পারবো না কখনও। কখনোই না। বুঝলেন গায়ক মহাশয়? ”

বলেই ঐশী খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। হাসির প্রভাবে চঞ্চল হয়ে উঠলো ঐশীর ওই দু নয়ন।

” এই ঐশী , এই ? কি হয়েছে তোর ? এই ঐশী ? ”

কারো হাকডাক শুনে ঐশী পিটপিট করে চোখ খুলল। ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে ও দেখলো ওর মুখের উপর ঝুঁকে আছেন ঐশীর মা কাঞ্চনা আক্তার। মাকে এভাবে ডাকতে দেখে ঐশী যারপরনাই বিরক্ত হলো। ও নাক মুখ কুঁচকে বললো,

” ডাকলে কেনো ? কি সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম। আমি শান্তিতে ঘুমালে তোমার ভালো লাগে না , তাইনা আম্মি ? ”

ঐশীর মা রাগে ড্রয়ারের দিকে এগিয়ে গেলেন। কাপড় কয়েকটা হাতে নিয়ে ভাজ করতে করতে বললেন,

” না। ভালো লাগে না আমার। ঘুমিয়ে এরকম ফিসফিস করে হাসলে সেটা দেখতে কারোরই দেখতে ভালো লাগেনা। প্রতিদিন কি এমন স্বপ্ন দেখিস তুই যে এত হাসতে হয় তোকে ? বলতো একবার। ”

ঐশী উত্তর দিলো না। কারন ওর মনটাই খারাপ হয়ে গেছ। এতক্ষণ যা দেখছিল সব স্বপ্ন ছিল ? ইসস বাস্তব হলে কি হতো তবে ? কি খুশি হতো তখন ঐশী। ভাবতেই রোমাঞ্চকর লাগছে ওর কাছে।

ঐশী মুখ গোমড়া করে ওয়াসরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে ওর ফোনে পাঁচটা কল। সব ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু জান্নাতের। ঐশী বিছানার উপর থেকে ফোন নিয়ে কল ঘুরালো। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হলে ঐশী বলে,

” আজ হুট করে এত কল ? কিছু কি হইসে ? ”

জান্নাত উচ্ছসিত গলায় বললো,

” আরে দোস্ত, একটা খুশির খবর আছে। শুনবি। ”

ঐশী ফুস করে এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,

” না, বললেও তো তুই বলবিই। ”

” আচ্ছা বাদ দে। শুন। একটা গানের রিয়েলিটি শো আছে। শুনছি সেই শোতে জাজ হিসেবে নাকি জুভান মির্জাও থাকবে। তোর তো গানের গলা ভালো। যাবি ওই শো তে ? ”

ঐশী অবাক হলো। মির্জা !! ঐশী ঠোঁট কামড় বেশ কিছুক্ষন ভাবলো। অতঃপর বললো,

” বাবা রাজি হবে ? ”

” তুই রাজি কিনা বল। তুই রাজি হলে আঙ্কেল এমনিই রাজি হয়ে যাবে। ”

ঐশী বেশ খানিকটা ভেবে বললো,

” ঠিক আছে। ”

জান্নাত শো এর ডিটেইলস বলে ফোন রেখে দিল। ঐশী ফোনটা বিছানার উপর রেখে দিয়ে ভাবলো , ও কি ঠিক কাজ করছে ? এভাবে একটা শো তে পার্টিসিপেট করা কি ওর উচিত হচ্ছে ?

কিন্তু কে জানত ঐশীর জীবন এই গানের রিয়েলিটি শো এর কারণে অন্য দিকে মোড় নিবে।

#চলবে কি ?

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

এতোটা বছর যার ভালোবাসা মনে লালন করেছিল আজ তাকে আরেকটা মডেলের সাথে খুব প্যাশনেটলি লিপ কিস করতে দেখে বুকটা ছেত করে উঠলো ঐশীর। শো তে এসেছিল ও। ভেবেছিল গানের তালে তালে এই জুভান মির্জা সম্পর্কে আরো জানতে পারবে। কিন্তু এতো বেশি যে জেনে যাবে সেটা ঐশী কল্পনাও করিনি। জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা ছিল এটা। হুট করে সেই চুম্বনরত মডেল টা ঐশীকে লক্ষ্য করে। সাথেসাথে এক ছিটকে সরে আসে জুভানের থেকে। হয়তো নিজের ক্যারিয়ারের ভয় পাচ্ছে। কখন কি লিক হয়ে যায় বলা তো যায়না। ঐশী ব্যপারটা বুঝতে পেরে থতমত খেয়ে যায়।
নিজের কাজে বাঁধা পড়ায় জুভান খুব বিরক্ত হয়। মুখ থেকে বিরক্তিসূচক শব্দ বের করে বলে ,

” হোয়াটস রং ? ”

মেয়েটা আঙুল দিয়ে ঐশীর দিকে ইশারা করে। ঐশী এতে বিব্রতবোধ করে। নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করতে গেলে জুভান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে এবার মেয়েটার কাছে চলে আসে। ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলে,

” শী ইজ জাস্ট অ্যা কন্টেস্টেন্ট। লেট মি ডো মাই ওয়ার্ক। ডোন্ট বোদার মি। ”

বলেই জুভান আবার মেয়েটার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়। যেনো ঐশীর উপস্থিতি এই স্থানে খুব নগণ্য। ঐশী পুরো ব্যাপারটাই খুব কষ্ট পায়। কেন পায় সে নিজেও জানে না । নিজেকে খুব কষ্টে সামলে নিয়ে সেই জায়গা ছেড়ে মেকআপ রুমে চলে এলো। টেবিল থেকে সাইড ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেল মেকআপ রুম থেকে। চুলোয় যাক এই শো। করবে না ও এই শো তে পার্টিসিপেট। রাগে দুঃখে কান্না আসছে ওর। কিন্তু কেনো আসছে জানেনা। ঐশী জানে সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে এটা খুব স্বাভাবিক। ও কোথাকার এক সাধারণ মেয়ে। ওর দ্বারা জুভান মির্জার মতো এত বড় সেলিব্রেটি কে নিয়ে এসব চিন্তা মানায় না। একদমই না। কিন্তু মনের উপর তো কারো হাত নেয়। মন তো এক লাগামহীন পাখি । যখন তখন নিষিদ্ধ কারো জন্যে নিজের সূখ ডানা ঝাপটায়।

তবে ঐশীর মনে এক সন্দেহ এসেছে। ও তো এতদিন জানতো জুভান মির্জার মধ্যে মেয়ের কোনো নেশা নেই। সম্পূর্ণ পিউর একটা ছেলে। সবার থেকে আলাদা। তাহলে আজ এটা কি ছিল ? তাহলে মিডিয়াতে এই মির্জা সম্পর্কে যা বলা হয় সব মিথ্যা ? সব ? লাল হুড তোলা রিকশায় বসে এসব ভেবে অনবরত চোখের জল হাত দিয়ে মুছে যাচ্ছে ঐশী। রিক্সাওয়ালা লোকটা বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে ওর দিকে। হয়তো ভাবছে প্রত্যেকদিন একটা না একটা মেয়ে এই রিক্সায় বসে কেঁদে কেটে জোয়ার ভাসায়। আজকালকার ছেলেপুলের যে কি আবেগ। ভাবা যায় !!

_____________________

ঐশী বাড়িতে এসে দরজায় কলিং বেল বাজায়। তার মা কাঞ্চনা আক্তার রান্নাঘর থেকে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এসে দরজা খুলে দেন। কিন্তু ঐশীকে এরকম বিধ্বস্ত হতে দেখে তিনি একটু ভরকে যান। তবে সেটা বাইরে প্রকাশ না করে কাঠকাঠ গলায় বললেন,

” কি হয়েছে তোর ? এরকম পাগলের মত বাসায় আসলি কেনো ? শো শেষ ? মাত্রই তো গেলি। ”

ঐশী এতগুলো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে এসে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিল। সাইড ব্যাগটা বিছানার ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিছানার কোন গেশে বসে পড়লো। দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্নার ফোয়ারা বইয়ে দিল ও। ও খুব ভালো করে বুঝতে পারছে এই মির্জা সাহেব একজন সেলিব্রেটি। তাকে মন প্রাণ দিয়ে চাইতে তো কোনো দোষ নেই। আজ জুভান কে এভাবে দেখে ঐশী সহ্য করতে পারেনি। একদমই সহ্য করতে পারে না সে জুভানকে অন্য করো সাথে।

কিছুসময় পর ঐশির ফোন বাজছে। ঐশী চোখ মুখ মুছে ফোন রিসিভ করে কানে লাগালো ওপাশ থেকে জান্নাত তরিগরী করে বলছে,

” এই কুত্তা কই তুই ? পুরো স্পট জুড়ে তোকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কই গিয়ে মরলি ? ”

ঐশী থেমে থেমে বললো,

” বাসায় চলে এসেছি আমি। ”

” মানে ? বাসায়? কেনো ? বারবার তোর কথা এনাওন্স করা হচ্ছে। আর তুই এখন বাসায় ? ”

” আমি এই শো করবো না। আর প্লিজ কারণ জিজ্ঞেস করবি না। ”

” মানে ? তুই ঠিক আছিস ? করবি না মানে ? হটাৎ কি হলো তোর ? ”

” আমি বলছি করবো না মানে করবো না। এত প্রশ্নের তো কিছু দেখছি না আমি। ”

জান্নাত আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঐশী ফোন কেটে দিয়ে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিল। কিছুই ভালো লাগছে না তার। সব কিছু দুর্বিষহ লাগছে। সব কিছু তছনছ করে দিতে মন চাইছে ওর। সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।

______________________

” স্যার। আজকে কি কোনো মেয়ে পাঠাবো ? ”

অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহাদাতের কথা শুনে ভ্রু কুচকালো জুভান। ল্যাপটপের থেকে মুখ্ তুলে দেয়ালে রাখা নিজের বৃহৎ ফটোফ্রেমের দিকে তাকালো। গম্ভির গলায় বললো,

” হুম। পরশু আমার জন্যে প্লেনের টিকেট কেটে রেখো। ঢাকার বাড়িটায় যাবো। ”

শাহাদাত তৎক্ষণাৎ মোবাইল ডাটা অন করে অন্য ফোন চেক করে নিল। নাহ। পায়নি সে। শাহাদাত ফোনটা টেবিলে রেখে দিয়ে বলে,

” স্যার , আগামি সাত দিন কোনো প্লেনের টিকেট নেই। ঈদের জন্যে সব বুক হয়ে গেছে। ”

জুভান মুখ কুচকে ফেললো। একটাও টিকেট নেই। কেমন সিস্টেম এটা। সে বিরক্ত হয়ে বললো,

” ইটস আর্জেন্ট। ”

শাহাদাত মাথা চুলকে বললো,

” স্যার। আই অ্যাম সরি। একটাও টিকেট খালি নেই। তবে আপনি বাসে যেতে পারেন। আজকাল ভালো বাস পাওয়া যায়। কোয়ালিটিও খুব ভালো। ”

জুভান কোনো উপায় না পেয়ে বলে,

” ঠিক আছে। তবে খেয়াল রাখবে ভালো বাস কিন্তু। ”

” জ্বী স্যার। অবশ্যই। ”

জুভান অতিরিক্ত সময় ব্যয় না করে ফোন কেটে দিলো। এই লোকটি আসলেই এক্সট্রা কথা বলে। তবে সব কাজের ব্যাপারে সিরিয়াস। তাই তো এখনো জুভানের সাথে টিকে আছে। জুভান আবার ল্যাপটপে মন দিল। কয়েকদিন পর একটা বড় গানের প্রজেক্ট আছে। তাই এখন মন সৌর কাজ করতে হবে।

শাহাদাত নিজের কম্পিউটার দিয়ে ” লন্ডন এক্সপ্রেস ” বাসের একটা টিকেট কেটে ফেললো। আবার সেই বাসের ম্যানেজারের সাথেও কথা বলে নিল । যাতে তার স্যারের কোনো অসুবিধে না হয়। নাহলে দেখা যাবে সবকিছু বেঠিক পেয়ে স্যার মহাশয় তারই ঘাড় মটকে দিলো। অসম্ভব কিছু নয়।

#চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here