রংধনুর_আকাশ #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ পর্ব-৫৭:

0
460

#রংধনুর_আকাশ
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-৫৭:

৯৩।
সকালে ঘুম থেকেই উঠেই মারিয়াকে দেখে চমকে উঠলো প্রহর। মারিয়া গোলাপি রঙের শাড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আয়নায় প্রহরকে উঠতে দেখে মারিয়া তাড়াহুড়ো করে টেবিলের উপর রাখা চুড়িগুলো নিয়ে পরতে লাগলো। প্রহর বিছানা ছেড়ে উঠে মারিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে আপাদমস্তক দেখে বলল,
“আজকে কিসের ফটোশুট হবে?”

মারিয়া লাজুক হেসে মাথা নুইয়ে বলল,
“আমি এমনিতেই শাড়ি পরেছি।”

“হঠাৎ!”

“পরতে ইচ্ছে করছিল, তাই!”

প্রহর কিছু বললো না। প্রহরের চুপচাপ ভাব দেখে মারিয়া মনে মনে ভাবলো,
“হয়তো আমার উত্তর প্রহরের পছন্দ হয় নি। মহুয়াকে জিজ্ঞেস করলে ও কি এভাবেই উত্তর দিতো? অবশ্যই না। আর এখন তো প্রহরের মনে জায়গা নেওয়ার জন্য আমাকে মহুয়ার মতোই হতে হবে।”

মারিয়া সাথে সাথেই বলে উঠলো,
“আসলে, আমার শাড়ি পরতে ভালোই লাগে।”

প্রহর ভ্রূ কুঁচকে বললো, “কখন থেকে?”

মারিয়া হাসার চেষ্টা করে বলল,
“হঠাৎ ভালো লেগে গেছে। কোনো জিনিসের প্রতি তো হুট করেই ভালো লাগা সৃষ্টি হয়, তাই না?”

প্রহর মাথা নেড়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
“হুম, ঠিক বলেছ! হুট করেই ভালো লাগা সৃষ্টি হয়। এরপর সেই ভালো লাগাটাই ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠে।”

প্রহরের নিরুদ্দেশ চাহনি দেখে মারিয়ার গলায় কথা আটকে গেলো। প্রহর কি এখন মহুয়ার কথায় বলছে? প্রহরের মনে কি এই মুহূর্তে মহুয়ার বিচরণ হচ্ছে? এসব প্রশ্ন ভাবনাতে আসতেই মারিয়ার মাথাটা ঝিনঝিনিয়ে উঠলো। সে প্রহরের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য তার হাতের চুড়িগুলো প্রহরের মুখের সামনে এনে নাড়ালো। ঝুনঝুন শব্দে প্রহর কিছুটা বিরক্ত হলো। প্রহরের কপালে ভাঁজ দেখে মারিয়া চিন্তায় পড়ে গেলো। প্রহর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আর মারিয়াও চুপচাপ চেয়ারে বসে ভাবতে লাগলো প্রহরের ডায়েরীতে লেখা কবিতাটির কথা।

“মায়াবতী, তুমি রোজ শাড়ি পরবে,
হাতে থাকবে কাচের চুড়ি,
আর আমি ঘুম ঘুম চোখে তোমায় দেখে
নির্বাক তাকিয়ে থাকবো,
তুমিই হবে আমার দিন শুরুর মিষ্টি অনুভূতি।”

মারিয়ার চোখ দুটি ঘোলা হয়ে আসছে। সে মনে মনে ভাবছে, প্রহর তো আজ তার দিকে ভালোভাবে তাকায়ও নি। তাহলে কি প্রহরের মিষ্টি অনুভূতি শুধু মহুয়ার জন্যই সৃষ্টি হয়? কিন্তু সে যে প্রহরের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য এতোকিছু করলো?
গতকাল ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে গোলাপি রঙের চুড়ি কিনে এনেছিলো। আর শাড়িটা সে বিয়েতে উপহার হিসেবে পেয়েছে। এরপর আজ সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেই সে শাশুড়ির কাছে গেলো শাড়ি পরতে। কিন্তু প্রহরের তো সেই দিকে খেয়ালই হলো না।

কিছুক্ষণ পর প্রহর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মারিয়াকে বসে থাকতে দেখে মারিয়ার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে হালকা ঝুঁকে বলল,
“আজ বাইরে যাবে? বাতিঘরে যাবে বলেছিলে!”

মারিয়া মুহূর্তেই উজ্জ্বল দৃষ্টিতে প্রহরের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বলল,
“আমি নাস্তা বানিয়ে ফেলেছি। আপনি আসুন, আমি টেবিলে এনে দিচ্ছি। এরপর বের হবো।”

মারিয়া খুব আনন্দিত চিত্তে চেয়ার থেকে উঠে রুম থেকে বেরুচ্ছিলো, কিন্তু হঠাৎ শাড়ির কুচির সাথে পা লেগে ধপাস করে সে মেঝেতে পড়ে গেলো। প্রহর দৌঁড়ে এসে মারিয়াকে টেনে বসালো। মারিয়া কাঁদো কাঁদো মুখে কনুইয়ে হাত বুলাতে লাগলো।

প্রহর মারিয়ার হাত ধরে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“তুমি সাবধানে হাঁটবে না? তুমি এতো অস্থির কেন বলো তো! তোমার এই অস্থিরতাগুলো আমার একদম ভালো লাগে না।”

মারিয়ার চোখের পানিগুলো এবার দরদর করে গড়িয়ে পড়লো। এদিকে নিজের দাঁতের কামড় খেয়ে মারিয়ার ঠোঁট ছিঁড়ে গেছে। তার নাকটাও ব্যথা করছিলো, হাত দিতেই সে ব্যথায় কেঁদে উঠলো। প্রহর মারিয়াকে পাঁজা কোলা করে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিলো।

মারিয়া এখনো নিঃশব্দে কাঁদছে। প্রহর মারিয়ার এলোমেলো শাড়ির কুঁচি দেখে রাগী কন্ঠে বললো,
“তুমি যেহেতু শাড়ি সামলাতে পারো না, তাহলে কেন পরেছো? আর পরেই যেহেতু ফেলেছ, অন্তত আস্তেধীরে হাঁটতে পারতে। যেভাবে দৌঁড়ে যাচ্ছিলে, মনে হচ্ছে ট্রেন ছুটে যাচ্ছে।”

কথাগুলো বলতে বলতেই প্রহর টিস্যু দিয়ে মারিয়ার নাক থেকে বেরুনো রক্তগুলো পরিষ্কার করে দিলো।

শেষমেশ মারিয়ার আজ বাতিঘরে যাওয়া হলো না। উলটো সে এখন প্রহরের সাথে নাকের এক্স-রে করতে এসেছে। মারিয়ার দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আরিয়া ফেরদৌস মাহাথিকে নিয়ে মারিয়াকে দেখতে প্রহরদের বাসায় এসেছে। মারিয়া ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফিরে মাকে দেখেই আরো দুর্বল হয়ে গেলো। মাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করার পর ঘরে চলে গেলো। মারিয়ার ব্যবহার দেখে আরিয়া ফেরদৌস আর মাহাথি খুব অবাক হলো। আগের মারিয়া আর আজকের মারিয়ার মধ্যে তারা অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করেছে। আরিয়া ফেরদৌসের মনে সংশয় ভীড় জমিয়েছে। তার মেয়ে সুখে আছে তো! নাকি সুখে থাকার অভিনয় করছে?

এভাবে সপ্তাহ খানেক কেটে গেলো। মারিয়া পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে। তবে তার প্রহরের মায়াবতী হওয়ার লোভ এখনো কাটে নি। সে প্রহরের লেখা মায়াবতীর মতো নিজেকে সাজায়, সেভাবেই চলাফেরা করতে চায়। কিন্তু সে তো মারিয়া, তার পক্ষে তো মহুয়া হওয়া সম্ভব না। আর মানুষ হয়তো কয়েক ঘন্টা অভিনয় করে থাকতে পারে, কিন্তু সারাক্ষণ মহুয়ার মতো অভিনয় করা তার পক্ষে সম্ভব না। তাই দিনশেষে তার বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে, যা ইদানীং প্রহরকে বিরক্ত না করলেও, মারিয়ার মনে হয় তা প্রহরের কাছে খুব বিরক্তিকর। তবে প্রহর মারিয়ার পরিবর্তিত স্বভাবটা মেনে নিতে পারছে না।

আজ অনেকদিন পর মহুয়া আর প্রহরের দেখা হলো। মহুয়া প্রহরকে দেখেই এগিয়ে এসে বলল,
“ভাইয়া, আপনি এখানে!”

প্রহর মুচকি হেসে বলল,
“একটা কাজে এসেছি।”

“শপিংমলেও আপনার কাজ আছে? এখন কি ব্যবসা করছেন নাকি!”

“না, কেনাকাটা করতে এসেছি।”

“কিন্তু আপনার তো কেনাকাটা করতে ভালো লাগে না।”

“আমারও একই প্রশ্ন! তোমারও তো কেনাকাটা করতে ভালো লাগে না!”

“অযথা ঘুরতে ভালো লাগে না। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাজে তো আসি।”

“আমারও ওই একই উত্তর।”

প্রহর কথাটি বলতেই মহুয়া হেসে উঠলো। প্রহরও হাসলো। আর মারিয়া দূর থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলো।

গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত প্রহর বসার ঘরে সোফায় শুয়ে শুয়ে ফোন দেখছিল। মারিয়া প্রহরকে রুমে আসতে না দেখে বসার ঘরে গিয়ে কয়েকবার ডাকার পরও সে আসবো আসবো বলেও আসে নি। আর এরপর মারিয়াও ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। সকালে উঠেই সে প্রহরের মুখে আলাদা উজ্জ্বলতা দেখেছিল। আর কিছুক্ষণ পর পর প্রহরের ফোনে মেসেজ আসছিলো। এই সবকিছু দেখে মারিয়ার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হলো। তাই সে প্রহরের পিছু নিয়েই এই শপিংমলে চলে এলো। আর এখানে ঢুকেই মহুয়া আর প্রহরকে একসাথে দেখে তার বুকটা কেঁপে উঠলো।

প্রায় বিশ মিনিট প্রহর আর মহুয়া পাশাপাশি হেঁটে কথা বললো। তাদের কথোপকথন মারিয়াকে ঘিরেই। প্রহর মহুয়াকে মারিয়ার পরিবর্তন সম্পর্কে জানালো। মহুয়াও স্বীকার করলো মারিয়ার পরিবর্তনের কথা। কারণ ইদানীং তার সাথে মারিয়া ঠিকভাবে কথা বলে না। আগে মারিয়া নিজ থেকেই ফোন দিয়ে এটা-সেটা বলতো। আর এখন মহুয়া ফোন দিলেও তাড়াহুড়ো করে কল রেখে দেয়। এরপর তারা একটা শাড়ির দোকানে ঢুকলো। মারিয়া দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে তাদের দেখছে। কাচের দেয়ালের ওপাশে তাদের পাশাপাশি বসে শাড়ি পছন্দ করতে দেখে তার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। তবুও সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। তারা দু’টো শাড়ি কিনলো। একটা সাদা, আরেকটা সবুজ। মারিয়া এসব আর সহ্য করতে পারছিলো না। তাই সে চুপচাপ বাসায় ফিরে এলো। বাসায় এসে তার ইচ্ছে করছিলো নিজেকেই শেষ করে দিতে। এভাবে মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে দিনের পর দিন বেঁচে থাকাটা অনেক কষ্টকর।
অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করার পর মারিয়া প্রহরকে ফোন দিলো। প্রহর কল ধরলো না, তবে মেসেজ পাঠালো। লিখলো, “জরুরী কাজে আছি।”

মারিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ফোনটা মেঝেতে ছুড়ে মারলো। সাথে সাথেই ফোনটার স্ক্রিন ভেঙে গেলো। কিছুক্ষণ ফোনটার দিকে তাকিয়ে আবার সেটা হাতে নিলো। ফোন এখনো চলছে, শুধু স্ক্রিনটা ফেটে গেছে। এর মধ্যেই সে নিবিড়ের নম্বরটি খুঁজে বের করে কল করলো। নিবিড় মারিয়ার কল দেখেই চমকে উঠলো। সাথে সাথেই সে কল রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে মারিয়া বলল,
“আমি তোর সাথে একটু দেখা করবো। আজ বিকেলে বিপ্লব উদ্যানে আসতে পারবি?”

নিবিড়ের চোখেমুখে আনন্দ। সে ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“অবশ্যই আসবো। তুমি যেখানে বলবে আমি সেখানেই আসবো।”

মারিয়া কল কেটে আবার কাঁদতে লাগলো। এদিকে প্রহর বাসায় এসে মারিয়ার অগোচরে একটা প্যাকেট আলমারীতে তুলে রাখলো। এমন জায়গায় রাখলো যাতে মারিয়ার চোখে না পড়ে। এদিকে মারিয়া ঘরে ঢুকে প্রহরকে দেখে আবার বেরিয়ে পড়লো। আর প্রহর ভ্রূ কুঁচকে মারিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।

বিকেলে মারিয়া আর নিবিড়ের দেখা হলো। নিবিড় কালো পাঞ্জাবি পরে এসেছে। মারিয়া নিবিড়কে দেখেই বলল,
“চল, ওদিকটাই বসি।”

তারা মুখোমুখি একটা বেঞ্চে বসলো। নিবিড় বলল,
“তুমি হঠাৎ আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছ!”

মারিয়া মলিন হাসি দিয়ে বললো,
“নিবিড়, আমাকে কি মন থেকে ক্ষমা করতে পারবি?”

“মারিয়া, তুমি এসব কি বলছো?”

“আমি শুনেছি কারো মনে কষ্ট দিলে প্রকৃতি তার উপর শোধ নেয়। তোর ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়ে, আমার মনে হয় না আমি কোনো অন্যায় করেছি, কারণ জোর করে তো আমি তোকে আমার মনে জায়গা দিতে পারতাম না। কিন্তু তবুও আজ মনে হচ্ছে তুই আমার উপর খুব রেগে আছিস, তাই হয়তো আমি প্রহরকে হারিয়ে ফেলছি।”

নিবিড় মারিয়ার কথা শুনে কিছুটা দমে গেলো। মারিয়া আবার বলল,
“আমি প্রহরকে মারাত্মক ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।”

“কি ঝামেলা!”

“প্রহর আমাকে ভালোবাসে না। ও মহুয়াকে ভালোবাসে। বিয়ের আগে থেকেই ওকে ভালোবাসতো। আমরা জমজ ছিলাম, আর ও মহুয়ার নামটাও জানতো না। তাই আমাদের বিয়েটা হয়ে গেছে। প্রহর বিয়েটা মেনে নেয় নি৷ ও আমাকে সহ্য করে যাচ্ছে। অথচ ও আমার সাথে সুখে নেই। আজকে মহুয়া আর প্রহর শপিংমলে লুকিয়ে দেখা করেছে। কাল সারারাত প্রহর মহুয়ার সাথেই চ্যাটিং করেছে। আমার এসব সহ্য হচ্ছে না। আমি নিজেকে শেষ করে দিতে পারবো না, আমার ওতো সাহস নেই।”

নিবিড় মারিয়ার হাত শক্ত করে ধরে বলল,
“মারিয়া, তুমি নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা কখনোই বলবে না। তুমি প্রহরকে ছেড়ে দাও। তোমরা আলাদা হয়ে যাও। এরপর আমি তোমাকে বিয়ে করে নেবো।”

মারিয়া রাগী দৃষ্টিতে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,
“আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি। কারণ আমার মনে হচ্ছে তোকে হয়তো কোনোভাবে কষ্ট দিয়েছি, তাই আমার এতো কষ্ট হচ্ছে। আমি তোকে বিয়ে করতে আসি নি। তোর কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে আমাকে অসুখী দেখে তোর খুশি লাগছে?”

“কি বলছো এসব? আমি কেন খুশি হবো!”

“তাহলে প্রহরকে ছেড়ে দেওয়ার বুদ্ধি দিচ্ছিস কেন? আমার প্রহরকেই লাগবে। আমি আমার ভালোবাসা ত্যাগ দিতে পারবো না। আর আমি এসব কাউকে জানাতেও পারছি না, তাই তোকে জানালাম৷ সিয়া, মিতু ওদের বললে কোনো একদিন যদি আমাকে খোঁচা দেয়? দুর্বলতার কথা কাউকেই বলা উচিত না। আর একদিন যদি আমার আর প্রহরের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়, তখন ওরা আমার বরকে আর সম্মান দেবে না।”

“তাহলে আমাকে কেন জানাচ্ছো?”

“তোর সম্মান দেওয়া না দেওয়া ততোটা গুরুত্বপূর্ণ না।”

নিবিড় বেঞ্চ ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল,
“তোমার প্রতিটি বাক্যে আমি অবহেলিত হই। তবুও তোমার বাক্যগুলো শুনতে ভালো লাগে। তোমাকে দেখতে ভালো লাগে। মারিয়া, আমি তোমাকে মন থেকে ক্ষমা করে দেবো, যদি আমাকে দ্বিতীয়বার বন্ধু হওয়ার সুযোগটা দাও।”

“বন্ধু!”

“হ্যাঁ, আমি আর তুমি ভালো বন্ধু হবো। ভার্সিটির পর প্রতিদিন দেখা করবো। আর তোমাকে মহুয়া হতে হবে না। তুমি মারিয়া হয়েই থাকো। দেখবে প্রহর ভাইয়া তোমাকে ভালোবেসে ফেলবে। যেদিন প্রহর ভাইয়া তোমাকে নিজের মনের কথাটা জানাবে, সেদিন আমাকে অবশ্যই বলবে।”

“তোর কথাগুলো কিছুই বুঝতে পারছি না। প্রহর আমাকে ভালোবাসার কথা কিভাবে জানাবে? ও তো আমাকে ভালোই বাসে না।”

“বাসবে। কাউকে ভালোবাসা খুব সহজ, তবে ভুলে যাওয়া অনেক কঠিন। একসাথে দু’জনকে ভালোবাসা যায়। কারো প্রতি অনুভূতি প্রত্যক্ষ, কারো প্রতি পরোক্ষ। কোনো অনুভূতি হঠাৎ মনে পড়ে যায়, আবার কোনো অনুভূতি সবসময় আমাদের সাথে থাকে। আর তুমি হবে প্রহর ভাইয়ার সেই প্রত্যক্ষ আর সবসময় সাথে থাকার অনুভূতি। যা চাইলেও ভুলে যাওয়া সম্ভব না। তবে তিনি যদি সত্যিই মহুয়াকে ভালোবাসে, তাহলে তোমার অনেক অপেক্ষা করতে হবে। আর যদি সেটা ভালোবাসা না হয়ে শুধুই আবেগ হয়, তাহলে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। আর প্রথম দেখায় ভালোবাসা সাধারণত আবেগই হয়। যেহেতু ওরা সময় কাটানোর তেমন সুযোগ পায় নি, তাহলে সেই সম্পর্কে কোনো মুহূর্ত গড়ে উঠে নি।”

নিবিড়কে থামিয়ে দিয়ে মারিয়া বলল,
“ওদের তো বাতিঘরে প্রায়ই দেখা হয়।”

নিবিড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“একটু অপেক্ষা করেই দেখো।”

মারিয়া নিবিড়ের কথা রাখলো। সে অপেক্ষা করতে লাগলো। তবে এরই মধ্যে নিবিড়ের সাথে তার আগের চেয়ে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। আর তাদের নিয়মিত যোগাযোগও হয়। তাদের কথার বিষয়বস্তু কিভাবে মারিয়া আজ প্রহরকে খুশি করার চেষ্টা করবে। অন্যদিকে প্রহর আবার মহুয়ার সাথে কথাবার্তা বলা শুরু করেছে। সে অনেকদিন মহুয়ার কাছ থেকে দূরত্ব রেখেছিল। তবে এখন আর সমস্যা হচ্ছে না৷ কারণ এখন মহুয়ার সাথে কথা বললে তার আগের মতো অনুভব হয় না। খুবই সাধারণ মনে হয়৷

সবকিছুর ভীড়ে এখনও গভীর রাতে চারটি অস্তিত্ব ছটফট করেই রাত পার করে। কারণ অনুভূতি।

একজন পুরোনো সম্পর্কে ধুলো জমে যাওয়ায় ব্যথিত, আর অন্যজন প্রিয় মানুষ হারিয়ে ফেলার কষ্টে, একজন অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারার ব্যর্থতায় ঘুমাতে পারে না, আর অন্যজন প্রিয় মানুষকে না পাওয়ার আক্ষেপে হতাশাগ্রস্ত।

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here