তোমার_আমার_প্রণয় #israt_jahan_arina #part_32

0
851

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_32

বিকেলের হালকা রোদের মাঝে মাহাদের গায়ের শার্ট টা ভিজে ছুপ ছুপ করছে।দৃশ্য দের এলাকা থেকে বের হয়ে তারা একটা টঙের দোকানে বসলো।রাফসান দ্রুত একটা পানির বোতল নিয়ে এসে মাহাদ কে পানি খাওয়ালো।সকলেই মাহাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারছে।দৃশ্য মাহাদের জন্য কি সেটা সবাই জানে।তানিম বললো

-“মাহাদ আগে একটা ফার্মেসিতে চল। নাক দিয়ে এখনো ব্লিডিং হচ্ছে।”

মাহাদ মাথা নেড়ে না বলে বোতলের পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিল। বুকের ভেতরটা কেমন দাউদাউ করে জ্বলছে। দৃশ্যর পরিবারকে এ মুহূর্তে তার মানুষ বলে মনে হচ্ছে না। নিজের উপরই ভীষণ রাগ হচ্ছে। তারা বাবাকে এত অপমান করার পরও সে নিজের সব ইগোকে সাইডে রেখে নিজে গেলো দৃশ্যের বাবার সাথে কথা বলতে। সেখানেও তারা এমন ব্যাবহার করলো?এতো কিসের ইগো তাদের?দৃশ্যর মতো একটা মেয়ে ওই পরিবারে কি করে জন্মালো?এতো কিছুর পরও তারা কি করে দৃশ্যর ফুপির মৃত্যুর জন্য তার পরিবারকেই দায়ী করে?তারা নিজেরাই তাকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে সেটাকী জানেনা? মাহাদের এই মুহূর্তে ভয় হচ্ছে।দৃশ্য ভীষণ ইমোশনাল মেয়ে।দৃশ্য আবার তার ফুপির মতো কোনো ভুল ডিসিশন না নিয়ে ফেলে।এই মেয়েটাকে ছাড়া সে কিছুতেই ভালো থাকতে পারবেনা।তার জীবনের প্রথম নারী দৃশ্য।প্রথম অনুভূতি দৃশ্য।আর এই মেয়েটাই হবে তার জীবনের শেষ নারী।তার জন্য যা করা লাগে তাই করবে সে।

আনিকা কবির এতদিন ধরে সব দেখছিলেন।কিন্তু মেয়ের জন্য কিছুই করতে পারেননি।ঠিক যেমনটা দিশার জন্য পারেনি।মেয়েটা তার কোলে মাথা রেখে কতো কেঁদেছিল।ভাইকে বোঝানোর কথা বলেছিল।আনিকা কবির আগে থেকেই স্বামীকে ভীষণ ভয় পেতেন। কারণ স্বামীর সকল হিংস্র রূপ তিনি দেখেছেন। একদিন অনেক সাহস নিয়ে দিশা আর আরিফের বিষয়ে বলেছিলেন তিনি। আশরাফ হুসাইন রেগে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছিলেন তার গালে। স্বামীর কাছে তিনি কখনোই যোগ্য সম্মান পাননি। কিন্তু নিজের মেয়ের সাথে সেই একই জিনিস রিপিট হতে দেখে তিনি ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছেন। ভালোবাসার মর্ম তো কোনদিন এই লোকটা বুঝতেই পারেনি। এতগুলো বছরের কোন দিন স্বামীর কাছে ভালোবাসা যে পাননি তিনি।

আরিফ রহমানের রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। মাহাদের মুখে আঘাতের চিহ্ন দেখে তিনি অস্থির হয়ে উঠেছেন।তানিমের কাছে দৃশ্য দের বাসার সব ঘটনা জেনে রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।মানুষ এতো খারাপ কি করে হয়ে পারে?তারা দিশাকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।আর এখন মাহাদের জীবন থেকেও সুখ কেড়ে নিতে চাইছে তারা?এটা কিছুতেই হতে দিবে না।বাসা থেকে বেরিয়ে সে সোজা চলে গেলো আশরাফ হুসেনের পার্টি অফিসে।আশরাফ হুসাইন তখন একটা মিটিংয়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।ঠিক সেই মুহূর্তেই আরিফ তার কেবিনে প্রবেশ করে।বিক্ষিপ্ত আরিফকে দেখে আশরাফ হুসাইন এক পৈশাচিক আনন্দ পায়।

আশরাফ হোসেন সবসময়ই ক্ষমতালোভী। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে যুক্ত। আজকের এই অবস্থানে আসতে তাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। ঠিক কত মানুষের বিসর্জন দিয়ে সে এই ক্ষমতায় এসেছে তা নিজেও জানেন না। আমজাদ রহমানকে তিনি কখনোই পছন্দ করতেন না। কারণ আমজাদ রহমান ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আমজাদ রহমানের বাবা ছিলেন তুখোড় রাজনীতিবিদ। তাকে সকলেই ভীষণ পছন্দ করত। তাইতো বাবার পরে খুব সহজেই আমজাদ রহমান ক্ষমতায় আসতে পেরেছেন। আমজাদ রহমানের লোক পরিচিতি ও কম ছিলনা। তিনি সবসময়ই মানুষদের কষ্টকে বুঝতেন এবং তাদের সাহায্য করতেন। যার কারণে লোকেরা তাকে ভীষণ পছন্দ করত। সেখানে স্বার্থপর আশরাফ হোসেন কিছুতেই নির্বাচনে জয়ী হতে পারছিলেন না। আমজাদ রহমানকে রাস্তা থেকে সরানোর অনেক চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু আমজাদ রহমান অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তার একটা চুল বাঁকা করার সামর্থ্য আশরাফ হোসেনের ছিল না। আমজাদ রহমান নিজে থেকে রাজনীতি থেকে সরে না গেলে তার পক্ষে কখনই জয়ী হওয়া সম্ভব ছিল না।কিন্তু যেদিন তার নিজের ছোট বোন দিশার জন্য আমজাদ রহমান তার কাছে মাথানত করেছিল সেদিন কি যে আনন্দ হয়েছিল সেটা বলে বোঝানো সম্ভব না। নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী কে এভাবে মাথা নত করতে দেখে তিনি এক অসীম আনন্দ উপভোগ করেছেন। নিজের ক্ষমতা জাহির করার জন্য আর আমজাদ রহমান ও তার ছোট ভাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি দিশাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এত সবের মাঝে তার নিজের বোনটাই যে শেষ হয়ে যাচ্ছিল সে দিকে তার বিন্দুমাত্র নজর ছিল না। আবার আজ এতো বছর পর সেই মানুষগুলোকে তার কাছে আবার হাত জোর করতে দেখে তিনি ভীষণ আনন্দ পাচ্ছেন।
আরিফকে এখানে দেখেই তিনি বাঁকা হাসলেন।আর বললেন

-“তুমি এখানে,কি চাই?”

আরিফ রাগে টেবিলে থাপ্পড় দিয়ে বললো
-“আপনি কি জীবনে মানুষ হবেননা?এই ভাবে বাচ্চা গুলুকে কষ্ট দিয়ে কি পাচ্ছেন?নিজের মেয়ের চিন্তাও কি আপনার নেই?সে মাহাদকে পাগলের মতো ভালোবাসে সেটাকী আপনার চোখে পড়েনা?”

আশরাফ হুসাইন গম্ভীর স্বরে বললেন
-“আমার মেয়েকে নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবে না।বরং নিজেদের ছেলেকে সামলাও।আমার মেয়েকে ফুঁসলিয়ে ফাসলিয়ে কোনো লাভ নাই।মেয়ের মাথা থেকে ওই ছেলেকে কি করে বের করতে হবে সেটা আমার ভালই জানা আছে।তোমাদের বংশের ছেলেরা আমাদের বাড়ির মেয়েদের পেছনে কেনো কুত্তার মতো পড়ে থাকে?”

আরিফ অবাক না হয়ে পারে না। এ কেমন বাবা?নিজের সন্তানের প্রতি ও কি কোনো মায়া কাজ করে না?আরিফ রেগে বললো

-“আপনার মত অমানুষ আমি আমার জীবনেও দেখিনি।নিজের বোনের জীবনটা নষ্ট করে এখন নিজের মেয়ের জীবনটা শেষ করতে চাইছেন?আরে আপনার মতো মানুষকে আল্লাহ সন্তান কেনো দিয়েছে? যে সন্তানের সুখ বিসর্জন দিয়ে ইগো কে প্রাধান্য দেয় তাদের সন্তানের বাবা হওয়ার যোগ্যতা নেই।”

-“মুখ সামলে কথা বলো আরিফ।তুমি যেমন বেয়দব তোমার ভাইয়ের ছেলেও বেয়াদব।রাস্তা ঘাটে আমার মারামারি করে বেড়ায়।আমার ছেলেকে তিনদিন হসপিটালে শুইয়ে দিয়েছিলো।তাই ওই বাড়িতে আমি আমার বোনকে দেইনি আর না দিবো দৃশ্যকে।”

-“আপনার মতো মানুষের কাছে এর চাইতে বেশি কিছু আশাই করা যায় না। মাহাদ যদি অযোগ্য ছেলে হতো তাহলে সব মেনে নিতাম।কিন্তু ওর মতো যোগ্য ছেলে আপনি দৃশ্যর জন্য আর একটাও খুজে পাবেনা।দিশাকে যেমন এক জানোয়ারের কাছে তুলে দিয়েছেন।দৃশ্যকে ও তেমন জানোয়ারের কাছেই দিবেন।কিন্তু সেটা আমি হতে দিবো না।”

আশরাফ হুসাইন কপট রেগে বললেন
-“আমার মেয়েকে আমি যার কাছে খুশি তার কাছে দিবো,তোদের পারমিশন নিবো না?আর তোর সাহস কম না একজন মেয়রের অফিসে এসে এমন ব্যাবহার করছিস?জানিস আমি কি করতে পারি?”

-“সাহসের দেখেছেন কি? এই সাহস আগে দেখালে আমার দিশা আজ আমার পাশে থাকতো।আর বাকি রইলো দৃশ্যর কথা।দৃশ্য শুধু মাহাদের বউ হবে।পারলে আটকে দেখান।আর আপনার মতো দুই টাকার মেয়র কে আমার ভাই পকেটে নিয়ে ঘুরে।রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে আজও লোকেরা আমার ভাইকে সালাম করে।আরে আপনার মতো মেয়রকে দুই মিনিটেই আমরা পায়ের তলায় পিসে ফেলতে পারি।আমার ভাইয়ের ক্ষমতা সম্পর্কে আপনার চাইতে বেশি কে জানে বলেন?
আমার ভাই রাজনীতি থেকে সরে না আসলে এই জীবনে আর আপনার মেয়র হওয়া সম্ভব ছিলো না।আরে আমার ভাইতো আপনাকে এই ক্ষমতা ভিক্ষা দিয়েছে।ভিক্ষা।নাহলে রাস্তার কুত্তাও আপনাকে চাটতো না।আমার ভাই নিতান্তই ভালো মানুষ বলে তাকে সেদিন অপমান করতে পেরেছেন।নাহলে আপনার এই ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে আমার ভাইয়ের এক মিনিটও লাগবে না।”

আশরাফ হুসেনের গা রাগে রি রি করে উটছে।এতো অপমান তিনি কিছুতেই হজম করতে পারছে না।তিনি রেগে বললেন

-“বেরিয়ে যা এখান থেকে।তোর ভাইয়ের ছেলেকে যদি কোনোদিন দেখি আমার মেয়ের পিছে কুত্তার মত ঘুরতে সেইদিন হবে তার শেষ দিন।”

-“মাহাদের গায়ে ফুলের টোকা দিয়ে দেখেন?আপনার রাজনীতি খেলার শখ চিরতরে ঘুচিয়ে দিবো।আপনার সব কুকর্ম প্রকাশ করতে আমার এক মিনিটও লাগবে না।আপনি কেমন দুর্নীতিবাজ সেটা সবাই জানে।রাস্তায় এনে দার করাবো আপনাকে। জেলের ভাত খেলে একদম সোজা হয়ে যাবেন।শুধু মাত্র আমার ভাইয়ের জন্য কিছু বলছিনা।তবে আগে আমি যেটা করতে পারিনি প্রয়োজনে এবার সেটাও করবো।এই বাচ্চা গুলিকে কোনো কষ্ট পেতে দিবো না।”

কথা গুলি বলে আরিফ বেরিয়ে গেলো।আর কয়েক মিনিট থাকলে এই লোকের গায়ে হাত তুলে ফেলবে আরিফ।আজ আফসোস হচ্ছে।দিশার জন্য এই ভাবে প্রতিবাদ করলে দিশা তার পাশে থাকতো।তাদের একটা সুন্দর সংসার হতো।
আশরাফ হুসাইন রাগে কেবিনে কিছুক্ষণ ভাঙচুর করলেন।এতো অপমান তাকে কেউ কোনোদিন করে নি।আজ শুধু মাত্র মেয়ের জন্য এই সব সহ্য করতে হলো।

দৃশ্য আজকাল লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না।কি করে পারবে?যেখানে মন বিক্ষিপ্ত সেখানে মনোযোগ আসবে কি করে?তার সাথে এমন কেনো হচ্ছে?ভালোবাসা কি অপরাধ?ভালোবাসায় এতো যন্ত্রণা কেনো?প্রিয় মানুষটিকে হারাবার ভয় এতো প্রখর কেনো হয়?ভালোবাসা তো আর বলে কয়ে আসে না। ব্যাস হয়ে যায়।

সেই ঘটনার পর আরিফ মাহাদকে ঢাকায় নিয়ে আসে।আসলে সে চাচ্ছে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হোক।রাগের মাথায় কোনো ডিসিশন নেওয়া ঠিক হবে না। মাহাদের সাথে দৃশ্যর আজ কয়কদিন যাবত কথা হয় না।দৃশ্যর ফোনটা তার ভাই সেইদিন ভেঙে ফেলেছিল। মাহাদ পর দিনই দৃশ্যকে ফোন কিনে দেয়।নাবিলার মাধ্যমে দৃশ্য কাছে পৌঁছায়।আর সেটা লুকিয়ে ব্যাবহার করতে বলে। মাহাদ অনেক কল মেসেজ দিয়েছে।কিন্তু দৃশ্য কোনো রেসপন্স করছে না।দৃশ্যর বাসায় কোনো সমস্যা হলো কিনা তা নিয়ে সে ভীষণ চিন্তিত।সে ঢাকা আসর আগে দৃশ্যর সাথে কথা হয়।দৃশ্য বলেছে সব ঠিক আছে। শুধু বাবা আর ভাইয়া তার সাথে কথা বলছে না। এর পর থেকে দৃশ্য তাকে ইগনোর করতে শুরু করেছে।আগে 1স্ট কল করতেই রিসিভ হতো।ধীরে ধীরে দৃশ্য তার কল কম রিসিভ করে।দশবার রিং হলে একবার রিসিভ করে।আর কয়দিন ধরে দৃশ্য কল রিসিভ করছে না।ফোন নিয়ে ধরা খেলে তো ফোনটা বন্ধ পেতো।কিন্তু তেমন না।ফোনটা অন।রিং হয় কিন্তু দৃশ্য রিসিভ করে না।মেসেজ সিন হয় কিন্তু রিপ্লাই দেয়না। মাহাদের মাথা যেনো পাগল হবার দশা।নাবিলা ও তার কল রিসিভ করছে না।

সে রাজশাহীতে যেতে চাইলে আরিফ তাকে নানা কথায় আটকে রাখে।আসলে আরিফ রহমান মাহাদকে নিয়ে চিন্তায় আছেন। মাহাদ সেখানে গেলে আশরাফ হুসাইন যদি তার ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাই।তিনি চাইছে পরিস্থিতি কিছুটা সাভাবিক হলে তিনি কোনো পদক্ষেপ নিবেন।

সারাদিন লেখাপড়া, ক্লাস,গান নিয়ে থাকলেও রাতটা কাটে মাহাদের বিষাদে।নিজেকে আর কিছুতেই ধরে রাখতে পারছে না।দৃশ্যর উপর ভীষণ রাগ জমা হচ্ছে।মেয়েটা তাকে কি করে ইগনোর করতে পারে?যুদ্ধের আগে এই ভাবে দৃশ্য কিছুতেই হার মানতে পারে না। মাহাদ কাউকে না জানিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্য রওনা দেয়।আর এক দিনও সে দৃশ্য সাথে কথা না বলে থাকতে পারবে না।

মাহাদ দাড়িয়ে আছে দৃশ্যর কলেজের সামনে।অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর মাহাদ দেখা পায় প্রিয়তমার।নাবিলার সাথে কথা বলতে বলতে আসছে।মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে।মেয়েটা কি ঠিক মতো খায়না?এমন শুকিয়ে গেছে কেনো?
দৃশ্য সামনে এগুতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো।দৃশ্যর পা থমকে গেলো।দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা চমকে গেছে।কয়েক সেকেন্ড দাড়িয়ে দৃশ্য মাহাদেকে ইগনোর করে কলেজে ঢুকে গেলো। মাহাদ পুরো অবাক।দৃশ্য তাকে দেখেও না দেখার ভান করলো কেনো? মাহাদ আবার দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো দৃশ্যর কলেজ ছুটি হবার।দৃশ্যর কলেজ ছুটি হলো দুপুর দুটোয়।এই রোদের মাঝে দাড়িয়ে মাহাদের গায়ের জামাটাও ঘামে ভিজে গেছে।দৃশ্যর কলেজ ছুটির পরও দৃশ্য একই কাজ করলো। মাহাদের ভীষণ রাগ হচ্ছে।সে দ্রুত দৌড়ে পেছন থেকে দৃশ্যর হাত ধরে বললো

-“সমস্যা কি তোমার?আমাকে ইগনোর কেনো করছো?”

দৃশ্য কিছু না বলে হাত ছাড়াতে চাইলে মাহাদ আরো জোড়ে চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো আর কোমল কন্ঠে বললো

-“কি হয়েছে পিচ্ছি বলো?আমার কল কেনো ধরছো না?মেসেজ রিপ্লাই করছো না?বাসায় কেউ কিছু বলেছে?আমাকে বলো আমি সব ঠিক করে দিবো কিন্তু তোমার ইগনোর সহ্য করতে পারবো না।”

নাবিলা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।দৃশ্য সেই দিকে তাকিয়ে বললো

-“আমার হাত ছারো।রাস্তা ঘাটে এটা কোন ধরনের অসভ্যতা?”

-“দৃশ্য কি হয়েছে বলবে প্লিজ?এমন কেনো করছো?”

-“কিছুই হয়নি।হাত ছারো।”

-“ছাড়বো না।আগে বলো আমাকে ইগনোর কেনো করছো?”

দৃশ্য মাহাদকে জোর করে ধাক্কা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো
-“আমাকে এখন যেতে হবে।আল্লাহ হাফেজ।”

কথাটা বলে দৃশ্য চলে গেলো।
মাহাদ অবাক হয়ে দৃশ্যর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা এমন কেনো করছে?সে কি বুঝতে পারছে না মাহাদ কতটা কষ্ট পাচ্ছে তার বিহেভে?

বিকেলে মাহাদ আবার দৃশ্যর কোচিং এর সামনে অপেক্ষা করতে থাকে।দৃশ্য তখনও মাহাদের সাথে কথা বলে নি।কষ্টে মাহাদের বুকটা ফেটে যাচ্ছে।দৃশ্যর এই পরিবর্তন মাহাদ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। অপর দিকে তার চাচু কল করে অনেক বকা ঝকা করে এখন রাজশাহীতে যাওয়ার কারণে।আজ প্রায় সপ্তাহ খানেক হলো মাহাদ প্রতিদিন দুইবার করে দৃশ্যর জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করে কথা বলার জন্য।কিন্তু দৃশ্য তাকে ইগনোর করে চলে যায়।

আজ বিকেলে দৃশ্য কোচিং করতে আসলে মাহাদ রাগী চোখে দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে তার হাত ধরে নিয়ে যায় সামনের গলির দিকে।সেখানে এনে রেগে দৃশ্যকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।বোঝা যাচ্ছে দৃশ্য হাতে ব্যাথা পাচ্ছে। মাহাদ রেগে বললো

-“আমাকে ইগনোর কেনো করছিস?আমাকে মানুষ বলে মনে হয়না তোর? এই ভাবে যন্ত্রণা কেনো দিচ্ছিস?আমি পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি সেটা বুঝতে পারছিস না?”

দৃশ্য কপাল কুঁচকে বললো
-“আমার হাত ছারো মাহাদ।যখন তখন হাত ধরবে না।আমি ব্যাথা পাচ্ছি।”

-“আর আমি যে ব্যাথা পাচ্ছি সেটা কি?আজ সাতটা দিন ধরে সকাল বিকাল তোর জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে থাকছি আর তোর কোন পাত্তাই নাই?”

দৃশ্য আবার রেগে বললো
-“আমি বলেছি দাড়িয়ে থাকতে?কেনো দাড়াও?আমাকে রাস্তা ঘাটে ডিস্টার্ব করা বন্ধ করো।”

মাহাদ অবাক হয়ে বললো
-“আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করি?”

দৃশ্য রেগে বললো
-“হে করো।আমার পেছনে কুকুরের মতো ঘুরা বন্ধ করো।তুমি কি বুঝতে পারছো না আমি তোমার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখতে চাইছি না।”

দৃশ্যর কথায় মাহাদ অবাক হয়।বুকটা ধ্বক করে উঠে।তার সামনে দাড়ানো মেয়েটা কি আদো দৃশ্য?এমন কথা তার মুখ দিয়ে কি করে আসতে পারে?বুকটা কাপলোনা তার?সে অস্থির হয়ে দৃশ্যর দুই চিবুকে আলতো ছুয়ে বললো

-“পাগল হয়ে গেছো তুমি?কি বলছো এসব?বাসায় কেউ তোমাকে কিছু বলেছে?কোনো ভয় দেখিয়েছে?বলো আমাকে?”

দৃশ্য মাহাদের হাত ছড়িয়ে বললো
-“আমাকে কেউ কিছু বলে নি।আর না ভয় দেখিয়েছে।আমি নিজেই রেয়েলাইজ করেছি আমি তোমাকে ভালবাসি না।সব ছিলো আবেগ।ছোট বয়সের আবেগ।যেটা সময়ের সাথে সাথে শেষ হয়ে গেছে।তাই আমার পিছু নেওয়া বন্ধ করো।অন্য কাউকে জীবন সঙ্গী করে নাও।যে তোমাকে সত্যি ভালোবাসতে পারবে।”

মাহাদ কিছুই বলতে পারছে না।কাপা কাপা গলায় বললো
-“ফে…ফ্যামিলি প্রেসারে তুমি এগুলো বলছো তাই না?প্লিজ দৃশ্য তুমি ভয় পেও না।আমি সব ঠিক করে দিবো জান।”

দৃশ্য কপট রাগ দেখিয়ে বললো
-“সহজ বিষয় কেনো বুঝতে পারছো না?আমি তোমাকে ভালোবাসি না।এই সব আমার ইনফেছুয়েশন ছিলো।আমি এখন আর তোমাকে ফিল করি না।তাই প্লিজ এইসব ভুলে যাও।আর আমাকে ডিস্টার্ব করবে না।নাহলে ইফটিজিং এর মামলা করবো।”

মাহাদ এই দৃশ্যকে কিছুতেই চিনতে পারছে না।সত্যি কি সব আবেগ ছিলো? ছোট বয়সের আবেগ?দৃশ্য কি সত্যি তাকে ভালোবাসে না?আবেগ কি এতো প্রানবন্ত হয়?এতো বছরের সম্পর্ক কি শুধু মাত্র আবেগ দিয়ে চলছিল?এটা কি আদো বিশ্বাসযোগ্য?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here