এক_শহর_প্রেম💓 লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_১৮

0
942

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
আদিরার গনিতের শিক্ষক খুব হতাশ হয়ে আদিরার মাকে ফোন করে জানান, দেলোয়ার নাকি বাস কাউন্টারে তার লোক লাগিয়েছে। প্রতিটা বাস সাতক্ষীরা ছাড়ার আগে দেলোয়ার চিরুনি তল্লাশির মতো খুঁজে। আদিরাকে কোনোমতেই ঢাকা যেতে দিবে না।

আদিরা ও তার মায়ের মনোবল শূণ্যের কোঠায়। আদিরার মা আদিরার বাবার কাছে গেলেন। আদিরার বাবা চোখ বুজে শুয়ে আছেন। আদিরার মা ভাবলেন হয়তো ঘুমিয়ে আছেন। ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে নিলে আদিরার বাবা ডাক দিলেন,

–রেবেকা! এইহানে বসো।

আদিরার মা ডাক শুনে থামলেন তারপর বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে বসলেন। আদিরার বাবা লম্বাশ্বাস ফেলে বলেন,

–চেয়ারম্যানের বাড়ি থিকা আসার সময় শুনছিলাম বাস কাউন্টারে চেয়ারম্যানের পোলা তার লোক লাগাইবো। আগেরবার তো আদিরারে বিয়া করার কথা দেলোয়ার নিজে আমারে কইছিল। তার তিন-চারদিনের মধ্যে আদিরারে ঢাকায় পাঠায় দিলা। আমার সত্যি নিজের মাইয়ার লাইগ্যা গর্ব হইছিল। কিন্তু মাইয়া আমার এহানে আইয়া বড়ো বিপদে পইরা গেছে। ঘরে যুবতি মাইয়া আর বাইরে যদি শ*কুন উৎ পাইত্তা থাকে তো কেমনে চিন্তা মুক্ত থাকি কও? দেলোয়ার যদি সারা গ্রাম জানায়ে আদিরারে বিয়া করে তয় আদিরার সম্মান বাঁচবো। আল্লাহ্ না করুক আমার মাইয়ার কোনো ক্ষতি কইরা লাইলে? এর লাইগ্যা আমি আদিরারে বিয়া দিতে চাইছিলাম অন্যখানে। যাতে মাইয়া আমার দেলোয়ারের কুনজর থেকে বাঁচতে পারে। এহন আর কিছু করার নাই। আল্লাহর কাছে কও যেন দেলোয়ার শোধরায় যায়। দেলোয়ার তো বিয়া করবই যেনতেন উপায়ে।

আদিরার মা স্বামীর কস্ট উপলব্ধি করতে পারলেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অশ্রুজল বিসর্জন দিচ্ছে। এদিকে আদিরা রিন্তিকে ফোন করে অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে। রিন্তিকে সব বলার পর রিন্তি সিদ্ধান্ত নিলো মাহিকে জানবে। করলোও তাই। মাহি সবটা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। তার দাভাইয়ের জীবনে সুখ আসতে চলেছে তা এভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে না। মাহি মারসাদকে ফোন করে। মারসাদরা সকালের আগেই হোস্টেলে এসেছে। তারপর পাঁচজনেই ঘুমোচ্ছে সারাদিন ধরে। ফোনের চিৎকারের শব্দে মারসাদ হাতরে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে কানে ধরে।

–হ্যালো।

–দাভাই তুই কোথায়?

–হোস্টেলে। ঘুমাচ্ছি। ফোন রাখ।

মারসাদ ফোন কান থেকে নামিয়ে নিতে নিলে মাহি হড়বড়িয়ে বলল,
–না। না। রাখিস না। ইম্পরট্যান্ট কথা আছে দাভাই।

মারসাদ ঘুম ঘুম ক্লান্ত স্বরে বলল,
–বল। জলদি বলে ফোন রাখবি। টানা দুইদিন জার্নি করে শরীর খুবই ক্লান্ত। ঘুম দরকার আমার।

মাহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–তোর ঘুমানোর সময় নেই এখন। ঘুমালে যে তোর হৃদয়হরণী সারাজীবনের জন্য অতল অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।

মারসাদের এই সময় এরকম উদ্ভট হেয়ালি কথার মানে বের করার মতো চিন্তাশক্তি নেই। ঘুমের ঘোরে মানুষ হ্যাঁ কেও না বলে। মারসাদ বিরক্ত হয়ে বলে,

–যা বলার ক্লিয়ারলি বল। হেয়ালি বাদ দে।

মাহি এবার কাটকাট কন্ঠে বলে,
–আদিরার বিয়ে। একটা খারাপ লোকের সাথে। সেই খারাপ লোকটা সাতক্ষীরার বাস কাউন্টারে নিজের লোক লাগিয়ে রেখেছে তাই আদিরা ঢাকাও আসতে পারছে না। এখন তুই কী করবি?

মারসাদ হুড়মুড় করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। হতভম্ব হয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

–মানে কী এসবের? বিয়ে কবে ঠিক হলো? আমাকে আদিরা সেদিন কিছু জানায় নি!

মাহি বলল,
–কী জানাবে? ও নিজে কী জানতো? ওর গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলের কু*নজর ওর উপর আগের থেকে ছিল। বিয়ের প্রস্তাব ছেলে নিজে আদিরার বাবার কাছেও দিয়েছিল। এখন ছেলের বাবাও ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। ছেলে এবার সব পথ রুদ্ধ করে রেখেছে। আগেরবার তো চুপিসারে ঢাকা চলে এসেছিল। এবার সেই পথটাও খোলা নেই।

মারসাদ খট করে ফোন কে*টে দিলো। মাহি অবাক হয়ে গেলো মারসাদের কান্ডে। মারসাদ রাগে চোয়াল শক্ত করে আদিরার নাম্বারে ডায়াল করলো। তার এখন আদিরার উপরেও রাগ উঠছে। নিজের গ্রামে বিপদ জেনেও এতো যাওয়ার জন্য পা*গল হওয়ার কি ছিলো? মারসাদের ভাষ্যমতে। আদিরা নিজের ঘরে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ফোনের শব্দে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মারসাদের নাম্বার থেকে কল এসেছে। আদিরা ফোনটা রেখে দিলো। তার খুব খুব কান্না পাচ্ছে। কান্নার সময় তার কথা বলতে কস্ট হয়। কিন্তু অধৈর্য মারসাদ কী ক্ষান্ত হবে? মোটেও না। সে ফোন রিসিভ না হওয়াতে আবারও ফোন দিলো। এবারও রিসিভ না হওয়াতে রেগে ফোনটা ফ্লোরে আ*ছাড় দিলো। যার বৌদলতে ফোনের স্ক্রিনে ফা*টল রেখা ফুটে উঠলো। বিছানায় কয়েকবার ঘু*ষি দিয়ে দুইপাশে ঘুমিয়ে থাকা আহনাফ ও রাহিন দুজনকেও ঘু*ষি দিলো। আহনাফ ও রাহিন দুজনেই হকচকিয়ে লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো। রাহিন বুকে থু থু দিয়ে আশেপাশে নজর বুলিয়ে বলল,

–কী হইছে? কী হইছে? মা*র*লো কে?

আহনাফও বলল,
–আমাকেও তো? কিন্তু আমি কী করছি?

মারসাদ তার দুই বন্ধুর বোকা বোকা কথায় বেজায় বিরক্ত হলো। সে নিজের দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–আমি মা*রছি তোদের। কেনো? কম হইছে?

রাহিন ও আহনাফ অবাক হয়ে সমস্বরে বলল,
–কিন্তু কেনো?

মারসাদ রেগে বলল,
–আদিরাকে বল আমার ফোন রিসিভ করতে। এই মেয়ে এতো ঘারত্যা*রা কেন!

আহনাফ মুখ লটকে বলে,
–কেন কী করছে?

মারসাদ আহনাফ ও রাহিনকে মাহির বলা কথাগুলো বলল। সব শুনে ওরা দুজনেই চুপ। তাদের মা*থায় কোনো কিছু আসছে না। মারসাদ আবারও আদিরার নাম্বারে ডায়াল করলো। এবারও রিসিভ হলো না। এবার মারসাদ মেসেজ করলো,

“এই মেয়ে তোমার সমস্যা কোথায়? ফোন রিসিভ করছো না কেনো? আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করলে খুব পস্তাবে বলে দিলাম। যদি এবারও ফোন রিসিভ না করো তবে তাহলে…”

আদিরা মেসেজ টোনের শব্দ ঝাপসা নজরে মেসেজটা দেখলো। মেসেজটা পড়ে তাচ্ছিল্য হাসলো। কারণ এখন সে লোকটার ধরাছোঁয়ার বাহিরে। মারসাদ এখন তাকে যতই হু*মকি ধ*মকি দেক না কেনো, আদিরার কাছেও তো আসতে পারবে না। আদিরার এবার আরও কস্ট হচ্ছে। সে তো মায়ায় পরে গিয়েছিল। মারসাদের হুটহাট কাজে তাকে চরম অবাক ও লজ্জাতে গ্রাস করলেও মনের মধ্যে এক অদ্ভুত শিহরণ হতো। মারসাদের বিপদের সময় পাশে দাঁড়ানো, কথার দ্বারা বাকরুদ্ধ করা, উদ্ভট কারণে ডাকা। সবটাই মিস করবে সে।

মারসাদ কালক্ষেপন না করে আহনাফ ও রাহিনকে বলল,
–ওই দুই কুম্ভকর্ণকে ঘুম থেকে তোল। আমরা এক্ষুণি সাতক্ষীরার জন্য রওনা করবো।

রাহিন চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো। কিছু বলতে নিবে তার আগেই আহনাফ তাকে চি*মটি কা*টে। রাহিন আহনাফের দিকে তাকালে আহনাফ ইশারা করে চুপ থাকতে। মারসাদ শার্ট পড়ে অফিসার শফিকের নাম্বারে কল করে। রাত ৮টার বেশি বাজে। অফিসার শফিক ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলে,

–হ্যাঁ মারসাদ বলো।

মারসাদ বলে,
–ভাই আপনার অফিশিয়াল গাড়িটা আবারও দেওয়া যাবে? সাতক্ষীরা যাওয়া লাগতো। খুব আর্জেন্ট। জীবন-ম*রন প্রশ্ন।

অফিসার শফিক বিনাবাক্যে রাজি হয়। গাড়িটা তাকে ডিপার্টমেন্ট থেকে দেওয়া হয়েছে। মারসাদ প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি নিয়ে তার বন্ধুদের নিয়ে রওনা করে। আহনাফ গাড়িতে উঠে বলে,

–মাইক্রোতে ছয় ঘন্টা লাগার কথা। তাহলে আমরা রাত ৩.৩০ বা ৪টার দিকে পৌঁছে যাবো। তুই আদিরাকে আবার ফোন করে বল যেনো ওই সময় কোথাও একটা লুকিয়ে আসে।

মারসাদ আদিরাকে মেসেজ করে দিলো। রাত ৯টার বেশি বাজে। গ্রামাঞ্চলে সচরাচর এতসময় সবাই ঘুমিয়ে যায় কিন্তু আদিরার চোখে ঘুম নেই। শুনশান নিস্তব্ধতার মধ্যে ফোনের শব্দে আদিরার ধ্যান ভাঙে। আদিরা মেসেজটায় দেখে,

“আমরা সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরেছি। তুমি কোথায় থাকবে জানাও। ভোর চারটার মধ্যে পৌঁছে যাবো আশাকরি। ”

আদিরা মেসেজের লেখাগুলো পড়ে হতবাক হয়ে গেলো। তার বিশ্বাস হচ্ছে না কিছু। এই উদ্ভট লোকটা তাকে এখান থেকে মুক্ত করতে আসবে! আদিরা থম মেরে কিছুক্ষণ বসে রইল। তারপর হুঁশ ফিরলে জলদি করে তার মায়ের ঘরের দিকে দৌড় দিয়ে নিচু শব্দে মাকে ডাকলো।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,
কাল একটা ল্যাবের ভাইবা সহ আরও তিনটা ক্লাস আছে আবার পরশু চারটা ক্লাসের মধ্যে একটা ক্লাস কুইজ ও অন্য একটা ল্যাবের কুইজ। এখন আপনারা বলেন? কাল আমি কিভাবে গল্প দিবো?
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here