#দিন_বদলের_হাওয়ায় [৯]
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)
আজ আমার মেজ জা এসেছে। ও আসার কিছুক্ষণ পরই সবাইকে ডাকলো। কি যেন কথা আছে সবার সাথে। সবাইকে শাশুড়ির ঘরে ডাকলো। আমি আর রেদোয়ান দুজনেই সেখানে গেলাম। আমার শাশুড়ি, ছোট জা, মেজ জা সবাই বসে আছে একসাথে। ওদের এভাবে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখে আমি বললাম, আমাদের ডেকেছো জুলি?
আমার মেজ জা আমার কথা শুনে আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলো। বললো, হ্যাঁ ভাবি একটু কথা তো ছিলো।
বলো কি বলবে।
কথাটা হচ্ছে ভাবি…
আমার জা আমতা আমতা করতে লাগলো। শান্তি ওর এই সুর দেখে বললো, এতো ইনিয়ে বিনিয়ে ঢং করো না তো ভাবি। কি বলতে ডেকেছো তাই বলো তো জলদি। কি কারণে আমাদের এখানে জড়ো করলে?
জুলি এবার স্পষ্ট সুরে বললো, কথাটা হচ্ছে ও তো বিদেশ। আমি একা। আমি চাচ্ছি এখন থেকে আমি আমার বাপের বাড়ি থাকবো। তাহলে আমার সাংসারিক খরচ কিছুটা বেঁচে যাবে। আমার আয় হবে।
জুলির কথায় ভীষণ অবাক হলাম। ওর কথা শেষ হতেই শান্তি বললো, তুমি এ কথা বলছো ভাবি? আমিও তো একা। তাহলে আমিও আমার বাপের বাড়ি চলে যাবো। এটাই ভালো হবে।
শাশুড়ি ওদের কথা শুনে বললেন, কি বলো তোমরা? দুইজনেই চইলা গেলে। সংসারের কি হইবো? বাড়ি ভাড়া, সংসার খরচ কিভাবে চলবো?
জুলি শাশুড়ির কথা শেষ হতেই ঝটপট বললো, আমরা দুজনেই যদি চলে যাই তবে বাড়িটা ছেড়ে দিবো মা।
তাহলে আমরা এতোগুলা মানুষ থাকমু কই?
আমার শাশুড়ি চিন্তিত হয়ে বললেন। শান্তি তাকে বললো, আম্মা আপনি তবে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। মাসে মাসে আমরা আপনার জন্য খরচ পাঠিয়ে দিবো। সেটা দিয়ে আপনি চলতে পারবেন।
তাহলে রেদোয়ান আয়রা?
জুলি আমতা আমতা করে বললো, ভাইয়া তো এখন কিছু একটা করছে। তাদের সংসার তারাই তো চালাতে পারবে এখন। ঠিক না ভাইয়া?
রেদোয়ানকে উদ্দেশ্য করে শেষোক্ত প্রশ্নটি করলো জুলি। রেদোয়ান স্বাভাবিক ভাবেই বললো, হ্যাঁ কেন পারবো না? আমার সংসার আমাকেই তো চালাতে হবে। তোমরা যেহেতু নিজেদের ডিসিশন জানিয়ে দিয়েছো তখন তো আর কিছু করার নেই।
জুলি বিনিময়ে হাসলো। শান্তি বললো, তাহলে তো বাড়িওয়ালাকে বাড়ি ছাড়ার কথা বলতে হয়। এ মাসের তো শেষ দিক চলে এসেছে। এবার ভাড়া দেওয়ার সময় বলে দিবো। তাহলে আর এক মাস পর বাড়িটা ছাড়তে পারবো।
শাশুড়ি বললেন, কিন্তু দেশের বাড়িতে আমি একলা থাকমু কেমনে? একলা একলা এতো কাম করমু কেমনে?
শাশুড়ির কথা শুনে মনে মনে ভাবলাম এই যাত্রায় তার একটা শিক্ষা হবে। কয়েক বছর ধরে তো এখানের কুটাটা ওখানে নেন নি। এ বাড়িতে আসার পর থেকে তাকে রান্নাঘরে রান্না করতে যেতে আমি দেখি নি। গত ছয় মাসে তো আরো বেশি অকর্মা হয়ে গেছেন তিনি। আগে আমি রান্নাঘরে থাকলে এক বার হলেও যেয়ে জিজ্ঞেস করতেন কি রান্না করছি কিছু লাগবে না ইত্যাদি। এখন তাও করেন না। এবার উনি বুঝবেন কেমন লাগে।
শান্তি বললো, আপনি একাই তো আম্মা। তত কাজ তো নেই। একা মানুষের আর কি? ঠিকই সব করে ফেলবেন দেখবেন।
শাশুড়ি আর কথা বাড়ালো না। যে যার মতো যার যার ঘরে চলে গেলো। আমি আর রেদোয়ানও ঘরে চলে এলাম। রেদোয়ান খাটে বসে চিন্তামগ্ন হয়ে পড়লো। কিভাবে কি করবে সেই নিয়েই হয়তো ভাবছে। আমি ওর পাশে গিয়ে বসে পড়লাম। জিজ্ঞেস করলাম, কি ভাবছো?
রেদোয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বললো, ভাবছি বাবার কথা। আমি আমার বাবার মতো হতে পারলাম না।
কেন?
বাবা তার ভাইবোনদের আগলে রাখতেন। কিন্তু আমি! আমাদের সাজানো গোছানো সংসারটা ভেঙে যাচ্ছে।
এটা কি তোমার ব্যর্থতা? ওরা তোমার সাথে না থাকতে চাইলে তুমি ওদের আগলে রাখবে কেন?
রাখছি না তো। দেখলে না যা খুশি তাই করতে বললাম।
তুমি ওদের কথা ভাবছো আমাদের কথা ভাবছো না? আমরা কোথায় থাকবো? কি করে থাকবো? খাবো কি?
আমাদের একটা ব্যবস্থা হবেই দেখো। সব তো আল্লাহর হাতে।
তা তো জানি। দুটো টিউশনিতে আমাদের চলবে?
দুটো খেয়ে পড়ে চলে যাবে। থাকতে পারবে না আমার সাথে ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে?
তুমি যেখানে যেভাবে রাখবে আমি সেভাবেই থাকতে পারবো।
তাহলে এতো কথা কিসের? দিন চলে যাবে আমাদের।
আমি আর কিছু বললাম না। দিন ঠিকই চলে যাবে। এখন যেমন কেটে যাচ্ছে দিন তখনও কাটবে। এখন কষ্টে আছি হয়তো তখন আরেকটু বেশি কষ্ট হবে। কিন্তু তখন শান্তিতে থাকবো। কেউ তখন খোঁটা দিতে পারবে না। মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবো।
___________
সময়ের আপন গতিতে চলমান। কেটে গেলো সাত দিন। ভালো খারাপ মিলিয়েই দিন গুলো কেটে গেলো। আজ আমার মামা শ্বশুর আর মামি শাশুড়ি বেড়াতে আসবেন। তাদের জন্য রমরমা আয়োজন করা হচ্ছে। শাশুড়ি বলেছেন আমার মামা শ্বশুর আর মামি শাশুড়ির আদর যত্নে যেন কোনো কমতি না হয়। আমি তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। আমার মামা শ্বশুর খুব ভালো মনের মানুষ। তিনি মাস তিনেক আগে আমাদের বাড়িতে আরেক বার এসেছিলেন। তখন আমার অবস্থা দেখে মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, তুই সুখী হবি দেখবি মা। এখন দুর্দিন আছে সুদিন একদিন তোর আসবে। দেখছিস না তোর দুর্দিনে মানুষ গুলো যেমন বদলে গেছে তোর সুদিনে তারা ঠিক একই ভাবে বদলে যাবে। তখন তারা আগের মতো হয়ে যাবে বুঝলি। এটাই জগতের নিয়ম রে মা। এই স্বার্থপর গুলোকে কখনো আপন ভাবিস না রে মা।
মামার কথা গুলো শুনতে খুব ভালো লেগেছে। কষ্টও লেগেছে। দুর্দিন বদলে কবে আমার সুদিন আসে সেই অপেক্ষাই করছি আমি। নিশ্চয়ই একদিন সুদিনের দেখা পাবো!
রান্নাঘরে কাজ করছিলাম রেদোয়ান তখন বাসায় আসলো। এসেই আমাকে ডাক দিলো। আমি হাতের কাজটা শেষ করে ঘরে গেলাম। রেদোয়ানকে বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম, এতো খুশি কেন তুমি?
ডাকছিলে কেন?
কথা আছে বসো।
ও আমাকে হাতের ইশারায় ওর পাশে বসতে বললো। আমি বসে পড়লাম। ও বললো, আজ সকালে আমার ছাত্র রাফি ফোন করে বললো ওর তিনটা বন্ধু আমার কাছে পড়তে চায়।
বেশ খুশি হলাম। বললাম, তুমি কি বললে?
যদি পড়তে চায় তবে মন্দ কি? আমি বলেছি পড়তে চাইলে পড়াবো।
বেশ করেছো। আমাদের দিন তাহলে কোনমতে চলেই যাবে।
রেদোয়ান হাসলো তবে কিছু বললো না।
বিকেলের দিকে আমার মামা শ্বশুর আর মামি শাশুড়ি এলেন। রাস্তায় প্রচুর যানজট তাই আসতে দেরি হয়েছে। তারা আসার পর পরই ভুরিভোজের আয়োজন শুরু হলো। ভুরিভোজ শেষ হওয়ার পর আমার শাশুড়ির সাথে মামি গল্প পাতিয়ে দিলেন। মামা ড্রইং এ বসে আছেন। রেদোয়ান পড়াতে গেছে। আমি বাসনপত্র সব গুছিয়ে হাঁড়ি পাতিল ধুয়ে মুছে রান্না ঘর থেকে বের হতেই মামা আমাকে ডাকলেন। আমি তার কাছে গেলাম। মামার কাছে যেতেই মামা আমাকে বললেন, বস আমার পাশে।
আমি বসলাম। মামা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছিস?
এইতো ভালোই।
রেদোয়ান কোথায় গেলো?
পড়াতে গেছে।
চাকরি পেয়েছে?
আমি হেসে বললাম, না আর চাকরি। টিউশনি করে।
ভালোই তো। শুনলাম তোদের বাড়ি নাকি ছেড়ে দিবি?
হ্যাঁ। ওরা আর থাকতে চাচ্ছে না। আমরা কি করতে পারি বলুন? আমাদের তো এখন আর সেই জোর নেই যে নিজ পকেটের টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া মিটিয়ে সবাইকে একসাথে রাখবো।
তা ঠিক। কিন্তু যখন সেদিন চলে আসবে তখন দেখবি এসব দুধের মাছিরা কোথাও যাচ্ছে না।
আমি হাসলাম। মামা আমায় আবার জিজ্ঞেস করলেন, এ বাড়ি ছাড়লে তোরা কোথায় যাবি?
দেখি কোথায় যাই। এ শহরে তো ভাড়া বাসার অভাব নাই। আমাদের টোনাটুনির জায়গা কোথাও হয়েই যাবে।
আয়রা তোকে একটা কথা বলি শোন। জীবনে চলার পথে অনেক বাঁধা অনেক বিপত্তি আসবে। আসবে দুঃখ, আসবে সুখ। সবকিছুকেই নিয়ে জীবন। সবসময় দুঃখ কষ্ট থেকে শিক্ষা নিবি। সুসময়ের বন্ধু গুলোকে সবসময় লাল মার্ক করে রাখবি। দুঃখ শেষে তারা কিন্তু আবার ফিরে আসবে। তখন তাদের পাত্তা দিস না কিন্তু। আর যদি তা না পারিস তাদের কিছু না বলতে পারলেও মনে জায়গা দিস না। তাহলে জীবনে ঠকে যাবি।
মামার কথায় উত্তরে কিছু বললাম না। কিন্তু ভাবনায় পড়ে গেলাম। সত্যি কি আমার সুদিনে তাদের পাশে রাখবো আমি? কখনোই না! তাদের থেকে পাওয়া কষ্টগুলো আমার অন্তরকে ক্ষ-ত-বি-ক্ষ-ত করে ফেলেছে। জানিনা আমার শেষ পরিণতিতে কি আছে। কখনো কি তাদের ক্ষমা করতে পারবো আমি?
চলবে…
(অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা করবেন। সরি নিচের বাসার আন্টিদের বাসায় গিয়েছিলাম তাই দেরি হয়েছে।)
তারা তারি সব part পরতে আমাদের group
Join plz
https://facebook.com/groups/272194598259955/
All part https://www.facebook.com/groups/272194598259955/permalink/475640541248692/?app=fbl