তোমার_আমার_প্রণয় #israt_jahan_arina #part_42

0
897

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_42

আমরা মানুষরা অনেক বেশি অদ্ভুত।রাগ,জেদ,ইগো আমাদের অন্ধ করে দেয়।তখন ভালো খারাপ চোখে পড়েনা।ফাহিমের আজ আফসোস হচ্ছে।ভীষণ আফসোস।সে তার ছোট্ট বোনটাকে কেনো বুজলো না।বোনটা এতদিন ধরে ধুকে ধুকে মরছিলো কেনো দেখলো না সে।আর আজ চাইলেও সব ঠিক করা সম্ভব না। মাহাদের জায়গাতে সে থাকলেও পারতোনা।

এক পলক তাকালো বিছানায় অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা দৃশ্যর দিকে।মুখটা কেমন শুকিয়ে আছে।গায়ে হালকা জ্বর উঠেছে।তার অতি আদুরে বোনটা যে সামান্যতম কষ্ট সহ্য করতে পারেনা। জ্বর বাঁধিয়ে বসে থাকে।আজ ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।বোনটার এই নরম শরীরে সে সেদিন কতো আঘাত করেছিলো। ছি!নিজের উপর ঘেন্না ধরে যাচ্ছে।এই মুহুর্তের নিজের আর তার বাবার মধ্যে কোনো পার্থক্য খুজে পাচ্ছেনা।মা ঠিক বলে।আমি হয়েছি বাবার মতো।রাগ চরলে হিতাহিত জ্ঞান ভুলে যাই।কিন্তু সে চায়না বাবার মতো হতে।এতটা নির্দয় সে কিছুতেই হতে চায়না।

সেদিনের পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করলো।প্রথম দিকে মাহাদ দিন রাত রুমের দরজা বন্ধ করে পড়ে থাকতো।ঠিক মতো খেতো না।খাবার গলা দিয়ে কিছুতেই নামতো না তার। দাদীর দৃশ্যর উপর করা আঘাত গুলি তাকে ক্ষত বিক্ষত করে দেয়।সে জানে দাদী ছেলেকে হারিয়ে এমন পাগলামি করেছে।এই মানুষটা তার ছোটো ছেলের জন্য কষ্ট পেতো।আজ যখন বড়ো ছেলে আর নতিটা ওই একই পরিবার দ্বারা কষ্ট পায় সেটা তার জন্য মেনে নেওয়া সহজ না।সেতো কাউকেই দোষারোপ করতে পারছেনা।আর না পারছে বলতে

-“দাদী তুমি আমার কলিজায় আঘাত করেছো।দৃশ্যর গায়ে করা আঘাত আমার কলিজায় লেগেছে।তুমি কোন সাহসে আমার বউকে আঘাত করলে?”

কিন্তু কিছুই বলতে পারেনি।সেতো নিজেই কষ্ট দিয়েছে তার বউকে।আর কাকে কি বলবে?তার দৃশ্যর উপর অনেক রাগ হতো।এই মেয়েটা অন্য পরিবারে কেনো জন্মালো না।সে আশরাফ হুসেনের মেয়ে মনে হলেই তার ভেতরে রাগ দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে।দৃশ্যর উপর অভিমান হয়।

গভীর রাতে তার রুম থেকে আর্তনাদের শব্দ ভেসে আসতো।এতো কিছু হারিয়ে সে অসহায় হয়ে পড়েছিলো।তাছাড়া মায়ের এই রুক্ষতা ও তাকে ভেতর থেকে শেষ করে দিচ্ছিলো।আরিফ আর মাহিম তাকে সামলানোর চেষ্টা করতো। মাহাদ চাচু কে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কাদত।তার বুকের যন্ত্রণা সে কি করে বুঝাবে?ওই পিচ্চিটার মাঝেই যে তার সব সুখ।সে তো তার সুখটাকে নিজেই ফেলে এসেছে।দৃশ্যর সেই অশ্রু ভেজা চোখ এখনো সামনে ভেসে উঠে।রাতের আড়ালে সে অনেকবার দৃশ্য দের বাসার সামনে গেছে।একটা বার মায়াপরী কে লুকিয়ে দেখতে।কিন্তু কোনো দেখা পায়নি।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করতো নিজেকে শেষ করে দিতে।দৃশ্য হীন জীবন যে বহু কষ্টের।বাবাও যে নেই।কার কাছে সে নিজের তিক্ত অনুভুতি শেয়ার করবে?কি নিয়ে থাকবে সে?একটা বার দৃশ্যর কণ্ঠ শুনতে সে তৃষ্ণার্থ হয়ে উঠে।মন চায় দৌড়ে পিচ্চিটার কাছে চলে যেতে।তাকে জড়িয়ে ধরে বলতে

-“চল না পিচ্ছি।দূরে কোথাও যেয়ে সংসার সাজাই।”

পড়ে আবার মায়ের মলিন মুখ দেখে নিজেকে সামলে নেয়।মায়ের চেহারায় আজকাল সেই লাবণ্যতা আর দেখা যায়না।বাবার হটাৎ ছেলেদের সামনে করা দুষ্টুমিতে মায়ের চেহারায় যে লজ্জা আর লাবণ্যতা ঝড়ে পড়তো এখন আর তেমন হয়না।মায়ের চোখের নিচের কালি গুলো মাহাদের বুকে অপরাধ বোধ জাগায়।যা থেকে এই জীবনে তার নিস্তার নেই।
দাদী ও কেমন চুপসে গেছে।সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখা দাদী আর মাহিমের ঝগড়াও তেমন দেখা যায়না।

আরিফের মাঝে সে বাবা বাবা গন্ধ পায়।বাবার পর এই মানুষটা তাকে ভীষণ ভালোবেসেছে।আরিফ অনেক বুঝিয়েছে দৃশ্যকে ফিরিয়ে আনতে।এই সবে ওই বাচ্চা মেয়েটার কোনো দোষ নেই।তাহলে তাকে কেনো কষ্ট দিচ্ছে?এতে আখি রহমান আর শামসুন্নাহার বেগম অনেক ক্ষিপ্ত হয় আরিফের প্রতি। কিন্তু সে জানে ভালোবাসা হীন জীবনটা কতটা বিষাদময়।কিন্তু মাহাদ নিজের সিদ্ধান্তে অটল রইলো।মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সে কখনোই দৃশ্যকে বাড়িতে তুলবে না।তার জন্য মা অনেক কষ্ট পেয়েছে।আর এক ফোঁটা অশ্রুর কারণ সে হতে চায়না।

ধীরে ধীরে মাহাদ গম্ভীর আর রগচটা হতে শুরু করে।সারা দিন বাইরে ঘুরে বেড়ায়।গভীর রাতে বাড়ি ফিরে।মাঝে মাঝে ফেরেও না।আখি রহমান মাহাদের সাথে কোনো কথা বলেনা। চাপা রাগ তার মাহাদের প্রতি।

বাবার অবর্তমানে বাধ্য হয়ে বাবার ব্যাবসায়ের হাল ধরতে হয় তাকে।কারণ বাবা যাবার আগে সবার দায়িত্ব তার হাতে তুলে দিয়ে যায়।বাবার কথার অমান্য সে কি করে করতো?তাছাড়া রাজশাহীর বাতাস তার কাছে বিষাক্ত লাগছিলো।এক শহরে থেকেও প্রিয়তমার কাছ থেকে দূরে থাকা ভীষণ কষ্টকর হয়ে দাঁরয়েছে।

এই প্রথম শামসুন্নাহার বেগম ঢাকায় যেতে রাজি হয়।সব পরিস্থিতি বুঝে তিনি ঢাকায় থাকাটাই শ্রেয় মনে করে।আখি রহমান মাহাদের সাথে কথা না বললেও নীরব থেকে সম্মতি দিয়েছেন।বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা আর কষ্ট নিয়ে মাহাদ রাজশাহী ত্যাগ করে।পেছনে ফেলে যায় তার সুখপাখি টাকে।

সেদিনের পর দৃশ্য অনেকটা চুপসে যায়। মাহাদের সেই বিষাক্ত কথা গুলো তার কানে বাজতে থাকে।হৃদয়ে বার বার ভাঙচুর হয়। মাহাদ তাকে কি করে ছুড়ে ফেলতে পারলো?সে নাকি তার জীবনে দৃশ্যকে চায়না।তার সাথে যোগাযোগ রাখতে চায়না।কই একবার তো কেউ দৃশ্যকে জিজ্ঞাসা করলো না সে কি চায়?সবার ডিসিশন তার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে কেনো?সব কিছুর পরও দৃশ্যর বিশ্বাস ছিলো মাহাদ ফিরে আসবে।তার উপর অভিমান করে আছে মাহাদ।সব রাগ কমলে আর মাথা ঠাণ্ডা হলে সে আসবে।আর বলবে

-“এই পিচ্ছি বিয়ের পর কিসের এতো বাপের বাড়ি থাকা?আজ থেকে বাপের বাড়ি আসা বন্ধ।অনেক থেকেছ।আজ থেকে তোমাকে আমার খাচায় বন্ধি করলাম।বেশি ছটফট করলে চুমুর বর্ষণ শুরু হবে।সো নো হাংকি পাংকি।”

দৃশ্য নীরবে মাহাদের জন্য পথ চেয়ে রইলো।
হটাৎ একদিন মৌয়ের কাছথেকে যখন জানতে পারলো মাহাদ ঢাকায় চলে গেছে পুরো পরিবার সহ দৃশ্য সেটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনি।পুরো আকাশ যেনো তার মাথায় ভেঙে পরলো।মাহাদ তাকে ফেলে কিছুতেই যেতে পারেনা।সে হন্ত দন্তো হয়ে মাহাদের বাড়িতে গেলো।সাথে নাবিলা ও গেলো।আশরাফ হুসাইন আর দৃশ্যকে সেদিন আটকায়নি।কারণ মাহাদের ঢাকায় চলে যাবার খবর তিনি আরো আগেই পেয়েছেন।তাই তিনি কিছুটা চিন্তা মুক্ত।যাক ওই ছেলে নিজে থেকে সরে গেছে।

মাহাদের বাড়িতে বিশাল বড়ো তালা ঝুলতে দেখে দৃশ্য ভেঙে পরলো।সেখানেই দরজার পাশে বসে পড়লো।হৃদয়ে তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে।সেই দরজার পাশে বসে সেদিন দৃশ্য চিৎকার করে কেঁদেছিলো।আর বলেছিলো মাহাদকে সে কোনো দিন ক্ষমা করবে না।তার বাবার করা ভুলের শাস্তি মাহাদ তাকে কি করে দিতে পারলো?সে কি জানেনা তার বাঁচা মরা নিয়ে তার বাবার কিছুই আসে যায়না?একটা স্বার্থপর মানুষের জন্য সে দৃশ্যকে মাঝপথে কি করে ছাড়তে পারলো?তাকে ছাড়া দৃশ্য যে জীবন্ত লাশ হয়ে যাবে এটাকি মাহাদ জানেনা?এতটা নিষ্ঠুর কি করে হলো সে?সারাটা দিন দৃশ্য সে দরজার পাশে বসিয়ে কাটিয়েছে।রাস্তার মানুষজন দেখেছে দৃশ্যর সেই আর্তনাদ।শেষে ফাহিম এসে তাকে জোর করে বাসায় নিয়ে আসে।

ঢাকায় ফিরে মাহাদ নিজেকে ব্যস্ত করে রাখলো।যাতে দৃশ্য নামক শব্দটা তাকে তাড়া করে না বেড়ায়।লেখাপড়া আর বাবার ব্যাবসায় নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।তবে এতো কিছুর মাঝে সে গান ভুলেনি।কারণ তার বাবার স্বপ্ন ছিল একদিন তার ছেলে দেশের নামকরা গায়ক হবে।রকস্টার হবে।তাই দিন রাত ভুলে সে এইসব নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।একটা সময় এমন হলো যে নিজের জন্য একমিনিট ও পেতো না।ইচ্ছা করে নিজেকে এই সবে ডুবিয়ে রাখলো।তবুও দৃশ্যপাখিটা তার কল্পনার রাজ্য ছেড়ে কোথাও যায়নি।আখি রহমান কিছুই বলতেন না।ছেলে যে ভেতরে ভেতরে দুমড়ে মরছে সেটা তিনি বুঝতেন।মাহিম ছোট হয়েও মাহাদকে অনেকটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতো।

ব্যাবসায় কিছুটা গুছিয়ে দিয়ে আরিফ আবার ফিরে গেলো বিদেশের মাটিতে।তার তো যেতে হতোই।এই বাংলার বাতাস তাকে সস্তি দেয় না।দিশাকে হারানোর বেদনা তাকে কুরে কুরে খায়।দিশা তার জীবনে থাকলে আজ সব কিছু অন্যরকম হতো। দৃশ্য নিশ্চয়ই দিশার মতো বোকামি করবে না?মাহাদের মনের অবস্থা সে ভালো করেই বুঝতে পারছে।কিন্তু ছেলেটা বড্ডো জেদী।নিজে যা ভাবে তাই করে।
তার প্রায় চার মাস পর মাহাদের প্রথম অ্যালবাম বের হয়।আর সেটা সারা দেশ বেশ সারা ফেলে।আখি রহমান মনে মনে ছেলের জন্য খুশি হয়ে দোয়া করতেন। এর পর মাহাদ একে একে আরো অনেক অ্যালবাম, মিউজিক ভিডিও ও মুভিতে কাজ করে। ধীরে ধীরে মাহাদ সকলের প্রিয় গায়ক হতে শুরু করে।জনপ্রিয়তা অর্জন করতে তার খুব একটা সময় লাগেনি।দেশ বিদেশে নানান কনসার্টে পার্টিসিপেট করতে থাকে।এক সময় আখি রহমান খেয়াল করলেন মাহাদ নেশায় আসক্ত হতে শুরু করেছে।আরিফের মাধ্যেমে মাহাদকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে।কিন্তু ততো দিনে মাহাদ হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।

নেশা করে বাসায় ফেরাটা তার নিত্য দিনের কাজ হয়ে দাড়ালো।আখি রহমান বুঝতে পড়লেন ছেলে তার রসাতলে যাচ্ছে।মনের যন্ত্রণা এই উপায়ে ভুলতে চাইছে।কিন্তু তিনি নিজের মৌনতা ভাঙেনি।এইযে তিনি মাহাদের সাথে কথা না বলে কতো বড়ো শাস্তি দিচ্ছেন সেটা তার ভালো করেই জানা আছে। মাহাদ প্রায়ই মায়ের কোলে মাথা রেখে কতো কথা বলে।কিন্তু আখি রহমান কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান না। মাহাদ চাইতো মা তাকে শাসন করুক।তার ফর্সা গালে থাপ্পর মেরে লাল করে দিক।

সারাদিন নিজেকে ব্যাস্ত রাখলেও রাতটা মাহাদের কাটে দুর্বিষহ।তার ফেলে আসা ভালোবাসা তাকে শান্তিতে ঘুমাতে দেয়না।আর না দেয় সস্তি। চোখ বুজলেই একটা অভিমানী মুখ ভেসে উঠে।যে অল্প কিছুতেই ঠোঁট উল্টে কেদে কেটে বুক ভাসায়।তাই সব ভুলতে সে ড্রিংক শুরু করে।সে দেখলো ড্রিংক করলে বুকের যন্ত্রণাটা কিছুটা কমে যায়।ভালো মুহূর্ত গুলো চোখে ভেসে বেড়ায়।তাই সে নিয়মিত ড্রিংক শুরু করে।একটা সময় দৃশ্যর অপছন্দ বলে সে স্মোকিং ছেড়েছিলো।কিন্তু আজ সে এক বসায় কতগুলি সিগারেট শেষে করে নিজেও জানে না।

তার ক্যারিয়ারের সুবাদে বহু সুন্দরী রমণীর সাথে তার উঠা বসা হয়েছে। কতো সুন্দরী তাকে প্রেম নিবেদন করেছেন।কিন্তু মাহাদের মন কোথাও আটকায়নি।সে তো জানে তার পিচ্ছি কাউকে তার পাশে সহ্য করতে পারেনা।

দিন দিন মাহাদ হয়ে উঠে রুক্ষ মেজাজের।অল্পতেই সে ভীষণ রেগে যায়।মিডিয়ার সাথে তার বহুবার ঝামেলা হয়েছে। ইন্ড্রাস্ট্রিতে সে হয়ে উঠে বেড বয় রকস্টার মাহাদ।তবে মাহাদের জনপ্রিয়তা এতই ছিলো যে তার এই বিষয়টা সকলের চোখে ঢাকা পড়তে থাকে।অতি সুদর্শন পুরুষদের তো একটু এটিটিউড থাকবেই।মেয়েদের স্বপ্ন পুরুষ হয়ে উঠে মাহাদ।এই সুদর্শন ধূসর চোখে হাজারো মেয়েরা ঘায়েল হয়ে যায়।কিন্তু মাহাদ শুধু একজনের মাঝেই আটকে আছে।যেটা থেকে বের হওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।

মাহাদ ইচ্ছে করেই দৃশ্যর কোনো খোঁজ খবর নিতো না।
কারণ সে জানে এতে করে সে দুর্বল হয়ে পড়বে।সে সব ভুলে ছুটে চলে যাবে তার বউটার কাছে।কিন্তু এতে মা কষ্ট পাবে।ভীষণ কষ্ট পাবে।

এতো বছরে মাহাদ নিজের বাবার গার্মেন্টস ব্যাবসায় কে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছে।সেটাকে নতুন রূপে শুরু করেছে ড্রিম ফ্যাশন হাউস নামে।কয়েক বছরে তার হাউসও বেশ জনপ্রিয়তা পায়।বর্তমানে তার এই হাউস টি বাংলাদেশের টপ ফ্যাশন হাউস এর মধ্যে একটা।এই ব্যাবসায় প্ল্যান করার সময় থেকেই সে পাশে পেয়েছে মিস লুবনাকে।তার ফ্যাশন হাউজের প্রথম ডিজাইনার তিনি ছিলেন। ধীরে ধীরে সেখানে আরো কয়েক শত ডিজাইনার যোগ হয়।

মাহাদ জানে তার মা তার প্রতি অসন্তুষ্ট। কিন্তু সে নিজেকে আর বদলায়নি।এই শক্ত খোলস তাকে মনের দিক থেকে শক্ত থাকতে সহায়তা করে।সে জানে এক জীবনে সবাইকে সন্তুষ্ট রাখা সম্ভব না। তার মাঝে মাঝে জানতে মন চায় তার পিচ্ছিটা কেমন আছে?নিশ্চয়ই এতো দিনে তাকে ভুলে গেছে।তার ভাই নিশ্চয়ই আদরের বোনকে ঠিক সামলে নিয়েছে?

তবে সেদিন দৃশ্যকে তার ফ্যাশন হাউসে দেখে মাহাদ বেশ চমকে যায়।তার মনে হচ্ছিল সে স্বপ্ন দেখছে।কারণ এমনটা বহুবার হয়েছে।দৃশ্য তার কল্পনায় হাজার বার আসতো।এসেই অভিমান নিয়ে তার বুকে কামড়ে বলতো

-“তুমি ভীষণ খারাপ।আমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছ।দেখো কষ্টে আমার বুকটা জ্বলছে।তাই এখন তোমার বুক কামড়ে কামড়ে ছিড়ে ফেলবো।তার পর বুজবে বুকের বেথা কেমন হয়।”

কিন্তু যখন বুজলো এটা কল্পনা না বাস্তব তখন তার হৃদপিন্ডটা যেনো আবার অস্বাভাবিক ভাবে চলতে থাকে।তার এতো দিনের গড়া শক্ত খোলস যেনো ভাংতে শুরু করে।এই মেয়ে এক ঝলক তার সামনে এসে তাকে এলোমেলো করে দিয়েছে। তবুও মাহাদ নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করে।দৃশ্যকে ইগনোর করার চেষ্টা করে।কিন্তু তার বেহায়া চোখ দৃশ্য তেই আটকে যায়।তার আগের দৃশ্য আর এই দৃশ্যের মধ্যে সে অনেক পার্থক্য খুঁজে পায়।পিচ্ছিটা যে এখন অনেকটা বড়ো হয়ে গেছে। মাহাদের ইচ্ছে করছিলো পিচ্ছিটাকে বুকে জড়িয়ে বলতে

-“দৃশপাখি আমাকে কেনো আবার এলোমেলো করে দিলে?আমাদের জন্য যে দূরত্বই শ্রেয়।”

তবে দৃশ্য ঢাকায় কেনো আর তার অফিসে জবই কেনো করছে সেটা বুঝতে পারে নি।কারণ দৃশ্যর বাবা যেই ধরনের মানুষ।তাতে দৃশ্যকে আর যাই হোক জব করার পারমিশন কখনোই দিবে না।আর দৃশ্যই বা কেনো ওই বাড়িতে থাকছে?আশরাফ হুসেনের এতটুকু তো সামর্থ আছেই মেয়েকে ভালো একটা বাসায় রাখার।সে কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছে না।তাই তানিম কে বলে দৃশ্যর খবর নিতে।

দৃশ্য কে মৃদুলের সাথে যতবার দেখেছে তত বার তার প্রচন্ড রাগ হয়েছে।দৃশ্যর উপর ভীষণ রাগ হয়েছে।তার অবর্তমানে এই মেয়ের এতো অধঃপতন হয়েছে?ফাহিমের উপর অনেক রাগ হচ্ছিলো।বোনকে এই ভাবে একা কেনো ছেড়ে রেখেছে?সে তার বোনের কাছে গেলেই যত সমস্যা।আর এখন যে তার বোনের কতো ছেলের সাথে চলাফেরা সেটা দেখে না?দৃশ্যর পাশে কাউকে সে কোনোদিনই সহ্য করতে পারেনি।আজ পারে না।তার মন চায় মৃদুল নামের ছেলেটার নাক বরাবর একটা ঘুসি মেরে বলতে

-“শালা আর মেয়ে পাস না?আমার বউয়ের দিকে তোর নজর?আজ তোর চোখ উপড়ে ফেলবো।যেই হাতে আমার বউকে স্পর্শ করিস সেই হাত থেতলে ফেলবো।আমার বউকে আজ পর্যন্ত আমি ভালো করে ছুয়ে দেখলাম না।আর তুই কোথা থেকে উড়ে এসেছিস?”

কিন্তু চাইলেই অনেক কিছু করা যায়না।তার সামান্য পাগলামি তে মিডিয়া দৃশ্যর পিছনে পড়ে যাবে।
গত কালের পার্টিতে সে মৃদুলকে দৃশ্যর সাথে দেখে ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে গেছিলো।কিন্তু বাইরে থেকে কাউকে বুঝতে দেয়নি।প্রচন্ড রেগে সে অনেক বেশি ড্রিংক করে ফেলে।যার ফলে মনের সকল যন্ত্রণা,কষ্ট,খোব দৃশ্যর উপর পরে।তবে সবটাই হয় অচেতন অবস্থায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here