#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৩ (বোনাস)
চায়ের সাথে আড্ডা জমজমাট হয়ে উঠেছে। আহনাফের মা কিছুক্ষণ থেকে উঠে চলে যান। বিকেলের শেষ সময়টা একটু পার্কে হাঁটাহাঁটি করবেন তার স্বামীকে নিয়ে। শাশুড়ির উঠে যাওয়া দেখে আহনাফের ভাবি বলেন,
–মায়ের সামনে বলতে পারছিলাম না। তা তোমাদের কার কার বয়ফ্রেন্ড আছে? আদিরার তো বিয়েই হয়ে গেল। তো বলো মেয়েরা।
মাহি ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,
–আমাদের মতো কিউট বাচ্চাদের তোমার এই মনে হয় ভাবি? এটা ভাবতে পারলে তুমি! আমরা ওসবে জড়াই না। আমরা ভালো মেয়ে বুঝলে। এতো ভালো মেয়ে তুমি হারিকেন দিয়ে খুঁজলেও পাবে না এমনকি অণুবীক্ষণযন্ত্রের পাওয়ারফুল লেন্স দিয়েও না।
আহনাফের ভাবি সেন্টিমার্কা হাসি দিয়ে বলে,
–ঠিকই বলেছ। তাইতো আমার দেবর সাহেব এখনও সিঙ্গেল! বেচারা ভাইটার জন্য দুঃখে আমার এখন পিপাসা লেগে গেলো গো! এ কেমন মেয়েরে সে মন দিয়েছে যে ব্যাকটেরিয়ার থেকেও পবিত্র! ব্যাকটেরিয়াকে তো অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু তোমার তাও যাবে না।
মাহি মুখ ফুলিয়ে বাঁকা চাহনি নিক্ষেপ করল অতঃপর বলল,
–তোমার দেবর আমাকে থ্রেড কেনো দিয়েছে বলো? সুন্দর করে বলতেছিল তারপর নরম স্বর রুক্ষ স্বরে পরিবর্তন কেনো হলো বলো? আমি একটু ভাব দেখাব তাও পারব না! তাই তাকে আমি ঝুলায় রাখব। হুহ্! ঝুলে ঝুলে যদি আমার সাথে লাগতে আসার স্বভাবটা কমে!
মাহির কথা শুনে সকলে হা করে তাকিয়ে আছে। মাহি এজন্য আহনাফের সাথে কথা বলছে না শুনে সবার আকাশ থেকে পরার মতো অবস্থা। রিন্তি অবাক স্বরে বলে উঠে,
–তার মানে তুই আহনাফ ভাইয়াকে ভালোবাসিস? এই একটু কারণে তুই তার সাথে কথা বলিস না?
মাহি ঠোঁট উল্টে চাইল সকলের দিকে। তারপর বলল,
–সে আমার সাথে শুধু লাগতেই আসে। আমার সব কথায় প্যাঁচ ধরে সে। এমনে চললে তো মা*রা*মা*রি করেই আমরা শেষ!
উপস্থিত সকলে কপালে হাত দিয়ে সমস্বরে বলে উঠে,
–হায়রে কপাল!
সাবিহা এবার শক্ত কন্ঠে বলে,
–আমি এবার ছাদে আহনাফ ভাইয়াকে ডাক দিয়ে যেতে বলব। তারপর তুই যাবি। আজকে তোকে কনফেস করতেই হবে। নাহলে তোর একদিন কী আমার যতদিন লাগে।
মাহি আমতা আমতা করে বলে,
–পরে বলবনে। একটু প্রিপারেশন লাগবে তো। আই এম নট প্রিপেয়ারড এট অল।
কথাটা বলা মাত্রই সবার তীক্ষ্ম দৃষ্টিবাণ নিজের উপর দেখে থতমত খেয়ে যায় মাহি। এরপর আর কী! অগ্যতা তাকে রাজি হতে হলো।
__________
আহনাফ ছাদে গিয়ে পশ্চিমদিকে হেলে পরা লালাভ দিবাকরের পানে চেয়ে আছে। তাকে ছাদে কেনো আসতে বলেছে জানানো হয়নি। পড়ন্ত বিকেলের রক্তিম সূর্যরশ্মি তার সামনের কপালে পরে থাকা চুলগুলোতে ঝিলিক করছে। মুক্ত সমীরণ বড্ড মনকারা। দূরে একটা শঙ্খচিল উড়ে গেল। সন্ধ্যার বাতাসে শঙ্খচিল তার স্বীয় নীড়ে ফেরে। বাড়ির পাশে আশ্বিনী আম গাছে কাঁচা-পাকা আম ঝুলে আছে। অবস্থা এমন যে আমগুলো কয়েকদিনের মধ্যেই পারতে হবে। আহনাফের পড়নে সাদা শার্ট ও খাঁকি রঙের জিন্স। একটু পর বাহিরে বেরোবে বলে তৈরি হয়ে নিয়েছিল। মাহি ছাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পেছোন থেকে সুদর্শন যুবকটির রূপ পড়ন্ত সূর্যরশ্মিতে অবলোকন করছে। পকেটে দুহাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। মাহির ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে গিয়ে পেছোন থেকে জড়িয়ে ধরতে। নিজের অযাচিত ইচ্ছে সংযত করে নিজের মধ্যে একটু গম্ভীর ভাবমূর্তি ধারণ করে এগিয়ে যায়। তারপর ঠিক আহনাফের পেছোনে দাঁড়িয়ে মাহি শব্দ করে,
–উহুম উহুম।
আহনাফ এতক্ষণ অন্যমনস্ক ছিল। এখন সে মাহির করা শব্দে মাহির দিকে তাকায়। তারপর অপ্রস্তুত কন্ঠে বলে,
–তুমি? কখন এলে?
মাহি মনে মনে কুটিল হাসল। তারপর বলল,
–এইতো অনেকক্ষণ। তুমি নাজানি তোমার কোন গফের কথা চিন্তা করছিলে যে আমাকে লক্ষ্যই করোনি।
আহনাফ ঘার হালকা ঘুরিয়ে বাহিরের দিকে নজর দিয়ে মলিন হাসল। মাহি ইতিউতি করে দেখতে চাইল আহনাফের রিয়াকশন। আহনাফ এরপর মাহির আঁখিজোড়াতে নিজের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে হেসে বলে,
–ভালোবাসা এতো সস্তা না যে আজ এর প্রতি মন আসল কাল ওর প্রতি। যদি এমনই হতো তাহলে শত শত হৃদয় ভাঙার চাপা কষ্টে রাতগুলো ভারী হতো না। যারা আজ একে ভালোবাসে তো কাল ওকে তারা আসলে ভালোইবাসে না। তোমার যদি আমাকে ওরকম মনে হয় তাহলে তুমি ভাবতে পারো। তোমার ভাবনাতে আমার কন্ট্রোল নেই। তুমি নিজ ভাবনায় স্বতন্ত্র।
মাহি থমকে গেল। সে তো মজা করে বলেছিল। কিন্তু তার কথায় যে কারও হৃদয়ে আ*ঘাত হানবে তা তার চিন্তার সীমায় ছিল না। মাহি অপরাধী সুরে বলে,
–আই এম সরি। আই ডিডেন্ট মিন টু। কেমন আছো?
আহনাফ হালকা হাসল।
–এইতো আলহামদুলিল্লাহ্। জানো মনের বোজ একদিক দিয়ে একটু হালকা হয়েছে আবার আরেকদিক দিয়ে ভয়ানক মন খারাপেরা ভর করেছে। সব মিলিয়ে বেশ আছি। তা তুমি কেমন আছো?
মাহি আহনাফের অভিমান মিশ্রিত কথা বুঝতে পারল। মাহি বলল,
–এগেইন সরি। তোমাকে ইগনোর করা উচিত হয়নি। আমি খুব ভয়ে ছিলাম। কী হবে না হবে সেটার ভয়ে।
আহনাফের শান্ত জবাব,
–আমি তোমাকে জবাবদিহি করতে বলিনি। তুমি আমার সাথে কোনো কমিটমেন্টে নেই। তোমার মন তুমি যা খুশি করো।
আহনাফ মাহির সাথে আগে কখনও এমন করে কথা বলেনি। হঠাৎ আজ বলাতে তার খুব খারাপ লাগছে। মাহি ভাবল, আর কথার মারপ্যাঁচে ফেলে সময় নষ্ট করবে না। সরাসরি এবার চোখ মুখ খিঁচে বলে উঠে,
–আই লাভ ইউ ঠু। সরি এতোদিন অপেক্ষা করানোর জন্য। আমার ভয় হচ্ছিল কারণ তোমার সাথে আমার প্রচুর ঝ*গড়া হয় যার দরুন ভেবেছিলাম পরে যদি সম্পর্ক খারাপ হয়! সরি। আমার জন্য তোমার মন এতোদিন খারাপ ছিল।
মাহি নিজের মনের সব গোপন কথা বলে লম্বা একটা দম নিলো। আস্তে আস্তে পিটপিট করে চোখ খুলে আহনাফের রিয়াকশন দেখতে চাইল। কিন্তু কী আশ্চর্য! আহনাফ কেমন ভাবলেশহীন ভাবে চেয়ে আছে। আহনাফের চোখের ভাষা মাহির বোধগম্য হচ্ছে না। মাহি ভ্রুঁ কুঁচকে ঠোঁট উল্টে আহনাফকে পর্যবেক্ষণ করছে। তাৎক্ষণিক আহনাফ হাই তুলতে তুলতে বলে উঠল,
–যা আমি জানি তা কেনো বলছ! নতুন কিছু বলো।
মাহি আহনাফের কথায় হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এবার রেগে গিয়ে তৎক্ষণাৎ ধুপধাপ পা ফেলে ছাদ ত্যাগ করল। মাহি যেতেই আহনাফ নিজের কন্ট্রোল করে রাখা হাসি আর চেপে রাখতে পারল না। জোরালো শব্দে হেসে উঠল। আহনাফের বরাবার গাছের ও পানির টাংকির আড়াল থেকে মারসাদ, মৃদুল, রাহিন ও রবিন হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলো। রাহিন ভিডিও অফ করে এসে বলে,
–তুই ভালো হবিনা তাই না? তোর এই উল্টো কথার জন্যই মেয়েটা রেগে যায়।
আহনাফ বাঁকা হেসে বলে,
–ওর রাগ শুরুও আমাতে আর তার সমাপ্তিও আমাতে।
মারসাদ তীক্ষ্ম নজরে চেয়ে বলে,
–আমার বোনকে বেশি রাগাবি না। তাহলে তোরে আমি…!
আহনাফ মারসাদের কথাকে পাত্তাই দিলো না।
–কিছুই করতে পারবি না। আফটারঅল আই এম ইউর বেষ্টফ্রেন্ড তাও লং টাইম!
পাঁচ বন্ধু একত্রে হেসে উঠে। সূর্য আজকের মতো শেষ হেসে আস্তে আস্তে অস্তমিত হলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
আমি কিছুটা অসুস্থ। কাল রাত থেকে বুকে হালকা ব্যাথা হচ্ছিল যা আমি কেয়ার করিনি। এখনও সেটা হচ্ছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।