তোমার_আমার_প্রণয় #israt_jahan_arina #part_33

0
1306

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_33

সন্ধার পর মাহাদ বাসায় ফিরলে শামসুন্নাহার বেগম মাহাদ কে কাছে ডাকলেন।আজকাল নাতিটার চেহারার দিকে তাকানো যায় না। মাহাদ দাদির কাছে এসে বসলে তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন

-“কীরে দাদুভাই,আজ কাল এই বুড়িকে কি চোখে পড়ে না?”

মাহাদ গম্ভীর স্বরে বললো
-“তেমন কিছু না দাদী।”

-“আমার উপর রাগ করছিস?”

-“না দাদী।”

-“মাইয়াডারে আমারও ভালো লাগছিলো।কিন্তু তার জাত ভালো না।আমার ছোড পোলাডা ওই মাইয়ারে অনেক ভালোবাসতো।আমরা কত চেষ্টা করছি মাইয়াডারে বাড়ির বউ বানাইতে।তয় হের বাপ ভাইরা দিলো না।আমার দুই পোলারে অপমান করছে।যেইদিন মাইয়াডার বিয়া হইলো আমার পোলাডা চিৎকার কইরা কানছে।মা হইয়া আমি সব মুখ বুইজা সহ্য করছি।পোলাডার কষ্ট কোনো ভাবে কমাইতে পারি নাই।তবুও আমার পোলা নিজেরে সামলায় নিচ্ছিল।তয় মাইয়াডার মরার খবর শুইনা আমার পোলাডা শেষ হইয়া গেছিলো।আমার পোলার কাছে বিয়া দিলেকি এমনে মরা লাগতো?এতো কিছু কইরাও হেরা মাইয়ার মরার দোষ আমার পোলারে দেয়।আরে জালিমের বাচ্চা,তোরাই তো এক জল্লাদের কাছে মেয়েরে বিয়া দিছস।আর দোষ দেশ আমার পোলার?
আজ এতো বছর পরে তুইও একই কাজ করলি।আমার দুই পোলা তোর খুশির লাইগা সব ভুইলা হেগো বাড়িত গেলো।আর ওই আশরাফ আবার আমার পোলাগো অপমান করলো।তুই বল আমি মা হইয়া কেমনে দেখতাম?তুই ওই মাইয়ারে ভুইলা যা।আমরা তোর লাইগা পরীর লাহান মাইয়া অনমু। জেইহানে তুই সম্মান পাবি।”

মাহাদ চুপ চাপ দাদীর কথা শুনলো।তারপর তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বললো

-“চাচু কেনো বিয়ে করেনি জানো?সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে সারাজীবন চলার সপ্ন দেখেছে।ছোট একটা সংসার সাজানোর পরিকল্পনা করেছে।কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে।ভালোবাসা কি বার বার হয়?যেই মানুষটি তার নিঃশ্বাসের সাথে মিশে গেছে হটাৎ তার জায়গাতে অন্য কাউকে ভাবা কি সম্ভব?মনের মাঝে অন্য কাউকে কি এতো সহজে রিপ্লেস করা যায়?মনের উপর জোর চলেনা দাদী।দৃশ্যর ফুপির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।তার উপর জোর করে একটা সম্পর্ক চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।যার ফলাফল কি দাড়িয়েছে সেটা তুমি জানো।
দৃশ্যও আমার অস্তিত্বে মিশে গেছে।ওর জায়গাতে অন্য কাউকে ভাবা অসম্ভব।তবে চাচু যে ভুল করেছে আমি তা করবোনা।নিজের ভালোবাসাকে এতো সহজে আমি হেরে যেতে দিবনা।দৃশ্য শুধু আমার হবে।সেটা দৃশ্যর ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়।”

কথাটা বলে মাহাদ নিজের রুমে চলে গেলো।শামসুন্নাহার বেগম অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলেন। মাহাদের কন্ঠে কিছু একটা ছিলো।ক্রোধ,অভিমান,ভয় সব ছিলো।তিনি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন।এই একরোখা ছেলেটা আবার কোনো অঘটন না ঘটিয়ে ফেলে।তবে এটা তিনি বুঝে গেছেন মেয়েটাকে যে মাহাদ কিছুতেই ছাড়বেনা।

মাহাদ নিজের রুমে এসে চুপ করে শুয়ে রইলো।দৃশ্যর আজকের ব্যাবহার মাহাদ কিছুতেই ভুলতে পারছেনা।রাগে তার শরীর থর থর করে কাপছে।আজ দৃশ্যর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে কি করে বসত নিজেও জানে না।কিন্তু এই মেয়েটাকে সে কিছুই বলতে পারেনি।কারণ এই মেয়েটা তার দুর্বলতা।

সব ভুলে মাহাদ পর দিন দৃশ্যর কলেজের সামনে দাড়িয়ে রইলো।কিন্তু দৃশ্যর কোনো খবর নেই।মৌ আর সায়মাও কিছুই বলতে পারলো না। নাবিলা ও আসে নি।বিকেলে কোচিংয়ের সামনে দাড়িয়ে রইলো।সেখানেও দৃশ্যর দেখা পেলো না।এই ভাবে আরো কয়েক দিন কেটে গেলো।দৃশ্য না কলেজ এসেছে আর না এসেছে কোচিংয়ে। মাহাদের এখন উন্মাদ হবার জোগাড়।দৃশ্যকে কতো হাজার বার কল করেছে তার হিসাব নেই।দৃশ্যর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য মনটা অস্থির হয়ে আছে।দৃশ্যর উপর সে প্রচন্ড রেগে গেলো।তার ভালোবাসাকে কি দৃশ্য সস্তা মনে করেছে।এতো সহজে কি কোনো সম্পর্ক শেষ করা যায়?দৃশ্যকে সে এতো সহজে ছাড়বে না।তার অনুভূতিকে নিয়ে খেলছে ও? এর শাস্তি ওকে পেতে হবে। মাহাদ কি জিনিষ সেটা সে এখনো বুঝে উঠতে পারেনি।

রাতে দৃশ্য পড়ার টেবিলে মুখ গুঁজে বসে আছে।সে কি আদো পড়ছে না কি করছে বোঝা যাচ্ছেনা।সামনে রাখা ফোনটি বেজে যাচ্ছে।দৃশ্য একবার সেই দিকে চোখ বুলিয়ে আবার বইয়ে মুখ গুজে রইলো।আবার কল আসলে দৃশ্য দেখলো নাবিলা কল করেছে।তার এই নম্বর শুধু দুইজন মানুষ জানে।এক মাহাদ দুই নাবিলা।খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে নাবিলা এই নম্বরে কল দিবেনা।তাই দৃশ্য চিন্তিত হয়ে কল রিসিভ করতেই নাবিলা বললো

-“দৃশ্য নিচে আয়।”

-“এতো রাতে তোর বাসায় কেনো যাবো?কোনো সমস্যা?”

-“আমার বাসায় না। জাস্ট নিচে আয়।আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ইম্পর্টেন্ট কথা আছে।”

দৃশ্য তাকিয়ে দেখলো রাত বাজে একটা।সে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লো।দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসলো।দেখলো নাবিলা তাদের বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।দৃশ্য চিন্তিত হয়ে বললো

-“কি হয়েছে নাবি?এতো রাতে আসতে বললি?”

নাবিলা ভয়ে ভয়ে বললো
-“মাহাদ ভাইয়া এসেছে।তোকে এক্ষনি দেখা করতে বলেছে।”

দৃশ্য কিছুটা চমকে গেলো।তার ভয় হচ্ছে।সে বললো
-“ম…….!মানে কি? তুই কি করে জানলি?”

-“মাহাদ ভাইয়া তোকে অনেকবার কল করে না পেয়ে আমাকে কল করেছে।”

দৃশ্য কিছুটা রেগে বললো
-“তোকে না বলেছি ওর কল রিসিভ না করতে।কেনো করেছিস?”

-“আরে আমি ধরতে চাইনি। মেসেজে হুমকি দিচ্ছিলো তাই ধরেছি।উনি রাস্তায় আছেন।তোকে এক্ষনি যেতে বলেছে।তা নাহলে উনি বাসায় চলে আসবেন।”

দৃশ্য কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।মানুটির কাছ থেকে যতো দূরে যেতে চাচ্ছে মানুটা ততই কাছে চলে আসছে।দৃশ্য বললো
-“আমি যাবনা বলে দে।”

-“প্লিজ দৃশ্য এমন করিস না।তুই মাহাদ ভাইয়াকে ভালো করেই চিনিস।উনি যা বলে তাই করে। এখন এই রাতে বাসায় চলে আসলে কি হবে ভাবতে পারছিস?”

দৃশ্য কিছুক্ষণ ভেবে বললো
-“ঠিক আছে চল।”

-“আমি কই যাবো?”

দৃশ্য কিছুটা রেগে বললো
-“জানিসনা কই যাবি?”

-“আমারে মাফ কর বইন। মাহাদ ভাইয়াকে আমার ভয় লাগে।আর এখন তো উনি হিংস্র বাঘ হয়ে আছেন।আমি যাবো না।”

-“আমাকে বাঘের গুহায় ফেলে তুই পালাবি সেটা হবে না।”

দৃশ্য জোর করে নাবিলাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো।নাবিলা বললো
-“আরে ভাইয়া কই?”

দৃশ্য ভালো করেই জানে মাহাদ কোথায়?সে সামনে এগিয়ে গলিতে ঢুকলো।সেখানেই বাইকের পাশে মাহাদ কে দেখতে পেলো।নাবিলা বিস্ময় হা করে রইলো। কপাল কুঁচকে দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে বললো

-“তুই এর আগেও ভাইয়ার সাথে রাতে এখানে দেখা করেছিস?”

দৃশ্য বিরক্ত হয়ে নাবিলার দিকে তাকালে নাবিলা বললো
-“নাহলে জানলি কেমনে ভাইয়া এই গলিতে দাড়িয়ে?ওই আর কি কি করছিস তুই?রুম ডেট করিস নাইতো আবার?”

দৃশ্য রাগী চোখে তাকালো।নাবিলা চুপসে গেলো।তাদের আসতে দেখে মাহাদ এগিয়ে আসলো। মাহাদকে ভীষণ বিষণ্ণ লাগছে।গায়ের টিশার্ট টাও কুচকানো। মাহাদ এসে দৃশ্যর হাত ধরে নাবিলাকে বললো

-“নাবিলা তুমি এই জায়গাতেই দাড়াও।তোমার বোনের সাথে আমার পার্সোনাল কথা আছে।”

নাবিলা মাহাদের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুই বলতে পারলো না।কারণ মাহাদের দুই চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। মাহাদ দৃশ্যকে বাইকের কাছে এনে একরকম ছুড়ে মারলো।দৃশ্য পড়লো সোজা বাইকের উপর। ভয়ে দৃশ্যর পুরো শরীর কাপছে। মাহাদ দৃশ্যকে বাইকের সাথে চেপে ধরে বললো

-“ফাইজলামি করছিস আমার সাথে?সমস্যা কি তোর?বাসা থেকে বের হচ্ছিস না কেনো?আমার মুখ মুখী হওয়ার ভয়ে বাসায় বসে আছিস? কতো হাজার বার কল করেছি দেখিস নি?”

দৃশ্য ভয়ে ভয়ে বললো
-“আমি তো সেইদিনই বলে দিয়েছি আমি এই সম্পর্ক আর রাখতে চাই না।তাহলে বার বার কল কেনো দিচ্ছ?”

-“সম্পর্ক রাখতে চাসনা মানে?ফাজলামি করিস?তুই বললেই সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে?আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নাই?আমি না চাইলে তুই এই সম্পর্ক থেকে বের হতে পারবি না।”

দৃশ্য কিছুটা রেগে বললো
-“জোর করে সম্পর্ক রাখতে চাইছো?”

মাহাদ রেগে দৃশ্যর চুলের মুঠি ধরে নিজের কাছে এনে বললো
-“হে চাইছি।দরকার পড়লে তাই করবো।তুই শুধু আমার বউ হবি এইটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখ।তোকে আমি ছাড়ছি না।”

-“আমি তোমাকে বিয়ে করব না।কেনো পিছনে পরে আছো আমার?শরীরের জন্য?শরীর চাইতো তোমার?”

মাহাদ নিজের রাগকে আর কন্ট্রোলে রাখতে পারেনি।পর পর দুইটা চর বসিয়ে দেয় দৃশ্যর গালে।তার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে।এই মেয়ে এমন কি করে বলতে পাড়ে? মাহাদের দুই চোখ ভিজে উঠে।

এতোখন দূরে দাঁড়িয়ে নাবিলা সব দেখছিলো।তাদের কথা কিছুই শুনতে পারছিল না।তবে বুঝতে পারছে বেশ বাক বিতন্দো হচ্ছে।তবে দৃশ্যর গায়ে হাত তোলা দেখে আর নিজেকে আটকাতে পারলো না।সে দৌড়ে গেলো দৃশ্যর কাছে।

দৃশ্য থাপ্পড় খেয়ে মাটিতে পরে গেলো।তার পুরো মাথা ঘুরছে।এমন জোরে কেউ থাপ্পড় দেয়?

নাবিলা দৃশ্যকে ঝাপটে ধরলো। মাহাদ অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো। এবার দৃশ্যর দিকে তাকাতেই নাবিলা আর দৃশ্য দুইজনই অবাক হলো। মাহাদ কাদঁছে।তার দুই চোখ অশ্রু শিক্ত। মাহাদ ভাঙ্গা গলায় রেগে বললো

-“আমার ভালোবাসার কোনো মূল্যই নেই তোর কাছে? আ…আমি তোর শরীর চাই?এই চিনেছিস আমাকে?এতো দিনের সম্পর্কে কোনো দিন বলতে পারবি তোকে বাজে ভাবে ছুঁয়েছি কিনা?আরে এমন অনেক সুযোগ ছিল।আমি চাইলেই তোর শরীর পেতে পারতাম।কতবার তুই নিজে আমার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিস,বরং আমি তোকে থামিয়েছি । তোকে আমি কখনোই এই ভাবে চাইনি।আমি সব সময় সম্পর্কের বৈধতা চেয়েছি।সম্পর্কের শুরু থেকে আমি ক্লিয়ার ছিলাম তুই আমার বউ হবি।

আজ মনে হচ্ছে তোকে ভালোবাসা আমার জীবনের সবচাইতে বড়ো ভুল ছিল।তার চাইতেও বড় ভুল ছিল আমার বাবাকে তোর বাড়িতে পাঠানো। শুধু মাত্রই তোর কথা ভেবে তোর বাপ ভাইকে আমি কিছু বলিনি।নাহলে আমার বাবা আর চাচু কে অপমান করার জন্য তোর চৌদ্দ গুষ্টিকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতাম।

পাগলের মতো ভালোবাসি তোকে আমি। তুই এখন বলছিস কোন সম্পর্ক রাখবি না?আমার অনুভূতিকে নিয়ে খেলছিল তুই?তুই কোনো দিন আমাকে ভালোই বাসিস নি।আমি মাহাদ কি জিনিষ তুই এখনো চিনিস নাই।একদম মেরে ফেলবো তোকে আমি।আমাকে শেষ করে দিয়ে তুই সুখে থাকবি সেটা কখনোই হবে না।তোর মতো নাটক বাজ মেয়েদের কি করে সোজা করতে হয় আমার জানা আছে।”

রাগে মাহাদের পুরো শরীর কাপছে।আজ হয়তো সে দৃশ্যকে শেষ করে দিতে দুইবার ভাববে না।মাথা ঠিক মত কাজ করছে না।
দৃশ্য রাস্তায় পরে কাদঁছে।অশ্রু যেনো কোনো বাঁধ মানছেনা না।নাবিলা দৃশ্যকে ঝাপটে ধরে আছে।এতখন সব সহ্য করলেও আর পারলো না।রেগে মাহাদ কে উদ্দেশ্য করে বললো

-“অনেক বলেছেন ভাইয়া।আর একটা বাজে কথা বলবেন না।কি ভাবেন নিজেকে? রোমিও? শুধু আপনি ভালোবাসতে জানেন?আরে এই মেয়েটা আপনাকে ভালোবেসে কতো টুকু সহ্য করছে দেখতে চান?তাহলে দেখেন।”

কথাটা বলেই দৃশ্যর গলা থেকে ওড়নাটা সরিয়ে ফেললো।রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় দৃশ্যর গলা ও কাধে বেশ কয়েকটা মোটা কালো দাগ দেখা গেলো।দৃশ্য মাথা নিচু করে বসে আছে।নাবিলা এখানেই থামলো না।দৃশ্যকে জোর করে দার করিয়ে পেছনে ঘুরিয়ে পিঠের দিকে জামার চেইনটা এক টানে খুলে ফেললো। জামাটা কাধ থেকে কিছুটা নামিয়ে বললো

-“দেখুন ভালো করে।আরো আছে যা দেখানো সম্ভব না।”

মাহাদ হতবম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো।দৃশ্যর ফর্সা পিঠে অসংখ্য মারের দাগ। মোটা কালো দাগ। বুঝাই যাচ্ছে কেউ জানোয়ারের মত পিটিয়েছে।কোনো মানুষ অন্য মানুষকে এই ভাবে আঘাত করতে পারে? মাহাদের দুচোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।সে এগিয়ে আসে দৃশ্যর খোলা পিঠে হাত রাখতেই দৃশ্য ব্যাথায় কেপে উঠলো।পেছনে ঘুরে মাহাদকে ঝাপটে ধরে ফুঁপিয়ে কেদে উঠলো। মাহাদ সাবধানে দৃশ্যর জামার চেনটা লাগিয়ে দৃশ্যকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো।দৃশ্য কেঁদেই চলছে।মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব চাইতে নিরাপদ স্থানে আছে সে।যেখানে মন ভরে কাদা যায়।মনের কষ্ট লাঘব করা যায়।

যেই বাচ্চা মেয়েটাকে এত আদরে আগলে রেখে ভালোবেসেছে তার এই বিধ্বস্ত অবস্থা মাহাদ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাদছে।ভালোবাসে মানুষটি সামান্যতম আঘাত ওপর জনকে এতটা যন্ত্রণা কেনো দেয়?

নাবিলা তাদের কাদতে দেখে নিজেও অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
মাহাদ দৃশ্যর মাথা বুক থেকে উঠিয়ে তার দুই হাত দৃশ্যর চিবুকে গলিয়ে দিলো।পরম আদরে প্রিয়তমার কপালে, গালে,গলায় চুমু খেলো।প্রিয়তমার অশ্রু শুষে নিলো।
নাবিলা এবার কিছুটা লজ্জা পেলো।তার পর গলা খাকিয়ে বললো

-“দৃশ্যর শরীরে ঠিক যতোটা আঘাত দেখতে পাচ্ছেন তার দ্বিগুণ আঘাত দৃশ্যর মায়ের শরীরে পড়েছে।”

মাহাদ কথাটা শুনে অনেকটা চমকে গেলো।প্রশ্নবোধক চোখে তাকালো নাবিলার দিকে।দৃশ্য আবারো মাহাদের বুকে মুখ লুকিয়ে কাদতে লাগলো।যেনো মাহাদে বুকে ঢুকে যাবে।বার বার দৃশ্যর শরীর কেপে উঠছে। মাহাদ আরো শক্ত করে দৃশ্যকে জড়িয়ে ধরলো।

সেদিন আরিফ রহমান যাওয়ার পর আশরাফ হুসাইন সন্ধায় বাসায় আসেন।মেজাজ তার একশোতে একশো।স্বামীকে আসতে দেখে আনিকা কবির এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেন।স্বামীর মেজাজ কেমন সেটা ঠিক ধরতে পারছেন না।কারণ মানুষটা সব সময় গম্ভীর হয়ে থাকে।তিনি আজ অনেক সাহস জোগাড় করেছেন স্বামীর সাথে দৃশ্যর ব্যাপারে কথা বলবেন।মেয়েটার কষ্ট তিনি কিছুতেই সহ্য করতে পারছেন না।মেয়েটার জীবন এইভাবে তিনি নষ্ট হতে দিবেন না।তাই আজ কথা বলবেন বলে ভেবেছেন।আশরাফ হুসাইন পানি খেয়ে গ্লাস এগিয়ে দিলেন।আনিকা কবির গ্লাস হাতে নিয়ে আমতা আমতা করে বললেন

-“আপনাকে চা করে দেই।”

আশরাফ হুসাইন গম্ভীর স্বরে বললেন
-“না।”

আনিকা কবির আবার বললেন
-“আ…আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।”

-“বলো।”

-“আসলে বলছিলাম কি দৃশ্যর ব্যাপারটা একবার ভেবে দেখতেন।সেতো আপনারই মেয়ে।আর শুনেছি ছেলেটাও ভালো।দৃশ্যকে অনেক পছন্দ করে।আগের সব ভুলে যদি..”

তিনি আর বলতে পারলেন না।আশরাফ হুসাইন এমনি রেগে ছিলেন স্ত্রীর কথা শুনে জোরে ধমক দিয়ে বললেন
-“তোর সাহস তো কম না।ওই বাড়ির লোকেদের তরফদারি করিস?ওদের জন্য আমার বোন মরছে আর সেখানে আমার মেয়ে দিবো ভাবলি কেমনে?”

-“দেখেন আগের সব ভুলে যান।আর দিশা মোটেও ওদের জন্য মারা যায়নি।আপনারা যদি দিশাকে সঠিক হাতে তুলে দিতেন তাহলে এমন হতো না।দোষ কিন্তু আপনাদের।”

ব্যাস এতোটুকুই যথেষ্ট ছিল আশরাফ হুসেনের মাথা গরম হওয়ার।তিনি আনিকা কবিরকে পর পর কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বসলেন।আশরাফ হুসাইন রেগে বলতে লাগলেন
-“সাহস বাড়ছে তোর।অনেকদিন ধরে ডোজ পড়েনা তাই সাহস বাড়ছে?আমার দোষ খোজস?”

আনিকা কবির থাপ্পর খেয়ে খাটে পড়ে গেছেন।মাথা তার ভন ভন করছে।তবে আজ চুপ হয়ে গেলে চলবে না।মেয়েটা যে মানুষিক যন্ত্রণায় ভুগছে।তিনি সেখান থেকে উঠে কিছুটা রেগে বললেন

-“আপনার সব অন্যায় আমি সহ্য করেছি।কিন্তু এবার আপনি আমার মেয়েটার সাথে অন্যায় করছেন।সেটা আমি মা হয়ে কি করে সহ্য করি?আপনাদের জেদ এর জন্য দিশার মৃত্যু হয়েছে। এখন আমার মেয়ের পেছনে পড়েছেন।আপনি কি মানুষ?ওই ছেলে কম কিসে?কিসের এতো অহংকার আপনার?আমজাদ ভাইয়ের সম্মানের ধারের কাছেও আপনি না।”

আশরাফ হুসাইন রাগে ফেটে পড়লেন।আজ ওই আরিফ তাকে এতো অপমান করে গেলো।আর বাড়িতে স্ত্রীও সেই কাজ করছে।তিনি দ্রুত আলমারি থেকে কিছু বের করলেন।আনিকা কবিরের আর বুঝতে বাকি রইলো না কি হতে চলছে।ভয়ে তার শরীর কাঁপতে লাগলো।

আশরাফ হুসাইন আলমারি থেকে মোটা একটা কালো লাঠি বের করলেন।এই লাঠির ব্যাবহার তিনি আগেও করেছেন।আজ অনেক বছর পর আবার সেটার ব্যাবহার হতে চলছে।তিনি সোজা আনিকা কবিরের উপর আক্রমন চালালেন।বেধম মারতে শুরু করলেন।আরিফের সব রাগ স্ত্রীর উপর ঝরতে লাগলেন।আর রেগে বলতে লাগলেন

-“মুখে খই ফুটছে তোর?আমার মুখের উপর কথা বলিস?ওই জানোয়ারের বাচ্চা আরিফ আমায় অপমান করে যায় তোর মেয়ের জন্য।আর বাড়িতে তুই মুখ চালাস?আমি কি জিনিষ ভুলে গেছিস?”

আনিকা কবির অনেক চেষ্টা করে শব্দ না করার।কারণ তিনি চাননা ছেলে মেয়ে বাবার এই রূপ দেখুক।কিন্তু মারের মাত্রা বাড়তে লাগলে তিনি আর সহ্য করতে পারলেন না।এই বয়সে এই মার সহ্য করা আদো সম্ভব?তিনি চিৎকার করে কাদতে লাগলেন।

দৃশ্য তার রুমে চোখ বন্ধ করে শুইয়ে ছিলো।আজকাল কিছুই তার ভালো লাগে না।সব কেমন রঙ হীন। মাহাদ আর তার সম্পর্কের কি হবে ভেবে পাচ্ছে না।গলা দিয়ে খাবার নামে না।ভাইয়া তার ফোনটা ভেঙে ফেলেছে। মাহাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না।তার সামনেই ভাইয়া মাহাদকে মেরেছে।দৃশ্য সেটা ভুলতে পড়ছে না। বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে।আজকাল চোখের জল তার নিত্য দিনের সঙ্গী।এমন হাজারো চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে।

হটাৎ মায়ের চিৎকার তার কানে ভেসে আসলো।দৃশ্য তড়িৎ গতিতে উঠে চলে গেলো মায়ের রুমে।কিন্তু সেখানে পৌঁছে যা দেখলো তা ভাবনার উর্ধ্বে ছিলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here